এক বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যা পর্ব-৪৮+৪৯

0
1307

#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা
৪৮.
#WriterঃMousumi_Akter

সবুজ মেরুর দেশে শুধুই সবুজের সমারোহ।চারদিকে সবুজ ধান ক্ষেত হয়তো পনেরো দিনের মাঝেই ফুল আসবে গাছে।প্রসস্ত বিলের মাঝে চিকন একটা পিজঢালা রাস্তা যার চারদিকের কুল কিনারা দেখা যাচ্ছে না।বাতাসে ধানক্ষেতের ধানের পাতা গুলো দোল খাচ্ছে যেনো স্রোত বয়ে যাচ্ছে ধানের পাতায়।মাঝে মাঝে কাক তাড়ুয়া ও আছে।কৃষক রা ধান হওয়ার আগেই কাকতাড়ুয়া লাগিয়ে রেখেছে।আমি অটো থেকে মুখ বের করে হাওয়া লাগাচ্ছি শরীরে।আমার সামনে থাকা চুল গুলো উড়ে উড়ে চোখে মুখে পড়ছে আর আমি হাত দিয়ে সরিয়ে সরিয়ে কানের পিছনে গুজে দিচ্ছি।কাক তাড়ুয়ার গায়ে শার্ট পরানো, কালো হাড়ি দিয়ে মাথা বানানো মধ্যরাতে নিশ্চিত কেউ প্রেতাত্মা ভেবে ভয় পাবে।

বিহান ভাই এক নজরে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন উনার চোখের মনিতে আমার চোখে মুখে উড়ে আসা চুল গুলো স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।বিভোর ভাই বিহান ভাই কে বললেন বিহান দেখ জায়গা টা সত্যি সুন্দর না।বাবা কিন্তু দেখে শুনে একটা জব্বর শ্বশুর বাড়ি বানিয়েছেন।এই এলাকায় বিয়ে না করলে এত সুন্দর জায়গা ফ্রি তে দেখতে পেতাম না।বিহান ভাই অন্যমনস্ক ভাবে উত্তর দিলেন হ্যাঁ দেখছি তো নজর কাড়া প্রকৃতি, প্রকৃতির এমন সুন্দর রুপ আগে দেখি নি।বলেই নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে হালকা হাসি দিলেন।আমি উনার দিকে তাকাতেই চোখে চোখ পড়ে গেলো দুজনের।অটোতে সামনা সামনি বসে আছি দুজনে।দুজনের চোখ দুজনের দিকে রয়েছে একভাবে।দুজনের চোখের তারায় দুজনকে দেখা যাচ্ছে।কয়েক সেকেন্ড উনার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতেই লজ্জারা চারদিক থেকে ঘিরে ধরলো আমাকে।ইস এইভাবে কারো চোখের দিকে কি তাকিয়ে থাকা যায়।লজ্জার সম্পূর্ণ আবেশ চোখে মুখে লেগে আছে আমার উনার চোখে মুখে হাসি খেলা করছে উনার কোনো ভাবগতি নেই চোখ মুখের,তাকিয়েই আছেন একভাবে।উনি মনে হয় অনেক্ষণ পর চোখের পলক একবার ফেললেন।লজ্জামাখা হাসি আমার ঠোঁটের কোণে জড় হয়েছে আমি আবার চোখ ফিরিয়ে প্রকৃতির দিকে তাকিয়ে তাদের মুগ্ধতা উপভোগ করছি।

আড়চোখে উনার দিকে তাকিয়ে দেখি উনি আমার দিকে তাকিয়েই আছেন।সাদা ফিটিং প্যান্ট,পরণে খয়েরী পাঞ্জাবী, পাঞ্জাবীর হাতা গোটানো,হাতে কালো ফিতার ঘড়ি,পায়ে আজ জুতা নেই উনার, দুই ফিতার চটি।চুল গুলো উড়ছে উন্মুক্ত বাতাসে।এত সিম্পল পোশাকে,সিম্পল একটা চটিতে একটা ছেলেকে এতটা সুন্দর লাগতে পারে তা উনাকে না দেখলে বুঝতাম না।উনার পায়ের দিকে তাকিয়ে আছি আমি,উনার পায়ের নখ দেখে যে কোনো মেয়েই ক্রাশ খাবে।একদম ই সাদা আর পরিপাটি,হাত পায়ের নখ গুলো কখনো বড় হতে দেখি নি আমি এই পরিপাটি ভাবেই দেখে আসছি ছোট বেলা থেকে।এলোমেলো বাতাসে গায়ের জরজেট উড়না উড়ে খানিক টা সরে গিয়েছে।বেখেয়ালে সে হুঁশ ই নেই আমার।ফোনে টুং করে মেসেজ এর সাউন্ড শুনে তাকিয়ে দেখি বিহান ভাই এর মেসেজ।বিহান ভাই নিচু হয়ে বসে ফোন চাপছেন পূর্ণ মনোযোগ মনে হয় ফোনের দিকেই তার।ফোনের মেসেজ দেখে ভাল লাগা আরো বহুগুন বেড়ে গেলো আমার।

“জীবনে অনেক বার প্রকৃতির রূপ দেখেছি কিন্তু প্রকৃতির এত মন কাড়া রুপ দেখি নি।সে প্রকৃতির সাথে মিশে গিয়ে প্রকৃতি কে তার পূর্ণ সৌন্দর্য ফিরিয়ে দিয়েছে।তাকে খোলা চুলে এতটা সুন্দর না লাগলেও পারতো”

মেসেজ টা পড়ে উনার দিকে তাকাতেই উনি ছোট মামিকে ডাকলেন।কাকিমনি দেখো এই জায়গা টা অনেক সুন্দর তাইনা।মামি অটো থেকে মুখ বের করে দেখতে গেলো তখনি বিহান ভাই মামির দিকে তাকিয়ে থেকেই উনার অন্য হাত দিয়ে আমার পড়ে যাওয়া ওড়না আমার গায়ের উপর তুলে দিলেন।আমি বুঝতে পেরে দ্রুত ওড়না ঠিক ঠাক করে বসলাম।উনি কি যাদু জানেন এক হাত দিয়ে মামিকে বাইরে কিছু দেখাচ্ছেন তো অন্য হাতে ওড়না ঠিক করছেন।

উনি এত কিছু করার পর ও আমি কথা বলছি না।গতকালের রাগ টা পুষে রেখেছি।উনি যথা সম্ভব চেষ্টা করেই যাচ্ছেন কিন্তু আমি পাত্তা দিচ্ছি না।আমার কাছে এসে আস্তে করে বললেন,অটো ড্রাইভার আয়নায় দেখছিলো তোকে ঠিক ঠাক ভাবে বসতে পারিস না।খাবার যত্ন করে তুলে রেখেছি আমি এখনো ছুয়ে ও দেখলাম না আর খাবে অন্য কেউ। ঠিক ঠাক ভাবে বস বলেই উনি মামির দিকে তাকালেন।

অতপরঃআমরা এসে পৌছালাম বিভোর ভাই এর মামাবাড়ি।বিভোর ভাই এর নানি রাস্তায় ই দাঁড়িয়ে আছেন।উনার বয়স খুব একটা হয় নি, দেখতে বেশ ইয়াং ই লাগে।বিহান ভাই কে দেখে বিভোর ভাই এর মামা মামি কাজিন সবাই অন্যরকম খুশি।তার পর উনি এখন নামকরা একজন ডাক্তার।সবাই বিহান ভাই এর সাথে কুশল বিনিময় করছে,কেউ কেউ হ্যান্ডশিপ ও করছে মনে হলো কোনো সেলিব্রিটির দারোয়ান হয়ে উনার পাশে দাঁড়িয়ে আছি।কারণ কেউ আমাকে পাত্তাই দিচ্ছে না সবার মমনোযোগ উনার দিকেই আছে।আমাকে দেখে বিভোর ভাই এর মামাদের বাড়ির আশে পাশের মহিলারা বলছে শাহিনা এই মেয়েটা কে রে?বিভোর ভাই এর মামি বললেন শাহিনার ননদের মেয়ে এইতো সেই দিয়া।আগে কত এসেছে ছোট বেলা চিনতে পারছো না।মহিলা রা বললো ওহ আচ্ছা এই যে সেই মেয়েটা তারা খুব সুন্দর ভাবে বললো কেমন আছো মা।আমিও হেসে উত্তর দিলাম জ্বী ভাল আছি।

বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করেই দেখি বিভোর ভাই এর মামি আগে থেকেই খাবার রেডি করে রেখেছেন।বিহান ভাই এর তাড়া আছে অনেক ব্যাস্ততার মাঝেও এসেছেন।এইজন্য আমরা দুপুরে খেয়েই বেরিয়ে যাবো।বিভোর ভাই এর মামাতো বোন বার বার বিহান ভাই এর দিকে তাকাচ্ছে।আমার মন সব সময় নেগেটিভ চিন্তায় থাকে মনে মনে ভেবে নিলাম বিহান ভাই কে মনে হয় পছন্দ করে মেয়েটা।মেয়েটা বিহান ভাই এর এক্সট্রা খাতির করছে ব্যাপার টা মোটেও ভাল লাগছে না আমার।আমাদের সামনে বিভিন্ন পিঠা ফল এর নাস্তা দেওয়া হয়েছে।সবাই টুকটাক খাচ্ছি।

এমন সময় বিভোর ভাই এর কাজিন আরিফ এসে বললো আরে দিয়া যে কেমন আছো।হেসে উত্তর দিলাম জ্বী ভালো আছি।আরিফ এসে আমার পাশেই বসলো প্রায় গা ঘেষেই বলা চলে।সবাই মিলে গল্প করছি বিহান ভাই বার বার আমার দিকে তাকাচ্ছেন আর আমি ইচ্ছাকৃত ইগনোর করেই যাচ্ছি। আরিফ ভাইয়ার সাথে ইচ্ছা করেই হেসে হেসে কথা বলছি।আরিফ ভাইয়া ফোনে উনার বিভিন্ন পিকচার তুলেছেন সেগুলা দেখাচ্ছেন আর আমি দেখছি।

বিভোর ভাই এর মামা বললেন শাহিনা বিভোর কে তো বিয়ে দিতে হবে মেয়ে দেখবো না।বিভোর ভাই পাঞ্জাবীর কলার ঝাকি দিয়ে বললেন মামা এটাই তো আপনার বোন আর ভগ্নিপতি বুঝতে চাইছে না।দেখুন মামা সোজা কথা আমি কিন্তু আমার ফরজ দ্রুত আদায় করতে চাই।আপনাদের মতো বুড়ো হয়ে বিয়ে শাদী করতে পারবো না।আপনার আব্বা তো ছেলে বিয়েই দিতে চাইতো না।আমার বাবা জোর না করলে বিয়েই হতো না।আমি বুড়ো বয়সে বিয়ে করে বাবা ডাক শুনতে চাই না।বিভোর ভাই এর কথা শুনে সবাই হেসে গড়াগড়ি গেলো।বিভোর ভাই এর মামা বললেন ভাগ্নে চিন্তা করো না তোমাদের দুই ভাইয়ের বিয়ে আমি দিবো।মেয়ে আছে আমার হাতে।পাশের এলাকায় একটা মেয়ে আছে এবার ইন্টার পাশ করেছে বিভোর এর জন্য দেখেছি মেয়েটা।আমি বিভোর ভাই এর দিকে তাকিয়ে হেসে দিলাম।বিভোর ভাই বললেন,,মামা আমার বিয়ে আমার পছন্দে করবো মেয়ে আমি নিজেই দেখবো।বিভোর ভাই এর আম্মু বললেন তুই যে রিয়া কে বিয়ে করার প্লান করছিস তা কি আমি জানিনা।সেদিন তোর রুম ঝাড় দিতে গিয়ে দেখলাম ইয়া এক চিঠি লিখেছিস রিয়ার নামে।ভেবেছিস আমি কিছুই জানিনা।বিভোর ভাই ভ্রু কুচকে বললেন,কোন রিয়া আম্মু।বিভোর ভাই এর আম্মু বললেন,এখন কিছুই বুঝছিস না তাইতো।বিভোর ভাই হালকা কেশে নিয়ে বললেন,আম্মু রিয়া কিন্তু খারাপ না যায় বলো।

বিভোর ভাই এর মামা বিহান ভাই এর দিকে তাকিয়ে বললেন,বিহান বিয়ে শাদী করবা না।

বিহান ভাই ভদ্রতাসহিত উত্তর দিলেন এখনো ভাবি নি কিছু মামা।

বিভোর ভাই এর মামা বললেন,আমাদের আসমা কিন্তু এবার মেডিকেল এ চান্স পেয়েছে।দেখতে শুনতে মাসআল্লাহ মানাবে ভালো।

আসমা মেয়েটা মনে হয় মারাত্মক লজ্জা পেয়েছে।ওড়নার এক কোনা গালে দিয়ে চিবোচ্ছে।আমি আড়চোখে বিহান ভাই এর দিকে তাকালাম। বিহান ভাই এর কপালে গোটা কয়েক ভাজ পড়েছে ভীষণ বিরক্তিতে।এই বিয়ের ব্যাপার টা উনার ভাল লাগছে না আবার আরিফ আমার পাশে।আরিফ আমাকে বললো তোমার সাথে পারসোনাল কিছু কথা আছে দিয়া।আমি আরিফ এর সাথেই গেলাম।কিন্তু দু মিনিটের মাঝেই বিহান ভাই আর বিভোর ভাই উপস্হিত আরিফ তার মনের কথা শেষ করতে পারলো না।বিহান ভাই বললেন কি ব্যাপার আরিফ আমাদের খাতির করছো না যে।আরিফ ভাইয়া হেসে বললো না মানে কিছু স্পেশাল কথা ছিলো তাই।ভাইয়া আসুন আমরা পিকচার তুলি।আরিফ তার ক্যামেরা এনে আমাদের কিছু পিক তুললো।বিহান ভাই এর হাতে ক্যামেরা দিয়ে বললো আমাদের কিছু পিক তুলে দিন ভাইয়া।বিহান ভাই ক্যামেরা হাতে নিয়ে আমার দিকে আড়চোখে তাকালেন একবার মাত্র।গোটা কয়েক ফটো তোলার পর আরিফ ভাইয়া বললো দেখি কেমন পিকচার হয়েছে।আরিফ ভাইয়া তাকিয়ে দেখে শুধু আরিফ ভাইয়ার ই পিকচার আমার পিকচার একটাও নেই।আরিফ ভাইয়া বললো কি ব্যাপার বিহান ভাই দিয়ার পিক তো ওঠে নি।বিহান ভাই আমার দিকে তাকিয়ে বললো,ওই পেত্নির পাশে তোমাকে ভাল দেখা যাচ্ছে না আরিফ।তোমার মতো সুন্দর দেখতে ছেলেটার ছবি এইভাবে নষ্ট হোক চাই না।দিয়াকে সবার সাথে মানায় না। ওর মতো পেত্নি কে মানায় নিশ্চিত কোনো রাক্ষস এর সাথে তাইনা দিয়া।উনার কথা শুনে যা রাগ হলো কিন্তু কিছুই বললাম না।আরিফ ভাইয়া বললো কি বলেন ভাইয়া দিয়া তো অনেক সুন্দর দেখতে।বিহান ভাই বললেন আসলেই সুন্দর।

বিভোর ভাই এর মামা বাড়ি থেকে ফিরে দেখি মামা মামি কেউ বাসায় নেই।আমি আমার মতো একটা রুমে বসে রইলাম।
বিহান ভাই আমার কাছে এসে বললেন কি সমস্যা কথা বলছিস না কেনো?উনার দিকে তাকিয়ে দেখি রেগে আগুন হয়ে আছেন।কারণ আমি ক্যানো কথা বলছি না এটা উনি জানেন না।

চলবে,,

#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা
৪৯.
#WriterঃMousumi_Akter

আমার সাথে কথা না বলার কারণ কি দিয়া বেশ শান্ত কন্ঠে বলে দুই প্যান্টের পকেটে হাত গুজে ক্ষুদ্ধ নয়নে তাকিয়ে রইলেন বিহান ভাই।ইগনোর জিনিস টা উনি নিতে পারেন না।বিভোর ভাই এর মামাবাড়ি থেকে বেশী কিছু খান ও নি উনি।আমি উনার কথা শুনেও না শোনার ভান ধরে রইলাম।বিহান ভাই দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,আমার ধৈর্যর পরীক্ষা নিস না দিয়া তাহলে কিন্তু খারাপ কিছু হয়ে যাবে।উনার চোখ রক্তজবার মতো হয়ে আছে।আমি এখন ও চুপ আছি।বিহান ভাই আবার ও প্রশ্ন ছুড়লেন আরিফ কে পছন্দ হয়েছে?কপালে দুইটা ভাজ পড়ে গিয়েছে উনার।উনার কথায় প্রশ্নবোধক চিহ্ন। কি হলো আরিফ কে পছন্দ হয়েছে।প্রেম করতে চাস ওর সাথে।কাপল পিক তুলতে চাস,হাতে হাত ধরে ঘুরে বেড়াতে চাস কি হলো বল।রাগে উনি ঠোঁট কামড়ে ধরে রেখেছেন উনার চোখ ছুটে যাচ্ছে রাগে।কোনো উত্তর দিচ্ছিনা দেখে খাটের সামনে রাখা টি- টেবিলে জোরে লাথি মেরে দিলেন।টে-টিবের উপর রাখা পানির জগ আর কাঁচের গ্লাস ছুটে দূরে গিয়ে কাঁচের টুকরো ছড়িয়ে গেলো চারদিকে।জগের পানিতে রুমে ভেসে গেলো।এই মুহুর্তে কি নিয়ে অভিমান করেছিলাম সেটা ভুলে ভয়ে কাঁপছি।বুক দুরু দুরু করছে আমার ভয়ে।উনার চোখে চোখ রাখার সাহস পাচ্ছি না।উনি আবার ও ক্ষিপ্ত হয়ে প্রশ্ন করলেন,আরিফ নাম্বার চাইলে নাম্বার দিলি কি জন্য?হাউ চিপ ইউ দিয়া।এত সস্তা,এত সস্তা তুই।কেউ নাম্বার চাইলে নাম্বার দিয়ে দিবি,কেউ পিকচার তুলতে চাইলে তার সাথে পিকচার তুলবি নিজের কোনো দাম নেই তোর। তোকে নিয়ে কি ভাবলো আরিফ যে তোকে চাইলে ইজিলি পাওয়া যায়।ছেলেরা একটা মেয়ে হাই বলতে দশ মিনিট ভাবে যে মেয়েটার কেমন রিয়াকশন হবে আর তুই এমন একটা মেয়ে ছেলেরা হাই তো দূরে থাক দশ মিনিটের মাঝে তোর সাথে পিকচার তোলার প্রপোজাল দিতে পারে। তোকে আলাদা ডেকে নিতে পারে গল্প করার জন্য, আবার তোর নাম্বার চাইতে পারে।তুই একটা ছেলে ডাকলেই চলে গেলি ওর যদি অন্য ইনটেনশন থাকতো।

উনার কথার উত্তর না দিয়ে নিচে নেমে কাঁচের টুকরো গুলো তুলছি আমি।বিহান ভাই ওয়ালে নিজের হাত ঘুষি দিয়ে বললেন বাড়াবাড়ির লিমিট আছে দিয়া এখনো কোনো কথার উত্তর পাই নি আমি।এবার কিন্তু সব ভেঙে ফেলবো আমি।উনার দিকে খেয়াল দিতে গিয়ে কাঁচের টুকরো তে পা কেটে গেলো কুকিয়ে উঠলাম ব্যাথায়।বিহান ভাই এসে হাত শক্ত করে চেপে ধরে ওয়ালের সাথে নিয়ে চেপে ধরলেন।ওয়ালে পিঠ ঠেকে আছে আমার পায়ের ব্যাথায় যন্ত্রণা করছে, এইদিকে উনার তান্ডব চোখ খিচে বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছি আমি।আমার এক হাত ওয়ালের সাথে চেপে ধরে রেখেছেন উনি।আমার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে, আমার হেচকি উঠে গিয়েছে কাঁন্নায়।বিহান ভাই আমাকে কাঁদতে দেখে বললেন,আমি কি তোকে মেরেছি কথায় কথায় প্যান প্যান করে আমাকে দূর্বল করার মিথ্যা চেষ্টা অফ কর প্লিজ।তুই কি ভেবেছিস তোর চোখের পানি দেখলে আমি ইমোশনাল হয়ে যাবো।আমার মোটেও খারাপ লাগছে না বরং এই অহেতুক কাঁন্নায় আরো বেশী বিরক্ত হচ্ছি আমি।আই সে স্টপ ইওর ক্রায়িং।আমি এখন ও চুপ আছি।আমি বুঝতে পারছি আমার কথা না বলাতে উনি আরো রেগে যাচ্ছেন।আমি কথা বলছি না দেখে উনি আমার পা চেপে ধরলেন উনার পা দিয়ে,কাটা পায়ে আরো বেশী ব্যাথা পেলাম।এবার খুব জোরে কেঁদে দিয়ে বললাম প্লিজ ছাড়ুন আমায় আমি আর সহ্য করতে পারছি না। উনি আরো জোরে চেপে ধরে বললেন কি সমস্যা?আমার স্পর্শ ভালো লাগে না তাইনা।আমি স্পর্শ করলে খুব সমস্যা। আমার স্পর্শতে তোর শরীরে ঘিন ঘিন করে।আমি বাদে পৃথিবীর সবার স্পর্শ তে অন্য রকম ফিলিংস আসে তাইনা?আমার স্পর্শ তে কোনো ফিলিংস নেই এইজন্য আমার স্পর্শ ভালো লাগে না তাইনা?হোয়াট দ্যা হেল কি আছে অন্যদের মাঝে যার জন্য অন্যরা কয়েক সেকেন্ড এ তোর এত প্রিয় হয়ে ওঠে।হুয়াই ইউ ইগনোর মি।আই কান্ট টলরেট দিস।ব্যাথা সহ্য করতে না পেরে উনাকে গায়ের স্ব-জোরে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে বললাম,ছাড়ুন আমাকে।আমি বাড়ি যাবো এক্ষুণি বাড়ি যাবো।আপনার কাছে আর এক সেকেন্ড এ থাকবো না।আপনি একটা পাষাণ,আপনি রেগে গেলে আমি মরে গেলেও আপনার হুঁশ থাকে না।আমার জীবনের কোনো দাম নেই আপনার কাছে।আমার কষ্ট দেখেও আপনার রাগের কোনো পরিবর্তন আসে না।আপনার রাগ নিয়ে ই থাকুন আপনি।আমার রাগ,মান, অভিমান, কষ্ট কোনো কিছুর দাম নেই আপনার কাছে।আমি খুড়িয়ে হেঁটে রওনা দিলাম দু’পা বাড়াতেই বিহান ভাই আমার হাত টেনে ধরে বললেন,আমাকে অপরাধী করে কোথায় যাচ্ছিস তুই।আর এগুলা কে বুদ্ধি দিচ্ছে তোকে?যে ঝগড়া হলে রাগ দেখিয়ে চলে যাবি।তুই কি তাদের বউ যারা রাগ হলে বউ কে বলে চলে যা বা তাড়িয়ে দেয়।তুই বিহানের বউ,বিহানের লাইফ স্টাইল,লাইফ রুলস,সম্পূর্ণ আলাদা।বিহানের ডিকশনারিতে সেসব কিছুই নেই যা অন্যদের আছে।রাগ করবো,মারবো,বকবো,আমি আবার আদর করে কাছে টানবো এখানে চলে যাওয়া, ছেড়ে যাওয়ার কথা ভুলেও ভাববেন না মিসেস বিহান।
‘ছাড়ুন বলছি আমার হাত,আমি কোনো কথা বলতে চাই না।’

‘এই কথা টা আগে বললেই হতো তাহলে আমার রাগ এত তীব্র মাত্রায় বেড়ে যেতো না।ভালো করেই জানিস রাগলে আমার মাথা ঠিক থাকে না। জেনে বুঝে আমাকে রাগিয়ে দিয়ে নিজে কেঁদে আমাকে হার্ট করে শান্তি পাস তুই দিয়া।আমি তোকে বকলে তোর যতটা কষ্ট হয় আমার তার থেকে হাজার গুন বেশী কষ্ট হয়।তুই আমার সাথে কথা বলছিলি না আমার দম আটকে আসছিলো না।আমি হাজার বার চেষ্টা করলেও তুই কথা বলিস নি।ইউ নো হোয়াট দিয়া তুই শালিক পাখির মতো আমার কানের কাছে কিচির মিচির না করলে আমার ভালো লাগে না।তুই যে প্রচুর কথা বলিস, তেজস্রী হয়ে আমার সাথে তর্ক করিস এটা আমি উপভোগ করি ভীষণ ভাবে।তুই কথা বলার পর দেখ আমার রাগ কমে গেছে আই এম কুল নাউ।আমাকে কেউ কোনদিন শাস্তি দিতে পারে নি কিন্তু আজ তোর নিরবতা আমাকে যে শাস্তি দিয়েছে তা আমার জন্মের পরে পাই নি আমি।’

আমি ফুঁফিয়ে কেঁদে দিলাম।বিহান ভাই তাকিয়ে দেখেন ফ্লোরে পানির সাথে রক্ত মিশে লাল হয়ে গিয়েছে পানি।আমার পায়ের দিকে তাকিয়ে দেখেন রক্তের ছড়াছড়ি।বিহান ভাই কপালে হাত দিয়ে বললেন ওহ মাই গড।আমাকে দ্রুত কোলে তুলে নিয়ে বেডের উপর বসিয়ে দিলেন।আমি কেঁদেই যাচ্ছি।আমার পায়ের নিচে বসলেন উনি।পা ধরে দেখলেন পা খানিক টা কেটে গিয়েছে দেখে উনি অস্হির হয়ে পড়লেন।কিছুক্ষণ আগেই যে মানুষ টা ব্যাথা দিয়েছে তার চোখে মুখে আমার ব্যাথার জন্য অস্হিরতা।আশে পাশে তাকালেন কিছু না পেয়ে গায়ের৷ ওড়নার এক সাইড ছিড়ে নিয়ে পা বেঁধে দিলেন।উনার উপর রাগ নিমিষেই হাওয়া হয়ে যায় উনার ভীষণ কেয়ারিং এ।উনি সেই মানুষ যে ভালবাসলে সব টা দিয়েই বাসেন।উনার কথা শুনে চললে উনার মতো ভাল মানুষ দুনিয়ায় একটাও নেই।এখন কেমন যেনো বাচ্চাদের মতো করছেন।দ্রুত উনার রুমে গেলেন একটা মলম নিয়ে এলেন খানিক সময় পরে পায়ের বাঁধন খুলে মলম লাগিয়ে ওড়না থেকে আরেক টু ছিড়ে আবার বেঁধে দিলেন।ওর আগেও একবার একবার পা কেটে গিয়েছিলো আমার উনি এমন ই ব্যাকুল ছিলেন সেদিন ও।মাঝে মাঝে ভাবি ওই রাগি মানুষ টার সাথে আর কথায় বলবো না কিন্তু উনি এমন করেন রাগ কোথায় হাওয়া হয়ে যায়।আমার পায়ে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলছেন খুব লেগেছে তাইনা?এত বেখায়ালি কেনো তুই?আর এত কাজ কতে যাস কেনো?তুই বড় হবি কবে দিয়া।হাত কেটে ফেলিস,পা কেটে ফেলিস আর আশে পাশের মানুষ গুলোকে কষ্ট দিস। তুই দিন দিন এত জেদি হয়ে যাচ্ছিস ক্যানো দিয়া?কতটা জেদী হলে একটা দিন আমার ইগনোর করতে পারিস।এখন কি বলা যাবে এই অপরাধী কি অপরাধ করেছে।আমার পায়ে চুম্বন করে মাথা নিচু করে বললেন,আমাকে যা শাস্তি দেওয়ার দিন মহারাণী আমি মাথা পেতে নিচ্ছি।তবুও চুপ থাকার মতো ভয়ংকর শাস্তি দিবেন না।বলুন আপনার বাবার একমাত্র জামাই কি অপরাধ করেছে তার মেয়ের কাছে।উনার দেওয়া চুম্বনে শিউরে উঠলাম আমি।বিহান ভাই এইভাবে মাথানত করতে পারেন।উনি পায়ে চুম্বন এটা ভাবা যায়।আমি সিক্ত নয়নে তাকিয়ে রইলাম উনার দিকে।এই মানুষ টা দিন দিন এত চেঞ্জ হয়ে যাচ্ছে।উনি এইভাবে চুম্বন ও করতে পারেন।উনার দিকে তাকিয়ে বললাম এটা কি করছেন আপনি?আমাকে পাপী বানাচ্ছেন কেনো?আর আপনি আমার পায়ের কাছে কেনো বিহান ভাই।প্লিজ উঠুন আমার খারাপ লাগছে এইভাবে আপনাকে দেখতে।

‘তাহলে বল কি করেছি আমি?’

‘আমি ভেবেছি আপনি আমাকে ভালবাসেন না।আপনি যে বলেছিলেন,আমাকে দেখে আপনার ফিল আসে না।আমার খারাপ লেগেছিলো এই কথাটা।আমাকে দেখে কোনো ফিল আসে ক্যানো আপনার বিহান ভাই।আমি দেখতে সুন্দর না আপনার মতো কিন্তু এতই কি বিশ্রি যে ফিল আসে না।
বিহান ভাই সামনের চুল পেছনে দিতে দিতে বললেন,ওহ নো তুই তো পুরাই ড্যাশিং রে দিয়া।বুঝাই কেমনে,এই মেয়ে কি সত্যি অবুঝ।ওইটা তোকে রাগানোর জন্য বলেছি।ভেবেছিলাম বললে তুই ফিলিংস ক্রিয়েট করবি।তা না উলটা রেগে গেলি।ইউ নো তখন আমি ফুল ফিলিংসে ছিলাম।মধ্যরাতের সাওয়ার নেওয়া বউ কোনো পুরুষ এর পক্ষে সম্ভব নয় নিজের ভালবাসার ফিলিংস ধরে রাখা।তোকে তো সব সময় ভালবাসতে ইচ্ছা করে বলিনা কারণ তুই আসলেই পিচ্চি।কথাটা কাল রাতে বললেই হতো এতগুলা বকা খাওয়ার কি প্রয়োজন ছিলো।’

‘আপনি তো এমনিতেই বকেন,এ আর নতুন কি।আপনই রোমান্টিক কিছু বললে নতুন লাগে।’

‘সিরিয়াসলি আমাকে এতটাই আনরোমান্টিক লাগে।’

‘জ্বী এটা সবাই বলে।এমন কি বলে আমি কিভাবে আছি আপনার সাথে।এমন ভয়ানক রাগী মানুষের সাথে।’

‘এখন কি রাগি লাগছে আমাকে?’

‘এখন দেখে মনে হচ্ছে ছেলেটা কত্ত বউ সোহাগী।বউ কে বকতেই জানেনা।অথচ কিছুক্ষণ আগে বাবাহ রে বাবা।’

‘তখন খুব রেগে ছিলাম।ওইযে আরিফ ওর সাথে কেনো তোকে হেসে হেসে কথা বলতে হবে।তোর হাসি আমার নামে কেনা।এই হাসিতে অন্য কেউ ভুলবে কেনো?দিয়া আমি এটা কখনো সহ্য করতে পারবো না যে তুই অন্য ছেলের সংস্পর্শ তে।’

‘আমি ও ইচ্ছা করেই এমন করেছিলাম।যাতে আপনি রেগে যান আর বকেন আমায়।আপনি এত জেলাস বিহান ভাই ভাবা যায়।’

‘হুম এতটাই জেলাস।’

‘আমি তো আসমার প্রতি জেলাস হলাম না।’

‘আসমা আবার কে?’

‘মেয়েটা দেখতে কিউট কিন্তু।গোলাপি ড্রেসে ভালোই লাগছিলো।’

‘হুম কে সেই মেয়ে।’

‘বিভোর ভাই এর কাজিন।’

ওহ আচ্ছা গোলাপি ড্রেস পরা ছিলো বুঝি।আমি তো খেয়াল ই করি নি।আমি তো ওখানে শুধু তোকেই দেখছিলাম।বাই দ্যা ওয়ে তুই জেলাস হস নি।’

‘উহু মোটেও না।’

‘আমি কত টা লয়াল দেখ,আমি এমন কিছু করি নি যার জন্য তোর জেলাসি আসবে।
করলেও আসবে না।’

‘উমম ট্রাই করি তাহলে।’

‘হুম ট্রাই ক্যানো সত্যি করেন।’

হুম ট্রাই আজ সিওর করবো তবে অন্য কিছু।

চলবে,,