এক মুঠো রোদ্দুর পর্ব-০৫

0
87

#এক_মুঠো_রোদ্দুর
[পঞ্চম পর্ব ]
লেখক – শহীদ উল্লাহ সবুজ

আদনানের হাত ধরে চেম্বারে প্রবেশ করে একটা মেয়ে। আদিবা দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটা কে? আদনানের সাথে মেয়েটার কীসের সম্পর্ক? এসব প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিলো আদিবার মাথায়।

— আদিবা আমাদের জন্য দুকাপ চা করে নিয়ে আসো।

আদিবা চলে গেলো চা বানানোর জন্য। মেতেটা আদনানকে বলল — কিরে এই মেয়েটা কে?

— আমার এসিস্ট্যান্ট।

— বাহ! যে ছেলে মেয়েদের সাথে কথা বলতনা ঠিক ভাবে তার মেয়ে এসিস্ট্যান্ট! তাও এমন সুন্দরী একটা মেয়ে। কাহিনি কি?

— কোনো কাহিনি নেই। মেয়েটার চাকরি দরকার ছিল। আর আমারও একটা এসিস্ট্যান্ট দরকার ছিল।

— কাহিনি তো গড়বড় আছেই।

— এই তোদের একটা সমস্যা। তিল কে তার বানানো।

আদিবা চা নিয়ে এসে দুজনকে দিয়েছে। চা খাওয়া শেষ করে আদনান মেয়েটাকে বলল — আমি একটু আসছি।

এই কথা বলে আদনান চলে গেলো। মেয়েটা ফোন বের করে টিপতে থাকে। আর আদিবা মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছে।

মেয়েটা আদিবাকে উদ্দেশ্য করে বলল — নাম কি তোমার?

— আমি আদিবা রহমান।

— ওহ আচ্ছা কতদিন ধরে আছো?

— অল্পকিছু দিন হলো। আপনাকে তো এর আগে দেখিনি।

— আসলে আমি আজকেই দেশের বাহিরে থেকে আসছি। আর আদনান আমার ছোট বেলার ফ্রেন্ড। বলতে গেলে আমরা এক সাথেই বড় হয়েছি।

— ওহ আচ্ছা।

দুজন নিজেদের মধ্যে আরো কিছুক্ষণ কথা বলল। আদিবা ক্লিয়ার হলো মেয়েটা আদনানের ফ্রেন্ড। আদনান কাজ শেষ করে চেম্বারে ফিরে আসে।

— আদনান আমি এখন চলে যাবো। তুই কিন্তু সন্ধ্যা আসবি। আর হ্যাঁ সাথে করে আদিবাকেও নিয়ে আসবি ঠিক আছে?

— আবার আদিবা কে কেন?

— কারণ আদিবা আমার গেস্ট। আদিবা তুমিও কিন্তু আসবে ঠিক আছে?

— আচ্ছা।

মেয়েটা হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে চলে গেলো। দেখতে দেখতে বিকেল হয়ে যায়। আদনান আদিবার কাছে এসে বলল — আদিবা তুমি এখন বাসায় চলে যাও। আর রেডি হয়ে থেকো। আমি তোমাকে নিয়ে যাবো।

— ঠিক আছে স্যার।

আদনানের কথা শুনে আদিবা খুশি হয়ে চলে যায়। কিছুক্ষণ পরে আদনান বাসায় গিয়ে রেডি হয়ে আদিবার বাসার সামনে চলে আসে। আদিবা বের হতেই আদনান মুগ্ধ হয়ে আদিবার দিকে তাকিয়ে থাকে। আদিবা একটা নীল শাড়ী পড়েছে। আদিবাকে খুব সুন্দর দেখাচ্ছে। হালকা হাওয়াতে আদিবার চুপ গুলো দোল খাচ্ছিল। আর আদনান মুগ্ধ হয়ে আদিবার দিকেই তাকিয়ে আছে।

— স্যার! ও স্যার!

আদনান এতোটাই মুগ্ধ হয়েছে যে আদিবা যে তার সামনে এসে ডাকছে আদনানের কোনো খোঁজ নেই। এবার আদিবা একটু জোরে শব্দ করতেই আদনান নিজের মধ্যে ফিরে আসে।

— স্যার আমি কখন থেকে আপনাকে ডাকছি।

— ওহ আচ্ছা উঠো।

আদিবা পিছনে গিয়ে বসে। আদনান গাড়ি চালাতে শুরু করে। আদনানের গাড়িতে থাকা গ্লাস টা দিয়ে আদিবাকে দেখা যাচ্ছে। আদনানের চোখ বার বার সেদিকেই যাচ্ছে। আদিবা যখন তাকায় আদনান চোখ সরিয়ে নেয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা পৌছে যায় তাদের গন্তব্যে। আদনান ভিতরে যেতেই মেয়েটা এসে আদনান কে জড়িয়ে ধরে। এটা দেখে আদিবা তো তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে। এবার সবাই ভিতরে আসে। ভিতরে আসতেই দেখে আদনানের স্কুল ফ্রেন্ড সবাই এখানে আছে। আদনান আর আদিবা সেদিকে যায়। আদিবা গিয়ে একটা চেয়ারে বসে পড়ে আর আদনান কি করে তা দেখতে থাকে। সবাই এসে আদিনানকে জড়িয়ে ধরে। সাথে মেয়ে ফ্রেন্ড গুলো ও। এদিকে আদিবা জেলাশ ফিল করছে। আদিবা একা বসে আছে আর বাকি সবাই আড্ডা দিচ্ছে।

একটা লোক সবাইকে বিয়ার দিচ্ছে। এটা দেখে আদিবা লোকটাকে ডাক দেয়। আর লোকটা আদিবার কাছে আসে। আদিবা বিয়ার নিয়ে খাওয়া শুরু করে দেয়। কয়েক গ্লাস টপাটপ খেয়ে ফেলে।

খাওয়া মাত্রা বেশি হওয়াতে আদিবা চোখে ঝাপসা দেখতে শুরু করে। আর তার শরীর মাথা সব যেনো ঘুরছে। হঠাৎ করে একা একা আদিবা হাসতে শুরু করে।

আদিবার হাসির শব্দ শুনে আদনান এগিয়ে আসে। আদিবার এমন অবস্থা দেখে আদনান ব্যাপারটা বুঝতে পেরে আদিবার কাছে গিয়ে বলল — তোমাকে এসব খেতে কে বলছে?

— তো কি করব? আপনাদের তামশা দেখব?

— আদিবা!

— স্যার আমার কাছে কেমন যেনো লাগছে আমি বাসায় যাবো।

আদনান সবাইকে বিদায় জানিয়ে আদিবাকে বসা থেকে তুলতেই আদিবা আদনানের বুকে ঢলে পড়ে। আর আদনানের শার্ট শক্ত করে ধরে রাখে। আদনান কোনোরকমে আদিবাকে গাড়িতে বসায়। আর আদনানের পাশের সিটেই বসিয়ে দেয়।

আদনান গাড়ি চালাতে শুরু করে। আদিবা আদনানের কাধের উপর মাথা রেখে দেয়। আদনান আদিবার মাথা সরিয়ে দেয়। আদিবা আবার নিয়ে আসে। ব্যাপার টা আদনানের বিরক্ত লাগছে। তাও সে বার বার আদিবাকে সরিয়ে দিচ্ছে কিছু না বলে।

কিছুক্ষণের মধ্যেই আদিবার বাসার সামনে চলে আসে। আদনান গাড়ি থেকে নেমে দরজা খুলে দেখে আদিবা হেটে যাওয়ার অবস্থায় নেই। আদনান মনে মনে ভাবতে থাকে। এখন কোলে করে নিয়ে যাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।

আদিবাকে আদনান এবার কোলে তুলে বাসার সামনে গিয়ে দরজার কলিং বেলে চাপ দিতেই আদিবার আব্বু এসে দরজা খুলে দেয়।

আদিবাকে আদনানের কোলে দেখে বলল — আদিবার কি হয়েছে?

— তেমন কিছু হয়নি ঘুমালে ঠিক হয়ে যাবে। ওর রুম কোনটা?

আদিবার বাবা রুম দেখিয়ে দেয়। আর উনি পানি আনতে যায়।

আদনান আদিবার রুমে গিয়ে খাটের উপরে শুইয়ে দিতেই আদিবা আদনানের হাত ধরে বুকের কাছে নিয়ে আসে। আদিনান হাত ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু আদিবা শক্ত করে হাত ধরে রাখে।

— আদিবা কি করছ ছাড়ো।

আদিবা চোখ বন্ধ করে বলল — না আপনাকে আমি ছাড়ছি না। পরে আবার অন্য মেয়েদের জড়িয়ে ধরবেন। আপনি অন্য মেয়েদের জড়িয়ে ধরলে আমার কাছে খুব খারাপ লাগে।

আদনান কি করবে বুঝতে পারছেনা। আদিবার বাবা আসার শব্দ শুনে এবার আদনান একটা টান মেরে নিজের হাত নিয়ে আসে।

— আমি চলে যাচ্ছি। ওকে ঘুমাতে দেন। পার্টিতে বিয়ার খেয়ে এই অবস্থা হইছে। চিন্তার কোনো কারণ নেই। সকালে ঠিক হয়ে যাবে।

এই কথা বলে আদনান বাহিরে চলে আসে। আর গাড়ি চালাতে শুরু করে। আদনানের কানে আদিবার বলা কথা গুলো এখনও কানে বেজেই চলছে। আদনান সব ভাবিনা বাদ দিয়ে গাড়ি চালাতে মনোযোগ দেই। কিছুক্ষণের মধ্যেই বাসায় চলে যায়। বাসায় গিয়ে দরজার কলিং বেলে চাপ দিতেই রানী বেগম এসে দরজা খুলে দেয়। আর আদনানের দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসতে থাকে।

— এভাবে হাসার কি হলো?

— কিছু না তুই গিয়ে ড্রেস চেঞ্জ করে নে।

এই কথা বলে রানী বেগম হাসতে হাসতে চলে গেলো। আদনান কিছুই বুঝতে পারলোনা এবার সে নিজের রুমে গিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ড্রেস চেঞ্জ করতে যাবে এমন সময় দেখে তার শার্টের মধ্যে লিপস্টিকের দাগ। আদনান এবার বুঝতে পারে তার মায়ের মুচকি হাসার কারণ। আর দি লিপস্টিক যে আদিবার সেটাও শিওর হয়ে যায়। আদনান ফ্রেশ হয়ে খাবার খেয়ে রুমে ঘুমিয়ে পড়ে। সকালে ঘুম থেকে উঠে আদনান হাসপাতালে চলে যায়। হাসপাতালে গিয়ে দেখে আদিবা এখনও আসেনি। আদনান পকেট থেকে ফোন বের করে আদিবাকে ফোন করে। কিন্তু আদিবা ফোন রিসিভ করেনা। আদনান বেশ অবাক হয়ে গেলো। এই মেয়েটার কি হয়ে গেলো হঠাৎ করে? ফোন রিসিভ করছেনা! কোনো সমস্যা হয়নি তো আবার? নাকি এখনো বিয়ারের নেশা কেটে উঠেনি? কিন্তু বিয়ারের নেশা তো এতক্ষণ থাকার কথা নই। আদনান গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ে আদিবার বাসার উদ্দেশ্যে।

চলবে?