#এক_মুঠো_কাঁচের_চুরি
#পর্ব_৩৯
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu
তানহা রেগে ড্রয়িং রুমে এসে দাঁড়ালো।ইফাদ ইনোসেন্ট মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে।তানহা ক্রোধিত দৃষ্টি নিক্ষেপ করতে-ই বলল।
–খুলছি,এখন-ই শার্ট খুলে অন্য শার্ট পড়ে আসছি।এভাবে আমার দিকে তাকাবে না।আমার শরম করে।বলেই নিজের রুমে চলে গেল।ইফাদের কান্ড দেখে তানহা হেসে দিল।স্বামী তো’ এমন-ই হওয়া উচিৎ।না বলতে-ই মনের কথা গুলো বুঝে ফেলবে।ইফাদ শার্ট চেঞ্জ করে এসে বলল।
–আমি তাহলে আসি তানহা।আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে।
তানহা ইফাদের কথার উত্তর না দিয়ে,ইফাদের দিকে এগিয়ে আসলো।ইফাদের ওপরের শার্টের দু’টো বোতাম লাগিয়ে দিতে দিতে বলল।
–বাহিরে ঐ মেয়েটা দাঁড়িয়ে আছে।ওকে দেখানোর জন্য এত সেজেগুজে যাওয়া হচ্ছে,একটা কথা বলো তো’।তোমার এই সুন্দর দু-চোখ দিয়ে,এই সুন্দর পৃথিবীটা দেখার ইচ্ছে কি আছে?
–জ্বী আছে।আমি শুধু আপনা’কে ভালোবাসি।আপনার কাছে সুন্দর হলেই চলবে।অন্য কারো কাছে সুন্দর হবার প্রয়োজন নেই।
–এই তো’ বুঝেছো।রাস্তা দিয়ে যখন যাবে।মাথা নিচু করে যাবে।নিজের কাজ শেষ করে,মাথা নিচু করে চলে আসবে।ভুল করে-ও যদি মেয়েদের দিকে তাকিয়েছো?তাহলে দেখবে,তুমি আছো।কিন্তু তোমার চোখ নেই।
–আমার বউয়ের কোন দিকে কম আছে।আমার ঘরে রাণী রেখে,আমি কেনো অন্য মেয়েদের দিকে তাকাবো।
–আমার একটা বিশাল বড় অভাব আছে।এখন পর্যন্ত তোমাকে একটা সন্তান দিতে পারি নাই।এর জন্য যদি তুমি আমাকে ছেড়ে,,কথাটা শেষ হবার আগেই ইফাদ তানহার মুখ চেপে ধরলো।গম্ভীর মুখ করে বলল।
–বাকি কথাটা মুখ দিয়ে বের করার মতো দুঃসাহস দেখি-ও না তানহা।এমন ভালো আমি তোমাকে বাসি নাই।তোমার মুখের এমন কথা আমাকে ভেতর থেকে কাঁপিয়ে তুলে,তোমাকে ছাড়া একটা সেকেন্ড কল্পনা করতে পারি না।তোমার থেকে দূরে থাকলে,মাথার মধ্যে সব সময় তুমি থাকো।সেখানে তুমি কিভাবে অন্য কারো কথা বলতে পারো,এমন কথা বলতে বুক কাঁপলো না।
–তুমি কষ্ট পেও না।আমি এভাবে বলতে চাই নাই।আমার খুব ভয় হয়।আমার ব্যর্থতার জন্য যদি,আমি তোমাকে হারিয়ে ফেলি।
–পাগলি মেয়ে কান্না করো না।ইফাদ শুধু তার বউজানের, নিঃশ্বাস থাকা পর্যন্ত তানহা নামক নারীটি ছাড়া ইফাদের মনে কেউ রাজত্ব করতে পারবে না।তানহা দৃষ্টি নত করে দাঁড়িয়ে আছে।মেয়েটা’র মন খারাপ হয়ে গিয়েছে।তা’ তানহার মুখ দেখে-ই স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।ইফাদ তানহার হাত ধরে নিজের বুকের মাঝখানে চেপে ধরলো।
–এখানে ইফাদের ছোট্ট একটা রাজত্ব আছে জানো?রাজত্বটা ইফাদের হলে-ও সেখানে অন্য কেউ বসবাস করে,বলো তো’ সে কে?তানহা মন খারাপ করেই উত্তর দিল।আমি”?
–এই তো’ ধরতে পেরেছো।এখানে তুমি রাজত্ব করো।এখন তোমার ইচ্ছে,তুৃমি তোমার রাজ্যে একা রাজত্ব করবে।নাকি অন্য কাউকে প্রবেশ করতে দিবে।তানহা এবার খুশি হয়ে বলল।”আমি একাই থাকবো।
–তাহলে বাচ্চা হয় না বলে মন খারাপ করো কেনো?সবকিছু আল্লাহ তায়ালা’র দান।তিনি যখন চাইবেন।ঠিক আমাদের ঘর আলো করে,একটা ফুটফুটে বাচ্চা আসবে।আর কখনো মন খারাপ করবে না।আজকে আমি তোমাকে বিড়ালের বাচ্চা এনে দিব।ইফাদের কথা শুনে,তানহা হেসে উঠলো।তানহার হাসি মুখখানা দেখে,ইফাদের বুকে প্রশান্তির হাওয়া বইয়ে গেল।ইফাদ তানহার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল।
–বউজান আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে।আমি এবার আসি?
–আচ্ছা চলো,আমি’ও তোমাকে এগিয়ে দিয়ে আসি।ইফাদ আর কথা বাড়ালো না।তানহার সন্দেহ স্রুতি এখনো বাসার বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে।মনে মনে ঠিক করে নিল,বাহিরে গিয়ে স্রুতিকে দেখল,আচ্ছা মতো অপমান করে দিবে।এসব ভাবতে ভাবতে ইফাদের সাথে রাস্তায় এসে দাঁড়ালো।ইফাদ’কে রাস্তায় দেখে স্রুতি দৌড়ে ইফাদের কাছে আসলো।
–ইফাদ তোমার সাথে,আমার কিছু কথা আছে।আমি বাবা’কে কথা দিয়ে আসছি।আজকে তোমাকে আমাদের বাসায় নিয়ে যাব।আজকে তোমাকে না নিয়ে যেতে পারলে,বাবার পছন্দ করা ছেলেকে বিয়ে করতে হবে।এখন আমি কি করবো।তুৃমি আমাকে বলে দাও।
–বাসায় গিয়ে বিয়ে করে নাও।তোমার যদি আর কিছু বলার থাকে,তাহলে তানহার কাছে বলতে পারো।আমি আর তানহা এক।তানহা’কে বলা মানেই আমাকে বলা।বলেই একটা গাড়িতে উঠে চলে গেল।ইফাদ যাওয়া’র সাথে সাথে তানহা তেড়ে স্রুতির দিকে এগিয়ে আসলো।
–নির্ঘাত আমার স্বামী ভালো মানুষ।তাই এখনো তোমার সাথে ভালো ব্যবহার করছে।তোমার কি লজ্জা-শরম বলতে কিছু নেই।ঘাড় ধাক্কা দিয়ে যে,বাসা থেকে বের করে দিলাম।এখনো নির্লজ্জের মতো এখান পড়ে আছো।
–তুমি জানো তানহা।ইফাদ আর আমার বিয়ে হয়েছে।
–আচ্ছা তাই নাকি।তাহলে বিয়ের কাবিননামা দেখাও।বিয়ের পিক দেখাও।তানহার কথা শুনে,স্রুতি নিজের ফোন থেকে কয়েকটা ছবি বের করে দেখালো।তানহা শব্দ করে হেসে বলল।
–তোমার দুলাভাই’কে গিয়ে বলো।দুলাভাই আপনার এডিট করা ছবিগুলো কাজে লাগে নাই।আরো কঠিন পথ অবলম্বন করতে বলো।তানহা আর ইফাদ’কে আলাদা করা এত সহজ নয়।তুমি এখানে থেকে যাবে।নাকি পাড়ার লোক ডেকে এনে মার খাইয়ে নিব।স্রুতি অবাক হয়ে তানহার দিকে তাকিয়ে আছে।আবির বলেছিল তানহা বোকা প্রকৃতির মেয়ে,তাহলে এতকিছু তানহা জানলো কি করে?তানহা দোকানের কাছে থেকে ঝাড়ু হাতে তুলতে-ই স্রুতি দৌড়ে পালালো।বাসায় গিয়ে সবকিছু নতুন করে সাজাতে হবে।জনসম্মুখে অপমানিত হওয়া যাবে না।নিজের সন্মান রক্ষা করার জন্য-ই দৌড়ে চলেছে স্রুতি।একটা কথা মনে রেখো তানহা?ইফাদ’কে আমার চাই।ইফাদ’কে যদি নিজের করে না নিতে পেরেছি।তাহলে আমার নাম-ও স্রুতি না।
দ্রুত গতিতে অফিসে প্রবেশ করল ফাইয়াজ।হাত থেকে টপ টপ করে রক্ত ঝরছে।ফাইয়াজ’কে দেখে অভি এগিয়ে আসলো।ফাইয়াজের হাত থেকে রক্ত পড়তে দেখে,অস্থির হয়ে বলল।
–তোর হাতে কি হয়েছে?ঔষধ লাগতে হবে।
–ঔষধ পড়ে লাগাবো।ওনারা কি সবাই চলে এসেছে।খুব দেরি হয়ে গেল।তাড়াতাড়ি মিটিং রুমে চল।চৈতালি তুমি এসো।ফাইয়াজের কথা শুনে,চৈতালি দ্রুত উঠে দাঁড়ালো।ফাইয়াজ হঠাৎ করে আবার বলে উঠলো।
–চৈতালি তুমি থাকো,রিমি তুমি দ্রুত আসবে।অভি তাড়াতাড়ি চল।বলেই তিন জন চলে গেল।চৈতালি গম্ভীর মুখ করে দাঁড়িয়ে রইল।ভেতরে থেকে অদ্ভুত এক খারাপ লাগা অনুভব করল চৈতালি,কিন্তু বাহিরে প্রকাশ করল না।
তানহা সব কাজ শেষ করে,নিজের দোকানে আসলো।সবকিছু খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে,নতুন দোকান হয়েছে।দোকানের মধ্যে কি আছে।তা জানার আগ্রহটা একটু বেশি-ই।গার্লস স্কুলের মেয়েরা আগ্রহী চোখে তানহার দোকানের দিকে তাকিয়ে আছে।সবাই ভেতরে আসতে চাচ্ছে।কিন্তু লজ্জায় আসতে পারছে না।কেউ বলছে তুই আগে যা’।কেউ বা বলছে তুই যা’।বলতে বলতে সবাই ভেতরে প্রবেশ করল।তানহা সবাইকে ভরসা দিল।সবাই নিজের পছন্দ মতো জিনিসের দাম করছে।তিনজন কয়েটা জিনিস নিয়ে চলে গেল।
তাসফিয়া গম্ভীর মুখ করে বাবার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।তাসফিয়া’র বাবা মেয়ের দিকে তাকিয়ে,শান্ত কণ্ঠে বলল।
–তুমি আমাকে কিছু বলতে চাও?
–আব্বা ফাইয়াজ ঐ মিডিল ক্লাস পরিবারের মেয়ের,প্রেমে পড়েছে।জল বেশিদূর গড়ানোর আগেই ফাইয়াজ’কে স্রুতির সাথে বিয়ে দিয়ে দিন।স্রুতি অনেক ভালো মেয়ে।স্রতির বাবার সমাজে ভালো নাম-ডাক আছে।অনেক টাকা পয়সা-ও আছে।ওরা তিন বোন।ওদের বাবার যা’ কিছু আছে।ভবিষ্যতে সবকিছু তিন বোনই পাবে।আর স্রুতি পেলে,আমাদের ফাইয়াজের হয়ে যাবে।এতে আমাদের ক্ষমতা আরো বৃদ্ধি পাবে।বলল তাসফিয়া।
–তুমি কি বলতে চাইছো?হেয়ালি না করে,পরিষ্কার করে খুলে বলো।
–ইয়াদ আছে না।পুতুল আপা যার সাথে প্রেম করতো?ইয়াদের ছোট বোন।নাম চৈতালি।আপনার ছেলে ছোটলোক ঘরের মেয়ের প্রেমে পড়েছে।ছেলের ঘরে গিয়ে কখনো দেখেছেন।মেয়েটার ছবি দিয়ে নিজের রুম ভরে রেখেছে।তাই তো’ বলি ভাই আমার তার রুমে কাউকে প্রবেশ করতে দেয় না কেনো?বলল তাসফিয়া।
তাসফিয়া’র কথা শুনে,তাসফিয়া’র বাবার চক্ষুদ্বয় গুলো রক্তিম বর্ন ধারন করল।লাথি দিয়ে কাঁচের টেবিলটা ভেঙে গুড়িয়ে দিল।তাসফিয়া বাবার ভয়াবহ রুপ দেখে কেঁপে উঠলো।রাহেলা চৌধুরী রান্না ঘরে কাজ করছিলেন।শব্দ পেয়ে ছুটে আসলেন।এসেই তাসফিয়া’কে ধমকে উঠলেন।
–কি দরকার ছিল।পুরোনো ক্ষত জাগিয়ে দেওয়া’র।তুমি নিজে সুখে থাকতে পারিস নাই বলে,আমাদের-ও সুখে থাকতে দিবি না।
–মা তুমি এসব কি বলছো?
–চুপ কর তুই।আমি আমার একটা সন্তান’কে হারিয়েছি।আর কোনো সন্তান’কে হারাতে পারবো না।ফাইয়াজ যাকে পছন্দ করবে।আমি তার সাথে-ই ফাইয়াজের বিয়ে দিব।আল্লাহ তায়ালা ছাড়া।পৃথিবীর কোনো শক্তিই আমাকে আটকাতে পারবে না।দুই বাবা-মেয়ে ভালো করে শুনে রাখ।বলেই রান্না ঘরের দিকে চলে গেল।
দুপুরে চৈতালির আইসক্রিম খেতে ইচ্ছে করছে।এখন লাঞ্চের সময় দিয়েছে।সবাই যে,যার মতো খাচ্ছে।চৈতালি উঠে বাহিরে চলে আসলো।সামনের দোকানে আইসক্রিম খুঁজে পেল না।এখন রাস্তার ওপাশে যেতে হবে।রাস্তার যে,অবস্থা কতদিনে,রাস্তা পার হবে।একটার পরে একটা গাড়ি আসছেই।রাস্তা একটু ফাঁকা হতেই চৈতালি’কে আর পায়’কে একপাশে দেখেই রাস্তার মাঝখানে দিয়ে দৌড় দিল।বিপরীতে পাশে যে,তার দিকে একটা ট্রাক ধেয়ে আসছে।সেদিকে চৈতালির খেয়ালই নেই।হঠাৎ করে খেয়াল করাতে-ই পা’ দু’টো থেমে গেল।চৈতালি’র মন বলছে,চৈতালি বাঁচতে হবে পালা।কিন্তু পা’ দু’টো বড্ড স্বার্থপর হয়ে গেছে।কিছুতেই এগোতে চাচ্ছে না।ট্রাকটা চৈতালির কাছে চলে এসেছে।চৈতালি ধরেই দিল।তার জীবনের যাত্রা এখানেই শেষ।দু-চোখ বন্ধ করে পরিবারের মানুষদের মুখটা মনে করে নিল।চৈতালির ভাবনার মাঝেই চৈতালির মনে হলো,তার মাথায় ভিষণ ভাবে আঘাত লেগেছে।তবে ট্রাকের সাথে ধাক্কা লাগার আঘাত নয়।কেউ তাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়েছে।তাল সামলাতে না পেড়ে রাস্তার মধ্যে পড়ে গেল চৈতালি।যার পরিনতি পায়ে এবং মাথায় আঘাত পেয়েছে।এক জোড়া রাগী চোখ চৈতালির দিকে তাকিয়ে আছে।সেদিকে চৈতালির কোনো খেয়াল নেই।সে,নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত।বারবার উঠার চেষ্টা করছে।কিন্তু পায়ের ব্যথায় উঠতে পারছে না।চৈতালি’কে অবাক করে দিয়ে,একজোড়া হাত এসে তাকে দু-হাতে বুকের মধ্যে আগলে নিল।মানুষটার হৃদপিণ্ডের গতি বেগ দিগুন মাত্রায় ছুটে চলেছে।চৈতালি’কে এমন ভাবে আগলে রেখেছে।মনে হয়ে নিজের জান হাতে পেয়েছে।চৈতালি’র কেমন অস্বস্তি হতে লাগলো।চৈতালি নড়াচড়া করতে শুরু করল।ফাইয়াজ ধমকে উঠলো।
–সমস্যা কি তোমার?এভাবে বারবার আত্মাহত্যা করতে যাও কেনো?তুমি কার জন্য নিজের জীবন শেষ করে যাচ্ছিলে,যে তোমাকে কখনো ভালোই বাসে নাই।ছোট একটা জীবন চৈতালি।আত্মাহত্যা করে নিজের সুন্দর জীবনটা নষ্ট করো না।একদিন সবাই’কে চলে যেতে হবে।কেউ থাকতে আসে নাই।তাই আত্মাহত্যা করা বোকামি ছাড়া কিছুই না।চৈতালি ফাইয়াজের কথা শুনে,অবাক নয়নে ফাইয়াজের দিকে তাকিয়ে আছে।অবাক কণ্ঠে বলল।
–আপনার মাথা খারাপ হয়ে গেছে।আমি একটা চরিত্র হীন ছেলের জন্য নিজের জীবন শেষ করে দিব।আমার জীবন এতই সস্তা নাকি।যার তার জন্য দিয়ে দিব।আবির স্যারের মোহ আমার অনেক দিন আগেই কেটে গিয়েছে।আমার তো’ মনে হয়।আল্লাহ তায়ালা যা’ করেছেন।ভালোর জন্যই করেছেন।আলহামদুলিল্লাহ আমি এখন অনেক ভালো আছি।আপনি আমাকে ভুল বুঝছেন।আমি আত্মাহত্যা করতে যাচ্ছিলাম না।আমি তো আইসক্রিম কেনার জন্য যাচ্ছিলাম।চৈতালি কথা শুনে,ফাইয়াজের বুকের ভেতর থেকে বিশাল এক পাথর নেমে গেল।মনের মধ্যেখানিতে আশার আলো দেখতে পেল।নিজের বোকা বোকা কথার জন্য নিজেই নিজের কপালে হাত রাখলো।চৈতালি ভ্রু কুঁচকে ফাইয়াজের দিকে তাকিয়ে আছে।ফাইয়াজ গম্ভীর মুখ করে বলল।
–আজকে কত আইসক্রিম খেতে পারো।আমি’ও দেখবো,একটা আইসক্রিমের জন্য নিজের জীবন দিতে যাচ্ছিলে,যদি তোমার কিছু হয়ে যেতো।তাহলে আমি..চৈতালি ফাইয়াজের দিকে তাকিয়ে আছে।ফাইয়াজ কিছু একটা বলতে গিয়ে-ও থেমে গেল।চৈতালি’কে তাকিয়ে থাকতে দেখে ফাইয়াজ বলল।
–এভাবে ছাগলের মতো তাকিয়ে আছো কেনো?সবাই কেমন করে তাকিয়ে আছে।তাড়াতাড়ি উঠে বসো।চৈতালি হতভম্ব হয়ে ফাইয়াজ’কে বলল।
–আপনার মাথা কি খারাপ হয়ে গেছে।উঠে বসবো মানে,আমি তো বসেই আছি।
–হ্যাঁ আমার মাথাটা তুমি-ই খারাপ করে দিয়েছো।এবার আমাকে পাগল বানিয়ে ছাড়লে,তোমার শান্তি।
–আমি আপনাকে বলেছি,আপনি আমার জন্য পাগল হন।
–খুব বেশি কথা হয়েছে।তাড়াতাড়ি উঠে অফিসে আসো।এক সেকেন্ড দেরি হলে,বেতন থেকে একশো টাকা করে কেটে নিব।
–আমার যেতে একটু দেরি হবে স্যার।আমার পা’ টা মনে হয় মচকে গিয়েছে।উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলে-ই পায়ে অসম্ভব ব্যথা অনুভব করছি।একবার এক্সিডেন্ট করে ছিলাম।ব্যথা জায়গায় আবার ব্যথা পেয়েছি।
ফাইয়াজ কোনো কথা না বলে চৈতালি’কে কোলে তুলে নিল।চৈতালি চোখ বড় বড় করে ফাইয়াজের দিকে তাকালো।রাগী কণ্ঠে বলল।
–এটা কেমন ধরনের ব্যবহার।আমাকে নামিয়ে দিন।সবাই আমার দিকে কেমন করে তাকিয়ে আছে।আপনার এত বড় দুঃসাহস হয় কি করে,আমার অনুমতি ছাড়া আমাকে স্পর্শ করার।
–বেশি কথা বললে,এখনই নিচে ফেলে দিব।
–দরকার পড়লে তাই দেন।রাস্তার মধ্যে এমন অসভ্যতামি করলে,কেউ আমাকে বিয়ে করতে রাজি হবে।
–বাপ রে’ তোমার বাসার সবাই জানে,তাদের মেয়ে বিয়ের জন্য পাগল হয়ে গেছে।সমস্যা নেই,আমি তো’ আছি তোমার জন্য,কেউ তোমাকে বিয়ে না করলে আমার কাছে চলে আসবে।আমি তোমাকে বিয়ে করে নিব।চৈতালি পায়ের ব্যথায় হাত-পা ছোটাছুটি করতে পারছে না।চোখে লোকলজ্জার ভয়।পায়ে ব্যথা তার ওপরে ফাইয়াজ তাকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।হঠাৎ করেই ফাইয়াজ মুখটা গম্ভীর করে ফেলল।কোনো কথা না বলে চৈতালি’কে নিয়ে,সামনের দিকে হাঁটতে শুরু করল।
চলবে…..
#এক_মুঠো_কাঁচের_চুরি
#পর্ব_৪০
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu
রেস্টুরেন্টে পাশাপাশি বসে আছে চৈতালি আর ফাইয়াজ।গম্ভীর মুখ করে চৈতালির দিকে,তাকিয়ে আছে ফাইয়াজ।চৈতালি শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
–এভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন কেনো?এভাবে আমার দিকে তাকাবেন না।আমার শরম করে।
চৈতালির কথা শুনে,ফাইয়াজ শব্দ করে হেসে ফেলল।চৈতালি অবাক নয়নে ফাইয়াজে’র হাসি মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।কি মনোমুগ্ধকর সেই হাসি।ফাইয়াজ’কে খুব স্নিগ্ধ দেখাচ্ছে।মানুষটা হাসলে,একটু বেশিই সুন্দর লাগে।মানুষটা কি জানে না।তাকে হাসলে কতটা কিউট লাগে।সব সময় গম্ভীর মুখ না করে থেকে,একটু হাসি-খুশি থাকলে-ও তো’ পারে।মানুষটা আমার সামনে আসলে,হৃদপিণ্ডের গতি বেগ দ্রুত গতিতে ছুটে চলে।ভাবি বলেছিল।যাকে দেখলে আমার হৃদপিণ্ডের গতিবেগ বেড়ে যাবে।সেই তোমার প্রয়ি মানুষ।কই আবির স্যার সামনে আসলে কখনো এমন হয় নাই।ফাইয়াজ স্যার আমার সামনে আসলে হৃদপিণ্ডের গতিবেগ বেড়ে যায় কেনো?তবে কি ফাইয়াজ স্যারই আমার প্রিয় মানুষ।বলেই নিজের মাথা নিজেই দু-হাত দিয়ে চেপে ধরলো।মনে মনে হাজার বার নিজেকে ধিক্কার জানালো।
–এসব আমি কি ভাবছি।ছিঃ চৈতালি তোর লজ্জা হওয়া উচিৎ।এক ভুল মানুষ কতবার করে।এসব চিন্তা আর কখনো মাথায় আনবি না।চৈতালির চিন্তার মাঝে,
অনেক গুলো আইসক্রিম এসে চৈতালির সামনে পড়লো।চৈতালি মাথা ছেড়ে পাশে তাকিয়ে লম্বা একটা ছেলেকে দেখে পেল।চৈতালি আইসক্রিমের দিকে চোখ গোল গোল করে তাকিয়ে,ফাইয়াজের দিকে তাকালো।
–আমার দিকে তাকিয়ে থেকে লাভ নেই।একটা আইসক্রিমের জন্য নিজের জীবন দিতে যাচ্ছিলে,
চুপচাপ সবগুলো শেষ করবে।না হলে তোমার অবস্থা আমি কি করবো।তুমি নিজে-ও জানো না।
–আপনার মাথা খারাপ হয়ে গেছে।কোনো সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ এতগুলো আইসক্রিম খেতে পারে।ফাইয়াজ কোনো কথা না বলে চৈতালির পায়ের কাছে গিয়ে বসলো।চৈতালির পায়ে হাত দিতে যাবে।তখনই চৈতালি ফাইয়াজের হাত ধরে ফেলে।
–সমস্যা কি?পায়ে হাত দিচ্ছেন কেনো?ফাইয়াজ চৈতালির কথায় পাত্তা না দিয়ে,চৈতালির হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিল।চৈতালির একটা পা’ ফাইয়াজের হাঁটুর ওপরে তুলে নিল।একটু সাদা বরফের টুকরো নিয়ে চৈতালির পায়ে দিয়ে দিতে লাগলো।খুব যত্ন সহকারে চৈতালির পায়ে বরফ দিয়ে দিচ্ছে ফাইয়াজ।চৈতালি কেমন উসখুস করছে।একটা ছেলে এসে,একটা স্প্রে দিয়ে গেল।স্প্রেটা চৈতালির পায়ে দিতে-ই চৈতালি শান্ত অনুভব করল।কিছুক্ষণের মধ্যেই চৈতালির পায়ের ব্যথা অর্ধেক কমে গেল।চৈতালি ফাইয়াজ’কে ধন্যবাদ জানালো।
–স্যার আমাদের এবার অফিসে ফিরে যাওয়া উচিৎ।
–আগে সবগুলো আইসক্রিম শেষ করবে।তারপরে এখান থেকে যাবে।তা-না হলে,এখানে থেকে এক-পা ও’ নড়তে দিব না।
–আপনি আমাকে নড়তে না দেওয়ার কে?কোন অধিকারে আপনি আমাকে আটকাবেন।আমার ওপরে নিজের অধিকার ফলাতে আসবেন না।কিছু বলছি না।তাই মানে এই না যে,আমি বলতে জানি না।আমার থেকে দুরত্ব বজায় রেখে চলবেন।বলেই ধীর পায়ে হাঁটা শুরু করল চৈতালি।ফাইয়াজ মলিন হেসে উঠে চলে গেল।
সন্ধ্যা বেলায় তানহা সকলের জন্য নাশতা তৈরি করছে।চৈতালি বাসায় চলে এসেছে,অনেকক্ষণ।ইফাদ তো’ চৈতালির সাথে-ই আসে।আজকে আসতে এত দেরি হচ্ছে কেনো?তানহা’র খুব চিন্তা হচ্ছে,এর মধ্যেই কলিং বেল বেজে উঠলো।তানহা দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে দিল।ইফাদ’কে দেখে যেনো নিজের প্রাণ ফিরে পেল।
–এতক্ষণ কোথায় ছিলে?আজকে আসতে এত দেরি হলো কেনো?ইফাদ তানহার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে,সোজা নিজের রুমে চলে গেল।তানহা রেগে ইফাদের দিকে তাকালো।তারপরে রান্না ঘরে গিয়ে,চৈতালি আর রোকেয়া বেগম’কে নাশতা দিয়ে আসলো।ইফাদের জন্য নাশতা নিয়ে নিজের রুমে আসলো।মহারাজ পায়ের ওপরে পা তুলে,ফোনে স্ক্রল করছে।তানহা কোনো কথা না বলে ইফাদে’র পাশে নাশতা রেখে চলে আসতে নিলেই ইফাদ একহাতে তানহা’র হাত ধরে ফেলল।
–তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।তানহা ভ্রু কুঁচকে ইফাদের দিকে তাকালো।তানহা কথা বলছে না দেখে,ইফাদ উঠে দাঁড়ালো।তানহা’কে হাত ধরে রুমের বাহিরে নিয়ে আসলো।দরজার এক কোণে সাদা রংয়ের একটি বিড়ালের বাচ্চা দেখে,খুশিতে চিৎকার দিয়ে উঠলো তানহা।দৌড়ে বিড়ালের বাচ্চার কাছে গেল।
–এটা তুমি আমার জন্য নিয়ে এসেছো।বিড়লটা কতটা কিউট।তুমি কোথায় পেলে,আমার কি যে,খুশি লাগছে।তোমাকে বলে বোঝাতে পারবো না।বলতে বলতে বিড়ালের বাচ্চাটা’কে কোলে তুলে নিল তানহা।একদম শান্ত বিড়ালের বাচ্চাটি।তানহা এক হাতে বিড়ালের নিয়ে,আরেক হাতে ইফাদ’কে জড়িয়ে ধরলো।
–তুমি খুশি হয়েছো?এই বিড়ালের বাচ্চা নিয়ে আসার জন্য আজকে দেরি হয়ে গেছে।
–তুমি আগে ফোন করে বলবে না।তোমার জন্য আমার অনেক চিন্তা হচ্ছিল।সারাদিন কিছু খাওয়া হয় নাই।চলো আগে কিছু খেয়ে নিবে।তানহা ইফাদ’কে খেতে দিয়ে,ইফাদে’র পাশে বসে আছে।বিড়ালের বাচ্চার সাথে খেলা করছে।
–যেভাবে বিড়ালের বাচ্চাকে আদর করছো।এভাবে আমাকে আদর করতে পারো না।
–তোমার শরম করবে না।
–না।
–কেনো?
–বউয়ের কাছে কিসের শরম।
–আগে তো’ কথায় কথায় শরম করছে।এখন শরম সব কোথায় গিয়েছে।
–আমার বউজান সব শরম নিয়ে নিয়েছে।তানহা কিছু বলতে যাবে।তখনই কলিং বেল বেজে উঠলো।চৈতালি বাহিরে আসছিল।তানহা’কে উঠতে দেখে বলল।
–ভাবি তুমি বসো।আমি দেখছি কে এসেছে।চৈতালি দরজা খুলে ফাইয়াজ’কে দেখে চমকে উঠল।
–রাত করে আমাদের বাসায় কি চাই।দুপুরে আপনাকে এতগুলো কথা বললাম।তারপরে-ও আমার পিছু পিছু আমার বাসা পর্যন্ত চলে এসেছেন।
–জ্বী না আপু,আপনার কোথা-ও ভুল হচ্ছে,আমি আপনার কাছে নয়।আপনার ভাইয়ের কাছে এসেছি।ফাইয়াজে’র মুখে আপু ডাক শুনে,চৈতালি গোল গোল চোখ করে ফাইয়াজের দিকে তাকালো।চৈতালি একটু সরে দাঁড়ালো।ফাইয়াজ আস্তে করে বাসার মধ্যে প্রবেশ করল।তানহা আর ইফাদ ড্রয়িং রুমেই ছিল।ফাইয়াজ বলল।
–ভাইয়া আসবো।ফাইয়াজ’কে দেখেই ইফাদের চোখ-মুখ শক্ত হয়ে এলো।কঠিন কণ্ঠে বলল।
–তুমি কেনো আমাদের বাসায় এসেছো?তোমার বাবা জানে,তুমি আমাদের বাসায় এসেছো?আমার ভাইটা’কে শেষ করে তোমাদের শান্তি হয় নাই।আবার কাকে শেষ করার জন্য এসেছো?
–তুমি আগে আমার সব কথা শুনো?তারপরে না হয় যা বলার বলবে।ইফাদ রেগে রুমে চলে যেতে লাগলো।তখনই ফাইয়াজ বলে উঠল।
–পুতুল আপু-ও মারা গেছে ভাইয়া।ইয়াদ ভাইয়া আত্নহত্যা করেছে শুনে,পরের দিন ছাদ থেকে লাফ দিয়ে আত্নহত্যা করেছে।ইফাদ সামনের দিকে এগোতে গিয়ে-ও থেমে গেল।ঘুরে ফাইয়াজের দিকে তাকালো।ফাইয়াজ অভিযোগের কণ্ঠে বলল।
–তোমার ভাইয়া কেনো পুতুল আপুর সাথে পালিয়ে গেল না।পুতুল আপুর কোন দিকে কমতি ছিল।দু’জনেই শেষ হয়ে গিয়েছে।তবে কিসের ভয়ে দু’জন আলাদা ছিল।বাবার ভয়ে।বাবা কি বা করতে পারতো।দু’জনকে মেরে ফেলতে পারতো।তাতে কি হয়েছে।মৃত্যুর আগ পর্যন্ত দু’জন একসাথে থাকতে পারতো।দোষ শুধু আমার বোনের একার হবে কেনো?তোমার ভাইয়ের কোনো দোষ ছিল না বলছো?তোমার ভাই পুতুল আপুর চিঠিটা হাতে পেয়ে-ও,কেনো আপু’কে নিয়ে পালিয়ে গেল না।উত্তর দাও ইফাদ ভাইয়া।
–সবাই তোমার বোনের মতো বেইমান না।আমার ভাইয়া’কে বললে,ভাইয়া ঠিক পুতুল আপু’কে বিয়ে করতো।কিন্তু তোমার বোন আমার ভাইয়া’কে ঠকিয়ে নিজের বাবার পছন্দ করা ছেলেকে বিয়ে করেছে।
ফাইয়াজ চিৎকার দিয়ে উঠল।
–পুতুল আপু বিয়ে করে নাই।তোমার ভাইয়ের জন্য অপেক্ষা করেছিল।কিন্তু তোমার ভাইয়া আপুর সাথে বেইমানি করেছে।নিজে-ও চলে গিয়েছে।আমার বোনটাকে-ও নিয়ে গিয়েছে।তোমার ভাই চাইলেই পারতো আমার বোনকে সুন্দর একটা জীবন উপহার দিতে।তোমার ভাই বেইমান।আমার থেকে আমার আপুকে কেঁড়ে নিয়ে চলে গেছে।
–ফাইয়াজ।
চিৎকার চেচামেচি শুনে,রোকেয়া বেগম রুম থেকে বেড়িয়ে আসলেন।তানহা আর চৈতালি নিরব দর্শকের মতো ভূমিকা পালন করছে।রোকেয়া বেগম একবার ছেলের দিকে তাকাচ্ছেন।আরেকবার ফাইয়াজের দিকে তাকাচ্ছেন।দু’জনের চোখ অসম্ভব লাল হয়ে আছে।হাজারো প্রশ্ন মনে ঘুরপাক খাচ্ছে।ইফাদ শান্ত হয়ে বলল।
–তুমি কিসের চিঠির কথা বলছো।
–পুতুল আপু তোমাকে যে,চুড়ির ডালাটা দিয়েছিল।সেখানে কিছু চুড়ি কাগজ দিয়ে মোড়ানো ছিল।সেগুলো নিশ্চয়ই ইয়াদ ভাইয়া দেখছে।তবু-ও কেনো আপুকে বিয়ে করল না।ফাইয়াজের কথা শুনে ইফাদ স্তব্ধ হয়ে গেল।ইফাদ ফাইয়াজের হাত ধরে বলল।এসো আমার সাথে,বলেই বাসার মধ্যে ছোট একটা রুমে নিয়ে গেল।দেখেই বোঝা যাচ্ছে,অনেক দিন এই রুমে কেউ প্রবেশ করে না।ইফাদ রুমে প্রবেশ করে,রুম থেকে ছোট একটা বাক্স বের করে নিয়ে আসলো।ফাইয়াজ ইফাদের হাতের দিকে তাকিয়ে আছে।ইফাদের হাত থরথর করে কাঁপছে।ইফাদ কোনো রকম কথা ছাড়াই বাক্সটি নিচে রাখলো।আস্তে করে বাক্সটি খুলল।ফাইয়াজ স্থির দৃষ্টিতে সবকিছু পর্যবেক্ষণ করছে।চুড়ির ডালাটা দেখে ফাইয়াজের কথা আটকে গেল।তার পুতুল আপু যেভাবে দিয়েছিল।ঠিক সেভাবই আছে।হয়তো কেউ ছুঁইয়ে দেখে নাই।দু’টো শার্ট আছে,একটা কালো রংয়ের ঘড়ি আছে।একজোড়া নুপুর আছে।
–এই সবগুলো পুতুল আপু ইয়াদ ভাইয়া’কে দিয়েছিল না।ইফাদ ছোট্ট করে বলল হুম’।
–যে,মানুষটা আপুর দেওয়া জিনিস গুলো এতটা যত্ন করে রেখেছে।না জানি আপুকে কতটা যত্নে রাখতো?ইয়াদ ভাইয়া কেনো এমন করল?
–নুপুর জোড়া তোমার বোনের জন্য কিনেছিল।নিজে টিউশনি করিয়ে,টাকা জমিয়ে কিনেছিল।তোমার বোনকে যেদিন দিবে।সেদিন তোমার বোন,তোমার বাবার সামনে ভাইয়া’কে থাপ্পড় মারে এবং বলেছে ভাইয়া যেনো তাকে বিরক্ত না করে,সে তার বাবার পছন্দ করা ছেলেকে বিয়ে করবে।কথা গুলো শুনে ফাইয়াজের শরীরে কাটা দিয়ে উঠল।ফাইয়াজ দ্রুত নিচে বসে পড়লো।চুড়ি ডালা উলোটপালোট করে কিছু একটা খুঁজতে লাগলো।কাগজে মোড়ানো চুড়ি গুলো পেয়ে গেল।কাগজের লেখা গুলো পড়ে দু’জনের চোখেই পানি চলে আসলো।
চলবে…..