এক মুঠো রোদ্দুর পর্ব-১০

0
67

#এক_মুঠো_রোদ্দুর
[দশম পর্ব ]
লেখক – শহীদ উল্লাহ সবুজ

এতো রাতে অচেনা নাম্বার থেকে পরিচিত কণ্ঠ শুনে আদনান চুপ হয়ে যায়।

— আদনান কি হলো কথা বলছ না কেন?

— আপনি এতো রাতে আমাকে ফোন দিলেন কেন?আর আমার নাম্বার কীভাবে ফেলেন?

— তুমি এতো বড় একজন ডাক্তার! আর তোমার নাম্বার ম্যানেজ করা কোনো ব্যাপার হলো? যাইহোক তোমাকে যে কারণে কল দিয়েছি।

— বলুন।

— তুমি আমাকে তুমি করে না বলে আপনি করে কেন বলছ? তুমি তো আগে আমাকে তুমি করেই বলতে।

— আগের কথা বাদ দেন। আপনি এখন অন্য কারোর স্ত্রী ভুলে যাবেন না।

— আমি এই লোকের সাথে আর সংসার কর‍তে পারছিনা।

— ওমা কেন? ওনার কি টাকার ভান্ডার ফুরিয়ে গিয়েছে?

— আদনান তুমি আমাকে ভুল বুঝলে। আমার কি করার ছিল? আমার বাবার অনেক টাকা ঋণ ছিল। আর এই লোক আমাদের সব ঋণ শোধ করে দেয়। আমার আর কোনো উপায় ছিলনা।

— আপনার কথা বলা শেষ হলে এবার কল কেটে দিতে পারেন।

— আদনান তোমাকে অনেক মিস করি।

আদনান একটা হাসি দিয়ে বলল,

— আমাকে নাকি আমার টাকাকে? যেই দেখলেন আমি একটা হাসপাতালের মালিক অমনি আপনার পুরনো প্রেম জেগে উঠেছে! যে একবার আমার মন থেকে উঠে যায় দ্বিতীয় বার সে আর জায়গা করে নিতে পারেনা। অনেক রাত হইছে এখন ঘুমাতে হবে।

এই কথা বলে আদনান কল কেটে ঘুমানোর চেষ্টা করে কিন্তু চোখে ঘুম আসছেনা। তাও সে ঘুমানোর চেষ্টা করে। কিছুক্ষণ পরে আদনানের চোখে ঘুম নেমে আসে।

দেখতে দেখতে সকাল হয়ে গেলো। আদিবা আদনানের রুমে এসে দেখে আদনান আজও ঘুমিয়ে আছে।

— এই হনুমান এতো ঘুমায় কীভাবে? কাছে যেতেও ভয় করে। স্যার! ও স্যার!

আদনান এবার তাকিয়ে দেখে আদিবা আদনানের থেকে কিছুটা দূরে। আদনান উঠে ফ্রেশ হতে চলে যায়। নাস্তা খেয়ে হাসপাতালে চলে যায়। এদিকে আদিবাকে সবাই ভালোবাসতেই শুরু করে। আর আদিবা এই পরিবারের একজন হয়ে উঠতে থাকে।

আদনান আজ একাই চলে যায় হাসপাতালে। আদিবাকে যেতে নিষেধ করে তাই আদিবা যায়নি। আদনান আজকে একটু তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরে আসে। আর সবাই এক সাথে লান্স করতে বসে। সবাই খাওয়া শুরু করবে এমন সময় আদনান আদিবাকে উদ্দেশ্য করে বলল,

— আদিবা কাল থেকে তোমার আর হাসপাতালে যেতে হবে না।

আদনানের কথা শুনে সবার খাওয়া অফ হয়ে গেলো। তখন আদিবা বলল,

— স্যার আমি আবার কি করছি?

— আমি বলছি তুমি কিছু করছ? কাল থেকে তুমি আবার কলেজে যাবে। আমি আজ সব ঠিক করে এসেছি। কাল থেকে তোমার ক্লাস। আমি সকালে হাসপাতালে যাওয়ার আগে তোমাকে কলেজে নামিয়ে দিয়ে আসব। আর দুপুরে নিয়ে আসব।

আদনানের কথা শুনে আদিবা অনেক খুশি হয়ে যায়। বাকিরাও খুশি হয়। তারপর সবাই খাওয়া দাওয়া শেষ করে যে যার রুমে চলে যায়।আদনান নিজের রুমে বসে আছে তখন আদিবা আদনানের রুমে যায়।

আদনান আদিবাকে দেখে দাঁড়িয়ে যায়। তখন দৌড়ে আদিবা আদনানকে জড়িয়ে ধরে। আদনান আদিবার এমন কান্ডে বেশ অবাক হয়।

— আপনাকে যে কি বলে ধন্যবাদ দেব সেই ভাষা আমার জানা নেই। অনেক অনেক ধন্যবাদ স্যার।

— আরে আমাকে ছাড়ো কি করছ এসব।

আদনানের কথা শুনে এবার আদিবা লজ্জা পেয়ে আদনানকে ছেড়ে দিয়ে সরি বলে।

— অনেক রাত হয়েছে এখন রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়।

— স্যার। আমি কখনও ভাবিনি আমি আবার কলেজে যাবো। আবার শুরু করব আমার পড়াশোনা। আপনার এই ঋণ আমি কখনও শোধ করতে পারবোনা স্যার।

— করতে হবে না। এখন যাও।

— ঠিক আছে।

এই কথা বলে আদবা বের হয়ে যায়। আদনান একটা মুচকি হাসি দিয়ে নিজের বেডে শুয়ে পড়ে। এদিকে আদিবা তো খুশিতে ঘুমাতেও পারছেনা। আদিবা জানালার গ্রীল ধরে বাহিরের দিকে তাকিয়ে থাকে। আর হালকা বাতাসে তার পুরো শরীর শীতল হতে থাকে। বাহিরের নিরব পরিবেশ খুব ভালোই লাগছে তার। যান্ত্রিক শহর টা এখন নিরব হয়ে আছে। রাস্তায় কোনো মানুষ নেই। জনমানবহীন শহর। কিছুক্ষণ বাহিরের পরিবেশ দেখে আদিবা নিজের খাটের উপরে এসে বসে। আর তখনই আআদনানকে জড়িয়ে ধরার অনুভূতি টা তার মনে পড়ে যায়। তখন সে অনেক লজ্জা পেয়ে যায়।

দেখতে দেখতে সকাল হয়ে যায়। আদিবা আগে থেকেই রেডি হয়ে বসে থাকে। আদনান ফ্রেশ হয়ে আসে। তারপর সবাই মিলে নাস্তা খেয়ে আদনান আদিবাকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে কলেজের উদ্দেশ্যে।

কিছুক্ষণের মধ্যেই কলেজে পৌছে যায়। আদনান আদিবাকে নিয়ে অফিস রুমে চলে যায়।

— স্যার আসবো?

— আরে আদনান যে। আসো।

— ধন্যবাদ স্যার। কাল যার কথা আপনাকে বলছিলাম এটা সে।

— ওহ আচ্ছা। আমি সব রেডি করে রেখেছি আগে থেকেই। এখন তোমাদের সিগনেচার লাগবে শুধুই।

তারপর আদিবার ভর্তির সব ব্যবস্থা করে আদনান। তারপর আদনান আদিবাকে নিয়ে বাহিরে আসে। আদনান আদিবাকে বলল,

— আদিবা নিজের লক্ষ্যে এগিয়ে যাও। মনে রাখবে তোমার স্বপ্ন তোমাকে পুরন করতে হবে। শুভ কামনা রইল তোমার জন্য।

এই কথা বলে আদনান চলে যায়। আদিবা অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে। তখন স্যার এসে আদিবাকে ক্লাসে নিয়ে যায়। আর আদিবাকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। এবার আদিবা একটা সিটে গিয়ে বসে। আদিবার পাশে একটা মেয়ে আছে।

— হাই আমি রিয়া।

— আমি আদিবা।

— ফ্রেন্ড!

— ওকে।

আদিবা এবার রিয়ার সাথে পরিচয় হয়ে নেয়। প্রথম দিবেই আদিবার সাথে রিয়ার ভালো একটা ফ্রেন্ডশিপ তৈরি হয়ে যায়। আদিবা মন দিয়ে ক্লাস করে। ক্লাস শেষ করে আদিবা আর রিয়া এক সাথে বাহিরে আসে। আদিবা কলেজের গেটের সামনে এসে আদনানকে খুজতে থাকে।

— কিরে আদিবা কাওকে কি খুজিস নাকি?

— হ্যাঁ।

— বাসায় যাবি না?

— যাবো স্যার আসলে।

— কোন স্যার?

— তুই চিনবি না, তুই চলে যা বাসায়।

— ঠিক আছে।

এই কথা বলে রিয়া চলে যায়। কিন্তু আদনান এখনও আসছেনা। আদিবা অনেক্ক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে। কিছুক্ষণ পরে আদনান গাড়ি নিয়ে আসে। আদিবা গাড়িতে উঠে চুপচাপ বসে থাকে।

— প্রথম ক্লাস কেমন হলো?

— ভালো।

— ওহ গুড। এই কলেজে আমিও পড়াশোনা করছি।

আদিবা চুপচাপ বসে আছে। আদনানও আর কোনো কথা বললনা। দু’জন বাসায় চলে গেলো। আদনান নিজের রুমে আসে। তখন রানী বেগম আদনানের রুমে আসে।

— আদনান আদিবার কি হইছে? আদিবা দেখি চুপচাপ নিজের রুমে বসে আছে। কথাও বলছেনা। তুই কি আদিবাকে কিছু বলছিস?

— নাহ। আমার সাথেও তো গাড়িতে তেমন একটা কথা বলেনি। কি হইছে তাও তো জানিনা।

— ওহ আচ্ছা।

এই কথা বলে রানী বেগম এবার আদিবার রুমে যায়। আদিবা এখনও মন খারাপ করে বসে আছে। রানী বেগম আদিবার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল — আদিবা তোমার কি হয়েছে? আজ কলেজের প্রথম দিন কাটালে আর তোমার মন খারাপ! কলেজে কোনো সমস্যা হয়েছে?

— না আন্টি।

— ওহ তাহলে আদনান কিছু বলছে?

— না।

— তাহলে মন খারাপ কেন? তোমাকে এভাবে দেখতে একদম ভালো লাগছেনা।

— জানেন আন্টি আমি কলেজ শেষ করে স্যারের জন্য দুই ঘন্টা বসে ছিলাম। উনি এতো লেট করে এসেছে আর আমাকে একটা সরিও বলেনি। আমি কি একটা সরি ডিজার্ভ করিনা?

রানী বেগম আদিবার কথা শুনে বলল — ওহ আচ্ছা এই ব্যাপার? আদনানকে আমি বকে দেব। ওর কতো বড় সাহস আমার মেয়েকে এতক্ষণ অপেক্ষা করিয়ে রেখে সরি বলেনি। আমি এর একটা বিহিত করবই।

আদিবা এবার রানী বেগমকে জড়িয়ে ধরে বলল,

— আন্টি আপনি অনেক ভালো। আপনার ছেলে খুব পোঁচা।

— আর মন খারাপ করে থাকা যাবেনা কিন্তু।

— ঠিক আছে। আপনি ঐ হনুমানকে আচ্ছা করে বকে দিয়েন৷

রানী বেগম হাসতে হাসতে বলল — ঠিক আছে মা। তুমি এবার ফ্রেশ হয়ে আসো।

এই কথা বলে রানী বেগম চলে গেলো আদনানের রুমে।

— আদনান তোর কি কোন কান্ড জ্ঞান নেই? তুই মেয়েটাকে দুই ঘন্টা অপেক্ষা করিয়ে রেখেছিস কেন?

— কখন?

— কলেজ শেষ হওয়ার পর।

— আসলে আমি ভুলে গিয়েছিলাম, তাই লেট হলো। এই জন্য রাগ করছে?

— হুম।

— ঠিক আছে।

— মেয়েটা খুব সহজ সরল তুই তো একটা সরি বলতে পারতি।

— আচ্ছা বলে দেব।

রানী বেগম চলে গেলো। আদনান আদিবার রুমে গিয়ে দেখে আদিবা বসে আছে৷ তখন আদনান আদিবার রুমে গিয়ে বলল,

— আদিবা।

— জ্বি স্যার আপনি?

— হুম। আসলে আমি ভুলে গিয়েছিলাম তোমার কথা তাই লেট হয়ে গিয়েছে।

— ঠিক আছে স্যার।

আদনান এবার আদিবার রুম থেকে বেরিয়ে নিজের রুমে যায়। তারপর যে যার মতো ঘুমিয়ে পড়ে। সকালে আদনান ঘুম থেকে ওয়াশরুমে যাওয়ার জন্য দরজা খুলতে গেলে দরজা ভিতর থেকে বন্ধ পাচ্ছে। এটা দেখে আদনানের মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। আদনান দরজায় শব্দ করে কিন্তু ভিতর থেকে কোনো শব্দ আসছেনা। আদনান এবার নিজের বিছানায় বসে। আর রাগে তার পুরো শরীরে আগুন ধরে যায়।

চলবে?