এক মুঠো কাঁচের চুরি পর্ব-২৭+২৮

0
288

#এক_মুঠো_কাঁচের_চুরি
#পর্ব_২৭
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

আপনার লজ্জা শরম বলতে কিছু নেই।দু’দিন পরে করবেন বিয়ে,আপনি আবার আমার ননদের কাছে ফোন দিয়ে ছিলেন।কোন সাহসে চৈতালির কাছে ফোন দিয়ে ছিলেন।মেয়েটাকে তো’ অর্ধেক মেরেই ফেলছেন।এখন পুরোটা মেরে ফেলবেন।

–আরে তানহু পাখি যে,আমার রুমে এসেছিস।ভেতরে আয় বাহিরে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো?

–আপনার সাথে আমি গল্প করতে আসি নাই।আর একবার যদি চৈতালিকে ফোন দিয়েছেন।ফলাফল ভালো হবে না।

–আমি যদি চৈতালিকে এখনই ফোন দিয়ে আসতে বলি।তাহলে চৈতালি এখনই চলে আসবে।

–কোনোদিন আসবে না।চৈতালির আত্মসন্মান আছে।

আবির তানহার কাছে এগিয়ে আসলো।তানহার হাতের দিকে তাকিয়ে বলল।

–দেখতে চাস।তোর হাতে কিসের কাগজ রে’।

–সব কৈফিয়ত কি তোমাকে দিতে হবে।

–আচ্ছা তুই আমার সাথে সব সময় রেগে রেগে কথা বলিস কেনো?

তানহা কোনো উওর না দিয়ে চলে যেতে লাগলে,আবির তানহার সামনে এসে দাঁড়ালো।

–এভাবে অসভ্যের মতো সামনে এসে দাঁড়িয়েছো কেনো?

–কাগজটা আমার হাতে না দিলে,যেতে দিব না।তোকে ইচ্ছে করে চৈতালির কথা বলেছি।কারন তুই রেগে আমার রুমে চলে আসবি।এখন লক্ষি মেয়ের মতো আমাকে কাগজটা ফিরিয়ে দে’।

–দিব না।বলেই কাগজটা নিজের পেছনে লুকালো।তানহা চলে যেতে লাগলে,আবার বারবার পথ আঁটকে দাঁড়িয়ে পড়ছে।তানহা দরজার সাথে একদম মিশে গিয়েছে।এক হাত উঁচু করে কাগজটা ধরে আছে।আবির তানহার হাত ছুঁইতে যাবে।তখনই একজোড়া শক্ত হাত এসে আবিরের হাত পেচিয়ে ধরলো।আবির ব্যথায় মৃদু আর্তনাদ করে উঠলো।

–বলে ছিলাম না।এই হাত যদি দ্বিতীয় বার তানহার দিকে উঠে,তাহলে তোর হাত আমি ভেঙে দিব।সাহস কি করে হয়।তানহার দিকে হাত বাড়ানোর।

–ইফাদ লাগছে।হাতটা ছাড়ো।আমি তোমার বয়সে বড় হই।তুই করে কথা বলছো কেনো?এটা তোমার কেমন শিক্ষা।তুমি সবটা না জেনে আমাকে ভুল বুঝছো।

–কোনটা সঠিক আর কোনটা ভুল তা’ বোঝার বয়স আমার হয়েছে।আপনি কোন সাহসে তানহার গায়ে হাত দিতে যাচ্ছিলেন।

–আচ্ছা আমার ভুল হয়ে গেছে।আমাকে মাফ করে দাও।আমি আর কখনো এমন করবো না।শেষ বারের মতো মাফ করে দাও।

–আপনি চৈতালির কাছে কেনো ফোন দিয়ে ছিলেন।দু’দিন পরে আপনার বিয়ে,আপনি নিজের বিয়েতে ফোকাস করুন।আমার বোনের মাথা নষ্ট করে দিচ্ছেন কেনো?আবির ভাই আমার ধৈর্যের পরীক্ষা নিয়েন না।

–হাতটা ছাড়ো ইফাদ সত্যি অনেক ব্যথা লাগছে।আমি আর সহ্য করতে পারছি না।

–আপনি এতটুকুতেই ক্লান্ত হয়ে গেলেন।আমি তো’ আমার স্ত্রীকে সবার সামনে অপমানিত হতে দেখেছি।ভরা রাস্তায় আমার স্ত্রীরর শরীরে আঘাত করেছেন।আমি কিছু করতে পারি নাই।আমার ছোট বোনটার মন নিয়ে খেলা করেছেন।তার চোখের পানি ঝরিয়েছেন।একটা কথা মনে রাখবেন।ক্ষমার অযোগ্য কাউকে ক্ষমা করে দিয়ে,তার দিকে পেছনে ফিরে না তাকানোই হবে শ্রেষ্ঠ প্রতিশোধ।আবির ভাই যে,কাঁদায় না,সময়ের ব্যবধানে সে,নিজেও কাঁদে অপেক্ষা শুধু সময়ের।বলেই আবিরের হাত ছেড়ে দিল।হাতটা ছাড়া পেয়ে আবিরের মনে হলো জান হাতে পেয়েছে।ইফাদ তানহার দিকে ক্রোধিত দৃষ্টি নিক্ষেপ করল।

–তোমার কি কাজ।তুমি কেনো আবির ভাইয়ের রুমে এসেছো।

–আমি আসলে,,

–আমি তোমাকে কিছু একটা বলে ছিলাম।আমার কথাটা রাখলে না।রুমে এসো কথা আছে।বলেই রুমে চলে গেল ইফাদ।তানহা এক প্রকার দৌড়ে রুমের দিকে গেল।আবির দু’জনের কাজকর্ম পর্যবেক্ষণ করে নিল।তারপরে নিজের রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিল।

তানহা রুমে আসতেই বিনা মেঘে বজ্রপাত হলো।ইফাদের একটা ধমকে কেঁপে উঠলো তানহার সারা শরীর।মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে তানহা।

–এই তোমাকে বলে ছিলাম না।তুমি আবিরের থেকে দূরে দূরে থাকবে।কেনো গিয়েছো আবিরের রুমে,আজকাল আমার কথার কোনো মূল্য নেই দেখছি,এতটাই মূল্যহীন হয়ে গেলাম।এতই যখন দরকার ছিল।আমি আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারতে,কি এমন দরকার ছিল,যে আমাকে না বলেই তোমাকে যেতে হলো।

–আপনি যাবার পরে আবির ভাই আমার রুমে এসেছিল।আবির ভাই চৈতালির কাছে একটা কাগজ দিয়েছিল।আমি সেটা চৈতালির রুম গোছাতে গিয়ে পেয়েছি।আবির ভাই কাগজটা নিতে আসছিল।চেয়েছে আমি বলেছি নাই।পরে বলল চৈতালির থেকে জেনেছি তোর কাছে আছে।তাই রাগ করে অপমান করতে গিয়ে ছিলাম।

তানহার কথায় ইফাদ ভ্রু কুঁচকে তাকালো।তারপরে গম্ভীর কণ্ঠে বলল।

–তোমাকে কেউ বলেছিল আবিরকে অপমান করতে,আমি চৈতালির ভাই।চৈতালি আমার কলিজার টুকরার বোন।যে,আবির তোমাকে কষ্ট দিল।আমার বোনকে কাঁদাল।আমি নাচতে নাচতে তার বিয়েতে চলে এলাম।তুমি কি মনে করেছো।আমি খুশি হয়ে বিয়েতে এসেছি।আমি চাই আবির বিয়েটা করুক।চৈতালি মানুষ চিনতে শিখুক।কেমন মানুষকে সে, ভালোবেসেছে,সেটা নিজে অনুভব করুক।এখন চৈতালিকে কেউ কিছু বোঝালে,তা’ চৈতালির মস্তিস্ক পর্যন্ত পৌঁছাবে না।আবির যেটা করবে,সেই চৈতালির মনে,মস্তিষ্কে পৌঁছে যাবে।আবিরের বিয়েটা যেনো তাড়াতাড়ি হয়ে যায়।চৈতালির নিজের ভুলটা অনুভব করার জন্য হলে-ও আবিরের বিয়ে হওয়াটা খুবই জরুরী।মানুষ কিন্তু ভুল থেকেই শিক্ষা নেয়।আবির তোমার ভাই।তোমার রক্ত।তার জন্য তোমার মায়া হতে পারে।ভেতর থেকে টান অনুভব করতেই পারো।তার সবকিছু ভুলে তাকে মাফ করে দিতেই পারো।একটা কথা মনে রেখো তানহা। আবির কিন্তু আমার কেউ হয় না।ওকে দু’চারটা লাগিয়ে দিতে,আমার হাত একবার-ও কাঁপবে না।

–ওভাবে সংয়ের মতো দাঁড়িয়ে আছো কেনো?কাছে এসে শার্টটা খুলে দাও।তোয়ালে নিয়ে এসো।জামাকাপড় বের করো।গোসল করতে যাব।প্রচন্ড ক্ষুদা লেগেছে খাবার নিয়ে এসো।

ইফাদ কথাগুলো বলতে দেরি করলে-ও তানহা কাজ গুলো করতে দেরি করল না।ইফাদের শার্ট খুলে দিয়ে,ব্যাগ থেকে তোয়ালে আর জামাকাপড় বের করে ইফাদের হাতে দিল।

–বলছিলাম কি’ সন্ধ্যা করে গোসল না দিলে হয় না।আবহাওয়া ভালো না।যদি ঠান্ডা লেগে যায়।

ইফাদ গম্ভীর মুখে তানহার দিকে তাকালো।

–আচ্ছা আপনি গোসল দেন।আমি আপনার জন্য খাবার নিয়ে আসছি।বলেই রুম থেকে চলে গেল তানহা।ইফাদ গোসল করতে চলে গেল।

ইফাদ খাচ্ছে,তানহা চুপচাপ পাশে বসে আছে।মুখ দিয়ে টুঁশব্দ-ও করছে না।ইফাদের খাওয়া শেষ করে,উঠে চলে গেল।তানহা সবকিছু তুলে ফেলল।

রাতে পাশাপাশি দু’জন শুইয়ে আছে।ইফাদ খাওয়ার পরে আর কথা বলে নাই তানহার সাথে।ইফাদ মনযোগ সহকারে ফোনে,কিছু একটা দেখছে।তানহা উসখুস করছে,কিভাবে ইফাদের সাথে কথা বলবে।ইফাদ রাগ করে মাঝখানে আবার কোলবালিশ রেখে দিয়েছে।তানহা কোলবালিশটা আস্তে করে সরিয়ে দিল।পরম আদুরে ভাবে ইফাদকে জড়িয়ে ধরলো।ইফাদের কোনো হেলদোল নেই।আগের ন্যায় ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে।

–আমি আর এমন করবো না।আপনার সব কথা মেনে চলবো।আপনি রাগ করে থাকবেন না।আপনি রাগ করলে আমার কোনোকিছু ভালো লাগে না।

ইফাদের থেকে কোনো উওর আসলো না।তানহা অনেক গুলো কথা বলল।ফলাফল শূন্য।তানহা রাগ করে ইফাদের হাতে কামড় বসিয়ে দিল।ইফাদ তড়িঘড়ি করে তানহার দিকে ঘুরলো।

–এভাবে বিড়ালের মতো কামড়াচ্ছ কেনো?

–আমি বিড়ালই আপনার বিড়াল।আপনি আমার জামাই বিড়াল।আমি ছোট বিড়াল।আপনি বড় বিড়াল।বড় বিড়াল রাগ করেছে।তাই ছোট বিড়াল কামড়ে রাগ ভাঙাচ্ছে।

–ফাজলামির একটা সীমা থাকে,অনেক রাত হয়েছে ঘুমাও।

–আচ্ছা ঘুমোতে পারি।আমাকে একটা বিড়ালের বাচ্চা এনে দিতে হবে।জানেন আমার একটা বিড়ালের বাচ্চা ছিল।তাকে আমি খুব ভালো বাসতাম।কিন্তু চাচি তাকে বস্তায় করে বিলের মধ্যে ফেলে দিয়ে আসছিল।আমি সারাদিন না খেয়ে ছিলাম।অনেক দিন বিড়ালটার জন্য কান্না করছি।আপনি তো’ আমার সাথে কথা বলবেন না।আমাকে একটা বিড়ালের বাচ্চা এনে দিবেন।আমি সারাদিন তাকে নিয়ে থাকবো।

তানহার কথা শুনে ইফাদ তানহার দিকে মনযোগ দিল।স্থির দৃষ্টিতে তানহার দিকে তাকিয়ে আছে।নিরবতা ভেঙে ইফাদ বলল।

–বিড়ালের বাচ্চা না নিয়ে,তুমি নিজে একটা বাচ্চা নিলেই তো’ পারো তানহা।

ইফাদের কথা শুনে,তানহা গোলগাল করে তাকালো।ইফাদ তার দিকে তাকিয়ে আছে দেখে,একহাতে ইফাদের দু-চোখ ধরে রাখলো।লজ্জায় ইফাদের বুকে মুখ লুকালো।

আজকে আবিরের গায়ে হলুদ।পুরো বাড়ি জুড়ে মেহমান গিজগিজ করছে।সবাই যে,যার কাজ নিয়ে ব্যস্ত।বাচ্চারা হৈচৈ করছে।কয়েকজন দৌড়াদৌড়ি করছে।থালাবাসন ধোয়ার ঝনঝন শব্দ ভেসে আসছে।কেউ কেউ সবাইকে খাবার দিতে ব্যস্ত।কেউ বা রান্না করায় ব্যস্ত।পা ফেলার জায়গা নেই এই ছোট বাসায়।হাঁটাচলা করতে একটু কষ্টই হচ্ছে সবার।তানহা ভির ঢেলে এক হাতে খাবার নিয়ে,নিজের রুমে আসলো।ইফাদ বিছানায় বসেছিল।তানহা ক্লান্ত মুখে বলল।

–এই নিন আপনার খাবার।আপনার জন্য খাবার নিয়ে আসতে গিয়ে মনে হলো।দ্বিতীয় যুদ্ধ জয় করে আসলাম।

–তুমি এত কষ্ট করতে গেলে কেনো?আমাকে ডাকতে আমি বাহিরে গিয়ে খেয়ে আসতাম।

–আপনার মাথা খারাপ।বাহিরে তাকিয়ে দেখছেন একবারো।এত মানুষ জনের মধ্যে আপনাকে খেতে দিব।

–তুমি যদি আপনি থেকে তুমি আসতে না পারো।তাহলে আমি’ও বাহিরে গিয়েও খেতে পারবো।

–আপনি সব কথার মধ্যে আপনি আর তুমি নিয়ে চলে আসেন কেনো?

–তা তোমার ভাই কি কাগজ নেওয়ার জন্য তোমার রুমে আসছিল।কাগজটা আমাকে দেখালে না তো’।নাকি আমাকে-ও দেখাবে না।

–ওমা আপনাকে দেখাবো না কেনো?এখনই দেখাচ্ছি বলেই কাগজটা বের করে নিয়ে এসে,ইফাদের দিকে এগিয়ে দিল।ইফাদ কাগজটার দিকে চোখ বুলিয়ে অবাক হয়ে তানহার দিকে তাকালো।এমন ভাবে তাকালো,মনে হয়।আগে কখনো তানহাকে দেখে নাই।ইফাদ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল।

–তাহলে এই তোমার আবিরের ভাইয়ের ভালোবাসা।তাই তো’ বলি ছেলেটা এতটা ভালোবাসে কোনো আমার বউকে,আমি কি কম ভালোবেসে ফেললাম নাকি।তোমার আবির ভাইয়ের নাটক আমার মনকে-ও গলিয়ে ফেলছিল।এই ছিল তোর মনে আবির ভাই।

ইফাদের বোকা বোকা মুখ দেখে তানহা হেসে দিল।তানহাকে হাসতে দেখে ইফাদ বলল।

–তুমি খেয়েছো বউজান।

–আমি খাবার সময় পাই নাই।সময় করে খেয়ে নিব।আপনি খেয়ে প্লেটটা ফাঁকা করে দিন।আজকে প্লেট এখানে ওখানে ফেলে রাখা যাবে না।সেকেন্ডে সেকেন্ড প্লেট লাগছে।চাচিরা প্লেট ধুইয়ে উঠতেই পারছে।এত এত প্লেট এসে জমা হচ্ছে।

–আজকে কাজের দিন।এমন একটু হবেই তুমি আমার পাশে বসো।

–বসার সময় নেই।খাওয়া শেষ হলে,ডাক দিবেন।আমি এসে প্লেট নিয়ে যাব।

–আমি তোমাকে বসতে বলেছি।তুমি আমার ওপরে কথা বলছো।ইফাদের রাগ দেখে বাধ্য মেয়ের মতো বসে পড়ল তানহা।ইফাদ একবার নিজে খাচ্ছে,আরেকবার তানহাকে খাইয়ে দিচ্ছে।

সন্ধ্যায় আবিরের গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হলো।সবাই আবিরকে গায়ে হলুদ দিয়ে যাচ্ছে।রোকেয়া বেগম আর চৈতালি আবিরদের বাসায় মধ্যে প্রবেশ করল।বাসার মধ্যে প্রবেশ করতেই প্রথমে চোখে পড়ল আবিরের দিকে।সাদা রংয়ের লুঙ্গি,সাদা রংয়ের সেন্ডো গেঞ্জি,কাঁধে লাল রংয়ের গামছা পড়া।সামনে নানান রকমের মিষ্টি।সবাই আবিরকে হলুদ দিয়ে মিষ্টি খাইয়ে দিচ্ছে।সবাই যে,যা পারছে হলুদ দেওয়ার পরে টাকা দিচ্ছে।আবিরের চোখে-মুখে খুশির রেখা বিদ্যমান।চৈতালির দু-চোখ ছলছল করে উঠলো।নিজকে সামলে নিল।সবার সামনে নিজেকে শক্ত রাখার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে চৈতালি।রোকেয়া বেগম আবিরকে গিয়ে হলুদ লাগিয়ে দিল।চৈতালি ধীর পায়ে আবিরের দিকে এগিয়ে গেল।হাতে কিছুটা হলুদ নিয়ে আবিরের দু’গালে মাখিয়ে দিল।আবির স্থির দৃষ্টিতে চৈতালির দিকে তাকালো।মেয়েটা কেমন জানি হয়ে গেছে।মুখটা মলিন হয়ে আছে।চুলগুলো এলোমেলো।চোখের নিচের কালো দাগ প্রমাণ করে দিচ্ছে,মেয়েটা রাতে ঘুমায় না।দু’জন দু’জনের মুখোমুখি।চৈতালি কি চেয়েছিল।ভাগ্য তাকে কি এনে দিল।আর এক মুহুর্ত দাঁড়াতে পারলো না।আবিরের থেকে দূরে সরে এলো চৈতালি।

চলবে…..

#এক_মুঠো_কাঁচের_চুরি
#পর্ব_২৮(বোনাস পর্ব)
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

মুয়াজ্জিনের আজান কানে আসতেই মেয়েরা নামাজ পড়ার জন্য কলপাড়ে ভির জামালো।কে কার আগে অজু শেষ করতে পারে।তানহা-ও এসেছে।কলপাড়ে এসে,চৈতালি আর রোকেয়া বেগমকে দেখে ভির ঠেলে তাদের কাছে গেল।

–আম্মা কখন এসেছেন।আমাকে ফোন করেন নাই কেনো?হাঁটুর ব্যথা নিয়ে আপনি দাঁড়িয়ে আছেন।

–তোমার চাচি আমাদের বসার জায়গায় করে দিয়েছিল মা।নামাজ পড়ব।তাই অজু করতে আসলাম।তোমাদের জানাতে চেয়েছিলাম।কিন্তু চৈতালি বলল তোমাদের চিন্তা না দিতে,তাই ফোন করা হয় নাই।

তানহা ভির ঠেলে সবাইকে সরে যেতে বলল।রোকেয়া বেগম বয়স্ক মানুষ।এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে ওনার কষ্ট হচ্ছে,জায়গা একটু ফাঁকা করে দিয়ে তানহা বলল।

–আসুন আম্মা আপনি আগে অজু করে নিন।রোকেয়া বেগম অজু করতে লাগলেন।

–তানহা তোর শাশুড়ী নাকি রে।খুব ভালোবাসিস শাশুড়ীকে।

–জ্বী ভাবি আমার শাশুড়ী।পায়ের ব্যথার জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না।বয়স হচ্ছে তো’।

–এভাবেই শাশুড়ীকে দেখে রেখো মা।দোয়া করি আল্লাহ তোমাকে সুখে শান্তিতে সংসার করার তৌফিক দান করুক।

–মামি আপনি এবার অজুটা করে ফেলুন।সবাই মিলে অজু করে,এক রুমে নামাজ পড়তে গেল।চৈতালি-ও নামাজ পড়তে শুরু করেছে।ভাবতেই তানহা খুশি হলো।আবিরের সাথে রিলেশনে যাবার পরে,নামাজ পড়াও ছেড়ে দিয়েছিল মেয়েটা।আল্লাহ তায়ালা এই জন্য মেয়েটাকে এতটা কষ্ট দিল।

সৃষ্টিকর্তা তো’ বলেই দিয়েছে,তুমি যাকে আমার থেকে বেশি ভালোবাসবে,আমি তাকেই তোমার থেকে দূরে সরিয়ে দিব।এবং তোমার ওপরে চাপিয়ে দিব একাকিত্বের ভয়ংকর অভিশাপ।

এজন্য পরিস্থিতি যতই খারাপ হোক না কেনো আল্লাহ তায়া’লাকে ভুলে যাওয়া ঠিক না।ভালো সময়ে আমরা আল্লাহ তায়ালাকে ভুলে যাই।খারাপ সময়ে আমরা তাকে বেশি বেশি মনে করি।আমরা তার ডাক ফিরিয়ে দিলে-ও খারাপ সময়ে তিনি আমাদের ফিরিয়ে দেন না।এজন্য নামাজটা সব সময় ধরে রাখা আমাদের জন্য আবশ্যক।

নামাজ শেষ করে সবাই উঠে চলে গেল।চৈতালি দু-হাত তুলে মোনাজাত করছে,আর অঝোরে কান্না করে যাচ্ছে।

–হে আল্লাহ।আমার অবস্থা,আমার পরিস্থিতি আমার সবকিছু আপনি জানেন,নিজের ভালোবাসার মানুষটা অন্য কারো হয়ে যাচ্ছে,এটা সহ্য করা কতটা কষ্টকর আপনি জানেন,আপনি আমাকে ধৈর্য দিন।সহ্য করার ক্ষমতা দিন।আমি আমার পরিবারের মানসন্মান রক্ষা করতে পারি।আবির স্যারের কথায় যেনো আর আসক্ত না হয়ে পড়ি।

নামাজ শেষ করে চৈতালি মায়ের পাশে বসে আছে।চুপচাপ সবকিছু দু’চোখে দেখছে।স্থির নয়নে সবকিছু পর্যবেক্ষণ করছে।মারিয়া এসে,চৈতালিকে নিয়ে গেল।রোকেয়া বেগম নিষেধ করলেন না।মেয়ের মন খারাপ দেখে।চৈতালি চলে যাওয়ার সাথে সাথে ইফাদ ঝড়ের গতিতে মায়ের কাছে আসলো।মাকে একটু আড়ালে নিয়ে এসে,রাগ দেখিয়ে বলল।

–আম্মু মেয়ের সাথে তোমার-ও সব জ্ঞান বুদ্ধি লোপ পেয়েছে।হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলছো।তুমি কেনো চৈতালিকে নিয়ে,এই বাসায় এসেছো।তোমার কোনো কমনসেন্স নেই।তোমার মেয়ে যদি এই বিয়ে বাড়িতে কোনো অঘটন ঘটিয়ে বসে,তার দায় কে নিবে।তুমি নিবে আম্মু।কাজটা একদম তুমি ঠিক করো নাই।আসার আগে আমাকে জানাতে পারতে।

–তুই এভাবে কথা বলছিস কেনো?চৈতালি তোর নিজের বোন হয়।ওর প্রতি তোর বিশ্বাস নেই।চৈতালি আসার আগে আমাকে কথা দিয়েছে।এ বাসায় এসে কোনো সমস্যা করবে না।মেয়েটার মন খারাপ ছিল।ভাবলাম মানুষের মধ্যে আসলে,হয়তো ভালো লাগবে।তাই এসেছি।

–তুমি ওকে নিয়ে ভালো কোনো রেস্টুরেন্টে যেতে পারতে,সুন্দর সুন্দর দার্শনিক পার্কে যেতে পারতে।বাহিরে কি মানুষ জনের অভাব পড়েছে।বেছে বেছে তোমার এই বাসায় আসতে হলো।

–তোর সমস্যা কি রে’।তুই এমন করছিস কেনো?তোর বোন ভালো থাকুক।এটা তুই চাস না নাকি বল তো’ ইফাদ।

–ইয়াদ ভাইয়ার মতো যখন মেয়েকে হারাবে।তখন বুঝবে ছেলে কেনো কথা গুলো বলেছিল।ইয়াদ ভাইয়াও বলেছিল।সে,কিছু করবে না।পেরেছো নিজের ছেলেকে বাঁচাতে।মেয়েকে হারানোর পরে তোমার হুস আসবে।আমি কিছু বললেই দোষ হয়ে যায়।কোনো অঘটন ঘটলে তার দায় তুৃমি নিবে।বলেই রাগ দেখিয়ে চলে গেল।

মারিয়া চৈতালিকে আবিরের রুমে নিয়ে আসলো।চৈতালি আবিরকে দেখেই রুম থেকে বেড়িয়ে যেতে লাগলো।মারিয়া চৈতালির পথ আঁটকে রাখলো।চৈতালি রেগে মারিয়ার গালে থাপ্পড় বসিয়ে দিলো।মারিয়া কিছু বলতে যাবে।তার আগেই আবির হাত দিয়ে মারিয়াকে যেতে বলল।মারিয়া রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে চলে গেল।

–চৈতালি আমার ওপরে রাগ করে আছো।

–প্লিজ আমাকে যেতে দিন।আম্মু বা ভাইয়া দেখতে পেলে,অনর্থ হয়ে যাবে।

–আমি তোমাকে যেতে দিব।আঁটকে-ও রাখবো না।তুমি শুধু আমাকে কাগজটা ফিরিয়ে দাও।

–সে,আপনি আমাকে আঁটকে রাখবেন না।সেটা আমি ভালো করেই জানি।কাগজটা আমার কাছে নেই।রুমে রাখ ছিলাম।খুঁজে পাচ্ছি না।

–কাগজটা তানহার কাছে আছে।তুমি এখন তানহার রুমে যাবে।ওর থেকে কাগজটা নিয়ে চলে আসবে।

চৈতালি আবিরের কথায় পাত্তা না দিয়ে,আবিরের দু-হাত ধরে হাউমাউ করে কান্না করে দিলো।

–স্যার চলুন না আমরা,পালিয়ে যাই।এখনো সময় আছে।আপনার বিয়েটা হয় নাই।আপনাকে নিয়ে দূরে কোথাও চলে যাব।এতদূরে চলে যাব।কেউ আমাদের খুঁজে পাবে না।আপনার গোলাম হয়ে থাকবো।চলুন না পালিয়ে যাই।আপনাকে ছাড়া আমি ভালো থাকতে পারছি না।আমার দম বন্ধ আসে।নিঃশ্বাস নিতে অনেক কষ্ট হয়।ভালো থাকতে পারছি না।

–এ মেয়েকে একটা কাজের জন্য ডেকে নিয়ে আসলাম।মরা কান্না জুড়ে দিল।চৈতালি আবিরের পায়ের কাছে বসে গেছে।দুই পা জড়িয়ে ধরে কান্না করছে।দৃশ্যটা এড়ালো না বাসার লোকজনের,মুহুর্তের মধ্যেই কানাঘুষা শুরু হয়ে গেল।বাসায় এক প্রকার ছিঃ ছিঃ রোল পড়ে গেল।ইফাদ আর তানহা দৌড়ে আবিরের রুমে আসলো।চৈতালিকে আবিরের পায়ের নিচে বসে থাকতে দেখে ভির ঠেলে ভেতরে গেল ইফাদ।চৈতালিকে তুলে নিজের সবটুকু শক্তি দিয়ে কষে থাপ্পড় বসিয়ে দিলো।এই প্রথম প্রাণ প্রিয় বোনের গায়ে হাত তুলল ইফাদ।

–নিজের আত্মসন্মান সবকিছু হারিয়ে ফেলছিস।এটা কেমন ব্যবহার তোর চৈতালি।এভাবে সবার সামনে আমাদের অপমান না করালে-ও পারতি।তোকে খুন করতে ইচ্ছে করছে।

–এভাবে সবার সামনে এত বড় মেয়ের শরীরে হাত দিয়েন না।বলল তানহা।

ইফাদ কোনো কথা বলল না।বোনের হাত ধরে টানতে টানতে বাসার বাহিরে নিয়ে আসলো।

–তানহা যাও ব্যাগটা নিয়ে এসো।আম্মুকেও সাথে নিয়ে এসো।এক মুহুর্ত এই বাসায় থাকবো না।তখন রাগ না দেখিয়ে কেনো যে বাসায় চলে গেলাম না।নিজের ওপরে বেশ রাগ হচ্ছে ইফাদের।তানহা একহাতে ব্যাগ আর একহাতে রোকেয়া বেগমকে নিয়ে আসলো।রোকেয়া বেগম মাথা নিচু করে আছেন।মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না।ইফাদ একটা গাড়ি ডেকে বাসায় চলে আসলো।বাসায় এসে অনেক কথা শুনিয়েছে চৈতালিকে।ড্রয়িং রুমে সবাই দাঁড়িয়ে আছে।

–আম্মু তুমি বলেছিলে তোমার ভালো মেয়ে কিছু করবে না।এখন রাস্তায় বের হয়ে দেখো,সমাজের মানুষের মুখের কথা বিষের চেয়েও বেশি বিষাক্ত।আমি সমাজের মানুষের কথা পরোয়া করি না।কিন্তু আমরা এই সমাজে থাকি।সমাজের কিছু নিয়ম নিতি আছে।রাস্তায় যখন বের হব।চৈতালিকে নিয়ে দু’কথা মানুষ আমাকে বলবে,তখন আমার কোথায় গিয়ে লাগবে।

–আমার চৈতালি এমন হয়ে গেল কেনো?আমার চৈতালি এমন তো’ ছিল না।বললেন রোকেয়া বেগম।

–অনেক কথা শুনিয়েছেন।এবার একটু থামুন।মেয়েটার মাথার ওপরে চাপ পরছে প্রচুর,এতটা চাপ দেওয়া ঠিক না।বলল তানহা।তানহার কথা শেষ হবার সাথে সাথে চৈতালি উত্তর দিলো।

–তুমি তো’ খুশি হয়েছো ভাবি।তুমি তো’ এটাই চেয়েছিলে,আল্লাহ তোমার মনের আশা পূর্ণ করে দিল।আজকে আমি যেভাবে কান্না করছি।একদিন তুমিও আমার মতো কান্না করবে।আমি যতটা কষ্ট পাচ্ছি।তার থেকে দিগুন কষ্ট তুমি পাবে।কখনো ভালো থাকতে পারবে না।আল্লাহ যেনো তোমার কপাল থেকে সব সুখ কেঁড়ে নেয় ভাবি।তোমার কখনো ভালো হবে না।আমি তোমাকে কোনোদিন মাফ করবো না।তুমি চাইলে ভাইয়াকে,মাকে,আবির স্যারকে বুঝিয়ে বলতে পারতে
,তোমার কথা সবাই রাখতো।তুমি যদি সবাইকে রাজি করাতে,তাহলে প্রিয়া আপুর জায়গায় আমি থাকতাম।আল্লাহ তোমার কোনোদিন ভালো করবে না ভাবি।মানুষের বাচ্চা হয়ে থাকলে,কখনো আমার সাথে কথা বলবে না।তুমি যতদিন এই বাড়িতে থাকবে।আমি কখনো এই বাড়িতে আসবো না।তোমরা আমাকে বিয়ে দিয়ে দাও।মরে লাশ হয়ে যাব।তবুও তোমাদের কাছে আসবো না।তোমরা আমাকে বাঁচতে দিলে না।আমার না।কিছু ভালো লাগছে না।আমার বাঁচতে ইচ্ছে করছে না।আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে।এই যন্ত্রনা আমি কিভাবে সহ্য করবো।মা’ গো মা আমি সহ্য করতে পারছি না।আমি তোমাকে কোনোদিন ক্ষমা করবো না ভাবি।আমাকে যতটা কষ্ট দিয়েছো।আল্লাহ তায়া’লা তার সাত গুন তোমাকে ফিরিয়ে দিবে।বলেই নিজের রুমে চলে গেল।চৈতালি প্রতিটি কথা তানহার কলিজায় এসে লাগছে,চৈতালির ভালো না চাইলেও পারতো।এভাবে সবার কাছে খারাপ হয়ে যেত না তানহা।

তরোয়ালের আঘাতের সুস্থতা আছে।কিন্তু কথার আঘাতের সুস্থতা নেই।হযরত আলী(রাঃ)

এই কথার আঘাতে অসুস্থা দিন দিন বেড়েই চলেছে।তানহা আর এসব কিছু নিতে পারছে না।চৈতালির আজকাল যা কথা হয়েছে।সবাই মেনেই নিতে পারছে না।

–আম্মু তুমি চৈতালির সাথে থেকো।চৈতালি-ও আবার ইয়াদ ভাইয়ার মতো ভুল করে বসে।

ইফাদের কথার মাঝেই তানহা দৌড়ে চৈতালির রুমের দিকে গেল।কি হয়েছে তা’ বোঝার জন্য ইফাদও গেল।চৈতালি আত্মাহত্যা করার জন্য সিলিং ফ্যানের সাথে ওড়না বেঁধেছে।সবেমাত্র গলায় ওড়না বাঁধতে যাবে।তখনই তানহা এসে চৈতালিকে ধরে ফেলে।চৈতালির গালে থাপ্পড় মেরে বলল।

–পাগল হয়ে গেছো তুমি।একটা ছেলের জন্য নিজের জীবন ত্যাগ করবে।আল্লাহর কাছে গিয়ে কি হিসাব দিবে।একটা কথা মনে রেখো চৈতালি।আল্লাহ যা করে ভালোর জন্যই করে।

–সব ভালো কেনো আমার সাথেই করে,তুমি আমার সাথে কথা বলবে না।তুমি যদি আমার সাথে কথা বলো।তাহলে তুমি তোমার স্বামীর মরা মুখ দেখবে ভাবি।বেড়িয়ে যাও আমার রুম থেকে।বলেই তানহাকে ধাক্কা দিল।তানহা পড়ে যেতে নিলে ইফাদ এসে দু-হাতে ধরে ফেলল।নিজের রাগ সংযত রেখে বলল।

–আম্মু তুৃমি তোমার মেয়ের সাথে থাকো।দেখো আমার ভুলভাল কিছু না করে।দরকার পড়লে আজকে ঘুমাবে না।জেগে থেকে মেয়েকে পাহারা দিবে।কোনো কিছুর দরকার পড়লে আমাকে ডাকবে।

–এখন বউকে বুঝ দিয়ে বউয়ের কাছে ভালো সাজতে হবে না।তাই মাকে বসিয়ে রেখে বউকে বুঝ দিতে নিয়ে যাবে।তোমার বউই তোমার কষ্টের কারন হয়ে দাঁড়াবে।যে,বউ নিয়ে এত অহংকার করছো।সেই বউই তোমাকে কথার আঘাতে টুকরো টুকরো করে ফেলবে।তোমার মনের মধ্যে কষ্টের পাহাড় গড়ে তুলবে তোমার বউ।

ইফাদ চৈতালির কথায় কোনো উওর দিল না।চুপচাপ রুম থেকে বেড়িয়ে আসলো।চৈতালিকে এখন কিছু বোঝানো আর না বোঝানো এক কথা।রোকেয়া বেগম ভয়ে মেয়েকে কিছু বলতে-ও পারছে না।

কোনোরকমে রাতটা পার হয়ে গেল।বিয়ের বাসায় আর কেউ গেল না।সন্ধ্যা বেলায় আবির বউ নিয়ে এসেছে।মাহতাব সাহেব কালকে আবিরকে অনেক কথা শুনিয়েছেন।ছেলের গায়ে হাত-ও তুলেছেন।নিজের ছেলে ফেলে-ও দিতে পারছেন না।মারিয়াকে বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছে।আবির রাস্তার মধ্যে দাঁড়িয়ে বন্ধুদের সাথে গল্প করছে।চৈতালি গাছের আড়ালে থেকে সবকিছু দেখছে।পুরো বাসাটা কি সুন্দর করে সাজানো।সবকিছু ঠিক থাকলে,আজ সে আবিরের বউ সেজে এই বাসায় থাকতো।

এদিকে চৈতালিকে বাসায় না পেয়ে সবার অবস্থা খারাপ।ইফাদ একদম পাগল হয়ে গেছে।চারিদিকে তন্ন তন্ন হয়ে খুঁজছে।রিয়াদও এসেছে।রোকেয়া বেগম কান্না করতে করতে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।রিয়াদের বুদ্ধিতে চৈতালির ফোন নাম্বার ট্যাগ করে এক ঘন্টা পরে চৈতালির অবস্থান গননা করা গিয়েছে।ততক্ষণে সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে।চৈতালি দুপুরে বাসা থেকে বের হয়েছে।ইফাদ অবস্থা জানা মাত্র এক মুহুর্ত দেরি করল না।আবির ফোনে কথা বলতে বলতে হঠাৎ রাস্তার মাঝখানে চলে গেল।আবিরের বন্ধুরা আবিরকে সরে যেতে বলছে।আবির ফোনে মগ্ন হয়ে আছে।দ্রুত গতিতে একটা গাড়ি আবিরের দিকে এগিয়ে আসছে দেখে চৈতালি আর স্থির থাকতে পারলো না।গাছের আড়াল থেকে বেড়িয়ে আসলো।আবিরের পেছনে গিয়ে বলল।আবির স্যার বলেই আবিরকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল।গাড়িটা চৈতালিকে রাস্তায় ফেলে দিয়ে দ্রুত গতিতে চলে গেল।চৈতালির রক্তে পুরো রাস্তা গোসল দিয়ে উঠলো।ইফাদ চলেই এসেছিল।চৈতালিকে দৌড়ে যেতে দেখে চলন্ত গাড়ি থেকে ইফাদ লাভ দিয়েছে।চৈতালিকে আটকানোর জন্য।শেষ রক্ষা হলো না।আশেপাশে ভির জমা হয়ে গেল।আবিরের হুস আসলো।এই প্রথম মেয়েটার জন্য আবিরের খারাপ লাগছে।ইফাদ দৌড়ে চৈতালির কাছে আসলো।তড়িঘড়ি করে চৈতালিকে কোলে তুলে নিল।চৈতালির রক্তে ইফাদের শুকনো শার্টটা ভিজে গেল।আবিরও ইফাদ আর রিয়াদের সাথে আসলো।কাছের একটা হসপিটালে নেওয়া হলো চৈতালিকে।জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়েছে চৈতালিকে।ডক্টরা রক্ত জোগার করে রাখতে বলেছে।ইফাদ পুরো হসপিটাল পাগলের মতো হয়ে ঘুরছে।মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে।মুখে যত কথাই বলুক না কেনো?নিজের জীবনের থেকেও বেশি ভালোবাসে চৈতালিকে।রিয়াদ ইফাদের ফোন নিয়ে তানহাকে ফোন করে আসতে বলেছে।এখন ইফাদের পাশে তানহার থাকাটা খুবই জুরুরি।

চলবে…..