#এক_ফালি_প্রণয়|৩|
#শার্লিন_হাসান
পরের দিন রোদের সাথে পূর্ণর দেখা হয় রোদের ভার্সিটির ক্যাম্পাসে। একটা দরকারি কাজেই এসেছে পূর্ণ। সময়টা দুপুর। রোদ পূর্ণ কে দেখেও না দেখার ভাণ করে তিশা সহ চলে আসে। কী মনে হতে পূর্ণ তার গাড়ীর চাবিটা নিয়ে তার দলের লোকদের বিদায় জানিয়ে চলে আসে। তিশা, রোদ দাঁড়িয়ে আছে গেটের বাইরে রাস্তার সাইডে। পূর্ণ তাদের সামনে এনে গাড়ী থামায়। তিশাকে হাতের ইশারা করে গাড়ীতে উঠতে বলে। তিশা জেনো চমকালো। এটা কীভাবে সম্ভব? তিশাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে পূর্ণ রাগ দেখিয়ে বলে, “আমি কী কোন জোক্স বলেছি? গাড়ীতে উঠতে বলেছি। কথা কী কানে যায়নি?”
পূর্ণর কথায় তিশা গাড়ীর ডোর খুলে রোদ সহ বসে। দু’জনে চমকিয়েছে বেশ। পূর্ণ লুকিং গ্লাসে পেছনে তাকায়। রোদের মুখের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসে। পরক্ষনে ড্রাইভিংয়ে মনোযোগ দেয় পূর্ণ।
বাড়ীতে এসে তিশা,রোদ আস্তে ধীরে ভেতরে প্রবেশ করে। তাঁদের বিশ্বাস হচ্ছে না পূর্ণ নিজে থেকে ওদের গাড়ীতে উঠতে বলেছে। তাও পূর্ণর জানপ্রাণ কিডনির থেকেও মূল্যবান তার শখের একমাত্র গাড়ী। যেটায় যাকে তাকে উঠায় না সে। পূর্ণ চোখের চশমাটা খুলে জোর কদমে ভেতরে প্রবেশ করে। তখন তার ছোট আম্মু তার জন্য কোল্ড ড্রিং নিয়ে আসে। পূর্ণ গ্লাসটা হাতে নিয়ে, সোফায় বসতে,বসতে বলে, “তিশাকে দাওনি কোল্ড ড্রিং?”
পূর্ণর কথায় সাইখা ইসলাম শুধায়, “দিয়েছি ভেতরে চলে গেছে ওরা।”
“ওহ্! চাচ্চু কোথায়?”
“সে এখন অফিস থাকে তুমি জানো না?”
পূর্ণ মাথা চুলকায়। সে বেমালুম ভুলে গিয়েছিলো সেই কথা। এই কয়েকদিনে ব্যস্ততার ভীড়ে এ ও ভুলে গেছে যে তাঁদের কোম্পানিতে তার একটা পদ আছে। যেটার দায়িত্ব তার উপর থাকলেও ঠিকঠাক পালন হচ্ছে না। পূর্ণ পুনরায় নিজের রুটিনে ফেরার মনস্থির করে। সবই ঠিকঠাক হয় কিন্তু রোদকে নিয়ে তার কেনো জেনো এতো এলার্জি সে বুঝতেই পারে না।
বিকেলের দিকে শিশা স্কুল থেকে আসতেই তিশা,রোদ সহ তারা ঠিক করে বাজারের পাশের নদীর পাড়ে যাবে। তারা তিনজন রেডি হয়ে লিভিং রুমে আসতে তূর্ণর মুখোমুখি হয়। তখন তূর্ণ তিশাকে জিজ্ঞেস করে, ” সন্ধ্যায় কোথায় যাচ্ছো?”
“সন্ধ্যা কোথায় ভাইয়া? নদীর পাড়ে যাবো।”
“শূন্যকে নিয়ে যাও?”
“ভাইয়া তো অফিস থেকে এসেছে।”
“তাহলে পূর্ণকে নিয়ে যাও। ও তো অফিসে যায়নি।”
“জীবনেও যাবে না পূর্ণ ভাই।”
তূর্ণ আর কথা বাড়ায়নি। সে জায়গা মতো মেসেজ সেন্ড করে দেয়। তিশা,রোদ,শিশা সহ তারা বেড়িয়ে পড়ে। ড্রাইভার কে সাথে নিয়েই যায় তারা। নদীর স্রোতে পা ভিজিয়ে বসে আছে রোদ। তার থেকে শিশা,তিশা একটু দূরে। তার পিকচার তুলছে। রোদ সেদিকটায় তাকিয়ে নজর সরিয়ে দৃষ্টি স্থির করে নদীর স্রোতে তার আলতায় রাঙানো ভেজা পা গুলোর দিকে। ভীষণ রকমের সুন্দর লাগছে তার পা গুলো। নদীর পাড়ে তেমন ভীড় নেই তাই তারা তিনজন সুন্দর ভাবে সময় কাটাচ্ছে।
কিছুক্ষণ পর রোদ খেয়াল করে তাঁদের আশে-পাশে কিছু ছেলে ঘুরঘুর করছে। কেউ বা রোদের দিকে দৃষ্টি স্থির রাখছে। রোদের বিষয়টা খটকা লাগে। এখান থাকাটা সুরক্ষিত মনে হয়নি। তাই উঠে দাঁড়াতে একটা ছেলে তার সামনে আসে। নদীর উত্তাল স্রোতের দিলে নজর দিয়ে বলে, “আপু আপনার নদী পছন্দ?”
“হ্যাঁ!”
“নদীর উত্তাল স্রোত?”
“ভয় করে।”
“সাতার জানেন?”
“আপনায় বলবো কেন?”
ছেলেটা হাসে। রোদ অবাক হয়। বেশী পাত্তা না দিয়ে তিশার কাছে যাওয়ার জন্য পা বাড়ীতে ছেলেটা তার কাঁধে ধাক্কা দিয়ে নদীতে ফেলে দেয়। রোদ আগামাথা কিছুই বুঝলো না। তবে ছেলেটা আর দেরী করেনি। তড়িঘড়ি প্রস্থান করে কল লাগায় নির্দিষ্ট নাম্বারে। ওপাশ থেকে কল রিসিভ হতে এপাশ থেকে ছেলেটা জানায় “কাজ হয়ে গেছে।” কথাটা শোনা মাত্রই অপরপাশের ব্যক্তি শব্দ করে হেঁসে দিয়ে বলে, “টাকাটা পেয়ে যাবি। যদি মেয়েটা ম’রে যায় তো তোর জন্য সারপ্রাইজ আছে। আর যদি ম-রা অবস্থা হয় তো তোর এমাউন্ট কিছুটা বাড়িয়ে দেওয়া হবে।”
“ম-রে গেলে ভালো হবে তাই না স্যার?”
“অবশ্যই ভালো হবে।”
তিশা,শিশা দু’জনে হেল্প,হেল্প বলে চিল্লাতে আশেপাশে থাকা দু’টো মধ্যবয়স্ক ছেলে তড়িঘড়ি আসে। রোদ স্রোতে কাতরাচ্ছে। সে তো সাতার জানে না। তিশা ভয় পেয়ে শিশার হাত আঁকড়ে ধরে। মধ্যবয়স্ক ছেলে দু’টোর সাহায্যে রোদকে উপর আনা হয়। ড্রাইভার আসতে রোদকে নিয়ে সোজা বাড়ীতে চলে যায় তারা। রোদ পানিতে ডুবতে,ডুবতে বেঁচে গেছে বিষয়টা পূর্ণ,তূর্ণ,শূন্যর কানে যেতে তূর্ণ, শূন্যর মনের ব্যকুলতা কাজ করলেও পূর্ণ শোনার পরেও লিভিং রুমটায় অব্দি আসেনি। সে তার অফিসের কাজ নিয়ে ব্যস্ত।
শারমিন আঞ্জুমা, সাইখা ইসলাম তারা তূর্ণ,শূন্য,তিশাকে পুরো দমে বকে যাচ্ছেন। তূর্ণ অনেকটা ভয় পেয়েছে। রোদকে কাপড় বদলে রুমে শুইয়ে দেওয়া হয়। পাশে তিশা,তূর্ণ বসা। তূর্ণ রোদের দিকে তাকিয়ে বলে, “তুমি কীভাবে পড়ে গেছো পানিতে?”
“আমাকে একটা ছেলে ধাক্কা দিয়েছে।”
“তুমি কী বোকা রোদ? ছেলেটা তোমায় ধাক্কা দেওয়ার সাহস পায় কীভাবে?”
“আমি জানি না।”
“তোমার গায়ে টাচ করার দুঃসাহস দেখায় কীভাবে সেটাই তো আমি বুঝিনা। তোমাদেরকে কে বলেছে এই সন্ধ্যায় নদীর পাড়ে যেতে?”
তখন তিশা শুধায়, “তোমার ভাই কিসের মেয়র? এই ক্ষমতা দিয়ে কী হবে বলো তো? যেখানে তার ঘরের বোনেরাই সেইফ না।”
“ওর সাথে কথা বলার চেয়ে একটা গ’রুর সাথে কথা বলা বেটার।”
“আসলেই পূর্ণ ভাই এমন কেনো?”
“আসলে পূর্ণ ঠিক আছে। শুধু ব্যক্তি ভেদে নিজেকে প্রকাশ করে।”
কথাটা বলে রোদের দিকে তাকায় তূর্ণ। তখন সাইখা ইসলাম রোদের জন্য কফি সাথে হালকা নাস্তা নিয়ে আসেন। রোদ নাস্তা করে বসতে সাইখা ইসলাম তার পাশে বসে মাথায় হাত বুলায়। কপালে চুমু খেয়ে বলেন, “তুমি এতো বোকা কেনো হ্যাঁ? ছেলেটার সাহস কী করে হয় তোমায় টাচ করার?”
“আসলে আমি বুঝে উঠতে পারিনি।”
“ঠিক আছে। পূর্ণকে বলে ওই ছেলের খোঁজ নেওয়াবো।”
সাইখা ইসলামের কথায় আর কেউই কিছু বলেনি।
পূর্ণ রুম থেকে বের হতে শারমিন আঞ্জুম তাকে বকা-ঝকা শুরু করেন। তবে পূর্ণর সেসবে হেলদোল নেই। সে নিজের ফোনে আসতে থাকা কলে সময় দিচ্ছে। তূর্ণ আর কিছুই বলেনি পূর্ণকে।
********
পরের দিন সকালে রোদ ছাঁদে যাওয়ার পেছন দিয়ে তূর্ণ ও ছাঁদে যায়। রেলিং ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা রোদের সামনে দাঁড়িয়ে কপালে হাত রাখে তূর্ণ। তূর্ণর কাজে রোদ বেশ অবাক হয়। তখন তূর্ণ উচ্ছ্বসিত কন্ঠে বলে, ” ওই ছেলেটার চেহারা মনে আছে তোমার?”
“হ্যাঁ আছে।”
“আচ্ছা সমস্যা নেই। ওর ব্যবস্থা হয়ে যাবে। তার শরীর এখন ঠিক আছে?”
“হ্যাঁ।”
“মেডিসিন ঠিকঠাক নেও তো?”
“নেই।”
“নাস্তা করেছো?”
“না।”
“আচ্ছা চলো নাস্তা করবে।”
কথাটা বলে রোদের হাত ধরেই নিচে যায় তূর্ণ। তখন আর পূর্ণ রুম থেকে বেড়িয়ে লিভিং রুমে আসে। তূর্ণ আর রোদকপ এভাবে একসাথে দেখে সেও বেশ অবাক হয়। তূর্ণ চেয়ার টেনে রোদকে বসায়। তখন কাজের বুয়া চায়ের ট্রে, সাথে নাস্তা নিয়ে আসে। তূর্ণ নিজে রোদের প্লেটে পরোটা দেয়। তখন তিশা,শিশা আসতে তাঁদের কেও সেম ভাবে দেয়। পূর্ণকে ডেকে এনে রোদের পাশের চেয়ারটায় বসায় তূর্ণ। কাপে চা ঢেলে দিতে,দিতে বলে, “রাগ কমা ভাই আমার। নাহলে পস্তাতে হবে একদিন।”
“প্রেম ভালোবাসার খেলা খেলছি না যে পস্তাতে হবে একদিন।”
“মানে?”
পূর্ণর কথায় তূর্ণ শুধায়। তখন পূর্ণ হেসে বলে, “সবই ঠিক হবে একদিন। যদি উপরওয়ালা চায়। ওনার ইশারায় হয়ত ভাইয়ের গার্লফ্রেন্ড আমার বউ ও হতে পারে।”
#চলবে