এক মুঠো রোদ্দুর পর্ব-০৪

0
72

#এক_মুঠো_রোদ্দুর
[চতুর্থ পর্ব ]
লেখক – শহীদ উল্লাহ সবুজ

মাথা থেকে গাড়ির গ্লাসটা বের করতেই মাথা থেকে র*ক্ত বের হতে শুরু করে। রক্ত দেখে আদিবা অজ্ঞান হয়ে যায়। আদিবার এমন অবস্থা দেখে আদনান আদিবাকে কোলে তুলে অন্য সিটে শুইয়ে দেয়। আদনান এবার লোকটার মাথায় ভালো ভাবে বেন্ডেজ করে দিয়ে আদিবার চোখে পানি দিয়ে জ্ঞান ফিরিয়ে আনে।

আদিবা চোখ খুলতেই দেখে আদনান দাঁড়িয়ে আছে। আদিবা তাড়াতাড়ি করে উঠে বলল।

— সরি স্যার। আসলে হঠাৎ করে কি হয়ে গেলো বুঝতে পারিনি।

— তোমাকে আর আমার এসিস্ট্যান্ট হয়ে কাজ করতে হবেনা। তুমি বাসায় চলে যাও।

— কেন স্যার?

— কারণ তোমাকে দিয়ে এসব হবেনা।

এই কথা বলে আদনান হাটা শুরু করে আর আদিবা আদনানের পিছনে যেতে যেতে বলল,

— স্যার আর এমন হবে না। আমাকে প্লিজ আরেকটা সুযোগ দিন আপনার পাশে থাকার।

কথাটা শুনে আদনান দাঁড়িয়ে যায়। আর সে আদিবার দিকে তাকাতেই আদিবা আবার বলল,

— না মানে স্যার আমাকে আরেকটা সুযোগ দিন। আমার চাকরি টা খুব দরকার। আমার এই চাকরি চলে গেলে আমি আর বাবা কীভাবে চলব স্যার?

এই কথা বলে আদিবা ফেলফেল করে কান্না করে দেয়।

— এটা কি চোখ নাকি সমুদ্র? কিছু হলেই চোখে পানি চলে আসে?

— স্যার আমার চাকরি থেকে বাদ দিবেন না প্লিজ।

— কান্না থামাও। এটাই কিন্তু লাস্ট সুযোগ।

— ধন্যবাদ স্যার। আপনি খুব ভালো।

আদনান নিজের চেম্বারে গিয়ে বসে। আদিবা এসে আদনানের সামনে এসে বলল — স্যার এখন তো কোনো কাজ নেই। চলুন আমরা ঘুরে আসি।

— ঘুরাঘুরির মুড আমার নেই। আর কে বলছে কাজ নেই?

— আমি বলছি।

— বস কি আমি নাকি তুমি?

— আপনি।

— তাহলে কাজ নেই বললে কেন? পাশের রুমে আমার কয়েকটি ফাইল আছে ওই গুলো গুছিয়ে রেখে দাও।

— ঠিক আছে স্যার।

এই কথা বলে আদিবা আদনানের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলতে থাকে।

— কি সুন্দর একটা একটা কথা বললাম। কই খুশি হবে তা না করে কাজ ধরিয়ে দিল। হনুমান একটা। এর মতো আন রোমান্টিক মানুষ আমি আর দেখিনি।

— এখনও দাঁড়িয়ে আছো কেন?

— সরি স্যার যাচ্ছি।

এই কথা বলে আদিবা চলে গেলো। আর সে নিজের কাজ করতে থাকে। আদিবা সব ফাইল এক সাথে নিয়ে যখন হাটতে যাবে তখনই কিছু একটার সাথে পা লেগে সব ফাইল পড়ে যায়। সাথে সাথে আদিবা মাথায় হাত দিয়ে বলে– যাহ এবার বুঝি আমার চাকরি টা গেল?

আদিবা আদনানের চেম্বারে উঁকি দিয়ে দেখে আদনান নেই। আদিবা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নিজেকে নিজে বলতে থাকে — আদিবা তোকে দিয়ে কোনো একটা কাজ ঠিক ভাবে হয়না। ডাক্তারের থেকে মন সরিয়ে কাজে মন দে।

আদিবা কোনোরকমে ফাইল গুলো ঠিক করে রেখে বাহিরে আসে।

— স্যার সব ঘুছিয়ে দিয়েছে।

— এই সামান্য একটা কাজ করতে ত্রিশ মিনিট লেগেছে।

ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল। আদিবা কিছু বললনা। তখনই আদনানের চেম্বারে প্রবেশ করে রানী বেগম।

— আম্মু তুমি এখানে?

আদনানের কথা শুনে আদিবা ও তাকাল। রানী বেগম বলল — শপিংমলে যাচ্ছিলাম। তাই ভাবলাম তোর সাথে একটু দেখা করে যাই।

— ওহ আচ্ছা। মিস আদিবা। আমাদের জন্য দুকাপ চা বানিয়ে নিয়ে আসুন। চায়ে চিনি কম দিবেন।

ঠিক আছে বলে আদিবা চলে গেলো।

— কিরে মেয়েটা কে? এর আগে তো দেখিনি।

— আজকেই প্রথম জইন করছে। আমার এসিস্ট্যান্ট হয়ে।

— মেয়েটা তো খুব মিষ্টি।

— মিষ্টি না ছাঁই কোনো একটা কাজ ঠিক করে করতে পারেনা।

— ধীরে ধীরে শিখে যাবে।

কথার মাঝখানে আদিবা চা নিয়ে আসে। আর দুজনকে চা দিয়ে পাশে দাঁড়িয়ে থাকে।

রানী বেগম চা খেয়ে বলল — বাহ তুমি তো খুব ভালো চা বানাতে পারো।

— ধন্যবাদ আন্টি।

— নাম কি তোমার?

— আদিবা রহমান।

— খুব মিষ্টি নাম। আদনান।

— বলো।

— আদিবার কোনো কাজ না থাকলে আমি ওকে নিয়ে একটু শপিংমলে যাই। ভাবছি তোকে যেতে বলব।

— ঠিক আছে। আর আদিবা আপনি শপিংমল থেকে বাসায় চলে যাবেন। হাসপাতালে আসতে হবে না।

— আমি আবার কি করলাম?

আমি বলছি তুমি কিছু করছ? আজ তোমার ছুটি। কাল ৯ টার আগে হাসপাতালে উপস্থিত থাকবে।

— ঠিক আছে স্যার।

এবার আদিবা রানী বেগমের সাথে বেড়িয়ে পড়ে। দু’জনে গাড়িতে উঠে বসে।

— আদিবা তোমার মা-বাবা আছে?

— বাবা আছে কিন্তু মা নেই। মা আমার জন্মের সময় মারা যায়।

— ওহ আচ্ছা। তোমাদের বাসা কোথায়?

আদিবা ঠিকানা বলল।

— তুমি পড়াশোনা না করে চাকরি কেন করছ?

— আসলে আমার বাবা খুব অসুস্থ। আমি যদি কোনো কিছু না করি আমাদের সংসার কীভাবে চলবে? তাই আদনান স্যারকে অনেক রিকুয়েষ্ট করে চাকরি টা নিলাম। কিন্তু মনে হয়না আমি এই চাকরি বেশি দিন করতে পারবো।

— কেন?

— স্যার বার বার হুমকি দেয়। কিছু ভুল হলেই বলে চাকরি নট।

রানী বেগম একটা হাসি দিয়ে বলল — আসলে আমার ছেলেটা রাগী হলেও খুব ভালো মনের একটা মানুষ।

— আচ্ছা আন্টি স্যারের তো বিয়ের বয়স হয়ে গেছে। ওনাকে বিয়ে করাচ্ছেন না কেন?

— আমি তো কতবার বলছি। কে শুনে কার কথা? বলে যখন সময় হবে তখন সে নিজেই বলবে।

কথা বলতে বলতে দুজনেই শপিংমলে পৌছে যায়। কেনাকাটা শেষ করে বেরিয়ে আসে। আর আদিবা আদিবার বাসায় চলে যায়।

— আদিবা আজ প্রথম দিন কেমন কেটেছে?

— আর বলো না।

আদিবা তার বাবাকে সব কথা বলল।

— তুই তো এমন ছিলি না? হঠাৎ তোর কি হলো?

— আমিও জানিনা। আচ্ছা আমি ফ্রেশ হয়ে আসি।

অন্যদিকে আদনান হাসপাতাল থেকে বাসায় চলে যায়। আদনান ফ্রেশ হয়ে নিজের রুমে বসে থাকে। তখনই রানী বেগম আদনানের রুমে আসে।

— আদনান।

— হুম কখন ফিরলে?

— তুই আসার কিছুক্ষণ আগেই।

— কেনাকাটা সব হইছে?

— হুম। মেয়েটা কিন্তু খুব মিষ্টি। তোর সাথে খুব ভালো মানাবে।

— কোন মেয়ে?

— তোর এসিস্ট্যান্ট, আদিবার কথা বলছি।

— আমাকে দেখে কোনো দিক থেকে পাগল মনে হয়?

— কেন?

— এই তাঁর ছেড়া মেয়ের সাথে আমাকে মানাবে বলছ? এর মতো মেয়ে আমি দুটি দেখিনি।

— কি বলছিস এসব?

— বাদ দাও। খাবার রেডি করো খিদে পেয়েছে।

— আচ্ছা খেতে আয়।

আদনান খাওয়া দাওয়া খেয়ে নিজের রুমে আসে। তখনই আদনানের ফোনে একটা মিস কোল আসে। আদনান ফোন হাতে নিয়ে বলে এই যুগেও মানুষ মিস কল দেয়?

আদনান সেই নাম্বারে কল বেক করে।

–হ্যালো কে আপনি?

— আমি আদিবা।

— কোন আদিবা?

— আপনার এসিস্ট্যান্ট।

— ওহ তাইতো ভাবি এই যুগেও মানুষ মিস কল দেয়।

— আসলে স্যার আমার ফোনে মাত্র এক টাকা ছিল।

— কি জন্য কল দিলে? আর তুমি আমার নাম্বার কোথায় পেয়েছ?

— এতো বড় ডাক্তার। আপনার নাম্বার ম্যানেজ করা কোনো ব্যাপার হলো?

— কার থেকে নিয়েছ সেটা বলো।

— আপনার আম্মুর থেকে। কি করছেন খাবার খেয়েছেন?

— হ্যাঁ।

— ওমা আমাকে জিজ্ঞেস করবেন না?

— প্রয়োজন নেই। কি বলার জন্য ফোন দিয়েছ?

— স্যার কাল কখন আসবেন হাসপাতালে?

— ৯ টায়। ঠিক আছে রাখলাম ঘুমব।

এই কথা বলে আদনান ফোন কেটে দেয়। আদিবা আদনানের চোদ্দগুষ্টিকে উদ্ধার করে ঘুমিয়ে পড়ে।
সকালে আদিবা খুব তাড়াতাড়ি করে ঘুম থেকে উঠে ৯ টার আগেই হাসপাতালে চলে আসে। ৯ টা বেজে গেলো কিন্তু আদনান এখনও আসেনি। আদিবা গিয়ে আদনানের চেয়ারে বসে। আদনানের কথা মনে পড়তেই আবার উঠে যায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই আদনান নিজের চেম্বারে প্রবেশ করে। তবে আজ আদনান একা আসেনি। সাথে একটা মেয়ে আছে। মেয়েটা আদনানের হাত ধরে আছে। এটা দেখে আদিবা হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। আদিবা আদনানের পাশে থাকা মেয়েটাকে সহ্য করতে পারছেনা। আর তার মনে মেয়েটাকে নিয়ে হাজার প্রশ্ন তৈরি হতে থাকে।

চলবে?