#এক_ফালি_প্রণয়|১০|
#শার্লিন_হাসান
“কী?”
” তুমি যা দেখো সব সত্যি না। মিথ্যেকেও কিন্তু সত্য বলে তুলে ধরা হচ্ছে তোমার সামবে। এছাড়া তুমি সামনে এমন অনেক বিষয়ের মুখোমুখি হবে, যে বিষয়গুলো সত্য মনে হবে তোমার কাছে, কিন্তু মূলত ওগুলো ফেইক। আবার কিছু ব্যপার তোমার কাছে ফেইক মনে হবে তবে সেই সব বিষয়গুলো চোখ বন্ধ করে বলতে পারো সত্য। এই জিনিসটা চেনা খুবই কঠিন। সত্য এবং মিথ্যা! তবে আমি পূর্ণ সব জানা সত্ত্বেও কখনো তোমায় বলবো না কোনটা সত্য আর কোনটা মিথ্যে।”
” তার মানে তুমি যা দেখাচ্ছো এবং করছো তা মিথ্যে!”
“আমি আমার কথা বলিনি।”
“তোহ?”
“কিছু না।”
“না বললে নাই। এমনিতে তোমায় বিশ্বাস করা বড্ড দায়।”
“বিশ্বাস না করলে কী আর করার।”
রোদ উত্তর দেয়না। বাড়ীতে এসে পূর্ণর সাথেই ভেতরে প্রবেশ করে। রোদ,পূর্ণকে একসাথে দেখে খানিক অবাক হয় সাইখা ইসলাম। তখন পূর্ণ সোফার উপর বসতে রোদকে বলে, ” ফ্যানটা ছেড়ে দাও তো!”
“পারবো না।”
তিক্ত কন্ঠে জবাব দেয় রোদ। তখন পূর্ণ খোঁচা মেরে বলে, ” তূর্ণ ভাই বললে আর দেরী হয়না। যাই হোক….
“মুখটা বন্ধ রাখবে?”
কথাটা বলে রোদ ফ্যান ছেড়ে ভেতরে চলে যায়। শারমিন আঞ্জুম রোদ,পূর্ণর মিল দেখে খানিক চমকায়। সাইখা ইসলামের থেকে কোল্ড ড্রিং নিতে,নিতে পূর্ণ শুধায়, ” এতো অবাক হওয়ার কী আছে? আমি বিয়ে করিনি জাস্ট একটু কথা বলেছি।”
” তা আসলে তা না। তুমি তো রোদকে তেমন পছন্দ করো না পূর্ণ।”
“ছোট আম্মু তুমি ও না। আমি কবে বলেছি ওকে পছন্দ করি না?”
“আসলেই তো!”
মনে,মনে শুধায় সাইখা ইসলাম তবে প্রকাশ করে না। পূর্ণ ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে নিজের রুমে চলে যায়।
রোদ রুমে প্রবেশ করতে তিশা আসে পেছন দিয়ে। রোদকে দেখে বলে, ” তুমি না খানম বাড়ী যাও?”
” যাচ্ছিলাম তোমার ভাই যেতে দেয়নি আমায়।”
“কী করেছে আবার?”
“তেমন কিছু না। বলেছে আমায় ছাড়া নাকী তার ভালো লাগবে না তাই জোর করে নিয়ে এসেছে শিকদার বাড়ীতে।”
“এই সাজানো মিথ্যে কথা বাদ দিয়ে অন্য কথা বলতো। আমি জানি আমার ভাই কেমন।”
” কেন ওটা মিথ্যে হতে যাবে?”
” আরে ভাই জানি,জানি আমার ভাই কেমন মানুষ। আর শোন এটা কখনো পসিবল না। তুই যেভাবে বলছিস জেনো আমার ভাইয়ের ভালোবাসার মানুষ তুই।”
” এ্যাই ওনার ভালোবাসার মানুষ হতে বয়ে গেছে আমার। আসলে ওটা ফান করে বলেছি। আমিও জানি তোর ভাই যে আস্ত গ’রু!”
” বল না কী হয়েছে?”
“ওই রাফি কে ইভটিজিং এর কেসে ফাঁসিয়ে দিয়েছে তোর ভাই।”
” যদি জেল থেকে এসে তোর ক্ষতি করে।”
” তখন তোর ভাইয়ের দোষ।”
“হাহ্! ভালো,ভালো।”
কথাটা বলে তিশা প্রস্থান করে। রোদ শাওয়ার নিতে ওয়াশরুমে ঢুকে যায়।
বিকেলের দিকে ছাঁদে দাঁড়িয়ে আছে রোদ,তিশা। শিকদার বাড়ীর গেট দিয়ে তূর্ণর গাড়ী প্রবেশ করছে। রোদের খেয়াল তূর্ণর গাড়ীর দিকে। ক্লান্ত চেহারা নিয়ে গাড়ী থেকে বেড়িয়ে বাড়ীতে প্রবেশ করে তূর্ণ। লিভিং রুমে কেউ নেই। শরীফ শিকদার ক্লান্ত কন্ঠে সাইখা ইসলামকে ডাকে। তিনি এসে তাঁদেরকে কোল্ড ড্রিং দেয়। তূর্ণ আশেপাশে চোখ বুলিয়ে সাইখা ইসলামকে প্রশ্ন করেন, ” তিশা কোথায়?”
“রোদ তিশা ছাঁদে গেছে।”
তূর্ণ কিছু বলেনা। ক্লান্ত মস্তিষ্ক এবং দেহ নিয়ে সে তার রুমের দিকে অগ্রসর হয়।
সন্ধ্যায় সবাই একসাথে লিভিং রুমে বসেছে। সবাই মিলে ট্যুর প্লানিং করছে। অবশেষে সিদ্ধান্ত হয় তারা সিলেট যাবে ট্যুরে। সেই অনুযায়ী ডেট ও ফিক্সড করা হয়। আগামী বৃহস্পতিবার রওনা হবে সবাই। তূর্ণ ফোন স্ক্রোল করছে পাশে শূন্য বসা। শরীফ শিকদার লিভিং রুমে এসে পূর্ণকে জিজ্ঞেস করেন, ” রাফির সাথে তোমার কী জামেলা হয়েছে পূর্ণ? ”
“ও কিছু না। এমনিতে!”
” তাই বলে তুমি কেস দিবা?”
“তো কী করবো?”
শরীফ শিকদারের চোখে চোখ রেখে কথ বলে পূর্ণ। তখন তূর্ণ তাকে কিছুটা থামিয়ে বলে, ” সুন্দর ভাবে কথা বল। এভাবে রিয়েক্ট করার কী আছে?”
” না এমনিতে! তাহসিনা খানমের ইন্ডাস্ট্রির পেছনে তো একের পর এক পরেছে ভাই। কে জানে কবে কে কোনদিক দিয়ে ওকে ব্লাকমেইল করিয়ে নিজেদেী নামে ইন্ডাস্ট্রি করিয়ে নেয়।”
“এতো সাহস এখন অব্দি কারোর হয়নি পূর্ণ।”
কটাক্ষের সাথে কথাটা বলে শরীফ শিকদার। পূর্ণ জবাব দেয়না। মাঝখানে রোদ সবার ঝগড়াঝাঁটি দেখছে। তার এই ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে আজকাল একটু বেশী হচ্ছে। সে বুঝেনা এই কয়েক কোটি টাকার জন্য মানুষ এমন করে কেন? কী এমন আছে ইন্ডাস্ট্রি তে? তেমন কিছু নেই। হয়ত এটা দিয়ে যুগের পর যুগ অনেক টাকা আয় হবে। একটু নাম হয়েছে ইন্ডাস্ট্রির। এতটুকুই তো? কিন্তু রোদের তো এসবে আগ্রহ নেই। এই ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে এতো মাথা ব্যথা সবার মাঝেমধ্যে রোদ সিদ্ধান্ত নেয় ইন্ডাস্ট্রি টা কাউকে দান করে দিয়ে, নিজে দেশ ছেড়ে চলে যাবে। তবে আজকাল পূর্ণ রোদ আর ইন্ডাস্ট্রি দু’টো নিয়েই বেশ এলার্ট। এর কারণটা রোদ নিজেও জানে না।
তাঁদের রাগারাগির মাঝে শারমিন আঞ্জুম রাতের ডিনার ঠিক করে। রোদ নিজে সেখান থেকে প্রস্থান করে রুমে চলে আসে। বিষয়টা তূর্ণ খেয়াল করেছে। একটু জোর ধমক দিয়ে বলে, ” হয়েছে এবার থামো। ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে এতো মাথা ঘামানোর কিছু হয়নি। রোদের বিয়ে হলে ও আর ওর হাজবেন্ড মিলে ওদের ইন্ডাস্ট্রি সামলাবে। যতদিন আমাদের দায়িত্ব আছে ততোদিন সুন্দর ভাবে পালন করে যেতে পারলেই হলো।”
” আমাদের দায়িত্বে থাকাকালীন কেউ সেটা চিনিয়ে নিতে চাইবে ব্যপারটা কেমন জেনো?”
” আমি এই ধরনের খবর পায়নি পূর্ণ। তুমি উল্টাপাল্টা চিন্তা বন্ধ করো।”
গম্ভীর কন্ঠে জবাব দেয় তূর্ণ। পূর্ণ আর কিছু বলেনা। সে নিজেও রুমে চলে যায়। বাকীরা তাকিয়ে আছে। ডিনারের সময় দু’জন রাগ দেখিয়ে চলে গেলো। তূর্ণ উঠে ত্রস্ত পায়ে রোদের রুমের সামনে যায়। দরজায় বার কয়েক নক দিতে রোদ দরজা খোলে। নিজেকে স্বাভাবিক রেখে দাঁড়ায়। তখন তূর্ণ খেয়াল করে রোদের চোখ মুখের দিকে। দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলে, “রোদ পাখি তুমি কান্না করছো কেন? দেখো আমরা আছি তো! কেউ না থাকুক আমি যতদিন আছি ততোদিন তোমার গায়ে আঁচড় লাগতে দেবো না। ভরসা রাখো পাখি।”
কথাটা বলে রোদের গালে হাত রাখে তূর্ণ। তূর্ণর কথায় জেনো রোদের আরে বেশী কান্না পাচ্ছে। কয়েক ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়তে তূর্ণ সেটা মুছেও দেয় স্বযত্নে। রোদকে নিয়ে ডিনার করার জন্য লিভিং রুমে যায়। পূর্ণকে কেউ ডাকেনি। জানে তার তেজ বেশী। আজকে ডেকেও কাজ হবে না। পূর্ণ আসবেও না খাবার খেতে। শুধু সময় নষ্ট হবে। সবাই চুপচাপ খেয়ে উঠে পড়ে। তূর্ণ খাবার শেষ করে নিজের রুমে প্রবেশের সময় রোদকে ডাক দেয়। রোদ আসতে নরম স্বরে বলে, ” তোমার কিছু লাগবে? টাকা আছে?”
“হ্যাঁ আছে। লাগবে না কিছু।”
তূর্ণ কথা বাড়ায়না। রোদের দিকে একনজর তাকিয়ে ‘গুড নাইট’ বলে রুমে চলে যায়। রোদ রুমে এসে বেলকনিতে চলে যায়। তার পাশের বেলকনিটা পূর্ণর। সেদিকে আর নজর দেয়না রোদ। আকাশের দিকে দৃষ্টি স্থির করে দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে। সিগরেটের স্মেল আসতে পাশে তাকায় রোদ। পূর্ণ ধোঁয়া উড়াচ্ছে। বিষয়টা বিরক্ত লাগে রোদের। পূর্ণ বার কয়েক সিগরেটে টান দিয়ে সেটা ফেলে দেয়। পুনরায় আরেকটা ধরায়। রোদ শুধু তার কান্ড দেখছে।
#চলবে