এক ফালি প্রণয় পর্ব-০১

0
12

#এক_ফালি_প্রণয়|১|
#শার্লিন_হাসান
(টোটাল শব্দসংখ্যা:১৩০১)

“পূর্ণ ভাই আপনার গোলাপি ঠোঁটে চু’মু খাওয়ার ভীষণ শখ আমার। আপনার অধর ছুঁয়ে দেখার ভীষণ ইচ্ছে আমার। সেটাও হালাল ভাবে! কিন্তু আদৌ এটা সম্ভব?”

কারোর কন্ঠস্বর শোনে ঘুমের ঘোরে চোখ মেলে তাকায় পূর্ণ। কন্ঠস্বরটা রোদেলার মনে হলো! কিন্তু রোদেলার ওতো সাহস নেই তাকে এসব উল্টাপাল্টা কিছু বলার। তবে আজকাল মনে হয় রোদেলা তাকে ঘুমের ঘোরেও জ্বালাচ্ছে। পাত্তা না দিয়েও শান্তি নেই! পূর্ণ ওতো না ভেবে পুনরায় শুয়ে পড়ে। আজকে সে ভীষণ টায়ার্ড।

-“রোদেলা এ্যাই রোদেলা! তোর পূর্ণ ভাইকে গিয়ে বল ঔষধটা খেয়ে নিতে।”

মামীর ডাকে রোদেলা রুম থেকে বেড়িয়ে আসে। শারমিন আঞ্জুম তখন কিচেনে রাতের রান্না চাপাচ্ছেন। রোদেলাকেই আসতে হলো কারণ পূর্ণর বোন তিশা বাড়ী নেই। অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও পূর্ণর রুমে প্রবেশ করে রোদেলা। পূর্ণ তখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। রোদেলা একনজর তাকায় শ্যামপুরুষের মুখের দিকে। তার সামনে দাঁড়িয়ে কন্ঠস্বর খাদে নামিয়ে বলে,

“পূর্ণ ভাই! এ্যাই পূর্ণ ভাই।”

বার কয়েক ডাকে পূর্ণ চোখ মেলে তাকায়। চোখে মুখে তার বিরক্তি। রোদেলাকে দেখে জেনো বিরক্তি আরো বেড়ে গেছে তার। তবুও ভদ্রতা দেখিয়ে পূর্ণ শুধায়,
“বলো?”

“তোমার দুপুরের ঔষধ মিস গেছে। এখন খেয়ে নেও!”

“একবারে রাতেই খাবো। তুমি এখন আজাইরা কথার জন্য আমার ঘুমের ডিস্টার্ব না করলেও পারতে রোদেলা।”

“দুঃখিত!”

রোদেলা প্রস্থান করে। পূর্ণ আর ঘুমায় না। উঠে ওয়াশরুমে ঢুকে শাওয়ারের জন্য। চারদিকে আজানের শব্দ শোনা যাচ্ছে। রোদেলা অজু করে এশার নামাজ আদায় করে নেয়। ড্রয়িং রুমে আসতে তূর্ণর মুখোমুখি হয়। শিকদার বাড়ীর বড় ছেলে আহিয়ান শিকদার তূর্ণ। ছোট ছেলে তাহিয়ান শিকদার পূর্ণ। রোদেলার মামুর বাড়ী এটা। বাবা-মা হারিয়ে মাধ্যমিক দেওয়ার পরই এই বাড়ী তার স্থায়ী ঠিকানায় পরিণত হয়। সবে ভার্সিটিতে পা রেখেছে রোদেলা। নামাজ শেষ হতে রোদেলা কিচেনে যায়। তখন তার ছোট মামু,ছোট মামী সাথে ছোট মামুর এক ছেলে, এক মেয়ে তারাও আসে রাতের ডিনার করতে। রোদেলা তার বড় মামীর কাজে সাহায্য করে। সব খাবার টেবিলের উপর রাখে রোদেলা। তখন পূর্ণ আসে সেখানে। নিজের বরাদ্দকৃত চেয়ারটা টেনে সটান হয়ে বসে পূর্ণ। তার ছোট আম্মু তার খাবার বেড়ে দিচ্ছে। রোদেলা তার থেকে চার-পাঁচ হাত দূরত্বে অবস্থান করে, তার মামুদের খাবার বেড়ে দিচ্ছে। পূর্ণ তাকে কেনো জানি সহ্য করতে পারেনা। তবে তূর্ণর সাথে তেমন ভাব না থাকলেও মোটামুটি ভালোই আছে তাঁদের সম্পর্ক। কোন কারণে পূর্ণ রোদেলার নামটাও শোনতে পারতো না সেই পাঁচ বছর আগে থেকে। তিনবছর হলো মামুর বাড়ীতে থাকে রোদেলা। যদিও পূর্ণর সামনে তেমন যায়না। তবুও মাঝেমধ্যে যেতে হয়। তাঁদের খাবার বেড়ে দেওয়া হতে পূর্ণর সোজা চেয়ারটাই খালি ছিলো। শারমিন আঞ্জুম রোদেলাকে সেই চেয়ারেই বসিয়ে দেন। রোদ চুপচাপ খেয়ে রুমে চলে যায়।
রোদ রুমে যেতে পেছন দিয়ে তার ছোট মামুর ছেলে শূন্য আসে তার রুমে। সোফার উপর সটান হয়ে বসে শূন্য। রোদ তাকে দেখে আওড়ায়,
“কিছু বলবে?”

“তূর্ণ ভাই টাকা পাঠিয়েছে তোমার জন্য।”

কথাটা বলে রোদের হাতে একটা কাগজ ধরিয়ে দেয় শূন্য। হাসি মুখে বলে,
“তোমার এই মাসের হাত খরচ।”

“কিন্তু ছোট মামু তো আমায় যখন যা লাগে এনে দেয়। তুমিও দাও! মামনীরা ও দেয়। এটা আমার প্রয়োজন নেই।”

“আরে নেও! মেয়েদের কত শখ থাকে। তুমি টাকা দিয়ে তোমার ছোট,ছোট শখ গুলো পূরণ করে নিও।”

রোদ মাথা নাড়ায়। শূন্য প্রস্থান করতে রোদ কাগজটা খোলে। সেটায় মোড়ানো আছে এক হাজার টাকার পাঁচ টা টাটকা নোট। রোদ টাকাটা কাবাডে তুলে রাখে।
সবাই রোদেলাকে অনেক আদর যত্ন করে। শুধু একজন ব্যক্তি তাকে সহ্য করতে পারেনা। সেটাও তাহিয়ান শিকদার পূর্ণ। তাতে রোদেলার কিছু যায় আসে না। রাতের বেলায় বেলকনিতে যায় রোদেলা। আকাশের হাজারটা তারা ভিড়ে নিজের বাবা-মাকে খুঁজে নেয়। তখন পাশের বেলকনি থেকে কারোর কথার আওয়াজ আসতে রোদ ফিরে তাকায়। পাশের বেলকনি পূর্ণর। রোদ সেদিকে মনোযোগ না দিলেও তার মনোযোগ চলে যাচ্ছে। না যাওয়ার কী আছে। কেউ কলে কাউকে ধমকাধমকি করলে তো কানে শব্দ আসবেই।

পূর্ণ তার দলের একজনকে ধমকাচ্ছে। কারণ তাঁদের দলের কেউ একজন কারোর জমি দখল করেছে। এই নিয়ে অনেক জামেলা হয়েছে সন্ধ্যায়। পূর্ণ বাড়ীতে ঘুমিয়ে থাকায় নিউজ পায়নি। একজন মেয়র হয়ে তার দলের কারোর থেকে এমন কিছু আশা করেনি পূর্ণ। আগামী কালকে সে পার্টি অফিসে যাবে। সব-কয়টা খবর আছে। কথাটা চিল্লিয়ে বলে কল কেটে দেয় পূর্ণ। পাশের বেলকনিতে তাকাতে রোদকে দেখে। তাতে মেজাজ আরো চারশো ডিগ্রি খারাপ হয়ে যায়। গটগট করে রুমে এসে ল্যাপটপের সামনে বসে পড়ে পূর্ণ।

********

পার্টি অফিসে নিজের চেয়ারে বসে আছে পূর্ণ। সামনে তার দলের লোকজন দাঁড়ানো। পূর্ণ নিজেকে শান্ত রেখে বলে,
“কার জমি দখল করা হয়েছে? আর কে দখল করেছে? কেনই বা দখল করেছে। আমাকে এক্সপ্লেইন করো কুইক!”

তখন মিরাজ ছেলেটা বলে,
“আমাদের দলের নিসাধ। যে জমিটা দখল দেওয়া হয়েছে সেটা একজন মধ্যবিত্ত মানুষের। ওইখানে নাকী কী রেকর্ড তাঁদের নামে। আর জায়গাটায় বিল্ডিং উঠিয়ে ভাড়া,দোকান দেওয়াই যায়। জায়গাটা সুন্দর।”

“পরের হক মেরে খাওয়ার এতো শখ কেন তোদের? জমির মালিক যিনি তাকেই জমিটা ফেরত দেওয়া হবে। শুধু তাই নয় জমির রেকর্ড ও তার নামে করে দেওয়া হবে। জমির মালিককে আমার সাথে দেখা করতে বলবি।”

“কিন্তু স্যার….!”

পূর্ণ আঙুলে ইশারা করে থামিয়ে দেয়। নিসাধের দিকে তাকিয়ে বলে,
“আমার দলের লোক তোরা। মানুষকে সাহা্য্য করবি। সুন্দর শান্তিপূর্ণ সমাজ গঠন করবি তা না জালিয়াতি করছিস। সবাইকে বলে রাখছি! ওই লোকটার যদি সামর্থ্য না থাকে তাহলে তোরা সবাই মিলে টাকা উঠিয়ে দিয়ে সাহা্য্য করবি। যাতে ওনার দোকানে আরো পাঁচ জন বেকার কাজ করতে পারে। তারাও যাতে সাবলীল হতে পারে।”

পূর্ণ সেদিনের মতো কথা শেষ করে শিকদার বাড়ীর দিকে রওনা হয়। গেট দিয়ে প্রবেশ করার সময় রোদের মুখোমুখি হয়। মেয়েটা ভার্সিটি থেকে এসেছে। পূর্ণ দেখেও না দেখার ভাণ করে চলে যায়। রোদ পূর্ণর যাওয়ার পাণে একবার তাকায়।
সাদা পান্জাবি পরিহিত শ্যামপুরুষ। রোদ আর সেদিকে মনোযোগ নেয়নি। ভেতরে চলে যায় সে।

তূর্ণ বিকেলের দিকে অফিস থেকে ফিরে। ঘামাক্ত শার্ট,ক্লান্ত শরীর নিয়ে বাড়ীতে প্রবেশ করে। সোফার উপর বসে পড়ে। তখন রোদ আসতে তাকে বলে ফ্যান ছেড়ে দিতে। রোদ ও বাধ্য মেয়ের মতো ফ্যান ছেড়ে ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা জুশ এনে দেয় তূর্ণ কে। বিনিময়ে ধন্যবাদ জানায় তূর্ণ। জুশ টা শেষ করে নিজের রুমে যায় তূর্ণ। পূর্ণ,তূর্ণর একমাত্র বোন তিশা আসে বাড়ীতে। সে তার আন্টির বাড়ীতে গিয়েছিলো। রোদ তাকে দেখে ভীষণ খুশি হয়। যদিও শূন্যর বোন শিশা আছে তবে সে মাত্র ক্লাস টেনে পড়ে। তিশা আবার রোদের একব্যাচ সিনিয়র। সুখ দুঃখের সঙ্গী।

সন্ধ্যায় রোদ,তিশা পড়তে বসে। রোদের ক্যামিস্ট্রির একটা বিক্রিয়া বুঝতে সমস্যা হচ্ছে। তিশাও তেমন ভালো পারে না। দু’জনেই বসে আছে বিক্রিয়া সামনে নিয়ে। তখন তিশা বলে,
“পূর্ণ ভাই এসব ভালো পারে। তার কাছে যা!”

“এটা বুঝার দরকার নেই। তূর্ণ ভাই হলে একটা কথা ছিলো। বললে বুঝিয়ে দিতো কিন্তু সে তো কমার্সের স্টুডেন্ট। পূর্ণ ভাই কেনো জানি আমায় দেখতে পারেনা।”

“ধূর! সর তো। আমার ভাইরা অনেক ভালো। তূর্ণ ভাই দায়িত্বশীল একটু বেশী। কিন্তু পূর্ণ ভাই তারচেয়ে এক কাঠি উপরে। তার মনে যদি একবার কেউ জায়গা করে নিতে পারে তাহলে মনে হবে সর্বসুখ জেনো এই পূর্ণ ভাই। ভীষণ কেয়ার করে। তবে উনি প্রকাশ করে কম। তুই ট্রাই করে দেখ।”

“খেয়েদেয়ে কাজ নাই তো!”

“তুই তো একটু হাবা টাইপের।”

“তোহ? হাবা তো কী হয়েছে। আমার যথেষ্ট আর্ত্মসন্মান আছে।”

“আরে যা না! গেলে আর্ত্মসন্মান কিছু হবে না।”

“যদি ধমক দিয়ে পাঠিয়ে দেয়?”

“গা’লি চার পাঁচ টা মে’রে চলে আসবি।”

“আমি গা’লি দেইনা।”

“তাহলে আয় তোকে শিখিয়ে দিচ্ছি কীভাবে গা’লি দিতে হয়।”

“না থাক।”

তিশা রোদকে ঠেলেঠুলে পূর্ণর রুমে পাঠায়। রোদ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বলে,
“ভাইয়া একটু আসবো?”

“আসো!”

রোদ ভেতরে গিয়ে বলে,
“ভাইয়া বসবো?”

“বসো!”

রোদ সামনের সিঙ্গেল সোফায় বসে। পূর্ণর দিকে বই এগিয়ে দিয়ে বলে,
“এই বিক্রিয়াটা একটু বুঝিয়ে দাও।”

পূর্ণ ল্যাপটপ থেকে দৃষ্টি সরিয়ে বইয়ে দৃষ্টি স্থির করে। একবার রোদের মুখের দিকে তাকায়। একবারে শান্ত কন্ঠে তাকে বিক্রিয়াটা বুঝিয়ে দেয় পূর্ণ। রোদ তাকে ধন্যবাদ দিয়ে ভালো,ভালোয় বিদায় নেয়। রুমে আসতে তিশা বলে,
“কী দেখলি তো? বললাম না তূর্ণ ভাইয়ের থেকে পূর্ণ ভাই এক ধাপ উপরে।”

“হ্যাঁ বুঝলাম।”

“হ্যাঁ রে বোকা মেয়ে। এভাবেই আস্তে,আস্তে আমার ভাইয়ের মন জয় করবি। তারপর তোকে আমার ভাবী বানিয়ে শিকদার বাড়ীতেই রেখে দেবো। দূরে যেতে দেবো না।”

#চলবে