#এক_মুঠো_কাঁচের_চুরি
#পর্ব_১৮
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu
আট নাম্বার কেবিনের পেশেন্ট মারা গেছে।উনার বাসার লোক জনদের খবর দাও,রফিকুল।বলেই সাদা শাড়ি পরিহিতা নার্সটি চলে গেলো।
রোকেয়া বেগম ও’ তানহার দৃষ্টি নার্সটির চলে যাওয়া’র দিকে বিদ্যমান।তানহা কিছু বলতে যাবে।তখনই আরেকটা নার্স এসে বলল।
–জরুরি বিভাগের পেশেন্টর বাড়ির লোকজন কে কে আছেন।দ্রুত এক ব্যাগ A+ রক্তের ব্যবস্থা করুন।রোগীর প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে।আবরার ইফাদের বাসার লোক জনদের বলেছি।তানহা দ্রুত বলে উঠলো।
–আমরা আবরার ইফাদের বাসার লোক।
–আমি কি বললাম শুনেছেন।দ্রুত রক্তের ব্যবস্থা করুন।বলেই নার্সটি চলে গেলো।
–আম্মা আপনার রক্তের গ্রুপ কি?
–আমার রক্তের গ্রুপ B+ ইফাদের বাবার রক্তের গ্রুপ A+ ছিল।
–চৈতালির রক্তের গ্রুপ কি?
–চৈতালির রক্তের গ্রুপ B+ মনে হয়।
–আচ্ছা আপনি অপেক্ষা করুন।আমি দেখছি।বলেই হন্তদন্ত হয়ে ছুটে গেলো তানহা।তানহা চলে যেতেই চৈতালি আসলো।চৈতালি মাকে দেখতে পেয়ে,মায়ের কাছে আসে।রোকেয়া বেগমকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো চৈতালি।রোকেয়া বেগম-ও মেয়েকে ধরে কান্না করে দিল।এতক্ষণ বহু কষ্টে নিজেকে শক্ত রেখেছিল।চৈতালির কান্না দেখে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলো না।
–আম্মু ভাইয়ার কিছু হবে না তো’।আমার ভাইয়া ঠিক হয়ে যাবে তো’।ভাইয়ার কোনো কমনসেন্স নাই।রাস্তার মাঝখানে দিয়ে কেউ হাঁটে।ভাইয়ার সাথে আমি প্রচুর ঝগড়া করবো।
–কান্না করিস না মা।আল্লাহর কাছে ভাইয়ের জন্য দোয়া কর।সোনা মেয়ে আমার কান্না করিস না।এর মধ্যে তানহা চলে আসলো।হাতে রক্তের ব্যাগ।
–আম্মা ব্লাড ব্যাংকে-ই রক্ত ছিল।আমি অন্যের রক্ত দিতে চেয়ে ছিলাম না।কার রক্ত কেমন।শরীরে কোনো রোগ-বালাই আছে কি না।কিন্তু এখন কিছু করার নেই।যেটা পেয়েছি নিয়ে আসলাম।
–তানহা তুমি দেরি করো না।তাড়াতাড়ি নার্সকে ডেকে রক্ত দিয়ে আসো।
তানহা অর্ধেক রাস্তায় যেতেই নার্স নিজেই এগিয়ে আসছিল।তানহার হাতে থেকে দ্রুত রক্তের ব্যাগ নিয়ে চলে গেলো।এক ঘন্টা পরে জরুরি বিভাগ থেকে ইফাদকে বের করে কেবিনে দেওয়া হলো।মাথায় প্রচন্ড আঘাত পাওয়া কারনে সেন্সলেস হয়ে গিয়েছিল ইফাদ।মাথায় বেশি আঘাত পেয়েছে।হাত-পা ছুলে গিয়েছে।শরীরের কিছু কিছু জায়গায় ভালোভাবেই ক্ষত হয়েছে।মাথায় ব্যান্ডেজ,হাতে স্যালাইন এক হাত কপালে দিয়ে দু’টো বন্ধ করে আছে ইফাদ।একটু আগেই জ্ঞান এসেছে তার।চুপচাপ সবকিছু দেখছে।দু-চোখ খুলে তৃষ্ণার্থ চক্ষু তানহাকে খুঁজে ছিল।এক পলক তানহাকে দেখার জন্য মনটা উতলা হয়ে আছে।ধীরে ধীরে সাড়া শরীরে ব্যথা অনুভব করতে পারছে ইফাদ।
–আপনাদের রোগীকে কেবিনে শিফট করা হয়েছে।আপনারা সবাই দেখে আসতে পারেন।তবে ওনাকে দিয়ে বেশি কথা বলাবেন না।মাথায় চাপ পড়ে এমন কোনো কথা বলবেন না।মাথায় বেশি আঘাত পেয়েছে।বলেই চলে গেলো’।তিনজন মিলে ইফাদের কেবিনে চলে গেলো।
রোকেয়া বেগম ছেলের গালে হাত দিয়ে আদর করতে লাগলো।ইফাদ চোখ মেলে তাকালো।মুখটা মলিন হয়ে গেছে।চেহারায় বিধ্বস্ততার বহিঃপ্রকাশ পাচ্ছে।ছেলের এমন চেহারা দেখে,রোকেয়া বেগমে’র বুকের ভেতরে দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে।বুকের মাঝখানে হাহাকার পড়ে গেছে।নিজের সর্বস্ব শক্তি দিয়ে,কান্না নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে।অবাধ্য অশ্রুধারা কিছুতেই হার মানবে না।না চাইতে-ও চোখ দিয়ে নোনাজল গড়িয়ে পড়ল।
–আম্মু কান্না করছো কেনো?
–কথা বলিস না।আমি আর কান্না করবো না।
–ভাইয়া তুমি খুব খারাপ।খালি সুস্থ হয়ে নাও।তোমার সাথে আমার যুদ্ধ হবে।
চৈতালির কথায় ইফাদ মলিন হাসলো।ইফাদের চোখ গেলো দূরে দাঁড়িয়ে থাকা তানহার দিকে।মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।কান্না করতে করতে চোখ-মুখ ফুলিয়ে ফেলেছে।চোখ দিয়ে অনবরত অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে।তানহার মুখের দিকে তাকালেই যে,কারো মায়া হবে।ইফাদের বুকটা কেঁপে উঠলো তানহার এমন অবস্থা দেখে।
–সারাদিন তোদের কিছু খাওয়া হয় নাই।আমরা বাসায় গিয়ে রান্না করে নিয়ে আসি।চৈতালি তুই ভাইয়ের কাছে থাক।
–আম্মু আমি তোমার সাথে যাচ্ছি।ভাবি ভাইয়ার কাছে থাকুক।
তানহা অভিমান করে বলল।
–সমস্যা নেই চৈতালি।তুমি ছোট মানুষ তুমি আম্মাকে সাহায্য করতে পারবে না।আম্মার-ও শরীর ভালো না।আমি রান্না করে নিয়ে আসবো।তুৃমি বসে থাকো।
–তুমি কথাই বলতে পারছো না ঠিকমতো।তোমার কথা গলায় আঁটকে আসছে’।তুমি আবার রান্না করবে।তাহলে ভাইয়ার আর খাওয়া হবে না।আম্মু চল তো’।
–চৈতালি তুমি থাকো।আমি আম্মার সাথে যাচ্ছি।আম্মা চলুন।বলেই রোকেয়া বেগমে’র হাত ধরে চলে যেতে লাগলে ইফাদ ডাক দিল।
–তানহা তুমি থাকো।চৈতালি যাক আম্মুর সাথে।
–দেখো ভাবি ভাইয়াকে ডক্টর মাথায় চাপ দিতে নিষেধ করেছে।ভাইয়া যখন বলেছে তুমি ভাইয়ার কাছে থাকবে।তারমানে তুমি ভাইয়ার কাছে থাকবে।বলেই রোকেয়া বেগম’কে নিয়ে চলে গেলো।
তানহা দরজার কাছে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।কোনো কথা বলছে না।পুরো রুম জুড়ে নীরবতা বিরাজমান করছে।নীরবতা ভেঙে ইফাদ বলল।
–দূরে দাঁড়িয়ে আছো কেনো?আমার কাছে এসে বসো।
তানহা বিনাবাক্যে ইফাদের কাছে গিয়ে বসলো।
–ঘুরতে নিয়ে যায়নি বলে রাগ করেছো।ইফাদের কথা শুনে,তানহা অবাকে’র শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গেলো’।মানুষটা অসুস্থ।উনি এখনো ঘুরতে যাওয়া’র কথা ধরে বসে আছেন।খুব রাগ হচ্ছে তানহার।
–কথা বলবে না আমার সাথে।
–আপনি আমার সাথে কথা বলবেন না।ডক্টর কাউকে কথা বলতে নিষেধ করেছে।
–সুস্থ হলে ঘুরতে নিয়ে যাব।
–আপনার কোনো কান্ড জ্ঞান নেই।রাস্তায় মাঝখানে দিয়ে কেউ হাঁটে।কত করে বলি বাহিরে গেলে সাবধানে থাকবেন।আপনি আমার একটা কথা-ও শুনেন না।আপনার কিছু হলে আমি কি নিয়ে বাঁচবো।বলেই হাউমাউ করে কান্না করে দিল তানহা।
–তোমার মাঝে দেখে ছিলাম।আমি আমার সর্বনাশ।যে,মাথায় তুমি থাকো।সেই মাথায় অন্য কিছু কিভাবে প্রবেশ করবে বলো।আমি তোমার কথা যখন ভাবতে শুরু করি।তখন পৃথিবীর কোনোকিছু আমার খেয়াল থাকে না।
তানহা ইফাদের কথা উত্তর দিল না।ইফাদের কথা ভেবে কান্নার আওয়াজ কমিয়ে দিল।ফুঁপিয়ে কান্না করছে তানহা।
–তানহা’।
তানহা চোখ মেলে তাকালো ইফাদের দিকে।ইফাদের দিকে তাকানো মাত্রই তানহার মনে হলো,কেউ তার কলিজা কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলছে।তবু্ও নিজেকে কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে।
–ব্যথা করছে।
–কোথায়?
তানহা ব্যস্ত হয়ে পড়ল।
–ঐদিকে কোথায় যাচ্ছো।এদিকে এসো।
–আপনার সমস্যা হচ্ছে ডক্টরকে ডেকে দিয়ে আসি।
–আমার ডক্টর তো’ আমার সামনেই আছে।নতুন করে ডক্টর ডাকতে হবে না।
–মানে?
–দূরে দূরে থাকো কেনো?আমার কথা বলতে সমস্যা হচ্ছে।আমার কাছে আসো।
তানহা কোনো কথা না বলে,ইফাদের পাশে গিয়ে বসলো।
–তোমাকে বললাম আমার ব্যথা করছে।কোথায় তুমি আমাকে দেখবে।তা-না তুমি বাহিরে চলে যাচ্ছো।
–কোথায় ব্যথা হচ্ছে আপনার।
ইফাদ বুকের মাঝখানে দেখিয়ে দিয়ে বলল এখানে।বিশ্বাস না হলে কান রেখে দেখো।তানহা ইফাদের বুকে হালকা করে মাথা রাখলো।ইফাদের ধুকপুকানির আওয়াজ তানহা স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে।ইফাদের দিকে তাকিয়ে বলল।
–আপনি আমার সাথে মজা করছেন।
–তুমি আমার বান্ধবী লাগো।তোমার সাথে আমি মজা করবো।তুমি আমার বউ।তোমার চোখে পানি দেখলে আমার বুকের মাঝখানে লাগে।দেখতে পারছো না।তোমার চোখে পানি দেখে,ভেতরটা জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে।আমি নিজের ব্যথা সহ্য করে নিব।কিন্তু তোমার চোখের পানি সহ্য করবো না।আমার সামনে কান্না করলে।আমি এবার সত্যি মারা যাব।
–একদম বাজে কথা বলবেন না।
–তানহা চিৎকার করছো কোনো?ডক্টর ইফাদের মাথায় চাপ দিতে নিষেধ করেছে।
–স্যরি আম্মা ভুল হয়ে গেছে।আর হবে না।
–সারাদিন সবাই না খেয়ে আছোসবাই মিলে খেয়ে নাও।
–আম্মা আজান দিচ্ছে,নামাজ পড়ে খাব।
–ভুল কিছু বলোনি।চৈতালি চল আমরা নামাজ পড়ে আসি।তিনজন মিলে হসপিটালের নামাজ ঘরে চলে গেলো।নামাজ পড়ে ইফাদের কাছে আসলো।তানহা খুব সাবধানে ইফাদকে তুলে বসালো।রোকেয়া বেগম ইফাদকে খাইয়ে দিচ্ছে।তানহা ইফাদকে ধরে আছে।ইফাদের খাওয়া শেষ হলে,তিনজন মিলে খেয়ে নিল।
আজকে সাতদিন পরে হসপিটাল থেকে বাসায় ফিরলো ইফাদ।প্রাণ ভরে শ্বাস নিচ্ছ।শরীরে ক্ষত শুকিয়ে আসতে শুরু করছে।শরীরের ব্যথা কমতে শুরু করেছে।তানহা ইফাদকে ধরে বাসায় মধ্যে নিয়ে আসছে।এই কয়দিনে ইফাদের যত্নের কোনো কমতি রাখে নাই তানহা।ছায়ার মতো পাশে থেকেছে।তানহার প্রতি ইফাদের ভালোবাসা দিগুণ বেড়ে গিয়েছে।এই কয়দিনে চৈতালির অনেক পরিবর্তন লক্ষ্য করেছে তানহা।ইফাদের অসুস্থতার জন্য কিছু বলতে পারে নাই।সারাদিন ফোন নিয়ে থাকে।আগে থেকে ফোন ব্যবহার করা বেশি হয়েছে।পড়াশোনা-ও কম করছে।
–চৈতালি ফোন রেখে পড়তে বসো যাও।তানহার কঠিন গলা শুনে,চৈতালি উঠে চলে গেলো।ইফাদ তানহা’র ঘাড়ে ভর দিয়ে নিজের রুমে যাচ্ছে।রুমে এসে বিছানায় বসে পড়ল ইফাদ।
–আমি তোমাকে অনেক কষ্ট দিচ্ছি তাই না তানহা।আমার জন্য ঠিকমতো ঘুমোতে পারো না।সঠিক সময়ে খেতে পারো না।একটু বিশ্রাম নিতে পারো না।সব সময় আমার সাথে থাকতে হয়।বিরক্ত হয়ে যাও না।
–আপনি আর আমি কি আলাদা নাকি।আপনি মানেই আমি।আর আমি মানেই আপনি।এখানে বিরক্ত হয়ে যাওয়ার কি দেখলেন।
–তোমার প্রতি ভালোবাসা দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে।
–আপনি আমাকে ভালোবাসেন।এটা কোনোদিন বিশ্বাস করবো না।
–এটা আমি কথার কথা বলছি।
–ওহ্।
–মন খারাপ করলে কেনো?ফ্রেশ হয়ে এসো ঘুমাবে।এই কয়টা দিন একদম ঘুম হয় নাই তোমার।
–আপনার এত ভাবতে হবে না।রাতে নামাজ পড়ে ঘুমাবো।বলেই রুম থেকে চলে গেলো তানহা।ইফাদ শব্দ করে হেসে ফেললো।
–আমি জানি তানহা তুমি কেনো রাগ করেছো?তুমি যতটা চাইছো।তার থেকে বেশি কিছু তোমাকে দিব।শুধু সঠিক সময়ের অপেক্ষা।বিছানায় পা’ তুলতে গিয়ে পায়ে ব্যথা অনুভব করলো ইফাদ।অনেক চেষ্টা করে-ও নিজে নিজে পা তুলতে পারছে না।বাধ্য হয়ে তানহাকে ডাকলো।মেয়েটাকে আর কষ্ট করাতে ইচ্ছে করে না ইফাদের।সে-ও নিরুপায়।একা একা চলাফেরা করতে সমস্যা হয়।ইফাদের ডাক শুনে রুমে আসলো।
–কি হয়েছে রান্না করছি।
–এত রাগ দেখাচ্ছো কেনো?পা তুলতে পারছি না।একটু পা টা বিছানায় তুলে দাও।তানহা যত্ন সহকারে ইফাদের পা বিছানায় তুলে দিল।
–আমার পিঠের নিচে একটা বালিশ দিয়ে দাও।শুইয়ে থাকতে থাকতে বিতৃষ্ণা হয়ে গেছি।তানহা ইফাদের পিঠের নিচে বালিশ রেখে দিল।ইফাদ বালিশে হেলান দিয়ে বলল।
–তুৃমি চুলে কি শ্যাম্পু ব্যবহার করো।অনেক সুন্দর ঘ্রাণ আসছে।তোমার চুল ঘ্রাণ আমাকে খুব করে টানে।মাতাল করা ঘ্রাণ একদম।
–প্রথমত আমি চুলে মদ ব্যবহার করি না।যে,আমার চুলের ঘ্রাণে আপনি মাতাল হয়ে যাবেন।আর দ্বিতীয়ত আপনি ছোট মানুষ নাকি যে,আমার চুল আপনাকে টানবে আর আপনি চুলের সাথে চলে আসবেন।নাটক দেখতে দেখতে বুড়ী হয়ে যাব।বলেই চলে গেলো।
–আল্লাহ আমার বউ এত চেতে গেলো কোনো?ইফাদ অসহায় দৃষ্টিতে দরজার দিকে তাকিয়ে থাকলো।বালিশের নিচ থেকে ফোন বের করে,ফেসবুকে ঢুকলো।
চলবে…..
#এক_মুঠো_কাঁচের_চুরি
#পর্ব_১৯
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu
অন্ধকার রুমের মধ্যে বসে গান করছে প্রিয়া।প্রিয় মানুষটি’কে দূরে সরিয়ে দেওয়া’র পর থেকে নিজেকে ঘর বন্দী করে ফেলেছে।সব সময় একা থাকে,গান করে।ইচ্ছে হলে,খাবার খা।না হলে খায় না।বাবা মায়ের অতি আদরের মেয়ে প্রিয়া।মেয়ের করুন অবস্থা দেখে বাবা-মায়ের মনে শান্তি নেই।মেয়ে যেভাবে ভালো থাকে থাকুক।সেজন্য মেয়ের ওপরে কোনো চাপ প্রয়োগ করে না।প্রিয়ার পরিবার।
তুমি সুখ-ও যদি নাহি পাও
যাও সুখের সন্ধানে যাও।(২)
–তুমি এখানে বসে বসে,তার বিরহে গান করছো।সে,সুখের সন্ধান পেয়েছে।
প্রিয়া অনির কথায় কান দিল না।ভ্রু কুঁচকে একবার তাকিয়ে আবার গাইতে শুরু করলো।
আমি তোমার বিরহে রহিব বিলীন
তোমাতে করিব বাস
দীর্ঘ দিবস, দীর্ঘ রজনী
দীর্ঘ বরস মাস।(২)
–তুমি তার ভেতরে বাস করার স্বপ্ন দেখছো আপু।সে,অন্য কারো মনে ঘর-বাড়ি তৈরি করে ফেলছে।
–অনি তুই এখান থেকে যাবি।তোকে বিরক্ত করতে নিষেধ করেছি না।আমার রুমে আসার আগে আমার থেকে অনুমতি নিয়েছিলি।
–আম্মু-আব্বু তোমাদের মেয়েকে নিয়ে যাবে।আমাকে কেনো বিরক্ত করছে।আমি কিন্তু বাসা ছেড়ে চলে যাব।
–আপু তুমি আমার কথাটা শুনো।দুলাভাই ভালো হয় নাই।কয়েকদিন যাবত একটা মেয়ের সাথে ভাইয়াকে মেলামেশা করতে দেখা যাচ্ছে।
–অনি তোকে কতবার বলেছি,বোনকে জ্বালাবি না।জেদ করিস না।মেয়েটাকে খেয়ে তোর শান্তি হবে।
–আম্মু এসব তুমি কি বলছো।প্রিয়া আপু আমার নিজের বোন।ছোটবেলা থেকে আমাকে কোলেপিঠে করে মানুষ করেছে।আমি আপুর কষ্ট সহ্য করতে পারি না।তাই আপুকে বারবার বিরক্ত করি।স্যরি রে আপু।আমার উপস্থিতিতে তুমি এতটা বিরক্ত হও।আগে জানলে কখনো আসতাম না।আমি অনি কথা দিলাম।তোমার রুমে আর কখনো আসবো না।বলেই অনি রুম ত্যাগ করল।
অনির মা মিসেস রুমানা খান মেয়ের পেছনে পেছনে গেল।
প্রিয়া বিরক্ত হয়ে ফোন হাতে নিলো।কাঙ্খিত মানুষ’কে ফোন দিবে,কি না ভেবে দ্বিধা-দন্ডে ভুগছে।দীর্ঘশ্বাস ফেলে,গিটারে সুর তুলতে লাগলো।মানুষটির সাথে কথা বলার ইচ্ছে নেই।মানুষটা আরো একটু কষ্ট পাক।শিক্ষা হোক।তবু্ও যদি মানুষটা ভালো হয়ে যায়।
কথায় আছে না।অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো না।প্রিয়া কি’ একটু বেশি করে ফেলছে।
তানহা ইফাদের পায়ে মলম লাগিয়ে দিচ্ছে।মেয়েটা এত সুন্দর করে মানুষের খেয়াল রাখতে জানে,যে কেউ ভালোবেসে ফেলবে।দু-চোখ ভরে তানহাকে দেখছে ইফাদ।তানহা নিজের কাজে মনযোগী হয়ে আছে।একজোড়া চোখ তার দিকে গভীর ভাবে তাকিয়ে আছে।সেদিকে তানহার কোনো খেয়াল নেই।তানহা ক্ষত স্থান গুলোতে মলম দেওয়া হলে,উঠে দাঁড়িয়ে বলল।
–দেখি আপনার শার্টটা খুলুন।পিঠে মলম লাগিয়ে দিতে হবে।আপনার ক্ষত স্থান গুলোতে টান ধরেছে বুজলেন।খুব তাড়াতাড়ি আপনি সুস্থ হয়ে যাবেন।
–তোমার লজ্জা করে না।মেয়ে হয়ে একটা ছেলেকে শার্ট খুলতে বলো।আমার শরম লাগে না বুঝি।
তানহা হতভম্ব হয়ে ইফাদের দিকে তাকিয়ে আছে।তানহাকে তাকিয়ে থাকতে দেখে,ইফাদ দু’হাতে নিজের মুখ ঢেকে ফেলল।তানহার প্রচন্ড রাগ হচ্ছে,রান্না রেখে এসে ইফাদের শরীরে মলম লাগিয়ে দিচ্ছে।আর মানুষটা নাটক শুরু করছে।
–এতই যখন শরম করে নিজের মলম নিজেই দিয়ে নিন।আমাকে ডেকেছেন কেনো?বলেই তানহা চলে যেতে নিলে,ইফাদ তানহার হাত ধরে ফেলল।
–তুমি রাগ করছো কেনো?আমি ছেলে বলে কি’ আমার শরম থাকতে নেই।আমার বড় ভাইয়ার আমার থেকে বেশি শরম ছিল জানো।কথা গুলো বলতে বলতে শার্ট খুলল ইফাদ।
তানহা কোনো কথা না বলে বিছানায় উঠে ইফাদের পাশে বসে,পিঠে মলম দিয়ে দিতে লাগলো।
–তোমার হাত সাপের মতো ঠান্ডা।আমার শীত লাগছে।তাড়াতাড়ি দিয়ে রান্না করতে যাও।
–বলি কি’ যার হাত আগুনের মতো গরম তার কাছে গিয়ে ঔষধ লাগিয়ে নিয়ে আসবেন।আমাকে ডাকার কি প্রয়োজন।বলেই চলে গেলো তানহা।
–এই মেয়ে আমাকে একটুও ভয় পাচ্ছে না।মুখে যা আসছে তাই বলছে।কোথায় কোথায় রাগ দেখাচ্ছে।অন্য মানুষের কাছে যেতে বলছে।আগের মতো ভালোবাসছে না।সাহস খুব বেশি হয়ে গিয়েছে।তুমি উড়তে থাকো পাখি।তোমার ডানা কিভাবে ভাঙতে হয়।আমি ইফাদ আমার ভালো করে জানা আছে।
রাতের নামাজ পড়ে চৈতালি আর রোকেয়া বেগমকে খেতে দিয়েছে তানহা।ইফাদকে খাইয়ে দিয়ে,নিজে খাবে।ওদের খেতে দিয়ে ইফাদের জন্য রুমে খাবার নিয়ে আসলো।
–শুনছেন।
–না।
–কেনো?
–আমার বউ আমাকে দেখতে পারে না।
–আপনার বউ কে?
–তানহা।
–তানহা কে?
–আমার বাবুর আম্মু।
ইফাদের এমন কথায় তানহা লজ্জা পেয়ে গেল।দিন দিন মানুষটা কেমন কথাবার্তা বলতে শুরু করে দিয়েছে।
–আপনার জন্য খাবার নিয়ে আসছি।খেয়ে নিন।ঔষধ খেতে হবে আপনার।
–আমার হাতে প্রচন্ড ব্যথা করছে।খেতে পারবো না।
–আপনার হাতের কি হলো আপনার হাত না একটু আগে-ও ঠিক ছিল।
–আমি খাব না।তুমি খাবার নিয়ে চলে যাও।আমার ঘুম পেয়েছে।আমাকে ঘুমাতে দাও।বিরক্ত করো না।
তানহা খাবার টেবিলে রেখে নিজের ঠান্ডা হাত দু’টো ইফাদের গালে চেপে ধরল।ইফাদ আউ বলে তানহার দিকে ঘুরলো।
–আমি কে চিনো তো’।
–আমি কে চিনেন তো’।
–আমি হলাম ইফাদ যার কাছে সবাই হার মানে।
–আমি হলাম ইফাদের বউ।যে,ইফাদ সবাইকে হার মানায়।সেই ইফাদ নিজে আমার কাছে হার মানে।কিছুটা ভাব নিয়ে বলল তানহা।ইফাদ তানহার দিকে তাকিয়ে মুখ বাঁকিয়ে অন্য দিকে ঘুরলো।তানহা ইফাদকে টেনে তুলে বসালো।ভাত মেখে ইফাদের মুখের সামনে ধরল।ইফাদ অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিল।
–আমি কিন্তু না খেয়ে আছি।অনেক ক্ষুদা লেগেছে।আপনাকে খাইয়ে দিয়ে,তারপরে আমি খাব।আপনি যে,আমার হাতে খাওয়ার জন্য ভন্ডামি করছেন।এতটুকু বুঝতে তানহার এক সেকেন্ড-ও সময় লাগে নাই।নাটক বাদ দিয়ে খেতে শুরু করুন।ইফাদ এক লোকমা ভাত মুখে নিতে নিতে বলল।
–জানোই যখন তোমার হাতে খাওয়ার জন্য এমন করছি।তাহলে খাইয়ে না দিয়ে এত কথা বললে কেনো?
–খাওয়ার সময় কথা বলতে হয় না।চুপ থাকুন।তানহা ইফাদকে খাইয়ে দিল।ঔষধ খাইয়ে দিয়ে,নিজেও খেতে চলে গেল।
ইফাদ শুইয়ে শুইয়ে ফোনে স্ক্রল করছে।তানহা এসে ইফাদের পাশে শুইয়ে পড়ল।কোনো কথা না বলে ফোন হাতে নিয়ে,ফোনের দিকে মনযোগী হলো।ইফাদ ফোন রেখে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে।
আবির ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট দিয়েছে তানহাকে।মেসেজ-ও করেছে অনেক।তানহা পড়তে শুরু করল।
–তানহা আমি জানি আমি অনেক অন্যায় করেছি।আমি জানিনা আমি আমার করা অন্যায়ের ক্ষমা পাব কি না।তবে আজ আমি অনুতপ্ত।হ্যাঁ আমি আমার করা অন্যায়ের জন্য অনুতপ্ত।প্লিজ তুই আমাকে ক্ষমা করে দে।আমি তোকে একটা সময় ভালোবাসতাম।সেই ভালোবাসাকে না পেয়ে এমন পাগলামি করেছি।এখন আমি সবকিছু বুঝতে পারছি।আমি কতবড় ভুল করেছি।ভালোবাসলেই কি’ পেতে হবে।কিছু জিনিস হোক না অন্য কারো।ভালোবাসার মানুষের সুখেই,আমার প্রকৃত সুখ।তুই ভালো থাক।তোর সংসারে সুখের কমতি যেনো না রাখে আল্লাহ তায়ালা।বড় ভাই হিসেবে আমাকে মাফ করে দিস।আমার জন্য তোদের মধ্যে কোনো সমস্যা হবে না কথা দিলাম।ইফাদকে নিয়ে আমাদের বাসায় বেড়াতে আসিস।আর কতদিন আম্মু আর আমার ওপরে রাগ করে থাকবি।আব্বু তোর জন্য অনেক কষ্ট পায়।তোর যদি একটু দয়া হয় আমাদের প্রতি তাহলে একবার এসে দেখে যাস।ইচ্ছে হলে,মেসেজের উত্তর দিস।মন না টানলে দেওয়ার দরকার নেই।”আবির”
মেসেজটা পড়ে তানহা বিরক্তি প্রকাশ করল।যতই হোক রক্তের টান আছে দু’জন,একই বংশের ছেলে-মেয়ে তানহা ও আবির।না চাইতে-ও ইচ্ছে করছে আবিরের সাথে কথা বলতে,কিন্তু রাস্তার মধ্যে মারের কথা,কলেজের অপমানের কথা মনে পড়তেই রাগে শরীর কাঁপুনি দিয়ে উঠলো তানহার।ইফাদ ছো মেরে তানহার হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নিল।
তানহা ভীত দৃষ্টিতে ইফাদের দিকে তাকালো।ইফাদ যদি ভুল বুঝে।ইফাদ আবিরের মেসেজ মনযোগ দিয়ে পড়তে শুরু করল।পড়া শেষ করে।তানহার দিকে তাকালো।
–ভাইয়ের সাথে কথা বলার জন্য আমার সাথে কথা বলার প্রয়োজন মনে করলে না।তানহাকে কিছু বলতে না দিয়ে,আবিরের রিকুয়েষ্ট একসেপ্ট করে দিল।আবির অনলাইনে আছে।দেখে ইফাদ তানহার হাতে ফোন দিয়ে বলল।
–তোমার ভাই অনলাইনে আছে কথা বলো।বলেই অন্য দিকে ঘুরে শুইয়ে পড়ল।
–যা বাবা আমি কি করলাম।আমি তো’ আবির ভাইয়ার মেসেজের উত্তরই দেই নাই।তার ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট একসেপ্ট-ও করি নাই।আপনি কেনো করে দিলেন।
ইফাদের থেকে কোনো উওর আসলো না।তানহার মনটা খারাপ হয়ে গেল।তানহা ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট একসেপ্ট করেছে দেখে,আবির প্রচন্ড খুশি হলো।আবার লিখলো।
–কেমন আছিস তানহা।আমাকে কি মাফ করা যায় না।আমি তোরই তো ভাই।এবারের মতো মাফ করে দে বোন আমার।তানহা ভয়ে ডাটা অফ করে চুপটি মেরে শুইয়ে রইল।ইফাদ তার সাথে কথা বলছে না দেখে মনটা অস্থির হয়ে উঠেছে।ভয়ে ডাকতে-ও পারছে না।ছটফট করতে করতে তানহা ঘুমিয়ে গেল।
পরের দিন সকাল বেলা।শীতের সকাল।কুয়াশার চাদরে ঢেকে আছে পুরো শহর।ফাঁকা রাস্তার মাঝে খানে গোল গোল হয়ে ঘুরছে চৈতালি।বিশাল গাছের নিচে দাঁড়িয়ে চৈতালির পাগলামি দেখছে আবির।ক’টাদিন ধরে চৈতালি জেদ ধরে আছে।একটা কুয়াশার সকাল আবিরের সাথে কাটাতে চায়।দু’জন হাতে হাত রেখে ঘাসের ডগায় জমে থাকা শিশির বিন্দুর ওপরে দিয়ে হাঁটতে চায়।প্রথমে আবির রাজি ছিল না।চৈতালির পাগলামি দেখে রাজি হয়ে যায়।
–স্যার জানেন অনেক দিনের ইচ্ছে পূর্ণ হলো,আমাকে কয়টা ছবি তুলে দিবেন।
–এত সকাল সকাল বাসা থেকে বের হয়েছো।তোমার বাসার লোকজন কিছু বলে নাই।
–এত সকালে কেউ উঠে নাই।ফজরের সময় উঠে নামাজ পড়ে সবাই আবার ঘুমিয়ে যায়।সবাই জেগে যাওয়ার আগেই বাসায় ফিরে যাব।
–এত সকাল বেলা একা একটা মেয়ে একটা ছেলের সাথে ঘুরতে বের হয়েছো।তোমার ভয় লাগছে না।আবিরের কথা শুনে চৈতালি ভয় পেয়ে গেল।সত্যি তো’ এমন ভাবে ভেবে দেখে নাই।চৈতালির ভয়ার্ত চেহারা দেখে আবির শব্দ করে হেসে ফেলল।
–আরে পাগলি মজা করছি।দাও তোমার কয়টা ছবি তুলে দেই।আবির তানহার কয়টা ছবি তুলে দিল।চৈতালি আবিরকে একটা ভিডিও বানিয়ে দিতে বলল।আবির বাধ্য ছেলের মতো চৈতালি কথা শুনছে।ভেতরে ভেতরে বিরক্তি প্রকাশ করল।মুখে কিছু বলল না।চৈতালি ভিডিও বানানোর জন্য রাস্তার মাঝেখানে থেকে হালকে করে দৌড়ে দিতে শুরু করল।কুয়াশার জন্য সামনের দিকে কিছু দেখা যাচ্ছে না ভালো করে,আবির চৈতালির পেছনে পেছনে আসছে।হঠাৎ করে সাদা রংয়ের একটা গাড়ি এসে চৈতালিকে ধাক্কা দিল।চৈতালি সাথে সাথে মাটিতে পড়ে গেল।আবির দৌড়ে এসে চৈতালিকে তুলল।গাড়িটা ধীর গতিতে চলছিল।সেজন্য চৈতালির বেশি ক্ষতি হয় নাই।শরীরে হালকা ব্যথা পেয়েছে।শীতের দিনে একটু ব্যথা লাগলে কলিজা বেড়িয়ে আসার উপক্রম হয়।
গাড়িটা দাঁড়িয়ে আছে।চৈতালি গাড়ির দিকে ক্রোধিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।গাড়ি থেকে চোখ কালো সানগ্লাস পড়া,একজন সুদর্শন যুবক বেড়িয়ে আসলো।দুধে-আলতা গায়ের রং।ছেলে মানুষ আবার এত ফর্সা হয় নাকি।ছেলে মানুষ এত ফর্সা হলে ভালো গালে না।চোখ ধাধানো রুপ যুবকটির।যুবকটির পরনে কালো শার্ট,কালো জিন্স,কালো জুতা।চৈতালির মুখ দিয়ে অটোমেটিক বেড়িয়ে আসলো মাশাল্লাহ।শরীরে নেই শীতের কাপড়।মানুষটার শীত লাগে না নাকি।আবিরের থেকে বেশি ফর্সা ছেলেটি।চৈতালি নিজের দৃষ্টি সংযত করে নিল।নিজেই নিজেকে ধিক্কার জানালো।যুবকটি চৈতালিকে পাত্তা না দিয়ে আবিরের কাছে আসলো।
–হেই আবির ব্রো কেমন আছিস।অনেক পরে দেখা,কোথায় থাকিস।এই সাত-সকাল বেলা ফাঁকা রাস্তায় মেয়ে নিয়ে কি করিস।
–ফাইয়াজ তুই দেশে আসলি কবে?তুই যাকে মেয়ে বলছিস।ও আমার স্টুডেন্ট।
–টিচার আর স্টুডেন্ট তো’ স্কুল-কলেজে থাকে,এই সাত সকাল বেলা ফাঁকা রাস্তায় কি করে।তোদের টিচার_স্টুডেন্টের সাইন্স টা বুঝলাম না।
ফাইয়াজের তেরা-বাকা কথাটা আবিরের সহ্য হলো না।বরাবরই আবির ফাইয়াজকে সহ্য করতে পারে না।ফাইয়াজ সবকিছুতে আবিরের থেকে এগিয়ে।ভদ্রতা সুলভ জবাব দিল।
–তোর স্রুতির কি অবস্থা,কেমন আছে ভাবি।
আবিরের কথা শুনে,ফাইয়াজের চোখ দু’টো অসম্ভব ভাবে লাল হয়ে গেল।আবির যে,ফাইয়াজের কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দিয়েছে।তা আবির ভালো করেই বুঝতে পারছে।ফাইয়াজ আবিরের বুকে ধাক্কা মেরে বলল।
–বন্ধু আছিস বন্ধুর মতো থাক।আমাকে জ্বালাতে আসিস না।নিজেই জ্বলে পুড়ে যাবি।বলেই হনহন করে গাড়িতে উঠে চলে গেল।আবিরের মুখ তৃপ্তি হাসি।
–স্যার ছেলেটা কে?কি অ্যাটিটিউড বাবা।ওমন রুপ মনে হয় কারো নেই।ভুল করেছে।কোথায় স্যরি বলবে,তা-না ভাব দেখিয়ে চলে গেল।আপনার ফ্রেন্ড নাকি।
–আয়নায় নিজেকে কখনো দেখেছো।আবার অন্যের রূপ নিয়ে কথা বলতে আসছো।
–কি বললেন স্যার।
–ফাইয়াজ কে বললাম।
–ওহ্ আচ্ছা আপনার বন্ধু আপনার থেকে-ও অনেক সুন্দর।চোখ ধাধানো রুপ তার।কিন্তু অতিরিক্ত ফর্সা।ছেলে মানুষ এত ফর্সা হলে ভালো লাগে না।
–তুমি আমার সামনে অন্য ছেলের প্রসংশা করছো।
–আমি আপনার কথা বললাম স্যার।আপনি-ও তো’ ফর্সা।
আবির বুঝতে পারলো।চৈতালি তার কথার ভিত্তিতে তাকে খোঁচা মারলো।বিরক্ত প্রকাশ করে আবির চৈতালিকে রেখেই চলে গেল।চৈতালি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল আমাকে আপনি আপমান করবেন।আর আমি চুপচাপ সহ্য করে নিব।এতটা মহান হতে পারবো না স্যার।ভালোবাসি বলে,ভালোবাসায় অন্ধ হয়ে যাব।এতটা নির্বোধ মেয়ে আমি না।আমাকে যতটা ভালোবাসবেন।ততটা ভালোবাসাই ফিরে পাবেন।আচ্ছা আপনি আমাকে সত্যি ভালোবাসেন তো নাকি।প্রয়োজনে ব্যবহার করছেন।আমি তো জানি ভালোবাসলে ভালোবাসার মানুষটিকে কখনো ছোট করে কথা বলা যায় না।আপনি তো প্রায় আমাকে ছোট করে কথা বলেন।আপনি আমাকে ভালোবাসেন তো নাকি।আজকে আমি আপনাকে ছোট করতে চাই নাই।আপনি আমাকে বাধ্য করেছেন স্যার।না চাইতে-ও চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ল চৈতালির চোখ থেকে।দু’হাতে চোখের পানি মুছে বাসার উদ্দেশ্য রওনা দিল।বাসায় আসতেই তানহাকে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলো চৈতালি।ভয়ে কেঁপে উঠলো কিছুটা।তানহা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চৈতালির দিকে তাকিয়ে আছে।
চলবে……