এক ফালি প্রণয় পর্ব-১৯

0
4

#এক_ফালি_প্রণয়|১৯|
#শার্লিন_হাসান

আকাশের দিকে তাকিয়ে এক আকাশ সম না পাওয়ার দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে কেউ একজন শুধায়, “আমার কৃষ্ণাভ অম্বরের এক রাত জাগা তারা, তোমার অন্যের অম্বরে বাড়ী। আমি কাছে পেয়েও পাইনা তোমার নাগাল,
আমার একলা লাগে ভারী।”

“আমার কৃষ্ণাভ অম্বরের একমাত্র তারা ছিলে তুমি, যে এখন অন্যের অম্বরের বাসিন্দা অথচ তোমার জন্য আমার অম্বরের সে কী মায়া। মায়া বুঝো তো রোদ পাখি?”

“মায়া হলো ভালোবাসার প্রতীক। সময় বদলায়, মানুষ বদলায় অথচ মায়া বদলায় না। এই মায়া কী নিষ্ঠুর তাইনা? আমাদের ভালো থাকতে দেয়না ”

তূর্ণ বুকের বা পাশটায় হাত রাখে। আহত কন্ঠে বলে, “বুকের বা পাশটায় ব্যথা অনুভব হচ্ছে। বোঝো কী? তোমার জন্য আমার এই হৃদয় পুড়ছে।”

তখন কেউ কাঁধে হাত রাখে। তূর্ণ ফিরে তাকায়। অস্তিত্ব মনে হচ্ছে শূন্যর। তূর্ণ গম্ভীর কন্ঠে বলে, “শূন্য তুমি এখন?”

“ভালোবাসো?”

“কাকে?”

“তুমি জানো।”

“হয়ত বাসি।”

“মিথ্যে বলে লাভ নেই।”

“হ্যাঁ বাসি। রোদকে আমি ভীষণ ভালোবাসি।”

“তাহলে বিয়েটা কেনো করছো?”

“আমার ভালোবাসা আমায় না, অন্য কাউকে ভালোবাসে।”

“এভাবে বলো না প্লিজ!”

“কী অদ্ভূত তাইনা? আমরা ভালো থাকার জন্য আয়োজন করে মনের গহীনে এক ফালি,এক ফালি করে বিশাল ভালোবাসা পুষি। কিন্তু দিনশেষে….

” দিনশেষে কী?”

“আমাদের বিশাল ভালোবাসাও হেরে যায় যখন দেখি মানুষটা আমাদের প্রণয়ে না অন্য কারোর প্রণয়ের রুপকথায় ভালো আছে।”

“কী তিক্ত বাক্য!”

“এটাই সত্য। বাবা মা-রা যাওয়ার সময় বলে গিয়েছিলে রোদকে যাতে আগলে রাখি। কারণ ওর আমরা ছাড়া কেউ নেই। কিন্তু পূর্ণ প্রথমে ঠিক থাকলেও হুট করে চেঞ্জ হয়ে যায়। এতোটাই চেঞ্জ হয় যে রোদকে বাধ্য হয়ে হোস্টেলে পাঠানো হয়। তারপর কয়েক মাস যেতে আমি ওকে বাড়ী নিয়ে আসি। কারণ হোস্টেলে একা,একা, কী খায় না খায়। পূর্ণ কে সাফ জানিয়ে দিয়েছি রোদকে নিয়ে সমস্যা হলে ও যাতে অন্য ফ্লাটে চলে যায়। তারপর কীভাবে জানি চুপ হয় ও। কিন্তু রোদকে সহ্যই করতে পারতো না। এখন হুট করে কী হলো কে জানে। যাক ভালোই হয়েছে আগে সহ্য করতে পারতো না এখন তো আগলে রাখে। ভালোবাসে! রোদ ও পূর্ণকে ভালোবাসে এবং সে খুশি। রোদ খুশি মানে আমিও খুশি শূন্য। এছাড়া পূর্ণর পর আমি ওর ঢাল হয়ে আছি।”
“হুম। রোদ,পূর্ণ দু’জন দু’জনকে ভালোবাসে আমি শিওর।”

“হ্যাঁ জানি। আমি চাই ওদের প্রণয় পরিনয় পাক। তবে রোদের কোন চিন্তা নেই।
কারণ ” আমি তার চোখের আড়ালে থাকলেও সে আমার প্রতিটা খেয়ালে থাকে।”

“লোক লাগিয়ে রেখেছো তাই না?”

“হুম! জানি রোদের ক্ষতি করার লোকের অভাব পড়বে না। ওই যে নদীতে চুবিয়ে মারতে চেয়েছিলো।৷ রোদ তো বোকা! যাই হোক বাঁচিয়ে নিয়েছি। রাফি ওকে কিডন্যাপ করেছে, ক্ষতি করতে চেয়েছিলো শুধু আমার জন্য পারেনি।”

“আসলেই তো! কাহিনীটা জানা হলো না।”

“বলেছে ওদের রোদের ইন্ডাস্ট্রি, প্রোপার্টি চাই নাহলে রোদকে রে’প করে খু’ন করে দিবে। এছাড়া কয়েকদিন আগে আমার ফোনে একটা ম্যাসেজ এসেছিলো, ” রোদকে রে’প করা হবে।” তারপর খোঁজ নিয়েছিলাম আমি। রাফি রোদের ইন্ডাস্ট্রি পাওয়ার জন্য ব্যকুল হয়ে আছে। আমি বলেছি, রোদের কোন ক্ষতি করলে ইন্ডাস্ট্রি কেনো রাফির জীবনে আর দ্বিতীয় দিন হবে না। একবারে ক’বর হবে! আমার লোকেরাই ওকে নিয়ে এসেছিলো পুরোনো গোডাউন থেকে। তারপর! পূর্ণ ওকে পায় অর্ধেক পথে। রোদ জানে পূর্ণ ওকে বাঁচিয়েছে। আমি চাই সেটাই ও জানুক। রোদ হয়ত জানে মাইশার মেহেদিতে ওকে শাড়ীটা পূর্ণ দিয়েছে। কিন্তু আমি ওই শাড়ীর পার্সেলটা পাঠিয়েছিলাম। যাই হোক! আমি চাই ওদের ভালোবাসা ভালো থাকুক। আমি পূর্ণ বা রোদ কারোর খারাপ চাইনা।”

“তাহলে বলে দাওনি কেন রোদকে তুমি ভালোবাসো?”

“এক তরফা ভালোবাসা ভীষণ সুন্দর হয়। একটু আলাদা রকমের ও হয়। আমি একতরফা ভালোবাসাটাই বেছে নিয়েছি। আমার কোন আক্ষেপ বা আফসোস নেই।”

“হাহ্! ভালবাসা।”

“অতঃপর আমার ভালোবাসার রোদ পাখি আমি চাই তুমি ভালো থাকো অন্য কারোর রুপকথায়।”

********

পরের দিন সকালে রোদকে পূর্ণর রুমে ডাকে পূর্ণ।
রোদ নাস্তা করে রুমে যেতে পূর্ণ একটা শপিং ধরিয়ে দেয়। রোদ জিজ্ঞেস করে, “কী আছে এটায়?”

“তোমার জন্য শাড়ী এনেছি।”

“ওহ্! এর আগের শাড়ীটাও বুঝি তুমি দিয়েছিলে?”

“কবে?”

“মাইশা আপুর মেহেদী নাইটে।”

“আচ্ছা দেখো এটা কেমন হয়েছে। তিশা আর শশীর শাড়ী ও নিয়ে যাও।”

কথাটা বলে আরো দু’টো শপিং রোদকে দেয় পূর্ণ। শূন্যর সাথে শুধু রোদের জন্য শাড়ী আনলেও পরে গিয়ে আরো দুটো এনেছে তার বোন তিশা আর শিশার জন্য। রোদ শাড়ী নিয়ে প্রস্থান করবে তখন পূর্ণ বলে, “তুমি কাঁচা ফুল দিয়ে সেজো। তিশাকেও বলিও।”

“ফুল এনে দিবে কে?”

“আমি আনিয়ে দেবো।”

“আচ্ছা ঠিক আছে।”

রোদ যেতে পূর্ণ কল আসতে বেলকনিতে চলে যায়। অপরপাশের ব্যক্তি অভিমানী স্বরে বলে, “মেয়র সাহেব ভুলে গেলেন।”

“আমি ব্যস্ত। তুমি পড়াশোনায় ফোকাস করো মেয়ে। এসব প্রেম ভালোবাসার পেছনে দৌড়ে লাভ নেই। সময় হলে আমি তোমায় ছেলে খুঁজে দিবো এ্যান্ড আমার থেকেও বেটার কাউকে।”

“আমি কী বলেছি আপনার থেকে বেটার কাউকে চাই।”

“বলার প্রয়োজন হয়না বুঝে নিলাম।”

“না বেটার কাউকে লাগবে না। আপনি হলেই চলবে।”

“শিওর?”

“ইয়াহ্!”

“তাহলে পড়াশোনা করো মন দিয়ে। বাকীটা পরে।”

“হুহ্! সব তোলা রইলো মেয়র সাহেব।”

“ঠিক আছে।”

★★★★★

সিনথিদের বাড়ী থেকে ঢালা নিয়ে আসা নয়। রুশা সিনথির চার কাজিন সহ তারা। রোদ রুশাকে দেখে অবাক হয়। পরবর্তীতে জানতে ওারে সিনথির বেস্ট ফ্রেন্ড। মেয়েটা বেশ মিশুক। বাপ,ভাইয়ের বিপরীত। রোদকে বেশ স্নেহ করে তাই তো রোদ ও সহজে মিশে যায়।

কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলে,সময় কাটিয়ে ঢালা দিয়ে তারা চলে যায়৷

সন্ধ্যায় তারা রেডি হচ্ছে। আজকে তূর্ণর মেহেদী নাইট। কে বলবে আজকে তূর্ণর মেহেদী। সে এমন ভাব ধরে ঘুরছে জেনো বিয়েটা তার না তার বোনদের। সবাই যে হারে সাজতে বসেছে। ছেলে পক্ষের হলে বুঝি এমনই হয়। রেডি হয়ে সবাই পিকচার তোলে। আজকের মেহেদী নাইটে সবাই গ্রীন ড্রেসআপ নিয়েছে। পিকচার তোলা শেষ হতে মেহেদী দিতে বসে। রোদ তূর্ণর হাতের তালুতে সিনথির আর তূর্ণর নাম লিখে দেয়। তূর্ণ সেদিকে তাকিয়ে রয়। ST অক্ষরের দিকে তাকিয়ে রয়। তখন পূর্ণ এসে রোদের দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়। রোদকে বলে, “T S P লিখে দাও।”

“T দিয়ে কার নাম?”

“তাহিয়ান শিকদার পূর্ণ। ভুলে গেলে?”

“ওহ্! হ্যাঁ মনে আছে তোমার নাম।”

রোদ পূর্ণর কথা অনুযায়ী অক্ষর লিখে দেয়। তাঁদের দুই ভাইয়ের ভেজাল শেষ হতে বোনদের নিয়ে বসে রোদ। তখন আবার মাইশার কল আসে। মেহেরে ফোনে। সবাইকে দেখছে। আগামী কালকে তারা আসবে। পূর্ণ শুনেছে কথাটা। পাভেল আসবে এটা শিওর পূর্ণ এটা মিস যাবে না।

সিনথির কল আসতে রিসিভ করে পূর্ণ। দেবরের সাথে বেশ হাসিখুশিতে কথা বলে সিনথি। কিন্তু বলেনি তূর্ণর কথা। ওই লোকটার সাথে কথা বলতে গেলে এক দফা কথা কাটাকাটি আর ঝগড়া হবে সিনথি শিওর। এতো সুন্দর মোমেন্ট সে ঝগড়া করে ন’ষ্ট করতে চায়না। রোদ,তিশা,শিশা, মেহের, শূন্য এমনকি শাশুড়ী দের সাথেও বেশ হাসিখুশিতে কথা বলে সিনথি। একপর্যায়ে রোদ সিনথিকে বলে, “ভাবী আমাদের ভাইয়ের খোঁজ নিলে না। বর কী পছন্দ হয়নি? দেখো আমাদের ভাই কিন্তু এক পিস হাজার খুঁজলেও এমন কাউকে পাবে না।…

” যোগ্য ছেলে হারালে কাঁদতে হবে আড়ালে।”

রোদের কথার মাঝে পোড়ন কেটে বলে পূর্ণ। তখন সিনথিও বেপাশে বলে বসে, ” ওনার সাথে আমার কথা হবে একবারে ফুলসজ্জার ঘরে। অনেক হিসাব নিকাশ বাকী আছে।”

“ঠিক আছে। ফুফি ডাকটাও বুঝি খুব শীঘ্রই শোনতে পাবো।”

রোদের কথায় বাকীরা হেঁসে দেয়। তূর্ণ কিছু বলেনা। সে শুধু সিনথির কান্ড দেখছে। তার বউয়ের মাঝে এক দন্ড লজ্জা শরম অবশিষ্ট নেই। সে নিজে কত লজ্জাবতী অথচ বউটা পড়বে এক নাম্বারের ঠোঁট কাটা। তূর্ণ তার আম্মুকে আর ছোট আম্মুকে নোবেল দিতে মন চাচ্ছে। কোথা থেকে খাপে খাপে এমন মেয়ে বের করলো কে জানে।

কিছুক্ষণ আড্ডা মাস্তি করে সিনথি বিদায় নেয়। রাতটা তাদের আড্ডা খুনসুটিতে কেটে যায়।

শিকদার বাড়ীতে ব্যস্ততার হাতছানি। মানুষের আনাগোনায় ব্যস্ত পরিবেশ। বিকেলের দিকে তূর্ণ বাইরে যাবে। পূর্ণ বলেছে ফুলের গহনা বানিয়ে আনতে রোদ,তিশা,মেহের, শিশার জন্য। সে অফিসের কাজে ব্যস্ত বাইরে যাওয়ার সময় নেই। তূর্ণ আর না করেনি। সে লাস্ট বারের মতো প্রিয়তমার জন্য ফুল আনার সুযোগ পেলো। তূর্ণ এটা কিছুতেই হাত ছাড়া করতে চায়না। আগে তো প্রায় ফুল এনে রোদকে দিতো। অফিস থেকে ফেরার পথে ফুল দেখলেই রোদের কথা মনে পড়তো আর ফুল কিনতো তূর্ণ। বেশীরভাগ দিলেও মাঝেমধ্যে দিতো না নিজের কাছে রেখে দিতো। ভালোবাসা আদান প্রদানের সুন্দর মাধ্যম ফুল হলেও মাঝেমধ্যে স্মৃতি ভেবে কিছু নিজের কাছেও রেখে দিতে হয়। তূর্ণ রোদকে ভালোবেসে ফুল দিতো আর বলতো, “এজ এ ব্রাদার হিসাবে ফুল দেয়।” রোদের ছোট, ছোট বিষয়গুলোতে নজর রাখতো বেশ। বিশেষ করে মেয়েদের কত কিছুই শখ হয়। সেজন্য প্রতিমাসে শূন্যকে দিয়ে টাকা পাঠাতো রোদের জন্য। সে চায়না তার প্রিয়তমার কোন শখ অপূর্ণ থাকুক। মুখ ফুটে বলতে না পারলেও।

ভাবতে,ভাবতে ফুলের দোকানে চলে আসে তূর্ণ। পূর্ণর বলা ফুল নিজে পছন্দ করে নেয় তূর্ণ। এক গাদা ফুল নিয়ে, দরকারি কাজ সেরে শিকদার বাড়ীর উদ্দেশ্য রওনা হয়।
তখন সিনথির মেসেজ আসে,
” পাত্তা দিচ্ছেন না আমি কে! আগামী কালকে বোঝাবো শিওর।”

“আগে ভদ্র হোন তারপর!”

“আমি যথেষ্ট ভদ্র!”

“সেজন্য ফুলসজ্জার কথা পাবলিক প্লেসে বলতে হয়। বুঝেছি কেমন আর ভদ্র হবেন।”

“আমি আপনার হবু বউ।”

“তো?”

#চলবে