এক চিলতে রোদ পর্ব-৫১+৫২

0
931

#এক_চিলতে_রোদ
#Writer_Nondini_Nila
#Part_51

সকাল সকাল ইহান ভাইয়া চলে গেছে অফিসে। আমি বিছানায় বসে গিফট গুলো ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখছি। আমার পাশে বসে গল্প করছে লতা। তার গল্প হচ্ছে কাল সে একটা প্রপোজ পেয়েছে। সেসব বলছে আর ব্লাসিং হচ্ছে। আমি ওর কথা শুনে কম ভাবছি বেশি। কালকে রিহান কে দেখেছি। সে তীক্ষ্ণ চোখে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো। আমি কাচুমাচু করে দাঁড়িয়ে ছিলাম। ভাইয়া তার বন্ধুদের সাথে কথা বলছিলো আমি একা হতেই রিহান আমার কাছে আসে আর জিজ্ঞেস করে,

‘ শুভ জন্মদিন ঊষা‌। কেমন আছো?’

আমি জড়োসরো হয়ে দাঁড়িয়ে বললাম, ‘ জ্বি আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আপনি?’

‘ এইতো মুটামুটি।’

আমি পেছন ঘুরে চলে আসতে চাইলাম। রিহান বলে উঠলো,

‘ তোমার সাথে একটু কথা ছিলো।’

আমি থমকে দাঁড়িয়ে পরলাম। রিহান এগিয়ে এসে বললো, ‘ তুমি…

রিহান কথা শেষ করা আগেই ইহান ভাইয়া এগিয়ে এলো। আর রিহানকে দেখে চেয়াল শক্ত করে ফেললো। রিহান ভাইয়াকে দেখে আমার থেকে চলে গেলো। আমি রিহানের দিকে তাকিয়ে বললাম,

‘ আরে কোথায় যাচ্ছেন? কি যেন বলতে চেয়েছিলেন?’

কিন্তু রিহান থামলো না চলে গেলো। ইহান ভাইয়া এসে আমার কাছে জিজ্ঞেস করলো,

‘ ও কি বলছিলো তোকে?’

আমি সব বললাম।

ইহান ভাইয়া বললো,,, ‘ ওর সাথে আর কখনো কথা বলবি না।’

আমি আচ্ছা বলে মাথা নাড়ালাম।
ফারিয়া একটা চেয়ারে চলে রাগে গজগজ করেছে আমাদের দিকে তাকিয়ে।

সবার খাওয়া শেষ এখন বাকি আছে শুধু ওই খালাতো ভাই ( দিহান) এর। সকাল দশটা না হলে তিনি ঘুম থেকে উঠে না। চাচির আওয়াজে আমাদের ভাবনা বন্ধ হলো।

তিনি হাক ছেড়ে আমাকেই ডাকছেন। আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বেরিয়ে এলাম লতাও এলো।

চাচি আমার দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ ওই যে দিহান বসে আছে। ওকে খেতে দে।’

আমি আচ্ছা বলে সেদিকে পা বাড়ালাম। লতা আমার সাথে আসতে গেলে চাচি লতাকে ডেকে বলে,,

‘ তুই কোথায় যাচ্ছিস?’

লতা বললো, ‘ ঊষার সাথে খাবার এনে দেয়।’

‘ নাহ তুই আমার সাথে আয়।আমার পা টিপে দিবি।

আমি খাবার এনে টেবিলে রাখলাম। দিহান মাথা নিচু করে ফোন টিপে যাচ্ছে কোন দিক তাকাচ্ছে না। কিন্তু আমার কেন জানি মনে হচ্ছে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু আমি তা দেখার জন্য ওর দিকে তাকালে দেখতে পায় নিচের দিকে তাকিয়ে ফোন ঘাটছে। আমি তারাতাড়ি খাবার রেখে রান্না ঘরে দাঁড়িয়ে র‌ইলাম।
এই ছেলের আসে পাশে আমার আসতে মন চায়না।

আমি রান্না ঘরে দাঁড়িয়ে বাসন মাজতে লাগলাম। বাসন ধুয়ে রেখে পেছন ঘুরতেই চমকে উঠলাম। আমার পেছনে দাঁড়িয়ে আছে দিহান। আমার দিকে লোভনীয় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমি ঢোক গিলে বললাম,

‘ আপনি এখানে কেন?’

দিহান সাথে সাথে বললো, ‘ লবণ লাগবো নিতে এলাম।’

আমি বললাম, ‘ কিহ? লবণ তো ওইখানেই আছে।’

দিহান এক পা এগিয়ে আসতেই আমি ভয়ে আতকে উঠলাম, এই ছেলেকে দেখলেই আমার ভয়ে আত্না শুকিয়ে আসে। তখন লতার আওয়াজ পেয়ে আমি হাফ ছেড়ে বাঁচি‌।
লতা পেছনে থেকে বললো,

‘ এখানে কি হচ্ছে?’

দিহান আমার পাশে থেকে লবণ হাতে নিয়ে তা দেখিয়ে চলে যায়। আমি বুকে ফূ দিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলি। তার মানে এই লবণের জন্য এগিয়ে এসেছে।আর আমি কি না কি ভাবলাম?

এদিকে দিহান ইচ্ছে করেই ওইখানে গিয়েছিলো। কতোদিন কোন মেয়ের শরীর ভোগ করতে পারেনা। আর আম্মু এনে এখানে ওকে বন্দি করে গেলো। কিন্তু এখানে এসে এমন যুবতী দুটো মেয়ে দেখে ওর তো সব এলোমেলো হয়ে গেছে। নিজেকে অনেক কষ্টে স্বাভাবিক রেখেছে। এদের একজন কে হলেও ওর চাই।
দুটোই কাছের মেয়ে সমস্যা হ‌ওয়ার কথা না। টাকা দিলে কি না হয়।টাকা দিয়ে মুখ অফ রাখবো।

শয়তানি হাসি দিয়ে দিহান খাওয়া শেষ করে।

বিকেলে ফারিয়ার রুমে দাড়িয়ে আছি। ফারিয়া আমাকে দাড় করিয়ে বলতেছে,

‘কাল খুব আনন্দ হচ্ছিল তোমার তাইনা।’

আমি বললাম, ‘ আনন্দ তো হবেই কাল আমার জন্মদিন ছিলো যে। আর কতো সারপ্রাইজ ভাইয়া দিয়েছে আমাকে।’

‘ আমার জিনিস তুমি ছিনিয়ে নিয়েছো।’

‘ আপনার জিনিস?’

‘ হুম। ইহান আমার। ওকে তোমার আগে থেকে আমি ভালোবাসি।’

‘ এসব নিয়ে আমার সাথে ঝামেলা কেন করেন। যা বলার ভাইয়াকে বলেন।’

‘ ইহানকে তো তুমি বশ করে ফেলেছো ও কি বুঝবে। আমি ভালো মতো বলছি তুমি ইহানকে ছেড়ে দাও।’

‘ আমি পারবো না।’

ফারিয়া রেগে এগিয়ে আসতে গেলে চাচি এগিয়ে আসে আর আমাকে রুমের বাইরে বের করে দেয়। আজ ভেবে রেখেছি ভাইয়া এলে সব বলে দেবো। রাতের অপেক্ষা শুধু।

ছাদে এলাম কিছু ক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে নিচে নেমে এলাম।আসার সময় গেস্ট রুমের যেটায় দিহান কে থাকতে দিয়েছি সেটায় নজর দিলাম। কি যেন খাচ্ছে। আমি উঁকি মেরে চলে এলাম। বাজে দুর্গন্ধ।

রাতে ভাইয়া এলো অনেক দেরিতে। আমি পেছনে গেলাম ভাইয়া ফ্রেশ হয়ে এসেই বিছানায় শুয়ে পরলো। আমি এগিয়ে গিয়ে বললাম,

‘ খাবেন না?’

ভাইয়া চোখ বন্ধ করেই বললো, ‘ আমি খুব ক্লান্ত ঊষা। আমার খাবারটা এখানে নিয়ে আয়না প্লিজ। দুইদিনের কাজ করতে হয়েছে আজ।’

আমি নিঃশব্দে বেরিয়ে এলাম। আমার জন্য কাল ভাইয়া অফিস যেতে পারেনি।এতো বড় আয়োজন করেছিলো।চাচা কঠিন কিছু কথা বলার জন্য বসে ছিলো কিন্তু ভাইয়া আসতে লেট হ‌ওয়ায় কিছু বলতে পারিনি। আমি ভাইয়ার খাবার নিয়ে যাব তখন দিহান কে দেখতে পায়। ও
ডাইনিং টেবিল এ থেকে পানি খাচ্ছে আর আমার দিকে কেমন করে যেন তাকিয়ে আছে। আমি দেখলাম তার দৃষ্টি খারাপ আমি নিজের দিকে তাকিয়ে দেখি বুকে থেকে ওরনা সরে গেছে। কিন্তু হাতে প্লেটের জন্য ওরনা ঠিক করতে পারছি না।

দিহানের খারাপ দৃষ্টি দেখে আমি চমকে দ্রুত গতিতে সিঁড়ির কাছে চলে এলাম। ভয়ে আমার বুক ধুকপুক করছে। ভাইয়া কাছে এসে খাবার রেখে আগে বুকে হাত দিয়ে জোরে শ্বাস নিলাম।

‘ কি হয়েছে? ওইভাবে বুকে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?’

আমি চমকে উঠলাম। ভাইয়াকে এই কথা বলতে হবে এই দিহানকে আমার একটু ও ভালো লাগে না। ওর বাজে মতলব আছে।
কিন্তু এখন না ভাইয়া এখন ক্লান্ত পরে বলবো।

আমি হালকা হেসে বললাম,’ কিছু না তো।’

ভাইয়া সন্দেহ চোখে তাকিয়ে র‌ইলো। আমি ঢোক গিলে এগিয়ে এলাম।

‘ খান।’

ভাইয়া বললো,,

‘ আমি পারবো না তুই খাইয়ে দে।’

আমি কিছু না বলে হাত ধুয়ে এলাম। আর বিছানায় বসে ভাইয়াকে খাইয়ে দিতে লাগলাম।

ভাইয়া খাচ্ছে আর আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমি ওরনা মাথায় দিয়ে ছিলাম। ভাইয়া আমার ওরনা মাথা থেকে ফেলে খোঁপা খুলে ছিলো। আমি বিরক্ত হয়ে বললাম,

‘ এটা কি করলেন? এখন তো চুল আমার মুখে এসে বিরক্ত করবে আমাকে!’

‘ করবে না।’

‘ এই যে আমায় বিরক্ত করছে।’
চুল উড়ে এসে আমার চোখে মুখে এলো তা মুখ দিয়ে ফূ দিয়ে সরানোর চেষ্টা করে বললাম।

ভাইয়া তা দেখে আমার দিকে আরেকটু ঝুঁকে এসে চুল কানে গুঁজে দিয়ে বলল,,

‘ এসব দেখার দায়িত্ব আমার। তুই আমাকে খাইয়ে দে তো।’

আমি আর কি বলবো। খাইয়ে দিতে লাগলাম। আর ভাইয়া আমার চুল সামলাতে লাগলো। খাওয়া শেষ হতেই আমি হাত ধুয়ে এলাম। প্লেট নিচে রাখতে যাব কিন্তু ভাইয়া আটকে দিলো।

‘ ওটা রেখে দরজা আটকে আয়।প্লেট আর রাখতে হবে না। আমার খুব ঘুম পাচ্ছে।’

আমি বললাম, ‘ তো ঘুমান। আমি যাই।’

‘ যাই মানে তুই ছাড়া আমার ঘুম হবে নাকি!’

আমি দরজা আটকে এলাম। ভাইয়া আমাকে বিছানায় বসিয়ে আমার হাটুতে মাথা রেখে শুয়ে পরলো। আমি চমকে উঠলাম। আমার সারা শরীর কেঁপে উঠলো। ভাইয়া আমার হাত টেনে তুলে দিয়ে বললো‌,

‘ তোর এই নরম তুলতুলে হাতের আমার মাথা ব্যাথা কমিয়ে দে তো।’

আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলাম। ভাইয়া চোখ বন্ধ করে র‌ইলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই ভাইয়ার নিঃশ্বাস ঘন হয়ে এলো। ভাইয়া ঘুমিয়ে পরেছে অতিরিক্ত ক্লান্তি তে তারাতাড়ি ঘুমিয়ে পরেছে। আমি ভাইয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে হাত বুলিয়ে দিচ্ছি। ভাইয়া হুট করেই নড়ে উঠলো আর বেকা হয়ে আমার কোমর দুহাতে আকড়ে ধরে পেটে মুখ গুঁজে দিলো। আমি হকচকিয়ে গেলাম। ভাইয়া নিঃশ্বাস আমার জামা ভেদ করে শরীরে গিয়ে ঠেকছে আমি থরথরিয়ে কাঁপছি। বুকের হার্টবিট বেড়ে গেছে অনেক।

এদিকে দিহান নিচে বসে আছে নেশা করে।ও বসে আছে ঊষার জন্য। খাবারের প্লেট দিয়ে আবার আসবে তখন ও শিকারীকে ধরবে। কিন্তু বসে থাকতে থাকতে বোর হয়ে গেলো ওর শিকারী এলো না। ও রেগে রুমে চলে এলো। আর নেশার মাঝে ভাবতে লাগলো ইহানের সাথে এর কোন সম্পর্ক আছে নাকি‌। ইহানের রুমে রাতে থেকে গেলো কেন?
মাতাল দিহান ছটফট করতে করতে ঘুমিয়ে পরলো।

#চলবে

#এক_চিলতে_রোদ
#Writer_Nondini_Nila
#Part_52

ফারিয়া বসে ফোনে কথা বলছে। রাগারাগী করছে কারো সাথে। আমি দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে শুনতে পাচ্ছি। কার সাথে এমন করছে।শেষে পাপা বলে কেটে দিলো। এবার বুঝতে পারলাম।
আমি দরজা থেকে ফিরে এলাম। দিহান কে দেখতে পেলাম। ছাদে যাচ্ছে। আমি হেঁটে আসার সময় তার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নজরে পরলো। আমি মাথার ওরনা আরো টেনে এক প্রকার ছুটে নিচে চলে এলাম। লতা সোফায় পাশে দাঁড়িয়ে আছে। আমি যেতেই বললো,

‘ আমি বিকেলে ওর সাথে দেখা করতে যাব।’

আমি কপাল কুঁচকে বললাম, ‘ ওটা কে?’

‘ আমার বয়ফ্রেন্ড।’

‘ প্রপোজ করতে না করতেই বয়ফ্রেন্ড হয়ে গেছে।’

লতা বললো, ‘ ওকে তো আমি আগে থেকেই পছন্দ করতাম। কিন্তু সেদিন ও আমাকে প্রপোজ করলো আমি আর রাজি না হয়ে পারি নাকি।’

লতার কথা শুনে অবাক গলাতে বললাম, ‘ আগে থেকেই লাইক করতি।’

‘ হুম!’

‘ তাহলে তো আগে থেকেই চিনতি।কে ছেলেটা আমি কি তাকে চিনি?’

লতার মুখে লজ্জা তার সাথে মাথা নাড়ালো। আমি বললাম, ‘ নাম বল।’

‘ এখন না পরে।’

‘ পরে কেন?’

‘ পরে এখন কিছু জিজ্ঞেস করিস না।’

‘ আচ্ছা। কিন্তু দেখে শুনে প্রেম করিস। সে যেন ভালো হয়।’
লতা মাথা নাড়ল।

লতা চলে গেলো।বিকেলে সেজে গুজে বেরিয়ে গেলো‌। চাচি কে অনেক কষ্টে মানিয়ে। আমি ওকে লাল চুড়ি দিয়েছি। ও লাল সেলোয়ার কামিজ পরে সুন্দর করে সেজে গুজে গেলো।

দিহান সোফায় বসে টিভি দেখতেছে। আমি তখন ফারিয়াকে দেখলাম ফিটফাট হয়ে বের হতে। দরজার কাছে গিয়ে বললো,

‘ ঊষা দরজা লাগিয়ে দাও।’

আমি এগিয়ে গিয়ে বললাম, ‘ আপনি কোথায় যাচ্ছেন?’

‘ যেখানে ইচ্ছা সেখানে তা তোমাকে কেন বলতে যাব?’

আমি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলাম। ফারিয়া চলে গেলো।আমি দরজার বাইরে গিয়ে বাইরে থেকে আটকে দিলাম। আমি এখন বাগানে যাব। আমি বাগানে ফুল দেখে পাশে বসার জন্য তৈরি করা স্থানে বসে পরলাম। দিহানের জন্য এখানে এলাম। লতাও নাই চাচি রুমে বসে আছে। আমি একা থেকে কি করবো? পাশের বাসার আন্টি কে দেখলাম। ছাদে দাঁড়িয়ে আমাকে ডাকছে আমি চিৎকার করে জিজ্ঞেস করলাম,

‘ আমাকে ডাকছেন?’

উনি বললো, ‘ছাদে আসো।’

কি বলবে ভাবতে ভাবতে আমাদের ছাদে এলাম। দিহান কে আসার সময় সোফায় দেখিনি। ছাদে এসে দাড়াতেই বললো,

‘ তোমাদের বাসায় ওই বিদেশি দেখতে মেয়েটা কে গো?

আমি বললাম, ‘ ইহান ভাইয়ার বন্ধু।’

‘ বিদেশে থেকে এসেছে?’

‘ হুম।’

‘আমিও তাই ভাবছিলাম। তাও তোমাকে জিজ্ঞেস করলাম।’

আমি কিছু বললাম না। উনি বললো,
‘ এসো বেরাতে।’

আমি আচ্ছা বলতেই চলে গেলেন উনি।

ছাদে থেকেই লতাকে আনন্দিত মুখে গেইটের ভেতরে ঢুকতে দেখলাম।
ও এসেই গল্প লাগলো। বয়ফ্রেন্ড টা কে জানতে চাইলে বলে না। আমি সন্দেহ চোখে তাকিয়ে বসে র‌ইলাম। সব বলতে পারছে তাহলে বয়ফ্রেন্ড কে এটা বলতে সমস্যা কোথায়।

ফারিয়া সন্ধ্যার সময় এলো। আজ খেলো না। ভাইয়া আজ ও দশটায় এলো ততক্ষন ফারিয়া বসে ছিলো ভাইয়ার রুমে। আমি বাইরে এদিক ওদিক করছি ফারিয়া ভাইয়ার রুমে বসে আছে এটা আমার ভালো লাগছে না।
ভাইয়া এলে আমি দরজা খুলে দিলাম। ভাইয়া একটা গুড নিউজ আছে বলেই আমাকে দরজার কাছে জরিয়ে ধরলো।

আমি কি বলে তাকিয়ে আছি। ভাইয়ার প্রমোশন হয়েছে। এতো কম সময়ে এটা হ‌ওয়া চাট্টিখানি কথা না। কথাটা সবার আগে আমাকে বললো। সবাইকে কাল বলবে বললো‌। আমাকে ছেড়ে নিজের রুমে চলে এলো। আমি পেছন পেছন এলাম। ভাইয়া ফারিয়াকে নিজের রুমে দেখে ভ্রু কুঁচকে বলল,

‘ তুমি এখানে কেন?’

ফারিয়া হাসি ফুটিয়ে বললো,

‘ তোমার জন্য অপেক্ষা করছি।’

‘ হুয়াই?’

‘ সারাদিন দিন দেখা হয়নি। আবার সকালে ও অনেক আগে চলে যাও। তাই তোমার জন্যে বসে আছি।একসাথে খাবো।’

ভাইয়া কিছু না বলে বাথরুমে চলে গেলো ড্রেস নিয়ে। গোসল করে কালো ট্রাউজার আর নীল গেঞ্জি পরে বাইরে এলো চুল মুছে বললো,

‘ এটা না করলেও হতো শুধু কষ্ট করলা।’

‘ তোমার জন্য কষ্ট করতে আমার ভালো লাগে।’

ভাইয়া আয়নার থেকে চোগ সরিয়ে বললো, ‘তোমার ফ্ল্যাট কবে?’

ফারিয়া বললো, ‘ আমাকে তারাতে ব্যস্ত হয়ে গেছো?’

‘ তেমন না অনেক দিন তো হলো। আর আন্টি আন্কেল জানে এসব?’

ফারিয়া থতমত খেয়ে গেল। আমতা আমতা করে বললো,

‘ জানবে না কেন?’

‘ না তোমার তো খুব জেদ।এমন ও হতে পারে কাউকে না জানিয়ে এসে পড়েছো।আমার কথা তোমাকে একা আসতে দিতে রাজি হলো কি করে?’

‘ হয়েছে আমার কথা ভেবে।’

আমি ভাবছি সিউর এই ফারিয়া না বলে এসেছে।আজ নিজের বাবার সাথে যে ভাবে কথা বলছিলো। তাতে তো মনে হয় না তারা সব জানতো। জেনে আসতে দিয়েছে। বরং তারা জেনে বকা বকি করেছে।

ভাইয়া বেরিয়ে এলো। আমি দরজার কাছেই ছিলাম তাই বেরিয়ে আমাকে দেখে কপাল কুঁচকালো।
আমি চমকে উঠে বললাম,

‘ আমি ওই আপনাদের ডাকতে এসেছিলাম।’

‘ তুই কেন এসেছিস আমি খুব ভালো করে জানি।তাই এখানে দাঁড়িয়ে পাহাড়া না দিয়ে ভেতরে গেলেই তো হতো।’

আমি কাচুমাচু মুখ করে নিচের দিকে তাকিয়ে র‌ইলাম।

‘ তারাতাড়ি খেতে দে আয়।’

বলেই হাঁটতে লাগলো। ফারিয়া অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

খাবার টেবিলে ভাইয়া আজ ও আমার হাতে খেতে লাগল। আমি লজ্জায় তাকাতে পারছি না‌‌। ফারিয়ার সামনে এটা করার কি কোন দরকার ছিল।

আমি লজ্জা রাঙ্গা হয়ে খাইয়ে দিচ্ছি। ফারিয়া খাচ্ছে কম তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে বেশি।
আধ খাওয়া করে গটগট করে চলে গেলো ফারিয়া।
আমি মাথা তুলে সেদিকে তাকিয়ে আছি। ভাইয়া ফোন টিপছে। আজ রাতে একটা ফোন দিলো ভাইয়া আমাকে। আমি বিছানায় উপর বসে নতুন ফোনটা উল্টে পাল্টে দেখছি।সাদা রঙের ফোন নাম দেখলাম। আই ফোন লেখা আমি ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম,

‘ এটা আমার জন্য এনেছেন?’

ভাইয়া হুম বলে সিম আর কি কি যেন করলো। আমার দিকে ধরে দিয়ে বললো,

‘ এই যে এটা আমার নাম্বার। কল দিলে সাথে সাথে রিসিভ করবি। আমি অফিসে থেকে এটা দিয়ে তোর সাথে কথা বলবো।’

আমি আচ্ছা বললাম।
ভাইয়া একটা ফেসবুক একাউন্ট খুলে দিলো আমি তাকিয়ে দেখছি। ফেসবুক আমার পরিচিত নাম এটা তুলি ও চালাতো ও আমাকে দেখিয়েছে। ফোন হাতে দিলো ভাইয়া তার আইডিতে ঢুকে। তখন একটা ফোন এলো ভাইয়া ফোন হাতে চলে গেলো বেলকনিতে কথা বলতে।

আমি একটা ছবির দিকে তাকিয়ে আছি। ভাইয়ার একটা ছবি সাদা শার্ট পরা। ঠোঁটের নজর কারা হাসি।আমি নিচে গেলে আর অনেক ছবি দেখতে পায়।
তখন ভাইয়া এসে বলে এটা তার আইডি। আর আমাকেও একটা আইডি খুলে দিয়েছে। সাদা পরী নাম। প্রোফাইল ছবি একটা কার্টুন এর। এটা আমি পছন্দ করেছি। ভাইয়া আমার ছবি ফেসবুকে দেবে নাই তাই।তুলির আইডি সার্চ দেওয়া লাম ভাইয়াকে দিয়ে। তুলি নিজের পিকচার দিয়েছে তাই চিনতে অসুবিধা হলো না।
আমি ওকে রিকোয়েস্ট আর মেসেজ করে রাখলাম। ভাইয়া আমাকে চালানো শিখিয়ে দিয়েছে‌। আমি বসে বসে ছবি দেখছি পাঁচ মিনিটের মধ্যে টুনটুন আজ করে শব্দ হলো আর সাথে সাথে কল এলো আমি চমকে উঠে ভাইয়া দিকে তাকালাম। কল দিলো কে আবার‌। ভাইয়া বললো,

‘ তোর বান্ধবী কল করেছে। কথা বললে রিসিভ কর!’

রিসিভ করতেই তুলির হাসি মুখ ভেসে উঠলো। আমি হাঁ করে তাকিয়ে আছি। ওকে দেখতে পাচ্ছি আমি। এটা ভিডিও কল ছিলো। ভাইয়া একটু আগে বলেছে আমি হাঁ করে ওর দিকে তাকিয়ে আছি।কতোদিন পর দেখলাম। ও বিছানায় শুয়ে আছে। আমি বসে ওর দিকে তাকিয়ে আছি।

‘ ঊষা তুই ফোন কিনেছিস? ও মাই গড আমি তো তোর মেসেজ দেখে থমকে গেছিলাম। কতোদিন পর তোকে দেখলাম। আমার যে কি আনন্দ হচ্ছে। আমার তো নাচতে ইচ্ছে করছে।’

আমি অভিমানী গলাতে বললাম,
‘ তুই আমার জন্মদিন আসলি না কেন ? ভাইয়া তো তোর বাড়িতে কার্ড পাঠিয়ে ছিলো। আমি ওর জন্য অপেক্ষা করেছিলাম।’

ও কানে হাত দিয়ে বললো,,’ সরি রে আমি তখন রাজশাহী ছিলাম। নানার বাড়ি আসতাম কি করে?’

আমি বললাম, ‘ তাই আসলি না‌’

‘ সরি তো আচ্ছা তোকে এই ফোন ইহান ভাই কিনে দিছে ।’

আমি হুম বললাম। ভাইয়া উঠে চলে গেছে। এখন আমি বিছানায় বসে তুলির সাথে কথা বলছি। হাসাহাসি করছি অনেকদিন পর প্রিয় বান্ধবীর সাথে কথা হচ্ছে।। কথা শেষ হতে লাগলো অনেক ক্ষন তাও তখন তুলিও ফোনের চার্জ শেষ তাই কেটে দিয়েছে। আমি ফোনের দিকে উজ্জ্বল মুখ করে তাকিয়ে আছি। ভাইয়া এসে বললো,

‘রাখলি কেন আরো বলতি।’

আমি মাথা তুলে তাকিয়ে বললাম, ‘ চেয়েছিলাম কিন্তু ওর চার্জ শেষ।’

ভাইয়া রেগে এসে আমার গা ঘেষে বসলো। আমি রাগ দেখে হতচকিয়ে গেলাম। রাগছে কেন?

‘ দুই ঘন্টা কথা বলেও আরো কথা থাকে? বারোটা বাজে। সারারাত কথা বলতে হয়।‌এতো কি কথা বললি শুনি। ইডিয়েট।’

আমি বললাম, ‘ কতোদিন পর কথা বললাম তাই তো এতো সময় লাগলো।’

‘হয়েছে আর না আমার ঘুম পাচ্ছে।’

বলেই লাইট অফ করে বিছানায় শুয়ে পরলো আমি সেদিকে তাকিয়ে মাঝখানেই বসে আছি। ভাইয়া টেনে আমাকে নিজের বুকে টেনে নিলো। আর বললো,

‘পরশো তোর ভর্তি পরীক্ষা।’

‘বলেন কি? দুইদিন ধরে তো পড়াই হয় না।’

‘ কাল ভালো করে পরিস। ‘

বলেই ভাইয়া নিজের মুখ আমার কাঁধে নিয়ে রাখলো।
আমার সারা শরীর কেঁপে উঠলো। ভাইয়ার নিঃশ্বাস আমার কানে পরছে। আমি অস্বস্তি তে ঘুমাতে পারছি না। আমি মৃদু গলায় বললাম,

‘ মাথা সরান না ঘুমাতে পারছিনা।’

ভাইয়া সরালো না।

আমি বিরক্ত হয়ে ধাক্কা দিতে লাগলাম। ভাইয়া বিরক্ত হয়ে মুখ আমার সামনে এনে বললো,

‘ জ্বালাচ্ছিস কেন?’

আমি বললাম, ‘ আপনি আমাকে জ্বালাচ্ছেন আমি না।সরে ঘুমান। এমন করে থাকলে আমি ঘুমাতে পারিনা।’

‘কেন?’

‘আমার কেমন জানি লাগে।’

‘ লাগলেও সহ্য করতে হবে। আমি এভাবে থাকবে।’

দীর্ঘ শ্বাস ফেলে ওইভাবেই থাকতে হলো এবার ভাইয়া মুখ কাঁধের কাছে দিলো না‌। আমি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে ঘুমিয়ে পড়লাম।

পরদিন সকালেই মিষ্টি দিয়ে বাড়ি ভরপুর হয়ে গেলো। ভাইয়া সকাল সকাল চলে গেছে।তার আগে খবরটা দিয়ে গেছে আর মিষ্টি পাঠিয়ে দিয়েছে। আমি এদিক ওদিক তাকিয়ে লতাকে খুঁজছি। কিন্তু লতাকে দেখছি না।এই সকাল সকাল কোথায় চলে গেছে।ওর ওই বয়ফ্রেন্ড এর সাথে দেখা করতে নাকি?
আমি রান্না ঘরে ঢুকে রান্নার কাকিকে সাহায্য করতে আসবো তখন চাচি এলো গমগম করতে করতে।

‘ এই লতা কোথায় আজ। সকাল থেকে দেখছি না।ঊষা লতা ক‌ইরে?’

আমি বললাম,’ আমিও সকাল থেকে দেখি নাই‌?’

চাচি বিরবির করে লতাকে বকতে বকতে বিশাল আয়োজনের কথা বললো রান্না কাকিকে আমি বললাম,

‘ এতো কিছু রান্না কেন? কেউ কি ক
আসবে নাকি চাচি ?’

চাচি বত্রিশ টা দাঁত বের করে বললো,

‘ তুই এখানে কেন? আজ রান্না ঘরে আসবি না তুই।’

‘ মানে কেন?’
অবাক হয়ে বললাম।

চাচি আমাকে টেনে রুমে পাঠিয়ে দিলো। পাঁচ মিনিট পর বললো,

‘আজ তোর কাজ করার দরকার নাই।আর ওই লতাকে দেখলে আমার কাছে পাঠায় দিস। ও কোথায় যায় আজ জানতে হবে।’

আমি চুপ করে হতভম্ব হয়ে বসে আছি। চাচি আমাকে দিয়ে কাজ করাচ্ছে না কেন?
চাচির আবার কি হলো? ফারিয়াকে দেখলাম কেমন হাসি মুখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

আমি ফোন বের করলাম। এটার খবর এখনো চাচিরা কেউ জানে না।
আমি ফেসবুকে আছি ভাইয়ার ছবি দেখছি কতো শত ছবি আপলোড করেছে ভাইয়া সব খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছি। আরেকটা জিনিস ভাবছি কাল আমি ভাইয়ার ফোন ধরেছিলাম। গল্পের আসল লেখিকা নন্দিনী নীলা তখন একটা জিনিস দেখে থমকে গেছি। ভাইয়া ওয়ালপেপার এ আমার ছবি দেওয়া। আর এইটা সেই ছবি ভাইয়া আসার চারদিন পরে আমি যখন ফুল গাছ থেকে ফুলের ঘ্রাণ নিচ্ছিলাম।
সেদিন ভাইয়া ফোন সাথে বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিলো। আমি দেখেছিলাম সেদিন আমার ছবি তুলেছিল ভাইয়া ভেবে অবাক হয়ে যায়।

ভাইয়া আমাকে এই পর্যন্ত চারবার কল করেছে।একটু পর পর কল করে এটা ওটা জিজ্ঞেস করে। আমি তাকে বলে দিয়েছি চাচী আমাকে আজ কাজ করতে দিচ্ছে না। ভাইয়া ও অবাক হয়ে বলে,

‘ আম্মু বোধহয় তোকে মেনে নিচ্ছে ঊষা।’

আমি ভাবলাম সত্যি কি তাই? ভাইয়াকে এটাও বলেছি লতাকে সকাল থেকে দেখছি না। ভাইয়া এসে খোঁজ করবে বলছে। বারোটা বাজতেই চাচি এলো আর আমাকে টেনে বাথরুমে ঢুকিয়ে দিলো আর বললো,

‘তারাতাড়ি গোসল করে আয়।’

আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম।এখনি কিসের গোসল জিজ্ঞেস করলেও চাচি তেমন কিছু বললো না। শুধু বললো,

‘ ভালো করে গোসল করবি। বুঝেছিস?’

আমি বললাম, ‘ কিন্তু কেন?’

চাচি উওর দিলো না‌। আমি আকাশ পাতাল ভেবে গোসল করলাম। চাচি বিছানায় বসে আছে।

আমাকে নিয়ে নিজের রুমে এলো। আর আচমকা আমার হাত ধরে বললো,

‘ আমি তোর চাচি ঊষা‌‌। তুই মানিস আর না মানিস আমি কিন্তু তোকে নিজের মেয়ে ভাবি। তোকে কষ্ট দেয়। বকাবকি করি কিন্তু মন থেকে তোকে খুব ভালোবাসি। খুব চিন্তা হয় আমার তোর জন্য।বাবা মা মরা এটা মেয়ে তাকে নিয়ে চিন্তা তো হবেই। তোর একটা গতি করে দিতে পারলে আমি শান্তি ও চিন্তা মুক্ত হতে পারি।’

আমি কি বলবো বুঝতে পারছি না। ফ্যালফ্যাল করে চাচির মুখের দিকে তাকিয়ে আছি।

চাচি আমার সামনে থেকে উঠে আলমারি খুলে এটা সবুজ কাতান শাড়ি বের করলো। আর বললো,

‘ এই শাড়িটা কেমন রে ঊষা?’

আমি শাড়ির দিকে তাকিয়ে থেকে বললাম, খুব সুন্দর।’

‘ তোর পছন্দ হয়েছে?’

আমি বললাম, ‘ আমার পছন্দ দিয়ে কি হবে?’

‘ তুই পরবি?’

আমি চমকে উঠে বললাম, ‘ আমি পারবো?’

‘ হুম।’

‘ আমি পরবো কেন?’

‘আছে।’

চাচি আমাকে বললো,

‘ তোকে শাড়িতে কেমন লাগে দেখবো।’

আমি অবাক হলাম। এটা দেখার কি আছে? আর চাচি এমন বিহেভ কেন করছে আমার ভালো লাগছে না।

চাচি সত্যি আমাকে শাড়ি পরিয়ে দিলো। নিজের হাতে আমি অবাকের চরম সীমায় পৌঁছে গেছি। এসব কি হচ্ছে? একটু পর বুঝতে পারলাম।একদম লোক আমাদের বাড়ি এসেছে। তারা এসেছে আমাকে দেখতে। আমার বিয়ে দেবার জন্য এদের ডেকেছে বাড়িতে চাচা তাদের সাথে বসে কথা বলছে।ইলা আপু ও বাসায় সবাই প্লান করেই এসব করেছে। আমার বুকের ভেতরে দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে। চাচি একটু আগে আমাকে বলেছে,

‘ ওই দেখ ওরা তোকে দেখতে এসেছে।ওদের পছন্দ হলে আজকেই বিয়ে। কাজিও সাথে করে নিয়ে এসেছে। তুই যদি আমার কথায় রাজি না হস। তাহলে এই বিষ এটা খেয়ে আছি মরে যাবো। তবুও তোকে আমি ছেলের ব‌‌উ হিসেবে মানতে পারবো না। ইহানে আসতে রাত দশটা বাজবে তাই তার আগেই সব করতে হবে।’

চোখ ফেটে জল গড়িয়ে পরছে। আমি এই বিয়ে কিছুতেই করতে পারবো না। ইহান ভাইকে ছাড়া অন্য কাউকে আমি স্বামী হিসেবে মানতে পারবো না। আমার পা নরছে না চাচি হাতে চায়ের ট্রে দিয়ে আমাকে বড় ঘোমটা টেনে জোর করে পাঠালো। চাচি মরার ভয় না দেখালে আসতাম না শুধু আল্লাহকে ডাকছি। যেন ভাইয়া আগেই চলে আসে। আমাকে যেন রক্ষা করে।

কাঁপতে কাঁপতে এসে ট্রে রাখলাম। কেউ হাত টেনে আমাকে কাছে বসালো আর আমার ঘোমটা খুলে দিলো। সবাই তার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। না না কথা জিজ্ঞেস করছে আমি মুখ কুলো পেতে বসে আছি। কথা বলবো না।আমার চোখ দিয়ে পানি পরছি পাশের মহিলা জিজ্ঞেস করলো,

‘একি কাঁদছো কেন?’

চাচি বললো, ‘ আমাদের ছেড়ে চলে যেতে হবে তো তাই কাঁদছে। খুব ভালোবাসি তো আমরা।’

‘ কেঁদো না মা। তোমার যখন খুশি চাচি চাচার সাথে দেখা করবে।’

আমি মাথা তুলে তাকাচ্ছি না। নিচের দিকে তাকিয়ে চোখের জল ফেলছি।

#চলবে