এক মুঠো রোদ্দুর পর্ব-০২

0
99

#এক_মুঠো_রোদ্দুর
[দ্বিতীয় পর্ব]
লেখক – শহীদ উল্লাহ সবুজ

আদনানের এগিয়ে আসা দেখে আদিবা ঘাবড়ে যায়। আদনান যতই এগুচ্ছে আদিবা ততই পিছনে দিকে যাচ্ছে। পিছনে যেতে যেতে দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায় আদিবার। আদনান আদিবার সামনে আসতেই আদিবা বলল,

— গুড নাইট স্যার কি করছেন?

— আমি ডাক্তার আদনান চৌধুরী। গুড নাইট কি?

— আপনি তো কাল রাতে বলছিলেন আপনার নাম গুড নাইট।

আদিবার ভয় পাওয়া কণ্ঠে কথাটা শুনে আদনানের মুখে হাসি চলে আসে। আদনান এবার আদিবার থেকে সরে এসে নিজের চেয়ারে এসে বসে। আদিবা তখনও সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে।

— চেয়ারে এসে বসো।

আদিবা এবার আদনানের সামনে এসে দাঁড়িয়ে আদনান কে বলল — স্যার আপনি কি আমার বাবার চিকিৎসা করিয়েছিলেন?

— হ্যাঁ।

— কিন্তু আপনার এতো টাকা আমি কীভাবে দেব? আমার কাছে তো টাকা নেই।

— তোমাকে টাকার কথা কেউ বলছে? তোমাকে কোনো টাকা দিতে হবে না।

— কিন্তু আপনি আমাদের জন্য কেন এতো কিছু করছেন?

— তোমার যায়গায় অন্য কেউ হলেও আমি এমন টাই করতাম। কারণ যে মেয়ে বাবার জন্য এতো কিছু করতে পারে তার জন্য এটা কোনো কিছুই না। যাইহোক, এই ঔষধ গুলো আমাদের এখানে নেই। বাহিরে থেকে নিয়ে আসতে হবে।

— ঠিক আছে স্যার। আমি গিয়ে নিয়ে আসছি।

আদনান আদিবার দিকে ঔষধের একটা কাগজ এগিয়ে দেয়। আদিবা সেটা নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। ঔষধ নিয়ে সে তার বাবার কাছে চলে গেলো।

— কিরে মা এতক্ষণ কোথায় ছিলি তুই?

— ঔষধ আনতে গেয়েছিলাম। আর ডাক্তারের সাথে কথা বললাম।

— ওহ ডাক্তার কি বলল?

আদিবা কিছু বলতে যাবে তখনই আদনান ভিতরে আসে। আদনানকে দেখে আদিবা দাঁড়িয়ে যায়।

আদনান আদিবার বাবার কাছে এসে বলল — কেমন আছেন এখন?

— আলহামদুলিল্লাহ বাবা। তুমি কে তোমাকে তো চিনলাম না।

আদনান কিছু বলার আগে আদিবা বলল — আরে বাবা তোমাকে তখন বলছিলাম না বড় স্যারের কথা উনিই সেই স্যার।

আদিবার কথা শুনে আদিবার বাবা উঠার চেষ্টা করতেই আদনান বলল — আপনি উঠবেন না। শুয়ে থাকুন।

— ডাক্তার আপনাকে তুমি করে বলে ফেললাম কিছু মনে করবেন না।

— আরে ঠিক আছে সমস্যা নেই। আপনি রেস্ট করুন। আর ঔষধ গুলো ঠিক ভাবে খাবেন কয়েকদিনের মধ্যেই আপনি সুস্থ হয়ে যাবেন ইনশাআল্লাহ।

— তোমাকে যে কি বলে ধন্যবাদ দেব।

— ধন্যবাদ দিতে হবে না। আচ্ছা আপনি রেস্ট করুন।

এই কথা বলে আদনান চলে গেলো। এতক্ষণ মুগ্ধ হয়ে আদিবা আদনানের দিকে তাকিয়ে ছিল। আদিবা মনে মনে ভাবছে। কতবড় একটা ডাক্তার অথচ মনে কোনো অহংকার নেই।

— আদিবা!

ইতিমধ্যে আদিবা আদনানের ভাবনায় ডুবে থাকায় সে তার বাবার বলা কথা গুলো শুনতে পায়নি।

— কিরে মা কি হইছে তোর?

— কই কিছুনা তো। আচ্ছা তুমি রেস্ট করো একটু আমি আসছি।

— তুই এখন আবার কোথায় যাচ্ছিস?

— আসছি অপেক্ষা করো।

আদিবা তার বাবাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে আদনানের চেম্বারে চলে যায়। ওখানে গিয়ে দেখে আদনান নেই। আদিবা এবার আদনানকে পুরো হাসপাতালে খুঁজতে থাকে। আদনানকে দেখতে না পেয়ে আদিবা যখন বাবার কেবিনের দিকে আসতে থাকে তখনই আদনানের কণ্ঠ শুনে আদিবা দাঁড়িয়ে যায়। আর সে দেখতে পায় আদনান একটা রোগীর সাথে কথা বলছে।

— বাহ আপনি তো খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে গিয়েছেন। আর কয়েকদিনের মধ্যে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যাবেন।

— সব তো তোমার জন্য বাবা। তোমার মতো ডাক্তার যদি সব হাসপাতালে থাকতো।

— সব ডাক্তার একি হয়। আচ্ছা থাকুন। টাইম মতো ঔষধ খাবেন।

এই কথা বলে আদনান বেরিয়ে চলে আসে। আদনানকে আসতে দেখে আদিবা লুকিয়ে যায়। আদনান নিজের চেম্বারে গিয়ে বসে। আদিবা আদনানের পিছনে যেতে থাকে। আদনান চেয়ারে বসতেই একটা বয়স্ক লোক আদনানের চেম্বারে প্রবেশ করেন।

— আদনান তোমার সাথে কিছু কথা ছিল আমার।

— জ্বি বলুন।

— তুমি কি ভুলে যাচ্ছ এটা কোনো সরকারি হাসপাতাল নই। এটা একটা প্রাইভেট হাসপাতাল।

— হ্যাঁ আমি জানি। আপনি হঠাৎ এই কথা বলছেন কেন?

— কারণ তোমাকে মনে করিয়ে দিলাম। এভাবে ফ্রীতে সবার চিকিৎসা করা শুরু করলে তো আমাদের রাস্তায় এসে নামতে হবে। তুমি নাকি গতকাল রাতেও একজনের চিকিৎসা করছ।

— হ্যাঁ।

— এমন করলে আমি এই হাসপাতাল কি ভাবে চালাবো?

— হাসপাতাল কি বন্ধ হয়ে গেছে? আর যদি আমাদের জন্য কয়েকজন গরীব অসহায় মানুষ সুস্থ হয় তাহলে এতে কি এমন ক্ষতি হবে?

— আদনান এই হাসপাতাল কিন্তু গরীব দের জন্য নই। গরীব দের জন্য তো সরকারি হাসপাতাল আছে।

— আমার চেম্বারে জোরে শব্দ করে কথা বলবেন না। এটা আপনার বাসা নই। আর যেহেতু এই হাসপাতালের দ্বায়িত্ব আমার উপরে সেহেতু কি করলে ভালো হয় তা আমি জানি। আপনাকে এ নিয়ে চিন্তা করতে হবেনা। আপনি এখন আসতে পারেন।

ভদ্রলোক আর কোনো কথা না বলে বেরিয়ে চলে গেলেন। আদনান নিজের চেয়ারে বসে রাগে ফোঁসফোঁস করতে থাকে। এতক্ষণ যা হচ্ছিলো সব আদিবা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখেছে। আদিবা আর দাঁড়িয়ে না থেকে তার বাবার কেবিনে চলে গেলেন।

এতক্ষণ আদনান যার সাথে কথা বলছে, সে এই হাসপাতালের মালিক আরিয়ান চৌধুরী। আদনানের বাবা। আরিয়ান চৌধুরী আর আদনান চৌধুরীর সম্পর্ক তেমন একটা ভালো না। ভালো না হওয়ার কারণ আছে। গল্পের সাথে থাকলে জানতে পারবেন।

এদিকে আদিবা তার বাবাকে টাইম মতো খাবার খাইয়ে দিয়ে ঔষধ খাইয়ে দেয়। হাসপাতালে সব কাজ শেষ করে আদনান হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে গ্যারেজ থেকে নিজের গাড়ি বের করে রাস্তায় আসতেই দেখে আদিবা দাঁড়িয়ে আছে। আদনান আদিবার সামনে গাড়ি দাঁড় করিয়ে আদিবাকে বলল — এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন?

— বাসায় যাবো। কিন্তু কোনো রিকশা পাচ্ছিনা। তাই অপেক্ষা করছি।

— ওহ আচ্ছা।

এই কথা বলে আদনান গাড়ি চালু করে।

— কি মানুষ? একা একটা মেয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে কই বলবে আমার সাথে চলো। আমি তোমাকে নামিয়ে দেই। (মনে মনে বলল আদিবা)

— গাড়িতে উঠে বসুন। আমিও বাসায় যাচ্ছি।

কথাটা শুনে আদিবা তো মহা খুশি। সে তাড়াতাড়ি করে গাড়িতে উঠতে গিয়ে দরজার সাথে একটা ধাক্কা খায়।

— এ ভাবে কেউ গাড়িতে উঠে?

— সরি। আসলে তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে খেয়াল করিনি।

— সিট ব্যালট লাগিয়ে নাও।

আদিবা সিট ব্যালট হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ চুপ হয়ে থাকে। আদিবা এটাও জানেনা যে সিট ব্যালট কীভাবে লাগাতে হয়।

— কি হলো?

— আসলে আমি তো সিট ব্যালট লাগাতে পারিনা।

আদনান এবার আদিবার খুব কাছে চলে আসে। আর সিট ব্যালট লাগিয়ে দেয়। এদিকে আদিবা তো ফিদা হয়ে গেছে ঘ্রাণে।

আদনান এবার গাড়ি চালাতে থাকে। দুজনেই নিশ্চুপ। এভাবে আদিবা বসে থাকতে পারছেনা। আদিবা নিরবতা ভাঙে বলল,

— স্যার একটা কথা বলব?

— হ্যাঁ।

— আপনি কি বিয়ে করছেন?

— না।

— ওহ, বিয়ে করেন না? আপনার মতো বয়স আমার হলে এতো দিনে আমার অনেক গুলো বিয়ে হতো। আর আপনি একটা ও করেন নি। আপনার কি কোনো সমস্যা আছে?

এই কথা শুনে আদনান আদিবার দিকে চোখ বড় করে তাকায়।

— এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?

— চুপ করে বসে থাকতে পারো না? আর একটা আবল তাবল কথা বললে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেব।

— আমি তাহলে কীভাবে যাবো?

— পায়ে হেঁটে।

— যদি কালকের মতো ছেলে গুলো আমাকে আবার ধরে? তখন আমার কিছু হয়ে গেলে এর দায়বার কি আপনি নিবেন?

আদনান কোনো কথা না বলে গাড়ি চালাচ্ছে।

— ডাক্তার সাহেব। ও ডাক্তার সাহেব শুনেন।

— আজব মেয়ে তো তুমি। বলছিনা চুপ করতে?

— আরে আমাকে কি আপনার বাসায় নিয়ে যাবেন নাকি?

— মানে?

— আপনি তো আমার বাসা পেরিয়ে এসে পড়ছেন।

আদনান ভুলে গিয়েছে আদিবার বাসার ঠিকানা। আদিবার কথা শুনে আদনান গাড়ি ব্রেক করে।

আদনান কিছু বলতে যাবে তখনই আদিবা বলল,

— থাক সরি বলতে হবে না।

— সরি মাই ফুট। গাড়ি থেকে নামো। আর নিজের বাসায় যাও।

আদিবা আদনানের রাগি মুখ দেখে আর কোনো কথা বললনা। গাড়ি থেকে নামতেই আদনান চলে যায়।

আদিবা নিজের বাসার দিকে চলে গেলো। সে বাসায় যেতেই দেখে তার বাসার দরজার তালা খোলা। এটা দেখে আদিবা হতবাক হয়ে যায়। কারণ সে তো সকালে দরজায় তালা দিয়েই হাসপাতালে গিয়েছে। আদিবা বুঝতে পারছেনা এটা কীভাবে সম্ভব? তাহলে কি বাসায় চোর এসেছে? আদিবা এবার তাড়াতাড়ি করে বাসায় ভিতরে চলে যায়। আর বাসার ভিতরে যেতেই সে হতবাক হয়ে গেলো।

চলবে?