#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা
২৬.
#WriterঃMousumi_Akter
বিহান ভাই কে দেখে রিতীমতো ভড়কে গেলাম আমি।আশে পাশে তাকিয়ে দেখি রিয়া,তোহা আপু আর মেহু কেউ নেই।কোথায় ওরা?এক সাথেই তো নাচ গান করছিলাম।আমাকে এই রাক্ষস মানব এর সামনে রেখে কোথায় বেপাত্তা হয়ে গেলো ডায়নির দল।নিশ্চয়ই আগে থেকে ওরা বিহান ভাই কে দেখে পালিয়েছে।
বিহান ভাই এর পা থেকে মাথা পর্যন্ত তাকিয়ে দেখি,, কালো জিন্স পরা,কফি কালার এর শার্ট বরাবর যেমন থাকে উনার শার্টের হাতা গোটানো।উনার পায়ের নখ গুলো এত সুন্দর, ধবধবে সাদা, হাতের নখ গুলো ও যেনো বিধাতা নিজ হাতে সাজিয়ে গুছিয়ে উনাকে তৈরি করেছেন।উনার এই বিক্ষিপ্ত নয়নে আমার দিকে তাকিয়ে দেখা দেখে মারাত্মক লজ্জা পেয়ে গেলাম আমি।চোখ বড় বড় করে আশে পাশে তাকিয়ে দেখি কোথাও কিছু নেই।না মানে আমার ওড়না খুজছিলাম।সেটা কোথায় রেখেছি তাই ই জানিনা আমি।বাসার মধ্য খুব একটা ওড়নার খোজ খবর রাখা হয় না আমার।তবে বাইরে গেলে ভদ্র ভাবে শিষ্টতার সাথেই যায়।এদিক ওদিক তাকিয়ে কোথাও ওড়না খুজে পেলাম না আমি।ভাইয়ার রুম দ্রুত গিয়ে ভাইয়ার টাওয়াল আলনা থেকে নিয়ে কোনো রকম গায়ে পেচিয়ে বললাম,কি ব্যাপার কি বিহান ভাই?এভাবে হুট হাট মেয়েদের রুমে প্রবেশ করেন একটা কাশি দিয়ে আসবেন না।
“বিহান ভাই ভ্রু কুচকে বলেন,এটা কি মহিলাদের রুম।আমি তো জানি এটা শুভর রুম।এখানে আসতে গেলেও কাশি দিয়ে আসতে হবে।আর কাশি দিয়ে আসবো কেনো?চৌদ্দ গুষ্টির মতো ধান্দাবাজ হয়েছিস তাইনা?”
ব্যাস এই যে আবার শুরু হয়েছে তার গুষ্টিসহ উদ্ধার করা।
“কেনো বিহান ভাই ধান্দবাজির কি হলো।”
“আমাকে কাশি দিতে বলছিস যাতে সবাই কে বলতে পারিস আমি যক্ষা রুগি।তোর চাচাতো বোন মালিহা সহজ সরল ছেলেটা আমির এর সাথে যে ধান্দাবাজি টাই না করলো তোদের নামে তো মামলা দেওয়া উচিত। ”
এমন সময় সুর সুর করতে করতে মেহু,তোহা আপু আর রিয়ার আগমন ঘটলো।আমি ওদের দিকে ক্ষীপ্ত নয়নে তাকিয়ে বললাম,তোমরা কোথায় গিয়েছিলে।
“তোহা আপু বললো,ওয়াশ রুম ওয়াশ রুম গেছিলাম।”
“তিন জনে এক সাথে।”
“মেহু আপু বললো,হ্যাঁ এক সাথেই?”
রাগে আর ওদের কিছু বললাম না।মনে মনে বললাম পরে দেখে নিবো।
বিহান ভাই কে আবার প্রশ্ন করলাম,’বিহান ভাই কিসের মামলা দেওয়া উচিত শুনি।’
‘তোর বোন মালিহা তো বিশ্ব সেলিব্রিটিদের মাঝে একজন।সব খবর ই আমার কানে পৌছায়।আমির কে ভোলাভালা পেয়ে নিজে প্রপোজ দিয়ে রিলেশন করেছে।আর তোরা গুষ্টি সহ রেগুলার রেস্টুরেন্টে গিয়ে খেয়েছিস।বংশেও খান খাওয়া ছাড়া কিছুই বুঝিস না।শুধু মাত্র খাওয়ার জন্য সাদাসিধা ছেলেদের সাথে ভোলায়ে ভালায়ে প্রেম করিস।ব্রেকাপের সময়ে মালিহা বলেছে আমির নাকি মৃগে রুগি।সিরিয়াসলি এটা কোনো কারণ হলো ব্রেকাপের।’
‘এর জন্য আপনি মামলা দিতে বলবেন?’
‘অবশ্যই তুই এখন ধন্দাবাজি করছিস আমাকে কাশি দিতে বলে।ব্রেকাপের বাহানা যক্ষা রুগি প্রমান করে তাইনা ধান্দাবাজ ভয়ংকর মহিলা।’
‘আপনি যেভাবে আমাকে ভয়ংকর ভয়ংকর করছেন মনে হচ্ছে আমার মুখ দেখতে পেত্নিদের মতো।’
‘যাক ফাইনালি একটা সত্য কথা বললি।’
মেহু আপু বললো,’ইয়ে বিহান ভাই দিয়া কি আপনার গফ যে যক্ষা রুগি প্রমান করে ব্রকাপ করবে।’
‘ওই মানে একই কথা আমার শ্বশুরের মেয়ের কথা বলছি আরকি?দেখা গেলো এই ধান্দাবাজি শ্বশুরের মেয়ে ও করলো।’
‘করলে কি করবেন তখন?’
‘দুই গালে দুইটা থাপ্পড় মেরে,এক পায়ে চার দিন দাঁড়িয়ে রেখে তারপর বিয়ে করবো।বিয়ে করে রোজ পা টেপাবো।’
‘বাহ বিহান ভাই এমন একটা জামাই দিয়ার জন্য খুজেন।দিয়া খুব ভাল পা টিপতে পারে।’
হেসে দিয়ে বললাম,’বিহান ভাই তোহা আপু আপনার পা টিপতে রাজি আছে।আপনি বরং তোহা আপুকেই দায়িত্ব টা দিন।’
‘ছিঃতোহা আমার সিনিয়র হয় হিসাব মেলাতে গেলে।তোহা কে আমার সম্মান করা উচিত।”
উনার কথার এই কঠিন মানে এরা তো কেউ বুঝবেই না।যা বুঝার আমি একাই বুঝছি।বিহান ভাই কে বললাম,সুর সুর করতে করতে রুমে প্রবেশ করেছেন কিছু দেখেন নি তো।
“বিহান ভাই মেহু আপু আর রিয়ার দিকে তাকিয়ে আমার দিকে তাকালেন।উনার মনে হয় মারাত্মক প্রেজটিজে লেগেছে ব্যাপার টা।”
“দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,আমাকে কি চরিত্রহীন ভাবিস।বেয়াদব মহিলা একটা।”
এর ই মাঝে রিয়া বললো,”বিহান ভাই আপনার পায়ে কার স্যান্ডেল।”
তাকিয়ে দেখি আমার অন লাইন থেকে অর্ডার করা শখের স্যান্ডেল উনার পায়ে।ক্ষিপ্ত হয়ে বললাম,”আপনি আমার ঘরে পরা স্যান্ডেল পরেছেন।”
“কি করবো দেখে ভাল লাগলো,স্যান্ডেলে পুতুল টুতুল দেওয়া বাচ্চাদের খেলনা ভেবে পায়ে পরেছি।”
“খুলুন বলছি এক্ষুণি খুলুন।আমার পায়ে বড় হয়ে যাবে।”
“কেনো?এটা আয়রার খেলনা না।”
“খুলুন আগে।”
এটা তো খুলবোই না, ‘তোরা আসলে কি করছিলি? এই রুমে।’
‘পার্টি। ফিউচারে উনার সাথে এইভাবে ডান্স করতে চাই।তার ই প্রাকটিস চলছে’
“বাহ!নাইস তো।তা জিন্স পরে।এইজন্য প্যান্টের দাম এত বেড়েছে।প্যান্টের দাম তো এত হওয়ার কথা নয়।তোরা মেয়েরা জিন্স কিনে কিনে জিন্সের দাম বাড়াইয়া ফেলছিস।পায়ে কালো সুতা গায়ে টি শার্ট।এখন জিন্স পরতেই লজ্জা লাগে মেয়েদের জন্য।”
“দেখুন এগুলা লেডিস জিন্স,টি-শার্ট ও লেডিস।সো এগুলা মেয়েদের ড্রেস।”
“পুরুষ জাতীয় প্লাজু,গাউন,লেগিন্স এগুলা তো আজ ও দেখলাম নাহ।সব জায়গা নারীরা সুবিধা পাচ্ছে বেশী করে।”
ভাইয়ার ড্রেসিন টেবিলের উপরে রাখা ডায়রির মাঝে একটা চিঠি খুজে পেলো বিহান ভাই।
প্রিয় শুভ ভাইয়া,
জান,পরাণ,বাবু,বেবি টা চিঠিটা পড়া শুনেই বিহান ভাই এর দিকে তাকিয়ে পড়লাম আমরা।বিহান ভাই এতটুকু পড়েই থেমে গিয়ে বললেন,হাতের লেখা টা চেনা চেনা লাগছে। মেহু দেখো তো চিনো কিনা?রিয়া বললো দেখি বিহান ভাই কে চিঠি লিখেছে বাকিটা পড়ি।মেহু আপু রিয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,শুভ ভাইয়ের চিঠি আমাদের না দেখায় ঠিক হবে তাইনা বিহান ভাই।বিহান ভাই মেহু আপুর দিকে তাকিয়ে বললো,শুভ কে দেখি প্রায় কার ছাতার নিচ দিয়ে যেনো যায়।প্রুভ আছে আমার কাছে।মেহু আপু বললো,বিহান ভাই শুভ ভাই কি তাহলে অশুভ হয়ে গিয়েছে।আজকাল এগুলা করছে।বিহান ভাই খুব ই সন্দিহান ভাবে বললো,আসলেই মেহু তুমি তো এগুলা জানো না তাইনা?..তোহা আপু আড়মোড়া ভেঙে বললো একজন ডাক্তারের সাথে প্রেম করার ইচ্ছা আজ ও পূরণ হলো না আমার।এদিকে সবাই প্রেম করে আমি শুধু দেখি।বিহান ভাই তোহা আপুকে বললেন,টিকটক থেকে একজন নায়ক কে খুজে নাও তোহা।ডাক্তার এর থেকে ওরাই বেটার হবে টিকটক করতে করতে পাগল হয়ে গেলে তখন ডাক্তারের ট্রিটমেন্ট নিও।তোহা আপুর মুখ টা চুপসে গেলো কারণ তার ক্রাশ বয় বিহান ভাই।
বিহান ভাই আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,আমার যে গেঞ্জি গুলা পুড়িয়ে ফেলছিস ওগুলার টাকা দিবি কবে।হয় টাকা দিবি নইলে দশ মিনিট পা টিপে দিবি।
ওহ মাই গড!উনি গেঞ্জির সেই পোড়া গুলা কখন দেখলেন।বিরক্ত হয়ে বললাম আপনি এখন যান পা একদিন টিপে দিবো।
বিহান ভাই যাওয়ার সময় একটা মেসেজ করলেন।ফোনে মেসেজের সাইন্ড হতেই ফোনের দিকে দেখি উনার মেসেজ,,
Ek HaaTh Mein ShaRav, Tujo Piyoo MeRe SaaTh,,
Pittih Jaw Pittih Jaw Vhi Mein SaaRrii SaaRii RaaTh
Ek HaaTh Mein ShaRav, Tujo Piyoo MeRe SaaTh,,
Pittih Jaw Pittih Jaw Vhi Mein SaaRrii SaaRii.
পিচ্চি তোমার সাথে একদিন এভাবেই সুন্দর একটা মুহুর্ত কাটাতে চাই।তোমার এই লুকে তোমাকে এতটাই সুন্দর লাগতে হলো কেনো?আমি জাস্ট চোখ ফেরাতে পারছিলাম না।এইজন্য ইনিয়ে বিনিয়ে তোমাকে দেখার বাহানায় কত কথা বললাম দেখলে।এই আমি এখানে মন তোমার ওখানে।কেউ জিন্স পরলেও এত সুন্দর লাগে বুঝি।আমাকে সর্বনাশের দিকে নেওয়ার বাহানা সব তাইনা।
মেসেজ টা পরে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে উনার কথায় ভাবতে শুরু করলাম আমি।
_________________________
পরের দিন আমাদের শহর থেকে দূরে একটু গ্রাম্য এলাকায় বিয়ের দাওয়াত খেতে গিয়েছি আমরা। কাজিন রা সবাই মিলে একটা টেবিলে বসেছি গোল হয়ে।খাবার সার্ফ করার সময় একটা ছেলে বার বার আমার সাথেই ভাব নিচ্ছিলো।ব্যাপার টা বিহান ভাই এর ভাল লাগছিলো না।ইচ্ছাকৃত অনেক মাংশ দিচ্ছিলো আমার প্লেটে।বিহান ভাই বিভোর ভাই তিয়াস ভাই শুভ মিলে কি প্লান করলো তা জানিনা।হুট করেই প্রচুর খাওয়া শুরু করলো তারা।এত পরিমান খাচ্ছিলো দিয়েই পারছিলো না।বিহান ভাই এক পিস মাংশের বেশী খায় না।সেখানে এত খাচ্ছেন।খেতে খেতে এক সময় সার্ফ করা ছেলেটি ক্লান্ত।মানুষ এত খায় কেমনে।জীবনে কি এদের আর দাওয়াত দিবে।
হাত ধোয়ার জন্য টিউবয়েল এ গেলাম।ভীড় দেখে অন্য রাস্তা দেখলাম।পাশেই একটা পুকুর দেখে পুকুরে হাত ধুতে গেলাম
হাত ধুতে গেলেই পানিতে পড়ে গেলাম।
বিহান ভাই আমার দিকে প্রচন্ড ক্ষিপ্ত নয়নে তাকিয়ে আছেন।এর মানে তুই পুকুরে এসছিস কেনো?চারদিকের মানুষ কি বিশ্রি ভাবে তাকিয়ে হাসছিলো।ইজ্জত যা ছিলো সব শেষ।
চলবে,,
#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা
২৭.
#WriterঃMousumi_Akter
জীবনে অনেক মানুষের বয়ফ্রেন্ড দেখেছি কিন্তু আমার বয়ফ্রেন্ড এর মতো দুনিয়াতে দেখি নি।মনে হয় ওই এক পিছ ই ওপরওয়ালা সৃষ্টি করেছেন।প্রেমিকা পানিতে পড়ে গিয়েছে কোথায় ঝাপ দিয়ে গিয়ে কোলে করে তুলবে সেটা নয় ক্ষিপ্ত নয়নে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।উনার চাহনি দেখে হৃদপিন্ড কাঁপা শুরু হলো।আমি ভীতু ভীতু নয়নে উনার দিকে তাকালাম।অনেক বেশী পানিতে পড়িনি কোমর অবধি পানিতে পড়েছি।
“বিহান ভাই দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,,পানি থেকে ওঠবি নাকি মৃগে রুগিদের মতো পানিতেই পড়ে থাকবি।”
“আমি আসহায় দৃষ্টিতে উনার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললাম হাইরে আমার বয়ফ্রেন্ড।এই ছিলো তোর মনে।বাহ মাসুদ বাহ!কোথায় টেনে তুলবি তা না রাগ দেখাচ্ছিস।”
“উঠার চেষ্টা করলাম, এমন সময় আলিপ ভাইয়া উনার হাত এগিয়ে দিলেন।আমি আলিপ ভাইয়ার হাত ধরতে যাবো এমন সময় বিহান ভাই আলিপের আগেই আমার হাত ধরে ফেললেন।রাগে দাঁত খিচে বলছেন,এই জন্য মাইয়া মানুষ নিয়ে কোথায় যেতে ইচ্ছা করে না।যেখানে যাবে ঝামেলা পাকাবে মানে পাকাবেই।আমি একশ বার বললাম এদের আনার দরকার নেই কিন্তু এদের না আনলে নাকি খাওয়া হজম হবে না।মেয়ে মানুষ সব কিছুতে বোঝে বেশী।”
“দেখুন চারপাশে মানুষ আছে তারা দেখছে,মানুষের মাঝে একটুও বকা ঝকা দিবেন না।আর বেশী বুঝলাম বা কি আর সমস্যা করলাম কি?”
“সিরিয়াসলি দিয়া এখনো প্রশ্ন করছিস। বেশী না বুঝলে পুকুরে আসতি তুই।সাঁতার জানিস তুই। যদি বেশী পানিতে পড়ে যেতিস তাহলে কি হতো কোনো আইডিয়া আছে তোর।একবিন্দুও তো সাঁতার জানিস না।”
“কি করবো টিউবওয়েল এ ভীড় ছিলো।”
“এটা স্বাভাবিক ব্যাপার দিয়া বিয়ে বাড়ি এখানে ভীড় থাকবেই।অস্বাভাবিক হলো তোর এই পুকুরে আসা।”
“ভুল টা আমি করেছি বুঝতে পেরে চুপ হয়ে রইলাম।”
“এমন সময় আমাদের দল বল সব হাজির। ”
শুভ ভাইয়া বলে উঠলো,দিয়া কিভাবে পড়ে গেলি তুই।কোনো সমস্যা হয় নিতো।ভাইয়া আমার গায়ে হাত দিয়ে উত্তেজিত হয়ে উঠলো।
মেহু আপু বলে উঠলো ইস দিয়া আগে জানলে ভিডিও করতাম কিভাবে পড়ে গেলি।রিয়া, তোহা আপু ও কিছুটা ফান করে ক্ষ্যান্ত হলো।
“বিভোর ভাই বললেন,,ইস রিয়া পড়ে গেলে আজ হিরোর এন্ট্রি নিতাম।কোলে তুলে পানি থেকে তুলতাম। অতপরঃপ্রেম টা হয়েই যেতো আমার।রিয়া একটু পড়ে যাও তো।”
“”রিয়া বললো,খেয়ে কাজ নেই আপনার ভরসায় পানি তে পড়বো যাতে পানিতে ডুবে মরি তাইনা।আপনার মতো রোহিঙ্গা আমাকে তুলতে পারতো।”
“আমার মতো সুঠাম দেহের অধিকারী কে রোহিঙ্গা বলো রিয়া।বাসর ঘরে বাকিটা বুঝাবো।”
“সাইড থেকে একটা মেয়ে খুব জোরে হেসে উঠলো আমাকে ভেজা কাপড়ে দেখে।”
বিহান ভাই ক্ষীপ্ত নয়নে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বললো আপনি কি ছেলে?
মেয়েটি বললো আপনার কি দেখে মনে হলো আমি ছেলে?
আপনার ঢং দেখে মনে হলো।আমি কোনো মেয়েকে অসম্মান করি না।কিন্তু আপনি মেয়ে হয়ে আরেকটা মেয়ে পড়ে গিয়েছে ভিজে গিয়েছে শরীরের ভাজ দেখা যাচ্ছে সেটা দেখে বিকৃত মস্তিষ্কের মানুষের মতো হাসছেন।আপনার কি উচিত না মেয়ে হয়ে আরেক টা মেয়েকে হেল্প করা।
মেয়েটির মুখে আর কোনো কথা নেই।
বিহান ভাই টি-শার্ট এর উপরে শার্ট পরেছিলেন।উনি উনার শার্ট খুলে আমার কোমরে বেঁধে দিলেন।কোমর সহ শার্ট এ ঢেকে গেলো।আচ্ছা উনার এই বিশাল বকাঝকার মাঝে এত কেয়ারিং টা আমাকে মুগ্ধ করে।এই মানুষ টা এতটা চমৎকার কেনো?
সবাই রওনা হলাম, সবাই আমার থেকে খানিক টা এগিয়ে গেলো।হঠাত খেয়াল করলো আমি নেই পেছনে।বিহান ভাই দ্রুত ছুটে এসে দেখেন আমি সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে।বিহান ভাই আমাকে বলেন তোর সমস্যা কি দিয়া এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো?আমি হঠাত ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম যে তুই কি কোথাও হারিয়ে গেলি নাকি।উফফ তোকে দেখার পর নিঃশ্বাস নিতে পারছি।বিহান ভাই এর মুখের দিকে তাকিয়ে বললাম আমি হাটতে পারছি না বিহান ভাই।বিহান ভাই তাকিয়ে দেখলেন পা খানিক টা ফুলে গিয়েছে আর ছুলে গিয়েছে খানিক টা ক্ষত হয়ে গিয়েছে।বিহান ভাই এর মুখের দিকে তাকিয়ে মনে হলো উনি কেঁদে দিবেন দিবেন একটা ভাব।মুখশ্রী ভীষণ মলিন হয়ে আছে।নিচু হয়ে বসে বলেন অনেক কষ্ট হচ্ছে তাইনা পায়ে হাত বুলোতে বুলোতে।উনি আমাকে কোলে তুলে নিয়ে আমার মুখের দিকে একভাবে তাকিয়ে রইলেন,কি দেখছেন ওভাবে,যেনো বহুকাল দেখেন নি আমায়।অপলক নয়নে তাকিয়েই আছেন।
আমাকে বিহান ভাই এর কোলে দেখে বাকি সবাই অবাক হয়ে গেলো।ওরা এক সাথে প্রশ্ন করা শুরু করলো কি হয়েছে দিয়ার।বিহান ভাই শান্ত গলায় বললেন,পা মচকে গিয়েছে ছুলে ও গিয়েছে খানিক টা।বিহান ভাই বললেন আমি দিয়াকে নিয়ে বাইকে যাচ্ছি তোরা আয়।
সেদিন বাসায় আসার পর বিহান ভাই আমাকে কোলে তুলে আমার রুমে নিয়ে গেলেন।রাস্তা থেকে ওষুধ আর মলম ও এনেছেন।আম্মু বাজারে ছিলো বাসায় ছিলো না।বিহান ভাই উনার হাতের আলতো পরশ দিয়ে মলম আমার পায়ে লাগিয়ে দিলেন।বিছানায় বসে আছি আমি পা মেলে দিয়ে।বিহান ভাই কপালে চুমু দিয়ে বললেন,পিচ্চি অনেক কষ্ট হচ্ছে তাইনা।আমি উনার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম। আসলে কিছু অনুভূতি বলে প্রকাশ করা যায় না বিহান ভাই কে দেখেই বোঝা যাচ্ছে উনি আমার জন্য অনেক কষ্ট পাচ্ছেন।উনার হাত ধরে বললাম এত কষ্ট পাচ্ছেন কেনো বিহান ভাই আমি ঠিক আছি।
__________________________________
“”দুই মাস পরে বিহান ভাই আমাকে হোয়াটস এপ এ চার টা স্ক্রিনশট দিয়ে বললেন এই চারটা ছেলে কে বা কারা দিয়া।”
“রিপ্লে দিলাম চিনিনা বিহান ভাই।”
“তাহলে এক্সেপ্ট করেছিস যে”
“এমনিতেই,জাস্ট এমনি।ফেসবুক ফ্রেন্ড তারা।”
“একটা ছেলে তোকে কিস ইমুজি পাঠিয়েছে হুয়াই দিয়া।চিনে না জানেনা কিস ইমুজি বাহ।”
ইমুজি টা ডিলিট দিলাম দেখলো কিভাবে।এই ছেলে টা কি জ্বীন।
“বললাম আমি কিভাবে জানবো,,ওইটা জাস্ট ইমুজি তো তাইনা।এত সিরিয়াস হওয়ার কিছুই নেই।”
“জাস্ট ইমুজি,জাস্ট ফ্রেন্ড তাইনা দিয়া।ওয়েট এন্ড সি বেইবি।”
সেদিন রাতে ঘুমিয়ে গেলাম।পরের দিন ঘুম থেকে উঠে অবাক হয়ে গেলাম।
—ফ্রেন্ডসংখ্যা ৫০ থেকে পই পই করে ৫০০০ হয়ে গিয়েছে।বুঝলাম না একটা শূণ্য এর পরে আরো দুইটা যোগ হয়েছে কিভাবে।ঘুম থেকে উঠে মাথা হ্যাং হয়ে গিয়েছে আমার।গতকাল রাতেও ফ্রেন্ডলিস্ট দেখেছি যেসব পোস্ট এ ১৫-২০ টা লাইক ছিলো সেগুলো তে ৩০০ থেকে ৪০০ প্লাস লাইক।প্রফাইল লক করা ছিলো দেখি যে সেটাও আনলক।কাহিনী কী কিছুই বুঝলাম না।
—এইদিকে ছ্যাচড়া ছেলেরা কেউ মেসেজ দিছে ওই।এর আগে পরে কখনো কথা হয় নি অথচ মেসেজ দিচ্ছে ওই।যেনো তাদের ঘরের বউ।
—ছ্যাচড়ার চরম লেভেল গুলা তো একটা হাই হ্যালো না লিখে প্রথমেই ভিডিও কল দিচ্ছে।কন্টিনিউ ভিডিও কল অডিও কল দিচ্ছে কিছু পাব্লিক।বিরক্ত হয়ে যাচ্ছি আমি জাস্ট।
–কেউ কেউ অশালিন ভিডিও দিচ্ছে রিপ্লে দিচ্ছি না বলে।
–কেউ কেউ মেসেজ দিচ্ছে জান কেমন আছো।আমি তুমাকে ভালবাসতে চাই পাখি।
—অনেকে মনে হয় জীবনে স্কুলেই যায় নি কারো থেকে একটা আইডি খুলে নিয়েছে।ভয়েজ মেসেজ দিচ্ছে কল ধরো আমি লিখতে পারি না।
—ফোন একভাবে হ্যাং হয়ে আছে।আমার মনে হচ্ছে পাগল হয়ে যাচ্ছি।
—আম্মু রান্নাঘর থেকে এসে বলছে,কেউ ফোন দিলে প্রয়োজনেই ফোন করে দিয়া।এতবার ফোন দিচ্ছে রিসিভ করছিস না ক্যানো?এক্ষুণি ফোন রিসিভ কর।তুই আমার আত্মীয়রা কেউ ফোন দিলে ঠিক ভাবে রিসিভ ই করিস না।নেটে কল দিলে নাকি টাকা কম কাটে তাই তারা নেটে কল দেয়।অথচ তুই রিসিভ ই করিস না।আমার কাছে সবাই নালিশ দিছে।তাছাড়া তারা আমাকে একটু দেখতেও চাই বলে কল দেয়।
–দেখো আম্মু তোমার ওই কিপটা আত্মীয়ের কথা বাদ দাও।ওসব দেখা ফেকা সব মিথ্যা।সব ই টাকা বাঁচানোর ধান্দা।তাদের তোমার জন্য পরাণ পুড়লে তোমার নাম্বারেই ফোন দিবে।মানুষ যে এত ছ্যাচড়া ক্যান বুঝি না।আমার মা জননী ছেড়ে দেওয়া পাত্রী না।তার জাত পাত তুলে কিছু বললে আর আস্ত রাখে না।মানে মামা, খালা বা মায়ের সাথে জড়িত কোনো আত্মীয়ের নামে কোনো বদ নাম সে সহ্য করতে পারে না।
—মা জননী ক্ষেপিদের মতো বলে উঠলো,তোর মতো নবাব তো আর সবাই না।মানুষ হিসাব করে তোর মতো দাতাগার না কেউ।
—এইদিকে আমার ফোন অতিরিক্ত কল মেসেজে হ্যাং করে আছে।কতক্ষণ বা বসে থাকবো সারারাত ওয়াশরুম যায় নি।পানি কম খাই ওয়াশরুম যাওয়ার ভয়ে।ফোন টা রেখে ওয়াশ রুম গিয়ে ট্যাবের পানি ছাড়লাম।ফ্রেশ হয়ে বাইরে এসে দেখি রিয়া হেসে গড়াগড়ি দিচ্ছে,রিয়ার আম্মু ও হেসে গড়াগড়ি দিচ্ছে আর আম্মুর হাতে খুন্তি।খুন্তি হাতে দাঁড়িয়ে আছে আমাকে পিটানির জন্য।আম্মুর রনচন্ডি মুড দেখে অবাক হয়ে গেলাম।মারবে মারবে ভাব কিন্তু মারলো না।বিশ্রি ভাবে বললো,তোকে ফোন কিনে দিয়েছি কি এসব অসভ্য লোকের সাথে কথা বলতে।এরা কারা বল আগে।এরা কি তোর ক্লাস ফ্রেন্ড।আজ থেকে ফোন ই চালানো বন্ধ তোর।
—রিয়ার আম্মু নাকি ফোন রিসিভ করেছিলো কোনো এক ভদ্রলোক নাকি তার জামা কাপড় খুলে দেখিয়ে দিয়েছে।রিয়ার আম্মু নাকি ভয় পেয়েছে আর সেটা আম্মুকেও দেখিয়েছে।কাকি মনি নাকি বার বার বলছিলো আপা এটা আমি কি দেখলাম।আসলেই দেখলো কি সেটাই ভাবছি?বাবাহ আমার আম্মু যে আম্মু।
—হাজার বার বুঝালাম আম্মু এটা ফেসবুক এর পাব্লিক আমি চিনি না।আম্মু কি আর তা মানে।তার ধারণা ফোন নাম্বার না পেলে কিভাবে ফোন দিবে।
চলবে,,