এক মুঠো রোদ্দুর পর্ব-১৩

0
61

#এক_মুঠো_রোদ্দুর
[পর্ব – ১৩]
লেখক – শহীদ উল্লাহ সবুজ

হঠাৎ করে সবার এমন আচরণ আদিবার কাছে সন্দেহ জনক মনে হচ্ছে। আদিবা বুঝতে পারছেনা কি হতে চলছে তার সাথে। আদিবা সব চিন্তা বাদ দিয়ে ওয়াশরুমের ভিতরে চলে যায়। আর সে কিছুক্ষণের মধ্যেই ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে আসে। আদিবা বের হয়ে দেখে রানী বেগম এখনও আদিবার রুমে বসে আছে। আদিবা বের হতেই রানী বেগম আদিবাকে নিয়ে আয়নার সামনে বসিয়ে দেয়। আর নিজের মতো করে আদিবাকে সাজাতে থাকে। আদিবা নিজের চোখ বন্ধ করে রাখে। রানী বেগম আদিবাকে সুন্দর করে সাজিয়ে দিয়ে এবার আদিবাকে চোখ খুলতে বলে। আদিবা চোখ খুলে নিজেকে দেখে নিজেই চমকে উঠে। এতো সুন্দর করে কেউ কখনও আদিবাকে সাজিয়ে দেয়নি। সাজ টা নরমাল হলেও আদিবাকে খুব সুন্দর লাগছে। ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক, কপালে একটা কালো টিপ, চোখে কাজল। মুখে হালকা (আটা ময়দা) আটা ময়দা বললে মেয়েরা আবার রাগ করবে। মুখে হালকা মেকাপ।

এবার রানী বেগম আদিবার সামনে একটা গয়নার বক্স বের করে। আদিবা গয়না গুলো দেখে বলল।

— আন্টি এগুলো আবার কার জন্য?

— তোমার জন্য।

— আমার এসব লাগবেনা।

— তোমার কান আর গলা খালি বলে তোমার মধ্যে কিছু একটা মিসিং হয়ে আছে। কথা না বলে আমাকে আমার কাজ করতে দাও।

আদিবা আর কিছু বলল না। রানী বেগম আদিবাকে এবার সব পড়িয়ে দেয়। এখন আদিবাকে যা লাগছেনা! আমি নিজেই ক্রাশ খাইছি। কিন্তু যেখানে আদনান আছে সেখানে সবুজের কোনো বেল নাই। হিহিহি। গল্পের মধ্যে আবার নিজেকে নিয়ে আসলাম কিছু মনে করবেন না। আসলে আদিবার রূপের বর্ননা দিতে গিয়ে ক্রাশ খেয়েছি।

যাইহোক গল্পে ফিরে আসি।

আদিবার সাজ শেষ হয়ে যায়। ঘড়িতে তখন রাত এগারোটা বাজে। রানী বেগম আদিবাকে বলল।

— তুমি এখানে বসো। আমি একটু পরে আসছি।

এই কথা বলে রানী বেগম আপনাকে কল দেয়। আদনানের সাথে কথা বলে রানী বেগম কল কেটে দেয়।

এদিকে আদিবা এমন কর্মকান্ডে সে পুরো থ হয়ে আছে। তার মাথায় কোনো কিছুই আসছেনা। এসময় তাকে কেন সাজানো হলো? আদিবা যেনো আর কিছুই ভাবতে পারছেনা। সে সব চিন্তা ছেড়ে দিয়েছে। অনেক্ক্ষণ হয়ে যায় কিন্তু রানী বেগম এখনও আসছেনা। এতো ভারী-ভারী গহনা পড়ে থাকতে তার খুব অস্থির লাগছে।

আদিবার অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে রানী বেগম আদিবার কাছে আসে।

— আন্টি কি হচ্ছে এসব আমাকে একটু বলবেন প্লিজ?

— একটু পরে সব বুঝতে পারবে এখন আমার সাথে চলো।

— এখন আবার কোথায় যাবো?

— ওয়েট আগে তোমার চোখ বেধে দেই।

এই কথা বলে রানী বেগম আদিবার চোখে কালো কাপড় বেধে দেয়। এবার রানী বেগম আদিবাকে নিয়ে হাঁটতে শুরু করে। আদিবা অনুভব করতে পারে তাকে সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠানো হচ্ছে। রানী বেগম আদিবাকে নিয়ে ছাদের উপরে চলে আসে। ছাদের উপরে এনে আদিবার চোখ থেকে কালো কাপড় সরিয়ে দিতেই আদিবার কানে বেশে আসে।

— হ্যাপি বার্থডে টু ইউ আদিবা।

সাথে সাথে শুরু হয় আলোর ঝমকানি। আদিবা তাকিয়ে দেখে লাইটিং করে খুব সুন্দর ভাবে আদিবার নাম লেখা। আর এখানে আদনানের হাসপাতালের সবাই উপস্থিত রয়েছে। সবাই আদিবাকে উইশ করছে।
এসব দেখে আদিবা পুরো থ হয়ে গিয়েছে। আদিবা যেনো কিছুতেই নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছেনা। আর সব থেকে বড় কথা আদিবা ভুলেই গিয়েছে আজ আদিবার জন্মদিন।

রানী বেগম আদিবাকে বলল — শুভ জন্মদিন আদিবা।

আদিবা কিছু না বলে রানী বেগমকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয়।

— আরে বোকা মেয়ে কান্না করছ কেন? জন্মদিনে কেউ কান্না করে? আজ তো তোমার খুশির দিন। আমি দোয়া করি সারাজীবন সুখে থেকো। সুন্দর হয়ে উঠক তোমার আগামী দিন গুলো। আর পুরোন হোক তোমার সব স্বপ্ন।

এবার একে একে ফুল নিয়ে এসে আদিবাকে উইশ করে। আদিবা সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে ফুল গুলো গ্রহণ করে। অন্য দিকে কেউ একজন যে আদিবাকে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে সেদিকে তার খেয়াল নেই। আদনান তো আদিবাকে দেখেই ফিদা হয়ে গিয়েছে। চোখ যেনো কিছুতেই সরাতে পারছেনা।

এবার সবার শেষে আদনান আদিবার কাছে এসে বলল — শুভ জন্মদিন আদিবা। এভাবেই বার বার ফিরে আসুক তোমার জন্মদিন। নিজের লক্ষ্যে এগিয়ে যাও।

— ধন্যবাদ স্যার। একটা কথা!

— চলো আগে কেক কাটি।

এই কথা বলে আদনান আদিবার হাত ধরে নিয়ে যায়। আদিবা আদনানের দিকে তাকিয়ে থাকে। এবার আদনান একটা কাপড় সরাতেই আদিবা দেখতে পায় অনেক বড় একটা কেক। আর কেকের উপরে আদিবার নাম। এগুলো দেখে আদিবা অবাকের চরম পর্যায়ে পৌছে যায়। আদিবা কখনো ভাবতেও পারিনি। তার জন্মদিন কেউ এভাবে সেলিব্রেট করবে। এবার আদিবার এক পাশে রানী বেগম আরেক পাশে আরিয়ান চৌধুরী এসে দাঁড়ায়। রানী বেগম সাথে আদনান দাঁড়িয়ে আছে। এবার আদিবা কেক কেটে সবাইকে খাওয়াতে শুরু করে। আদিবা যখন আদনানকে খাওয়াতে যাবে তখন আদিবার হাত কাপতে শুরু করে কোনো এক অজানা ভয়ে। আদনান চামুচ টা ধরে নিজেই খেয়ে নেয় আর আদিবাকেও খাইয়ে দেয়।

রানী বেগম আদিবাকে বলল — সারপ্রাইজ টা কেমন হয়েছে মা?

— এটা আমার জীবনের বেস্ট সারপ্রাইজ হয়ে থেকে যাবে সারাজীবন। অনেক ধন্যবাদ আন্টি।

— আমাকে ধন্যবাদ দিচ্ছ কেন? এখানে সব কিছুর আয়োজন আদনান করছে। আমি তো জানতাম ও না তোমার যে আজ জন্মদিন। কাল রাতে আদনান আমাকে বলল।

রানী বেগমের কথা শুনে আদিবা এবার আদনানের দিকে তাকায়। আদনান অন্যদের সাথে কথা বলছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই খাওয়া দাওয়া শেষ করে সবাই চলে যায়। আদনান এখনও ছাদের উপরে আছে। আর আদিবাও সেখানে আছে।

আদিবা এবার আদনানের দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল।

— স্যার, আপনাকে ধন্যবাদ দেওয়ার মতো ভাষা আমার জানা নেই। কিন্তু আপনি আজ আমার জন্য যা করছেন সারাজীবন মনে থাকবে।

— আরে এটা তেমন কিছু নই। এটা তোমার জন্য আমার পক্ষ থেকে সামান্য একটা উপহার।

— আপনার এই উপহারের কথা আমি কখনও ভুলতে পারবোনা। আমি তো বিশ্বাস করতেও পারছিনা। এভাবে কখনও আমার জন্মদিন পালন করা হয়নি।

আদনান কোনো কথা বললনা। আদিবা আবার বলল,

— স্যার আপনি জানেন কীভাবে আজ আমার জন্মদিন?

— আমি তোমার সার্টিফিকেট থেকেই জেনেছি। যাইহোক রাত অনেক হয়েছে এখন ঘুমিয়ে পড়ো।

এই কথা বলে শেষ করার আগেই আদিবা আচমকা আদনানকে জড়িয়ে ধরে। আদনান তো হতবাক হয়ে যায়।

— আদিবা কি করছ ছেড়ে দাও।

আদনানের কথা শুনে আদিবার হুশ ফিরে আসে। আর আদনানকে ছেড়ে দিয়ে লজ্জা পেয়ে এক দৌড়ে নিজের রুমে চলে যায়। আদিবার এমন পাগলামি দেখে আদনান মুচকি একটা হাসি দেয়। তারপর সেও নিজের রুমে চলে যায়। আদিবা নিজের রুমে গিয়ে গহনা গুলো খুলতে থাকে। আদনানকে জড়িয়ে ধরার অনুভূতিটা চোখের সামনে বেশে উঠতেই আদিবা লজ্জায় নিজের মুখ ঢেকে নেয়। কিছুক্ষণ পরে আদিবা ঘুমিয়ে পড়ে।

দেখতে দেখতে অনেক দিন কেটে যায়। আদনান আর আদিবার সম্পর্ক টা অন্য রকম হতে শুরু করে। দু’জন দু’জনকে পছন্দ করে কিন্তু সেই কথা কেউ কাওকে এখনও বলতে পারেনা। আদিবার যেকোনো সমস্যায় আদনান এগিয়ে আসে। দেখতে দেখতে আদিবার পরিক্ষার সময় এগিয়ে আসে। আদিবা পড়াশোনায় ফোকাস বাড়াতে থাকে।

আজ আদিবার প্রথম পরিক্ষা। আদিবা রানী বেগম আর আরিয়ান চৌধুরীকে সালাম করে। সবাই আদিবাকে ভালো কিছু করার জন্য দোয়া করে।
আদনান আদিবাকে নিয়ে কলেজে আসে। গাড়ি থেকে নেমে আদিবা যখন চলে যাবে তখন আদনান আদিবাকে বলে,

— আদিবা, মনে রাখবে এটা সামান্য একটা পরিক্ষা না। এটাই তোমার স্বপ্ন। তুমি পরিক্ষা দিতে নয়। নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে যাচ্ছো। আমি জানি তুমি ভালো কিছু করতে পারবে। তোমার জন্য শুভ কামনা রইল।

— ধন্যবাদ স্যার। দোয়া করবেন। আমি যেনো আমার স্বপ্নকে পূরণ করতে পারি।

— বেস্ট অফ লাক।

এই কথা বলে আদনান গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চলে যায়। আদিবা ও পরিক্ষার হলে চলে যায়। আর সে ভালো ভাবে এক্সাম শেষ করে। এভাবে রাত দিন পড়াশোনা করে এক্সাম দিতে থাকে। আদনান ও আদিবাকে বুঝিয়ে দেয় যেগুলো আদিবার বুঝতে অসুবিধা হয়। আদিবার সব এক্সাম শেষ হয়ে যায়। পরিক্ষা ভালো হলেও আদিবার মনে কেমন একটা ভয় কাজ করছে। সে কি পারবে তার স্বপ্ন পূরণ করতে, নাকি এখানেই শেষ হয়ে যাবে তার দেখা স্বপ্ন! তার কি বড় একজন ডাক্তার হয়ে উঠার স্বপ্ন পূরণ হবে? নাকি এখানেই শেষ হয়ে যাবে!

আদিবা ছাদের উপরে দাঁড়িয়ে এসব ভাবছে। তখন আদনান ও ছাদের উপরে আসে।

— আদিবা এখানে একা একা দাঁড়িয়ে কি করছ?

— স্যার কাল তো আমার রেজাল্ট আউট হবে। আমার খুব চিন্তা হচ্ছে। আবার খুব ভয় ও করছে।

— আরে এতো চিন্তা করার কিছু নেই। আমি জানি তুকি খুব ভালো রেজাল্ট করবে। এখন এসব চিন্তা বাদ দিয়ে খাবার খেতে আসো।

তারপর দু’জন খাবার খেতে চলে যায়। খাবার খেয়ে সবাই ঘুমিয়ে পড়ে। দেখতে দেখতে সকাল হয়ে যায়। কিছুক্ষণ পরে আদিবার রেজাল্ট আউট করা হয়। ভয়ে আদিবার শরীর কাঁপছে। অনলাইন থেকে আদনান আদিবার রেজাল্ট বের করে। আদিবার রেজাল্ট দেখে আদনান আদিবার দিকে তাকায়।

আদিবা আদনানের তাকানো দেখে আর নিজের রেজাল্ট দেখে কান্না করতে শুরু করে দেয়।

চলবে?