এক মুঠো কাঁচের চুরি পর্ব-২৫+২৬

0
323

#এক_মুঠো_কাঁচের_চুরি
#পর্ব_২৫
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

রোকেয়া বেগম তানহার কাছে আসলো।তানহার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল।

–তুমি আমার ওপরে রাগ করেছো মা।কাল থেকে তোমার সাথে ভালো করে কথা বলি নাই।ডাকলে ফিরিয়ে দিয়েছি।আসলে চৈতালির এমন ব্যবহার আমি মেনে নিতে পারি নাই।আমার ছেলেমেয়ে গুলো এমন ছিল না।তবে আমার মেয়েটা এমন হয়ে গেল কি করে।চৈতালির ব্যবহার আমাকে খুব করে কষ্ট দিচ্ছে।নিজের মেয়ে হয়।কিছু বললে-ও নিজের কাছেই খারাপ লাগে।

–আম্মা আপনার ওপরে আমি রাগ করি নাই।চৈতালি ছোট মানুষ আবেগে বশীভুত হয়ে এমন করছে।যখন সত্যিটা উপলব্ধি করতে পারবে।তখন বুঝতে পারবে।নিজেই কষ্ট পাবে।জীবনে কতবড় ভুল করেছে।আপনি মনে কষ্ট নিয়েন না।ওকে ডেকে নিয়ে এসে,খেতে দিন।

রোকেয়া বেগম চৈতালির রুমের কাছে এসে,নরম কণ্ঠে বলল।

–মা চৈতালি দরজা খোল।সারাদিন না খেয়ে আছিস।খেয়ে নিবি মা আয়।

চৈতালি ভাঙা ভাঙা কণ্ঠে বলল।

–আম্মু তুমি যাও।আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।

হাজারটা ভুল করার পরে-ও সেই ভুলগুলো মাফ করে দিয়ে,বুকে টেনে নেওয়ার নামই হলো পরিবার।

সন্ধ্যার নামাজ শেষ করে,ড্রয়িং রুমে আসলো তানহা।ইফাদ মসজিদে গিয়েছে।রোকেয়া বেগম ড্রয়িং রুমে বসে মেয়ের মাথায় তেল দিয়ে দিচ্ছে।মেয়েটার মুখখানা একদম মলিন হয়ে গেছে।দু-চোখে কি অসহায়ত্ব।চোখের কোণে পানি জ্বলজ্বল করছে।চৈতালির মুখের দিকে তাকিয়ে তানহার খুব মায়া হলো।ইচ্ছে করছে,সবকিছু ভুলে চৈতালিকে বুকে টেনে নিতে,মনের আশা মনে রেখে রোকেয়া বেগমকে বলল।

–আম্মা নাশতায় কি তৈরি করবো।

–তোমার যা ভালো লাগে মা।তানহা রান্না ঘরের দিকে যাবে।এমন সময় দরজায় কলিং বেল বেজে উঠলো।ইফাদ এসেছে ভেবে,খুশি হয়ে দরজা খুলতে গেল।দরজা খুলে রীতিমতো মতো অবাক হয়ে গেল তানহা।

–চাচা আপনি।

–হ্যাঁ রে মা তোকে দেখতে আসলাম।

–আপনি আসবেন আগে বলবেন না।

–মেয়ের বাসায় আসবো বলা লাগবে নাকি।আমার যখন ইচ্ছে হবে আমি আসবো।

–আমি কি নিষেধ করেছি।এত বছর পরে বুঝি মেয়ের কথা মনে পড়ল।

–কোন মুখ নিয়ে আসতাম বল।

–বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকবেন নাকি ভেতরে আসবেন।মাহতাব সাহেবের হাতে মিষ্টির ব্যাগ গুলো।তানহার হাতে ধরিয়ে দিল।

–এসবের কি দরকার ছিল চাচা।

–আমার মেয়ের জন্য নিয়ে আসবো না।

–এসবের কোনো দরকার ছিল না।

কথা বলতে বলতে দু’জন ভেতরে আসলো।রোকেয়া বেগমকে দেখে মাহতাব সালাম দিয়ে বলল।

–কেমন আছেন ভাবি।আপনাকে ভাবি বলেই সম্মোধন করলাম।কিছু মনে করবেন না।আপনার স্বামীকে আমরা বড় ভাই মেনেছি।

–আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।আপনি কেমন আছেন।আপনি আমাকে ভাবি বলে ডাকতে পারেন সমস্যা নেই।দাঁড়িয়ে না থেকে বসুন।খুব খুশি হব।

–ভাবি রাগ না করলে আপনার থেকে একটা অনুমতি চাই।

–কিসের অনুমতি ভাই।

–আমার আবিরের বিয়ে,তাই তানহা আর ইফাদকে কয়টাদিন আমাদের বাসায় রাখতে চাই।বিয়ে হয়েছে কতগুলো দিন।একটা দিন বাসায় নিয়ে যেতে পারি নাই।লজ্জায় বলতেও পারি না।আপনি যদি অনুমতি দিতেন।

রোকেয়া বেগম একবার চৈতালির দিকে তাকালো।চৈতালি উঠে নিজের রুমে চলে গেল।রোকেয়া বেগম দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল।

–নিয়ে যান কোনো সমস্যা নেই।মেয়েটা আমার সারাদিন বাসায় থাকে।আপনাদের বাসায় গেলে,তানহার-ও ভালো লাগবে।

–আমি তানহা ও ইফাদের সাথে আপনাদের-ও নিয়ে যেতে চাই।আবিরের বিয়ের সাতটা দিন আপনারা আমাদের বাসায় থাকবেন।

–দুঃখিত আমরা এত আগে যেতে পারবো না।বিয়ের দিন অবশ্যই যাব।আপনি ইফাদ আর তানহাকে আগে নিয়ে যেতে পারেন।

–অনুমতি দিলে আজকে নিয়ে যেতে পারবো।

–কিন্তু রাত করে কেনো?

–তানহার চাচি তানহা আর জামাইয়ের জন্য পিঠেপুলির আয়োজন করেছে।

–আচ্ছা ইফাদ আসলে কথা বলে নিয়ে যাবেন।তানহা তুমি আমার সাথে এসো।বলেই রান্না ঘরে নাশতা তৈরি করতে আসলো।একটু পরে তানহা নাশতা নিয়ে চাচার সামনে হাজির হলো।

–এসবের কি দরকার ছিল মা।আমরা এখনই চলে যাব।

–আপনার জামাইকে তো’ আসতে দিবেন।উনি আসুক।না জানি আবার পারার মোরে আড্ডা দিতে বসে গিয়েছে।

–তুই গিয়ে জামাকাপড় গুছিয়ে নে।

–আচ্ছা চাচা।বলেই নিজের রুমে আসলো।

রোকেয়া বেগম চৈতালির জন্য নাশতা নিয়ে চৈতালির রুমে আসলেন,মেয়ে বালিশে মুখ গুঁজে কান্না করছে।দেখে বুকের ভেতরটায় চিনচিন করে ব্যথা করে উঠলো।মেয়ে যতই খারাপ হোক যতই অন্যায় করুক।মা হয়ে মেয়ের চোখের পানি সহ্য করা খুবই কষ্টকর।রোকেয়া বেগম মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিল।স্নেহের হাত মাথায় পেয়ে মাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কান্না করে দিল চৈতালি।রোকেয়া বেগম মেয়েকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে বলল।লেখিকা ফাবিহা বুশরা নিমু।

–কান্না করিস না মা।আমরা তোর সাথে এমনি এমনি খারাপ ব্যবহার করি নাই।মা হয়ে এত বড় মেয়ের গায়ে হাত তোলা কতটা কষ্টকর তুই যদি বুঝতি।তুই আজকে বুঝবি না।যেদিন মা হবি।সেদিন বুঝতে পারবি।তুই যে,আমাদের খুব আদরের,আমরা কি করে তোর জীবনটা নষ্ট হতে দিতে পারি বল।রোকেয়া বেগম মেয়েকে বুঝিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে আসলো।

ইফাদ বাসায় এসে মাহতাব সাহেবকে দেখে সালাম দিল।দু’জন কুশল বিনিময় করলো।মাহতাব সাহেব ইফাদকে উদ্দেশ্য করে বলল।

–যাও বাবা তৈরি হয়ে নাও।আমাদের রওনা দিতে হবে।

–রওনা দিতে হবে মানে?

–তোমাকে আর তানহাকে নিতে যেতে এসেছি।কয়টাদিন থাকবে আমদের বাসায়।কথা না বলে,তানহাকে নিয়ে আসো।

–ইফাদ তোর চাচা অনেকক্ষণ ধরে তোর জন্য অপেক্ষা করছে।আজকে থাকতে বলছি।উনি থাকবে না।তোর চাচি নাকি তোদের জন্য পিঠাপুলির আয়োজন করেছে।রাত হয়ে যাচ্ছে তাড়াতাড়ি বেড়িয়ে পড়।

ইফাদ রুমে এসে দেখলো,তানহা বোরকা পড়ছে।

–তানহা রে আমি শশুর বাড়ি যাব।আমার কি যে,শরম লাগছে।

ইফাদের হঠাৎ চিৎকারে তানহা চমকে উঠলো।

–এটা কেমন ধরনের বেয়াদবি।কথা নেই বলা নেই।হুট করে এসে চিৎকার দেন।ফাজলামি বাদ দিয়ে রেডি হয়ে নেন।বেশি কথা বললে,আপনাকে রেখেই চলে যাব।

–আমাকে না নিয়ে গেলে,তোমাকেও যেতে দিব না।কথা বলতে বলতে ইফাদও তৈরি হয়ে নিল।রোকেয়া বেগমের থেকে বিদায় নিয়ে তিনজন মিলে,বেড়িয়ে পড়ল।রোকেয়া বেগম দরজা লাগিয়ে দিয়ে,মেয়ের রুমে আসলেন।আজকে মেয়ের সাথেই থাকবেন।

ইফাদ আর তানহাকে দেখে বেশ খুশি হলো হাসনা বেগম।বাড়িতে কয়েকজন আত্মীয়-স্বজন এসেছে।বাসায় খুশির আমেজ লেগেছে।প্রতিটি মানুষের অধরের কোণে হাসি।তানহা নিজের রুমে ব্যাগ রেখে সবার সাথে যোগাদান করল।ইফাদ এখনো রুমে যায় নাই।মাহতাব সাহেবের সাথে বসে গল্প করছে।আবিরের দেখা এখনো মেলেনি।আবিরের রুমের দরজা বন্ধ।আবিরের বিয়ের কথা শুনে,ইফাদ কিছুক্ষণ চুপ ছিল।একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে মাহতাব সাহেবের সাথে বিয়ের প্ল্যান করছে।কাকে কাকে দাওয়াত দিবে।কোথায় কি কি লাগবে।কত খরচ হবে।ইফাদের ব্যবহার মাহতাব সাহেব’কে মুগ্ধ করে তুলেছে।ছেলেটা কত ভালো।একদিনেই কেমন মিশে গিয়েছে।ইফাদকে দেখলে কেউ বলবে,ইফাদ এ বাড়ির জামাই।সবাই মনে করবে ইফাদ আবিরের ছোট ভাই।মাহতাব সাহেব ইফাদের মাথায় হাত বুলিয়ে দোয়া করে দিল।ইফাদ মিষ্টি হাসি,মাহতাব সাহেবকে উপহার দিল।তানহা এসে ধুপিপিঠা,
পাকোয়ান পিঠা,শুকনা চিতায় পিঠা দিয়ে গেল।আবির রুম থেকে বেড়িয়ে ইফাদকে দেখে তাদের সাথে যোগদান করল।লেখিকা ফাবিহা বুশরা নিমু।

–ইফাদ যে,কেমন আছো তুমি?

–আলহামদুলিল্লাহ ভালো।

–রাগ করে আছো আমার ওপরে।

–আমি কেনো আপনার ওপরে রাগ করতে যাব।

–আহ আবির এসব কি কথা হচ্ছে,ছেলেটা প্রথম আমাদের বাসায় আসলো।আগের প্রশ্ন বাদ দাও।

–ইফাদ আমার ভাই হয়।আমি ভাইয়ের সাথে কথা বলতে পারি না।

–আপনি বলুন সমস্যা নেই।

তানহা দুই হাতে দু’টো বালতি নিয়েছে।দুই বালতি ভর্তি পানি।দুটো বালতি টানতে হিমসিম খাচ্ছে।সবার সামনে খুব বাহাদুরি দেখিয়ে বলেছিল পারবে।শশুর বাড়িতে কত বড় বড় বালতিতে পানি টেনেছে।এই বালতি দুটো একদম ছোট।এটা তানহার কাছে কোনো ব্যাপারই না।এখন হারে হারে টের পাচ্ছে।তানহার কষ্ট হচ্ছে দেখে ইফাদ উঠে আসলো।তানহার দু-হাত থেকে বালতি নিয়ে,হাসতে হাসতে বলল।

–কি ম্যাডাম আজকে আবার বাহাদুরি দেখাতে গিয়িছেন।আপনার যে,শরীর এই শরীর নিয়ে বাহাদুরি একদম মানায় না।ভাগ্য ভালো আপনার শরীরটা এখনো মট করে ভেঙে পড়ে নাই।

তানহা রাগী দৃষ্টিতে ইফাদের দিকে তাকালো।

–তোমাকে বলেছি তুমি এসো,আমাকে সাহায্য করো।

তানহার কথা শুনে,ইফাদ চোখ গোল গোল করে তাকালো।

–বউজান তুমি আমাকে তুমি করে বললে,আমার বিশ্বাস হচ্ছে না।মানুষ না থাকলে এখনই,,

–থামবেন আপনি,রান্না ঘরে পানি গুলো দিয়ে আসুন লাগবে।

–তুমি করে না বললে,যাব না।

–তাহলে এখানেই সারাদিন দাঁড়িয়ে থাকেন।আমি গেলাম।বলেই তানহা হাঁটতে শুরু করলো।ইফাদ মুখ ভার করে তানহার পেছনে পেছনে গেল।

তানহার প্রতি ইফাদের ভালোবাসা দেখে মাহতাব সাহেবের চক্ষু জুড়িয়ে গেল।আবির ইফাদ আর তানহার দিকে তাকিয়ে বলল।

–ইফাদই তানহার যোগ্য।ইফাদের মতো ছেলেরাই পারে,তানহার মতো মেয়েদের মনের রাণী করে রাখতে।আমি কখনো ইফাদের মতো করে তানহাকে রাখতে পারতাম না।তা-না হলে তানহাকে ভালোবেসে বিদেশে গিয়ে অন্য কাউকে বিয়ে করি।মানুষ সময়ের সাথে পরিবর্তন হয়ে যায়।আমি’ও হয়তো সময়ের সাথে পরিবর্তন হয়ে গিয়েছি।আগে তানহাকে ভালো লাগতো,প্রিয়াকে দেখার পরে আর লাগে না।ভাবতেই দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এলো।

কাজকর্ম,নামাজ,খাওয়া-দওয়া করতে করতে প্রায় এগারোটা বেজে গেল।তানহা সবে নিজের রুমে আসলো ইফাদকে নিয়ে।মেয়েটা চাচার বাসায় এসে অনেক খুশি হয়েছে।তা তানহার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে।মুক্ত পাখির মতো বাসার এদিক-ওদিক ছুটে বেড়াচ্ছে।দেওয়ালে ঝুলানো লাল কাগজের ফুলগুলো ইফাদকে দেখিয়ে বলল।

–এই দেখুন।এই ফুল গুলো আমি বানিয়েছি।আমি অনেক সুন্দর সুন্দর ঘর সাজানোর ফুল বানাতে পারি।আমার অনেক ইচ্ছে ছিল।আমি বড় হয়ে রোজগার করবো।কিন্তু আমার পড়াশোনায় তো’ হলো না।ইচ্ছেটা মাটি চাপা পড়ে গেল।আমার আরো ফুল আছে দেখবেন।

–আমারো একটা ফুল আছে।অনেক সুন্দর ফুল।একবার দেখলে সারাজীবন দেখতে ইচ্ছে করবে।

–কোথায় আপনার ফুল।আমাকে কোনোদিন দেখান নাই তো।

–কাউকে দেখাবো না।ফুলটা আমার খুব প্রিয়।ফুলটাকে শুধু আমি একা দেখবো।

–কোথায় দেখান আপনার ফুল।যত সুন্দর ফুলই হোক না কেনো?আমার থেকে সুন্দর ফুল আপনি বানাতে পারবেন না।

–এদিকে এসো আমি তোমাকে দেখাচ্ছি।পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর আমার ফুলটা।তোমার ফুলের থেকে-ও বেশি সুন্দর আমার ফুল।তানহা ইফাদের পাশে এসে দাঁড়াল।ইফাদ তানহার হাত ধরে টেনে নিজের কোলে বাসালো।তানহার ঘাড়ে থুতনি রেখে বলল।

–এই যে,এটা আমার ফুল।তোমার ফুলের থেকে আমার ফুলটা বেশি সুন্দর না।আমার চোখে দেখা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুন্দরী নারী হলো আমার বউজান।আমার চোখে আমার বউজানের মতো সুন্দর কেউ না।

ইফাদের কথায় তানহা লজ্জা পেয়ে,মাথা নত করে ফেলল।ইফাদ তানহার ঘাড়ে অধর ছুঁইয়ে দিল।তানহা কিছুটা কেঁপে উঠলো।তানহার হাতের ভাজে নিজের হাত এক করে দিয়ে বলল।

–এটা কিন্তু ঠিক না।তুমি তোমার ডায়েরিতে আমাকে তুমি বলে সন্মধোন করো।কিন্তু বাস্তবে আমাকে আপনি করে বলো।এটা কিন্তু একদম ঠিক না।তোমার মুখে আপনি ডাক শুনতে ভালো লাগে না।তখন কি সুন্দর করে তুমি করে বললে,প্রাণটা আমার জুড়িয়ে গিয়েছিল।তুমি আমাকে ডায়েরিতে ভালোবাসো বাস্তবে না।

–এটা কিন্তু একদম ঠিক না।কাউকে না বলে,কারো জিনিসে হাত দেওয়া ঠিক না।

–আমি ঘুমিয়ে গেলে,আমাকে না বলে আমার ফোন চেক করো কেনো?

–আমার অধিকার আছে।তাই আমি আমার স্বামী ফোনে হাত দেই।

–আমরাও অধিকার আছে।তাই আমি আমার বউয়ের ডায়েরিতে হাত দিয়েছি।আমাকে নিয়ে তার লেখা অজস্র শব্দ,আমার হৃদয়ে দাগ কেটেছে প্রতিটি শব্দ,তার লেখার প্রেমে পড়েছি নতুন করে।তার মনের অনুভূতি গুলো তার মতোই স্নিগ্ধ আর সুন্দর।আমি তোমার ভালোবাসা খুঁজতে গিয়ে আমি তোমাতেই হারিয়ে গিয়েছি বারংবার।

তানহা এক হাতে ইফাদের চুলে হাত দিয়ে খুশিতে উৎফুল্ল হয়ে বলল।

–বাবা বাহ আপনি এত সুন্দর কথা বলতে,কবে থেকে শিখলেন।

–যেদিন থেকে তোমাকে দেখেছি।

–হয়েছে এবার আমাকে ছাড়ুন।

–তুমি করে না বললে,ছাড়বো না।তখন ছেড়ে দিয়েছি।এবার তোমাকে কে বাঁচাবে।

–আচ্ছা তুৃমি করে বলবো।তবে আমার একটা শর্ত আছে।

–কি শর্ত?

–আমাকে কোলে নিয়ে এই রুমে গোল গোল হয়ে ঘুরতে হবে।তাহলে আমি আপনাকে তুমি করে বলবো।

–তোমর মতো হাড্ডি মন্ত্রীকে কোলে নেওয়া ওয়ান-টু এর বিষয়।বলেই তানহাকে কোলে তুলে নিল।

–আপনি আমাকে অপমান করলেন।আপানকে তুমি করে বলবো না।

–তাহলে আমি’ও তোমাকে নিচে নামাবো না।

তানহা ইফাদের গলা জড়িয়ে ধরলো।এক দৃষ্টিতে ইফাদের দিকে তাকিয়ে আছে।মানুষটাকে কাছে থেকে দেখলে,তানহার খুব লজ্জা লাগে।একবার তাকাচ্ছে।আরেকবার চোখ নামিয়ে নিচ্ছে।

–যত ইচ্ছে খুশি দেখো।তোমারই তো বর।ইফাদের কথা শুনে লজ্জায় ইফাদের বুকে মুখ লুকালো তানহা।

চলবে…..

#এক_মুঠো_কাঁচের_চুরি
#পর্ব_২৬
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

ফজরের আজান কানে আসতে-ই প্রতিদিনের মতো আজকে-ও তানহার ঘুম ভেঙে গেল।শীতের সকাল,কম্বলের আয়েশ থেকে উঠতেই ইচ্ছে করে না।ইফাদের সাথে গল্প করতে করতে কখন যে,ঘুমিয়ে পড়েছে।তা’ জানা নেই তানহার।ইফাদ কপালে হাত রেখে নরম কণ্ঠে বলল।

–আজান দিয়েছে।উঠুন,উঠে অজু করে চাচার সাথে মসজিদে যাবেন।ইফাদ তানহার এক হাত জড়িয়ে ধরে শুইয়ে রইল।

–তারমানে আপনি জেগে আছেন।তবুও উঠছেন না।

–আগে উঠে গেলে,বউয়ের এত ভালোবাসা পেতাম।তুমি করে না বললে উঠবো না।

–ইফাদ সোনা পাখি আমার উঠো।লক্ষি ছেলের মতো নামাজ পড়ে আসো।আর আমার জন্য আল্লাহর রহমত নিয়ে আসো।

তানহার কথা শুনে ইফাদ উঠে বসলো।তানহার দিকে তাকিয়ে মুখ এক হাতে দিয়ে বলল।

–এভাবে কেউ বলে,আমার বুঝি শরম লাগে না।

–আপনি তো’ না মানে তুমি তো বললে,তোমাকে তুমি করে বলতে।

–তুমি করে বলতে বলেছি।শরম দিতে বলি নাই।

–শরম আলা বর আমার,এবার উঠুন অজু করে চাচার সাথে মসজিদে যাবেন।

–কোথায় গিয়ে অজু করবো।দেখিয়ে দিবে না।

–আমার সাথে চলুন।আমি দেখিয়ে দিচ্ছি।

–এটা কিন্তু ঠিক না তুমি বলার পরে আপনি করে বলছো।

–এতদিনের অভ্যাস একদিনে যাবে।আস্তে আস্তে আপনি থেকে তুমি হয়ে যাবে।আমি চেষ্টা করবো।তোমাকে তুমি করে বলার।এবার খুশি।

–হুম বউজান অনেক খুশি।আমার মতো এত লক্ষি বউ যেনো,আল্লাহ প্রতিটি ঘরে ঘরে দেয়।তাহলে সংসার আল্লাহর রহমত ঢেলে ঢেলে পড়বে।

তানহা কলপাড়ে গিয়ে দেখলো মাহতাব সাহেব অজু করছেন।অজু শেষ করে।তানহাদের দেখে ইফাদকে বলল।

–বাবা মসজিদে যাবে না।

–জ্বী চাচা যাব।আপনার সাথে যাব জন্য অজু করতে এসেছি।

–আমি আবার বাসা থেকে অজু করে যাই।

–আমি’ও বাসা থেকেই অজু করে যাই চাচা।

–তুমি অজু করে নাও।

ইফাদ কোনো কথা না বলে,অজু করে মাহতাব সাহেবের সাথে বেড়িয়ে গেল।তানহা অজু করে এসে রুমে নামাজ পড়ে নিল।নামাজ শেষ করে,কিছুক্ষণ কোরআন তেলওয়াত করল।কোরআন পড়া শেষ হলে,তা যত্ন সহকারে তুলে রাখলো।এত সকালে কেউ উঠে নাই।পুরো বাড়ি একদম নিস্তব্ধ হয়ে আছে।তানহা আবার শুইয়ে পড়ল।

ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে চারিদিকে,মাহতাব সাহেব আর ইফাদ গল্প করতে করতে রাস্তা দিয়ে হেঁটে আসছে।চারদিকে কুয়াশায় সাদা হয়ে আছে।অন্য দিনের তুলনায় আজকে একটু বেশি কুয়াশা পড়েছে।বাসার কাছে আসতে-ই কয়টা শিউলি ফুল ইফাদের চোখে পড়ল।ইফাদ ফুল অনুসরণ করে গাছ পর্যন্ত পৌঁছে গেল।

–শিউলি ফুল আমার তানহা খুব পছন্দ করে।গাছটা নিজ হাতে কিনে নিয়ে এসেছিল।চাচির থেকে অনুমতি নিয়ে ফুলের বাগান করেছিল।আরো বাহারি রকমের ফুলের গাছ ছিল।সব বাচ্চারা নষ্ট করে ফেলছে।তানহা নেই,কে যত্ন করবে বাগানের,এই শিউলি ফুলের গাছটাই অবশিষ্ট আছে।তা-ও তোমার চাচি বলেছিল।কেটে দেওয়ার জন্য,আমি রেখে দিয়েছি।তানহা দেখলে মন খারাপ করবে।

মাহতাব সাহেবের কথা শুনতে শুনতে বেশ কয়েকটি ফুল কুড়িয়ে নিল ইফাদ।

–তুমি ফুল কি করবে বাবা।একটু পরে দেখবে পারার বাচ্চারা এসে কাড়াকাড়ি করে ফুল গুলো কুড়িয়ে নিয়ে যাবে।

–অনেক সুন্দর লাগছে চাচা।তাই কয়টা হাতে তুলে নিলাম।বলেই দু’জন বাসার মধ্যে প্রবেশ করল।তানহা শুইয়ে ছিল।কখন যে,দু-চোখের পাতা এক হয়ে গিয়েছে।তা’ জানা নেই।ইফাদ রুমে এসে,মাথা থেকে টুপি খুলে ব্যাগের মধ্যে রাখলো।

–মহারাণী ঠান্ডার মধ্যে আমাকে তুলে দিয়ে,নিজে আরামে ঘুমোচ্ছে।দাঁড়াও তোমার ঘুৃম বের করছি।বলেই তানহার পায়ের কাছে গিয়ে সুড়সুড়ি দিতে লাগলো।তানহার পায়ে এমনিতেই অনেক সুড়সুড়ি,ইফাদ পায়ে সুড়সুড়ি দেওয়াতে ধড়ফড়িয়ে উঠে বসলো তানহা।জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে,ঘুমের মধ্যে আচমকা সুড়সুড়ি দেওয়াতে বেশ ভয় পেয়েছে।তা’ তানহার মুখ দেখেই স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।

–ভয় পেয়েছো।

–আপনি যেদিন ঘুমাবেন।সেদিন গায়ে পানি ঢেলে দিয়ে বলবো।আপনি রাগ করেছেন।

–হ্যাঁ করেছি।আবার আপনি করে বললে।তানহা ইফাদের কথার কোনো উওর দিল না।অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে আছে।তানহাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ইফাদ বলল।

–প্লিজ আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে থেকো না।আমার শরম লাগে।ইফাদের কথা শুনে হেসে দিল।মানুষটার মুখে সব সময় শরম লেগেই থাকে।

–কখন আসলে মসজিদ থেকে।

–এখনই এসেছি।দাঁড়াও তোমার জন্য একটা জিনিস এনেছি।বলেই ফুলগুলো এনে,তানহার হাতে দিল।

–শিউলি ফুল আপনি কোথায় পেলেন।জানেন শিউলি ফুল আমার অনেক পছন্দের,আমার শিউলি ফুলের গাছ-ও আছে।

–শিউলি ফুল পেয়ে এত খুশি।চলো তাহলে তোমার আরেকটা ইচ্ছে পূর্ণ করে দেই।

–কি ইচ্ছে?

–বিছানা থেকে নেমে আসো।ইফাদের কথা মতো তানহা নিচে নেমে আসলো।কালো রংয়ের চাদরটা বের করে তানহার শরীর মুড়িয়ে দিল ইফাদ।তারপরে তানহার হাত ধরে বাসার বাহিরে নিয়ে আসলো।

–আপনার মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে।এই কুয়াশার মধ্যে একটা কাকা পাখিও বের হয় না।আপনি বাহিরে কি করতে এসেছেন।

–বউয়ের ইচ্ছে পূর্ণ করতে এসেছি।তুমি তো বলেছিলে,আমার সাথে কুয়াশার মধ্যে হাত হাত রেখে হাটার খুব ইচ্ছা।আজ দিগুণ কুয়াশা পড়ায় কেউ কম্বলের আরাম রেখে উঠবে না।আজকে আমরা দু’জন পুরো কুয়াশার সকালটা অনুভব করবো।

–আপনার মনেই আছে।

–আমি কি দশটা বউ যে,মনে থাকবে না।

–কি বললেন।

–তুমি কথায় কথায় খালি আমার ওপরে রেগে যাও কেনো?

–আমার কি দশটা স্বামী।যে,আমি তাদের ওপরে রাগ করবো।

–কি বললে,

–তুমি রাগ করছো কেনো?

–কপি বাই ইফাদ।

–জ্বী না তুমি আমাকে বললে,আমি কেনো রাগ করি।তাই তোমাকে আমার রাগ করার অনুভূতিটা’কে অনুভব করালাম।

বলেই দু’জন হাঁটতে শুরু করলো।পাশাপাশি দু’জন হাত ধরে হাঁটছে।চারিদিকে কুয়াশা আর কুয়াশা।দূরের কিছু দেখা যাচ্ছে না।ইফাদ আর তানহা দু’জন দুজনের দিকে তাকিয়ে হেসে দিল।

–জানো ছোট বেলায় কয়টা অপরাধ করেছি।আমার পাঁচজন সই ছিল।ওদের বাসায় ছাগল পালন করতো।বিকালে সবাই মিলে বিলের মধ্যে ঘাস কাটতে যেত।আমার সাথে খেলার মতো কেউ ছিল না।তাই আমি ওদের সাথে গিয়ে বসে থাকতাম।বিলের শেষ মাথায় বড়োই গাছ ছিল।সেখানে শত শত খেজুরের গাছ ছিল।শীত কাল আসলে,খেজুরের গাছ থেকে রস হয়।রস থেকে গুর হয়।এসব আমরা নিজ চোখে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখেছি।একদিন সবাই মিলে বড়োই পেরে নিয়ে বিলের মধ্যে দিয়ে কি যে,দৌড়ে দিয়েছি।ভাবছি এই বুঝি মালিক এসে ধরে নিয়ে যাবে।একদিন সবাই মিলে ঠিক করলাম খেজুরের রস চুরি করে খাব।যেই ভাবা সেই কাজ।পরের দিন সবাই মিলে চলে গেলাম বিলে,আছরের আজান দিয়েছে।সবাই নামাজ পড়তে চলে গেল।দু-একজন ছিল।তারা দূরে ছিল।সবাই চলে যেতেই পাঁচজন মিলে,খেজুর বাগানের ওপরে হামলা দিলাম।পাঁচজন পাঁচটা গাছে উঠে রসে হাঁড়ি থেকে হাত দিয়ে রস বের করে খাচ্ছিলাম।হাত দিয়ে খেতে পারছিলাম না জন্য।হাড়ি গাছের নিচে নামিয়ে নিয়ে খেতে লাগছি।আর গাছ আলা এসে বলছে।

–ঐ কিডা রে রস চুরি করে খাচ্ছে ধর।

ওরে ভাই আমরা কি দৌড় টাই না দিয়ে ছিলাম।যে,যেদিকে পারছে ঘাস ফেলাই দিয়ে দৌড় দিয়েছে।পাঁচজন পাঁচ দিকে চলে গিয়ে ছিলাম।ভয়ে বিলের শেষ মাথায় কখনো আর যায় নাই।মনে ভয় ছিল,গেলেই আমাদের আঁটকে রাখবে।আর বাসায় আসতে দিবে না।

তানহার কথা শুনে ইফাদ হাসতে হাসতে নিচে বসে পড়েছে।শেষে কি না রস চুন্নিকে বিয়ে করলাম।

–আপনি হাসছেন।অনেক ছোট ছিলাম।জান হাতে নিয়ে সেদিন দৌড়ে পালিয়ে ছিলাম।বেশিদূরে না।সামনেই বাগান।যাবেন আজকেও রস চুরি করে খাব।

ইফাদ হাসি থামিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বলল।

–একদম না।চুরি করা মহাপাপ।তুমি নামাজ পড়।কতকিছু জানো।এমন অন্যায় আবদার করো কিভাবে।

–চুরি করবো না।আমরা গিয়ে খাব।তারপরে মামাকে টাকা দিয়ে দিব।তাহলে হবে।

–হ্যাঁ হবে চলো।

দু’জন মিলে খেজুর বাগানের মধ্যে আসলো।চারিদিকে বিশাল বিশাল গাছ।প্রতিটি গাছে হাড়ি লাগানো।তানহা একটা ছোট গাছে দেখিয়ে বলল।

–তুমি এই গাছে উঠো।

–আগে মালিককে ডেকে নিয়ে আসো।

–তুমি না পারলে আমাকে বলো।আমি উঠছি গাছে।বলেই গাছের দিকে এগিয়ে গেল তানহা।

–পড়ে যাবে।আমি উঠছি।তুমি মালিকে ডেকে নিয়ে আসো।বলতে বলতে ইফাত গাছে উঠলো।পায়ে একটু ব্যথা পেল।তানহাকে বুঝতে দিল না।রসের হাঁড়ি পেরে নিয়ে এসে,তানহার হাতে দিয়ে বলল।

–তোমার মামা কই।

–ঐ কিডারে রস চুরি করতে আইছে।আজকে হাত-পা বাইন্ধা রাখমু।মেলা অত্যাচার সহ্য করছি।আজকা মালিক যদও বাগান ঘিরা না দেয়।তাইলে এই বাগান আমি রাখমু না।

–ইফাদ পালাও রাম দা নিয়ে আসছে মামা।বলেই তানহা দৌড়ে দিল।ইফাদও বোকার মতো তানহা পেছনে ছুটলো।অর্ধেক রাস্তায় এসে ধপাস করে পরে গেল ইফাদ।কিছু পড়ার শব্দ পেয়ে তানহা পেছনে তাকালো।ঘুরে এসে ইফাদকে টেনে তুলল।ব্যথা পায়ে আবার-ও ব্যথা পেয়েছে ইফাদ।ঠিকমতো হাঁটতেই পারছে না।তানহা অসহায় দৃষ্টিতে ইফাদের দিকে তাকিয়ে।ইফাদ রাগী দৃষ্টিতে তানহার দিকে তাকিয়ে আছে।লোকটি কাছে এসে বলল।

–কি রে তুই তানহা না।এইডা কেডা।তোর জামাই।তুই জামাই নিয়ে আমার বাগানে চুরি করতে আইছু।

–না না মামা আপনি ভুল বুঝছেন।এই দেখুন টাকা।আমরা কিনে খেতে এসে ছিলাম।আপনার হাতে দা দেখে ভয়ে দৌড়ে দিয়েছি।

–আমাক না কইয়া তুই গাছে হাত দিলু কোন সাহসে।আমার কাছে গেলেই তো পাইরি দিলামনি।না কইয়া পারছু এখন দুইশো টেকা না দিলে যেতে দিব না।তোকে আর তোর জামাইকে বাইন্ধা রাখমু।

–তাহলে বিশ গ্লাস রস দাও।

–যে,রসের হাঁড়ি পারছু ওটা নিয়ে আর টেকা দিয়ে ভালোই ভালোই বাড়িত চলে যা।

–এক হাঁড়ি রসের দাম এত টাকা হয় নাকি।

–টেকা না দিলে আমি’ও যাইতে দিমু না।

–এই নিন মামা আপনার টাকা।লোকটি টাকা পেয়ে খুশি হয়ে চলে গেল।

–আপনি ওনাকে এত টাকা দিলেন কেনো?এক হাঁড়ি রসের দাম কোনোদিন এত টাকা হয়।

ইফাদ রাগী দৃষ্টিতে তানহার দিকে তাকালো।তানহা বাংলার পাঁচের মতো মুখ করে,রসের হাঁড়ি দিকে একবার তাকাচ্ছে।আরেকবার ইফাদের দিকে তাকাচ্ছে।ইফাদ ঠিকমতো হাঁটতেও পারছে না।খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাঁটছে।তানহা দু’হাতে রসের হাঁড়ি ধরে আছে।ইফাদ তানহার ঘাড়ে হাত রেখে আস্তে আস্তে হাঁটছে।কেউ কোনো কথা বলছে না।ইফাদ যে,রেগে গিয়েছে।তানহা ভালো করেই বুঝতে পারছে।অনেক সময় নিয়ে বাসায় আসলো দু’জন।বাকি রাস্তায় কেউ কোনো কথা বলে নাই।তানহা বাসায় এসে,ইফাদের জন্য তেল গরম করে নিয়ে আসলো।ইফাদের পা কোলের মধ্যে তুলে নিল।তেল নিয়ে পায়ে দিয়ে দিতে লাগলো।

–কি করছো টা কি।

–আমার জন্য আপনি ব্যথা পেয়েছেন।তাই একটু সেবা করছি।

–এসব লাগবে না।তুমি নিয়ে যাও।

–আমার ওপরে রাগ করেছেন।এই তেলটা অনেক ভালো।পায়ে দিয়ে দিলে কিছুক্ষণের মধ্যে আরাম পাবেন।

–আমাকে মিথ্যা বলে নিয়ে গেলে কেনো?

–এবারের মতো মাফ করে দেন।আর কখনো এমন করবো না প্রমিস।ইফাদ কিছু বলল না।তানহার দেওয়া তেলটা সত্যি অনেক ভালো।কিছুক্ষণের মধ্যে অর্ধেক ব্যথা কমে গিয়েছে।

সারাদিন পেরিয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেছে।ইফাদ সকালে খেয়ে মাহতাব সাহেবের সাথে বেড়িয়েছে।এখনো ফিরে নাই।দুপুরে খেয়েছে কি না।ভেবেই চিন্তা হচ্ছে।তানহা ব্যাগ থেকে ফোন বের করতে গিয়ে,একটা কাগজ সামনে আসলো।কাগজটা দেখে অধরের কোণে হাসির রেখা ফুটে উঠলো।কাগজটি হাতে নিয়ে কিছু একটা ভাবছিল।তখনই আবির তানহার রুমে আসে।

–কি রে তানহু পাখি আসবো।

–আমার স্বামী আমার রুমে নেই।তাই এখন আমার রুমে না আসাই ভালো।

–ভয় নেই।ইফাদ তোকে ভুল বুঝে এমন কোনো কাজ আমি করবো না।আমি কি জন্য এসেছি।সেটা তুইও ভালো করেই জানিস।কথা কম বলে কাগজটা আমার হাতে দিয়ে দে।

–কিসের কাগজ ভাইয়া।

–তানহা একদম নাটক করবি না।আমি চৈতালিকে ফোন দিয়ে ছিলাম।চৈতালি বলেছে কাজগটা তুই নিয়েছিস।

তানহা মুখ দিয়ে চুকচুক শব্দ করে বলল।

–মানুষের জিনিসের প্রতি তোমার এত লোভ কেনো?তোমার মনের আশা কখনো পূর্ণ হবে না।

–তানহা ভালোই ভালোই আমার কথা শোন বলছি।তা-না হলে ফলাফল ভালো হবে না।বলে দিলাম।

–তুমি যা ইচ্ছে খুশি করে নাও।সাইন আমি কিছুতেই করবো না।আর কাগজটাও তুমি আমার থেকে পাবে না।তুমি বেড়িয়ে যাবে।নাকি আমি চাচিকে ডাকবো।

আবির রাগ দেখিয়ে চলে গেল।তানহা দীর্ঘশ্বাস ফেলে শাশুড়ীকে কল দিল।শাশুড়ীর সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে রেখে দিল।ইফাদের জন্য অপেক্ষা করছে।কিন্তু ইফাদের আসার নামে কোনো নাম নেই।পরক্ষনে মনে হলো আবির চৈতালির সাথে আবার যোগাযোগ করেছে।তানহা রেগে রুম থেকে বেড়িয়ে,আবিরের রুমের দিকে গেল।

চলবে…..