#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা (সিজন২)
৬৭.
#WriterঃMousumi_Akter
শান্ত নিরিবিলি পরিবেশ রুমময় জুড়ে।দরজার সিটকিনী আটকে দিলে বাইরের কোনো সাউন্ড ভেতর পর্যন্ত প্রবেশ করে না।পাশের রুমে দুজন ভালবাসার মানুষের চার হাত এক হয়েছে।ভালবাসার অন্য জগতে পাড়ি দিয়েছে তারা।জানালার বাইরে দিয়ে বড় ঝাউ গাছটা দেখা যাচ্ছে।এই গাছের বয়স ৫০ বছর হবে আনুমানিক।পুরা গাছে লাইটিং অসম্ভব সুন্দর লাগছে নজর কাড়ার মতো দৃশ্য। পুরা ফ্ল্যাট এর ওয়াল জুড়ে ডেকরেশন এর কোনো কমতি নেই।রুম জুড়ে লাল, নীল, কৃত্তিম আলো জলজল করছে।তাজা গোলাপের সুবাস ঘর জুড়ে ময়ময় করছে।মিষ্টি সুঘ্রাণে ভরপুর রুম।বেডের যে সাইড টা উঁচু তার পুরাটায় তাজাফুলে মোড়ানো। দেখার মতো সুন্দর সে অপরূপ দৃশ্য।টেবিলে রাখা ফুলদানিতে কতগুলো তাজা গোলাপ।গোলাপের বাসরে বেডের এক কোণে চুপটি মেরে বসে আছি আমি।একদম বাকরুদ্ধ কেননা এতকিছু উনি কখন করলেন আমি বুঝে উঠতে পারিনি।বেডের উপর দুইটা বক্স রাখা একটা যে শাড়ির বক্স সেটা বোঝায় যাচ্ছে, অপরটা কি সেটা জানিনা।মনে হচ্ছে গহনা হবে।উনি ওয়াশ রুম থেকে সিম্পল একটা সাদা পাঞ্জাবী পরে বাইরে এলেন।ওয়াশ রুমে থেকে বেরিয়ে সরাসরি দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন আমার দিকে।আমি বিমোহিত হয়ে তাকিয়ে আছি উনার দিকে।ফর্সা শরীরে সাদা পাঞ্জাবীতে আরো সুন্দর লাগছে উনাকে।জীবনে কিছু পাই আর না পাই মনের মতো একজন জীবন সঙ্গী পেয়েছি।উনি পাঞ্জাবীর হাতা গুটিয়ে আমার কাছাকাছি এলেন।আমার মুখে কোনো কথা নেই কেনো জানিনা ভীষণ লজ্জা লাগছে।আমার এমন অনুভূতি হচ্ছে আজ ই নতুন বিয়ে হয়েছে আমার।উনি আমার সোজাসুজি বসলেন। আমার দিকে চোখ তুলে তাকিয়ে আমাকে ডাকলেন,
“দিয়া”
উনার মুখে দিয়া ডাকটা ভীষণ মিষ্টি লাগে আমার কাছে।আমার মনে দোলা দেয় অন্য এক ভাললাগার শিহরণ।আমি চোখ তুলে তাকালাম উনার দিকে।আমার তাকানোর ভঙ্গীতে উনি বুঝে নিলেন উনার কথা শোনার জন্য ই তাকিয়েছি আমি।আমার চোখের চাহনি উনার ডাকের সায় দিয়েছে।উনি আমার দুহাত উনার দু’হাতের মুঠোয় ধরে বললেন,
“তুমি খুশি হয়েছো দিয়া।তোমার একটুখানি খুশির জন্য আমি সব কিছু করতে পারি।তুমি খুশি থাকলেই যেনো আমার পুরো পৃথিবী খুশি থাকে।আমি সারাক্ষণ ডিউটিতে বসে ভাবতে থাকি আমি ঠিক কি করলে তোমাকে ভীষণ খুশি দেখতে পাবো।যখন রাস্তায় বেরোয় শপিং মলে চোখ গেলে সুন্দর কিছু দেখলেই মনে হয় তোমাকে মানাবে খুব।এই সুন্দর পোশাক টা আমার চোখে দিয়ার জন্য ই পারফেক্ট।এভাবেই প্রতিটা ভাবনাতে তুমি থাকো আমার।আমি জানি আমি সবটা প্রকাশ করতে পারিনা।শুধু রাগ ই প্রকাশ করতে পারি ভাল ভাবে।”
উনার মুখের অদলে তাকিয়ে দেখি মানুষটার চোখ মুখে আমার জন্য গভীর ভালবাসার আকুতি।ভীষণ জানতে ইচ্ছা হলো আমায় কেনো এতটা ভালবাসেন উনি।উনার দিকে তাকিয়ে প্রশ্নটা করলাম,
“আপনি আমাকে এত ভালবাসেন কেনো?
এই প্রশ্নটা আমার মনে সব সময় ঘুরে বেড়ায়।কখনো উত্তর পায় নি আমি।”
উনি একটু হাসলেন।খানিক টা দম নিয়ে বললেন,
“এত কঠিন প্রশ্ন করোনা দিয়া।আমার জীবনে এমন কোনো প্রশ্ন নেই যার উত্তর অজানা।শুধু আমার মন কেনো শ্যামাপাখিতে আসক্ত এটাই অজানা।বড্ড কঠিন এই প্রশ্নের উত্তর। ভালবাসার প্রশ্ন গুলো যতটা কঠিন ঠিক ততটায় সহজ।”
বুঝতে পারলাম উনি এর উত্তর দিতে পারবেন না।কারণ আমি নিজেই জানিনা আমি বা কেনো উনাকে এতটা ভালবাসি।তাই অন্যদিকে গেলাম কথা ঘুরিয়ে বললাম,
“হঠাত এইভাবে ঘর সাজালেন কেনো এত টাকা নষ্ট করে।আর এই নতুন শাড়ি গহনা কেনো?আমার কি বিয়ে আজ ডাক্তার বাবু।”
উনি আবার হেসে বললেন,
“তুমি কি ইনোসেন্ট ভাবে কথা বলো দিয়া।এটাও একটা কারণ ভালবাসার জন্য।আজ কত তারিখ বলোতো।”
“কত তারিখ?”
“এত ইমপর্টেন্ট দিন টা ভুলে গেলে। এই দিনে না তুমি আমার জীবনে এসেছিলে মিস দিয়া থেকে মিসেস বিহান হয়েছিলে।ভেবেই রাগ হচ্ছে তুমি ভুলে গিয়েছো।এইভাবে চলতে থাকলে কবে যে পিচ্চিটা আমায় ভুলে যাবে।”
“ওহ মাই গড!আমি তো এত ঝামেলায় ভুলেই গেছিলাম।আমি ভেবেছিলাম এবার আপনাকে ভীষণ সারপ্রাইজ দিবো।এক প্রকার নাকে কেঁদেই বললাম এখন আমি কিভাবে সারপ্রাইজ দিবো আপনাকে।আর আমি ভুলবো সেই সাহস আমার আছে বলুন তো।এই পিচ্চি ডাকে কত আবেগ জড়িয়ে জানেন। এই ডাক শোনার লোভে হলেও আপনাকে ভুলতে পারবো না।”
উনি আমাকে বললেন,
“কিন্তু আমি ভুলি নি।আমার লাইফের সব থেকে বেষ্ট গিফট পাওয়া দিনটার কথা কিভাবে ভুলি।সারপ্রাইজ দেওয়া তো চলে যায় নি দিয়া তুমি চাইলে আমাকে আনএক্সপেক্টেড আদর দিয়ে সারপ্রাইজড করে দিতে পারো নিমিষেই।”
দুষ্টু হাসি দিয়ে কথাটা বললেন উনি।আদর নামক জিনিস টা এড়িয়ে যেতেই বললাম,
“তাহলে বিভোর ভাই রিয়া-আর আমাদের ম্যারেজ ডে এক সাথে পালন করা যাবে কি বলেন।আগামি বছর ইয়া ধুমধাম করে পালন করবো।”
উনি আমার কথা শুনে আবার ও নিঃশব্দে হাসলেন।আবার ও বললাম,
“এত টাকা নষ্ট করার কি প্রয়োজন ছিলো বলুন তো।এসব না করলেও হতো কিন্তু।আম্মু আমায় বকে আমি নাকি আপনার টাকা নষ্ট করি শুধু।আমি নাকি প্রয়োজনের থেকে বেশী খরচ করি।মামি আর মামা নাকি আমায় আদরে বাদর করেছে।আমি কি বাদর আপনি বলুন তো।”
“আমি তো জানি আমার বউ টা পুরাই বাচ্চা একটা মেয়ে। অবুঝ বালিকা।রিয়ার শাড়ি গহনা, ফুলসজ্জার খাট দেখলে তার ও মনে চাইবে এসব কিন্তু মুখে বলবে না।তার এই না বলা চাহিদা টুকু বোঝার ক্ষমতা আছে আমার।আর এই টাকা দিয়ে কি হবে।যে টাকা আমার বউ এর মুখে হাসি ফোটাতে পারবে না।আমার সব পরিশ্রম তোমার জন্য তুমি কি বোঝোনা।”
“হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললআম,আপনি না।”
“উনি আমার হাত ধরে বললেন, কোনো কথা নয় একদম চুপ।আজ আমি তোমাকে আমার নিজের হাতে সাজাবো।একদম আমার মনের মতো করে।”
“আপনি সাজাবেন।”
“হ্যাঁ আমি সাজাবো এক মিনিট আমার প্রিয় গান টা প্লে করি।”
–আমারও পরাণো যাহা চাই, তুমি তাই,,,তুমি তাই গো,,,,
আমারও পরাণো যাহা চাই,,,
তোমা ছাড়া আর এই জগতে,,
মোর কেহ নাই,,কিছু নাই গো,,,,
আমারও পরাণো যাহা চাই,,,
তুমি সুখও যদি নাহি পাও,,,,
যাও সুখেরও সন্ধানে যাও,,(২)
আমি তোমারে পেয়েছি,হৃদয়ো মাঝে,,
আর কিছু নাহি চাই গো,,,
আমারও পরাণো যাহা চাই,,
তুমি তাই,তুমি তাই গো,,
আমারও পরাণো যাহা চাই,,
আমি তোমারও বিরহে রহিবো বিলীন,
তোমাতে করিবো বাস,,,,
দীর্ঘ দিবসো,দীর্ঘ রজনী, দীর্ঘ বরোষমাস,,,,(২)
যদি আরও কারে ভালোবাসো,,
যদি আর ফিরে নাহি আসো,,(২)
তবে তুমি যাহা চাও,তাই যেনো পাও,,
আমি যতো দুঃখ পাই গো,,,,
আমারও পরাণো যাহা চাই,,
তুমি তাই,তুমি তাই গো,,,,,
আমারও পরাণো যাহা চাই,,,,
–মিনি বক্সে হালকা সাউন্ডে গান বাজছে।গান টা পরিবেশের সাথে মানিয়েছে বেশ।আমি এক পলকে তাকিয়ে আছি মানুষ টার দিকে।কত নিঁখুত চিন্তা ভাবনার মানুষ। কিভাবে পারে সব কিছু এইভাবে স্পেশাল ভাবে ভাবতে।জীবনের কোন পূণ্যর ফলে তাকে পেয়েছি জানিনা।আয়নার সামনএ দাঁড়িয়ে আছি আমি, বিহান আমাকে তার নিজ হাতে সাজাচ্ছে।লেহেঙ্গা পরানো,নিজ হাতে বিয়ের সমস্ত গহনা সব পরালো।তার হাতে চোখে কাজল পরে যেনো চোখ জোড়া ধন্য হলো আমার।কোনো ছেলে বুঝি এই ভাবে কাজল পরাতে পারে।দু-হাত ভরে চুড়ি পরিয়ে দিলেন।মাথায় টিকলি বেঁধে দিতে দিতে বললেন,তাকে আজ মায়াবিনী লাগছে,তার মায়া টানছে আমায় খুব।সে এতটা সুন্দর কেনো?আমার চোখে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ নারী আমার বউ।আয়নায় তাকিয়ে দেখি আমাকে দেখতে হুবহু নতুন বউ এর মতো লাগছে।গান টা মনে হয় আমাদের দুজনের জন্য উপযুক্ত ছিলো এ সময়ে।বিহান আমায় বুকে টেনে নিয়ে কপালে চুমু দিয়ে ভালবাসার সুর তুললো।বিহানের বুকে মাথা দিয়ে মৌন রইলাম আমি।ওর হার্টবিট এর প্রতিটা ধ্বনিতে শুনছি দিয়া দিয়া আর দিয়া।আমার কথা বলার মতো কোনো ভাষা নেই মুখে।বিহানের স্পর্শের প্রতিটা স্পন্দনে ভালবাসার পরশ।ভালবাসার অতলে হারিয়ে যাওয়ারা আহবান করছিলো বিহান ওর আদর আর ভালবাসায়।গানের সুরে ছন্দে আনন্দে শুরু হলো দুজনের ভালবাসার একান্ত মুহুর্ত।নিজের ভার ওর উপর ছেড়ে দিলাম।ভালবাসাময় শুভ রাত্রীর শুভেচ্ছা জানালো ভালবাসারা। যার সাক্ষী এই রুমের চার দেওয়াল।
–পরের দিন ভোরে ঘুম ভেঙে গেলো আমার।ঘুম ভাঙতেই দেখি বিহান গোসল করে শুধু টাওয়াল পরে ফোনে কথা বলছে।মনে হচ্ছে খুব সিরিয়াস কোনো ইস্যু নিয়ে কথা বলছে।কিন্তু আমার কাছে এই মুহুর্তে সিরিয়াস ব্যাপার বলে মনে হচ্ছে বিহান কে ডিস্টার্ব করা।ভীষণ ডিস্টার্ব করতে ইচ্ছা করছে।বিহান খেয়াল করেনি আমি ঘুম থেকে উঠেছি।আস্তে করে উঠে গিয়ে বিহান কে পেছন থেকে গিয়ে জড়িয়ে ধরলাম।জড়িয়ে ধরেই শান্ত রইলাম না বিহানের পিঠে সুরসুরি দেওয়ার চেষ্টা করলাম।বিহান তাও ফোনে বিজি। বিহান কে খালি গায়ে দেখে তার ই সুযোগ নিলাম দুষ্টুমি খেলা করছিলো আমার মাথায় ভীষণ ভাবে।ক্যানো করছি তাও জানিনা।বিহানের উন্মুক্ত পিঠে কয়েক টা চুমু দিলাম বিহান কে আমার দিকে মনোযোগী হওয়ার জন্য কিন্তু ওর খেয়াল ফোনের দিকেই।আমি পেছন থেকে জড়িয়ে ধরায় আমার হাত বিহানের পেটে ওর নাভি বরাবর ছিলো।বিহান বার বার বিরক্ত হয়ে আমাকে সরানোর চেষ্টা করছে ও যত আমাকে সরানোর চেষ্টা করছে আমি ততই ওকে আষ্টে পিষ্টে জড়িয়ে ধরছি।কেনো জানিনা আমার ভীষণ ভাল লাগছে ওর সাথে এই দুষ্টমি করতে।
বিহান ফোন মিউট করে ধমকের সাথে চোয়াল শক্ত করে বললো,
“দিয়া ডোন্ট ডিস্টার্ব মি!”
আমি মুখ ভেঙচিয়ে বললাম,
“আমার হাব্বির সাথে যা ইচ্ছা তাই করবো আপনার কি আই নিড প্রচুর রোমাঞ্চ বুঝেছেন।”
উনি চোখে মুখে বিরক্ত নিয়ে বললেন,
“যাও গোসল করে পড়তে বসো এক্ষুণি।অনেক পড়া বাকি তোমার।আমার গুরুত্বপূর্ণ কল এসছে প্লিজ ডিস্টার্ব করো না।”
এটুকু বলেই উনি আবার ফোন আনমিউট করলেন।আমি এবার আরো ভয়ানক কাজ করলাম উনার নাভিতে আঙুল দিয়ে চিমটি দিতে লাগলাম।পুরা পেট আঙুল দিয়ে স্লাইড করছিলাম।বিহান আমার দিকে অগ্নি চোখে তাকিয়ে আমার এক হাত ধরে রাখলো শক্ত করে।বার বার অগ্নি চোখে তাকিয়ে আমাকে এলার্ট করছে।ওর তাকানোর মানে এটাই ফোন কাটলে তোমার খবর আছে।আমি বেশ বুঝতে পারলাম তবুও ভয় পাচ্ছিনা।দুই পায়ের দশ আঙুলে ভর দিয়ে বিহানের গলা জড়িয়ে ধরে ঝুলে পরলাম।বিহান এবার আরো বিরক্ত হয়ে হাঁটা দিলো।ভেবেছে আমি পড়ে যাবো কিন্তু আমি ঝুলেই রইলাম।আমি যেনো দোলনায় উঠেছি।আহা!ফিলিংস কি অসাধারণ আমার।বিহান এবার দাঁতে দাঁত চেপে কপালের চামড়া কয়েক টা ভাজ ফেলে বললো,
“প্রব্লেম কী দিয়া।যেগুলা করছো প্রস্তুত থাকো।কি যে করবোনা তোমার আজ।”
আমি এবার বিহানের টাওয়াল ধরে টান দিলাম।ইস আরেকটু হলে যাচ্ছিলো খুলে।বিহান কল ইউ লেটার বলেই ফোন কেটে দ্রুত টাওয়াল এর গিট ভালো ভাবে দিয়ে আমার দিকে তাকালো।কি ভয়ানক চাহনি তার।ফোন বিছানায় ছুড়ে ফেলে তাকিয়ে রইলো আমার দিকে।যে চাহনির মানে আমি এখন এতটায় বিরক্ত রাগে গিলে ফেললে শান্ত হতাম।এবার মাথা নিচু করে তাকিয়ে বললাম,
“সরি বকবেন না প্লিজ।আর এমন হবেনা।”
উনি আমার দিকে ধীরে ধীরে এগিয়ে এসে আমাকে ধাক্কা মেরে বিছানায় ফেলে দিয়ে আমার দিকে ঝুঁকে বললেন,
“লেটস স্টার্ট প্রচুর রোমাঞ্চ। আজ আমার ছুটি।আজ সারাদিন রোমাঞ্চ হবে।”
“ছুটি কখন নিলেন।”
“এখন মেসেজ করে জানিয়ে দিলাম যে আজ আমার ছুটি।”
“কারণ জানতে চায় নি, কেনো ছুটি নিলেন।”
উনি ভ্রু কপাল টান টান করে বললেন,
“হুম চেয়েছিলো।বলে দিয়েছি আমার বউ আজ রোমান্টিক মুডে আছে।বউ এর জন্য ছুটি নিলাম।একথা শুনে জানালো ভাবির রোমান্টিক মুডের জন্য আজ ছুটি মঞ্জুর। ”
“ছিঃছিঃ কি ভাববে তারা আমায়।আমি তো বিরক্ত করতে বলেছি।সত্যি বলিনি।”
“উনি হেসে আমার গালে চুমু দিয়ে বললেন,লেটস স্টার্ট রোমাঞ্চ।স্টার্ট ফার্স্ট মিসেস বিহান। ”
চলবে,,
#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা সিজন ২
৬৮+৬৯
#WriterঃMousumi_Akter
–বিয়ে নামক পবিত্র বন্ধণ না থাকলে হয়তো আজ ও ভালবাসা কি সেটা অজানাই থেকে যেতো আমার।স্বামি এমন এক ভালবাসার নাম যাকে ঘিরে থাকে এক পৃথিবী সুখ। জীবনের সব পাওয়া না পাওয়া গুলো তার বুকে মাথা রেখে বলা যায়।মা বাবাকে যেটা শেয়ার করা না যায় তার কাছে যায়।স্বামির যদি মনের মতো হয় এই সুন্দর পৃথিবীতে হাজার বছর বেঁচে থাকার প্রার্থনা করতে মন চাই।ঘুম থেকে উঠেই মনে পড়লো তার কথা।ফোন হাতে নিয়ে দেখি চার বার কল দিয়েছিলো।তার একটা ফোন কল আমার মুখে হাসি ফুটাতে যথেষ্ট।সূর্য হেলে গিয়েছে পশ্চিমাকাশে বিছানা ছেড়ে চট করে উঠলাম।বিহান আসার সময় হয়ে গিয়েছে।আজ বিহান দুপুরে খেতে আসে নি।একবারে সন্ধ্যায় আসবে।ওড়না বিছানা থেকে নিয়ে বাইরে গেলাম।গোধুলি লগ্নে হেলে যাওয়া সূর্যের মিষ্টি কিরণে বেলকণিতে রাখা ক্যাকটাস আর কাঠগোলাপ গাছে পানি দিচ্ছি আর ভাবছি নিজ জীবনের ফেলে আসা দিন গুলোর কথা।বিহান আমাকে বলেছে এই গাছে পানি দেওয়ার মতো আমাদের দুজনের সম্পর্কের যত্ন নিতে হবে।দুজন কেই যত্ন নিতে হবে একজন কে নিলে হবে না।।সম্পর্ক নাকি মরে যায় সঠিক যত্নের অভাবে, দুজন দুজন কে বোঝার অভাবে।এই গাছে পানি দেওয়ার সময় বিহানের মুখ টা ভেষে ওঠে বারেবার।এরই মাঝে বিহানের কল ফোনের স্কিনে ভেষে ওঠা নাম্বার দেখে হেসে দিয়ে ফোন রিসিভ করলাম।
ওপাস থেকে বিহান বললো,
‘দুপুরে খেয়েছিলে দিয়া।ওটিতে ছিলাম তাই দুপুরে ফোন দিতে পারিনি আমি।’
আমি হেসে বললাম,
‘কখন আসবেন বাসায়।’
‘কেনো আমাকে কি মিস করছো?’
‘হুম ভীষণ মিস করছি।আজ একটু দ্রুত আসুন না।প্লিজ প্লিজ প্লিজ।বেশ আহলাদি সুরে বললাম।’
‘বেশ আসবো তবে তুমি দুপুরে খাওনি কেনো সোনা।’
‘খেয়েছি তো। কে বলে আমি খায় নি।’
‘তোমার একমাত্র হাজবেন্ড এর সিক্সসেন্স বলছে সে আজ খায় নি দুপুরে।’
এক হাত দিয়ে গাছে পানি দিচ্ছি অন্য হাত দিয়ে কানে ফোন ধরেই কথা বলছি।
‘তাই তো কিভাবে মনে হলো জানতে পারি কি মিষ্টার।’
‘জ্বী মিসেস।সকালে রুটি খেয়েছো।আমি বেরিয়ে এসছি কফি খেয়ে। বিভোর রিয়া আজ বাইরে ঘুরতে গিয়েছে।তাই তুমি একা একা রান্না করো নি।রিয়া বাসায় থাকলে একটা কথা ছিলো।যেহেতু কেউ বাসায় নেই তাই তুমি খাও নি। বিশেষ কারণ আমি ছাড়া খাবার খাও নি তুমি।আমাকে ছাড়া খাওয়ার অভ্যাস নেই তোমার।’
‘এত কিছু বুঝেন কিভাবে?’
‘বুঝতে হয় পুচকি।’
‘ওকে তাহলে আসুন আমি রান্না করি।’
‘নো! রান্না করা লাগবে না।তোমার ফেভারিট মোরগ পোলাও নিয়ে আসছি আমি।’
বিহানের ফোন কেটে বেলকনি থেকে কাপড় গুলো তুলে এনে আয়রণ করে রেখে দিলাম।অপেক্ষা করছি বিহানের।মনে হচ্ছে কত কাল দেখা হয় নি আমাদের।বিহান আসার আগেই আলমারি থেকে একটা খয়েরী কালারের সিল্ক শাড়ি বের করে পরলাম।মাঝে মাঝে হুট করে সাজতে ইচ্ছা করে।তার মুখে তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে কথাটা শোনার জন্য।পৃথিবীর সবার প্রশংসায় কিছুই যায় আসে না যেনো আমার।কলিং বেল বাজতেই ছুটে গেলাম গিয়ে দরজা খুলতেই দেখি একহাতের কবজিতে বিহানের এপ্রোণ অপর হাতে একটা ব্যাগ।বিহান কে দেখেই ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরলাম।বিহান বোধহয় বেশ অবাক হলো আমাকে এমন পাগলামো করতে দেখে।বিহান হাতের জিনিস রেখে আমাকে নিজের দুইহাতে পরম আদরে জড়িয়ে ধরলো।মিশে গেলাম ওর বুকের সাথে।মাথায় চুমু দিয়ে বললো,পাগলিটা। কিছুক্ষণ বিহান কে জড়িয়ে ধরে ওর বুকের সাথে মিশে রইলাম।বিহান আমাকে পাজা কোলে তুলে ঘরের ভেতরে নিয়ে এলো।গালে চুমু দিয়ে বললো,অনেক সুন্দর লাগছে তোমাকে শ্যামাপাখি। আমার হাতে ধরিয়ে দিলো এক গুচ্ছ লাল গোলাপ।প্লেট এনে প্যাকেট থেকে মোরগ পোলাও বের করে আমার গালে তুলে খাইয়ে দিলো।
সময় এগিয়ে গেলো আরো ৬ মাস। রিয়া আর আমার ফার্স্ট ইয়ার শেষ হয়েছে ইতিমধ্যই।সব কিছুই নদীর স্রোতের মতো নির্দিষ্ট গতিতে বয়ে চলেছে।সকালে বিহান আমাকে আর রিয়াকে নিয়ে এসছে কলেজে।আমাদের ক্লাসে ছেড়ে বিহান ডিউটি তে গিয়েছে।শুনেছি আজ হসপিটালে দুজন ডাক্তার এর মাঝে ঝামেলা হয়েছে।কি নিয়ে সেটা জানিনা ডাক্তার এর ভুল ওষুধ এ সুস্থ রুগি নাকি মারা যাবার মতো হয়ে গিয়েছে।কি নিয়ে এই ঝামেলা জানিনা। বিহান বোধ হয় এইজন্য ই দেরি করছে।রিয়া আর আমি দুজনে ডিএমসি তে বসে আছি।বিহান ডিউটি শেষ করে আমাদের নিয়ে বাসায় ফিরবে তার জন্যই অপেক্ষা করছি।দীর্ঘদিন রিয়া বাড়িতে যায় নি আর যোগাযোগ ও করেনি।কাকু বাদে বাড়ির সবার সাথেই ফোনে কথা বলে।বিভোর ভাই ও রাগ করে কথা বলে না বাড়িতে।তবে বিভোর ভাই এর কষ্ট হচ্ছে একটু চলতে বোঝায় যাচ্ছে।ঢাকা শহরে ওয়াইফ নিয়ে থাকা মুখের কথা নয়।তার উপর রিয়া মেডিকেল পড়ছে।কাকু আবার বলে দিয়েছে রিয়ার ডাক্তারি পড়া হবে না, এই জিদের জন্য বিভোর ভাই আরো চিন্তিত।বিহান বিভোর ভাই কে বলেই দিয়েছে ডোন্ট ওরি বিভোর তুই আগের মতোই চলবি রিয়ার দায়িত্ব আমার।বিভোর ভাই এর একটু সম্মানে লাগছিলো পরে বিহান ভাই এমন ভাবে বললো বিভোর ভাই ক্ষমা চাইতে বাধ্য হলো।বিহান বলে দিয়েছে বিভোর আমি তো তোকে আপন ভাই ছাড়া ভাবিনি কোনদিন।কিন্তু তোর মনে এত দোষ ছিলো আগে বুঝিনি ভাই।ভাই এর টাকা ভাই নিবে এখানে আপত্তি কিসের।আজ থেকে ভাই এর পরিচয় দিতে পারবি না।আরো অনেক কথা বলে বিভোর ভাই কে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করেছে।আজ বাসায় বিভোর ভাই এর বাবা আর আম্মু আসছেন।বিভোর ভাই এর বিয়ের পরে আজ প্রথম আসছেন।তারা অনেক দিন আগে থেকেই রিয়ার সাথে ফোনে কথা বলে কিন্তু বিভোর ভাই কথা বলেন না।কবে মিটবে এই রাগ অভিমান।রিয়ার অনুভূতি খুব নারভাজ।রিয়া মুখ পেচার মতো করে বসে আছে।রিয়ার চোখ সোজা মাটিতে।কি ভাবছে সেটা জানিনা তবে গভীর কিছুই ভাবছে এটা সিওর।রিয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম,
“কি ভাবছিস রে রিয়া।”
“রিয়া মন খারাপ করে বললো বিভোরের মা বাবা আসছেন আমার খুব চিন্তা হচ্ছে।আমি উনাদের সামনে মুখ দেখাবো কিভাবে।”
“আমার মামা মামি গ্রেট বুঝলি রিয়া।তারা তো কবে থেকেই আসতে চাইছে শুধু বিভোর ভাই এর জন্য আসতে পারেনা।বিভোর ভাই মামার সাথে রাগ করে কথা বলে না।”
“বিভোর টার সাথে পারা যায় না দিয়া।আমি অনেক বার বলেছি বাবার সাথে কথা বলো।বিভোর বলে বাবার জন্য পালাতে বাধ্য হয়েছি।বাবা আমাকে একটুও সাপোর্ট করেনি।”
“বিভোর ভাই তো এমন ই। অভিমানি মানুষ। মামা বিভোর ভাই এর বন্ধুর মতো দেখিস আসলে কেমন বাচ্চাদের মতো করে।”
“আরে আমি তো জানি।কিন্তু কত কি পালটে গেছে আমাদের বিয়েকে ঘিরে।কখনো কি ভেবেছিলাম বাবার বাড়ি ছাড়তে হবে।কিন্তু বাবা তার জন্মের ঋণ শোধ করতে বলেছিলো আমার ভালবাসার বিনিময়ে।আচ্ছা দিয়া তুই বল মা বাবার জন্মের ঋণ কোনো সন্তান কি শোধ করতে পারে।বাবা আমাকে মারতে মারতে বলেছিলো তাদের ঋণ শোধ করতে।তাও আমার ভালবাসার বলিদানের উপর।তাদের জন্মের ঋণ চাপিয়ে দিয়েছিলো আমার ভালবাসার উপর।জানিস দিয়া ভীষণ কষ্ট হচ্ছিলো সেদিন আমার।আমার বাবা বিভোর কে অনেক অপমান জনক কথা ও বলেছে।”
“এখন ওসব ভেবে মন খারাপ করিস নাতো দিয়া।তোর বিহান কে ফোন কর।উনি কোথায় দেখ।নাহলে আমরা চলে যায়।”
বিহানের এত লেট হচ্ছে কেনো আজ।সময়ের হেরফের করে না কখনো।কিছু কি হয়েছে নাকি।হঠাত বুক কেঁপে উঠলো আমার, কারণ আমার সামনে দিয়ে প্রেয়সী আপু হেঁটে গেলো।কি নিয়ে এত ঝামেলা হয়েছে জানিনা প্রেয়সী আপুকেও দেখা যাচ্ছে।এক ডাক্তার নাকি অন্য এক ডাক্তার এর গায়ে ও হাত তুলেছে।যাক বিহান আসলে শুনে নিবো কি হয়েছে।এরই মাঝে বিহান ও বেরোলো। কপালের ঘাম মুছতে মুছতে।বিহান কে ভীষণ ক্লান্ত লাগছে দেখতে।চোখ মুখ ভীষণ মলিন, দেখে মনে হচ্ছে মন খারাপ খুব আর বিরক্ত খুব।বিহান এসেই দ্রুত বললো,
‘ক্লাস করেছো তোমরা চোখ ফোনের দিকে।বিহানের চোখে মুখে ক্লান্তিতে ভরা।অন্য মনস্ক, ভাবে আছে।ফোন স্ক্রল করছে আর মুখ দিয়ে উচ্চারণ করছে ওহ!শীট।’
আমি একটু শান্ত গলায় বললাম,
“হ্যাঁ বাট আপনার কি হয়েছে।”
“নাথিং গাড়িতে ওঠো কুইক।’
‘আগে বলুন কি হয়েছে।’
উনি বিরক্ত হয়ে ফোন পকেটে রেখে বললেন,
‘সব সময় জিদ করো কেনো?আমি বলেছি গাড়িতে উঠতে তাই ওঠো।সব সময় এত প্রশ্ন ভালো লাগে না।অনেক জোরে আর ধমকের সুরে বললো।’
‘আপনি রেগে গেলেন কেনো?’
‘তুমি কি সব সময় আমার রাগ টায় দেখো।আমি ভীষণ বিজি।কাকুরা এসে গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।ইমারজেন্সি রুগি আছে আমার। রাতে তার সার্জারী।’
‘আপনার সাথে আমি যাবো না।’
উনার কপাল জুড়ে ঘামের ফোটা।বিরক্ত আরো বেশী হয়ে বললেন,
‘হোয়াট?তোমাকে কিছু না বলতে বলতে অতিরিক্ত বেড়ে গিয়েছো তুমি।দিন দিন সাহস অনেক বেড়েছে।যাবে না তো কি করবে এখানে থাকবে।’
আমিও রেগে গিয়ে বললাম,
‘আশ্চর্য এভাবে চিল্লাচ্ছেন কেনো?’
‘ভালো কথা কি কানে যাচ্ছে তোমার।গাড়িতে যাও ফার্স্ট।’
‘আমি যাবো না।’
‘যেতে হবে না।থাকো এখানে।ভেবো না আবার সাধবো।রিয়া চলো।’
রিয়া আমার হাত ধরে টানলো তারপর গিয়ে গাড়িতে উঠলো।রিয়া ভেবেছে আমি গিয়ে গাড়িতে উঠবো।
আমি রেগে উল্টা দিকে হাঁটা দিলাম।রিয়ার সামনে আমাকে এইভাবে অপমান করতে পারলো।আমাকে মনে হয় এখন আর ভালো লাগে না।ভালো লাগবে কিভাবে চারদিকে সুন্দরী সুন্দরী নার্স। সকালে দেখলাম নার্স সানজি আর ফারজানার সাথে হেসে হেসে কথা বলছে।ফারজানা তো একেবারে গায়ের উপর পড়ছিলো।চারদিকে এত নার্স থাকলে আমার কথা তো ভালো লাগবেই না।
‘রিক্সাওয়ালাকে বললাম,যাবেন চাচা।’
রিক্সাওয়ালা উত্তর দিলো,
‘আম্মা কোথায় যাবেন আপনি।’
‘ চলুন সামনে বলছি।’
বিহান পেছনে তাকিয়ে দেখে আমি নেই।বিহান আর রিয়া এদিক ওদিক তাকিয়ে খুজছে আমাকে।রাগে শরীর রিরি করে জলছে আমার।বিহান যেনো আমাকে দেখতে নাবয়ায়।চাচাকে বললাম, জলদি চলুন না চাচা।
‘আমি এর থেকে জোরে পারিনা আম্মা।বয়স হয়েছে তো।’
বিহান ওহ নো! বলে মাথায় হাত চালালো।বিহান জানে রাগ হলে আমি এমন ই করি।এদিক ওদিক খুজে দেখলো রিক্সায় আমার ওড়না ঝুলে আছে।বিহান দ্রুত গাড়ি চালিয়ে রিক্সার সামনে এলো।রিক্সাচালক কে বললো মামা দাঁড়ান।
বিহান কে দেখে রিক্সাচালক কে বললাম,
‘না আপনি দাঁড়াবেন না।’
‘আরে ডাক্তার বাবাজি। কেমন আছো বাবা।’
‘চাচী কেমন আছেন এখন চাচা।’
‘অনেক ভালো।আল্লাহ তোমার ভালো করুন বাবা।প্রথম কোনো বড় ডাক্তার ফ্রি দেখালাম আবার ওষুধ ও কিনে দিলে।তোমার চাচী এখন সুস্থ অনেক টা।’
‘দোয়া করবেন চাচা।সমস্যা হলে দেখিয়ে যাবেন চাচা।’
মনে হচ্ছে দুজেন আগেই পরিচিত।বিরক্ত হয়েই বললাম,
‘দোয়া দেওয়া হয়েছে আবার চলুন চাচা।’
বিহান বললো,
‘দাঁড়ান চাচা।আপনার বউমা রাগ করেছে।’
আমি বললাম,
‘চাচা চলুন আগে আপনি।’
চাচা বললো,
‘কি মসিবত।যাও মা।রাগারাগি করতে নেই।’
চাচাকে বললাম,
‘আমি রিক্সা থেকে নামবো না।আপনি চলুন।’
‘বিহান দাঁত কিড়মিড় করে রিক্সায় আমার পাশে উঠে বললো এবার চলুন চাচা।পুরা শহর ঘুরাবেন।যে রিক্সা ভাড়া করেছে তার থেকে টাকা নিবেন।’
‘নামুন আমার রিক্সা থেকে।’
‘তোমার রিক্সা এটা। আমি তো জানতাম চাচার রিক্সা।এনি ওয়ে অল রেডি অনেক টাইম লস হয়েছে আমার।ধৈর্যর বাধ ভেঙে যাচ্ছে কিন্তু।’
এরই মাঝে বিহানের ফোনের ভাইব্রেশন বেজে উঠলো।বিহান ফোন কানে নিয়ে বললো,
‘ফারজানা ভালো ভাবে খেয়াল রাখো আমি ফ্রেশ হয়েই আসছি।হোয়াটস এপ এ পাঠিয়ে দাও।’
আবার ফারজানা।কি দিতে চাইলো হোয়াটস এপ এ।বিহানের দিকে তাকিয়ে বললাম,
‘হু ইজ ফারজানা।’
‘নার্স। ‘
‘আপনার সাথে হোয়াটস এপ এ কি’
‘জাস্ট বিরক্তিকর প্রশ্ন করো না।’
‘সুন্দরী ফারজানার কথা শুনলে আমার কথা বিরক্ত তো লাগবেই।’
‘ওকে ফাইন আমি প্রেম করছি এবার হ্যাপি ডিজগাস্টিং। ‘
‘রিয়া আর চাচা হাসছে কি দেখে দুজনে।ওদের হাসতে নিষেধ করুণ।’
‘মেন্টালের মতো কথা বললে হাসবেই তো।’
–আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই
উনি আমাকে শহর ভরা মানুষের মাঝ দিয়ে কোলে তুলে নিলেন রিক্সা থেকে।
এক প্রকার জোর করেই গাড়িতে উঠিয়ে দরজা লক করলেন।মনে মনে ভেবে রেখেছি এক মাস কথা বলবো না।যত যায় বলুক আমি কথা বলবোই না।গাড়িতে কেউ কারো সাথে কথা বললাম না।
গাড়ি থেকে নেমেই দ্রুত পায়ে হেঁটে উপরে চলে এলাম।আমরা বাসায় পৌছে দেখি মামা মামি চলে এসছে।মামিকে দেখেই জড়িয়ে ধরলাম।মিষ্টি সুরে বললাম কেমন আছো মামি।মামি বললো ভালো আছি মা তুই কেমন আছিস।বিহান কুশল বিনিময় করে বললো,কাকু,কাকিমা আমি ফ্রেশ হয়ে হসপিটাল যাচ্ছি।রাতে এসে কথা হবে।রিয়া মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে খানিক টা দূরে।মামা এগিয়ে গিয়ে রিয়াকে বুকের সাথে জড়িয়ে নিলেন নিজের মেয়ের মতো বুকের সাথে।মামা বললেন,রিয়া মা বাবার সাথে কথা বলবে না।এ কথা শুনেই রিয়া এবার কেঁদে দিলো জোরে।মামি রিয়াকে জড়িয়ে ধরে বললো কেঁদো না মা।আমাদের ভুল বুঝো না মা।ডায়নিং এ বসে মামা মামি আর রিয়ার ভালবাসাময় মুহুর্ত টা ভীষণ সুন্দর লাগছিলো দেখতে।রিয়ার মনের ৯০% কষ্ট দূর হয়ে গেলো।বিকাল পাঁচটায় বিভোর ভাই ব্যাংক থেকে বাসায় ফিরলেন।মা বাবাকে কাছ থেকে দেখে রাগ অভিমান ভুলে গেলো।যদি মামা অনেক অনুতপ্ত হয়েছে।রিয়ার মুখে হাসি দেখে বিভোর ভাই ও সব ভুলে গেলো।অনেক দিন পর বাপ বেটার জমিয়ে আড্ডা শুরু হলো।মামা বলে দিলেন রিয়ার সমস্ত খরচ মামা দিবেন।এক পর্যায়ে সব ঝামেলা মিটে গেলো।মামা মামি রিয়ার জন্য অনেক গুলো শাড়ি গহনা ও নিয়ে এসছেন।
–সেদিন রাতে আর বিহান বাসায় ফিরলো না।সারারাত ঘুম হলোনা আমার।অস্হিরতায় ছটফট করছি। এইদিকে আমিও ফোন দিচ্ছি না।দুঃচিন্তা ও হচ্ছে খুব।ফোন দিতে গিয়ে ভাবছি কেনো ফোন দিবো আমি। সে কি জানেনা সে কথা না বললে আমি থাকতে পারিনা।আমি যে রাগ করেছি তাতে কি তার কিছুই যায় আসে না।আমি যে অভিমান করে বসে আছি তার কি তাতে কিছুই যায় আসে না।এমন কি হলো বিহান এক দিনেই পাল্টে গেলো।বিহান কি সত্যি তবে পাল্টে গেলো।ঘড়িরদিকে তাকিয়ে আছি আমি সময় যেনো কাটছে ই না।মন খারাপের রাত এত ভয়ানক কষ্টের কেনো বিহান।বুকের মাঝে কেনো দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে। ভয়ানক ব্যাথায় ছটফট করছি আমি।এই কষ্ট ভীষণ কষ্ট,ভীষণ যন্ত্রণার।কেনো বিহান আপনি বদলে গেলেন।আপনি কি জানেন না ভালবাসার মানুষ এতটুকু বদলে গেলে পৃথিবীর সব এলোমেলো হয়ে যায়।আপনার বুকে মাথা না রাখলে আমার ঘুম ই আসে না।এই দীর্ঘ রাতের যন্ত্রণা আমি সহ্য করতে পারছি না।আর কিছুক্ষণ এভাবে থাকলে আমি মরেই যাবো।ভীষণ কাঁদছি আমি,কাঁন্না আটকাতে পারছি না।ফোন টা হাতে নিয়ে ফেসবুকে ঢুকেই দেখি বিহান অন লাইনে।অন লাইনে অথচ আমায় একটা কল দেওয়ার সময় হয় নি।ফেসবুকে একটা পোস্ট শেয়ার করলাম,
“ভালবাসা যেখানে মূল্যহীন,
অভিমান সেখানে বেমানান।’
চলবে,,