#এক_ফালি_প্রণয়|১৭|
#শার্লিন_হাসান
“আসলে ওইদিন রোদকে আমি মা-রতে চেয়েছিলাম নদীতে চুবিয়ে। ছেলেটা আমারই পাঠানো লোক ছিলো। কিন্তু সেদিন তুমি বাঁচিয়ে নিয়েছে ওকে। আমি সব জানি ভাইয়া। এমনকি গতকালকের লোক গুলো তোমার পাঠানো যারা রোদকে রাফির গোডাউন থেকে উদ্ধার করে এনেছে। কিন্তু রোদ জানে ওকে আমি বাঁচিয়েছি গতকাল।
থেমে,
আসলে ভাইয়া আমি বড্ড স্বার্থপর। রোদকে পারলে বলিও আমার থেকে দূরে থাকতে। আমার ভালো মানুষির পরে আমার কুৎসিত বিকৃত কাজ গুলোর কথা জানতে পারলে সইতে পারবে না। আমি জানি তুমি হয়ত ভাবছ রোদ আর আমার মাঝে কিছু আছে। এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। আমাদের মাঝে কিছু নেই তবে হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু না।”
“পূর্ণ এসব করে কী লাভ বলতো?”
“এটার পেছনেও আরেকটা কারণ আছে ভাইয়া।”
কথাটা বলে পূর্ণ জ্বলতে,জ্বলতে শেষ হয়ে যাওয়া সিগারেটটা নিচে ফেলে পা দিয়ে পিষে দেয়। আকাশের দিকে তাকিয়ে ধোঁয়া ছেড়ে পুনরায় বলে, ” তাড়াতাড়ি বিয়েটা করো ভাইয়া আমার সিরিয়াল কিন্তু তোমার পরে।”
” সে তো জানি। তা পছন্দের কেউ আছে নাকী?”
প্রসঙ্গ পাল্টে নেয় দু’জনে। তখন পূর্ণ মুচকি হেঁসে শুধায়, ” সময় হলে বলবো।”
“তার মানে কেউ আছে।”
” সে থাকতেও পারে। কত মেয়েরা যে লাইন মারে। দু’একজন থাকতেই পারে।”
তূর্ণ ব্রু কুঁচকে তাকায় পূর্ণর দিকে। দু’জনের কথার মাঝে কোথা থেকে তিশা আসে রোদকে নিয়ে। অনেকটা শব্দ করেই আসে যেটায় তূর্ণ, পূর্ণ বুঝে তাদের বোন আসছে। তিশা পূর্ণর দিকে তাকিয়ে বলে, ” ভাইয়া তোমার কল বাজছে।”
“কই?”
“ফোন তো তোমার রুমে।”
” তা আসার সময় নিয়ে আসলে কী হতো?”
“পারবো না। নিজের কাজ নিজে করা ভালো।”
তিশার ত্যাড়া কথায় তূর্ণ হাসে। রোদ ওদের কান্ড দেখছে দাঁড়িয়ে, দাঁড়িয়ে। তূর্ণ রোদের দিকে তাকিয়ে দৃষ্টি সরিয়ে নেয়। পূর্ণ সেখান থেকে প্রস্থান করতে তিশা, রোদ ও চলে আসে। তূর্ণ একাই ছাঁদে রয়ে যায়। তারা তিনজন যেতে তূর্ণ নিজেও সিগারেট ধরায়। ক্লান্ত মস্তিষ্ক সিগারেট টান দিতে জেনো অনেকটা হালকা হয়ে যায়।
“মেয়ে মানুষ বড়ই অদ্ভূত।”
********
কেটে যায় দুইদিন। আজকে শুক্রবার, সিনথিদের বাসায় যাবে শিকদার পরিবার। বিয়েটা খুব শীঘ্রই হতে চলেছে। তূর্ণ আজকে সরাসরি তার হবু বউকে দেখবে। অবশ্য এর আগেও দেখেছে তাও সে কী ঝগড়ুটে মেয়ে। মনে পড়লে তূর্ণ ভাবে, তার বাকী জীবনটা কী হবে কে জানে।
শিকদার পরিবারের সবাই জোহরের নামাজ আদায় করে রওনা হয় সিনথিদের বাসার উদ্দেশ্যে।
শিকদার পরিবারকে সুন্দর ভাবে বরণ করে নেওয়া হয়। লান্স করে সবাই মিলে বসে। রোদ,তিশা মিলে সিনথিকে নিয়ে আসে। যেহেতু এখন সিনথির কাজিন বা রিলেটিভ তেমন কেউই নেই। তূর্ণর পাশে বসানো হয় সিনথিকে। রোদ তাঁদের পিকচার তুলছে। দু’জনকে বেশ মানিয়েছে।
সিনথি আশপাশে তাকিয়ে তূর্ণর দিকে একনজর তাকিয়ে মুখটা গোমড়া করে নেয়। তূর্ণর ব্যপারটা নজরে আসলোও পাত্তা দেয়না। সে ফুল ভাব নিয়ে বসে আছে। সিনথি বসে,বসে তূর্ণর গুষ্টি উদ্ধার করছে। সেদিন ভালো করে উদ্ধার করতে পারেনি। দু’জন দু’জনের দিকে এভাব তাকাচ্ছে জেনো কত বছরের শত্রুতা আছে। পূর্ণ বসে,বসে তার ভাই আর হবু ভাবীকে দেখছে। একটু পর তূর্ণ এবং সিনথি দু’জনের হাতে রিংয়ের বক্স দেওয়া হয়। তূর্ণ হাত এগিয়ে দিলে সিনথি উঠে দাঁড়ায়।
” উনি আমাকে স্যরি না বললে এই এনগেজমেন্ট পানির নিচে হবে।”
“কিসের জন্য স্যরি বলবো?”
তূর্ণ নিজেও উঠে দাঁড়ায়। বাকীরা তাকিয়ে আছে। তখন সিনথি বলে, ” সেদিন তো তেজ দেখিয়ে চলে গেলেন। তা যদি আপনার জন্য আমি মা-রা যেতাম তাহলে এন্গেজমেন্ট কী আমার ভূতের সাথে করতেন? সেদিনের কাজের জন্য স্যরি বলেন।”
“ইম্পসিবল। আপনি দেখে শুনে চলতে পারেন না রাস্তায়?”
“আপনি দেখে শুনে গাড়ী চালাতে পারেন না রাস্তায়?”
“রাস্তাটা কী আপনার নাকী যে আমায় আপনার হুকুম মানতে হবে। আমার গাড়ী আমার ইচ্ছে।”
” রাস্তাটা আপনার ও না। তাই আমি কীভাবে হাঁটবো না হাঁটবো আমার ইচ্ছে।”
এরই মাঝে সিনথির বাবা ধমকে সিনথিকে বলেন, ” এবার তো চুপ যাও। সব জায়গায় ঝগড়া করতে হয়না সিনথি।”
“আরে ভাইয়া স্যরি বলে দাও। নাহলে বিয়ের পর কত ধানে কত চাল বুঝবা।”
মাঝখান দিয়ে পূর্ণ কথাটা বলে। তখন সাইখা ইসলাম বলেন, ” আসল ঘটনাটা কেউ বলো। তাহলে এটার সমাধান করবো। যে ভুল করেছে সেই স্যরি বলবে। দ্যান এনগেজমেন্ট হবে।”
তখন সিনথি বলতে শুরু করে, ” ওইদিন বিকেলে আমি বাইরে গিয়েছিলাম একটা দরকারে। রাস্তা দিয়েই হেঁটে আসছিলাম। আমি সাইডে ছিলাম কোথা থেকে উনি এসে উনার গাড়ী দিয়ে আমায় ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়। আমি হাতে ব্যথা পেয়েছিলাম। উনি একবার ও স্যরি বলেনি উল্টো তেজ দেখিয়ে চলে গেছে।”
“ঘটনা কী সত্যি?”
শারমিন আঞ্জুমের কথায় তূর্ণ আমতা,আমতা করে বলে, ” আমি স্যরি বলতাম কিন্তু উনি আমায় ডিটারজেন্ট ছাড়া ধুয়েমুছে দিয়েছে।”
“তাহলে থাক এটা তোমরাই সমাধান করো বিয়ের পর। এখন শুভ কাজটা সেরে নেও।”
দু’জনে পুনরায় বসে। সিনথি হাত এগিয়ে দিতে তূর্ণ রিং পড়ায়। তূর্ণ হাত এগিয়ে দিতে সিনথি রিং পড়ায়। এরপর দু’জনে মুখটাকে থমথমে করে বসে ছিলো। জেনো জোর করে তাঁদের বিয়ে দিচ্ছে বাবা-মা।
তূর্ণ উঠে পূর্ণর পাশে গিয়ে বসে। রোদ সিনথির পাশে বসে। তারা গল্পগুজব করছে। তখন শূন্য এসে দুই ভাইয়ের পাশে বসে। সিনথি আর রোদকে দেখিয়ে বলে, ” তোমাদের মাইন তো তোমাদের লাইফ সাইন করবে,করছে। আমাকেও একটা মাইন খুঁজে দাও না? বলছিলাম সিনথি ভাবীর বোন থাকলে যদি…..”
“তোকে আমরা অন্য জেলায় বিয়ে করাবো।”
পূর্ণর কথায় শূন্য বলে, ” অন্য জেলায় কোন জেলায়?”
“চাঁদপুর জেলায়। এক কাজ কর চাঁদপুরে মেয়ে খোঁজ।”
“অন্য জেলার কথা বলো। চাঁদপুর ছাড়া।”
শূন্যার কথায় পূর্ণ তার পিঠে চাপড় মেরে বলে,
“কেন ভাই? চাঁদপুরের চাঁদ কন্যা কেউ কী তোমায় ধোঁকা দিলো?”
” আসলে প্রেম করে বিয়ে করার শখ হলে অন্য জেলায় খুঁজো। চাঁদপুরের মেয়েদের বিশ্বাস করা দায়। ওরা বেশী পূর্তিবাজ হয়। চুম্বকের মতো আকর্ষণ করে ঠাস করে ছেড়ে দিবে।”
“কী জানি। হয়ত!”
তাদের কথাবার্তা শেষ হতে ডেট ফিক্সড করা হয়। সোম মঙ্গল হলুদ আর মেহেদী নাইট। বুধবার তাঁদের বিয়ে। সবকিছু ঠিকঠাক করে শিকদার পরিবারের লোকেরা বিদায় নেয়। পূর্ণ, রোদ,তিশা,শূন্য তারা পূর্ণর কারে করে রওনা হয়। গাড়ীতে বসে চারজন তূর্ণ, সিনথির ঝগড়ার কথা বলছে। তিশা তখন বলে, ” আমার চুপচাপ থাকা তূর্ণ ভাই কবে যে এতো ঝগড়ুটে হলো।”
” সব ছেলেরাই ঝগড়া পারে। শুধু একটু নাড়াচাড়া দিয়ে দেখো।”
রোদের কথায় পূর্ণ জবাব দেয়, ” সে মেয়েদের থেকে শিখেই ছেলেরা ঝগড়ুটে হয়।”
” তা তুমি বুঝি রোদের থেকে শিখে ঝগড়ুটে হয়েছো?”
মাঝখান দিয়ে শূন্য কথাটা বলে। তখন পূর্ণ শুধায়, ” আমার বিয়ের পাত্রী টা শূন্যই দেখিস। তোর পছন্দেই বিয়েটা করবো।”
” শো অফ করো না। বাড়ী গেলে যদি হাত একটা ভা’ঙা থাকে সেটার দায় ভার আমি নিতে পারবো না।”
“তোর সন্দেহ আর জীবনেও গেলো না।”
“আমি এমনই। যতদিন পর্যন্ত স্বীকার না করবে ততোদিন এভাবেই বলবো।”
” তাহলে মুড়ি খাও তুমি।”
তখন প্রসঙ্গ পাল্টাতে রোদ বলে, ” ভাবছি সিনথি ভাবী যা, বিয়ের পর স্যরি বলার হিসাব চুকাতে গিয়ে না জানি তূর্ণ ভাইয়ার ভবিষ্যত অন্ধকার করে দেয়।”
“আরে কিছু করবে না। দুই একদিন মিষ্টি,মিষ্টি কথা বললে গলে যাবে। নারীরা নরম মনের হয়।”
“বেশ এক্সপেরিয়েন্স আছে দেখি পূর্ণ ভাইয়ার। তা রোদকে বুঝি এভাবেই ইমপ্রেস করেছো।”
পূর্ণ এবার গাড়ী ব্রেক কষে। না তার ভাই বোনেরা এভাবে ধরেছে। এক কথা বারবার ভাল্লাগে না পূর্ণর। তাই রাগের বশেই লজ্জা শরম ত্যাগ করে পূর্ণ বলে,
“উইল ইউ লাভ মি রোদ?
লাইক দ্যাট লাভ দ্যা মুন ইন ডার্ক স্কাই। উইল ইউ লাভ মি রোদ?”
#চলবে
#এক_ফালি_প্রণয়|১৮|
#শার্লিন_হাসান
পূর্ণ এবার গাড়ী ব্রেক কষে। না তার ভাই বোনেরা এভাবে ধরেছে। এক কথা বারবার ভাল্লাগে না পূর্ণর। তাই রাগের বশেই লজ্জা শরম ত্যাগ করে পূর্ণ বলে,
“উইল ইউ লাভ মি রোদ?
লাইক দ্যাট লাভ দ্যা মুন ইন ডার্ক স্কাই। উইল ইউ লাভ মি রোদ?”
উত্তরের অপেক্ষা না করে পুনরায় গাড়ী স্টার্ট দেয় পূর্ণ। রোদ কিছু বলেনি। পূর্ণকে সে বিশ্বাস করতে পারছে না। এক চুল পরিমাণ ও না। রোদ নিজের আবেগ লুকাতে চায়। পূর্ণ তার আবেগটাকেই বের করে এনে কাজে লাগাতে চায়। রোদ ভালোবাসতে চায় কিন্তু দুঃখ পেতে চায় না। আজব! ভালোবাসলে তো দুঃখ পেতেই হয়। ভালোবাসা এবং দুঃখ দু’টো একসূত্রে গাঁথা। কিছুক্ষেত্রে একটাকে ছাড়া আরেকটার জেনো অস্তিত্ব বিলীন। রোদ চুপচাপ জানাল দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে। পূর্ণর ভাবনা মস্তিষ্কে জমে আছে।
“আচ্ছা পূর্ণ কে কী ভালোবাসাই যায়? হয়ত! এই বাড়ীর বউ করেই তো তাকে রাখা হবে তাহলে সমস্যা কোথায়? এই ভা’ঙা জীবনে কেউ শক্ত করে হাত ধরতে চেয়েছে তাকে ফিরিয়ে দেওয়াটা কী ভুল হবে? কিন্তু বিশ্বাস তো আসছে না। মন বলছে ভালোবাসো অথচ মস্তিষ্ক সায় দিচ্ছে না।”
সবাই চুপচাপ। গাড়ীতে কেউ আর কোন কথাই বলেনি। শিকদার বাড়ীতে আসতে সবাই গাড়ী থেকে নেমে একে,একে ভেতরে যায়। পূর্ণ রোদের জন্য দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে। রোস সবার শেষে গাড়ী থেকে নামতে পূর্ণ হাসে। হেঁসে বলে, “আচ্ছা রোদ আমি কী খুব বেশী স্বার্থপর?”
“হয়ত!”
“ঠিক আছে। একবারে ঠিক ধরেছ তুমি রোদ। এনি ওয়ে পেছনে যা হয়েছে ভুলে যাও।”
কথাটা বলে পূর্ণ ভেতরে চলে যায়। রোদ সেখানে ঠায় দাঁড়িয়ে রয়। পেছনের সব ভুলে যেতে মানে? পূর্ণর করা বা’জে ব্যবহার ভোলার কথা বলছে? রোদ দাঁড়িয়ে থাকতে,থাকতে তূর্ণর গাড়ী আসে। রোদকে দেখেও না দেখার ভাণ করে, তূর্ণ পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিবে তখন রোদ হোঁচট খায়। পড়ে যেতে নিবে তূর্ণ হাত ধরে নেয়। রোদ সোজা হয়ে দাঁড়াতে তূর্ণ রোদের চোখে চোখ স্থির করে শুধায়, ” আর ইউ ওকে?”
“হ্যাঁ!”
তূর্ণ ভেতরে চলে যেতে রোদ নিজের পায়ের দিকে তাকায়। হিল পড়েছে সাথে লং গাউনে পা পড়েছে তাই পড়ে যেতে নিয়েছিলো। ভাগ্যিস তূর্ণ ধরেছে নাহয় পা ও ভা’ঙতো জামাটাও ছিঁড়ত।
সবাই ফ্রেশ হয়ে সন্ধ্যায় বসেছে বিয়ের প্লানিং নিয়ে। তিশা,রোদ মিলে শপিং প্লানিং করছে। তূর্ণ বসে,বসে সবাইকে দেখছে। আগামী কালকে তারা সবাই শপিং করতে যাবে। তূর্ণ অফিস থেকে ছুটি নিয়েছে এক সপ্তাহের। এখন অফিসের কাজের চাপ বেশী শরীফ শিকদারের উপর পড়বে সাথে পূর্ণ তো আছেই।
সাইখা ইসলাম সিনথিকে কল দিয়েছে। তার কাজিনরা মিলে মজা করছে। তূর্ণর এসবে মনোযোগ নেই। কিছুক্ষণ সবার সাথে থেকে রুমে চলে যায় তূর্ণ।
বেলকনিতে দাড়িয়ে অম্বরে জ্বলজ্বল করা শশীর দিকপ তাকিয়ে রয় সে। দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে তূর্ণ।
“আমার ভালোবাসা ভালো থাকুক, অন্য কারোর ভালোবাসায়।”
তখন আবার সিনথির মেসেজ আসে। তূর্ণ সীন করে। মেয়েটা যে চঞ্চল সেটা তূর্ণ বেশ বুঝেছে।
“আসার সময় ওতো তাড়াহুড়োয় আসার কী ছিলো? একটু তো বলে আসতে পারতেন হবু বউ নিজের খেয়াল রেখো এই তিনদিনে। তারপর আমি তোমার খেয়াল রাখবো।”
“পারবো না।”
“এ্যাই! এ্যাই আপনি এতো ত্যাড়া কেন? আমি আপনার বউ হতে যাচ্ছি কথাটা কী ভুলে গেছেন?”
“না একদমই না।”
“তাহলে একটু ভয়ডর মনে ঢুকান। বিয়ের পর যে কী হবে।”
“কী হবে? কিছুই হবে না।”
“আপনি আমায় ভয় পাচ্ছেন না?”
“ওইরকম পিচ্চি বাচ্চাদের আমি ভয় পাবো।”
“বিয়ে ক্যান্সেল।”
“হ্যাঁ বললেই তো হয়ে যায়।”
সিনথি আী রিপ্লাই করে না। মনে,মনে তূর্ণ কে হাজারটা বকা দিচ্ছে। সেই সাথে ঠিক করে রেখেছে এসব অপমান গাড় ত্যাড়ামী সব কীভাবে শুধে আসলে তুলে নিবে।
“শা’লা তো ভারী ত্যাড়া। এতো ইগো কেন শরীরে? আমার ইগো কী কম আছে নাকী? বিয়েটা শুধু হোক তারপর তোর খবর না করেছি আমি তাহলে আমার নাম ও সিনথি না।”
ফোনটা রেখে হাত পা ছড়িয়ে,ছিটিয়ে ঘুমায় সিনথি। আজকে অনেক টায়ার্ড সে।
★★★★
পরের দিন সকালে নাস্তা করে সবাই বের হয়েছে শপিং করতে। শুধু পূর্ণ, তূর্ণ, শূন্য,শরীফ শিকদার ছাড়া। তবে পূর্ণ আরো পরে যাবে তার কাজ শেষ হলেই।
শপিং মলে এসে কিছুক্ষণ কেনাকাটা করে জেনো সবাই ক্লান্ড হয়ে গেছে। তিশা,রোদ সবাই দেখেশুনে চুজ করে নিচ্ছে। তাঁদের শপিং শেষের দিকে থাকতে পূর্ণ এবং শূন্য আসে। সবার শপিং মোটামুটি শেষ এবার শুধু মেয়েদের শপিং বাকী। রোদ,তিশা,শিশা তার তাঁদের ড্রেস দেখছি। মেহেদী নাইট, হলুদ নাইট,আকদ,রিসিপশন সবগুলোর জন্য আলাদা,আলাদা ড্রেস নিচ্ছে। মেহেদী নাইটের জন্য গাউন দেখছে রোদ। তখন পূর্ণ আসে রোদের কাছে। আস্তে করে শুধায়, ” রোদ শাড়ী নিয়েছো?”
“না।”
“শাড়ী নেও। তোমায় শাড়ীতে সুন্দর লাগে।”
“তুমি কীভাবে জানলে?”
“আমি দেখেছি।”
“কোথায়?”
“মাইশার বিয়েতে।”
“তখন না তুমি আমায় দেখতে পারতে না। তাহলে আমি কী শাড়ী পড়েছি, শাড়ীতে আমায় কেমন লাগে জানলে কীভাবে?”
“ওই আরকী!”
আমতাআমতা করে কথাটা বলে পূর্ণ। রোদ পূর্ণকে ধাক্কা দিয়ে সরে আসে। ঠোঁটের কোণে তার হাসি। শূন্য দূর থেকে বসে,বসে ওদের কথোপকথন পর্যবেক্ষণ করছে। পূর্ণ ঘুরে তাকাতে শূন্যকে দেখে হাসি মিইয়ে যায়। দেখেও না দেখার ভাণ করে চলে যেতে নিবে শূন্য পথ আটকে দাঁড়ায়।
“একটা শাড়ী গিফ্ট করো।”
“তুই ছেলে শূন্য। মেয়ে হলে নাহয় ভেবে দেখতাম।”
“আমি কী বলেছি আমায় শাড়ী গিফ্ট করো।”
“তো?”
” রোদকে গিফ্ট করো। মাইশার হলুদে তুমি নিশ্চয়ই শাড়ীটা দিয়েছিলে।”
“আজব! কী শাড়ী? কবের শাড়ী?”
“আমি নিজেই পার্সেল রিসিভ করেছিলাম রোদের নামে। সেটায় শাড়ী ছিলো তুমি দিয়েছিলে।”
“গাঁজা কী ডেট ওভার টা নিয়েছিস নাকী ডেট আছে যেটা সেটা?”
“সত্য কথা বলতে আমি গাঁজাখোর হয়ে গেলাম।”
” তোর সত্য কথার নানীর টুট….
“ছিহ্! একজন মেয়র আর বিজন্যাসম্যানের মুখের ভাষা এরকম হয়?”
“এর থেকেও জঘন্য। শুধু জায়গা বুঝে বলি।”
” ঠিক আছে। তূর্ণ ভাইকেই বলি।”
“কী?”
“রোদকে শাড়ী দিতে।”
“আমি থাকতে তূর্ণ কেন দিবে।”
“তাহলে চলো। আমারটার জন্যও একটা নিবো।”
“তোর আছে?”
“হুম আছে একটা।”
পূর্ণকে জোরাজুরি করে শূন্য নিয়ে যায় শাড়ীর দোকানে। সেখান থেকে মেচিং করে দু’টো শাড়ী নিয়ে প্যাক করে। দু’টোর বিল পূর্ণ পে করে। শূন্যর ভালোই লাগছে ভাইয়ের টাকায় গার্লফ্রেন্ডকে শাড়ী দিবে। খারাপ না!
শূন্যর হাতে শপিং দু’টো ধরিয়ে পূর্ণ ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে জুয়েলারির দোকানে যায়। সেখানে বাকীরাও আছে। শূন্য ব্যাগ গাড়ীতে রাখার জন্য নিচে যায়। গোল্ড কেনা হতে সবাই মিলে একটা রেস্টুরেন্টে বসে। দুপুরের লান্সটা করে তারা সবাই রওনা হয়।
অলরেডি শিকদার বাড়ীতে ডেকোরেশনের কাজ শুরু হয়ে গেছে। পূর্ণর মামুরা ও চলে এসেছে। মেহের ও এসেছে। মাইশা আর তার হাসবেন্ড তারা আগামী কালকে আসবে। পূর্ণ ভাবছে পাভেল ও নিশ্চিত আসবে। তখন রোদ,তিশা দু’জনের চিপায় ঘুরবে। “না,না একে সাইড দেওয়া যাবে না।” পূর্ণ কল দিয়ে তাঁদের দলের একজনকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়। শিকদার বাড়ীতে মানুষের আনাগোনা শুরু হয়ে গেছে। পূর্ণর দলের লোকেরা ও আছে। নিস্তব্ধ ছেড়ে একটু হইহোল্লড় এবং ব্যস্ত বাড়ীতে পরিণত হয়েছে শিকদার ভিলা।
তিশা,মেহের,রোদ,শিশা তারা ঢালা গোছাচ্ছে। সন্ধ্যার দিকে সিনথিদের বাড়ী যাবে তারা।
সিনথিদের ঢালা গোছাচ্ছে তার চারজন কাজিন সাথে রুশাও আছে। দু’জন মেয়ে এবং দুজন ছেলে। সাথে তার বেস্টফ্রেন্ড রুশাও আছে। তারা আগামী কালকে সকালে যাবে শিকদার বাড়ীতে। যেহেতু সন্ধ্যায় শিকদার পরিবার আসবে তাই, একটু ছোটখাটো আয়োজন করা হয়েছে ডিনারের। আফিয়া ইসলাম সাথে তার ননদ,ঝা,বোনদের নিয়ে সব করছেন।
সবাই রেডি হয়ে গাড়িতে বসে। শূন্য নিয়ে যাবে তাদের। গাড়ীতে তাঁদের চার বোনের বকবকানিতে শূন্য কানে তালা দেওয়ার মতো অবস্থা। মনে,মনে পূর্ণ কে বকছে শূন্য। তাকে পাঠানোর জন্য কী গেছে? এঁদের বকবকে কান ধরে গেছে। তবুও আশাবাদী যদি একটা সুন্দরী বেয়াইনের সাথে ফ্লার্ট করা যায়। পরক্ষনে মনে পড়ে তার তেজী দেশী মরিচের কথা। গাড়ে মাথা একটাই। সেটা হারাতে চায় না শূন্য।
সিনথিদের বাড়ী এসে ঢালা নিয়ে ভেতরে যায় শিকদার ভিলার রমণীগন। শূন্য একটু চুলগুলো স্লাইড করে, ভেতরে যায়। তাঁদেরকে হরেকরকম নাস্তা দেওয়া হয়। সিনথি আসতে তার ননদিনীদের সাথে কথাবার্তা বলে। তূর্ণর কথা জিজ্ঞেস করেনি। শুধু বিয়েটা হওয়ার অপেক্ষায় আছে। কীভাবে কী করবে না করবে সব প্লান ডান। স্যরি না বলে কোথায় যাবে সেটাও দেখে নিবে সিনথি। অতিথিদের সুন্দর ভাবে আপ্পায়ন করে তারা। রাতের ডিনারটা করেই পুনরায় রওনা হয়ে যায় তারা সবাই।
★★★★★
কয়েক রাতের জন্য শিকদার ভিলার ছাঁদ উন্মুক্ত সবার জন্য। এমনিতে কাউকেই রাতে ছাঁদে আসতে দেন না শারমিন আঞ্জুম। তবুও চুরি করে,করে যে তার ছেলেরা ছাঁদে আসে সেটা টের পান তিনি।
মৃদ্যু বাতাস। নিস্তব্ধ প্রকৃতি পূর্ণ শীতল বাতাস গায়ে মাখাচ্ছে। অম্বরে উজ্জ্বল শশী জ্বলজ্বল করে জ্বলছে। ফোন হাতে রোদকে মেসেজদ দেয় ছাঁদে আসার জন্য। রোদের ও ভালো লাগছে না তাই ছাঁদের দিকে রওনা হয়। সিঁড়ির কাছাকাছি আসতে তূর্ণর মুখোমুখি হয়। রোদ একগাল হেঁসে কিছু বলতে যাবে তূর্ণ চলে যায়। রোদ চুপচাপ স্থান ত্যাগ করে। তূর্ণ তাকে কেমন এভয়েড করছে। কিন্তু কারণ ছাড়া। রোদ সেসবে মাথা ঘামায়নি। ছাঁদে যেতে ঠান্ডা হিমশীতল বাতাস শরীরে এসে বারি খায়। পূর্ণ র পাশাপাশি দাঁড়িয়ে রোদ আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে, ” পূর্ণ ভাইয়া চাঁদটা ভীষণ সুন্দর তাই না।”
“হ্যাঁ ভীষণ সুন্দর।”
দু’জনে কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলে ছাঁদ থেকে চলে যায়।
আকাশের দিকে তাকিয়ে এক আকাশ সম না পাওয়ার দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে কেউ একজন শুধায়, “আমার কৃষ্ণাভ অম্বরের এক রাত জাগা তারা, তোমার অন্যের অম্বরে বাড়ী। আমি কাছে পেয়েও পাইনা তোমার নাগাল,
আমার একলা লাগে ভারী।”
#চলবে