এক ফালি প্রণয় পর্ব-২০+২১

0
4

#এক_ফালি_প্রণয়|২০|
#শার্লিন_হাসান

ভাবতে,ভাবতে ফুলের দোকানে চলে আসে তূর্ণ। পূর্ণর বলা ফুল নিজে পছন্দ করে নেয় তূর্ণ। এক গাদা ফুল নিয়ে, দরকারি কাজ সেরে শিকদার বাড়ীর উদ্দেশ্য রওনা হয়।
তখন সিনথির মেসেজ আসে,
” পাত্তা দিচ্ছেন না আমি কে! আগামী কালকে বোঝাবো শিওর।”

“আগে ভদ্র হোন তারপর!”

“আমি যথেষ্ট ভদ্র!”

“সেজন্য ফুলসজ্জার কথা পাবলিক প্লেসে বলতে হয়। বুঝেছি কেমন আর ভদ্র হবেন।”

“আমি আপনার হবু বউ।”

“তো?”

“তো আগামী কালকে বলছি।”

কথাটা বলে সিনথি বেড়িয়ে যায় কাইন থেকে। তূর্ণ আর রিপ্লাই করে না। বাড়ীতে এসে ফুলগুলো পূর্ণর হাতে ধরিয়ে দেয় তূর্ণ। পূর্ণ সেগুলো নিয়ে রোদের রুমে যায়। সেখানে তিশা,মেহের,শিশা তারা সবাই আছে। পূর্ণ কে দেখে রোদ একগাল হাসে। পূর্ণ নিজেও হেঁসে রোদের হাতে ফুলগুলো ধরিয়ে দিয়ে বলে, ” ফুলগুলো কিন্তু তাজা।”

“ধন্যবাদ পূর্ণ ভাইয়া।”

কথাটা বলে রোদ তিশাদের কাছে আসে। মেহের,তিশাকে দেয় গহনা বানাতে। ততক্ষণে পূর্ণ প্রস্থান করেছে। তখন শিশা বলে, ” তুমি ভালোই মনে করেছ আপু। আমার ও কাচা ফুলের গহনা ভীষণ পছন্দের কিন্তু মনে ছিলো না।”

“আরে এটা পূর্ণ ভাইয়ার আইডিয়া। আমার ও মাথায় ছিলো না।”

রোদের কথায় তিশা শুধায়, ” বললাম না পূর্ণ ভাইয়া এক কাঠি উপরে। সবকিছুর খেয়াল রাখতে পারে যদি তার মর্জি ভালো হয়।”

“তোর পূর্ণ ভাই আর পূর্ণ ভাইয়ের মর্জি নিয়ে গত দশবছরে শুনে আসছি। বেডার মর্জি কী এখনো ঠিক হয়নি?”

মেহেরের কথায় তিশা মুখ বাঁকিয়ে বলে, ” আমার ভাই তো ব্যস্ত মানুষ। কত কিছুই ফেস করছে,করতে হয়। আর ও এমনই ভাই।”

“যত্তসব ঢং!”

মেহের ও মুখ বাঁকিয়ে বলে। তাঁদের গহনা বানানো হতে রেডি হতে চলে যায়। শারোরার সাথে কাঁচা ফুলের গহনা। সবাই বেশ সুন্দর সেজেছে।

তূর্ণ রেডি হয়ে স্টেজে বসে। তার চারপাশে মানুষের গিজগিজ। পাভেলের সাথে টুকটাক কথা বলছে তূর্ণ।বেশ সুন্দর সময় কাটছে। এরই মাঝে রোদ আসে সেখানে। তূর্ণর দৃষ্টি যেতে তড়িঘড়ি সরিয়ে নেয়।

“ আমার হারিয়ে যাওয়া, একটা চাঁদের মাঝে শুভ্র ফুলের স্নিগ্ধতা! বেশীক্ষণ তাকিয়ে থাকার যে দৃষ্টিশক্তি নেই রোদপাখি।”

তখন আবার পূর্ণ আসে রোদের পেছন দিয়ে। মাইশার বর আর দেবর ও এসেছে। পাভেল তূর্ণর সাথে কথা বলছে। তবে রোদকে দেখে সে চলে আসে। রোদের সামনে গিয়ে শুধায়, “আরে সুন্দরী বেয়াই….

” রোদ চলো তূর্ণ ভাইয়ার কাছে।”

মাঝখানে পূর্ণ রোদের হাত ধরে কতাটা বলে। রোদ কিছু বলার আগে টেনে নিয়ে যায়। পাভেল রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে পূর্ণর দিকে। রেগে সে সাইডে গিয়ে বসে রয়। তখন আবার শূন্য কলে কারোর সাথে বেশ মিষ্টিসুরে আলাপ করছে। কথা গুলো কানে বাজতে পাভেলের রাগ হয় বেশী।

” এটা কী হলুদের অনুষ্ঠানে আসলাম নাকী কাপলের প্রেম দেখতে? ওইদিকে গেলাম তাও পাত্তা নাই। এদিক আসলাম কানের উপর প্রেমের আলাপ চলছে।”

তখন শূন্য কল কেটে পাভেলের পাশের চেয়ারটায় বসে। তখন পাভেল বলে,
” আচ্ছা এই রোদ তোমার কী হয় শূন্য?”

“আমার একমাত্র ফুফির একমাত্র মেয়ে।”

“তা তোমার ফুফি কই থাকে? মেয়েকে কী দেখে রাখে না। দেখে কীভাবে কাজিনদের সাথে ঢলাঢলি করছে।”

“মুখ সামলে কথা বলো পাভেল। গেস্ট বলে ভেবো না আমাদের রোদের নামে কিছু বলবা আর পার পেয়ে যাবা। ভাগ্য ভালো আমার সামনে বলেছো। পূর্ণ ভাই বা তূর্ণ ভাইয়ের সামনে এটা বললে এতোক্ষণ তোমার খবর করে দিতো।”

“কেন ওরা রোদকে নিয়ে এতো এলার্ট ক্যান?”

” ওটা ওদের দায়িত্ব।”

পাভেল কিছু বলেনি।
স্টেজে রোদ তূর্ণর পাশে বসে। গোলাপে হলুদ লাগিয়ে সেটা তূর্ণর হাতে ছোঁয়ায় রোদ। তূর্ণ রোদের কান্ড দেখছে। তার অপরপাশে পূর্ণ বসে ফোন স্ক্রোল করছে। কয়েকটা পিকচার ক্লিক হতে রোদ,পূর্ণ নেমে যায়। তিশা,শিশা,মেহের,মাইশা সহ তারা সবাই মিলে পিকচার তোলে।

রোদ ফাঁকা জায়গা দেখে একপাশে চেয়ার টেনে বসে। পাভেলের দৃষ্টি রোদের দিকে। সে তো সুযোগ খুঁজছে। পূর্ণ কেও খুজছে পাভেল। সে কলে কথা বলায় ব্যস্ত। পাভেল পূর্ণকে স্ক্রোল করে। বেশ হেঁসে, হেঁসে কথা বলছে। পাভেল আর দেরী করেনি। চটজলদি রোদের কাছে যায়। পাশের চেয়ারটা বসতে,বসতে বলে, ” ইউ লুকিং সো গর্জিয়াস!”

রোদ পাশে ফিরে তাকায়। পাভেলকে দেখে আর কিছু বলেনি। তখন পাভেল বলে,
” তুমি ভার্সিটিতে পড়ো?”

“জ্বী অনার্স সেকন্ড ইয়ার।”

” এখানেই থাকা হয়?”

“হুম।”

পাভেল কিছুক্ষণ কথা বলে রোদের সাথে। রোদ ও বেশ শান্তশিষ্ট ভাবে উত্তর দেয়। পাভেল কথা বলে বুঝেছে মেয়েটা বেশ শান্তশিষ্ট এবং ভদ্র সূলভ। কোন উত্তেজনা নেই তার মাঝে। কী নিরব কন্ঠে কথাগুলোর জবাব দিলো।

মেহের,তিশা, শিশা ও আসে রোদের কাছে। শূন্য,পাভেল ও আছে। তারা সবাই বেশ মজা করে। মূহুর্তে পাভেল মিশে যায় ওদের সাথে। তার মনে পজিটিভ ধারণা আসে রোদকে নিয়ে। তারা সবাই বেশ মিশুক পাভেল বুঝে। এতদিন বুঝতো শুধু পূর্ণর জন্য সাইড পায়না সে।

তখন সিনথি রোদের ফোনে কল দেয়। রোদ রিসিভ করে কথা বলে। কিছুক্ষণ কথা বলে রোদ শুধায়, ” অনেক তো হলো আমাদের সাথে কথা। এবার আমাদের ভাইয়ের সাথে কথা বলো ভাবী।”

“না বলবো না রোদ আপু। তোমাদের ভাই আস্ত করলার জুশ। মানে আমি যে তার উডবি তার কাছে কোন প্রায়োরিটি নেই।”

“আরে কুল! আমাদের ভাই অনেক ভালো। হয়ত কোন কারণে সে ডিস্টার্ব। ঠিক হয়ে যাবে আস্তে,আস্তে।”

“ঠিক আছে।”

রোদ উঠে যায়। তূর্ণ র কাছে আসতে তূর্ণ জিজ্ঞেস করে, ” কিছু বলবা রোদ?”

“ভাবী কল দিয়েছে। কথা বলো?”

তূর্ণ রোদের থেকে ফোন নেয়। তবে অপরপাশে সিনথি কে দেখেনি। তার দুই জন কাজিন একসাথে বলে, “কী জিজু! ভেবেছেন আমাদের বোনকে ফ্রিতে হলুদের সাজে দেখে নিবেন? উঁহু! নতুন বউ দেখতে হলে মান দিতে হবে।”

“ইশশ! আমার বউ আমি দেখবো এতে মান দিবো কেন?”

” এখনো হয়নি। আগামী কালকে বিয়ে হওয়া অব্দি আমাদের অধিকারে। বিয়ে হয়ে গেলে আপনার বউ তখন যা খুশি তা। কিন্তু এখন আমাদের বোন সো আমরা যেভাবে বলবো সেভাবে।”

“ঠিক আছে তাহলে আগামী কালকে বিয়ের পর দেখা করবেন।”

“এমাহ্! আপনি বউকে দেখবেন না?”

“হ্যাঁ দেখবো তো!”

“এ্যাই নিরব বিকাশ নাম্বার সেন্ড কর জিজুর হোয়াটসঅ্যাপে। কলে থেকেই লারা কথাটা বলে। তূর্ণ মুচকি হাসে। শূন্যকে ডেকে এনে নাম্বার টা দেয় তূর্ণ। তখন তূর্ণ শুধায়, ” তা মান কী আমার ইচ্ছায় দেবো নাকী শালিকাদের দাবিতে?”

“দিন না হাজার দশ এক! একটা রেস্টুরেন্টে সৈন্যবাহিনী নিয়ে যেতে পারলেই হবে।”

তখন শূন্য শুধায়, ” বেয়াইন এই আইডিয়াটা আগে দিতে পারলেন না। তাহলে আমাদের ভাইকেও আমরা সেম ভাবে দেখাতাম।”

“আপনারা নতুন আইডিয়া খুঁজুন ভাইয়া।”

শূন্য টাকা পাঠায়। তখন সিনথিকে ব্যাক ক্যামেরায় দেখায় তার কাজিন কারা। তূর্ণ তাকায়। তেমন ভাবে খেয়াল করেনি মেয়েটাকে। তবে এখানেও তেমম স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে না। ওইভাবে কিছুক্ষণ সিনথিকে দেখে বিদায় নেয় তূর্ণ। রোদের হোয়াটসঅ্যাপে সিনথির পিক পাঠিয়েছে। তূর্ণ একনজর দেখে। পরক্ষণে শূন্যকে দিয়ে ফোন পাঠিয়ে দেয় রোদের কাছে।

***********

পরের দিন সবাই বেশ সময় নিয়েই রেডি হয়। নির্দিষ্ট সময়পর মধ্যেই তারা সবাই রওনা হয় সিনথিদের বাসার উদ্দেশ্যে।

শিকদার পরিবারকে সুন্দর ভাবে ফ্লাওয়ার দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়। বিয়েটা আনুষ্ঠানিকতা থাকলেও অল্প মানুষের মধ্যেই। সিনথিদের ও তেমন আত্নীয় স্বজনের ভেজাল নেই। বেশ ছোট্ট পরিবারেই আত্নীয় করেছে তূর্ণর।

পুরো লিভিং রুমেই সুন্দর করে ডেকোরেশন করা হয়েছে। দু’টো সোফা রাখা হয় দুইপাশে। মাঝখানে তাজা ফুলের পর্দা টানানো হয়। সিনথিকে লাল টুকটুকে শাড়ী,দোপাট্টা দিয়ে বউ সাজিয়ে আনা হয়। মেয়েটাকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে। কিছুক্ষণ পর হুজুর বিয়ে পড়িয়ে দুই হাত এক করে দেন। অবশেষে তূর্ণ কবুল বলে হালাল ভাবে কাউকে গ্রহণ করলো। সবাই বেশ খুশিতে আছে। বর,বউ দুজনকে পাশাপাশি বসানো হয়। তূর্ণর শালিকাগন আয়না দেয়। সিনথি,তূর্ণ দু’জন দু’জনের সাথে তেমন ভাব জমেনি বা তেমন করে চেনা হয়নি। সিনথি আয়না তাকিয়ে তূর্ণর ফর্সা মুখটার দিকে তাকায়। তখন রোদ বলে, ” ভাবী আয়নায় কী দেখো?”

“আমার শাশুড়ীর বড় ছেলে এবং আমার আম্মুর একমাত্র মেয়ের বর’কে দেখি।”

তূর্ণ তাকিয়ে আছে আয়নায়। তখন লারা বলে, ” আমাদের জিজু আয়নায় কী দেখো? ”

“আকাশের চাঁদ কীভাবে মাটিতে নেমে আসলো।”

তূর্ণর থেকে এমনটা ধারণার বাইরে রেকেছিলো সিনথি। ভেবেছিলো বলবে, ঝগড়ুটে,বাচাল। কিন্তু না এই লোক ওতোটাও খারাপ না। তবে হয়ত হাসবেন্ড ম্যাটেরিয়াল!
গতকাল হলুদে তূর্ণর কথা আর আজকের তূর্ণর কথাগুলো শোনে সিনথির মনে হচ্ছে তূর্ণকে সে যতটা দেমাগী ভেবেছে বা মানুষকে দাম দেয়না এমন টাইপের ভেবেছে তার সম্পূর্ণ আলাদা। হয়ত! দায়িত্ব বান পুরুষেরা কী কখনো ওইরকম দেমাগী হতে পারে?

সবাই মাশাআল্লাহ বলে। শারমিন আঞ্জুম পুত্রবধুকে বেশ আদর সোহাগ করলেন। কপালে চুমু, হাতে চুমু খেয়ে বলেন, ” এই মিষ্টি,লক্ষী মেয়েটা আমার ছেলেটাকে একটু ভালোবেসে আগলে রেখো।”

“রাখবো আম্মু।”
শারমিন আঞ্জুমের হাতের উপর হাত রেখে কথাটা বলে সিনথি। তার ছোট শাশুড়ীর সাথেও কথাবার্তা বলে। সবাই মিলে পিকচার তোলে।

আফিয়া ইসলাম একমাত্র মেয়েকে বিদায় দিবেন ভাবতে জেনো তার সব ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। সিনথির আর কোন ভাই বা বোন নেই। সেই একমাত্র মেয়ে। ভীষণ আদুরে! তবুও তো মেয়ে মানুষ যতই আদরের হোক পরের ঘরে যেতেই হবে। এটাই যে প্রকৃতির নিয়ম। তনে আফিয়া ইসলাম এটা ভেবে খুশি যে, শারমিন আঞ্জুম,সাইখা ইসলাম এমনকি তাদের মেয়েরাও বেশ মিশুক এবং ভদ্র। তার মেয়েকে ভুল কোথাও বিয়ে দেননি। তূর্ণ ও বেশী ভদ্র,নিরব শান্ত ছেলে।

#চলবে

#এক_ফালি_প্রণয়|২১|
শার্লিন_হাসান

শিকদার বাড়ীতে নতুন অতিথির পদচারণের উৎসবমুখর পরিবেশ। সিনথিকে বরণ করে নেন শারমিন। অনেকেই নতুন বউ দেখার জন্য আসে। বাকীরা ফ্রেশ হয়ে হালকা চা-কফি খেয়ে নেয়। পূর্ণ তার রুমে অফিসের কাজে ব্যস্ত।

সিনথিকে নিয়ে তিশা,রোদ রোদের রুমে যায়। বাকীগুলোতে মেহমানদের আনাগোনা। বিয়ের শাড়ী পালটে একটা পার্পেল রঙয়ের জামদানী শাড়ীতে নিজের কায়া বেষ্টিত করে নেয় সিনথি। পার্পল রঙটা তার ফর্সা কায়ায় বেশ ফুটে উঠেছে।

নববঁধুকে হালকা খাবার দেওয়া হয় সন্ধ্যার। অতঃপর বোন,কাজিনরা মিলে আড্ডার আসর জমায়। মাইশা,পাভেল ও আছে। তবে মাইশার বরের আর্জেন্ট কাজ পড়ায় বিয়ের অনুষ্ঠান সেরে চলে গিয়েছে। তূর্ণকে ডেকে আনা হয়। সবাই উপস্থিত তবে পূর্ণ ব্যতীত। তিশা রোদকে ঠেলে পূর্ণকে নিয়ে আসার জন্য। তার বিশ্বাস রোদ গেলে পূর্ণ না করবে না। এদিকে তারা একটা গেম খেলার জন্য কাগজ ঠিক করছে।

রোদ ও আলতো হেঁসে পা বাড়ায় পূর্ণর রুমের দিকে। দরজায় নক করতে পূর্ণ ভেতরে যাওয়ার অনুমতি প্রদান করে। রোদ ত্রস্ত পায়ে ভেতরে প্রবেশ করে। পূর্ণ নেত্রপল্লব স্থির করে রোদের পাণে। মিহিত কন্ঠে শুধায়, “কিছু বলবে?”

“তুমি বেশী ব্যস্ত?”
কন্ঠস্বরে খাদে নামিয়ে বলে রোদ। পূর্ণ এ
স্বল্প হেঁসে জবাব দেয়, ” তুমি বললে ব্যস্ততাকে ছুটি দিতে রাজী আমি।”

“হয়েছে ছন্দ বলে প্রেমিকের ভাণ ধরতে হবে না।”

“আজব! ভাণ ধরবো কেন? আমি তো কারোর না কারোর প্রেমিক পুরুষ তাই না?”

“কার প্রেমিকপুরুষ?”

“আছে…”

কথাটা শেষ হতে রোদ পূর্ণর দিকে তেজস্বিনী চাহনি দেয়। পূর্ণ হেঁসে নিজেকে গুটিয়ে নেয়। আহত কন্ঠে রোদ শুধায়, “এরপর যাতে এই কথাটা বলতে না শুনি।”

“আচ্ছা বলো কী বলবে?”

“চলো আড্ডা দিবে।”

“আচ্ছদ চলো।”

পূর্ণ রোদের পেছন দিয়ে যায় রোদের রুমে। সবাই যেহেতু এসেছে একটা পাত্রে কয়েকটা কাগজের টুকরো রাখা আছে। একেকজন,একেকটা তুলে নিবে এবং যার কাগজে যে লেখাটা উঠবে সে, সেই লেখাটা নিয়ে দুই লাইন করে বলবে। প্রথমে তিশা একটা কাগজ উঠায়। তাতে লেখা, “ভালোবাসা” তখন তিশা হেঁসে শুধায়, “এটা সম্পর্কে আমার ধারণা নেই। আমি ব্যচেলার মানুষ।”

তিশা স্কিপ করতে রোদের সিরিয়াল আসে। রোদ যে কাগজটা উঠায় তাতে লেখা, “ফাস্ট লাভ” তাকে ফাস্ট লাভ নিয়ে কিছু বলতে হবে। তখন রোদ বলে, “ফাস্ট লাভ! প্রথম ভালোবাসা যেই ভালোবাসা আমাদের কখনো সুখানুভূতি দেয় কখনো বা এক আকাশ দুঃখ উপহার দেয়। হয়ত আমাদের গল্পে প্রথম ভালোবাসা খুব একটা পূর্ণতা পায় না তবে আর যাই হোক প্রথম ভালোবাসার তুলনা হয়না। যতই বেটার কেউ জীবনে আসুক আমরা যাকে প্রথম ভালোবাসি, তার জায়গাটা কাউকে দিতে পারি না বা কেউ সহজে নিতে পারে না।”

রোদ আর বেশী কিছু বলে না। এমনিতে এসবে সে প্রচুর কাঁচা। তখন তূর্ণ একটা কাগজ উঠায়। সেটায় লেখা “প্রেম”। তূর্ণ বলে, ” প্রেম মানেই পাপ। প্রেম ফাঁসি নিয়ে অনেক প্রেমিক পাগ’ল হয়ে, বুক পকেটে প্রেমিকার একটা প্রতিচ্ছবি নিয়ে আজো নেত্রপল্লবে অঝোর ধারায় বর্ষণ নামায়। প্রেম সবাই করে কিন্তু সত্যিকারের প্রেমিকপুরুষ সবাই হতে পারে না।”
তবে আমি কখনো প্রেম নামক পাপের অন্তভূক্ত হইনি তাই তেমন জানিও না।”

“যতটুকু বলেছে বেশ বলেছো তূর্ণ ভাই।”

শূন্যের কথায় তিশা বলে, “এবার শূন্য ভাই একটা তুলবে।”

শূন্য পাত্র থেকে একটা কাগজ নেয়। সেটাতে লেখা, “অনুভব”

“অনুভব কী? জোরদমে ভালোবাসা অতঃপর ভালোবাসার মানুষটাকে নিয়ে ভাবনায় বিভোর হওয়া। তারপর! হৃদয় কোঠায় স্বযত্নে আগলে রাখা মানুষটাকে পাওয়ার তৃষ্ণা জাগিয়ে তাকে অনুভব করা।”

থেমে,
হয়ত আরেকটু গোছানো হতো। যাই হোক প্রেম বিষায়ক আমি ওতো কিছু জানি না।”

এবার পূর্ণ একটা কাগজ তোলে। তাতে লেখা “ভালোবাসা”
“ভালোবাসা হলো পবিত্র, স্নিগ্ধ, সুন্দর ব্যপার। ভালোলাগার মানুষ হাজারটা হয় তবে ভালোবাসার মানুষ একজনই হয়। ভালোবাসা কারোর জন্য স্বার্থ হীন অনুভূতি।”

তাদের খেলা বেশীক্ষণ কন্টিনিউ হয়নি। তূর্ণর রুম দখল করে নেয় বাকীরা। পূর্ণ পাভেলকে একটু বেশী নজরে,নজরে রাখছে।

তূর্ণর রুম সাজিয়ে সেটা লক করে চাবি নিয়ে রাতের ডিনারে বসে শিকদার বাড়ীর ছেলেমেয়েরা। তাঁদের খাওয়াদাওয়া শেষ সাড়ে বারোটার দিকে রুমের সামনে জড়ো হয় সবাই। সিনথিকে একটু আগে রুমে বসিয়ো দেওয়া হয়েছে। বাইরে থেকে দরজা লক করে দিয়েছে মেহের। তূর্ণ বেশী ক্যাচাল করেনি। যা চেয়েছে তাই দিয়ে দিয়েছে। এদের সাথে কখনো তর্কে জিততে পারবে না ভালো করেই জানে।

দরজা খোলার শব্দে সিনথি পুষ্পসজ্জিত বিছানা থেকে নেত্রপল্লব স্থির করে তার বরের দিকে। তূর্ণ ত্রস্ত পায়ে এগিয়ে আসে। তূর্ণকে দেখে সিনথি কিছুটা নড়েচড়ে বসে।

“চলুন নামাজ পড়তে হবে।”
নরম কন্ঠ শোনে সিনথি উঠে দাঁড়িয়ে মাথা থেকে শাড়ীর আঁচল টা ফেলে জোর দমে শ্বাস নেয়। তূর্ণ সিনথির কান্ড দেখে বলে, “আপনি ঠিক আছেন?”

“আর বলবেন না। শাড়ী পড়ে দম নিতে পারি না। তারউপর গোমটা একটা টেনে রাখা লাগে।”

“ওহ্ শাড়ী পড়ার অভ্যাস নেই।”

“চলুন নামাজ পড়বো।”

সিনথি অযু করে আসতে তূর্ণ ও অযু করে নেয়। দু’জনে নামাজ আদায় করে খাটে এসে বসে। তূর্ণ পকেট থেকে একটা বক্স বের করে সিনথির সামনে ধরে। সিনথি তাকায়। একটা ডায়মন্ডের লকেট আর এক জোড়া গোল্ডের চুড়ি। সিনথি হাত এগিয়ে দিতে তূর্ণ চুড়ি দুটে হাতে পড়িয়ে দেয়। আয়নার সামনে এসে গলায় লকেটটা পড়িয়ে দেয়। সিনথি আয়নায় চোখ রাখে। ব্লাক কালার পাঞ্জাবি পড়া তূর্ণ। ফর্সা গায়ে বেশ মানিয়েছে তাকে। সিনথি তূর্ণর দিকে তাকিয়ে বলে, “আমাদের মানিয়েছে তাই না?”

“হু!”

“ঠিক আছে এবার স্যরি বলে দিন। আমি ঘুমোতে যাবো।’

” কিসের স্যরি?”

“ওই যে গাড়ী দিয়ে ধাক্কা দিলেন?”

“ওটা তো চলে গেছে।”

“দিন আর সময় চলে গেছে কিন্তু আমার মাথা থেকে ব্যপারটা যায়নি।”

“পড়াশোনা মনে থাকে তো?”

“ওতো না।”

“ঠিক আছে মিস আনাহিতা রাহমান সিনথি আপনায় স্যরি।”

“এবার আসুন!”

“কোথায়?”

“আমার সামনে।”

তূর্ণ বোঝেনি ব্যপারটা। সিনথির মুখোমুখি দাঁড়াতে সিনথি পা উঁচু করে নিজের মুখ তূর্ণর মুখের সমান করে। তখন তূর্ণ হেঁসে বলে, ” আগে বড় হোন তারপর অন্য কিছু।”

“চুপ থাকুন না।”

কথাটা বলে তূর্ণর কপালে নিজের অধর ঠেকায়। গলা জড়িয়ে ধরে বলে, ” জামাই আমায় ভালোবাসবেন তো?”

“আপনি তো ভারী নির্লজ্জ।”

“আমি এমনই। পরপুরুষকে জড়িয়ে ধরে চুমু খাইনি। খেয়েছি আমার বরকে যার উপর আমার হক আছে।”

“ঠিক আছে মিস সিনথি।”

“আর সিনথি বলবেন না। বলবেন মিসেস আহিয়ান শিকদার তূর্ণ। বুঝলেন?”

“বুঝলাম।”

সিনথি তূর্ণকে ছেড়ে খাটের উপর বসে। তূর্ণ বসতে সিনথি আবদার করে, ” শুনুন?”

“বলো?”

“আমায় আপনার বুকে স্থান দিবেন?”

“আপনি না বললেন আপনার হক। তাহলে অনুমতি কেনো নিচ্ছেন? ”

” হক বুঝলাম তাও আপনি ডিস্টার্ব হলে।”

“পাগ’ল মেয়ে একটা।”

“এই আমায় পাগ’ল বলবেন না।”

“ঠিক আছে মিস সিনথি।”

“আবার?”

তূর্ণ জবাব দেয়না। উঠে লাইট অফ করে নিজের জায়গায় গা এলিয়ে দেয়। তূর্ণর বুকে মুখ লুকাতে সিনথিও আর দেরী করেনি। তূর্ণ স্বযত্নে তার অর্ধাঙ্গিনীকে আগলে নেয় বুকের মধ্যখানে।

★★★

পরের দিন সকালে লিভিং রুমে বসে ছিলো সবাই। রোদ সবার জন্য চায়ের ক্যাটলি নিয়ে আসে। মেহের চায়ের কাপ নেয়। দুজন মিলে সবাইকে চা পরিবেশন করে। সিনথি পূর্ণ পাশাপাশি সোফায় বসা। দু’জনে কথা বলছে। তখন আবার তূর্ণ আসে। মেহেরের থেকে চায়ের কাপ নিয়ে তূর্ণ বসে পড়ে। তার পাশে শূন্য বসা। তূর্ণ কে খুঁচিয়ে বলে, ” উহুম কেমন কাটলো বাসর? স্যরি বলেছো তো? নাকী দু’জন মিলে ঝগড়াই করেছো? ”

“এই মেয়েটা কী যে ঝগড়ুটে। যাই হোক কীভাবে জানি অধিকার আদায় করে নেয়।”

“এটাই ভালো। প্রাক্তনকে ভুলতে পারবে সহজে।”

“প্রাক্তন কে?”

“যে এখন চা পরিবেশন করছে।”

“সে আমার প্রাক্তন হলো কীভাবে? তার সাথে কী আমার ভালোবাসার সম্পর্ক ছিলো? উঁহু! তাকে আমি ভালোবেসেছি, ভালোবাসার সম্পর্ক গড়িনি।”

“যেই লাউ সেই কদু।”

“না বুঝলে কথা বলবি না।”

তেজী স্বরে বলে তূর্ণ।

#চলবে