#এক_মুঠো_কাঁচের_চুরি
#পর্ব_১৪+১৫
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu
–ওভাবে তাকিয়ে থেকে লাভ নেই।খাঁটি সিঙ্গেল মেয়ে আমি।এখন আমার ফোনটা আমার হাতে দেন।
–মিথ্যা কথা বলতে মুখ কাঁপছে না।
–আমি মিথ্যা কথা বললাম বুঝি।তা’ আমি কি’ মিথ্যা কথা বলছি শুনি।
–তুমি সিঙ্গেল কিভাবে হতে পারো।জলজ্যান্ত তোমার একটা জামাই আছে।
–কে? আমার জামাই।
–আমি’!
–আপনি স্বীকার করলেন আপনি আমার স্বামী।তাহলে সেদিন ফোন চেয়ে ছিলাম।আমাকে কেনো আপনার ফোনটা দিলেন না।
ইফাদ তানহা’র প্রশ্নের উত্তর দিল না।ফেসবুক আইডি’র সবকিছু ঠিক করতে লাগলো।সুন্দর একটা বোরকা পড়া মেয়ের ছবি প্রোফাইলে দিয়ে দিল।এই প্রথম তানহা’র নিজের ফোন হয়েছে।আবির হাসনা বেগম’কে বলেছিল,তানহাকে একটা ফোন কিনে দিতে।কিন্তু হাসনা বেগম কিনে দেন নাই।আবিরকে বুঝিয়েছে।ফোন পেলে তানহা খারাপ হয়ে যাবে।মায়ের কথায় যুক্তি আছে।ভেবে আবির আর কিছু বলে নাই।ইফাদ ফোনের দিকে মনযোগী হয়ে আছে।নতুন ফোন তানহার আগ্রহ একটু বেশিই।তানহা ফোন দেখার জন্য ইফাদের গা ঘেঁষে বসেছে।ইফাদ বিরক্ত হয়ে বলল।
–একটা কাজ করো।আমার কোলের মধ্যে এসে বসো।
তানহা কোনো কথা না বলে,কম্বলের মধ্যে দুটো ঢুকিয়ে দিয়ে,ইফাদের কোলের মধ্যে বলে পড়লো।ইফাদ চোখ গোল গোল করে,তানহার দিকে তাকালো।
–দেখুন ঠান্ডার মধ্যে নেকামি করার ধৈর্য আমার নাই।এমনিতেই অনেকক্ষণ ধরে ঠান্ডার মধ্যে মেঝেতে বসিয়ে রেখেছেন।আমার ফোনটা-ও হাতে দিচ্ছেন না।বসতে বলেছেন।বসেছি,এভাবে উজবুক মতো তাকিয়ে থাকার কিছু নেই।
–তুমি আমাকে উজবুক বললে,তোমার ফেসবুক একাউন্ট এখনই ডিলিট করে দিব।ফোন এখনো হাতেই পড়ে নাই।এখনই এমন পাগলামি করছো।নিজের হাতে ফোন পেলে আমাকে চিনবেনই না।
–দুইটা বছর ছিলেন না।আমার ফোন ছিল না।আমি একা থাকি নাই।আমি কি’ আপনাকে ভুলে গিয়েছি।লাগবে আপনার ফোন।আমি চলে যাচ্ছি।তানহা উঠে যেতে লাগলে ইফাদ তানহা’কে দু’হাতে আবদ্ধ করে ফেললো।
–এত রাগ করো কোনো?আমি তো’ তোমার সাথে মজা করছি।এই নাও তোমার ফোন।
–লাগবে না।
–এতক্ষণ ফোন ফোন করে,জীবন শেষ করে দিচ্ছিলে।এখন নিবে না কেনো?
–আপনি কার নামে সিম তুলেছেন?
–কেনো আমার নামে!
–আমি এই সিম দিয়ে অপরাধ মূলক কাজ করবো।আর পুলিশ এসে আপনাকে ধরে নিয়ে যাবে।
–আমারই ভালো কোনো কাজ করতে হবে না।আমি জেলে বসে বসে খাব।
–পুলিশের মার তো’ খান নাই।একদিন খেলে দ্বিতীয় দিন বলবেন না।দেখি আপনার ফোন দিন।
–দিতে পারি আমার একটা শর্ত আছে।
–কি শর্ত?
–আমার সাথে কয়টা ছবি তুলতে হবে।
–আচ্ছা তুলবো।এখন আপনার ফোন দেন।ইফাদ নিজের ফোনটা তানহার দিকে এগিয়ে দিল।তানহা ফোন হাতে নিয়ে বলল।
–পাসওয়ার্ড বলুন।
–আমার কাছে দাও।আমি খুলে দিচ্ছি।
–আমাকে বললে,আপনার সব টাকা পয়সা সব লুটে নিব নাকি।
–আমার “বউজান”।
–আপনার মতলব কি’ বলেন তো’।
–আমার কোনো মতলব নেই।
–তাহলে পাসওয়ার্ড বলতে বললাম।আপনি আমার বউজান বললেন কেনো?
–আরে বোকা আমার পাসওয়ার্ড-ই আমার বউজান।
তানহা হতভম্ব হয়ে ইফাদের দিকে তাকালো।মানুষের পাসওয়ার্ড আবার এমন হয় নাকি।তানহা ফোনের দিকে মনযোগ দিল।প্রথমে ইফাদের গ্যালারিতে গেল তানহা।সেখানে ইফাদের অনেক সুন্দর সুন্দর ছবি দেখতে পেল।চৈতালির,ইফাদের বড় ভাইয়ের,ইফাদের বাবার,পারিবারিক ছবি-ও দেখতে পেলো তানহা।সবকিছু মনযোগ সহকারে দেখছিল তানহা।
ইফাদ তানহার ফোন নিয়ে নিজের আইডি সার্চ করলো।তারপর তানহার আইডি থেকে নিজের আইডিতে ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট পাঠালো।ইফাদ খপ করে তানহার হাত থেকে নিজের ফোন নিয়ে নিল।ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট একসেপ্ট করে,আবার দিয়ে দিল।তানহা এতে বেশ বিরক্ত হলো।দু’জনেই ফোনের মধ্যে মনযোগী হয়ে আছে বেশ।
তানহা ইফাদের ফেসবুক প্রোফাইল ঘেঁটে দেখছিল।তখনই স্রুতি ইসলাম আইডি থেকে মেসেজ আসলো।তানহা দ্রুত মেসেজ সিন করে ফেললো।
–ইফাদ কেমন আছো।তুমি আমার নাম্বার ব্লক করে রাখছো কেনো?তুমি নাকি বাংলাদেশে আমাকে বলোনি কেনো?তুমি আমাকে তোমার বাসার ঠিকানা দাও।আমি তোমার সাথে দেখা করতে চাই।তোমার সাথে কথা না বলতে পারলে আমার ভালো লাগে না।তুমি কি’ আমার অনুভূতি বুঝো না।আমি তোমাকে সত্যি অনেক ভালোবাসি ইফাদ।
মেসেজটা পড়ে তানহার মুখের আধার ঘনিয়ে এলো।তারমানে ইফাদ অন্য কাউকে ভালোবাসে।আমার জন্য শুধু নিজের দায়িত্ব পালন করছে।ফুরফুরে মনটা নিমিষেই খারাপ হয়ে গেলো।আঁড়চোখে ইফাদের দিকে তাকালো।ইফাদের দৃষ্টি ফোনের দিকে বিদ্যমান।
–স্রুতি কে?
তানহার কথা শুনে ইফাদ চমকে উঠলো।মনে মনে যে,ভয়টা পেয়েছিল।সেটাই হলো’।স্রুতি মেয়েটা ইফাদের কাছে বিরক্তিকর একটা মেয়ে।কাজের জন্য সৌদি আরবে সহ্য করেছে।বাংলাদেশে এসেই স্রুতির নাম্বার ব্লক করে দিয়েছিল।আজকে আসার সময় ইফাদ স্রুতির রিকুয়েষ্ট ডিলিট করে দেওয়ার বদলে একসেপ্ট করে ফেলছিল।ভেবেছিল বাসায় এসে আনফ্রেন্ড করে দিবে।তার আগেই তানহা দেখে ফেললো।কি’ সর্বনাশ আমার সংসার শুরু হবার আগে,সবাই যুক্তি পরামর্শ করে ভেঙে দেওয়া’র প্রচেষ্টায় নেমেছে।ইফাদের থেকে উত্তর না পেয়ে তানহা বলল।
–এই জন্য আপনি আমাকে ফোন দিতে চান না।স্রুতি মেয়ের সাথে আপনি রিলেশনে আছেন।নেন কথা বলুন।আপনার ভালোবাসার মানুষের ভালো লাগছে না আপনাকে ছাড়া।আপনাকে অনেক ভালোবাসে আপনার গার্লফ্রেন্ড।
–তুমি আমাকে ভুল বুঝছো তানহা।আমি তোমাকে সবটা খুলে বলছি।
–আমি ছেলেদের সাথে কথা বললে আপনার মুখের দিকে তাকানো যায় না।আর একটা মেয়ে আপনাকে ভালোবাসি বলেছে।তবু্ও আমি ধৈর্য ধরে আপনার সাথে কথা বলবো।আপনি না বললেন আপনি মেয়েদের ঘৃণা করেন।তাহলে আপনার ফ্রেন্ড লিস্টে মেয়ে আসলো কোথায় থেকে।
–আমি ভুল করে নিয়ে ফেলছি।তুমি আনফ্রেন্ড করে দাও।
–হ্যাঁ আমি আনফ্রেন্ড করে দিব।আপনি পরে ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট দিয়ে।আপনার গার্লফ্রেন্ডকে ভুলিয়ে ভালিয়ে বুঝিয়ে নিবেন।
–তাহলে ব্লক করে দাও।
–একটা আইডি ব্লক করে দিব।অন্য আইডি দিয়ে কথা বলবেন তাই না।
–স্রুতি মেয়েটা সৌদি আরবে থাকতে আমাকে বিরক্ত করতো।সেখানে আমি কাজ করতাম দেখে ওকে সহ্য করছি।বাংলাদেশে আসার পরে ওর নাম্বার ব্লক করে দিয়েছে।আল্লাহর কসম ওর সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।বাংলাদেশে আসার পরে মনের ভুলেও যোগাযোগ রাখি নাই।
–আচ্ছা বিশ্বাস করলাম আপনার কথা।
–একটা কথা কি’ জানো তানহা।বিশ্বাস ছাড়া ভালোবাসা অর্থহীন।আর অধিকার ছাড়া সম্পর্ক মূল্যহীন।
তানহা একহাতে ইফাদে’র দু’গাল চেপে ধরে বলল।
–বিশ্বাস আছে দেখে আপনার কথা গুলো শুনলাম আর বিশ্বাস করলাম।অধিকার আছে দেখে কৈফিয়ত চাইলাম।আপনি শুধু আমার মনে থাকে যেনো।মনের ভুলেও যদি আপনার দু’চোখ অন্যদিকে যায়।আপনার দু-চোখ আমি উপরে ফেলে দিব।আমাকে দেখে যতটা ভালো মেয়ে মনে হয়।আমি কিন্তু এতটা ভালো মেয়ে নই।আমি নিজের ভালোবাসার মানুষের ক্ষেত্রে খুব স্বার্থপর।যেটা আমার সেটা শুধুই আমার।এক বিন্দু যদি অন্য কারো হয়।তাহলে তাকে আমার লাগবে না।
–গাল ছাড়ো ব্যথা পাচ্ছি কি সাংঘাতিক বউ আমার।ঘরে সুন্দরী বউ রেখে কেউ অন্য মেয়েদে’র দিকে তাকায়।আমি ভাই কালো মানুষ।তোমার মতো সুন্দরী মেয়ে আমাকে বিয়ে করেছে।এটাই আমার কাছে অনেক।এখন তুমি কিভাবে ভালো থাকবে।তোমাকে কিভাবে ভালো রাখা যায়।এসব ভাবতে হবে।বাহিরের কাউকে নিয়ে ভাবার সময় নেই।তুমি কথা দিয়েছিলে ছবি তুলবে।
দু’জন মিলে অনেক গুলো ছবি তুললো।তানহা মুখ ধুইয়ে এসে শুইয়ে পড়ল।ইফাদ ফ্লোরে শুইয়ে পড়ল।তানহা মনযোগ সহকারে ফোন দেখছে।তানহার ফ্রেন্ড লিস্টে ইফাদ ছাড়া কেউ নেই।ইফাদ নিজের আইডির সাথে তানহার আইডি ট্যাগ করে ম্যারিড স্ট্যাটাস দিয়েছে।তানহার আইডিতে কোনো লাইক কমেন্ট না পড়লেও ইফাদের আইডিতে পড়তে শুরু করেছে।সবাই ইফাদ আর তানহাকে শুভকামনা জানালো।
–তানহা’!
–বলেন।
–আজকে তুমি নিচে ঘুমাবে।দিন দিন শীত প্রচুর বাড়ছে।ফ্লোরে ঘুমানো কষ্টকর হয়ে গিয়েছে।
–আমি কেনো নিচে ঘুমোতে যাব।আমার এত কিসের দুঃখ জেগেছে মনে।
–একদিন তুমি ফ্লোরে ঘুমাবে একদিন আমি ঘুমাবো।
–আমি এত মহান নই।পারবো না ফ্লোরে ঘুমোতে।আপনি আপনার ঘরবাড়ি ভেঙে বিছানায় চলে আসুন।
–না’।
–কেনো আমার গায়ে কি’ চুলকানি আছে।আমার সাথে ঘুমালে তা’ আপনার শরীরে প্রবেশ করবে।
–আমার মেয়ে মানুষের সাথে ঘুমোতে শরম করে।
–প্রথম দিন এসে ঘুমিয়ে ছিলেন।তখন শরম করেছিল না।অন্ধকারের মধ্যে টেনে ধরে ছিলেন।তখন শরম করেছিল না।
–এভাবে বলছো কেনো?একটা বার ভেবে দেখো?আমি কতদূর জার্নি করে আসছিলাম।আমার একটু ঘুমের দরকার ছিল।আমার চারিদিকে কোনো খেয়াল ছিল না।সাত-পাঁচ না ভেবে ঘুমিয়ে পড়েছি।
–এখন-ও সাত-পাঁচ না ভেবে উঠে এসে বিছানায় ঘুমান।
–আমার কিন্তু ঘুমের মধ্যে জড়িয়ে ধরার অভ্যাস আছে।
–কেউ যদি ঘুমের মধ্যে আমাকে জড়িয়ে ধরে আমি কিছু মনে করবো না।
–কিন্তু আমার শরম করে।
–আল্লাহ তুমি আমাকে কার পাল্লায় ফেলে দিলে।এই ছেলের কথায় কথায় শরম করে।এত যখন শরম করে নিচেই ঘুমিয়ে পড়ুন।আর একটা কথা বললে,আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।বলেই তানহা অন্য দিকে ঘুরে শুইয়ে পড়ল।
ইফাদ গভীর ভাবে চিন্তায় মগ্ন হলো।এভাবে ত্রিশ মিনিট অতিবাহিত হয়ে গেলো।ইফাদ আবার বলে উঠলো।
–এই তানহা বিছানায় আসি।
–না।
–কেনো?
–আসতে দিতে পারি।কিন্তু আমার একটা শর্ত আছে।
–কি শর্ত?
–আপনি নামাজ পড়েন না।বিষয়টা আমার একদম ভালো লাগে না।আমাকে অনেক কষ্ট দেয়।আপনি আমাকে কথা দিন।ভোর থেকে আমার সাথে নামাজ পড়বেন।
–আচ্ছা এই ব্যাপার বউ তুমি আমাকে আদর করে ডেকে দিবে।আমি উঠে নামাজ পড়তে যাব।বউ হয়েছো এতটুকু জানো না।সকালে স্বামীকে ভালোবাসে ভুলিয়ে ভালিয়ে বুঝিয়ে ঘুম থেকে তুলতে হয়।
–অবশ্যই তা’ আবার বলতে হবে জামাই জান।আপনার জন্য সকালে’র ঠান্ডা পানি আমি রেডি করে রাখবো।
ইফাদ মুখটা বাংলার পাঁচের মতো করে ফেললো।
–এই তোমার ভালোবাসা।
–আপনি নামাজ পড়বেন না।আর আমি আপনাকে ভালোবাসবো কখনোই না।যদি নামাজ পড়েন।তাহলে ভালোবাসবো এর আগে না।
–বললাম তো’ নামাজ পড়বো।আমি এখন ওপরে আসতে পারবো।
–আসুন।
ইফাদ নিজের ফ্লোরের সংসার ভেঙে সবকিছু নিয়ে,তানহার সংসারের দিকে এগোতে লাগলো।বিছানায় শুইয়ে কম্বলের মধ্যে ঢুকে গেলো।
–এত কিনারে শুইয়েছেন কেনো?পড়ে যাবেন।একটু এগিয়ে আসুন।তানহার কথায় ইফাদ একটু সাহস পেলো।একটু এগিয়ে গেলো।তানহা নিজের ফোনে ব্যস্ত।ফোন ব্যবহার করা একটু বেশি হয়ে যাচ্ছে।ইফাদ রেগে বলল।
–তানহা তোমার ফোন ব্যবহার করা একটু বেশি হয়ে যাচ্ছে।ফোন রেখে চুপচাপ ঘুমাও।ঘড়িতে দেখেছো কয়টা বাজে।
–একটা বাজতে যাচ্ছে আর একটু দেখেই ঘুমিয়ে যাব।
–অন্যদিন এগারোটার সময় ঘুমিয়ে যাও।একটা বাজতে যাচ্ছে।এখনো তাকিয়ে আছো।ফোন কিন্তু ভেঙে ফেলবো।
তানহা মন খারাপ করে ফোন রেখে দিল।ফোন বালিশের নিচে রেখে চোখ বন্ধ করে ফেললো।মনটা ফোন ফোন করছে তানহার।ইফাদের ভয়ে নিতেও পারছে না।কিছু সময় অতি বাহিত হবার পরে দুজনেই ঘুমিয়ে গেলো’।
চলবে…..
#এক_মুঠো_কাঁচের_চুরি
#পর্ব_১৫(বোনাস পর্ব)
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu
চারদিকে ভোরের আজানে’র মধুর সুর কানে আসতে-ই আড়মোড়া ভেঙে জেগে উঠলো তানহা।ইফাদ বেঘোরে ঘুমাচ্ছে।তানহা দু-চোখ ডলতে ডলতে নিচে নামলো।অজু করে এসে ইফাদকে ডাকতে শুরু করলো।
–এই শুনছেন।আপনি বলেছিলেন।আজকে ভোর থেকে আপনি আমার সাথে নামাজ পড়বেন।উঠেন মসজিদে যান।
ইফাদে’র কোনো হেলদোল নেই।আপন মনে ঘুমিয়ে যাচ্ছে।তানহা তার ঠান্ডা হাত ইফাদে’র গালে চেপে ধরলো।ইফাদ একটু নড়েচড়ে উঠলো।
–আপনি কিন্তু বলেছিলেন।আজ থেকে আমার সাথে নামাজ পড়বেন।
–উম কাল থেকে পড়বো।
–আজ-কাল বলে কোনো কথা নেই।এখন এই মুহূর্তে পড়তে হবে।উঠুন বলছি।না হলে ঠান্ডা পানি গায়ে ঢেলে দিব।
ইফাদ আবার ঘুমিয়ে গেছে।তানহা ইফাদের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল।
–আপনি কিন্তু আমাকে কথা দিয়ে ছিলেন।যে,কথা দিয়ে কথা রাখে না।আমি তাকে একদম পছন্দ করি না।আমি কিন্তু আপনার সাথে আর কথা বলবো না।এখন আপনি ঠিক করেন।আপনি কি করবেন।
ইফাদ আলসে ভঙ্গিতে উঠে বসলো।অসহায় দৃষ্টিতে তানহার দিকে তাকালো।কিছুক্ষণ ঝিম মেরে বসে রইলো।উঠে অজু করে,টুপি হাতে নিয়ে মসজিদের দিকে রওনা হলো।তানহা নামাজে দাঁড়িয়ে গিয়েছে।ইফাদের যাওয়া দেখে বেশ খুশি হয়েছে।নামাজ শেষ করে,কোরআন শরীফ নিয়ে বসলো তানহা।ভোরের নামাজ শেষ করে।প্রতিদিন একঘন্টা করে কোরআন তেলওয়াত করে তানহা।
বেশ কিছুক্ষন পরে ইফাদ নামাজ পড়ে বাসায় চলে আসলো।নিজের রুমে আসতে-ই তানহার মুখে মধুর কোরআন তেলওয়াত শুনতে পেল।ইফাদের মনে প্রশান্তির হওয়া বইয়ে গেলো।মেয়েটা কি’ সুন্দর কোরআন পড়তে পারে।সৌদি আরবে থাকতে ইফাদ নিয়মিত নামাজ পড়তো।বাংলাদেশে এসে আর পড়ে না।বিছানায় শুইয়ে শুইয়ে তানহার কোরআন তেলওয়াত শুনছিল।শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে গেলো ইফাদ।
তানহার কোরআন পড়া শেষ হলে,তা’ যত্ন সহকারে তুলে রাখলো।নিজের রুম থেকে বেড়িয়ে রান্না ঘরের দিকে গেলো।সবকিছু জোগার করতে শুরু করলো।রান্না করে সবাইকে ডাক দিল।চৈতালি আর রোকেয়া বেগম চলে এসেছে।ইফাদের আসার নামে খোঁজ নেই।তানহা বিরক্ত হয়ে রুমে আসলো।
–এই যে,আপনার সমস্যা কি’?অন্য দিন আগেভাগে উঠে পড়েন।আজকে পড়েপড়ে এত ঘুমোচ্ছেন কেনো?কি হয়েছে আপনার।
–বউ থাকতে আমি একা কষ্ট করে উঠতে যাব কেনো?বউ এসে আদর করে ভালোবেসে তুলে দিবে।
–তারমানে আপনি ইচ্ছে করে শুইয়ে ছিলেন।
–এই ছোট বিষয়টা তোমার এত বড় মাথা বুঝতে এত দেরি করলো।
তানহা রেগে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো।ইফাদ হালকা হাসলো।উঠে ফ্রেশ হয়ে সবাই মিলে খেতে বসলো।
চৈতালি একা একা হেঁটে যাচ্ছে।আজকে দেরি হয়ে গিয়েছে।সেজন্য সবাই চৈতালি’কে রেখেই চলে গিয়েছে।চৈতালি’র কলেজে’র কাছে একা নিয়ে যেতে চায় না গাড়ি আলারা।চৈতালি হাঁটতে শুরু করেছে।একটা গাড়ি পেলেই উঠে পড়বে।চৈতালি হেঁটে যাচ্ছিল।তখনই কেউ পেছনে থেকে বলে উঠলো।
–চাইলে আমার বাইকে আসতে পারো।
চৈতালি পেছনে তাকিয়ে আবির’কে দেখে অবাক হয়ে গেলো।ভদ্রতা বজায় রেখে বলল।
–ধন্যবাদ স্যার লাগবে না।আমি চলে যেতে পারবো।
–আমি একটা গাড়ি ডেকে দিব।
–আমি খুঁজে নিব।কি’ ব্যাপার আপনি নিজে থেকে আমার সাথে কথা বলছেন।
–তুমি আমাদের কলেজের স্টুডেন্ট,তোমার ক্লাসের দেরি হয়ে যাবে।তোমার ভালো জন্যই বলেছি।
–আপনি প্লিজ চলে যান।এভাবে রাস্তার মধ্যে কথা বললে,লোকে কি’ বলবে।সবাই আমার দিকে কেমন করে তাকিয়ে আছে।ভাইয়ার কাছে বিচার দিলে,আমি শেষ।
আবির কোনো কথা না বলে চলে গেলো।আবির চলে যেতেই চৈতালি স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো।
তানহা রুমে বসে ভাবছে চৈতালির সাথে কথা বলতে হবে।চৈতালির জীবন কোনোভাবেই নষ্ট হতে দেওয়া যাবে না।আবির চৈতালিকে প্রয়োজনে ব্যবহার করবে।তানহা হারে হারে টের পাচ্ছে।চৈতালি আবিরের মোহে ডুবে আবিরের জালে পা’ না দিয়ে ফেলে আবার।তানহার ভাবনার মাঝেই ইফাদ বলল।
–শুনো আমি কাজে যাচ্ছি।আমার আসতে অনেক দেরি হবে।বিকেল পাঁচটায় আমার কাজের ছুটি হবে।
–আপনার কাজ হয়েছে।কই আমাদের তো’ বলেন নাই’।
–চৈতালি বলল না তানভীর ভাইয়া একটা এনজিও খুলেছে।সেখানে-ই কাজ নিয়েছি।কালকে কিসের জন্য ঐ’ দিকে গিয়েছিলাম বলো।তানভীর ভাই আমাকে।আমার এরিয়া দেখিয়ে দিচ্ছিল।
–মানে’?
–মানে বোঝানোর সময় নেই।বাসায় এসে বুঝিয়ে বলবো।
–আচ্ছা দেখে শুনে সাবধানে যাবেন।আর হ্যাঁ মনের ভুলেও কোনো মেয়ের দিকে তাকাবেন না।সাবধানে থাকবেন।নিজের দিকে খেয়াল রাখবেন।
–যথা আজ্ঞা মহারানী।বলেই মিষ্টি হেসে চলে গেলো ইফাদ।তানহা নিজের কাজে মনযোগ দিল।
কলেজ ছুটি হয়ে গিয়েছে।আজকে চৈতালির ভালো লাগছে না।আজকে প্রাইভেট পড়তে যাবে না।উত্তপ্ত রোদ্রময় দুপুরে হেঁটে যাচ্ছে চৈতালি।আবির রাস্তায় দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছিল।চৈতালিকে দেখে বলল।
–এই রোদের মধ্যে হেঁটে যাচ্ছো কেনো।
–আমরা মধ্যবিত্ত স্যার আমাদের সব কিছুর অভ্যাস আছে।এই সামান্য রোদ আমার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।
–বেশ কথা বলতে জানো।ফুচকা খাবে।তোমরা মেয়েরা তো’ ফুচকা খেতে অনেক পছন্দ করো।
–না স্যার খাব না।বাসায় যাব।আজকে ভালো লাগছে না।
–আমাকে এড়িয়ে চলছো।
–ভাবি আপনার থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলতে বলেছে।আমি আপনাকে ভালোবাসি ঠিকি।কিন্তু তারা আমার গুরুজন।আমি তাদের কথা অমান্য করতে পারি না।
–আমি যদি তোমাকে বিয়ে করতে চাই।
আবিরের কথা শুনে,চৈতালি চোখ তুলে তাকালো।আবিরের দৃষ্টি চৈতালির দিকে বিদ্যমান।
–আপনি আমার পরিবারকে জানান।ওরা যা’ বলবে তাই হবে।
–আমি যদি তোমাকে নিয়ে,পালিয়ে যাই।তাহলে তুমি আমার সাথে যাবে না।
চৈতালি আবিরকে ভালোবাসে।আবিরের এমন কথায় চৈতালির ভালো লাগার কথা।কিন্তু রাগ হচ্ছে কেনো?আবিরের জন্য মনের কোণে পাহাড় সমান অভিমান জমা হয়েছে।এতদিন কখনো আগে নিজ থেকে যে,আবির কথা বলে নাই।তানহাকে দেখার পর থেকে নিজে যেচে কথা বলছে।বিষয়টা মেনে নিতে বেশ কষ্ট হচ্ছে চৈতালির।তানহার ওপরে-ও বেশ রাগ হচ্ছে।এসব ভেবে নিজেই নিজেকে ধিক্কার জানালো চৈতালি।
–স্যার আজকে আসি।
–আমার সাথে কথা বলতে ভালো লাগছে না।
–ভাবিমনি কে’ এখনো ভালোবাসেন।
আবিরের দৃষ্টি নত হয়ে গেলো।হাসিমাখা মুখটা কালো হয়ে গেলো।ধীর কণ্ঠে বলে উঠলো।
–তুমি নাকি বাসায় যাবে।যেতে পারো।
চৈতালি এক মুহুর্ত দাঁড়ালো না।হাঁটতে শুরু করলো।দু-চোখ বেয়ে অনবরত অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে।আর একটু আবিরের সামনে থাকলে কান্না করে দিত।দ্রুত গতিতে হাঁটছে।বাসায় এসে গোসল করে শুইয়ে পড়ল চৈতালি।আবিরের কথা ভাবতে ভাবতে না খেয়েই ঘুমিয়ে গেলো।
সন্ধ্যার দিকে ইফাদ বাসায় আসলো।চৈতালি নিজের রুম থেকে বের হয়ে আসলো।তানহা চৈতালিকে দেখে বলল।
–তুমি কখন বাসায় আসলে?
–আমি দুপুর এসেছি ভাবি।খুব খারাপ লাগছিল।তাই গোসল করে ঘুমিয়ে পড়ে ছিলাম।
–তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে এসো।আমি তোমাদের খেতে দিচ্ছি।
দুই ভাইবোন একসাথে খেতে বসলো।
–ভাবি আমার রুমে তোমার চারটা সালোয়ার কামিজ আছে।রাতে নিয়ে যেও।
–আমি তো’ সালোয়ার কামিজ পড়ি না।
–আরে ভাইয়া কিনেছে।তোমার পছন্দের রং কালো।তোমার অনেক ইচ্ছে ছিল।তুমি কি’ কি’ কিনবা।আমাকে একদিন সব বলেছিলে,তোমার মনে আছে ভাবি।কালকে ভাইয়া আমার থেকে সবকিছু জেনে,তোমার জন্য কিনে নিয়ে আসছে।আমি কত আশা করে ছিলাম।তোমার জন্মদিনে তোমাকে সারপ্রাইজ দিব।ভাইয়া আমার সব আশা মাটি করে দিয়েছে।
–আপনার মনে হয় না।আপনি একটু বেশি করছেন।টাকা আছে দেখে সব খরচ করতে হবে।এর কোনো মানে আছে।এই পৃথিবীতে যার টাকা আছে।তার মূল্য সবার কাছে আছে।আর যার টাকা নেই।তার মূল-ও কারো কাছে নেই।টাকার কাছে সবার মুখ কালো।আর কখনো এমন করবেন না।
–আমি কি সব সময় দিব নাকি।দুইটা বছর তোমার কোনো দায়িত্ব নেই নাই।আমাকে নিয়ে তোমার অনেক আশা থাকতে পারে।একবারে অনেক গুলো কিনে দিলাম।সারাবছর ব্যবহার করবে।আমি কি’ প্রতিদিন তোমার জন্য জামা-কাপড় কিনতে যাব।কয়টা ব্যবহার করবে।কয়টা তুলে রাখবে।এই ছোট বিষয়টা’কে তোমরা এত বড় করছো কোনো?আমি বুঝতে পারছি না।
–তোরা ছেলে মানুষ বুঝবি না।তোরা টাকা উড়াই’তে পারলে বাঁচিস।তুই কতটা কষ্ট করে টাকা রোজগার করিস।তোর বউ তোর কষ্টের মূল্য বুঝে জন্য তোকে অপচয় করতে নিষেধ করছে।আজ তোর কাছে টাকা আছে।কাল তোর কাছে টাকা না-ও থাকতে পারে।বসে বসে খেলে রাজার ধন-ও ফুরিয়ে যায়।
–আমি কি বসে বসে খাব নাকি।আমার চাকরি হয়েছে বেশ।মাসে মাসে দশ হাজার টাকা তুলতে পারবো।এটাই আমার কাছে অনেক।আম্মু জানো আমার এখানের কাজ করতে ইচ্ছে করছে না।কষ্ট বেশি ফল কম।কিন্তু বাহিরের দেশে কষ্ট যেমন আছে।ঠিক তেমন ফল-ও আছে।
–তুই কি বাহিরে যাওয়ার পরিকল্পনা করছিস।
ইফাদ একবার তানহার দিকে তাকিয়ে বলল।
–ভাবছি কি করা যায়।এখানে না পোষালে আবার প্রবাসে চলে যাব।ইফাদের কথা শেষ হবার সাথে সাথে তানহা উঠে চলে গেলো।ইফাদ করুন দৃষ্টিতে তানহার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।পাগল খেপিয়ে দিয়েছে।এখন তানহা আর ইফাদের সাথে কথা বলবে না।রোকেয়া বেগম আর চৈতালি ইফাদের অবস্থা বুঝতে পেরে মুখ টিপে হাসছে।রোকেয়া বেগম নিজেকে সামলে নিয়ে বলল।
–ইফাদ কালকে শুক্রবার।তোর মনে আছে তোকে আমি কি বলেছিলাম।একদম খাবার ছেড়ে উঠে যাবি না।ভাইটা তোর দায়িত্বটা-ও তোর।তুই এভাবে নিজের দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারিস না।মায়ের কথা শুনে ইফাদের দৃষ্টি নত হয়ে গেলো।মুহুর্তের মধ্যেই চোখ দুটি লাল হয়ে গেলো।চুপচাপ খেয়ে নিল।
–আমার কোথায় কষ্ট পাস না বাবা।কষ্ট আমার-ও লাগে।দশ মাস দশ দিন পেটে রেখেছি।দুই বছর বুকে রেখেছি।সেই ছেলে আমার ছাব্বিশ বছরের ভালোবাসাকে মিথ্যা প্রমাণ করে দিল।আমার খারাপ লাগে না।কথা গুলো বলতে বলতে কান্না করে দিল রোকেয়া বেগম।
–আম্মু তুমি কান্না করো না।আমি আর রাগ করবো না।কালকে সব ব্যবস্থা করে দিব।
ছেলের কথায় স্বস্তি পেলেন রোকেয়া বেগম।ইফাদ খেয়ে নিজের রুমে আসলো।তানহা মাথায় চিরুনি করছে।
–কি ব্যপার তানহা।তুমি ফোন ব্যবহার করছো না।আমি বিশ্বাস করতে পারছি না।তানহা ইফাদের দিকে তাকিয়ে মুখ বাকিয়ে বলল।
–আমাকে আপনার এতটা বোক মনে হয়।আপনি আসার আগেই শান্তি করে ফোন ঘেঁটে নিয়েছি।এখন আপনার কাছে ভালো থাকবো।ইফাদ স্থীর দৃষ্টিতে তানহার দিকে তাকলো।
–কি ফাজিল মেয়ে।আবার গর্ব করে বলছে।যখন ভালো লাগবে না।একা থাকবে।দেখবে তোমার সময় কাটছে না।তখন ফোন ব্যবহার করবে।
–আপনি কি’ ফোন আমাকে তুলে রাখার জন্য দিয়েছেন।
–মোটেও না।প্রয়োজনে ব্যবহার করার জন্য দিয়েছি।এখন তুমি যদি কাজ ফেলে অকারণে ফোন ব্যবহার করো।তাহলে তো’ কথা শুনতেই হবে।
–আপনি যখন নতুন ফোন হাতে পেয়ে ছিলেন।তখন আপনার অনুভূতি কেমন ছিল।আমার-ও ঠিক তেমন অনুভূতি হচ্ছে।কয়টা দিন পরে এমনি ঠিক হয়ে যাবে।
–একটু আমার সাথে এসো।
–আপনি আবার চলে যাবেন।আপনার কোনো কথা আমি শুনবো না।
–আমি চলে যাব বলছি,এখনই চলে যাচ্ছি নাকি।বেশি কথা বলো না।আমার সাথে এসো।
তানহা ইফাদের সাথে ড্রয়িং রুমে গেলো।ইফাদ চৈতালি আর রোকেয়া বেগম কে উদ্দেশ্য করে বলল।
–তোমাদের কি কি লাগবে বলো।আজকে সবকিছু এনে দিব।এর পরে আর কিছু দিতে পারবো না।
চৈতালি নিজের প্রয়োজনীয় জিনিস গুলো নিয়ে আসতে বলল।রোকেয়া বেগম ইফাদের পছন্দ মতো শীতের কাপড় এনে দিতে বলল।ইফাদ তানহাকে উদ্দেশ্য করে বলল।
–তোমার কি লাগবে।
–আমার সবকিছু কালকে এনে দিয়েছেন।পারলে আমাকে #এক_মুঠো_কাঁচের_চুরি এনে দিবেন।
–কখনো এনে দিব না।
–তাহলে আমার কিছু লাগবে না।
–আরো ভালো আমার টাকা বেঁচে যাবে।বলেই হাসতে হাসতে চলে গেলো ইফাদ।তানহা মন ভার করে ফেলল।এতকিছু এনে দিচ্ছে,#এক_মুঠো_কাঁচের_চুরি এনে দিলে কি হবে।
–ভাবিমনি তুমি মন খারাপ করো না।আমি তোমাকে কাঁচের চুড়ি এনে দিব।শুনলাম তুমি নাকি ফেসবুক আইডি খুলছো।তোমার ফ্রেন্ড লিস্টে আমার একটু জায়গা হবে গো’।
–না গো হবে না।আমার শখের আইডি আমি লুকিয়ে রাখবো।
চৈতালি তানহার কথা শুনে হেসে দিল।দু’জন গল্প করতে বসলো।
রাত নয়টার সময় ইফাদ হাতে অনেক গুলো ব্যাগ নিয়ে বাসায় ফিরলো।চৈতালির রুমে গিয়ে,কয়টা ব্যাগ চৈতালির হাতে দিল।চৈতালি খুব খুশি হলো।
–শোন এই বছরের আর কিছু চাইতে পারবি না।তোর ভাইয়ের পকেট একদম ফাঁকা।
–ভাইয়া আমার সাত হাজার টাকা।
–পারলে আম্মুকে গিয়ে বল।বলেই ইফাদ রোকেয়া বেগমের রুমে আসলো।রোকেয়া বেগম হাতে ব্যাগ ধরিয়ে দিয়ে বলল।
–দেখো আম্মু তোমার পছন্দ হয়েছে কি না।
–আমার ছেলের পছন্দ কখনো খারাপ হতে পারে না।তুই যা এনেছিস।আমি সেটাই পড়বো।আমি অনেক খুশি হয়েছি বাবা।এখন নিজের রুমে যা’।তানহাকে ডেকে নিয়ে আয়।সবাই মিলে খেতে বসবো।ইফাদ বাধ্য ছেলের মতো চলে গেলো।ইফাদকে দেখে তানহা দৌড়ে আসলো।
–আমার কাঁচের চুড়ি এনেছেন।
–না’।
–সত্যি নিয়ে আসেন নাই।তানহা মন খারাপ করে ফেললো।ইফাদ পকেট থেকে একটা বক্স বের করলো।দুটো চিকন সোনার চুড়ি বের করে তানহার হাতে পড়িয়ে দিল।তানহা হা’ হয়ে ইফাদের দিকে তাকালো।
–এভাবে তাকিয়ে থেকো না।আমার শরম করে।
–আমি আপনাকে সোনার চুড়ি নিয়ে আসতে বলছি।আমার কাঁচের চুড়ি লাগবে।
–কোনোদিন কিনে দিব না।
–আমার কিন্তু খুব রাগ হচ্ছে,আপনি এত খারাপ কেনো?আমাকে কাঁচের চুড়ি কিনে না দিলে আপনাকে আমি..
–আমাকে কি করবে।তানহা নিজের সবটুকু শক্তি দিয়ে ইফাদের হাতে কামড় বসিয়ে দিলো।ইফাদ জোরে আম্মু বলে চিৎকার দিয়ে উঠলো।রোকেয়া বেগম ড্রয়িং রুমেই ছিল।ছেলের গলার আওয়াজ পেয়ে ছেলের রুমে দিকে আসলেন।তানহা শাশুড়ীকে দেখে ইফাদের হাত ছেড়ে দিল।রোকেয়া বেগম মুখে আঁচল চেপে হাসতে হাসতে চলে গেলো’।
চলবে…..