#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা সিজন ২
৭৯.(অন্তিমের প্রথম অংশ)
#WriterঃMousumi_Akter
দীর্ঘদিন পর নড়াইলের সূর্যদয় দেখলাম।সূর্য মাত্রই মাথা উচু করেছে পূর্ব আকাশে।শুরু হয়েছে আরেক টি পবিত্র দিনের।সূর্যর কিরণ মাত্রই ছড়াতে শুরু করেছে।সূর্যর মিষ্টি আলো বারান্দায় এসে পড়েছে।বারান্দায় প্রথম আলো এসে পড়ে বড় তালগাছটার উপর হতে এসে। কতদিন পর এই দৃশ্য টা দেখলাম।উঠানের কোনায় লাউ কুমড়ার টাল এবার ও দেওয়া হয়েছে।
শিউলি গাছটা আগের মতোই আছে।ফুলে ফুলে মুড়ে গিয়েছে শিউলি তলা।উঠানের কোনা দিয়ে লাল হলুদ গাদা ফুল ফুটেছে থোকায় থোকায়।সময় টা শীতকাল।আজ কতদিন পর মেয়েকে নিয়ে নড়াইল এসছি।দীর্ঘ সময় পরে আবার সব কাজিন রা এক জায়গা হয়েছি।আমার আর বিহানের আষ্টম বিবাহবার্ষিকী এবার কাজিন দের সাথে সেলিব্রেশন করবো।সকালের এখনো দু’বছর হয় নি।তবে গুটি গুটি পায়ে হাঁটা শিখেছে,গাল ভরে হাসতে শিখেছে।নিচে মারুফা খালা এসে ডাকা ডাকি করছে।পাশেই এক বাড়ি এখনো ঢেঁকির প্রচলন আছে ও বাড়ির চাচা ঢেঁকিতে কোটা চাল ছাড়া পিঠা খায় না।মারুফা খালা ও বাড়ি থেকে ডাল ছেঁচে এনে এখন বিলিন্ডারে ভালো ভাবে বিলিন্ড করছে।কুমড়া বড়ি বানানোর জন্য।ওদিকে চাল ভেজানো হয়ে গিয়েছে ঢেঁকিতে কুটতে যাবে।ঢেঁকিতে কোটা চালেই মামি পিঠাপুলি বানায়।মেশিনে খুব একটা চাল কোটে না।
–আমি ব্রাশ করে ওয়াশ রুম থেকে বের হলাম।বিহান কম্বল মুড়ি দিয়ে সুয়ে আছে কোল বালিশ জড়িয়ে ধরে।আমি ওয়াশ রুমে গেছিলাম এসে দেখি সকাল নেই।কম্বল উঁচু করে দেখি সকাল বিহানের কাছেও নেই।খাটের নিচে তাকিয়ে দেখলাম ফ্লোরে পড়ে গেলো কিনা।নিচেও নেই।
বিহান এর গায়ে হাত দিয়ে ডাকছি,
“শুনছো।”
ঘুম ঘুম কন্ঠে বললো,
“হুম।”
“সকাল কই।”
“আছে দেখো।”
“নেই তো।”
“উহু ডিস্টার্ব করোনা,ঘুমোতে দাও।”
“মেয়ে কই সেদিকে হুঁশ নেই আর উনি ঘুমোচ্ছে।সকাল কোথায়।”
আমার কথার উত্তর দিচ্ছে না দেখে গায়ের কম্বল সম্পূর্ণ টেনে ফেলে দিয়ে বললাম,
“এইবার ঘুমোও।অসহ্য মানুষ একটা এই লোক।মেয়ে কোথায় জানেনা।।”
বিহান চোখ পিট পিট করে তাকিয়ে কপালের চামড়া কুচকে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
“তোমার গায়ের শীতের কাপড় কই,ঠান্ডা লেগে যাবে।আর পায়ে মোজা কই।”
“আগে বলুন মেয়ে কই।”
“ওর মামা নিয়ে গেছে।”
“ভাইয়া কখন এলো।”
“এসছে,পড়ে পড়ে ঘুমোলে কখন দেখবে এসছে।”
“আমি না আপনি ঘুমোচ্ছেন তা দেখাই যাচ্ছে।”
“সারারাত কে ঘুমিয়েছে ষ্টুপিড মহিলা।”
“এই দেখুন এখন আমার বয়স হয়েছে, আর আমার মেয়ের সামনে কখনো আমাকে মহিলা টহিলা বলবেন না বাদ্দিক নিষেধ করলাম।”
উনি ভ্রু কুচকে তাকালেন।
“হোয়াট মিন্স বাদ্দিক।সেটা আবার কি?”
“মানে আর কখনো না।”
“ভাষা পরিবর্তন আর জীবনেও হলো না।
সারারাত নাক ডেকে ঘুমিয়েছো।সকাল আগলা ছিলো আর সারারাত জেগেছিলো।আধাঘন্টা পরে পরে উঠেছে আর কেঁদেছে।তুমি সারাদিন হাবিজাবি খাবার খেয়ে আরামে নাক ডাকো আর আমার প্রিন্সেস টা কষ্ট পায়।সকালের মনে হয় পেটে ব্যাথা করছিলো কাল সারারাত।আজ থেকে যদি হাবিজাবি খাবার খাও হাবিজাবি মহিলা খবর আছে তোমার।”
“কি বললেন আমি হাবিজাবি মহিলা।আর আমি নাক ডাকি।”
“হো ইদুরের মতো।”
“ইদুর নাক ডাকে।”
“হ্যাঁ তোমার মতো।”
“আমি নাক ডাকি।”
“সন্দেহ আছে।”
“আমাকে যদি আর একটা বাজে কথা বলেন সত্যি খবর আছে।”
“সকাল সকাল রোমান্টিক খবর দাও।তুমি কি আবার মা হতে চলেছো?বাট আমি তো… ”
“আমি আবার মা হতে চলেছি মানে।বাচ্চা কি চান্দের দেশ থেকে আসবে।”
“না মানে আমি ফ্যামিলি প্লানের সব রুলস মেইনটেইন করেছি দিয়া।তাহলে কি বাচ্চা তুমি দারাজে অর্ডার করলে।”
“এইবার একটা বর অর্ডার করবো বুঝলেন।তাহলে বর ও পাবো বাচ্চা ও পাবো।”
“ওই হ্যালো ব্রিটিস মহিলা,শ্বশুরের একমাত্র জামাই চাইলে সারাজীবন তোমাকে প্রেগন্যান্ট রাখতে পারবে।শ্বশুরের মেয়েকে খালি পেটে রাখবে না।আমাকে বদনাম করে অন্যর কাছে যেও না।মানুষ আমাকে অন্য কিছু ভাববে।ভাববে আমার মাঝে অন্য প্রব্লেম।”
“ভাবুক তো আমার কি।”
বাইরে ভাইয়ার কোলে সকাল খিলখিল করে হাসছে।ভাইয়া রোদে নিয়ে দাঁড়িয়েছে সকাল কে।ভাইয়া কাতুকুতু দিচ্ছে আর সকাল হেসে গড়াগড়ি যাচ্ছে।সকাল কে মামা বলে বলে ডাকছে।সেখানে মামা এসে দাঁড়িয়ে সকালে কে দাদু দাদু করছে।
বিহান ঠান্ডায় কাঁপা ঠোঁটে বললো,
“মিসেস বিহান কাম হেয়ার বউ।”
গায়ে শীতের কাপড় পরতে পরতে বিহানের দিকে এগিয়ে গিয়ে বললাম,
“বলুন মিষ্টার বিহান বাবু।”
বিহান আমাকে এক টানে ওর বুকের উপর নিয়ে বললো,
“শোনো না বাবুর আম্মু।”
এইভাবে বিহানের বুকে পড়ে বেশ লজ্জা পেলাম।আমি যে লজ্জামাখা চাহনি তে তাকিয়েছি বিহান বেশ বুঝতে পারলো।
বিহানের ভয়েজে কেমন নমনীয়তা।আধো আধো কন্ঠে কথা বলছে।যে কন্ঠে জড়ানো প্রেমময় নেশা।হাত দিয়ে আমার মুখের উপর পড়া চুল কানের নিচে গুজে দিতে দিতে বললো,
“এইভাবে বিহান বাবু বলে ডেকে নিজের বিপদ বাড়িওনা বাবুর আম্মু।”
“তাহলে কি বলে ডাকবো।”
বিহান আমার সোয়াটারের বোতাম খুলে সোয়েটারের ভেতরে নিজের হাত ঢুকিয়ে আমার পিঠ জড়িয়ে ধরলো দুই হাত দিয়ে।অতঃপর বললো,
“আমার গায়ের কম্বল টেনে ফেলেছো।এখন আমার কম্বল হয়ে যাও বউ।”
“ওই কেউ এসে যাবে।ছাড়ুন বলছি।”
“নো ছাড়াছাড়ি, আমার ঠান্ডা লাগছে।”
“কেউ এসে যাবে এবার সত্যি।”
“আসুক তো কি।বেডরুম আমার,বউ আমার,আমি যা ইচ্ছা তাই করবো।যে দেখবে সে লজ্জায় পিছিয়ে যাবে।আমরা আমাদের কাজ চালিয়ে যাবো।”
“কি নির্লজ্জ হয়েছেন আপনি?ছি!ছাড়ুন আমায়।আমি কম্বল টেনে দিচ্ছি।”
“তোমাকে না বলেছি শাড়ি পরে ঘুরবে না আমার সামনে দিয়ে।এমনিতে সারারাত গেঞ্জি পরে ঘুমিয়ে আমার ফিলিংস এর দফারফা করো। আবার সকাল সকাল কোমর বের করে শাড়ি পরে ঘুরে আমাকে অসভ্যতে পরিণত করো।এসব দোষ কার।এসব দোষ তোমার।”
“হ্যাঁ ঘুরে ঘুরে সব দোষ আমার ই দিবেন বুঝেছেন।কম্বল নিয়ে আসি ছাড়ুন।”
“নো লাগবে না।তুমি থাকলেই হবে।”
“আমি তো সারাক্ষণ ই থাকি।”
“এই তোমার সমস্যা কি একবার তুমি বলো একবার আপনি বলো এর থেকে তো তুই করেও বলতে পারো।”
“তুই করে তো আপনি বলেন,আমি তো বলিনা।”
“তোকে তুই ডাকতে ভাল লাগে রে আমার পিচ্চি।আউ আমার পিচ্চিটা এখন কত্ত বড় হয়েছে।উম্মম্মম দিয়ায়ায়ায়ায়া একটু জোরে হাগ দাও না টাইট করে। খুব ইচ্ছা করছে প্লিজ প্লিজ প্লিজ।”
“কি পাগল হয়েছেন আপনি।”
বিহান কে টাইট হাগ দিয়ে উঠে এলাম।কম্বল টা গায়ে ভালো ভাবে জড়িয়ে দিয়ে এসে বললাম এবার ঘুমোন।
আমাদের বাসা থেকে দু’কিঃমি দূরে গাছিরা খেজুর গাছ কাটে।খাটি খেজুর রসের অর্ডার দিয়ে এসছিলো মামা।৮ টা ঠিলে তে করে রস দিয়ে গিয়েছে।মামা টাকা দিয়ে বিদায় করে দিলো রস রেখে।রস অর্ধেক বিভোর ভাই রা রাখলো।গ্রাম থেকে খাটি খেজুর পাটালি ও আনা হয়েছে।উঠানের এক কোনায় চুলা বানানো হয়েছে পিঠা বানানোর জন্য।
সবাই মিলে এক গ্লাস করে রস খেয়ে নিলাম।শীতের সকালে খেজুরের রস খাওয়ার ঐতিহ্য সত্যি সুন্দর। রস খাওয়া শেষে বাকি রস মামি জাল দেওয়া শুরু করলো।সকাল থেকে সেমাই পিঠা বানানো হচ্ছে।ডাব জাতীয় নারকেল এর সাথে রসে রানান সেমাই পিঠা খাওয়ার মতো টেস্টি জিনিস আর নেই।শিতকালে পিঠা খাওয়ার ধুম পড়ে গেলো।সন্ধায় ভাপা পিঠা সাথে রসে ভেজা দুধ চিতই ও বানানো হলো।আমরা কাজিন রা এক জায়গা জড় হয়ে পিঠা খাচ্ছি আর আনন্দ করছি।
ধীরে ধীরে সময় আরো এগোচ্ছে।রিয়ার একটা ছেলে হলো,ভাইয়ার একটা ছেলে হলো,তোহা আপুর বিয়ে হলো তিয়াস ভাইয়ার বিয়েতে মাগুরা বরযাত্রী গিয়ে অনেক আনন্দ করলাম।আমাদের কাজিন মহল ধীরে ধীরে ব্যাস্ত হয়ে পড়লো যে যার সংসার জীবনে সন্তান নিয়ে।জীবন এমনি। সংসার জীবনে সবাই ভীষণ ব্যাস্ততার মাঝে ঢুকে পড়ে।এখন আর আগের মতো আড্ডা সব সময় হয় না।তবে দুই ঈদে আমাদের প্রতিবছর দেখা হয়।
চলবে,,
#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা সিজন ২
৮০.অন্তিম
#writer_Mousumi_Akter
“পাপ্পা ও পাপ্পা ”
পাপ্পা ডাকে ফোন থেকে মনোযোগ সরিয়ে মেয়ের দিকে তাকালো বিহান।খুব আদুরে কন্ঠে বললো,
“কি হয়েছে মামমাম তুমি এভাবে কাঁদছো কেনো?”
“মাম্মা আমাকে মেলেচে পাপ্পা”
“মাম্মা মেলেচে তোমাকে।খুব খারাপ করেছে মাম্মা।কিন্তু তুমি কি দুষ্টুমি করেছো মামনি যে তোমার মাম্মা মেরেছে।”
“কিছুই না পাপ্পা ছত্তি বলছি।”
“কিছুই করোনি তবুও মাম্মা মারলো।দেখি তোমার নানুকে আর দাদুকে ডেকে এর বিচার হবে।”
“তুমি এক্ষুনি নানুকে ফোন দাও পাপ্পা।বলে দাও যে আমি মাম্মার একটা কাগজে মেহেদী মুছেছি বলে আমাকে মেরেছে।”
“সর্বনাশ কি কাগজে মেহেদী মুছেছো।তোমার মাম্মা তো এইবার আমাকেও মারবে।”
–আমি রুমে বসে বাপ বেটির অভিনয় দেখছি।এই বিহান টা এক্ষুণি আসবে আমার মেয়েকে মারলে কেনো।এই সকাল টা আমাকে পানিসমেন্ট খাওয়ানো শিখে গিয়েছে।একটু ধমক দিলেও কেঁদে দিয়ে বলবে পাপ্পা আমাকে মেরেছে।এই মেয়েটা প্রচন্ড দুষ্টু।একটা ইসিজির কাগজ এসে মেহেদী মুছে তাও আবার টুকরো করে ছিড়েছে।আমি উপরের ড্র্যায়ারে রেখেছি আর ও সেখানে টুল দিয়ে উঠে ড্রায়ার খুলেছে সমস্ত কাগজ বের করে রুম ভরে ছড়িয়েছে।সারাদিন দুষ্টুমি করে।নিজের জুতা কখনো পরবে না।আমার না হলে বিহানের জুতা পরে হাঁটবে আর আছাড় খাবে।ফোনের সমস্ত নাম্বার চিনে কার কোন নাম্বার।খুজে বের করে কল দিয়ে সারাদিন নানু আর দাদুর কাছে তার নালিস মাম্মা নাকি অহেতুক তাকে মারে।হুট হাট যেখানে সেখানে কল দিয়ে রাখে ফোনের টাকা সব কেটে যায় কখন বুঝতেও পারিনা।কিচেনে প্রবেশ করে সমস্ত জিনিস এলোমেলো করবে।সারাদিন ফ্রিজ খুলবে।আর সারাদিন সাজুগুজু করবে।সারাদিন সেল্ফি তুলবে।বাচ্চা মেয়ে কোথায় একটু কার্টুন দেখবে তা নয় মেরেও কার্টুন দেখানো যায় না।ফোন ওর ইচ্ছা মতো যা মন চাই টিপবে।পানিতে কয়েক টা ভিজাইছে ফোন।পাঁচতলার জানালা দিয়ে রুমের সব জিনিস নিচে ফেলে দিবে।এতই দুষ্টু হয়েছে সে।আমার উঁচু স্যান্ডেল এর সাথে আমার ওড়না পরে ঘুরবে সারাক্ষণ। এই মেয়েটা সারাক্ষণ মাতিয়ে রাখে আমার ঘর।
বিহান ফোন টা এগিয়ে দিয়ে বললো,
“আর কাঁদে না মাম্মা নাও নানুকে ফোন দাও।”
“আর তুমি কিছু বলবে না।”
“বলবো তো সোনা।”
সকাল ফোন ডায়াল করে আমার আম্মুকে ফোন দিয়েছে।আম্মু ফোন রিসিভ করতেই সকাল বললো,
“আসলাইয়্যম (আসসালামু আলাইকুম)”সালাম শুদ্ধভাবে দিতে পারে না।বিহান ওকে সালাম দেওয়া শিখাইছে। সারাদিন একশ বার সালাম দিবে।যাকে ফোন দিবে আগে সালাম দিবে।
ফোনের ওপাস থেকে আম্মু উত্তর দিলো,
“ওয়ালাইকুম আসসালাম নানুভাই।কেমন আছো?”
“তোমাল মেয়ে খালি খালি মেলেচে।”
“আজ আবার মেরেছে আমার নানুকে।”
এইবার ভ্যা ভ্যা করে আরো জোরে কেঁদে দিলো।আমার আম্মু তার চোখের কাঁন্না সহ্য করতে পারে না।খুব শাষিয়ে বললো,
” নানু ভাই ফোন টা তোমার আম্মুকে দাও।”
সকাল মুখ অন্যদিকে গাল ফুলিয়ে রেখে বললো,
“নানু কিছু বলবে।”
বিহান আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে।সকাল কে কোলে তুলে আদর করতে করতে বললো,
“নানু এবার ঠিক বকে দিবে মাম্মা কে। সকাল হাতে তালি দিয়ে হেসে দিলো।”
আম্মু শাষিয়ে বললো,
” কি ব্যাপার দিয়া।তুমি সকাল কে মেরেছো ক্যানো?ও না বাচ্চা মানুষ। ও কি কিছু বোঝে।ছোট বেলা তুমিও কম জালাওনি।”
“দেখো আম্মু তুমিও কিন্তু আমাকে কম মারো নি।”
“তুমি অনেক দুষ্টু ছিলে আমি অত টা মারিনি।”
“আমাকে বিয়ের আগে মেরে তোমার ভাতিজার গলায় ঝুলিয়েছিলে মনে আছে।তাও বাড়িসুদ্ধ লোকের সামনে।”
বিহান একটা কাশি দিয়ে বললো,
“আম্মাজান এখন ঝড় আমার দিকে আসছে চলো পালায়।”
আমি ফোন কেটে দিয়ে বললাম,
“এই যে আপনি।”
“জ্বী বলিয়ে।”
“বিয়ের আগে আমাকে অহেতুক মার খাইয়েছিলেন কেনো?”
“বিয়ে করার জন্য?”
“তাই বলে মার খাওয়াবেন।ওই চিঠি কার ছিলো।”
“কার আবার আমার।”
“মানে নিজে চিঠি লিখে আমাকে কালারিং বানিয়ে বিয়ে করলেন।”
“ইটস ক্যালমা বেইব।”
কয়েকদিন পরে সকাল কে আবার মেরেছি।
বিহান দেখি বেশ রাগী মুডে পেছনে হাত বেঁধে আমার সামনে এসে দাঁড়ালো।
“কি সমস্যা দিয়া।তুমি অতটুকু মেয়েকে মারো কেনো?”
“তোমার মেয়ে কিচ্ছু খায় না তো আমি কি করবো?”
“তো তুমি কি এখনো ঠিকভাবে কিছু খাও।তোমাকেও তো এখনো রোজ গালে তুলে অনেক বাহানা করে খাওয়াতে হয়।শোনো দিয়া আমার মেয়ের গায়ে একদিন ও আর হাত তুলবে না।মেয়ে আর তুমি তোমাদের চোখের পানি আমি সহ্য করতে পারিনা।মেয়ের সব দুষ্টুমি আমি সহ্য করবো।ওর খাওয়ানো ঘুম পাড়ানো সব আমি করবো।তুমি কখনো আর ওকে মেরো না।”
“বাপ মেয়ে এক দলে তাইনা?ওয়েট দল আমিও ভারী করবো।”
“তাই তো কিভাবে।”
“এইবার আমার ছেলে হোক।তখন দেখবেন কি করি।”
“একটা মাত্র মেয়ে তাই ওর দুষ্টুমি সহ্য করতে পারো না তুমি।এদিকে এসো হা করো খাইয়ে দেই।”
বিহান আমাকে আর সকাল কে খাইয়ে দিচ্ছে বকুনি দিয়ে।আমি চুপচাপ খাবার খাচ্ছি।বিহান এখনো আমাকে বকে, খাবার খাইয়ে দেই,আবার আদর করে।সপ্তাহ খানিক পরে সকাল আর মুগ্ধ খেলছে বসে। আমি রিয়া ব্যাগ গোছাচ্ছি।রিয়ার ছেলের নাম মুগ্ধ।পরশু কোরবানি ঈদ।এবার কাজিনরা সবাই এক জায়গা হবো।ভীষণ ছটফট করছি কখন যাবো সেই আশায়।বিহান এসে মুগ্ধ কে কোলে তুলে বললো কি চাচ্চু আপুর সাথে খেলা হচ্ছে।সকাল সাথে সাথে গাল ফোলালো তাকে রেখে মুগ্ধ কে কেনো কোলে তুললো তারা পাপ্পা।বিহান আরেক কোলে সকাল কে নিয়ে বললো, কি ব্যাপার মাম্মা ভাইয়া কে কোলে না নিলে হবে।তুমি না ওর আপু।সকাল মুগ্ধর গালে চুমু দিয়ে বললো কিসি দিলাম ভাইয়া রাগ করো না আর।কোরবানি ঈদ এর জন্য নড়াইল এসছি।এবার সব দুলাভাই দের বলা হয়েছে তারা যেনো ঈদের নামাজ পড়েই এখানে চলে আসে।ঈদের দিন খুব ভোরে বিহান সকাল কে শিউলি ফুলের গহনায় সাজিয়েছে।সকাল জামা উলটে অনেক গুলা ফুল এনে আমাকে দিয়ে বলছে মাম্মা পাপ্পা তোমাকে দিয়েছে।এই সকাল টা সারাবাড়ি দিয়ে এভাবেই ছুটে বেড়াচ্ছে। এদিক সেদিক ওর ছোট্ট পায়ের ছাপ লেগেই আছে।
ঈদের দিন বিকালে সবাই মিলে ঘুরতে বের হলাম।ট্রেন লাইনের কাজ চলছে সেদিকেই গেলাম।রুশা আপু,রুশা আপুর বর,তোহা আপু তোহা আপুর বর,বিভা আপু দুলাভাই,তিয়াস ভাইয়া সাথে ভাবি,আয়রা,মেহু আপু ভাইয়া,রিয়া, বিভোর ভাই,আমি আর বিহান।
ছেলেরা সবাই কালো পাঞ্জাবী আর মেয়েরা সবাই কালো শাড়ি পরেছি।রিয়া গিফট করেছে সবাইকে ঈদে পরার জন্য।
আবির ভাইয়া বললো,
“ভাই তিয়াস আজ মান সম্মান যা ছিলো সব শেষ করে দিয়েছিস।”
তিয়াস ভাইয়ার বউ খুব আগ্রহ নিয়ে প্রশ্ন করলো কেনো ভাইয়া ও কি করেছে।
বিভোর ভাই বললেন,
“আমরা তিনজন ভাসুর হই কিভাবে বলি।দুলাভাই আপনি বলুন না।” বিভা আপুর বরের দিকে তাকিয়ে বললো।
দুলাভাই হেসে বললো,
” আজ কিন্তু তিয়াসের সব সিক্রেট ফাঁস।”
রুশা আপুর বর বললো,
ছিঃশালাবাবু সকাল সকাল সিল মেরে চলে গেলে।”
রুশা আপু আর বিভা আপু দুজনে মিলে বললো,
“তিয়াস আবার কি করেছিস।বাগানে গিয়ে টয়লেট সারিস নিতো।”
রুশা আপু বললো,
“বিভা মনে আছে তোর সেই কথা।”
“মনে আবার নেই।”
তিয়াস ভাই দুঃখী কন্ঠে বললো,
“ভাই বোনদের সামনে এগুলা না বলি।”
আবির ভাইয়া বললো,
“তোর বোন কিন্তু এখানে সবার তো আর আমাদের বোন না।আমাদের বউ উপস্হিত।এমন একটা ঘটনা শেয়ার না করলে স্বামি হিসাবে বউ দের প্রতি মারাত্মক অন্যায় হবে ভাই।”
“ভাই লজ্জা দিয়েন না কিন্তু।”
বিহান বললো,
“তোর আর বিভোরের লজ্জা ছিলো কোন কালে।এটা হাস্যকর ভাই ভীষণ হাস্যকর।”
আমরা খুব আগ্রহের সাথে প্রশ্ন করলাম কি হয়েছে।
দুলাভাই বললেন,
“তিয়াস সাদা পাঞ্জাবীতে লিপিস্টিক এর দাগ লাগিয়ে নিয়ে গিয়েছে।সে যে কিস ভক্ত লোক সেটা ঈদ গায়ে সবাইকে জানাতে গিয়েছে।”
বিভোর ভাই বললেন,
“না না ভাই নতুন বিয়ে করেছে সেটা মানুষ বুঝে গিয়েছে আজ।”
“ভাগ্য ভালো আমার বোনদের বিয়ে করেছেন আপনারা তিনজন না হলে আমিও বলতাম।”
“তোহা আপু বললো,আমার কপাল খারাপ খুব। ”
“তোহা আপুর বর বললো,খুব জানতে ইচ্ছা করছে কেনো আপনার মন খারাপ।”
“মন খারাপ লাভ ম্যারেজ হলো না আমার।”
“এত রোমান্টিক জামাই পেয়েছো তবুও প্রেম নিয়ে আফসোস।”
বিহান বললো,
“তোহা টিকটকে তোমার জামাই এর একটা রোমান্টিক সিন দিয়ে ভিডিও করো।”
“ভাই সে আমাকে নেয় না মানুষ জেনে যবে সে বিবাহিত এইজন্য।”
তোহা আপু বললো,
“আরে তুমি শুধু হাসো ভিডিও করার সময় তাই নেই না।”
মেহু আপু বললো,
“গাইস সেল্ফি প্লিজ।”
সেদিনের ছবিটা ওয়ালে টাঙিয়ে রেখেছি।সন্ধ্যার কিছুক্ষন আগেই বিহান বাসায় এসছে।আমি বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছি।হঠাত আকাশে গুমট মেঘ করেছে।
বিহান আমার পাশে এসে দাঁড়িয়ে বললো,
–আজ ও কি সন্ধ্যায় বৃষ্টি নামবে।
আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে বললাম, হুম।সাথে সাথেই বর্ষন শুরু হয়েছে।বিহান আমার পাশে এসে আরো এগিয়ে আমার শরীর ঘেষে দাঁড়িয়ে বললো,
–এই বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যায় আমাদের প্রেমের সূচনা হয়েছিলো মনে আছে।
–হাতে এক মুঠো বৃষ্টি ধরে বিহানের মুখে ছুড়ে বললাম,এই বৃষ্টিতেই তোমাকে কাছে পেয়েছিলাম।তোমার প্রেম অনুভব করতে শিখেছিলাম।
–ভিজবে দিয়া।
–হুম ভিজবো।
দুজনেই ছাদে গিয়ে ভীষণ ভিজলাম।বর্ষন আমাদের প্রেমের ছন্দে তাল মেলাচ্ছিলো।বিহান আমার দিকে তাকিয়ে বলছিলো,
“তোমার মুখের দিকে এক পলক তাকাতেই পৃথিবীর সকল সৌন্দর্য আমার চোখে ভেসে উঠে। তোমার ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে গোলাপের রাজ্যে হারিয়ে যাই আমি। পৃথিবীর সকল মায়া তুচ্ছ মনে হয় তোমার চোখের মায়ার কাছে, তোমার হাসির মায়ার কাছে। তোমার অপরূপ চাহনি সকালের সূর্যের আলোর মতো উষ্ণ করে তুলে আমাকে। তোমার কাছে নিজেকে ভেঙে-ছুড়ে উপস্থাপন করতে ভালো লাগে আমার। নিজেকে তোমার জন্য বিলিয়ে দিতে ইচ্ছে করে। ইচ্ছে করে তোমার অপরূপ চলন ভঙ্গি দেখি, তোমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি।
তোমার মতো কারও কাছে নিজেকে উপস্থাপন করতে পারি না। তুমি অনেকটা আমার ভেতর থেকে আসা অনুভূতির মতো। যে ভালো লাগাটা অনুভব করতে পারি। কিন্তু ঠিকটাক করে ঘুছিয়ে বলতে পারি না। তোমার জন্য পা’গ’ল হই, মুগ্ধ হই, কেমন জানি তুমি রোগে ধরেছে আমায়! তোমার সঙ্গ পেলেই নিজেকে স্বাভাবিক করতে পারি। নয়তো মানসিক ভারসাম্যহীন পা’গ’ল হয়ে যাই।
আমি ঠিক আমার মনের ভেতরের অনুভূতিগুলোকে বুঝি না। অনুভূতিগুলোর নাম দিতে পারি না। অনুভূতিগুলো প্রকাশ করতে পারি না!শুধু এতটুকু জানি আমি তোমাকে অসম্ভব ভালোবাসি । বুঝতে পারি তুমি ছাড়া আমার কিছু ভালো লাগে না। বুঝতে পারি আমার বেঁচে থাকার জন্য, ভালো থাকার জন্য তোমাকে খুব দরকার।
লেখা- নাফিজ ইকবাল নূরুল্লাহ্ ”
ভেজা কাপড় চেঞ্জ করে বিছানায় এসে সুয়ে পড়লাম।বাইরে ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে।বৃষ্টি মানেই আমাদের প্রেম নতুন রূপে ধরা দেওয়া।এই ঝুম বৃষ্টিতে দুজনের মাঝে উষ্ণতা ছড়াচ্ছিলো।দুজন দুজনের খুব কাছাকাছি আসার চেষ্টা করছিলাম।বিহানের বুকে মাথা দিয়ে বাইরে ঝুম বৃষ্টিতে তাল মিলিয়ে প্রেমের নতুন ছন্দে ভিজলাম দুজনে।এক বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যা মানেই আমাদের জন্য একটা প্রেমের সন্ধ্যা।
৷৷৷ ৷৷৷৷৷ ৷৷ সমাপ্ত।
(দীর্ঘদিন ধরে চলেছে এই উপন্যাস।জানি আমার মতো সবার ই মন খারাপ হবে।বাস্তব-অবাস্তব সিনেমাটিক বিভিন্ন জায়গা বিভিন্ন রকমের হয়েছে।অনেক ভুল আমার লেখায় তবুও অনেক সাপোর্ট আর ভালবাসা পেয়েছি।আপনাদের সাপোর্ট ছাড়া এত দূর আসতে পারতাম না।লেখালেখিতে কোনো অভিজ্ঞতা না থাকায় অনেক ভুল ছিলো আমার লেখায়।তবে এই উপন্যাস আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে।গল্পের সূচনা কেমন হওয়া উচিত,কেমন থিম সাজানো উচিত অনেক কিছু শিখিয়েছে সাথে দিয়েছে অসংখ্য পাঠকের অনেক বেশী ভালবাসা।এই উপন্যাস লিখতে গিয়ে অনেক বাঁধা পেয়েছি। আমার পুরা উপন্যাস যারা পড়েছেন যারা আমাকে ভালবাসেন আমার থেকে ভালো কিছু আশা করেন তারা অবশ্যই আমাকে ইনবক্সে জানাবেন আমার কোথায় কোথায় শোধরানো উচিত।কেননা কেউ বলে না দিলে নিজের ভুল বোঝা সম্ভব নয়।আপনারা পাঠক -পাঠিকা আপনারা সাহায্য না করলে আমি ভুল শুধরাতে পারবো না।আমি অত্যান্ত বিজি একটা মেয়ে ব্যাক্তিগত জীবনে বিশ্বাস করুন ফেসবুকে গল্প পড়া হয় না বললেই চলে।বিহান চরিত্র আমার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটা চরিত্র। খুব শখ করেই কাজিন লাভ স্টোরি শুরু করেছিলাম বিহান-দিয়াকে নিয়ে বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যার আগেই।কারণ দেখতাম সবাই কাজিন লাভ স্টোরি পছন্দ করতো।ফেসবুকে একাধিক কাজিন লাভ স্টোরি আছে সব গুলার থিম প্রায় এক ই ক্যাটাগরির যেহেতু কাজিন লাভ স্টোরি থিমের কিছুটা মিল থাকবেই।তবে কোনো লেখিকা জেনে বুঝে হুবহু কাউকে কপি বা কারো প্লট কপি করে না।বাই এনি চান্স দু,চার লাইন মিলে গেলে তাকে অন্তত কপি বলে না।অনেক আক্রমণাত্মক কথা শুনতে হয়েছে।যদি কোনো লেখিকা আপুর গল্পের সাথে আমার কোনো গল্প ১% ও মিলে তার জন্য লেখিকা এবং পাঠক-পাঠিকার কাছে ক্ষমা চাইছি।আমাকে জানাবেন আমি সাথে সাথে ডিলিট করে দিবো।তবে অবশ্যই পড়ে দেখবেন দুজনের লেখার ধরণ আলাদা কিনা।অনেক খানি বকবক করলাম।এর পর বলুন আসলেই কি উপন্যাস আপনাদের ভালো লেগেছে।প্রতিটা পর্ব, ৪-৫ ঘন্টা সময় নিয়ে ভেবে লিখেছি ভাবুন কত সময় দিয়েছি।উপন্যাস শেষ বলে এই মেয়েটিকে কিন্তু ভুলবেন না।অনেক অনেক ভালবাসা নিবেন।)