#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা(সিজন২)
৬১.
#writer_Mousumi_Akter
এডমিশনের দুইদিন পরে খুব ভোরে বেলকনিতে প্যান্টের পকেটে হাত গুজে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে বিহান।ভোর সকালের ঝিরিঝিরি বাতাস,শান্ত পরিবেশ,পাখির কলরব, প্রকৃতির সাথে মিশে বিশেষ কিছু একটা উপলব্ধি করছে বিহান।আমি বিছানা ছেড়ে আরো আগেই উঠেছি।ঘুম হয় নি সারারাত। নড়াইল ফিরে আসতে হবে বলে সারারাত জেগে ছিলাম বিহানের সাথে।ঘুম নামক বস্তু উধাও ছিলো গত রাতে দুজনের চোখ থেকে। বিহান কে পেছন থেকে গিয়ে জড়িয়ে ধরে বললাম,এখানে এভাবে দাঁড়িয়ে কি ভাবছেন।আমার উপস্হিতি অনুভব করে বিহান আমার হাত ওর হাতের মুঠোয় নিয়ে মাথা নিচু করে আমার হাতের তালুতে চুমু দিয়ে বললো তোমাকে ভাবছিলাম।আমি ওর পিঠে নাক মুখ গুজে বললাম,এত সকালে খালি গায়ে কেনো ঠান্ডা লাগছে না।বিহান সামনে তাকিয়েই বললো নাতো এই ঠান্ডা বাতাস বেশ ভালো লাগছে।
–বিহান আমাকে সামনে নিয়ে বললো,দিয়া একটা কথা বলবো।
বিহানের চোখ মুখে মলিনতা, মন খারাপের রেখা স্পষ্ট ফুটে উঠেছে।এই ছেলেটার মন খারাপ দেখলে পুরা দুনিয়া অন্ধকার লাগে আমার।বেলকনিতে একটা তক্তা রাখা আছে যার দুই পাশে দুইটা ক্যাকটাস গাছ।তক্তার উপর উঠে বসে বিহানের গলা জড়িয়ে ধরে বললাম,
“কি কথা ডাক্তার বাবু।”
“থেকে যাও না দিয়া।তুমি চলে গেলে আমার সব এলোমেলো হয়ে যাবে।”
“এইভাবে মন খারাপ করছেন কেনো হুম।আবার তো আসবোই কিছুদিন পরে।এবার তো থাকার প্রিপারেশণ নিয়ে আসিনি।”
“আমার কাছে থাকবে প্রিপারেশন লাগবে কেনো?”
“না না এবার থাকা যাবে না।”
“প্লিজ দিয়া।তোমাকে বিদায় দিয়ে আমি থাকতে পারবো না।বিদায়ের যন্ত্রণা ভীষণ কষ্টের।”
“তাহলে বুঝেন আমি কিভাবে অপেক্ষা করতাম আপনার নড়াইল ফেরার জন্য।আপনি যেদিন ঢাকা চলে আসতেন আমি ভীষণ কাঁদতাম।”
“তুমি সারাজীবন যতটুকু কেঁদেছো আমার বোধহয় একবারেই তার থেকে ডাবল কাঁন্না হবে।প্রতিশোধ নিও না দিয়া।”
“না না প্রতিশোধ না।আমার শ্বশুর শ্বাশুড়ির অনুমতি নিয়েই আসবো।।এসে তখন থাকবো।”
“আম্মু কিছুই বলবে না তুমি থাকলে।”
“না বলুক তবুও।নো বাচ্চামো ডাক্তার।চোখ অফ করেন।”
“কেনো?”
“সারপ্রাইজ।”
“কি সারপ্রাইজ।”
“সারপ্রাইজ কে সারপ্রাইজ থাকতে দিন না।”
উনি আস্তে করে চোখের পাতা বন্ধ করলেন।চোখ বন্ধ করে খালি গায়ে আমার সামনে পৃথিবীতে সব থেকে হ্যান্ডসাম ছেলেটা দাঁড়িয়ে আছে।যদিও আমি একটু লজ্জা পাচ্ছি তবুও উনার মন ভালো করতে এটুকু না করলেই নয়।আমি উনার দুই চোখের পাতায় ঠোঁট ছুইয়ে দিলাম, উনার মাথার পেছনে এক হাত আরেক হাত উনার কাধে দিয়ে চোখ অফ করে ওষ্টে ওষ্ট মিলিয়ে উনাকে অবাক করে দিলাম।এভাবে কেটে গেলে কয়েক মিনিট।উনার কানে কানে বললাম,আই লাভ ইউ বিহান বাবু।বলেই ওখান থেকে পালিয়ে এলাম।উনি সাথে সাথে চোখের পাতা খুললেন।মনে হলো কারেন্ট এর মতো শর্ট খেয়েছেন।
উনি আমার দিকে তাকিয়ে চুলের মধ্য হাত চালাতে চালাতে ডাক দিলেন,
“উফফ দিয়া কিল মি। ”
আমি পেছনে ফিরে হেসে আবার দৌড় দিলাম।
–কিছুক্ষণ পরে আবার রেডি হয়ে নিলাম নড়াইল ফিরে আসার জন্য।ভাইয়ার একটা ইন্টারভিউ আছে খুলনাতে তা না হলে আরো কিছুদিন থেকে আসতাম।গাড়িতে রিয়া আমি আর ভাইয়া উঠেছি।বিহান আমাকে বমির ওষুধ খাইয়ে দিলো।খাবারের বক্স, পানিট পট সব দিয়ে দিলো।ড্রাইভার কে বার বার সতর্ক করলো ট্রাফিক সিগনাল ফলো করে খুব সাবধানে গাড়ি চালাবে।ধীরে চালাবে ট্রাক দেখলে স্লো করবে।দেরি হলেও আস্তে ধীরে যাবে।ড্রাইভার কে হাজার বারা সাবধানে চালাতে বললো।মানুষ টার কত চিন্তা আমায় নিয়ে।গাড়ি ছেড়ে দিলে বিহান এক আকাশ মন খারাপ নিয়ে তাকিয়ে রইলো গাড়ির দিকে।গাড়ির কাচে বিহানের মলিন মুখ দেখা যাচ্ছে।মুখ ভার করে দাঁড়িয়ে রয়েছে।সারারাস্তা বিহানের মলিন মুখ টা মনে পড়েছে আমার।নড়াইলে এসে আম্মুদের বাসায় এলাম রিয়ার সাথে।সন্ধ্যায় মন খারাপ করে বসে থাকতে দেখে আম্মু এসে বললো,কি হয়েছে দিয়া।আম্মুর মুখে কি হয়েছে শুনে চোখের পানি ছেড়ে দিলাম।মায়ের মন তো বুঝতে বাকি রইলো না বিহানের জন্য মন খারাপ আমার।আম্মু বলেই ফেললো বিহানের জন্য কি মন খারাপ তোমার দিয়া।আমার মৌনতা আম্মুকে বুঝিয়ে দিলো তার মেয়ে ভয়ানক ভাবে ভালবাসায় জড়িয়ে গিয়েছে।আম্মুর মুখে তৃপ্তির হাসি।আম্মুর ধারণা ছিলো জীবনে কখনো বিহানের সাথে আমার ভালবাসা তৈরি হবে না।
–দুই দিন পর।সময় টা ছিলো জীবনের সব থেকে দুঃচিন্তা, উত্তেজনা,আর টান টান ময় সময়।কেননা আজ রেজাল্ট দিবে এডমিশনের।সাত দিন পরেই রেজাল্ট দিবে।টেনশনে পাগল প্রায় আমি।কি করবো বুঝে উঠতেই পারছিলাম না।রিয়া এসে বললো,যদি চান্স পায় মসজিদে কিছু টাকা দিয়ে দিবো।আমি এই ভীষণ দুঃচিন্তার মাঝে বললাম মানত করেছিস।রিয়া বললো,সেতো আমি সব পরীক্ষার সময় করি।রিয়া আমাকে বললো,আজ যতবার আল্লাহ কে ডাকলাম রেগুলার যদি ডাকতাম আল্লাহ নিশ্চয়ই সব ভালো করতেন।আমরা বিপদে পড়লে আল্লাহ ডাকি ঘন ঘন।এর ই মাঝে মেহু আপু বললো,আজ তো দুজনেই নামাজ পড়েছিস অন্য সময় তো খোজ থাকে না।আমি আপুকে বললাম,মোটেও না আমি রেগুলার নামাজ আদায় করি।তোমাদের মতো না আমি।রিয়া আর আপু আড্ডা দিচ্ছে আমি বাইরে গিয়ে দাঁড়ালাম।চিন্তায় পাগল প্রায় আমি ঠিক তখন ই রিয়া চিৎকার দিয়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো,দিয়া আমরা দুজনেই চান্স পেয়েছি ইয়াহু।রিয়ার কথা যেনো আমার বিশ্বাস ই হচ্ছিলো না।রিয়াকে বললাম তোকে কে বললো।রিয়া বললো,বিহান ভাই সবার আগে কাকিমনিকে ফোন করে জানিয়েছে।এরই মাঝে ভিডিও কল এলো ফোনে।ফোন টা রিসিভ করতেই দেখি বিহানের মুখে স্নিগ্ধ হাসির সমাহার।এত খুশি বিহান কে আমি কখনোই দেখি নি।বিহান আমায় বললো,কনগ্রাচুলেশন শ্যামাপাখি। আমি আনন্দে ঠিক কি বলবো বুঝতে পারছিলাম না।আনন্দে যেনো বাকশক্তি হারালাম।বাড়িতে সবাই ভীষণ খুশি।আমাদের বাড়ির দুটো মেয়ে চান্স পেয়েছে।এর থেকে আনন্দের বোধ হয় আর অন্য কিছু নেই।ভীষণ খুশির বন্যা বয়ে গেলে সবার মনে।
আবার ও পাড়ি জমালাম ঢাকায় রিয়া আর আমি।রিয়া একটা গার্লস মেসে উঠলো।বিহানের বাসায় রিয়াকে রাখতে একটু আপত্তি জানালো রিয়ার বাবা কেননা বিভোর ভাই আছেন।বলা তো যায় না পাশাপাশি অবিবাহিত দুটো ছেলে মেয়ে থাকলে বাই এনি চান্স কোনো অঘটন ঘটতে পারে।এসব ভেবেই রিয়াকে মেসে রাখা হলো।তবে রেগুলার রিয়ার সাথে দেখা হয়, রিয়া বাসায় আসে।সব কিছু ভালোই চলছিলো।ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলো সময়।কেটে গেলো আরো আটমাস। লেখাপড়ায় ভীষণ মনোযোগ দিয়াছিলাম রিয়া আর আমি।এরই মাঝে রিয়ার জীবনে এলো ভীষণ তুফান।রিয়া যেটা ভাবতেও পারেনি।আমাদের কলেজ ১৫ দিনের বন্ধ দিলো।আমি রিয়া এক সাথেই বাড়িতে এলাম।মেডিকেল এ চান্স পাওয়া অসম্ভব সুন্দরী একটা মেয়েকে যে কোনো ছেলেই পছন্দ করবে।ইউএস এ ফ্যামিলি সহ সেটেল একটা ছেলে বিয়ের প্রস্তাব দেই রিয়ার জন্য।যেহেতু ইউএস এ সেটেল টাকার অভাব নেই বোঝায় যাচ্ছে।ইউএস এ নিজস্ব বাড়ি গাড়ি সব ই আছে।রিয়ার বাবা মানে কাকুমনি ছেলে আর পরিবার দেখেই রাজি হয়ে যায়।হুট করে কাকুমনি এমন একটা সিদ্ধান্ত নিবে আমরা কেউ বুঝতেই পারিনি।রিয়াকে না জানিয়ে বিয়ের দিন তারিখ সব ঠিক করে ফেললো।বাড়িতে যেদিন এসছি তার পরেরদিন ই ছেলেপক্ষ দেখতে এলো।হুট করেই সব ঠিক ঠাক হলো।রিয়া আমাকে বারবার রিকুয়েষ্ট করছে কাকুকে বোঝাতে।
“আমি বললাম,কাকু রিয়ার ডাক্তারি পড়ার কি হবে?”
“পড়ালেখা চলবে।সিয়াম বিয়ে করে রেখে চলে যাবে।রিয়ার মেডিকেল শেষ হলে আসবে।রিয়ার ও ভিষা করে নিয়ে যাবে।রিয়া ইউএস এ জব করবে।”
ছেলেটার নাম তাহলে সিয়াম।
“কাকু যতটা সহজ ভাবছেন অতটা সহজ কিন্তু নাও হতে পারে।বিয়ের পর লেখাপড়া কিন্তু বেশ ঝামেলার।”
“দিয়া তুমি কি লেখাপড়া করছো না।দিয়া মা ছেলেটা খুব ভদ্র,টাকার অভাব নেই।রিয়ার সব শখ, আহলাদ মেটাতে পারবে।সামনে শুক্রবারে বিয়ে।রিয়ার জীবন ও সেটেল হয়ে যাবে।ছেলেটা ইঞ্জিনিয়ার, ইউ এস এ জব করে. আর দুইদিন পরে বিয়ে।”
কাকুর হাব ভাবে যা বুঝলাম বলেও লাভ নেই।
মাত্র দুইদিন পরে কিভাবে কি হবে।বিভোর ভাই মাত্র দুইদিনে কিভাবে কি ম্যানেজ করবেন।এইদিকে সমস্ত আত্মীয় স্বজন দাওয়াত দেওয়া হয়ে গিয়েছে।অল রেডি রিয়ার মামা মামিরা এসে পড়েছে।কমিনিউটি সেন্টার ভাড়া করা হয়ে গিয়েছে।চারদিকে ছড়িয়ে গিয়েছে রিয়ার বিয়ের খবর।বিভোর ভাই এর কানে ও পৌছে গিয়েছে খবর।
চলবে,,,,
#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা (সিজন ২)
৬২.
#WriterঃMousumi_Akter
–ভীষণ দুঃচিন্তা আর মন খারাপ নিয়ে নিচের ঠোঁট উপরের ঠোঁট দিয়ে চেপে ধরে বারান্দার খুটি ধরে আমার জন্য অপেক্ষা করছে রিয়া।টেনশনে ঘন ঘন নিঃশ্বাস নিচ্ছে রিয়া,দুঃচিন্তায় হাঁপানি হচ্ছে।চোখে মুখে দুঃচিন্তার ছাপ স্পষ্ট ভেষে আছে।অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় আছে রিয়া আমি কাকুকে কোনভাবে কনভাইস করতে পেরেছি কিনা সেটা জানার জন্য।ওড়ণার এক কোণা কচলাতে কচলাতে নিচে দিকে মাথা দিয়ে ভীষণ চিন্তা নিয়ে হেঁটে আসছি আমি।কোনোদিকে হুঁশ নেই আমার। এই মুহুর্তে আমার মাথায় একটায় চিন্তা যে কোনো ভাবে রিয়া আর বিভোর ভাই এর বিয়ে দিতেই হবে।ওরা দুজন এক দেহে যেনো দুটো প্রাণ।একজন ছাড়া আরেকজন কিছুতেই বাঁচবে না।পুরা বাড়ি যেখানে লাইটিং করতে ব্যাস্ত সেখানে রিয়া আর আমি এক আকাশ দুঃচিন্তায় ভুগছি।বেখেয়ালে হাটার সময় ওয়ালে ভীষণ জোরে ধাক্কা খেতেই ফুপ্পি বললো,
‘দিয়া সাবধানে মা।একটু হলেই তো মাথা ফেটে যেতো।এইভাবে আনমনা হয়ে কোথায় যাচ্ছিস।’
ফুপ্পিকে দেখেই মনে পড়লো মেহু আপুর কথা।মেহু আপু হয়তো কোনো আইডিয়া বের করতে পারবে।আমি ফুপ্পি কে বললাম,
‘মেহু আপু কোথায় ফুপ্পি।’
‘এসছে তো এসেই রিয়া আর তোকে খুজছে।’
মেহু আপু আর তোহা আপু ওঠানের এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে।তোহা আপু আর মেহু আপু দুজনেই জানে রিয়া আর বিভোর ভাই এর রিলেশন এর কথা।এইদিকে রিয়া আমাকে দেখেই আমার হাত খুব শক্তভাবে চেপে ধরে বললো,
‘এই দিয়া বাবাকে বলেছিস কিছু।কিছু বললো বাবা।কি বললো?বিয়ে ক্যান্সেল করবে তো!’
রিয়া খুব হাইপার হয়ে আছে।এই মুহুর্তে ওর মাথায় একটায় চিন্তা কিভাবে বিয়েটা আটকানো যায়।কেউ যেনো ওর কানে এই নিউজ টা দেয় যে বিয়ে টা হচ্ছে না। এটা হয়তো পৃথিবীর সব থেকে খুশির খবর হবে।
রিয়ার মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না।আমি বুঝতে পারছি রিয়ার চিন্তার কারণ। একটা মেয়ের জীবনের সব থেকে খারাপ সময় এটা।আমিও বিভিন্ন ভাবে ভেবে যাচ্ছি কি করা যায়।বিভোর ভাই আমাকে কল মেসেজ করেই যাচ্ছেন।এদিকের খবর জানতে।সময় হাতে খুব ই খুব।বিভোর ভাই পাগলের মতো করছেন।ওইদিকে বিহানের ইমারজেন্সি ওটি আছে তাই নিয়েই বিজি আছে।আমি গম্ভীর হয়ে দাঁড়িয়ে আছি।
আমাকে চুপ দেখে রিয়া বললো,
‘দিয়া চুপ আছিস কেনো?উত্তর দে।টেনশনে পাগল হয়ে যাচ্ছি আমি।’
নিরুপায় হয়ে বললাম,
‘রিয়া কাকুমণি ভীষণ সিরিয়াস।সে কোনভাবেই এই বিয়েটা ভাঙবে না।এমন কি সে বিয়ে ভাঙার কথা বলার পাত্তাই দিচ্ছে না।বিয়ে কি ভাঙার কোনো সিসুয়েশন আছে এখন।দেখ বাড়ি ভরে যাচ্ছে আত্মীয় স্বজনে।পাড়ার সব মানুষকে দাওয়াত দেওয়া হয়ে গিয়েছে।কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া করা হয়ে গিয়েছে।বিয়েতে খাবারের সব আইটেমের টাকা দেওয়া হয়ে গিয়েছে।তাছাড়া এই বিয়েটা নাকি কাকু অনেকদিন আগেই ঠিক করে রেখেছিলো মনে মনে।এই ভরা বিয়ের মজলিস এ কিভাবে বলার সাহস পায় যে বিয়ে এখন ভেঙে দিন।আমি কাকুর ভাব বুঝতে গেছিলাম।হালকা টাচ দিয়ে দেখলাম লাভ নেই।’
রিয়া ভীষণ উত্তেজিত কন্ঠে বললো,
‘দিয়া আমি কিন্তু বিভোর ছাড়া পৃথিবীর কাউকে বিয়ে করবো না।আমার পক্ষে সম্ভব নয়।কোনভাবেই নয়।এটা কি মজা পেয়েছে বলা নেই কওয়া নেই আমার বিয়ে। আমার মতামতের কোনো প্রয়োজন নেই।’
রিয়া আমার চোখের সামনে হাউমাউ করে কেঁদে দিলো আমাকে জড়িয়ে ধরে।কেঁদে কেঁদে বললো,
‘প্লিজ দিয়া কিছু একটা কর।আই লাভ বিভোর।বিভোর কে আমি ভীষণ ভালবাসি।আমি বাঁচবো না বিভোর ছাড়া।প্লিজ দিয়া কিছু একটা কর।বিহান ভাই কে বল কিছু করতে।’
রিয়ার কাঁন্না দেখে আমিও কাঁদো কাঁদো হয়ে বললাম,
‘দেখ এইভাবে কাঁদবি না ফাজিল।তুই কাঁদলে আমি সহ্য করতে পারিনা।কিছু একটা হবেই দেখিস।আমরা আছিতো।’
এরই মাঝে মেহু আপু আর তোহা আপু হাঁপিয়ে এসে পড়ে বললো,
‘এই রিয়া কাঁদিস নাতো।তোর চিন্তায় পাগল হয়ে যাচ্ছি আমরা।মামা এটা হুট করে কি সিদ্ধান্ত নিলো বলতো।আমি আম্মুকে বললাম,তোমার ভাইকে বুঝাও এইভাবে হুট করে রিয়াকে না জানিয়ে বিয়ে ঠিক করা ঠিক হয়নি।আম্মু আমাকে বললো কেনো রিয়ার কি কারো সাথে রিলেশন আছে নাকি।আম্মুকে বললাম,থাকতেই পারে না জানিয়ে বিয়ে ঠিক করলে হিতে বিপরিত হতে পারে।আম্মু নাকি মামাকে বলেছিলো।মামা সাফ সাফ বলে দিয়েছে আমার মেয়ের বিয়ে আমি ঠিক করবো এতে জানানোর কি আছে।মেয়ে আমি কষ্ট করে মানুষ করেছি না।আম্মুকে নাকি কোনো পাত্তা ই দেয় নি মামা।’
‘তোহা আপু বললো,এটা আমরা কোনভাবেই মানবো না যে রিয়ার বিয়ে ওই সিয়ামের বাচ্চার সাথে হবে।রিয়ার বিয়ে বিভোর ভাই এর সাথেই হবে।’
‘আমি বললাম,কিন্তু কিভাবে তোহা আপু?কিভাবে এই বিয়ে আটকানো যায়।কোনো ওয়েই পাচ্ছি নাতো।’
‘মেহু আপু বললো,শোন সাফ সাফ জানিয়ে দিতে হবে রিয়ার রিলেশন বিভোর ভাই এর সাথে।রিয়া এ বিয়েতে রাজি নাহ।’
‘রিয়া বললো,বাবা কিছুতেই মানবে না মেহু আপু।আমি কিন্তু সুই সাইড করবো। ‘
তোহা আপু হাইপার হয়ে বললো,
‘এই তুই চুপ থাক রিয়া।মরবি কেনো?কাকু না মানলে সিয়াম কে জানিয়ে দিবি তোর রিলেশন আছে।সিয়াম যদি তাও নির্লজ্জের মতো বিয়ে করতে রাজি হয় প্রয়োজনে পালিয়ে যাবি সোজা কথা।তবুও মরতে হবে না তোর।’
‘আমি বললাম,আরে আগেই কিসের পালাপালি।বাড়ি থেকে কি করে আগে দেখা যাক।পালালে মান সম্মান থাকবে না আমাদের ফ্যামিলির।পালানো টালনো যাবে না।’
‘মেহু আপু বললো,সিয়ামের নাম্বার আছে রিয়া।’
‘আছে ফোন দিয়েছে আমি একবার ও রিসিভ করিনি।’
এরই মাঝে বিভোর ভাই এর ফোন।রিয়া ফোনের দিকে তাকিয়ে কাঁদছে।রিয়াকে বললাম ফোন রিসিভ কর রিয়া।
রিয়া ফোন রিসিভ করেই কেঁদে দিলো।
‘বিভোর ভাই বিষন্ন কন্ঠে বললেন,কাঁদছো কেনো রিয়া?’
‘বাবা আমার বিয়ে ঠিক করেছে বিভোর।হুট করেই দুইদিনের মাঝে বিয়ে আমি এখন কি করবো বিভোর।’
‘আম্মুর কাছে শুনেছি আমি।চিন্তা করোনা রিয়া আমি আছি তো।যা করার আমি করবো।তুমি প্লিজ কেঁদো না।আমি আম্মু,আব্বু আর দুলাভাই কে পাঠাচ্ছি এক্ষুণি।প্রয়োজনে তোমার বাবার কাছে ভিক্ষা চাইবো তোমাকে।তোমাকে চেয়ে নিবো আমি।’
‘বাবা যদি রাজি না হন।’
‘আমার বাবার কথা তোমার বাবা ফেলতে পারবে না রিয়া।আগেই এসব ভেবো না প্লিজ।চিন্তায় পাগল হয়ে যাচ্ছি আমি।আর রাজি না হলে তুমি পালিয়ে চলে এসো রিয়া এক কাপড়ে।’
‘আমি পালিয়ে গেলে বাবার কি হবে। আমি কিছুই ভাবতে পারছি না বিভোর।’
‘বিহান ডিউটি থেকে আসলে দেখি কি করা যায়।’
——————————————————
‘বড় মামি মামাকে বললো,তোমার সাথে কথা আছে আমার।অনেক গুরুত্বপূর্ণ কথা। ‘
‘মামা বিয়ে বাড়ির সব দায়িত্ব সামলাচ্ছে।ভীষণ বিজি ও আছে মামা।মামা ব্যাস্ত হয়ে বললো,কি কথা বলো।’
‘রিয়াকে তোমার ছেলে পছন্দ করে।তোমার ছেলে একটা অঘটন ঘটানোর আগে রিয়ার বাবাকে গিয়ে বলো মেয়েটা আমাদের দিতে।’
‘তোমার কি মাথা খারাপ।ছেলে পছন্দ করে আর এখন বলছো।যে মেয়ের রাত পোহালে গায়ে হলুদ তার বাবাকে বলবো এখন মেয়েটা আমাদের দিতে।আমি নিজ হাতে দুনিয়ার টাকা দিয়েছি বিয়ের খরচের।অলরেডি পাঁচ লাখ টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে।ছেলের বাড়িতে গায়ে হলুদের সমস্ত জিনিস পাঠানো হয়ে গিয়েছে।রিয়ার বাবা আমাদের উপর সমস্ত দায়িত্ব দিয়েছে বিয়ের।এখন রিয়ার বাবা বিয়ে ভাঙলে ছেলে পক্ষ কি ছেড়ে কথা বলবে।মানুষের একটা মান সম্মান আছে বুঝেছো।আমি এটা পারবোই না এমন কি তুমিও কাউকে এসব বলতে যেওনা।বিবেক বলেও তো একটা কথা আছে।এখন কিভাবে বলি এমন কথা আমি।আমার বোন বিয়ে দেওয়া ও বাড়িতে।সবাই আমার বোন কে খোটা দিবে তোমার ভাতিজার জন্য আমাদের মান সম্মান সব নষ্ট হলো।ঝামেলা চারদিক থেকে হবে।বিভোরের জন্য অন্য কোথাও মেয়ে দেখবো।এসব বাদ দাও।’
‘কিন্তু তোমার ছেলে।’
‘কিছুই হবে না।দুদিন পরে ভুলে যবে।’
‘শোনো পরে উল্টাপাল্টা হলে কিন্তু ছেলেকে দোষ দিও না।’
মামা তেজ দেখিয়ে বেরিয়ে গেলেন।
মামি বিভোর ভাইকে ফোন দিয়ে জানিয়ে দিলো মামা রিয়ার বাবাকে বলতে পারবে না এখন।বিভোর ভাই রেগে কয়েক টা বকাঝকা ও দিলেন।এরই মাঝে রিয়ার আম্মু এসে রিয়াসহ আমাদের রুমে ডেকে নিয়ে বললো তোরা দেখ গায়ে হলুদের জিনিস পাঠিয়ে দিয়েছে।
‘কাকিমনি রিয়াকে বললো,রিয়া দেখো তো ছেলেরা গায়ে হলুদের জিনিস পাঠিয়েছে।পছন্দ হয় কিনা?’
‘তুমি দেখো আম্মু।আমার ইচ্ছা নেই দেখার।’
রিয়ার নজর ফোনের দিকে।বিভোর ভাই এর সাথে চ্যাটিং করেই যাচ্ছে।
‘তুমি না দেখলে হবে। দেখো কত সুন্দর শাড়ি পাঠিয়েছে।’
‘রিয়া ফুলদানি ফ্লোরে ছুড়ে মেরে শাড়ি চুড়ি সব ফেলে দিলো।আর বললো,আমার ভাল লাগছে না আম্মু।একদম ই বিরক্ত করোনা আমায় প্লিজ।’
‘কি ব্যাপার রিয়া এমন খিটমিট করছো,জিনিস পত্র ছোড়াছুড়ি করছো কেনো?’
‘তাহলে কি করবো আম্মু।আমাকে কি নাচতে বলছো।’
‘মায়ের সাথে এ কেমন ব্যাবহার। ‘
‘সরি আম্মু।বাট মেয়ের সাথে তোমাদের ব্যাবহার টা কি ঠিক হলো।আমার বিয়ে অথচ আমার কাছে শোনার প্রয়োজন মনে করলে না।আমার তো একটা পছন্দ আছে।’
‘তোমার বাবা কি আমার কথা শোনে রিয়া।আমি তো বলেছিলাম।কিন্তু সে শুনলো না।’
‘আমি এই বিয়ে কিছুতেই করবো না আম্মু।প্লিজ বাবাকে বুঝিয়ে বলো।আমি এই বিয়ে মরে গেলেও পারবো না করতে।’
‘কিন্তু কেনো?’
‘আমি বিভোর কে ভালবাসি আম্মু।’
‘তোমার কি সিরিয়াস রিলেশন। আমি তো জানতাম মজা করো।’
‘প্লিজ আম্মু তুমি বাবাকে বুঝিয়ে বলো।তোমার হাতে পায়ে ধরছি।’
আমরাও কাকিমনিকে বুঝিয়ে বললাম কাকুকে বোঝানোর জন্য।রিয়ার চেচামেচি কাকু দেখেছে।কাকিমনি বাইরে যেতেই কাকু বললো,
‘তোমার মেয়ে চেচামেচি করছে কেনো?’
‘মা হলে দুনিয়ার সব জ্বালা মায়ের ই হয়। মেয়ে বড় হয়েছে তার কাছে শুনবে না।তোমার মেয়ে এই বিয়ে করবে না।আমাকে ডিরেক্ট জানিয়ে দিয়েছে।’
‘মেয়েরা অমন বলে।পরে ঠিক হয়ে যাবে।’
‘তোমার মেয়ে সত্যি এ বিয়ে করতে রাজি হচ্ছে না।দেখো মেয়ের সাথে জোর করোনা।মেয়ে যাতে ভাল থাকে তাই করো।’
‘কি করতে বলছো’
‘রিয়ার বিভোরের সাথে সম্পর্ক।তুমি সিয়াম দের কিছু একটা বলে বিয়ে ভেঙে দাও।রিয়ার বিয়ে বিভোরের সাথে দিয়ে দাও তুমি।মেয়ে যাতে ভালো থাকে তাই করো।’
‘বিভোর মানে বিহানের ভাই।কি করে বিভোর।সামান্য ব্যাংকে চাকরি করে।সিয়ামের এক মাসের বেতন বিভোরের এক বছরের বেতন ও না।এসব ভুলে যেতে বলো তোমার মেয়েকে।তাছাড়া এখন বিয়ে ঠিক আমার মুখে চুন কালি দিতে চাও নাকি।’
‘ব্যাংকে চাকরি কে ছোট মনে করছো কেনো তুমি।বিভোর ছেলে হিসাবে খারাপ না।’
‘সব কিছুই ভালো কিন্ত রিয়ার বিয়ে ঠিক হয়েছে।সব কিছু ঠিকঠাক। এখন নাটকীয় কথা বলছো।’
কাকু কাকিমনিকে ধমক দিয়ে বেরিয়ে গেলেন।কাকু আম্মুকে ডেকে বললো,ভাবি রিয়ার তো বিয়ে ঠিক পরশু বিয়ে।তোমার ভাতিজা কে ফোন করে বলে দাও যেনো কোনো বিঘ্ন সৃষ্টি না করে।আম্মু নিরুপায় কি করবে বুঝতে পারছে না।এইদিকে ভাইয়া ও চিন্তা করছে।ভাইয়া কাকু কে বললো,কাকু বিভোর কিন্তু ছেলে খারাপ না।
কাকু সাফ সাফ বলে দিলো,বিহানের মতো ডাক্তার হলে মেনে নিতাম।বিভোর কি রিয়ার যোগ্য।আমার মেয়ে দেখতে যেমন সুন্দর তেমন তার যোগ্যতা।দুইদিন পরে বড় ডাক্তার হবে।আমার মেয়ের সাথে কোনো ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার ই মানায়।বিভোর এর গায়ের রং এ একটু সাদা। তোমরা কিভাবে রিয়ার জন্য বিভোরের প্রপোজ দিচ্ছো।আমি আমার মেয়ের জন্য যোগ্য ছেলে ই দেখেছি।বিভোর কে বুঝিয়ে বলো যেনো কোনো ঝামেলা না করে। বিয়ে হলে দুদিন পরে সব এমনিতেই ভুলে যাবে।কাকুর কথার ভাব ভাল না দেখে আম্মু আর ভাইয়া চুপ করে গেলো।যেখানে কথা বলে লাভ নেই সেখানে কথা না বলাটায় উত্তম।কোনো পথ ই খোলা নেই আর।
রিয়া এক আকাশ কষ্ট নিয়ে বিভোর ভাইকে মেসেজ করলো,
“হয়তো তুমি আমার ভাগ্য ছিলে না।আমাদের পথ চলা এ পর্যন্তই ছিলো।
ক্ষমা করো আমায়।”
পরের দিন রিয়ার গায়ে হলুদ ও হয়ে গেলো।সমস্ত বাড়ি আত্মীয় স্বজনে ভরে গিয়েছে।রিয়ার চোখে জুড়ে কষ্টের পানি ঝরে পড়ছে।সিয়াম কে পর্যন্ত জানানো হয়েছে রিয়ার রিলেশন আছে।বাট সিয়ামের এতে কিছুই যায় আসে না।আজকাল নাকি মেয়েদের রিলেশন থেকেই থাকে।
চলবে?…….
#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা (সিজন ২)
৬৩.
#WriterঃMousumi_Akter
রিয়ার বিয়ে আটকাতে সমস্ত চেষ্টা যেখানে ব্যার্থ সেখানে রিয়ার কাঁন্না ছাড়া আর কোনো উপায় ছিলোনা।সমস্ত কাজিনদল বাধ্য হয়ে একত্রে চাইছিলাম রিয়া পালিয়ে যাক।রিয়ার পালিয়ে যাওয়া টায় উত্তম বলে মনে হচ্ছে আমাদের কাছে।আম্মু রিয়াকে এসে অনুরোধ করলো রিয়া মা আমাকে ক্ষমা করে দিস, তোর বাবাকে বোঝানো গেলোনা।কিন্তু এমন কিছু করিস না সারাজীবন আমাকে খোটা শুনতে হয়।রিয়া কারো কথার কোনো উত্তর দেওয়ার অবস্হায় ছিলো না।কাঁদতে কাঁদতে দু’চোখ রক্তজবার মতো হয়ে গিয়েছে।বিভোর ভাই মামা মামির হাতে পায়ে ধরেছে অনেকবার রিয়ার বাবাকে বলার জন্য কিন্তু মামা কিছুতেই রাজি নয়।সময়, সিসুয়েশন পরিস্হিতি সবটায় বিভোর ভাই আর রিয়ার বিপরিতে।
আমার অনেক গুলো কল আর মেসেজ বিভোর ভাই এর কল মেসেজ দেখে বিহান ডিউটি ছেড়ে দ্রুত বাসায় পৌছালো।বিহান বাসায় পৌছে দেখে বিভোর ভাই এর চোখ ফুলে আছে।বিভোর ভাই কে উন্মাদের মতো দেখাচ্ছে।ফ্লোরে চুপ করে বসে আছেন হাত গড়িয়ে র*ক্ত পড়ছে পাশে রাখা ব্লেড।বিহান দেখেই অস্হির হয়ে বিভোর ভাই এর হাত বেঁধে দিলেন।টেনশনে বিহান কপালে হাত চালাচ্ছে বারবার।বিহান সব সময় স্ট্রং মানুষ। নিজের মনের কথা জানাবে মানলে মানো না মানলে নিজের সিদ্ধান্ত নিজেই নিবে,বরাবর ই সাহসী আর সোজা কথার মানুষ।বিহান ফ্লোরে বিভোর ভাই এর পাশে বসলো বিভোর ভাই এর ঘাড়ে হাত রেখে বললো তোর ভাই থাকতে তোর চিন্তা কিসের বিভোর।তুই না একটা ছেলে মানুষ। ছেলে মানুষের জন্ম হয়েছে ফাইট করার জন্য।তুই যে একটা প্রকৃত পুরুষ সেটা প্রুভ করার সময় এখন।প্রেমিকা থাকলে তার বিয়ে ঠিক হবে এটাই স্বাভাবিক এতে ভেঙে পড়ার কি আছে।তুই না ইয়াং ম্যান।তুই কেমন প্রেমিক সেটা প্রুভের টাইম এসছে।প্রকৃত প্রেমিক সবাই হতে পারেনা বিভোর।দুজন প্রেমিক প্রেমিকার মাঝে সব থেকে কঠিন পরীক্ষা হলো সম্পর্ক টা বিয়ে পর্যন্ত টিকিয়ে রাখা।আর এটা এত সহজ নয়। হাজার টা বাঁধা অতিক্রম করেই পরিণয় পাওয়া যায়।একটা ছেলে যা পারে একটা মেয়ে তা পারে না। একটা মেয়ের বিয়ে ঠিক হলে কাঁন্না করা ছাড়া তার আর কিছুই করার থাকে না।একটা মেয়ে পারেনা একটা ছেলেকে এনে তার ঘরে তুলতে।প্রতিটা মেয়েই অপেক্ষা করে তার প্রেমিক নিশ্চয়ই কিছু না কিছু করবেই।যে কোনো ভাবে সে তাকে তার করে নিবেই।একটা মেয়ের বিয়ে ঠিক হলে তার প্রেমিকের জন্য যে ক’ফোঁটা চোখের পানি ঝরে প্রতিটা ফোঁটা পানি বুকের ভেতরের চাপা কষ্ট আর প্রেমিকের আসার জন্য অপেক্ষার।এই চোখের পানি ভীষণ ভালবাসার প্রমাণ।কাপুরুষরা পারে না এই চোখের পানির মূল্য দিতে।বিয়ের আসরে অন্যর ভালবাসা বুকে নিয়ে বসে থাকা মেয়েটি জানে কতটা যন্ত্রণার তার অনুভূতি।প্রায় ছেলেরা কত সহজেই বলে দেয় তুমি বিয়ে করে নাও। প্রেমিকের জন্য অপেক্ষা করা একটা মেয়ের তখন কেমন লাগে যখন তার প্রেমিক এমন কথা বলে।তুই আমার ভাই বিভোর।একজন প্রেমিক,প্রকৃত প্রেমিক।ভালবাসা জয় করতে গেলে এসব সিসুয়েশন সামলাতেই হবে।
বিভোর ভাই হতাস হয়ে বললেন,আমি কি করবো বিহান।বাবা আর আম্মুকে এক হাজার বলেছি।আমি মরে গেলেও তাদের কিছু যায় আসে না। তারা রিয়ার মা বাবাকে বলতে পারবে না।পরিবার তো মেনে নিচ্ছে না।
“কাকু কাকি কে আর কিছুই বলতে হবে না।তুই বলেছিস তারা মানে নি এখানে তোর দোষ নেই।পরিবার মানছে না তাই বলে কি ভালবাসা স্যাক্রিফাইস করবি।আজ মানে নি কাল তো মানবে।আর হ্যাঁ বলতে তো পারবে না আমাদের একবার বলিস নি।আমরা দেখতাম কি করা যায়।”
“রিয়ার বাবাকে সবাই বলেছে রিয়ার বাবা বলেছে আমি রিয়ার যোগ্য না।রিয়ার যোগ্য কোনো ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার। ফুপ্পি, আবির,দিয়া, রিয়ার আম্মু সবাই কেই বলে দিয়েছে। রিয়ার বাবার চোখে আমি সামান্য ব্যাংকার।”
“আমার ভাই সামান্য না বিভোর।আমার ভাই কে কেউ ছোট করলে আমি মেনে নিতে পারবো না।ভাবতে অবাক লাগে মানুষ বিয়ে দেওয়ার সময় দুটো মানুষের বিয়ে না দিয়ে টাকা, চেহারা, আর যোগ্যতা দেখে বিয়ে দেয় কেনো?ডিভোর্স কি এমনি এমনি বাড়ছে দেশে।বিভোর তুই একবার কল কর রিয়ার বাবাকে।ভয় পাবিনা সোজা সুজি বলবি।উনি যাতে ফিউচারে না বলতে পারে তাকে জানানো হয় নি।বা সে জানতোই না তোদের রিলেশন এর কথা।”
“আমি বলবো?আমার থেকে তোর কথা বেশী শুনবে।”
“আগে তুই বল দেন ফাইনাল কথা আমি বলবো।তুই তো জানিস বিভোর আমার কথা নিট এন্ড ক্লিয়ার।আমার সিদ্ধান্ত না মানলে নিজের সিদ্ধান্তে অটল থেকে যা করার নিজেই করি।”
বিভোর ভাই কল দিলো রিয়ার বাবাকে।
‘আসসালামু আলাইকুম আঙ্কেল।’
‘ওয়ালাইকুম আসসালাম। কে বলছেন।’
‘আঙ্কেল আমি বিভোর।’
‘ওহ! বিভোর কেমন আছো?শুনেছো রিয়ার বিয়ে ঠিক হয়েছে।আজ গায়ে হলুদ হয়েছে আগামি কাল বিয়ে।বিয়ের সব দায়িত্ব কিন্তু তোমাদের বাবা।তুমি আর বিহান দ্রুত চলে এসো।’
‘আঙ্কেল………. ‘
‘হ্যাঁ বলো।’
‘প্লিজ আঙ্কেল রিয়ার বিয়ে এভাবে দিবেন না।রিয়া আর আমি দুজন দুজন কে পছন্দ করি।এভাবে বিয়ে হলে কেউ ই ভালো থাকবো না আমরা।আপনি আমার বাবার মতো তাই আপনার কাছে রিকুয়েষ্ট করছি রিয়াকে এভাবে বিয়ে দিবেন না।আপনার মেয়েকে আমি ভালো রাখবো আঙ্কেল।আপনার মেয়ে কোনদিন অসুখি হবেনা।’
‘দেখো বিভোর তুমি রিয়ার ভাই এর মতো।ভাই বোনের মতোই থাকো।সকালে রিয়ার বিয়ে, এখন এসব ভাবার সময় নেই।আশা করি তুমি রিয়াকে আর ফোন দিয়ে ডিস্টার্ব করবে না।রিয়ার বিয়ে ঠিক হয়েছে ছেলে ইঞ্জিনিয়ার, ইউএস থাকে।ইউএস বাড়ি গাড়ি সব আছে।আশা করি বুঝতেই পারছো কত বড় ফ্যামিলিতে বিয়ে ঠিক হয়েছে।রিয়াকে আর ফোন দিও না কখনো তুমি।’
বিভোর ভাই হতাস হয়ে বিহানের কাছে ফোন দিয়ে দিলো।বিহান ফোন টা নিয়ে বললো,
‘আসসালামু আলাইকুম আঙ্কেল। আমি বিহান।’
‘ওয়ালাইকুম আসসালাম বাবা বিহান।তুমি আমাদের বাড়ির জামাই তুমি না আসলে বিয়ের সব সামলাবে কে?দ্রুত চলে এসো।’
‘আঙ্কেল রিয়ার বিয়ে বিভোর এর সাথেই দিন।আপনার মেয়ে ভালো থাকবে বিভোর ভালো থাকবে।আপনি চাইলে সব টা সুন্দর ভাবে হবে।একমাত্র আপনার হাতেই আছে সব কিছুর সুন্দর সমাধান।’
‘দেখো বাবা কাল বিয়ে।তাছাড়া বিভোর এর সাথে কি রিয়াকে মানাবে তুমি বলো।বিভোর কোথায় একটা ব্যাংকে চাকরি পেয়েছে তাও নতুন।তোমার মতো কোনো ডাক্তার হলেও মেনে নিতাম।রিয়ার বিয়ে বিশাল বড় ফ্যামিলিতে ঠিক হয়েছে।আর সেখানেই বিয়ে হবে রিয়ার।’
‘মানে আপনি আপনার সিদ্ধান্তে অটল থাকবেন।সবাই কেই কি ডাক্তার হতে হবে।প্রফেশন এর থেকে মনের দাম বেশী।আপনার মেয়ের খুশির কথা টা তো ভাবুন প্লিজ।না হলে ওরা পালিয়ে গেলে দুই পরিবারের মান সম্মান নষ্ট হবে।’
‘রিয়া কখনোই পালাবে না। বাইরে অনেক কাজ সবাই আমাকে ডাকছে।তুমি দ্রুত চলে এসো বিয়েতে।’
বিভোর ভাই হতাস হয়ে বসে পড়লেন।বিহান বললো,আমি বিয়ের ব্যাবস্হা করছি।সাহস রাখ বুকে।
কাকু জোরে জোরে রিয়াকে ডেকে নিলো।কাকি কাকু আর রিয়া এক ঘরে প্রবেশ করলো।বাইরে থেকে উঁকি দিলাম আমি।কাকু রাগি কন্ঠে বললো,
‘তুমি সিয়াম কে ফোন করে বলেছো কেনো এই বিয়ে করতে পারবে না।এটুকু বলেই রিয়ার গালে ঠাসসস করে চড় মেরে দিলো।খুব সাহস বেড়েছে তাইনা তোমার।কি খাওয়াবে বিভোর তোমাকে।করে সামান্য একটা চাকরি।তোমার লেখাপড়ার খরচ কিভাবে চালাবে বিভোর।তোমার স্পর্ধা দেখে অবাক হচ্ছি তুমি কিনা সিয়াম কে ফোন দিয়েছো’
রিয়া চোখের পানি মুছে বললো,
“বিভোর দের ফ্যামিলি যথেষ্ট ভালো আমাদের ফ্যামিলির থেকে বাবা।ব্যাংক জব কে সামান্য বলা যায় না কোনদিক থেকে।’
রিয়ার কথা শুনে কাকু রিয়ার দিকে তেড়ে গিয়ে বললো,
‘কি বললি তুই!তোর সহস খুব বেড়েছে তাইনা রিয়া।বলেই আরো কয়েক টা চড় মারলো কাকু।বিভোর এর হয়ে উকিলাতি করছো।তুমি যদি পালিয়ে যাওয়ার কথা ভেবে থাকো কোনদিন মেনে নিবো না আমি।ভেবে না আজ না হয় কাল মেনে নিবো।বিভোর ভাবছে কোন ভাবে একবার বিয়ে করতে পারলেই ফিউচার সেটেল।ডাক্তার মেয়ে পেলে কোন ছেলে বিয়ে করতে চাইবে না।বিভোর ও তেমন কিছুই ভাবছে।তুই বলদ তাই কিছুই বুঝছিস না।’
রিয়া চোখের পানি মুছে বললো,
‘বাবা আমার সাথে যার বিয়ে ঠিক হয়েছে সে আমি ডাক্তারি তে চান্স পাওয়ার পরেই বিয়ে করতে রাজি হয়েছে।ডাক্তারি তে চান্স পাওয়ার আগেই বিভোর আমাকে ভালবাসে।তাছাড়া বাবা তোমার মেয়ে চান্স পেয়েছে তার মানে এই না ডাক্তার হয়ে গিয়েছে।এখনো বিভোরের যোগ্য আমি হতে পারিনি।’
‘মানুষ দিন দিন উপর দিকে নজর দেয় আর তোমার নজর নিচে যাচ্ছে।আজ বাদে কাল তুমি ঠিক ই ডাক্তার হবে।তোমার পাশে যেমন ছেলে মানায় তেমন ই ঠিক করেছি আমি।’
‘যোগ্যতার সাথে যোগ্যতার বিয়ে দিও না বাবা মনের সাথে মনের বিয়ে দাও।বিয়ে কি টাকার সাথে দিতে চাও আমার।আমাকে তোমরা বাধ্য করোনা বাড়ি ছাড়তে।’
–কাকু রেগে গিয়ে রিয়ার গলা চেপে ধরলো।
–কাকি বললো,মেয়েকে কি মেরে ফেলবে নাকি তুমি।
–রিয়া বললো,আমাকে মেরে ফেলো তুমি।মেরে ফেললেও শান্তি পাবো আমি।
‘বিভোরের সাথে পালিয়ে যাবে ডাক্তার আর কোনদিন হতে পারবে না তুমি।
কোথায় পাবে বিভোর টাকা।বিহানের এর থেকে ভিক্ষা নিবে নিশ্চয়ই। ‘
‘ছিঃবাবা।আমি কখনো ভাবিনি বাড়ি ছেড়ে যাবো।কিন্তু তুমি বাধ্য করলে।বিভোর নিজের যোগ্যতায় আমাকে পড়াবে।ডাক্তারি পাশ আমি করবোই বাবা।তোমাকে দেখিয়ে দিবো আমার সিদ্ধান্ত ভুল ছিলো না।’
‘তোমার মেয়েকে দেখে নির্লজ্জের মতো নিজের বাবার সাথে প্রেম ভালবাসার কথা বলছে।’
‘আমাকে নির্লজ্জ হতে বাধ্য করেছো তুমি।বিভোর কে আর কত ছোট করবে তুমি।’
‘তোমার ফোন দাও। বিয়ের আগে এই ফোন আর তুমি পাবে না। ‘
‘কাকিমনি বাধ্য হয়ে বললো,তুমি কিন্তু বেশী বাড়াবাড়ি করছো রিয়ার বাবা।বিভোরের বাবার ও কিন্তু কিছু কম নেই।ইউএস এর ছেলে দেখে মাথা ঠিক নেই তোমার।এত লোভ তোমার।মেয়ের যদি কিছু হয় তোমাকে ছাড়বো না বলে দিলাম।এত মানুষ তোমাকে বুঝালো কারো কথা মানলে না।’
তুমুল অশান্তির পরেও কোন কিছু আটকানো গেলো না।রিয়ার মামিদের দিয়ে রিয়াকে পাহারা দেওয়া হচ্ছে।দিন গড়িয়ে রাত।পরের দিন সকালেই বিয়ে রিয়ার।
পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে রিয়াকে কোথাও পাওয়া গেলো না।।আমি মেহু আপু তোহা আপু জানি কাল রাতে বিভোর ভাই বাইক নিয়ে ঢাকা থেকে এসছিলো।বিভোর ভাই এর বাইকে করেই রিয়া পালিয়ে গিয়েছে।রিয়াকে খোজাখুজি শুরু হয়ে গিয়েছে।বিভোর ভাই এর ফোন অফ।কাকু আম্মুকে যা তা কথা সাথে বিভিন্ন হুমকি দিয়ে যাচ্ছে।আম্মু মন খারাপ করে কাঁদছে।বাবা কাকুকে বলছেন দিয়ার আম্মুর কোনো দোষ নেই এখানে।বারোটা বাজতে বাজতে বরযাত্রী হাজির।অথচ রিয়ার খোজ এখনো পাওয়া যায় নি।আত্মীয়রা বেশীর ভাগ ই কাকুর দোষ দিচ্ছে।কাকুর বাড়াবাড়ির ফলে এমন হয়েছে।
কোনো মানুষ যখন সত্যিকারের কাউকে ভালবেসে ফেলে যখন মন হারিয়ে ফেলে তখন কোনো কিছুর পরোয়া করেনা।ভয়,লজ্জা,কলঙ্ক সব কিছুর উর্দ্ধে চলে যায়।
সারারাত বাইক চালিয়ে ঢাকা থেকে নড়াইল এসছিলো বিভোর ভাই।বাড়ির সামনে রাত জেগে অপেক্ষা করছিলো কখন রিয়া বেরোবে।রাত একটা থেকে ভোর চারটা পর্যন্ত অপেক্ষা করার পর রিয়া একটা কালো ওড়না মাথায় দিয়ে বেরিয়ে গেছিলো বাড়ি থেকে।দুজনের চোখ ই ছিলো অশ্রুসিক্ত।
চলবে,,,,