এক বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যা ২ পর্ব-৫২+৫৩

0
1436

#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা (সিজন ২)
৫২+৫৩
#WriterঃMousumi_Akter
কেমন যেনো ঝোড়ো হওয়ার মতো আগমণ হলো বিহানের।এই অসময়ে বিহান কে এক্সপেক্ট ই করিনি আমি।মামি ও বেশ অবাক হয়ে গেলো বিহান কে দেখে।

মামি আমাকে বললো,

“দিয়া তুই কি জানতি বিহান আসবে।”

“মাথা নাড়িয়ে না সূচক সম্মোধন জানালাম।”

ভীষণ কাঁন্না পাচ্ছে, সব তছনছ করে ফেলতে ইচ্ছা করছে।আমি ছাড়া আপনি কারো সাথে ভেবেই নিজের ভেতরে কয়েকশত বার মৃত্যু হয়েছে আমার।কষ্টের প্রহর যেনো কাটতেই চায়না।আমার ফোনের থেকেও কী অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিলো প্রেয়সীর ফোন। বিহান থেকে বিহান ভাই ই ভালো ছিলেন।বিহান ভাই থেকে বিহানে পরিণত হয়ে কেনো বদলে গেলেন আপনি।কিভাবে সহ্য করবো আমি আপনি আমাকে ভুলে অন্য কারো সাথে জীবন কাটাচ্ছেন।আপনার আমার যে অজস্র স্মৃতি।ঢুকরে ঢুকরে কাঁদছি আমি।এক মন বলছে বিহান এমন করতে পারেনা,অন্য মন বলছে হ্যাঁ করেছে।ফোন তো ওয়েটিং ই ছিলো।করবে তার দোষ কী?বিহান তোর থেকে প্রেয়সীকে বেশী গুরুত্ব দিয়েছে দিয়া,বিহানের সাথে এই জীবনে আর কথা বলিস না, বিহান কে ছেড়ে চলে যা।এত কষ্ট দিয়েছে যে তার সাথে কেনো থাকবি?দুই মন ভালো আর খারাপ নিয়ে ঝগড়া চালাচ্ছে আমার ভেতরে।

মামি উঠানে এগিয়ে গিয়ে বললো,

“তোরা আজ ই আসবি আমাদের জানাবি না।”

“বিহান বললো,দিয়া কোথায় আম্মু?দিয়া ভালো আছে আম্মু,দিয়া কি ও বাড়িতে চলে গিয়েছে,দিয়া ঠিক আছে।”

উনার কন্ঠে যেনো কষ্ট ভীষণ চাপা কষ্ট।কিন্তু কিসের কষ্ট।সামনে এলেই কেমন যেনো সব নেগেটিভ ভাবনা দূর করে দেন।ছিঃমামি কি ভাববে। এই প্রথমবার বিহান এসে মামির আগে আমার কথা জিজ্ঞেস করলো।ওর কি সব লজ্জা হাওয়ায় উড়ে গিয়েছে।মামির তো মন খারাপ হবে।

‘মামি বললো,দিয়ার শরীর মনে হচ্ছে দুপুর থেকে খারাপ।বললো মাথায় পেইন হচ্ছে।ওষুধ তো দিয়েছিলাম খেয়েছে মনে হয়।কিন্তু তুই হঠাত এলি যে।’

,ইমারজেন্সি প্রয়োজন ছিলো আম্মু।আমি অনেক ক্লান্ত,উপরে যাচ্ছি।দিয়া উপরে না থাকলে প্লিজ পাঠিয়ে দাও।’

বিহানের গায়ে কালো জিন্স, কালো শার্ট গায়ে সাদা এপ্রোণ।কালোর উপর সাদা এপ্রোনে ভীষণ সুন্দর লাগছে বিহান কে।চোখ মুখে ভীষণ মলিনতা।যেনো কয়েক জন্মের কষ্ট ওর মনে।আমি বারান্দায় এক কোণে অন্ধকারে গুটিসুটি মেরে দাঁড়িয়ে রইলাম।এই প্রথমবার অনুভব করলাম,ভালবাসার মানুষ অন্যর সাথে কথা বললে কতটা কষ্ট হয়।

“মামি বললো,বিভোর তোর ভাইয়ের সমস্যা কি?ভাবসাব তো ভালো মনে হচ্ছে না।হঠাত কি হলো।”

“বিভোর ভাই বললেন,কাকিমা আজ তো আসার কথা নয়।বিহান কে দেখলাম ডিউটি থেকে এসে কাউন্টারে ফোন করলো টিকিট পেতে সন্ধ্যা হবে তাই আমাকে বললো বাড়িতে যাবি?না গেলে থাক তুই কাল আসিস।আমি এখন যাচ্ছি।”

“আমার কাছে ব্যাপার টা বেশ সন্দেহের মনে হলো।কারণ গায়ের এপ্রোণ খোলার ও সময় নেই বিহানের।আমি বললাম,সন্ধ্যায় একসাথেই যাবো বাসের টিকিট কর দুইটা।”

“বাট বিহান বললো,ততক্ষণে অনেক লেট হয়ে যাবে।সন্ধ্যা মানে ৬ ঘন্টার তফাত।সন্ধ্যায় রওনা হলে রাত একটা বাজবে।ততক্ষণে অনেক লেট হয়ে যাবে আমাকে যেতে হবে মানে যেতেই হবে।আই নিড টু গো নড়াইল।”

“বুঝলাম না ওর কিসের এত প্রয়োজন ছিলো, আমাকে তো বলেই নি।সারারাস্তা একটা কথা ও বলে নি।যে দ্রুত গতিতে বাইক চালাচ্ছিলো কি হতে আজ কি হয়ে যেতো তার ঠিক নেই।আমি ওর এইভাবে বাইক চালাতে দেখে নিজে ড্রাইভ করেছি সারারাস্তা।আমি তো ভয় পেয়ে গেছিলাম কাকিমা তোমার ছেলের বাইকের গতি দেখে।মনে হচ্ছিলো উড়ে এসে নড়াইল পৌছাতে পারলেই ভালো হয়।”

“দিয়ার সাথে তো ঝগড়া হয়েছে বলে মনে হচ্ছে না।হতেও পারে দুপুর থেকে দিয়াকেও অন্যরকম মনে হচ্ছে।”

“বিহান এসে গিয়েছে সব ঠিক হয়ে যাবে, ডোন্ট ওরি কাকিমা।”

আধাঘন্টা হয়ে গিয়েছে বিহান উপরে গিয়েছে আমি বারান্দার এক কোনে দাঁড়িয়ে ভেবেই যাচ্ছি এইভাবে বাইক চালিয়ে কেউ আসে,যদি কিছু হয়ে যেতো।ভুল নিজে করলেও রাগ দেখাবে, আমার হলেও রাগ দেখাবে।যা ইচ্ছা করুক, আই ডোন্ট কেয়ার।আমাকে এখন ভুল বুঝানোর চেষ্টা করবে।বিভিন্ন অজুহাত দেখাবে এই সেই কারনে কথা বলেছিলাম প্রেয়সীর সাথে।

“এর ই মাঝে মামি এসে বললো,দিয়া তুই এখানে কেনো?উপরে যাস নি।”

“না।”

“কেনো?.”

“এমনি।”

“আমি রান্না করছি তুই যা এক্ষুণি যা,অতদূর থেকে এসেছে, কিছু লাগে কিনা দেখ যা গিয়ে।”

মামির জোরাজোরিতে নিজে রুমে যেতে বাধ্য হলাম।মনে মনে ভেবেই নিয়েছি ব্যাগ গুছিয়ে আম্মুদের বাসায় চলে যাবো।

দরজায় উঁকি মেরে দেখি,বিহানের হাতে আমার ফোন।এক নজরে ফোন দেখছে।কি দেখছে আমার ফোনে।উনি কি আমার ফোনে অটো রেকর্ড অন করে গেছিলেন।আমার আর প্রেয়সীর ফোনালাম শুনছেন আর ক্রমশ চোখ দুটো হিংস্র হয়ে উঠছে উনার।কথোপকথন যত এগোচ্ছে উনি ততটায় রেগে যাচ্ছেন।চোখ দুটো যেনো লাল রক্তজবার ন্যায় রুপ ধারণ করছে।উনি যে মারাত্মক রেগে গিয়েছেন সেটা উনার চোখ মুখে স্পষ্ট ক্লিয়ার।নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে খাটে খুব জোরে ঘুষি মারলেন,কোনায় লেগে হাত খানিক টা ছুলে রক্ত গড়িয়ে পড়লো।সেদিকে খেয়াল নেই উনার।

নিজের পকেট থেকে ফোন বের করে,কোথায় একটা কল দিলেন।

“জিসান দিয়ার নাম্বার প্রেয়সীকে দিয়েছিস কেনো ড্যামেড?আই নো তুই ছাড়া কেউ দেয় নি।বিকজ একমাত্র তোর কাছেই দিয়ার নাম্বার আছে।কারণ তোর দোকান থেকেই দিয়ার নাম্বারে বিকাশ করেছিলাম আমি টাকা।ফ্লেক্সি ও তোর দোকান থেকে দেওয়া হয় প্রায় সময়।”

“বিহান আমি প্রেয়সী কে অনেকবার বুঝাচ্ছিলাম যে তুই বিবাহিত আমরা ফ্রেন্ডসার্কাল সবাই জানি।দিয়া আর তোর ভালবাসার কথা বলেছি অনেক বুঝিয়েছি সে বলে আমরা নাকি মিথ্যা বলছি।তোর ওয়াইফ এর সাথে কথা না হলে সে মানবে?”

“হু কেয়ার প্রেয়সী?তুই জানিস না দিয়ার জন্য কত বড় প্রব্লেম এর নাম প্রেয়সী।আমার পারসোনাল লাইফ কি কোনো প্রপার্টির দলিল নাকি কোনো চুক্তিনামা যে তার প্রমাণ দেখাতে হবে।আমি বিবাহিত প্রেয়সী বিলিভ করুক না করুক আই ডোন্ট কেয়ার।আমার ব্যাক্তিগত জীবন নিয়ে অন্যর খুব বেশী ইন্টারেস্ট, কিওরিসিটি আমার জাস্ট বিরক্ত লাগে।”

“আসলে বিহান প্রেয়সী এমন ভাবে বলছিলো।”

“আমি বলেছিলাম কি দিয়ার নাম্বার দিতে।আমি যে এতবার নিষেধ করেছিলাম দিয়ার নাম্বার না দিতে আমার থেকে কি প্রেয়সীর কথা বেশী গুরুত্বপূর্ণ ছিলো তোর কাছে।তুই কারো পারসোনাল নাম্বার এইভাবে অন্য কাউকে দিয়ে দিবি।আমার ওয়াইফ এর নাম্বার অন্যকাউকে দিয়ে দিবি আমাকে একবার বলবি না।”

“সরি ভাই,অনেক বড় ভুল হয়ে গিয়েছে।”

“হেল ইওর সরি ড্যামেড।দিয়া ছোট মানুষ, আমাকে এখন কি মারাত্মক ভুল টায় না বুঝেছে,এই জীবন কেটে যাবে ওর ভুল ভাঙাতে আমার।মাত্র ঊনিশ বছর বয়স দিয়ার,ওর মনে এত জটিলতা বা কোনো প্যাচ নেই।বকলে কাঁদে,মন খারাপ হলে কথা বলে না,মন ভাল হলে হেসে খেলে ঘুরে বেড়ায়।দিয়া কি প্রেয়সীর মতো মেয়ের কথার জাল বুঝবে।সেই ক্ষমতা দিয়ার নেই।সামনে দিয়ার এডমিশন, তোর আর প্রেয়সীর এই চক্করে যদি দিয়া ডিএমসি তে চান্স না পায় আমি কি ভয়ানক খারাপ হতে পারি ভাবতেও পারবিনা। ”

“প্রেয়সী কি বলেছে ভাবিকে?”

“ভয়েজ সেন্ড করছি শুনে নিস।”

“তুই তো রেগে আছিস। তাহলে আমাদের ট্যুরের কি হবে?”

“এখন তোর ট্যুরের কথা মনে হচ্ছে।আমার সংসার নষ্ট করে ট্যুর দিতে মন চাইছে তোর।দিয়া আমার সব জিসান।দিয়া কষ্ট পেলে পৃথিবীর সব ধ্বংস করতে মনে চায় আমার।দিয়ার মতো মেয়ে আমার সামনে আসলে হাঁটু কাঁপতো যার সে আমাকে আজ উল্টা পাল্টা মেসেজ করেছে।একটুও দোষ দিয়ার নেই এখানে।দোষ আমার তোর মতো বন্ধু আছে। বন্ধুত্ব রাখার ই ইচ্ছা নেই সেখানে ট্যুর। ”

উনি আবার ও কোথাও কল দিলেন।

“প্রেয়সী”

“বিহান তুই আমায় ফোন দিয়েছিস এখন।সিরিয়াসলি।”

“নেক্সট উইক তোর বাসায় আসবো,আপত্তি আছে কোনো।”

“তুই আসবি এতে আপত্তির কি আছে।এই প্রথমবার তুই আমার বাড়ি আসবি।কিন্তু খুব জানতে ইচ্ছা করছে কেনো বিহান।”

“আমাদের বিয়ের কথা বলতে।”

“তোর আর আমার।সিরিয়াসলি বিহান।”

–উনি বাকা হেসে ফোনটা কেটে বিছানায় ছুড়ে মারলেন।চিন্তায় মাথার চুলে হাত চালাতে লাগলেন।ঘন ঘন নিঃশ্বাস নিচ্ছেন উনি।আমার পায়ের নিচে মাটি ক্রমস সরে যাচ্ছে।প্রেয়সীর কথা বিশ্বাস হচ্ছিলো না কিন্তু বিহান এসব কি বললো।নেক্সট উইক আমার এডমিশন আর উনি নেক্সট উইকেই উনার আর প্রেয়সীর বিয়ের কথা বলতে যাচ্ছেন।উনি ফোনটা কাটতেই আমি রুমে প্রবেশ করে ব্যাগ গোছাতে শুরু করলাম।উনার বন্ধু নাম্বার দিয়েছে তাই বকছে।নিজে যে প্রেয়সীর সাথে কথা বলেছে সেটা।আর বিয়ের কথা ও বলতে যাবেন।এক মুহুর্তে ওর সাথে আর থাকবো না।

–আমার দিকে পূর্ণ দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে দেখছেন আমি কি করছি।উনি আমার হাত থেকে ব্যাগ টা বারান্দায় ছুড়ে ফেলে বললেন,কি সমস্যা দিয়া তোমার?এখন কি ব্যাগ গোছানোর সময়।

আমি কথা বললাম না কোনো।কারণ আমার কাঁন্না পাচ্ছে ভীষণ। কি কথা বলবো যেটায় বলতে যাবো কিছুই বলতে পারবো না কেঁদে দিবো।

–কোথাও যাওয়ার প্লান আছে নাকি? কই আমাকে তো বললে না।নাকি বুড়ো হয়ে যাচ্ছি বলে আমাকে রেখেই ঘুরাঘুরির প্লান করছো।

আমি তাও কোনো উত্তর দিলাম না।উনি রেগে আছেন ভীষণ ভাবে।তবে আমার সাথে ঠান্ডা মাথায় কথা বলার চেষ্টা করছেন।

–উনি আবার বললেন,কতবার ফোন দিয়েছি ফোন ই যদি না তুলবে তাহলে ফোন ইউজ করার প্রয়োজন কী দিয়া।

–আমি বাইরে থেকে ব্যাগ টা নিয়ে এসে আবার কাপড় গোছাতে শুরু করলাম।আমার ফোন উনার হাতে।উনার হাত থেকে ফোন টা কেড়ে নিয়ে রিয়াকে ফোন করার জন্য রিয়ার নাম্বার ডায়াল করতেই উনি আমার হাত থেকে ফোন কেড়ে নিলেন।

–আমি এবার বললাম আমার ফোন টা দিলে খুশি হতাম।ভাইয়াকে বা রিয়াকে রাস্তায় এগিয়ে আসতে বলবো।

–ও বাড়িতে যাবে। আমাকে বললেই হতো,একসাথেই যাবো চলো।

–নো নিড।

–উফফ বউ বেশী শিক্ষিত হলে সমস্যা।। ইংলিশে গালি দিলেও বুঝবো না।

–আপনাকে গালি দেওয়া হয় নি।নো নিড বলেছি।

–কিসের নিড আছে আর কিসের নেই আমি ভাল বুঝবো।চলো এক সাথে যাবো।

–কেনো জোর করছেন আপনি?সারাজীবন কী আপনার জোর ই চলবে।

–দিয়া চলো এক সাথে যায়।তোমার সাথে কথা আছে আমার,যেতে যেতে বলবো।আমি বুঝতে পারছি তুমি রেগে আছো।তোমার রাগ করাটা স্বাভাবিক।আমার কথা শুনলে তুমি বুঝতে পারবে।

–আপনাকে যেতে হবে না,আপনার সাথে আমি কোথাও যেতে চাই না।এমন কি আপনার মতো বেঈমানের সাথে আমি থাকতেও চাইনা।আমি আপনার যোগ্য না তাইনা?এইজন্য আমাকে আড়াল করে ঘন্টার পর ঘন্টা ফোনে বিজি থাকতে হয় আপনাকে।আমাকে বললেই হতো।আমি নিজেই চলে যেতাম।কেনো আপনি আমাকে এইভাবে কষ্ট দিলেন।ভেতরে টুকরো টুকরো হয়ে গিয়েছে মন,ব্যাথায় জর্জরিত হৃদয়।আপনি আমাকে ছোট পেয়ে দিনের পর দিন ঠকিয়ে যাচ্ছেন।আর একদিন এক সেকেন্ড ও আপনার সাথে নয়।কথা গুলো বলেই কেঁদে দিলাম।ব্যাগ হাতে নিয়ে বেরিয়ে যেতেই উনি আমার হাত ভীষণ জোরে চেপে ধরলেন।এত জোরে চেপে ধরলেন মনে হচ্ছে রক্তচলাচল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।উনি সাথে সাথে দরজা লাগিয়ে দিলেন কাপড়ের ব্যাগ বাইরে ফেলে দিলেন।দরজার সাথে শক্ত ভাবে চেপে ধরলেন দুই বাহু।ব্যাথায় অবস হয়ে যাচ্ছি আমি।উনার মুখ যেনো শুকিয়ে এসছে আমার কথা শুনে।উনি দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,

“এসব কি বলছিস তুই দিয়া?তুই আমার সাথে থাকতে চাস না।আমি বেঈমান,আমি তোকে ঠকাচ্ছি।আমাকে ছেড়ে চলে যেতে চাস তুই।কিন্তু কেনো দিয়া আমার অপরাধ কী?”

“অপরাধ আপনার না,অপরাধ আমার কারণ আমি আপনার যোগ্য না তাই?”

“দিয়া ডোন্ট টক ননসেন্স।আমার চোখের দিকে দেখ কোনো বেঈমানি আছে এই চোখে।আমার সারাজীবনের ভালবাসা একটা ফোন কলে মিথ্যা হয়ে গেলো।সত্যর থেকে কি মিথ্যার শক্তি এত বেশী দিয়া আগে তো জানতাম না।”

“আমি আপনার কোনো কথা শুনতে চাইনা। ছাড়ুন আমার লাগছে খুব।”

“আমার মনে তোর কথা যতটা লেগেছে তার থেকে কি বেশী লাগছে।”

“আমি ছাড়া অন্য মেয়ের সাথে আপনি সময় কাটান সেই ব্যাথার থেকে কী বেশী লেগেছে আপনার মনে।”

“–দিয়া শান্ত হ প্লিজ।আমার কথা শোন,রাগ অভিমান সব ঠিক হয়ে যাবে।আমাকে কিছু বলার সুযোগ দে প্লিজ।আমার ধৈর্যর সীমা অতিক্রম হয়ে যাচ্ছে।পানি কেনো তোর চোখে।নিষেধ করেছি না কাঁদবি না।”

“আমার কোনো রাগ অভিমান নেই?আমার ফোন দিন আমি ভাইয়াকে ফোন দিবো?”

“কাউকে ফোন দিতে হবে না।”

“আমার পারসোনাল ম্যাটার সেটা।”

“কিসের পারসোনাল ম্যাটার,তুই আর তোর সব কিছুই আমার,আলাদা ভাবে পারসোনাল হলো কবে।”

“ছাড়ুন আমায় প্লিজ।জাস্ট অসহ্য লাগছে আমার।”

ওকে ছেড়ে দিচ্ছি, জাস্ট পাঁচ মিনিট।উনি আমার হাত ছেড়ে দিলেন।এদিক ওদিক খুজে উনার ব্যাগ থেকে প্যাড আর পেন বের করে কিছু লিখছেন।উনি আমায় যখন ধরেছিলেন আমার হাত গরমে পুড়ে যাচ্ছিলো।এত তাপ কেনো উনার শরীরে।উনার কি জ্বর।এত তাপমাত্রা নিয়ে বাইক চালিয়ে আসছিলেন ঢাকা থেকে।চোখ মুখ ভীষণ টলমল করছে উনার।উনি প্যাডে কিছু লিখে আমার দিকে ছুড়ে মেরে বেরিয়ে গেলেন ছাদের দিকে।

কাগজ টা হাতে নিয়ে পড়তে শুরু করে চোখ দিয়ে অঝরে পানি পড়ছে আমার।

“দিয়া একটা কথা তোমাকে বলা হয়নি, ভেবেছিলাম তোমার এডমিশন শেষ হলে বলবো।আমাদের মাঝে এমন এক ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে তোমাকে এখন বলতেই আমাকে। তোমার বাবার শরীর দু’মাস যাবত খারাপ।হার্টের যে প্রব্লেম টা হয়েছিলো সেটা এখন অন্যদিকে দিকে গিয়েছে।তোমার বাবার হার্টের সার্জারী আগামি মাসে করতে হবে।ফুফার হার্টের অবস্থা খুব একটা ভাল নয়।আমি দুপুর বারোটা থেকে তোমার আম্মুর সাথে কথা বলছিলাম তোমার বাবার ব্যাপার টা নিয়েই।আমার ফোন বিছানায় আছে চেক করে দেখো তোমার কল দেওয়ার টাইমে তোমার আম্মুর সাথেই কথা বলছিলাম।তুমি আর তোমার পরিবার কোনটায় কম গুরুত্বপূর্ণ নয় আমার কাছে।তোমার বাবাকে সুস্থ করাটা অনেক জরুরী আমার কাছে।ভেবেছিলাম ফোন কেটে তোমাকে জানাবো যে ফুপ্পির সাথে কথা বলছিলাম।কিন্তু তার আগেই তোমার ফোন ওয়েটিং।অত টাইম ওয়েটিং দেখে সন্দেহ হচ্ছিলো।তারপর ই তোমার মেসেজ দেখে বুঝতে পারলাম কিছু গড়মিল হয়েছে।আমার পিচ্চির ছোট মাথায় কেউ উল্টা পাল্টা কিছু ঢুকিয়েছে।ঠিক তখন ই ডিউটি থেকে পাগলের মতো ছুটে এসেছি।এসেই আগে তোমার ফোন চেক করেছি কারণ আমি জানি ফোন চেক করলেই আমি বুঝতে পারবো কি হয়েছে।তুমি ভাবলে কিভাবে দিয়া আমি কোনো মেয়ের সাথে দীর্ঘ টাইম ফোনে কথা বলবো।তোমার সামনেও না তোমার অজান্তেও না কখনোই তোমাকে আমি ঠকাতে পারিনা দিয়া।প্রেয়সী তোমায় যা বলেছে সব মিথ্যা বলেছে।আজ কতদিন পর প্রেয়সীর নাম্বারে কল দিয়েছি কল হিস্টোরী চেক করলেই জানতে পারবে।তুমি কষ্ট পেয়েছো,ভীষণ কষ্ট পেয়েছো এর জন্য দোষী আমি।কষ্ট তুমি পেয়েছো মনের ভেতরে অশান্তি হচ্ছে আমার,ছারখার হয়ে যাচ্ছে পুড়ে হৃদয়।তুমি আজ রাগ করেছো,আমাকে রাগে অভিমানে যা কিছু বলেছো ট্রাস্ট মি দিয়া আমি একটু ও রাগ করি নি,কষ্ট ও পায় নি।তোমার এই রাগ অভিমান কে সম্মান শ্রদ্ধা জানাই।আমার প্রতি গভীর ভালবাসার প্রকাশ ছিলো এটা তোমার।আমার রাগ,ঘৃণা হচ্ছে নিজের প্রতি,তুমি কষ্ট পেয়েছো,কেঁদেছো ভেবেই নিজেকে শেষ করতে মন চাচ্ছে আমার।তোমাকে ঠকানোর আগে মরণ হউক আমার।প্রেয়সী আমার ক্লাসমেট দিয়া।মেডিকেল কলেজের প্রথম দিন থেকেই আমার পেছনে লেগে আছে কিন্তু আমি কখনো পাত্তা দেয় নি।আমি প্রথম ইয়ার থেকে বলেছি আমার জিএফ আছে। বিয়ের পরে বলেছি আমি বিয়ে করেছি।আমি কিছুই লুকায় নি।প্রেয়সীর মতো তো কত মেয়েই আছে তারা আমাকে চাই আমি তো কখনো কাউকে পাত্তা দেয় নি।ঢাকা শহরের মেয়েরা নড়াইলের সহজ সরল দিয়া হয় না সবাই।এরা অন্যর জিনিস কেড়ে নিতে পারলে দুবার ভাবেনা।প্রেয়সীর মতো মেয়েরা এমন ই হয় দিয়া।আমার ফ্রেন্ডরা জানে আমি বিবাহিত প্রেয়সী সেখান থেকেই খোজ নিয়ে তোমার নাম্বার নিয়েছে।আগামি সপ্তাহে ঢাকা নিয়ে এমনিতেই সবার সাথে পরিচয় করাতাম তার আগেই এতকিছু হয়ে যাবে বুঝতে পারিনি।সরি দিয়া, দিয়া।আমি ভীষণ রুড বিহ্যাভ করে ফেলেছি তোমার সাথে।তুমি চলে যাবে শুনে মাথা ঠিক ছিলো না।একটা কথা মাথায় রেখো দিয়া কতদিন বাঁচবো জানিনা তবে যতদিন বাঁচবো শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগের আগে তোমাকেই ভালবেসে যাবো।তোমাতেই শুরু তোমাতেই শেষ শ্যামাপাখি।”

চলবে,,