এক মুঠো বুনোপ্রেম পর্ব-০৬

0
12

#এক_মুঠো_বুনোপ্রেম

পর্ব ৬

#জান্নাতুল_মাওয়া_লিজা

(সম্পূর্ণ উন্মুক্ত ও প্রাপ্তমনস্কদের জন্য, অন্যথা কেউ পড়বেন না)

আর্শি ভয়ে কাঁদতে কাঁদতে এষকে বললো,

” প্লিজ এষ, এসব করিস না, এসব ভালো না! আমিও তোকে…”

এষ এবার নিজের মুখভঙ্গি এবং বাচন ভঙ্গি একশ আশি ডিগ্রি ঘুরিয়ে ফেললো। কিছুক্ষণ আগের আগ্রাসী মনোভাব থেকে এখম সম্পূর্ণ স্বাভাবিক হয়ে শান্ত কন্ঠে আর নিচু স্বরে আর্শিকে বললো,

” আমিও তোকে… আমিও…তোকে কি? হ্যাঁ কি? আমতা আমতা করছিস কেনো? আটকে যাচ্ছিস কেনো? নিজের দাম কমে যাবে আমার কাছে? তাই ভাবছিস? আমিও জানি তুইও মনে মনে আমাকে ভালোবাসিস! হাহা, হা, হা, আমি জানি! মেয়েরা এমনিই হয়, মনের কথা মুখে জীবনেও প্রকাশ করবে না! তাই ভাবলাম সোজা কথায় কাজে দিবে না, চাপে ফেলতে হবে! ”

আর্শি ঢোক গিলছিলো একথা শুনে। শুকিয়ে যাওয়া ঠোঁট জিহবা দিয়ে ভিজিয়ে নিলো সে।
এষের দিকে সে তাকালো এক অদ্ভূত ভঙ্গিতে। এষের উদোম বুকের দিকে চোখ পড়তেই আর্শি লজ্জা পেয়ে গেলো। মনে মনে বললো,
” কি আকর্ষণীয় বুক রে বাবা! ”

আর্শির ওভাবে চাওয়া দেখে এষ ধীর পায়ে হেঁটে কাছে এলো, খুব কাছে এসে আর্শির দু’ বাহুতে তার দু হাত দিয়ে স্পর্শ করে ফিসফিসিয়ে বললো,

” আর্শি রে! আমার এই বুকে একবার কান পেতে শুনবি? হৃদপিন্ডটা তোর জন্য কেমন ছটফট ছটফট করছে? ”

আর্শি মাথা দুপাশে নেড়ে অসম্মতি জানালো।
এষ বললো,
” বুঝেছি আমি, তুই ভীষণ রাগ করেছিস আমার উপর!”

একথা বলেই এষ আর্শির দিকে চেয়ে বিশাল এক হাসি দিয়ে বললো,

” থাক! থাক! তুই আমাকে কি করিস তা ও তোর বলা লাগবে না আর আমার বুকে মাথাও রাখা লাগবে না। অফ যা তুই এবার! আর তোকে ভয় পাইয়ে দেওয়ার জন্য এক্সট্রিমলি স্যরি! মাফ করে দে আমাকে তুই”

বলেই এষ আর্শির পা জড়িয়ে ধরলো। আর্শি বাঁচতে দূরে ছিটকে পালালো। কিন্তু এষ ওর দুই পা খপ করে জড়িয়ে ধরে চলার গতি বন্ধ করে দিলো।
আর্শি পা ছাড়াতে অপারগ হয়ে গেলো।

আর্শির ছোটোবেলার কথা মনে পড়ে গেলো। সে জানে এষের ঘাড়ে ভীষণই সুড়সুড়ি। একবার বড় এক কাজিন একবার ওখানে সুঁড়সুড়ি দিলেই সে সব ছেড়েছুড়ে মাটিতে গড়াগড়ি দিয়ে দিয়েছিলো। তাই এষ যখন আর্শির পা জড়িয়ে ধরেছে আর্শি তখন তার আঙ্গুল ছুঁিয়ে এষকে ঘাড়ে শুঁড়শুঁড়ি দেওয়া শুরু করলো। এতে এষ হাসতে হাসতে মাটিতে গড়াগড়ি দিয়ে হাসতে লাগলো।
এষের এত হাসি দেখে আর্শিও হাসতেই লাগলো।

আর্শি চেঁচিয়ে বললো, ” তোর ভুলের শাস্তি তোকে দিয়ে দিলাম, শুঁড়শুঁড়ি দিয়ে, ইটস ওকে নাউ! আর হ্যাঁ আমি জীবনেও নিজের মনের কথা বলবো না, সব তোকে বুঝে নিতে হবে, মানে তোকে আমার অন্তর্জামী হতে হবে, তাছাড়া তোর সাথে আমার লাভ এফেয়ার এগুবে না, বলে দিলাম। সোজা ব্রেকআপ! দেখি তুই কতটা বুঝিস আমাকে!”

বলে এষকে সে টেনে দাঁড় করালো।

দাঁড়িয়েই এষ বললো,

” তোকে প্রতিটা কোষে কোষে আমার চেনা আছে আমার প্রাণসখা, এখন তুই আমার একটা চুম্মা আর একটা হাগ চাচ্ছিস না?”

বলেই আর্শিকে আর কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে আর্শির রসোগোল্লার ন্যায় গালে একটা চুম্মা বসিয়ে দিলো।
” আরেহ…” এই একটা শব্দই শুধু উচ্চারনের সুযোগ পেলো আর্শি, তার আগেই এষ ওকে নিজের বুকের সাথে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরেছে!
আর্শির সারা শরীর এষের আচমকা স্পর্শে কাঁপন দিয়ে উঠলো।

এষ ছাড়তেই চাচ্ছিলো না, যেনো সম্বিত হারাচ্ছিলো আর্শির মাঝে। তবুও আর্শির ধাক্কায় সরে দাঁড়াতে হলো অপারগ হয়ে।
আর্শি এষের চুম্বনে ভিজে যাওয়া গাল মুছতে লাগলো নিজের হাতে।

এষ নিজের কাপড় খুঁজতে লাগলো। পেয়েও গেলো একটা ছোটো গাছের ডালে।

ছোটো থেকেই আর্শি এষকে দেখে আসছে, কোনোদিন পরের কোনো ক্ষতি করেনি যে ছেলে সে যে তারও কোনো ক্ষতি করবে না, সে দৃঢ় বিশ্বাস আর্শির ছিলো। তবে নিজের বুকে যদি সত্যিই এষ ছু’রি বসিয়ে দিতো? “এতখানি ভালোবাসে এষ তাকে?”
এত বছর পর আর্শির মাথায় এ প্রশ্নটা আসলো আজ এতক্ষণে। কেনো আরো আগে এষকে ভালোবাসেনি সেজন্য নিজের প্রতি নিজেরই অভিমান হলো আর্শির।

কাপড় চোপড় পুনরায় পরিধান করে এষ আর আর্শি দুজনেই আবার গাড়িতে চড়ে বসলো। গাড়ি কেরানীগঞ্জ হয়ে বুড়িগঙ্গা সেতু পার হয়ে পুরাতন ঢাকায় প্রবেশ করলো।

দুজনেই এবার ঘনঘন একে অপরের দিকে তাকাচ্ছিলো। এষ একটা রোমান্টিক গান ছেড়ে দিলো। আর্শি যতবারই ব্যাক ভিউ মিররের দিকে তাকাচ্ছিলো ততবারই এষ একটা উড়ন্ত চুম্বন উপহার দিচ্ছিলো। আর্শি চুম্বন টাকে ধরে আবার বাইরে উড়িয়ে দিচ্ছিলো। এভাবেই দুজনের মধ্যে খুনসুটি চলছিলো।

চুম্বন গাড়ির উইন্ডো শিল্ড দিয়ে বাইরে উড়ানোর সময় হঠাৎ ই আর্শি নিজের মায়ের গাড়ি দেখতে পেলো।

অবাক হলো সে! এই সময়ে মায়ের গাড়ি পুরাতন ঢাকায় কি করছে ভেবে সে অবাক হলো। এখন তো মায়ের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের নিজের অফিসে থাকার কথা? তাহলে এ সময়ে পুরাতন ঢাকায়?
.
.

পূর্ণ আর আরাধ্যা দুজনেরই মন খারাপ। মুখ ভার করে দুজনে ক্লাশরুমের দু জানালা দিয়ে বাইরে দেখছে। এজন্য অগ্র আর নিহুরও মন খারাপ। দু দিন ধরে পূর্ণ আর আরাধ্যা কেউ একে অন্যের সাথে কথা বলছে না। মূলত আরাধ্যা কে সেদিন বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আসার পর থেকে ঘটনার শুরু। সেদিন কি হয়েছিলো তা কেউ ই জানে না। নিহুর ব্যাপারটা অসহ্য লাগছে। ফ্রেন্ড সার্কেলের দুজন দুজনের সাথে কথা বলছে না, কারনও জানা নেই, ব্যপারটা এবারই প্রথম।

অগ্র আর নিহু দুজনেই পূর্ণ আর আরাধ্যার সাথে কিছু বলতে গিয়েও ব্যর্থ হয়েছে। কেউ কিছু খোলাসা করছে না। এ নিয়ে একটা ভাবগাম্ভীর্য পূর্ণ পরিবেশের সৃষ্টি হয়ে বন্ধু মহলে। দুটো ক্লাশ শেষ হয়ে যাওয়ার পর আর্শি এলো ক্লাশরুমে। এষের সাথে আশুলিয়ায় গিয়ে ফিরে আসতে তার আজ তার দুটো ক্লাশ বরবাদ। কিন্তু এষ আর্শিকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ঐ দুটি ক্লাশে যা যা লেকচার প্রফসর দিয়েছেন, তার সবার গুলোই সে নিজেই আজ রাতে বুঝিয়ে দিবে।

আর্শি মিষ্টি হেসে ক্লাশে চলে গেলো।
টানা আরো দুটো ক্লাশ হলো, কোনো ব্রেক ছাড়াই। আর্শি বরাবরই আরাধ্যার পাশে বসেছে। তবে কারো সাথেই আলাপ হয়নি বলে আরাধ্যার সাথে পূর্ণের কথা না বলাবলির বিষয়টা সে জানে না। দুটো ক্লাশ শেষ হতেই আরাধ্যার ভারীমুখ চোখে পড়লো আর্শির।

তারপরো নিজের কথা বলাতেই ব্যস্ত হয়ে গেলো আর্শি।

” সেনোরিটা রে! দু দিন ক্লাশ করিনি, অনেক কিছু পড়িয়ে শেষ করে ফেলেছে নাকি? ”

আর্শির এ প্রশ্ন শুনে ভারবাত্তিক মনের আরাধ্যা চুপ থাকলেও নিহু ব্যাঙ্গাত্মক হাসি হেসে বললো,

” তোর তো ঘরেই প্রফেসর আছে একজন, সে তো এক রাতেই তোকে সব বুঝিয়ে দিতে পারে, গ্যাব দিয়েছিস তাতে কি?!

আর্শি হেসে মাথা ঝাঁকালো।

” জানিস, ওর সাথে আমার সেটিং হয়ে গেছে! ”

নিহু চোখ কপালে তুলে বললো,

” কি!”

তারপর খুশিতে লাফিয়ে উঠলো নিহু।

” যাক! এতিদিনে তোর বুদ্ধিসুদ্ধি হলো, ছেলেটা সেই ছোটোকাল থেকেই তোকে ভালোবাসে, আর ছয়টা মাস থেকে সে তার বাবা মা ছেড়ে তোর পিছে রাস্তার কুকুরের মতো ছুটেছে, আর তুই কিনা এতদিনে ওরে মেনে নিলি! তোর জায়গায় আমি হলে সেই কবেই ওরে বিয়া করে হানিমুন করে, বেবি নেওয়া শেষ !”

পাশ থেকে অগ্র ব্যাঙ্গাত্মক ভাবে বলে উঠলো,

” তুই চুপ যা নিহু। তবে আর্শি, এত হ্যান্ডু একটা ছেলে তোর মতো চাশমিশ আর বোঁচা নাকির পেছনে এতদিন ঘুরতে পারে কিভাবে, এটা কোয়াইট ফেরোশাস! ”

এই কথা বলতেই নিহু অগ্রের পিঠে একটা চাপড় বসালো।

” আরে! বোঁচা নাক কই রে? নাকটা যাস্ট একটু জাপানিজদের মতো ছোটো আর চোখগুলি ওর কি সুন্দর কোরিয়ানদের মতো! আর এটা কি কোনো খুঁত হলো নাকি? ও কি কোরিয়ান এক্ট্রেস ঝিং লি এর চেয়ে কোনো অংশে কম?”

ঝিং লি এর নাম শুনে অগ্র হাসির বোম ফাটালো।
হাসতে হাসতে কুঁচকে গেলো ও।

হঠাৎ ই পিঠে একটা চাপড় পড়তেই অগ্র থেমে গেলো।

চাপড় টা আর কেউ নয়, এষ ই দিলো।
চাপড় দিয়েই সে বলতে লাগলো,

” মিস্টার অগ্র, প্লিজ ক্যারি অন লাফিং ! বেশি হাসা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো , তবে জেনে রাখো আমার কাছে আমার আর্শি কোরিয়ান এক্ট্রেস ঝিংলি না, মিস ইউনিভার্স ও ফেইল! ও আমার কাছে সবার চেয়ে বেশি সুন্দরী, যত যুগ, যত যামানা অতিবাহিত হয়েছে, তাদের মধ্যে সেরা সুন্দরী আমার আর্শি, আমার মহাজাগতিক ভালোবাসা! আমার ঐশ্বরিক ভালোবাসা!”

এষের এসব কথা শুনে বন্ধুরা সবাই বাহবা দিয়ে উঠলো।

আর আর্শির মুখে ফুটে উঠলো পূর্ণিমার চাঁদের ন্যায় উজ্জ্বল এক হাসি।

(চলবে)