এক মুঠো রোদ্দুর পর্ব-১২

0
48

#এক_মুঠো_রোদ্দুর
[পর্ব – ১২]
লেখক – শহীদ উল্লাহ সবুজ

আদিবা মনে সাহস নিয়ে আদনানের রুমের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আদিবা মনে মনে ঠিক করে যাই হয়ে যাক সে আজ আআদনানকে তার মনের কথা বলবেই। আদিবা আদনানের রুমের সামনে গিয়ে দেখে আদনান বসে আছে। আদনানের দিকে তাকাতেই ভয়ে আদিবার গলা শুখিয়ে যায়।

আদনান সামনের দিকে তাকাতেই দেখে আদিবা তার রুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।

— আদিবা তুমি এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন? কিছু বলবে?

আদনানের বলা কথা গুলো আদিবার কান অব্দি পৌছায়নি। আদিবা অন্যমনস্ক হয়ে ভেবেই যাচ্ছে।
আদনান উঠে এবার আদিবার কাছে চলে গেলো।

— কি সমস্যা?

— না না কোনো সমস্যা নেই।

— তো এখানে দাঁড়িয়ে ছিলে কেন?

— আসলে স্যার আপনাকে একটা কথা বলার ছিল।

— কি কথা?

— আসলে স্যার কীভাবে যে বলি। আমার খুব ভয় করছে।

— তাড়াতাড়ি বললে বলো। আর না হলে এখান থেকে যাও।

— আচ্ছা বলছি, আসলে স্যার, না মেনে! ইয়ে মানে!

আদনান এবার রাগী কণ্ঠে বলল — এতো মানে মানে না করে সোজা ভাবে বলো।

— আমি আপনার জ্যাকেট দিতে আসছি। আর আপনাকে ধন্যবাদ।

এক নিশ্বাসে কথাটা বলে আদিবা দৌড় দিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো। রুমে গিয়ে এক গ্লাস পানি খায়। ভয়ে এতক্ষণ আদিবার হাতপা কাঁপা-কাঁপি করছিল।

দেখতে দেখতে রাত হয়ে যায়। আদনান ছাদের উপরে গিয়ে বাহিরের পরিবেশ উপভোগ করছে। আদিবাও ছাদের উপরে আসে। আজ আকাশের চাঁদটা খুব সুন্দর। আদিবা আদনানের পাশে এসে দাঁড়ায়।

— স্যার আজ আকাশে খুব সুন্দর চাঁদ উঠেছে তাইনা?

আদনান আদিবার দিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নেয়।

— আপনি চাঁদ দেখতে পছন্দ করেন? আগে তো জানতাম না।

আদনান একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলল — এমন অনেক কিছুই আছে যেটা তোমার অজানা। ঐ যে দূরের আকাশে যে চাঁদ দেখছো আমিও ঐ চাঁদের মতো একা।

— আপনি একা মানে?

— মানেটা খুব সিম্পল। আমি মাঝে মাঝে খুব একা হয়ে যাই। আশেপাশে কতো মানুষ তাও নিজেকে খুব একা মনে হয়। মাঝে ভাবী যদি আমার নিজেস্য একটা মানুষ থাকতো। আর সেই মানুষটা একান্তই আমার হতো!

— কেউ তো আছে সে আপনার পাশে থাকতে চায়। কেউতো আছে যে আপনাকে সে অনেক বেশি ভালোবাসে।

— ভালোবাসা!

— জ্বি স্যার।

— কে সে?

— আশেপাশে তাকিয়ে দেখুন। ঠিক বুঝতে পারবেন।

— আমার আশেপাশে তুমি ছাড়া তো কেউ নেই।

— আপনার পাশে আমি কাওকে থাকতেও দিবনা। স্যার আমি আপনাকে অনেক বেশি ভালোবাসি। কিন্তু তা কখনও আমি বলার সাহস পাইনি। আজ কেন জানি মনে হচ্ছে আপনাকে কথা গুলো বলা দরকার। স্যার আমাকে কি আপনার একাকিত্বের সঙ্গী করবেন? আপনার মনে আমাকে একটু যায়গা দিবেন?

— আবার একা করে দিয়ে চলে যাবে না তো?

— কখনও যাবোনা স্যার। আমাকে আপনার বাহুডোরে একটু যায়গা দিন। আমি সারাজীবন আপনার বুকে মাথা রেখে কাটিয়ে দিতে চাই।

আদনান এবার আদিবার খুব কাছে চলে যায়। আর আদিবার কপালে একটা চুমু খায়। আদিবা আদনানকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। আদনান যখনই আদিবার ঠোঁট স্পর্শ করতে যাবে তখনই আদিবার ফোন বেজে ওঠে।

সাথে সাথে আদিবার ঘুম ভেঙে যায়। আদিবা ঘুম থেকে উঠে বুঝতে পারে এতক্ষণ যা হয়েছে তা স্বপ্ন ছিল। ইশ আরেকটু হলে তো। এটা ভাবতেই আদিবা লজ্জা পেয়ে যায়। এদিকে আদিবার ফোন বেজেই যাচ্ছে তার কোনো খেয়াল নেই। ফোন বাজতে বাজতে কেটে যায়। আবার কল আসে। এবার আদিবা কল রিসিভ করে।

— কিরে এই সময় কল দিলি? তোর জন্য আমার কতো সুন্দর স্বপ্নটা ভেঙে গিয়েছে।

— তুই স্বপ্ন নিয়ে পড়ে আছিস আর এদিকে আমার ঘুম হাওয়া হয়ে গিয়েছে।

— কি বলিস? কি হইছে আবার তোর?

— আচ্ছা থাক কাল বলব কলেজে আসিস।

— এই কথা বলার জন্য কল দিলি। দেখবি তোর কোনোদিন বিয়ে হবেনা।

— ঠিক আছে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখ। রাখলাম আমি।

এই কথা বলে রিয়া ফোন কেটে দেয়। আদিবা ফোন রেখে দিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করে। কিন্তু তার চোখে ঘুম নেই। বার বার স্বপ্ন টা তার চোখের উপরে ভাসছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই আদিবার চোখে আবার ঘুম নেমে আসে। সকাল সকাল আদিবার ঘুম ভেঙে যায়। ঘুম থেকে উঠে সবার জন্য নিজ হাতে রান্না করতে শুরু। রান্না শেষ করে আদিবা রেডি হয়ে নেই কলেজে যাওয়ার জন্য। কিছুক্ষণ পরে আদনান রেডি হয়ে নাস্তা করতে আসে। খাওয়া দাওয়া শেষ করে আদিবা আর আদনান বেরিয়ে পড়ে। আদিবা আদনানের দিকে তাকিয়ে বার বার মুচকি মুচকি হাসে।

— পা*গল হলে নাকি?

— মানে?

— একা একা হাসছ যে?

— না মানে একটা কথা মনে পড়ছে তাই।

— ওহ আচ্ছা। কলেজে আর কোনো সমস্যা হলে আমাকে জানাবে আগে।

— ঠিক আছে।

কিছুক্ষণের মধ্যেই আদিবার কলেজ চলে আসে। তারপর আদিবা গাড়ি থেকে নেমে দেখে রিয়া হা হয়ে তাকিয়ে আছে আদনানের দিকে। আদিবা রিয়ার কাছে চলে যায়।

— কিরে আজ এতো তাড়াতাড়ি এলি যে তুই? আর ক্লাসে না গিয়ে এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কি জন্য?

— তোর জন্য।

— ওহ আচ্ছা, এখন ক্লাসে চল তাহলে।

— দোস্ত ক্লাসে পরে। আগে আমার কথা শুন তোর সাথে আমার কিছু কথা আছে।

— আচ্ছা বল।

— একটু আগে যে ছেলেটা আসছে তোকে নিয়ে। তার ব্যপারে কিছু জানার ছিল।

— আদনান স্যারের কথা বলছিস?

— হ্যাঁ। আমি তো ছেলেটার প্রেমে পড়ে গিয়েছি।

আদিবা রিয়ার কথা শুনে অবাক হয়।

— শালী ওটা তোর ফিউচার দুলাভাই। আর তুই দুলাভাইয়ের উপরে ক্রাশ খাইলি।

— দুলাভাই মানে?

রিয়াকে আদিবা এবার তার মনের কথা বলল। রিয়া কথা গুলো শুনে বলল — প্রেম করার আগেই ছ্যাঁকা!

— হিহিহি। চল ক্লাসে যাই এবার।

— তবে যাই বলিস ছেলেটা কিন্তু জোস।

— চল তো। দুলাভাইয়ের দিকে এভাবে নজর দিতে নেই।

এবার দু’জনে ক্লাসে চলে গেলো। ভালোভাবে আজকের ক্লাস শেষ হয়। আদিবা বাহিরে এসে অবাক হয়ে যায়। কারণ আজ আদনান আগে থেকেই এসে অপেক্ষা করছে আদিবার জন্য। আদিবা তড়িঘড়ি করে আদনানের দিকে এগিয়ে আসে।

— স্যার কখন আসলেন?

— কিছুক্ষণ আগে। গাড়িতে উঠো। তোমাকে নিয়ে শপিংয়ে যাবো।

— আমাকে নিয়ে কেন?

— বেশি কথা না বলে চলো।

এবার আদনান আদিবাকে নিয়ে একটা শপিংমলের সামনে গিয়ে গাড়ি ব্রেক করে। তারপর দু’জন শপিংমলের ভিতরে যায়। আদনান পছন্দ করে কয়েকটি ড্রেস আদিবার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,

— পছন্দ হয় কিনা দেখো!

— খুব সুন্দর ড্রেস গুলো কার জন্য নিবেন?

আদনান কোনো উত্তর না দিয়ে ড্রেস গুলোর দাম দিয়ে আদিবাকে নিয়ে বাহিরে আসে। আদিবা ফুচকা দেখে আর লোভ সামলাতে না পেরে আদনানকে বলল — স্যার ফুচকা খাবো।

আদনান আদিবাকে নিয়ে ফুচকা দোকানের কাছে চলে যায়। আর এক প্লেট ফুচকা দিতে বলে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ফুচকা চলে আসে আর আদিবা আশেপাশে না তাকিয়ে খাওয়া শুরু করে। এদিকে আদনান যে আদিবার দিকে তাকিয়ে আছে সে দিকে তার কোনো খেয়াল নেই। আদিবার খোলা চুল গুলো বার বার আদিবার মুখের সামনে চলে আসে আর আসিবা নিজের হাত দিয়ে সরিয়ে আবার ফুচকা খেতে থাকে৷ আর আদনান আনমনে আদিবার দিকেই তাকিয়ে আছে। ইতিমধ্যে আদিবার খাওয়া শেষ।

— স্যার খাওয়া শেষ।

আদনান এবার বিল মিটিয়ে দিয়ে আদিবাকে নিয়ে বাসায় চলে আসে। বাসার সামনে এসে আদনান ড্রেস গুলো আদিবার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল — এই গুলো তোমার জন্য।

আদিবা খুশিমনে এগুলো নিয়ে বাসায় চলে গেলো। আদনান আর বাসায় গেলো না। সে হাসপাতালে যাবে বলে আদিবার থেকে বিদায় নিয়ে চলে যায়।

দেখতে দেখতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। আদিবা নিজের রুমে বসে আছে। তখন রানী বেগম আদিবার রুমে আসে।

— আন্টি আপনি এসময়? কিছু বলবেন কি?

— হ্যাঁ আদনান তোমার জন্য যে ড্রেস গুলো এনেছে সেগুলো আমাকে দাও তো।

আদিবা সব ড্রেস রানী বেগমের সামনে নিয়ে আসে। ওখান থেকে রানী বেগম একটা জামা পছন্দ করে আদিবাকে বলল।

— আদিবা ফ্রেশ হয়ে জামা এটা পড়ে নাও। আজ আমি তোমাকে নিজের হাতে সাজিয়ে দেব৷

রানী বেগমের এমন কথায় আদিবা অবাক হলো! হঠাৎ করে রানী বেগম আদিবাকে সাজিয়ে দেওয়ার কথা বলছে! তাও এই সময়?

— আন্টি এখন?

— হুম। যাও ফ্রেশ হয়ে আসো। আমি অপেক্ষা করছি তোমার জন্য।

— কিন্তু আন্টি হঠাৎ করে আমাকে সাজাবেন কেন?

— এতো প্রশ্ন না করে যাও ফ্রেশ হয়ে আসো আগে।

আদিবা কিছুই বুঝতে পারছেনা। আজ তার সাথে কি হচ্ছে! আদনান শপিং করে দিল আবার রানী বেগম সাজিয়ে দেওয়ার কথা বলছে! আদিবার মাথায় ঢুকছেনা। তার কাছে সব কিছুই এলোমেলো মনে হচ্ছে।

চলবে?