এক মুঠো রোদ্দুর পর্ব-০৯

0
60

#এক_মুঠো_রোদ্দুর
[নবম পর্ব ]
লেখক – শহীদ উল্লাহ সবুজ

এতো রাতে আদনানকে দরজার সামনে দেখে আদিবা কিছুটা অবাক হয়। আদিবা যার সাথে কথা বলতে গেলে ঠিকভাবে কথা বলেনা। সে নিজে আসছে প্রিয়ার রুমে।

— স্যার আপনি এতো রাতে?

— ধন্যবাদ তোমাকে।

— কেন স্যার!

— আমার কেন জানি মনে হচ্ছে তোমাকে একটা ধন্যবাদ দেওয়া দরকার।

— আচ্ছা ঠিক আছে।

— হুম। গুড নাইট।

এই কথা বলে আদনান চলে যায়। আদিবা এবার নিজের রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। আদনান ও রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। দেখতে দেখতে সকাল হয়ে গেলো। প্রতিদিনের মতো আজ ও আদিবা খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে। আর সবার জন্য নাস্তা তৈরি করে। আর সে আদনানকে ডাকতে যায়।

— স্যার! উঠুন। অনেক বেলা হয়ে গিয়েছে।

আদনানের কোনো সাড়াশব্দ নেই। এটা দেখে আদিবা এবার আদনানের শরীরে হাত দিয়ে আদনানকে স্পর্শ করে। আর আদনান কে হালকা করে ধাক্কা দিতেই আদনান আদিবার হাত ধরে আদিবাকে নিজের কাছে নিয়ে আসে। আদনান ঘুমের মধ্যে আদিবাকে নিজের খুব কাছে নিয়ে আসে। আদিবা নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে। কিন্তু আদনানের শক্তির কাছে ফেরে উঠেনা। ইতিমধ্যে আদনানের স্পর্শে আদিবার শরীরে শিহরণ জেগে উঠে। আদনান যখন আদিবার ঠোঁট স্পর্শ করতে যাবে তখনই আদিবার আদনানকে জোরে একটা ধাক্কা দেয়। সাথে সাথে আদনানের ঘুম ভেঙে যায়।

— একি তুমি এখানে? তুমি আমার রুমে কি করছ?

— আপনাকে ডাকতে আসছি। আরেকটু হলে তো।

— আরেকটু হলে কি?

— এখন এমন ভাব ধরছেন যেনো কিছুই জানেন না।

— মানে?

— কিছুনা। ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করতে আসুন।

এই কথা বলে আদিবা রুম থেকে বেরিয়ে পড়ে। আদনান বসে বসে আদিবার বলা কথা গুলো ভাবতে থাকে। একটু আগে কি হয়ে গেলো আদনান মনে করার চেষ্টা করে। কিন্তু সে মনে করতে পারছেনা। আদনান এবার ফ্রেশ হতে চলে যায়। কিছুক্ষণ পরে আদনান বেরিয়ে আসে। নাস্তা খেয়ে রেডি হতে থাকে হাসপাতালে যাওয়ার জন্য।

এদিকে আদিবাও রেডি হয়ে নেয়। আদনান বের হয়ে দেখে আদিবা রেডি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

— তুমি বাহিরে কি করছ?

— হাসপাতালে যাবোনা নাকি?

— ওহ ঠিক আছে চলো।

এবার দু’জনে গাড়িতে উঠে বসে। আদনান ড্রাইভিং করতে করতে আদিবাকে বলল,

— আদিবা তুমি পড়াশোনা কেন ছেড়ে দিয়েছ?

— বাবা অসুস্থ হয়ে যাওয়ার পরে আর কলেজের খরচ দিতে পারতাম না। তাই আর কলেজে যাওয়া হয়নি। জানেন স্যার আমার স্বপ্ন ছিল আমি একদিন অনেক বড় ডাক্তার হবো। আর আপনার মতো গরীব অসহায় রোগীদের চিকিৎসা করব। কিন্তু বাবার হঠাৎ অসুস্থতা আমার স্বপ্ন এক নিমিষেই শেষ হয়ে গেলো।

আদিবার কথা শুনে আদনান চুপচাপ হয়ে ড্রাইভিং করছে।

— স্যার।

— বলো!

— আপনার কি সেই মানুষটার কথা এখনও মনে পড়ে?

— কোন মানুষের কথা বলছ?

— যাকে আপনি ভালোবাসতেন।

আদিবা এই কথা বলতেই আদনান গাড়ি ব্রেক করে। হঠাৎ গাড়ি ব্রেক করা দেখে আদিবা ভয় পেয়ে যায়। আর সে মনে মনে ভাবতে থাকে, আদনান তো এবার আদিবাকে ছেড়ে দিবেনা। এখন আদিবার কপালে কি আছে আল্লাহ ভালো জানে।

কিন্তু আদিবাকে অবাক করে দিয়ে আদনান বলল।

— হাসপাতালে পৌছে গেছি। গাড়ি থেকে নামো। আর হ্যাঁ তাকে এখন আর আমার মনে পড়েনা।

এই কথা বলে আদনান আদিবাকে নামিয়ে দেয়৷ আর সে গাড়ি নিয়ে চলে যায় গ্যারেজে। আদিবা চেম্বারে গিয়ে দেখে সব এলোমেলো হয়ে পড়ে আছে।

আদিবা সব ঘুছিয়ে নিতে শুরু করে। আর আদনানের চোদ্দগুষ্টিকে উদ্ধার করতে থাকে।

এদিকে আদনান চেম্বারে এসে বসে। আদিবা আদনানের জন্য চা করে নিয়ে আসে।

— আসতে পারি ডাক্তার সাহেব?

আদনান চায়ের কাপে ঠোঁট লাগাবে এমন সময় মেইলি কণ্ঠ টা শুনে আদনান সামনের দিকে তাকাতেই তার আটকে যায়। আদনান যেমন অবাক হলো সেইম ভাবে সামনে থাকা মেয়েটাও অবাক হলো। আদনান চায়ের কাপ রেখে বলল।

— আসুন।

— আদনান তুমি এখানে?

— এটা আমার হাসপাতাল।

— ওহ আচ্ছা। তুমি তাহলে নাম করা ডাক্তার আদনান চৌধুরী?

— হুম।

— বাহ।

— কি জন্য আসছেন সেটা বলুন। আমি অহেতুক কথা বলা পছন্দ করিনা।

— তুমি তো অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছ।

মেয়েটার কথা শুনে আদনানের খুব রাগ হচ্ছে। আদনান তাও নিজেকে সামলে রাখার চেষ্টা করছে।

— কি জন্য আসছেন সেটা বলুন।

— আসলে আমার হাসবেন্ড কে নিয়ে আসছি। যদি ওনাকে দেখিতে একটু।

— ঠিক আছে চলুন।

আদনান এবার মেয়েটার সাথে চলে গেলো। রোগীকে দেখে আদনান বলল — এটা আপনার স্বামী?

— হুম।

— আদনান একটা মুচকি হাসি দেয়।

হাসি দেওয়ার কারণ হলো। লোকটার বয়স চল্লিশের বেশি। আদনান মনে মনে বলে, হায়রে মানুষ। টাকার জন্য কি না করতে পারে!

রোগীকে দেখে আদনান নিজের চেম্বারে এসে বসে। তখন আদিবা আদনানের কাছে এসে বলল,

— স্যার মেয়েটাকে আপনি আগে থেকেই চিনেন নাকি?

— হ্যাঁ।

— কিন্তু সে আপনাকে তুমি করে বলল, আর আপনি আপনি করে বললেন। কিছুই বুঝলাম না। মেয়েটা কি আপনার রিলেটিভ?

— তুমি সকালে যার কথা আমাকে জিজ্ঞেস করলে সেই মেয়ে এটা। ওর নাম তৃপ্তি।

— ওহ আচ্ছা।

— তখন তো চা খেতে পারলাম না। এখন আরেক কাপ চা করে নিয়ে আসো।

আদিবা চা রেডি করে নিয়ে আসে। আর সে এসে দেখে আদনান নেই। কিছুক্ষণ সেখানে অপেক্ষা করে কিন্তু আদনান আসেনা। আদিবা এবার বাহিরে যাবে তখনই সে কারোর সাথে ধাক্কা খায়। ভাগ্যিস যার সাথে সে ধাক্কা খেয়েছে সে তাকে ধরে রেখেছে। এবার আদিবা চোখ খুলে তাকিয়ে দেখে আদনান। আদনানকে দেখেই তার বুকে মোচড় দিয়ে উঠে।এবার আদনান আদিবাকে ছেড়ে দিয়ে বলল,

— এই মেয়ে তোমার চোখ কোথায় থাকে? দেখে শুনে হাঁটতে পারনা? আর সব কিছুতেই এতো তাড়াহুড়ো কীসের?

— সরি স্যার।

— রাখো তোমার সরি। ইডিয়ট একটা। ভুল করলেই সরি। একটা মানুষ এমন কীভাবে হয়? যত্তসব। নেক্সট টাইম থেকে খেয়াল করে হাটবে।

এই কথা বলে আদনান চলে গেলো। আদনানের বকা খেয়ে আদিবার মন খারাপ হয়ে গেলো।

— একজনের রাগ আরেক জনের উপরে ঝাড়ে। হনুমান বিলাই, খাটাশ। এই লোককে তো আমি ঠিক করবই। উনি যদি ঘাড় ত্যাড়া হয় আমিও উন্নত মানের ট্রেনিং প্রাপ্ত ঘাড় ত্যাড়া। (কথা গুলো মনে মনে বলল আদিবা)

আদনান নিজের চেয়ারে গিয়ে বসে। আদনানের মেজাজ পুরো গরম হয়ে আছে। তৃপ্তিকে দেখার পর থেকে।

তৃপ্তি আবার আদনানের চেম্বারে আসে।

— আদনান তোমার কি একটু সময় হবে? কিছু কথা বলার ছিল।

— বলুন।

— এখানে না। আমি তোমার সাথে বাহিরে কথা বলতে চাই।

— আমার অনেক রোগী আছে। এখন সেই সময় নেই। যা বলার এখানে বলুন। যদি দরকার ছাড়া আজাইরা কথা বলার থাকে তাহলে যেতে পারেন।

— আদনান তুমি তো অনেক পরিবর্তন হয়ে গেলে। একটা সময় তুমি আমার সাথে কথা বলার জন্য পাগল ছিলে।

আদনান একটা হাসি দিয়ে বলল — আগের আদনান মারা গেছে অনেক আগেই ঐসব ভুলে যান। এই আদনানের সাথে আগের আদনানকে মেলাতে আসনেন না।

— এতোটাই পর হয়ে গেলাম? যে আমাকে একটু সময় দেওয়া যায়না?

— না যায়না। আপনি এমন কেউ নই যে আপনার জন্য আমার আলাদা সময় বের করতে হবে। আপনার স্বামী এখন ঠিক আছে ওনাকে নিয়ে চলে যেতে পারেন।

তৃপ্তি আর কিছু না বলে আদনানের চেম্বার থেকে বেরিয়ে চলে আসে। আর এতক্ষণ আদনান আর তৃপ্তির সব কথা আড়ালে দাঁড়িয়ে শুনেছে আদিবা। আদিবা এবার আদনানের কাছে গিয়ে বলল,

— স্যার আপনি ওনার সাথে এভাবে কথা না বললেও পারতেন।

— এখন কি কার সাথে কীভাবে কথা বলতে হবে তা তোমার থেকে শিখতে হবে? নেক্সট টাইম আমার কোনো কিছুতে কথা বলতে আসবেনা। যাও নিজের কাজ করো।

আদিবা বুঝতে পারে আদনান প্রচুর রেগে আছে। এর সাথে এখন কথা বলা যাবেনা।

আদিবা চেম্বার থেকে বের হয়ে বাহিরে যায়। তখন আদিবার চোখ পড়ে তৃপ্তির দিকে। আদিবা এবার তৃপ্তির কেবিনে যায়।সেখানে একটা বয়স্ক লোক ঘুমিয়ে আছে।

আদিবা,তৃপ্তিকে উদ্দেশ্য করে বলল — উনি আপনার বাবা নাকি?

— এই মেয়ে কীসব বলছ তুমি? উনি আমার হাসবেন্ড।

— ইশ সরি আপু। আসলে দেখে বোঝার উপায় নেই।

আদিবা কোনোরকমে নিজের হাসি বন্ধ রেখে কেবিন থেকে বাহিরে এসে হাসতে শুরু করে। আর হাসতে হাসতে আদনানের চেম্বারে যায়। আদিবার হাসি দেখে আদনান বলল।

— পাগল হলে নাকি? একা একা হাসছ?

— স্যার আপনার এক্স এর হাসবেন্ড কে দেখে আসলাম। আমি ভাবছি উনার বাবা।

এই কথা বলে আদিবা জোরে শব্দ করে হেসে উঠে।

আদনান আদিবাকে একটা ধমক দিতেই আদিবা চুপ হয়ে যায়।

— স্যার উনি আপনার মতো একটা কিউট মানুষকে ছেড়ে দিয়ে শেষে একটা বুড়োকে বিয়ে করল।

— চুপ করতি বলছিনা? এতো বেশি কথা না বলে নিজের কাজে যাও।

— ঠিক আছে।

এই কথা বলে আদিবা নিজের কাজ করতে শুরু করে। আদনান নিজের চেম্বারে বসে থাকে। কিছুক্ষণ পরে আদনান আদিবাকে সাথে নিয়ে বাসায় চলে যায়। রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে আদনান। হঠাৎ করে আদনানের ফোন বেজে উঠে। আদনান ফোন রিসিভ করতেই পরিচিত একটা কণ্ঠ শুনতে পায়। কণ্ঠটা শুনে আদনান চুপ হয়ে যায়।

চলবে?