এক বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যা ২ পর্ব-৪৬+৪৭+৪৮

0
1530

#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা(সিজন২)
৪৬.(এক্সট্রা পার্ট)
#WriterরঃMousumi_Akter

–আজ অনেকদিন পরে আম্মুদের বাসায় যাচ্ছি।এই প্রথমবার আমার এভাবে যাওয়া যেনো শ্বশুরবাড়ি থেকে বাবার বাড়ি।আগে তো যেমন তেমন ভাবেই যেতাম।আজ প্রথমবার অনুভব হচ্ছে আমি বিবাহিত।আজ তার বায়না আমি যেনো শাড়ি পরেই বের হই।আর আমাকে দেখতে যেনো ঠিক বউ বউ মনে হয়।তার অনুরোধেই আজ হলুদ শাড়ি পরে বের হলাম।

উনি কফি কালারের শার্ট পরেছেন সাথে ব্লু জিন্স ,শার্টের বোতাম খুলে দাঁড়িয়ে আছেন বেশ অনেক্ষণ ধরে।কিছু একটা বলবেন বলে মনে হচ্ছে।আমি ড্রেসিন টেবিলের সামনে সাজুগুজু নিয়ে বিজি আছি।

‘আমি উনার কাছে গিয়েই জিজ্ঞেস করলাম কিছু বলবেন?’

‘উনি দুঃখি দুঃখি মুখে বললেন,বোতাম খুলে দাঁড়িয়ে আছে দেখছো না।’

‘তো কি ব্যাপার বোতাম লাগাবেন না।’

‘উনি আমার হাত টেনে ধরে উনার বুকের কাছে নিয়ে বোতাম হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললেন,বোতাম লাগিয়ে দাও শার্টের।তুমি দিবে বলেই দাঁড়িয়ে আছি।’

‘বোতাম লাগাতে লাগাতে বললাম, এতদিন তো একাই লাগিয়েছেন।’

‘আগেও চাইতাম তুমি লাগিয়ে দাও,ভাবতাম নিজে থেকে এসে লাগিয়ে দিবে।বাট আর দিলে না তাই নিজেই বলে ফেললাম।ভাবছি এইভাবেই নিজের সব অধিকার আমাকে আদায় করে নিতে হবে।’

আমি উনার মুখের দিকে লাজুকভাবে হাসলাম।

উনার শার্টের বোতাম লাগিয়ে দিয়ে মামা মামিদের থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম।

বিভোর ভাই ও আমাদের সাথে যাচ্ছেন।আম্মু বলে দিয়েছে বিভোর যেনো আবশ্যই আমাদের সঙ্গে আসে।বিভোর ভাই নিজের বাইক নিলেন আর আমি আর উনি এক বাইকে যাচ্ছি।শাড়ির আঁচল ঠিকভাবে ধরে উনার কাঁধে হাত রেখে বসলাম।বাসা থেকে সোজা রুপগঞ্জে গেলেন বাইক নিয়ে।রুপগঞ্জের দিকে যেতে দেখে একটু অবাক হলাম।

‘বিহান ভাই কে বললাম,কি ব্যাপার রুপগঞ্জ এলেন যে।কি কিনবেন।’

‘আমাকে কি ছোটলোক মনে হয়।শ্বশুর বাড়ি কি খালি হাতে যাবো।এমনি বিয়ে করেছি অত্যাচারী রাজাকার বংশে।খালি হাতে গেলে আমার নামের পাশে ছোটলোক কিপ্টা সার্টিফিকেট ধরিয়ে দিবে।মানুষ বলাবলি করবে শ্বশুর ও যেমন কিপ্টা জামাই ও তেমন কিপ্টা।’

‘দেখুন বাবাকে নিয়ে একটা বাজে কথাও বলবেন না বলে দিচ্ছি।আমাকে কি কম গহনা দিয়েছে বাবা যে কিপ্টা বলছেন।’

‘একটু রাগি মুড দেখার জন্য ই বললাম।আমার শ্বশুর ইজ দ্যা বেষ্ট শ্বশুর আই নো পিচ্চি।তার হিরের থেকে দামী মূল্যবান জিনিস আমার হাতে তুলে দিয়েছেন।’

বাইক থেকে মাছের গলিতে নামলাম আমরা।।

বিহান ভাই আর বিভোর ভাই মাছ কিনছেন।এত্ত বড় রুই মাছ কিনে নিয়ে যাবেন সাথে আবার চিংড়ি ইলিশ। এত মাছ কে খাবে।বাবাহ এত মাছ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন বিহান ভাই তো একটুও কিপ্টা নয়।এর ই মাঝে একটি শ্যামবর্ণের ছেলে এসে বিহান ভাই কে ডাকছেন।এই বিহান শোন।কিন্তু উনার কান পর্যন্ত কথাটা পৌছাচ্ছে না।ছেলেটি একভাবে ডেকেই যাচ্ছে।সো আমি নিজেই ডাক দিলাম বিহান ভাই আপনাকে ডাকছেন কেউ।

‘বিহান ভাই এগিয়ে এসে বললেন,আরে ভাই এখানে তুই।’

‘মেয়েটা কে বিহান।’

‘আমার বউ।’

‘তোর বউ তোকে ভাই ডাকে।এই জীবনে প্রথম দেখলাম বউ বরকে ভাই ডাকে।’

‘পুচকি মানুষ তো যা ইচ্ছা তাই বলে ব্যাপার নাহ।আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে।’

‘ছেলেটি চলে গেলে বিহান ভাই আমাকে বললেন,আজ ফুপ্পির কাছে এর বিচার দিবো।আমাকে ভাই ডেকে তার মেয়ে আর কতদিন নিহত করবে। ‘

‘তাহলে কি এই ভরা মাছের বাজারে বর বলে বলে ডাকবো।’

‘স্টুপিড আমার ফ্রেন্ড কি ভাবলো।এর শাস্তিস্বরূপ তোর জন্য এখান থেকে পাঙ্গাশ মাছ কিনে নিয়ে যাবো।’

‘এই দেখুন আমি ইলিশ,চিংড়ি ছাড়া অন্য মাছ ভাল পছন্দ করিনা।আর পাঙ্গাশ আমার বমি পায়।’

‘হ্যাঁ এইজন্য পাঙ্গাশ ই খাওয়াবো তোকে।’

কয়েক মিনিট পরেই বাড়িতে পৌছে গেলাম বাকি জিনিস গুলো কিনে।

রিয়া বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে, খোলা চুলে হালকা সাজগোজ বেশ সুন্দর লাগছে।আমরা বাড়িতে প্রবেশ করতেই রিয়ার চোখ আগে বিভোর ভাই এর উপর পড়লো।বিভোর ভাই হেলমেট খুলে রিয়ার দিকে তাকালেন।আহা কি চাহনি দুজনের।রিয়া বোধহয় আগে থেকেই জানতো বিভোর ভাই আসবেন।

বাবা ভাইয়া,আম্মু,কাকিমনিরা সবাই এগিয়ে এলো আমাদের দেখে।মাছ,মাংস,ফল সবাই ধরে এগিয়ে নিয়ে গেলো ভেতরে।আয়রা ছুটে এসে বিহান ভাই এর কোলে উঠলো।বিভোর ভাই শালিকা বলে ডেকে চকলেট ধরিয়ে দিলো হাতে।আয়রা চকলেট পেয়ে ভীষণ খুশি।

আমরা ভেতরে গিয়ে নাস্তা খেয়ে বারান্দায় চেয়ারে বসে আছি সবাই।তোহা আপু আর তিয়াশ ভাইয়া বলে উঠলো আজ বিহান ভাইকে পেয়েছি পিকনিক হবে।রিয়া বললো,আইডিয়া টা খুব ই ভালো।তিয়াশ ভাইয়া বললো,সবাই দুইশত করে টাকা জমা দাও।বিহান ভাই বলে উঠলেন,আমার টাকা দিয়া দিয়ে দিবে।আমি বেশ শান্ত চোখে তাকিয়ে বললাম আমার কাছে একশ টাকার একটা নোট আর দশ টাকার দুইটা নোট আছে আর তো টাকা নেই।যাও বা আছে তা ও বাড়িতে।উনি স্ট্রেইট বলে দিলেন আমি সেসব জানিনা আমার টাকা তুমি দিবে তাই দিবে।রিয়া বলে উঠলো, আমার টাকা কিপ্টা বিভোর ভাই দিবে।বিভোর ভাই বললেন,ছিঃনিজের উনাকে কিপ্টা বলছো।তোহা আপু মেহু আপুকে কল দিয়ে বললো,মেহু আপু আজ সন্ধ্যায় আমাদের পিকনিক আছে দুইশ টাকা নিয়ে চলে এসো।ভাইয়া বললো,ও মামা বাড়ি আসছে টাকা দিবে কেনো?আমি দিবো ওর টাকা।ব্যাপার টা সন্দেহের নাহ ভাইয়া আগ বাড়িয়ে মেহু আপুর টাকা দিতে চাইছে।তোহা আপু বললো সবার তো সবাই আছে আমার টাকা না হয় আজ ডাক্তার সাহেবের বউ ই দিবে।কি একটা অবস্থা আমাকে এভাবে ফাঁসানো হচ্ছে আমি এখন টাকা পাবো কই।

রান্না ঘরে আম্মু আর রিয়ার আম্মু আমাকে ডেকে নিয়ে সেই পরিমানে বকাঝকা শুরু করলো।আমি যেনো বিশাল কোনো অন্যায় করে ফেলেছি।

‘আম্মুর দিকে তাকিয়ে বললাম’ আমি কি করেছি আম্মু।হঠাত বকছো কেনো?’

‘আম্মু অগ্নিচোখে বললো,তুমি বিহান কে ভাই ডাকো কেনো?’

‘কাকিমণি বললো ছিঃদিয়া এতদিন যা বলেছো বলেছো এখন আর ভাই ডাকবা না দেখতে আর শুনতে খারাপ দেখায়।মানুষ সমালোচনা করে বুঝো না।’

‘সেই ছোট্ট বেলা থেকে বলে আসছি তো তাই অভ্যাস হয়ে গিয়েছে।’

‘আম্মু বললো,খারাপ অভ্যাস গুলো তো তোমার কোনদিন যাবে না।আর যেনো শুনিনা ভাই বলেছো।’

‘তাহলে কি বলবো শুধু বিহান ডাকতে কেমন লাগবে।তোমার ভাতিজা বলবে তুই কত বড় অসভ্য দিয়া বড়দের নাম ধরে ডাকিস।’

‘কেনো তুমি নাম ধরে ডাকবে কেনো?স্বামির নাম ধরে কেউ ডাকে।নাম ধরে ডাকবা না। আমরা যেভাবে বলি ওইভাবেই বলবা।’

‘তুমি তো বলো দিয়ার বাবা শোনো।আমি কার বাবা বলবো।টুনির বাবা।’

‘ছেলে মেয়ে হোক তখন তুমিও তাদের নাম ধরে ডেকো।’

চুপচাপ বকাঝকা গুলো হজম করে মনে মনে ভাবছি,

এই বিহান ভাই থুক্কু এই বিহান টা আমার আম্মুর কাছে এসেই নালিশ দিয়েছে আজ ওর যে কি করবোনা নিজেই জানেনা।

বিহান ভাই থুক্কু বিহান, বিভোর ভাই আর ভাইয়া ড্রয়িং রুমে বসে গল্প করছে।বিভোর ভাই আর ভাইয়া গল্প করছে।আর উনি পূর্ণ দৃষ্টি ফোনে নিক্ষেপ করে ফোন স্ক্রল করে চলেছেন।

‘আমি গিয়ে বললাম,এই যে শুনুন।’

উনি কোনো উত্তর দিলেন না।

‘আবার বললাম, এইযে আপনাকেই বলছি শুনুন।’

তাও ফোনের দিকেই মন উনার।আমার দিকে ফিরেও তাকালেন না।

‘ভাইয়া বিহান কে বললো,বিহান দিয়া তোকে ডাকছে।’

‘উনি ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আমার দিকে কপালের চামড়া ভাজ করে তাকিয়ে বললেন,আমাকে ডাকছো?’

‘হ্যাঁ আপনাকেই!মন কোথায় থাকে।কতবার ডাকছি আমি।’

‘এইযে, ওইযে করছিলে বুঝবো কিভাবে কাকে বলছো।’

‘আপনাকেই ডাকছিলাম।’

‘আমাকে তো বিশাল ভঙ্গিমায় ভাই ডাকা হয় তাই আজ হঠাত এমন আজ্জিব সম্মোধন এ বুঝতে বেশ মুশকিল হয়েছে আমার।সিরিয়াসলি বলছি।’

‘বিভোর ভাই বললেন, দিয়া বুড়ি রেগে আছে মনে হচ্ছে তা হঠাত কি নিয়ে এত রাগ দিয়া।’

‘ওইযে আপনার চাচাতো ভাই কে বলুন আমার রুমে আসতে।আমার কথা আছে।’

‘ভাইয়া আর বিভোর ভাই খুব জোরে হেসে দিয়ে বিহান কে বললো,যা দিয়া ডাকছে।’

‘উনি ভাইয়া আর বিভোর ভাই এর দিকে আড়চোখে তাকিয়ে হালকা হেসে নিয়ে ফোন প্যান্টের পকেটে রেখে বললেন,যাচ্ছি তোদের বোন তো আর প্রেম করতে ডাকছে না। নিশ্চয়ই কপালে শনি আছে।একটু খোজ খবর নিস আমার গেলাম বিসমিল্লাহ বলে।’

রুমের মধ্য পায়চারী করে বেড়াচ্ছি কখন আসবেন উনি।

এক মিনিটের মাঝে উনি রুমে প্রবেশ করে প্যান্টের দুই পকেটে হাত গুজে সন্দিহান দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে রইলেন আমার দিকে।
উনার সন্দিহান মন এটাই বলছে আমি হঠাত এইভাবে ডেকে পাঠালাম কেনো?

‘শান্ত কন্ঠে বললেন,কি হয়েছে ক্ষেপী এইভাবে ডাকা হয়েছে কিজন্য।’

‘আপনার ইউরিন টেস্টের রেজাল্ট জানতে।’

‘ইন্টারেস্টিং!ভেরী ইন্টারেস্টিং ব্যাপার জানতে ডেকেছো।’

আমি ক্ষীপ্ত নয়নে তাকিয়ে রইলাম।

‘উনি বললেন,আগামি কয়েক মাসের মধ্য তোমার ইউরিন টেস্টের ব্যাবস্থা করছি ওয়েট।’

‘এই দেখুন বাজে কথা কম বলুন।আম্মুর কাছে নালিশ দিয়েছেন কেনো?আমাকে বকেছে আম্মু।’

‘ওহ আচ্ছা!এই ব্যাপার।’

‘কেনো দিয়েছেন নালিশ আপনি।আজ আপনার খবর আছে বিহান ভাই থুক্কু বার বার ভাই হয়ে যায়।ছোট বেলার অভ্যাস চেঞ্জ হতে তো সময় দিবেন তাইনা?’

‘এইদিকে আমাকে বার বার ভাই ডাকলে যে আমার রোমান্টিক ফিলিংস এর দফারফা হয়ে যায় বোঝো না।’

‘ফিলিংস এর আবার দফারফা হয় নাকি।কি আধ্যাত্মিক আলাপ বিলাপ বাবা।’

উনি আমার কানের কাছে ফিসফিস করে অসভ্য কয়েকটা কথা বলে ফিলিংস এর দফারফা বুঝালেন।

আমি আশ্চর্য হয়ে তাকিয়ে ভাবলাম,ছিঃকি অসভ্য কথা।মানুষ এত অসভ্য কথা ও বলতে পারে।

উনি দুষ্টু হেসে বেরিয়ে গেলেন রুম থেকে।

চলবে,,

#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা(সিজন ২)
৪৭.
#WriterঃMousumi_Akter

আজ অনেকদিন বাদে বাবার কোলে মাথা রেখে সুয়ে আছি আমি।আমার বাবা কোনো রাজ্যর রাজা না হলেও তার কাছে আমি যেনো একটা রাজকুমারী।বাবা নামক এই মানুষ টা আমার সব চাওয়া পাওয়া গুলো পূরণ করে।জীবনের অনেক বড় প্রাপ্তির নাম হলো আমার বাবা।ভাইয়ার কিছু প্রয়োজন হলে আম্মুকে বা আমাকে দিয়ে বলায়।ভাইয়া নিজ মুখে কিছু চাইতে সাহস পায় না।অথচ আমার এই ভয় বা বাঁধা কোনটায় নেই।বাবা আমাকে এতটায় আদর আহলাদ দিয়েছে যে নিঃসংকোচে যা কিছু প্রয়োজন বাবার থেকে চেয়ে নিয়েছি।অথচ বাবা আমাকে আর ভাইয়াকে দুজনকেই সমান ভালবাসেন।বাবা খাটের কোনায় বসে আছেন আমি বাবার কোলে মাথা রেখে সুয়ে সুয়ে বাবার সাথে গল্প করছি।গল্পের সব টা জুড়ে রয়েছে আম্মু।আম্মু আমাকে বকলেই বাবার কাছে নালিশ জানিয়ে দেই বাবা আমার মুখে হাসি দেখতে আম্মুকে বলে আমার মেয়েকে তুমি আর কখনোই কিছু বলবা না। এইটুকু কথাতেই আমি ভীষণ খুশি হয়ে যায়।আম্মু বলে মেয়ে তোমার আর ছেলে আমার।অতিরিক্ত খরচ করাতে আম্মুর আপত্তি থাকে,কিন্তু বাবা আম্মুকে লুকিয়ে সব ই দেয়।বাবা আমার চুলে বিলি কেটে দিচ্ছে আর বিভিন্ন গল্প বলছে।আমি ডাক্তার হলে বাবা আর কাজ করবে না,আমি আর ভাইয়ার থেকে পকেট খরচ নিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুরে বেড়াবে।যদিও বাবার এটা একটা আবদারের কথা।

এরই মাঝে আয়রা টা ঘরে প্রবেশ করেই ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে দিলো।আমি আর বাবা দুজনেই বেশ অবাক হলাম আয়রা টার কাঁন্না দেখে।

‘বাবা বললেন,বুড়ি মা কি হয়েছে।’

‘আয়রা গাল ফুলিয়ে বললো,চাচ্চু তোমার কোলে দিয়াপু কেনো?’

‘আমি ভীষণ অবাক হয়ে বললাম,আমার বাবার কোলে আমার মাথা রাখা তোর হিংসে হচ্ছে কেনো?’

‘নামো আগে আমার চাচ্চুর কোল থেকে।আমি মাথা দিবো ওখানে।’

‘আচ্ছা তোর চাচ্চু হয় আর আমার কি হয়?’

‘তোমার কিচ্ছু না।আমার আপণ চাচ্চু।’

‘ওকে আমিও যাচ্ছি আমার চাচ্চুর কাছে।মানে তোর বাবার কোলে মাথা রাখতে।’

আয়রা ফ্লোরে বসেই পা দাপাতে শুরু করলো আর ভীষণ কাঁন্না জুড়ে দিলো।না আমার আব্বুর কাছে তুমি যাবে না।মানে সে কারো কাছেই যেতে দিবে না।

‘মানে কি সব কিছুর দখলদার তুই একা আয়রা।

‘চাচ্চু ও আমার, আব্বু ও আমার।’

‘তাহলে আমার কে?’

‘তোমার শুধু বিহান ভাই।’

বাবার সামনে কি লজ্জাটায় না পেলাম।বিহান নাকি আমার।এইটুকু মেয়ে কি বলে কি এসব।চোখ রাঙিয়ে আয়রার দিকে তাকালাম আমি।বাবা উঠে গিয়ে আয়রা কে কোলে নিলো।আয়রার কাঁন্না থামাতে বাবা বলছেন,দিয়াকে শ্বশুর বাড়ি পাঠিয়ে দিবো আবার আম্মা তুমি আর কেঁদো না।আয়রা গাল ফুলিয়ে কেঁদেই যাচ্ছে।আয়রা কে আমি আর রিয়া ক্ষেপিয়ে অনেক মজা নিয়েছি এতদিন।আয়রা কে জাস্ট বলবো ডিম বড় টা আমি নিয়েছি সাথে সাথে নিজের প্লেটের ডিম ছুড়ে ফেলে বলবে আমি দিয়া আর রিয়াপুর প্লেটের ডিম নিবো।হাতে চিপস এর প্যাকেট থাকলে না নিয়েও যদি বলি নিয়েছি এই কাঁন্না জুড়ে দিবে।আয়রার কান্ড দেখে এখন আবার হাসছি আমি।

‘এর ই মাঝে বিহান এসে বাবার কোল থেকে আয়রা কে নিয়ে বললো, আপনি যান আমি দেখছি।’

বাবা বিহানের কোলে আয়রাকে দিয়ে বেরিয়ে গেলো।

‘বিহান আয়রাকে কোলে নিয়ে বললো,কি হয়েছে আয়রা সোনা তুমি কাঁদছো কেনো?’

আয়রা আমার দিকে আঙুল ইশারা করে দেখালো।

কি পাক্কা আমাকে বিহানের কাছে বকা খাওয়াবে বলে আমার দিকে ইশারা করছে।

“আমি আয়রার দিকে আবার চোখ পাকাতেই উনি বলে উঠলেন, কি ব্যাপার ভয়ানক অত্যাচারী মহিলা।এতদিন আমাকে অত্যাচার করছিলে মেনে নিয়েছি তাই বলে এখন এই টুকু বাচ্চাকে অত্যাচার করবে।”

আমি উনার কথা শুনে আয়রার দিকে রাগী চোখে তাকালাম।

“উনি আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বললেন,খবরদার আয়রাকে চোখ রাঙাবে না তুমি।রাজাকার দের উত্তম উত্তরাধিকারী তুমি দিয়া।একটা বাচ্চাকেও ছাড় দিচ্ছো না।এতদিন আমাকে ভয়ানক অত্যাচার করেছো আর এখন এই শিশু টাকে করছো।”

“এই দেখুন বার বার রাজাকার আর অত্যাচারী বলবেন না বুঝেছেন।আপনাকে কিভাবে অত্যাচার করেছি আমি।”

উনি আয়রাকে নামিয়ে দিলেন কোল থেকে।আমি খাটের কোনায় সুয়ে আছি চুল নিচে ঝুলে পড়েছে।উনি আমার মাথার দুই পাশে দুই হাত ঠেকিয়ে ঝুঁকে পড়লেন আমার মুখের উপর।নাকের সাথে নাক ছুই ছুই অবস্থা। ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছি উনার দিকে।উনি নাকের সাথে নাকের ঘষা দিয়ে বললেন,

“অত্যাচার করেছো তুমি ভীষণ অত্যাচার।
এই ইয়াং ছেলেটার সামনে বিরিয়ানি রেখে খাওয়ার পরিবেশ তৈরি করে দাও নি।খেতে ইচ্ছা করলেও পারি নি।এটা রিতীমত ভীষণ অত্যাচার।”

“ধীর শান্ত গলায় বললাম, কিভাবে।”

“এইযে বিয়ে করা বউ সামনে দিয়ে ঘুরেছো কখনো নিজ থেকে এসে একটু আদর করোনি।”

“আমি না হয় করিনি,আপনাকে তো আর ধরে রাখিনি কোনদিন।”

“আমি একটু কাছে গেলে তো তুমি সরাসরি একটা চরিত্রহীনের সার্টিফিকেট ঝুলিয়ে দিতে।”

আমি হাসলাম উনার কথা শুনে।

“উনি ফিসফিস কন্ঠে বললেন,ঝুঁকে আছি তোমার দিকে, গিভ মি কিস শ্যামাঙ্গিনী। ”

কি ভীষণ লজ্জা পেলাম উনার কথা শুনে।এইভাবে মুখের উপর এসে কেউ বলে গিভ মি কিস।লজ্জায় মুখ অন্যদিকে ঘুরালাম আমি।

এরই মাঝে আয়রা আরো জোরে কেঁদে দিলো।বিহান আয়রাকে কোলে তুলে বিছানায় বসিয়ে দিলো।আয়রার কাঁন্না থামাতে বিহান নিজের ফোন আয়রার হাতে দিয়ে ইউটিউব ধরিয়ে দিলো। আয়রা মনোযোগ দিয়ে ‘নিক্স যে সব পারে ‘ কার্টুন দেখছে।উনি আয়রাকে ফোন দিয়ে উনার প্যান্টের পকেট থেকে ওয়ালেট বের করে বিছানায় রেখে ওয়াশ রুমে গেলেন।আমি আয়রকে একটু ভয় দেখাতে বিহানের ফোন নিয়ে ভয়েজ সার্চ দিলাম আহট বলে।সনি আট চ্যানেলের আহট প্লে করার জন্য।বুঝলাম না আমি তো বললাম আহট “আ” কি তারা শোনে নি।সার্চ অপশনে উঠেছে আ বাদে হট।সাথে সাথে দেশ বিদেশের নোংরা ভিডিও হাজির।

আয়রা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বললো,দিয়াপু দেখো আমার মতো ছোট কাপড় পরেছে।আমি দ্রুত ফোন থেকে এসব কাটার চেষ্টা করছি।

এরই মাঝে বিহান আয়রার হাত থেকে ফোন টা কেড়ে নিলেন।ফোনের দিকে একবার চোখ স্হীর করে তাকালেন।ভয়ে হাত পা কাঁপাকাপি শুরু হলো আমার।উনি আমাকে ভীষণ ভাবে বকবেন।আর ছিঃকি ভাববেন আমাকে নিয়ে।বিরক্ত হয়ে তাকালেন আমার দিকে।আয়রার হাতে আমার ফোন ধরিয়ে দিয়ে বললেন,তোমাদের ঘরে গিয়ে ফোন দেখো সোনা যাও আমি আসছি।আয়রা তো ফোন নিয়ে চলে গেলো আমার কি হবে এখন।উনি দরজার পর্দা টেনে দিলেন।

উনি ফোন প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে আমার দিকে বিরক্ত হয়ে তাকালেন।আমি দ্রুত বিছানা থেকে উঠে শাড়ি ঠিক করতে লাগলাম।উনি ধীর গতিতে ক্রমশ ঝুঁকে এলেন আমার দিকে।দুজন দুজনের নিঃশ্বাসের একদম কাছাকাছি।

–আমি চোখ বড় বড় করে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,কি?

–উনি দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,এইটুকু একটা বাচ্চাকে এসব দেখাতে লজ্জা করলো না তোর।

–কি ব্যাপার উনি তুমি থেকে দেখছি আবার তুই তে চলে গিয়েছেন।

–দেখুন, আমি ওসব দেখায় নি।ভুলে হয়েছে এটা।

–সিরিয়াসলি!ভুলে হয়েছে।আমি তাই জীবনে ফোনে এসব সার্চ করিনি কোনদিন।তুই কিনা এসব দেখিস। আমার ফোন ই অপবিত্র করে দিয়েছিস আজ।

–মোটেও না আমি আহট বলেছিলাম আ ওরা বোঝে নি তাই আ বাদে ওইটা হয়েছে।

–বার বার কি এসব তোর সাথেই হয়।মামাতে ভাইকে বশিকরণ এর জায়গা লিখিস করতে হয় কিভাবে।আবার আ বাদ গিয়ে হট হয়ে যায় শুধু।ইউ নো হোয়াট দিয়া বার বার ইন্টারেসটিং ভুল গুলো তোমার ই হয় কিন্তু।

–এই কথাটা শুনে বেশ লজ্জা পেলাম।

–আজ সারাদিন এইসব নিয়েই পড়ে আছো দেখছি।সকালে একবার দেখলাম আমাকে হট বললে এখন ইউটিউবে সার্চ করছো।এসব না করে সরাসরি বললেই তো পারো নিড প্রচুর আদর।

–উনাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতেই উনি আমার দুই হাত শক্ত ভাবে চেপে ধরলেন।

–ফিস ফিস করে বললাম,কেউ কিন্তু চলে আসবে এখন।

–উনি নেশাক্ত ভাবে কাছে এগিয়ে এসে বললেন,আসুক। কথাটা বলেই ভূমিকম্পণ এর গতিতে ওষ্টে গভীর ভাবে চুমু দিয়ে দিলেন।

আমি লাফিয়ে উঠলাম বিছানা থেকে।উনি দুষ্টুমির চাহনি তে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে আর হাসছেন।মাথার চুলে হাত চালিয়ে দিয়ে বললেন,এত ছটফট করো কেনো তুমি?

লজ্জায় মৌন থেকে বিছানা থেকে ওয়ালেট টা নিলাম।

আমি উনার ওয়ালেট নিয়ে বললাম,এইযে টাকা আছে আমাকে বললেন কেনো টাকা আনেন নি।আমাকে টাকা ধার দিন।

–ধার দিবো?এমনি নিবে না।

–এমনি তো লাগবেই আপনি তো দিচ্ছেন না।

–ওকে দিবো আমি যা চাইবো তাই দিতে হবে।

–কি চাই আপনার বলুন।

–সে যেটায় চাই চাইলে দিতে হবে।

–আচ্ছা দিবো।

–মনে থাকে যেনো।পরে আর না বলতে পারবে না কিন্তু।

–থাকবে।

–উনি একনজরে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।

–আমি বললাম কি দেখছেন?

–তুমি কত সুন্দর তাই দেখছি।

–আমি কই সুন্দর। আমি তো কালো।

–আমার চোখ দিয়ে তাকিয়ে দেখো পিচ্চি,তাহলেই বুঝবে এই পৃথিবীতে আমার চোখে তোমার থেকে সুন্দর আর কোনো মেয়ে নেই।

–কিভাবে দেখবো?

–অয়েট বুঝাচ্ছি,নিজেই প্রমান পাবে।

চলবে,,

#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা (সিজন২)
৪৮.
#WriterঃMousumi_Akter
“উনি বললেন,ওয়েট বুঝাচ্ছি।”

“আমি বেশ ভাবুক ভাবে উনার দিকে তাকিয়ে আছি।কি বুঝাতে চাইছেন উনি আমাকে সেটাই ভাবছি।”

–উনি শার্টের হাতা খানিক টা গুটিয়ে নিয়ে হাত কাত করে ঘড়িতে টাইম দেখলেন কপালের চামড়া কুঁচকিয়ে।পকেট থেকে টিস্যু বের করে কপালে জমে থাকা কয়েক ফোটা ঘাম মুছে নিয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে রুমে ময়লা রাখা বাকেটে টিস্যু টা ফেললেন।প্যান্টের দুই পকেটে হাত গুজে দুই ভ্রু উঁচিয়ে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন আমার দিকে নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে।আমি বিছানার উপরেই দাঁড়িয়ে আছি আর বার বার জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজাচ্ছি।উনি নিচের ঠোঁট কামড়ে তাকিয়েই আছেন দৃষ্টি আমার ওষ্টের দিকে সরাসরি।

“উনি এতক্ষণে মুখ খুলে বললেন,বুঝতে হলে নিচে আসতে হবে।এইভাবে খাটের উপর থাকলে বুঝবে কিভাবে?দূরত্ব কি ভালবাসার গভীরতা বোঝাতে পারে। ”

–আমি উনার দিকে তাকিয়ে আস্তে করে নিচে নামার চেষ্টা করলাম।উনার দিকে তাকিয়ে থাকার জন্য পায়ের দিকে খেয়াল করতে না পারায় খাটের কর্ণারে এসে পড়ে যেতেই উনি হাতে ধরে ফেললে আমাকে।উনি দুই হাতে পাজা কোলে উঁচু করে ধরে আমার মুখের কাছে মুখ এনে বললেন,সাবধানে আসবে তো?এক্ষুণি পড়ে যেতে।

–উনার মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে শান্ত কন্ঠে বললাম,কি বুঝাবেন।

“উনি আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বললেন,চোখ অফ করো।”

“কেনো?”

আমার দুই ঠোঁটে আঙুল ঠেকিয়ে কথা বলতে নিষেধ করলেন মাথা নাড়িয়ে।

“যেটা বললাম সেটাই করো।”

“আস্তে করে চোখ অফ করলাম।”

“তোমার চোখে এই পৃথিবীর সব থেকে সুন্দর পুরুষ কে?কাকে তোমার সব থেকে বেশী ভাল লাগে।এমন কেউ কি আছে যাকে পেলে আমাকে ছেড়ে দিতে পারবে।”

“আপনি ছাড়া আমার চোখে কাউকে বেশী সুন্দর লাগে না।এটা কোনদিন হবেনা যে অন্য কারো জন্য আপনাকে ছেড়ে দিতে পারবো।”

“আমি যে দেখতে আহামরি সুন্দর তাতো নয়।আমার থেকে হাজার গুন সুন্দর ছেলে আছে দিয়া। ”

“কই আমার কাছে তো আর কাউকে ভাল লাগেনা।আপনি ছাড়া আমার কাছে কাউকে সুন্দর বলে মনে হয় না।”

“পৃথিবীতে এত সুন্দর ছেলে আছে তবুও তোমার চোখে আমি সুন্দর।রিয়ার চোখে বিভোর সুন্দর। মেহুর চোখে আবির সুন্দর। ভালবাসার মানুষ টায় এমন ম্যাজিশিয়ান হয় যার কাছে যার মন বন্দি তার কাছে তাকে ছাড়া পৃথিবীর আর কাউকে ভাল লাগে না।যে যাকে ভালবাসে তার চোখে সেই পৃথিবীর সেরা সুন্দর মানুষ বুঝলে।তোমার চোখে যদি আমি সুন্দর পুরুষ হই নিঃসন্দেহে তুমিও আমার কাছে এই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুন্দরী, ভুবনমোহিনী নারী।আন্ডারস্ট্যান্ড। ”

আমি যেনো কোথাও হারিয়ে গেছিলাম এত সময়।ভাবনার কোনো দেশে প্রবেশ করেছিলাম।কত সুন্দর ভাবে বুঝিয়ে দিলেন আমাকে।

“মিহি হেসে বললাম, আমার জীবনের সব কঠিন সমস্যার সমাধান আপনার কাছেই আছে।আপনি আছেন বলেই আমার জীবনের অনেক কিছুই অনেক সহজ হয়ে যায়।বলেই জিভ দিয়ে আবার ঠোঁট ভেজালাম।”

“উনি আমাকে কোল থেকে নামিয়ে দিয়ে বললেন,ওহ মাই গড!বলেই চুলের মাঝে হাত চালিয়ে দিলেন।”

“সন্দিহান ভাবে বললাম কি হলো।”

“উফফফ হাউ কিউট দিয়া!বার বার এইভাবে জিভ দিয়ে ঠোঁট ভেজাবে না আমার সামনে।নিজেকে তোমার জন্য পাগল পাগল লাগে।বার বার এইভাবে জিভ দিয়ে ঠোঁট ভেজালে কোনো অনর্থ হলে আমাকে দোষ দিও না কিন্তু।এই দোষ কিন্তু আমার না।তুমি আসলেই এতটায় কিউট কিউট কাজ করো পিচ্চিদের মতো নিজেকে সামলানো মুশকিল হয়ে যায়।
কথাটা বলেই গালে একটা চুমু দিয়ে বললেন,আই লাভ ইউ পিচ্চি।”

লজ্জায় ঠোঁটে হালকা হাসি নিয়ে মাথা নিচু করলাম।

এরই মাঝে মনো হলো উনি কিছুক্ষণ আগে বললেন,মেহুর চোখে আবির সুন্দর এর মানে কী?

–আপনি কি বললেন,মেহুর চোখে আবির সুন্দর মানে?মেহু আপুর চোখে ভাইয়া সুন্দর এই কথার মানে কী?

–কথার কথা বললাম। এটুকু বলেই বেরিয়ে গেলেন উনি।

কথার কথা বললো নাকি আসলেই।আমার তো কেমন সন্দেহ লাগছে।

–সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে,ছাদে আয়োজন করা হয়েছে রান্নার।তিয়াস ভাইয়া বক্সের ব্যাবস্থা করেছে।বিহান এর ঘোর আপত্তি বক্স নিয়ে। তার এসব লাউড স্পিকার গান,বাজনা কিছুই পছন্দ না।অলওয়েজ সাইলেন্ট মানুষ সে।কিন্তু সবার ভাল লাগা নষ্ট করতে চান না বলে মেনে নিয়েছেন সবটা।ছাদের লাইট অন করে দিয়ে সবাই ভীষণ আনন্দ করছি।ছাদে রান্না শুরু হয়ে গিয়েছে।তোহা আপু,তিয়াস ভাই,ভাইয়া মিলে রান্না শুরু করেছে।বাকিরা সবাই গোছগাছ করছি।শুধু নবাবের মতো ছাদের এক কোণে দাঁড়িয়ে ফোন স্ক্রল করে চলেছে বিহান।মাঝে মাঝে আড় চোখে আমায় দেখছে।ভাইয়ার হাতে ভাজ করা ছোট হাত পাখা। তোহা আপু আর রিয়া দুজনেই চেয়েছে ভাইয়া কাউকেই দেই নি।এই পাখাটার বেশ যত্ন করে ভাইয়া।বিভোর ভাই বললেন,বিশেষ মানুষের জিনিস অন্যকে দেওয়া ঠিক না আবির।কাউকে দিস না কিন্তু। আমি কিন্তু ভাবিকে বলে দিবো তাকে কত অবহেলা করিস।

“তোহা আপু আর রিয়া অবাক হয়ে বললো,ভাইয়া তোমাকে এই পাখা ভাবি দিয়েছে। কি বলো আমাদের ভাবিও আছে।কই আমরা তো জানলাম না।”

“ভাইয়া বললো,বিভোর এর কথা কেউ বিশ্বাস করলে অকালে মারা খাবা।বিভোর কি সত্যি কথা বলে।আমাকে কেস খাওয়াতেই বলছে।এই পাখা নিয়ে এত ঝানেলা ওকে এটা মেহুকে দিয়ে দেই।মামা বাড়ির জিনিসে মেহুর পূর্ণ হক আছে। তাই এই পাখার দাবিদার মেহু।”

–মেহু আপু ছাদের এক কোণায় বসে আছে গরমে মনে হয় খারাপ লাগছে।এত সময় আমার সাথে গল্প করছিলো।ভাইয়া তার হাতের হাত পাখা দিয়ে মেহু আপুর মুখে বাতাস দিয়ে দিচ্ছে।আপুর চোখে অন্য কিছু দেখছি আমি।আপু ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে হাসছে আর দুজনে কিছু বলছে।রিয়া আর আর তোহা আপু তো বেশ অবাক।সাথে আমিও ভাবছি কাহিনী কিছু তো আছেই।

“বিভোর ভাই বললেন,গরীবের কথা বাসি হলেও সত্য হয়।”

“বিভোর ভাই ছাদ থেকে নিচে উঁকি মেরে বললেন,আচ্ছা পাশের ফ্ল্যাটে আতিফ ভাইয়ার বউ ছিলোনা।”

“তিয়াশ ভাই বললো,কোন আতিফ।”

“ওইযে একটু মোটা করে উনার বউ।বেশ গুলুমুল দেখতে ভালোই।”

“তিয়াস ভাইয়া বললো,আপনার সাথে কি রিলেশন তার শুনি।খুব খোজ খবর নিচ্ছেন কাহিনী কী?”

“আমাকে মেসেঞ্জারে ছবি পাঠাতো।অনেক মেসেজ দিতো,না চাইতেও নিজের ছবি ভিডিও দিতো।হাউ কিউট শী মানে ভাবি। ”

“তিয়াস ভাই খুব অবাক হয়ে বললো,ভিডিও দিতো।”

“আমি কি মিথ্যা বলছি, কি সাংঘাতিক ভিডিও।”

“আমাকে আর আবির ভাইকে ফরওয়ার্ড করেন কি ভিডিও দেখি।”

“ভাইয়া বললো,নাউজুবিল্লাহ আমি এ ধরনের ছেলে না।আমাকে দিতে হবে না।তিয়াস কে দিলেই হবে।”

–তিয়াস ভাই বিহান কে চোখ ইশারা দিয়ে দেখিয়ে বললো,আমাদের গ্রেট বিহান ভাই একা একা ফোনে কি দেখছেন।
বিভোর ভাই বলছি যে বিহান ভাই কেও দেন।বিহান ভাই ভদ্র মানুষ লজ্জায় এসব দেখতে পারে না।কারো কাছে চাইতেও পারেনা।তবে বুঝি ছেলের বয়স হয়েছে তার ও মন চাই আন্টিদের ভিডিও দেখতে।

–বিহান ভাই এগিয়ে এসে বললেন,আমাকে কি তৃতীয় শ্রেনীর ষ্টুপিড মনে হয় তোর তিয়াস।আমার কিছু দেখতে মন চাইলে কি নিজে সার্চ করে দেখতে পারবো না।তোর মতো চ্যাচড়ামি করে অন্যর পারসোনাল ভিডিও চাইবো।তাছাড়া বিহান তোদের মতো মহিলাদের ভিডিও দেখার জন্য ইন্টারেস্টেড নাহ।তোরা তো মহিলা ভক্ত ছোট বেলা থেকেই।

–তার মানে বলতে চাইছেন আমরা ইন্টারেস্টেড।

–সিওর!এতে কোনো সন্দেহ আছে নাকি।তুই কিন্তু মহিলাদের ই ডিজার্ভ করিস।

–এত বড় অপমান।বিভোর ভাই আমাকে সাহায্য করেন।আমার পক্ষ নিন।বিহান ভাই এর কোনো রিপোর্ট জানিনা বলে পঁচাতে পারিনা।দেখুন আমাদের কিভাবে বলছে।

–বিহান ভাই প্যান্টের পকেটে হাত গুজে বললেন,তুই কাকে দলে নিচ্ছিস।যার মেসেঞ্জারে পাশের বাসার বিবাহিত মহিলা এড থাকে।তুই আর বিভোর এক গোয়ালের গরু।ঠিক এ কারণেই দুজনের এত ভাব।এই নিয়ে মেয়ে ভেবে কতবার বিবাহিত মহিলাদের প্রপোজ করেছিস ভেবে বল।

–মেহু আপু হেসে বললো,আমার বিবাহিত বান্ধবীকে বিভোর ভাই একবার প্রপোজ করেছিলো।যদিও তাকে দেখে বোঝা যায় না সে বিবাহিত।

–রিয়া বললো,আসলেই নাকি।

–তিয়াস ভাই বললেন,আসলেই কি পাশের বাসার আন্টির সাথে বিভোর ভাই এর রিলেশন ছিলো রিয়া।বিলিভ মি!রাতের পর রাত ভিডিও কলে কথা হয়েছে,মেসেঞ্জারে ভিডিও দিয়েছে বুঝছিস না।

–বিহান বললেন,হ্যাঁ তিয়াস আর বিভোর মনোযোগ দিয়ে দেখতো সেগুলা।কজ ওদের ফিউচার বউ ওমন ই হবে।

–বিভোর ভাই বললেন,আরে ভাই সে তো তার করা টিকটক ভিডিও দিতো।পুরা কথা শেষ করতেই দিলিনা।আর রিয়ার কাছে আমাকে মোটেও কালারিং করবি না।

–রিয়া বেশ ক্ষেপে গিয়েছে বিভোর ভাই এর সাথে কথা বলছেনা।বিভোর ভাই অনেক চেষ্টার পরেও কথা বলতে পারলো না।
বিভোর ভাই রিয়ার পায়ের উপর এক পা তুলে অন্য দিকে তাকিয়ে আছেন।রিয়া পা সরিয়ে নিতেই বিভোর ভাই হাত চেপে ধরলেন।

–আয়রা বলে উঠলো, ওহ মাই গড!আপুর পায়ের উপর বিভোর ভাইয়ার পা।আপু ব্যাথা পাবে তো।

–বিভোর ভাই যেনো বিশাল এক হোচট খেলেন।নিমিষেই খানিক দূরে সরে গেলেন।কাশতে কাশতে দম নিতে পারছেন না।

–এইটুকু মেয়ে কিনা বলে ওহ মাই গড!ভাবা যায়।কি পাকা বাচ্চা।কি লজ্জটায় না দিলো।

এইদিকে সবাই গাল ভরে হেসে গড়াগড়ি খেলো।

–ক্রমশ রাত বেড়ে চলেছে।ছাদে আমাদের কাজিনদের আড্ডা বেড়েই চলেছে।বিভোর ভাই একটানা সরি বলেই চলেছে রিয়াকে। রিয়া মুডি মেয়ে কোনো পাত্তাই দিচ্ছে না।বিভোর ভাই অনেক গুলো লাল গোলাপ এই রাতেই কিনে এনেছেন,আমার কাছে দিলো রিয়াকে দিতে।সাথে বিশাল এক চিরকুট।আমি দুইটা গোলাপ নিয়ে কানের দুই পাশে গুজে ফোনে দেখছি আমাকে কেমন দেখায়।সাথে সাথে ক্যামেরার আলো পড়লো চোখে।তাকিয়ে দেখি বিহান আমার ছবি তুলছে।উনি কি এতক্ষণ আমায় দেখছিলেন।আমি কান থেকে ফুল নামিয়ে রিয়ার দিকে এগিয়ে যেতেই আমার কাছে এসে বললেন,তাকে এই নিশ্চুপ রাতের প্রকৃতির মাঝে লাল গোলাপে এতটা সুন্দর না লাগলেও পারতো।

কথাটা শুনে ভেতরে ভীষণ ভাল লাগা কাজ করলো।

সাথে সাথেই মেসেজ করেছেন মনে আছেতো যা চাইবো তাই দিতে হবে কিন্তু।

বার বার মনে করানোর কি আছে।কি এমন চাইবেন উনি।

চলবে…….