এক মুঠো রোদ্দুর পর্ব-১১

0
56

#এক_মুঠো_রোদ্দুর
[পর্ব – ১১]
লেখক – শহীদ উল্লাহ সবুজ

আদনান বসে বসে ভাবছে কে হতে পারে? ভিতর থেকে কোনো সাড়াশব্দ নেই। হঠাৎ করে দরজার খোলার শব্দ শুনে আদনান সামনের দিকে তাকিয়ে দেখে আদিবা বের হচ্ছে। এটা দেখে আদনানের রাগ আরো বেড়ে যায়।

রাগে আদনানের চোখ লাল হয়ে আছে। আদনান এবার আদিবার দিকে এগিয়ে গিয়ে আদিবার হাত শক্ত করে ধরে। এতো জোরে ধরে যে আদিবা হাতে ব্যাথা পাচ্ছে।

— স্যার লাগছে খুব। কি করছেন?

— হেই ইউ! কার অনুমতি নিয়ে আমার ওয়াশরুমে গিয়েছ?

— এহ! ওয়াশরুম ব্যবহার করতে আবার অনুমতি লাগে নাকি? এমন ভাবে বলছেন যেনো আমি আপনার বেড দখল করছি!

আদিবার কথা শুনে আদনানের রাগ ক্রমশ বেড়ে যায়।

— আমার এই ওয়াশরুম একান্তই আমার। এখানে তুমি আমার অনুমতি না নিয়ে কেন গেলে? এবারের জন্য ছেড়ে দিলাম। নেক্সট টাইম যেনো আর না দেখি।

— এতো রাগ করছেন কেন বুঝিনা। সামান্য একটা ওয়াশরুমে গিয়েছি তার জন্য এতো রাগ? যখন মনের ভিতরে চলে যাবো তখন কি করবেন?

— কিহ!

— কিছুনা। আমার ওয়াশরুমে একটু প্রব্লেম হইছে তাই আপনার এখানে আসছি।

আদনান আর কোনো কথা না বলে ওয়াশরুমের ভিতরে চলে যায়। আদিবা সেখানে দাঁড়িয়ে বিড়বিড় করে বলতে থাকে, — ওহে হনুমান মশাই, আজ তো ওয়াশরুম দখল করছি। তারপর এই রুম ও দখল করব। হিহিহি।

এই কথা বলে আদিবা নিজের রুমে গিয়ে রেডি হয়ে নেয় কলেজে যাওয়ার জন্য। কিছুক্ষণ পরে আদনান আদিবা বেরিয়ে যায়৷ আজ আর আদিবা মোবাইল নিতে ভুল করেনি। কারণ আদনানের যে ভুলো মন।

— স্যার আপনি এমন কেন?

— কেমন?

— এই-যে আপনার পাশে একটা সুন্দরী মেয়ে বসে আছে, আর আপনি চুপচাপ কোনো কথা বলেন না।

— কিহ! কে সুন্দরী? তুমি? আয়নায় নিজের চেহারা দেখছ কখনও? দেখতে তো পুরো তেতুল গাছের পেত্নীর মতো লাগে।

আদনানের কথা শুনে আদিবার রেগে যায়। রাগ করলে আদিবার সুন্দর মুখ লাল হয়ে যায়। আদিবা আড় চোখে আদিবার দিকে তাকায়। রাগের জন্য মেয়েটাকে খুব মিষ্টি লাগছে।

— আর আপনি কি? আপনি তো একটা হনুমান। রাক্ষস।

আদনান একটা মুচকি হাসি দিয়ে গাড়ি ড্রাইভিং করছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই আদিবার কলেজ চলে আসে। আদিবা গাড়ি থেকে নেমে যায়। যখন আদিবা পা বাড়াবে তখন আদনান আদিবার নাম ধরে ডাকে। আদিবা সাথে সাথে দাঁড়িয়ে যায়।

— আদিবা সরি।

সরি কথাটা শুনে আদিবা অবাক হয়ে প্রশ্ন করে,

— সরি কেন?

আদনান আর কোনো উত্তর না দিয়ে গাড়ি নিয়ে চলে যায়। আদিবা সেখানে দাঁড়িয়ে আদনানের গাড়ির দিকে তাকিয়ে আছে।

— আজব একটা মানুষ! কখন কোন মুডে থাকে বুঝার উপায় নেই।

এসব ভাবছে তখনই আদিবার কাধের উপর কারোর হাতের স্পর্শ পড়তেই আদিবা চমকে উঠে। আর সে তাকিয়ে দেখে এটা রিয়া।

— কিরে এখানে দাঁড়িয়ে কি ভাবছিস? অনেক্ক্ষণ ধরে খেয়াল করলাম।

— কিছুনা ক্লাসে চল।

এবার দু’জনে কথা বলতে বলতে ক্লাসে চলে গেলো। যথাসময়ে ক্লাস শুরু হয়ে যায়। আদিবা খুব মনযোগ দিয়েই ক্লাস করে। কারণ তার স্বপ্ন যে তাকে পুরোন করতে হবে। দেখতে দেখতে টিপিন টাইম হয়ে যায়। রিয়া আদিবাকে বলল,

— চল কিছু খেয়ে আসি। খিদে পেয়েছে খুব।

— আচ্ছা চল।

এবার দু’জনে কেন্টিনের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। তখনই কেউ আদিবার ওড়না টেনে ধরে। আদিবা কোনোরকমে নিজের ওড়না টা ধরে তাকিয়ে দেখে কে তার ওড়না টেনে ধরে। আদিবা দেখে একটা ছেলের হাতে তার ওড়না।

— এটা কি ধরনের অসভ্যতা? আপনি আমার ওড়না টেনে ধরছেন কেন? ছাড়ুন তাড়াতাড়ি।

ছেলেটা এবার আদিবার কাছে চলে আসে।

— কলেজে নতুন নাকি?

— হ্যাঁ।

— সেই জন্যই। যাক তোমাকে আমার পছন্দ হইছে।

— আপনি আনার ওড়না ছাড়ুন।

— উফ বেবি তুমি রাগ করলে তো তোমাকে সেই রকম লাগে।

— ওড়না ছাড়িবেন নাকি লোকজন জোড় করব?

ছেলেটা একটা হাসি দিয়ে বলল — আপনার ডাকে কেউ আসবেনা।

রিয়া ছেলেটার কাছে এগিয়ে এসে বলল — রনি ভাইয়া প্লিজ আদিবাকে ছেড়ে দিন।

— তাহলে এই সুন্দরীর নাম আদিবা? উফফ ফিগার টা যা লাগছেনা পুরো মাখন।

এই কথা বলে রনি এবার আদিবার কোমরে হাত দেয়। তখন ঠাস করে আদিবা রনির গালে ঠাস করে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয়। থাপ্পড় খেয়ে রনি রেগে গিয়ে আদিবার ওড়না টা একটা টান মেরে নিজের কাছে নিয়ে নেয়। আদিবা নিজের হাত দিয়ে বুক ডেকে নেয়। পুরো কলেজের মানুষ আদিবার দিকে তাকিয়ে আছে। তখন কলেজের শিক্ষকে এগিয়ে আসতে দেখে রনি এক দৌড়ে পালিয়ে যায়। এদিকে মাথা নিচু করে অঝোরে কান্না করছে আদিবা।

রিয়া আদিবার কাছে এসে বলল — এই ছেলেটা খুব খারাপ।

আদিবা এখনও মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে চোখের পানি ফেলছে। আদিবা এবার ফোন বের করে আদনানকে কল দেয়। আদনানও ফোন রিসিভ করে।

— আদিবা কলেজ কি শেষ!

— নাহ স্যার।

আদিবার কান্না মাখা কণ্ঠ শুনে আদনান বলল,

— আদিবা কি হয়েছে তোমার? তোমার কণ্ঠ এমন শোনাচ্ছে কেন?

আদিবা কিছু না বলে কান্না করতে শুরু করে। আদিবার কান্নার শব্দ শুনে আদনান ফোন কেটে দিয়ে কলেজের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে। আর খুব দ্রুত গতিতে গাড়ি ড্রাইভিং করতে থাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই আদনান কলেজে চলে আসে। আর এসেই দেখে আদিবা একটা যায়গায় চুপটি করে বসে আছে। আর আদিবার পাশে বসে আছে আরেকটা মেয়ে। (মানে রিয়া)

আদনান এবার আদিবার কাছে এসে বলল — আদিবা কি হয়েছে তোমার?

আদনানের কণ্ঠ শুনে আদিবা চোখ তুলে তাকায়। আদনান লক্ষ্য করে আদিবার গায়ে ওড়না নেই। আদনান তাড়াতাড়ি করে নিজের ব্লেজার খুলে আদিবার গায়ে দিয়ে দেয়।

— আদিবা কি হয়েছে?

তখন রিয়া আদনানের কাছে এসে সব বলল। কথা গুলো শুনে আদনানের রাগ উঠে যায়। তখন আদনান আদিবার হাত ধরে বলল — আমার সাথে এসো।

— স্যার আমি বাসায় যাবো।

— আগে ওদের একটা ব্যবস্থা করতে হবে।

আদনান রিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলল — রনিকে কোথায় পাবো বলতে পারো?

— কলেজের পিছনে ওদের আড্ডা।

এই-বার আদনান আদিবাকে সঙ্গে করে নিয়ে যায়। আদিবা আদনানের রাগী চেহারার দিকে তাকিয়ে আছে। এতো রাগ করতে আদিবা আজ প্রথম দেঝছে। যদিও আদনান এমনিতেই রাগী। তবে আজ সে অনেক বেশি রেগে আছে। আদনান কলেজের পিছনে গিয়ে দেখে একটা ছেলে সিগারেট খাচ্ছে। আদিবা আদনানকে বলল,

— স্যার ঐ ছেলেটা।

আদনান আর দাঁড়িয়ে না থেকে পিছন থেকে ছেলেটার কলার টেনে ধরে। আর তখন ছেলেটা পিছনে ফিরে আপনাকে দেখে বলল – কেরে তুই? তোর তো সাহস কোমনা আমার কলারে হাত দিয়েছিস।

— আদনান সাথে সাথে ছেলেটার নাক বরাবর একটা মেরে দেয়। সাথে সাথে নাক দিয়ে রক্ত বের হতে শুরু করে। আদনান এবার রনিকে টেনেহিঁচড়ে আদিবার সামনে নিয়ে যায়।

— মেয়েদের শরীরে হাত দেওয়ার খুব ইচ্ছে তাইনা?

এই কথা বলে আদনান রানি হাত মোচড় দিয়ে ধরে। আর রনি চিৎকার করতে শুরু করে। এমন ভাবে ধরছে মনে হচ্ছে হাত এক্ষনি ভেঙে যাবে।

তখন আদিবা আদনানকে বলল — স্যার ছেড়ে দিন।

আদনান এবার রনিকে আদিবার পায়ের সামনে রেখে রনিকে ক্ষমা চাইতে বলে। আদনানের ভয়ে রনি আদিবার কাছে ক্ষমা চায়। এবার দুজন আবার কলেজের মাঠে ফিরে আসে।

— তোমাকে আজ আর ক্লাস করতে হবে না। বাসায় চলো।

আদিবাও যাওয়ার জন্য রাজি হয়। তারপর দু’জন বাসায় চলে যায়। আদনান বাসার দরজার কলিং বেলে চাপ দিতেই রানী বেগম এসে দরজা খুলে দেয়। আদিবার গায়ে আদনানের জ্যাকেট, আর এতো তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরে আসতে দেখে রানী বেগম বলল,

— কিরে আজ এতো তাড়াতাড়ি? আদিবার ক্লাস ছিলনা না নাকি?

আদনান কোনো কথা না বলে নিজের রুমে চলে গেলো। কিন্তু আদিবা এখনও দাঁড়িয়ে আছে। রানী বেগম আদিবাকে বলল,

— আদিবা কলেজে কি কোনো সমস্যা হইছে?

আদিবা রানী বেগমকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে শুরু করে।

— আরে কান্না করছ কেন? কি হইছে আমাকে বলো।

এবার আদিবা সব কিছুই বলল। রানী বেগম আদিবাকে শান্তনা দিয়ে নিজের রুমে পাঠিয়ে দেয়। আদনান নিজের রুমে গিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখতে থাকে। আদনানের জ্যাকেট তার গায়ে এখনও আছে। এবার আদিবা জ্যাকেট টা খুলে জ্যাকেটে একটা চুমু খায় আর জ্যাকেট টা বুকে জড়িয়ে নেয়।

আদিবা আদনানের প্রেমে পাকাপোক্ত ভাবেই পড়ে গিয়েছে। কিন্তু আদনান যে রাগী আদিবার সাহস নেই আদনান কে কিছু বলার। আদিবা মনে মনে ঠিক করে যাই হয়ে যাক আজ সে আপনাকে তার মনের কথা বলবেই। সাহস করে সে আদনানের রুমের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে।

চলবে?