এক মুঠো রোদ্দুর পর্ব-১৫

0
47

#এক_মুঠো_রোদ্দুর
[পর্ব – ১৫]
লেখক – শহীদ উল্লাহ সবুজ

আদিবা কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছেনা যে আদনানের পরিবারের কেউ বেঁচে নেই। আদিবার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়তে থাকে। তখন লোকটা বলল,

— এই হাসপাতালে যে ডাক্তার ছিল। সে অনেক ভালো মানুষ ছিল। হাসপাতালের মালিক আর ওনার স্ত্রীর লাশ পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু ওনার ছেলে মানে ডাক্তার আদনান চৌধুরীর লাশ এখনো পাওয়া যায়নি। সবাই ধারণা করে নিয়েছে হয়তো সেও মারা গিয়েছে। লাশ হয়তো পানিতে পড়ে গেছে। সেই জন্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। সে বেঁচে থাকলে তো অবশ্যই এখানে ফিরে আসতো এতো দিনে।

আদিবা তো কান্না করেই যাচ্ছে। আদিবা বুঝতে ও পারেনি একটা পরিবার এভাবে শেষ হয়ে গেলো। আদিবা কান্না করতে করতে সেখানেই বসে পড়ে। লোকটার কথা শুনে আদিবা ভাবে আদনান স্যারের কিছু হতে পারেনা। আদিবার বিশ্বাস আদনান বেঁচে আছে।

লোকটা আদিবার কাছে এসে বলল — কে তুমি মা?

আদিবা লোকটার কাছে সব কিছুই বলল। কান্না করতে করতে।

— তুমি আমার সাথে চলো। আমার বাসায় আমার স্ত্রী আর আমি থাকি। তোমার যেহেতু এখন থাকার কোনো যায়গা নেই তুমি কিছুদিন আমার বাসায় থাকতে পারবে।

আদিবাকে ভদ্রলোক সাথে করে তার বাসায় নিয়ে যায়। ভদ্রলোক যেমন ভালো ওনার স্ত্রী ও অনেক ভালো। আদিবার ব্যাপারে সব জানতে পেরে মহিলা রাজি হয় আদিবাকে রাখার জন্য। আসিবাকে একটা রুমে নিয়ে যায়৷ আদিবা গিয়ে সেই রুমে বসে থাকে। আদিবার বেগ থেকে আদনানের ছবিটা বের করে। আর ছবির মধ্যে হাত ভুলিয়ে কান্না করতে শুরু করে। স্যার আমি কি আপনাদের সবাইকে হারিয়ে ফেললাম? কেন বার বার আমার সাথে এমন হয়? কেন আমার ভালোবাসার মানুষ গুলো আমাকে ছেড়ে চলে যায়? জন্মের সময় মাকে হারালাম। তারপর বাবাকে হারালাম। আপনাদের একটা পরিবার পেয়েছি। এখন আমি তাদের ও হারিয়ে ফেলছি। আমার সাথেই কেন এমন হচ্ছে? কি দোষ করেছি আমি? যে আল্লাহ আমার এতো বড় শাস্তি দিচ্ছেন। কেন আমার ভালোবাসার মানুষ গুলো আমার কাছে থাকেনা? স্যার আমার বিশ্বাস আপনার কিছু হতে পারেনা। আমি আপনাকে খুজে বের করবই।

আদিবা আদনানের ছবি বুকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে করতে ঘুমিয়ে পড়ে।

সকালে মহিলাটা এসে দেখে আদিবা আদনানের ছবি বুকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে। আর আদিবার চোখের কোনে পানি জমে আছে। মহিলা এবার আদিবাকে ঘুম থেকে তুলে।

— কাল থেকে তো কিছুই খেলেনা। এভাবে থাকলে তো তুমিও অসুস্থ হয়ে পড়বে। আমার সাথে খাবার খেতে আসো।

— আন্টি আমাকে বের হতে হবে। আদনান স্যারকে যে আমার খুঁজে বের করতে হবে।

— কেন পাগলামি করছ? যে মানুষ মারা যায় তাকে খুঁজে বের করে?

— আদনান স্যারের কিছু হতে পারেনা। আমি ওনাকে খুঁজে বের করবই।

এই কথা বলে আদিবা বাসা থেকে বের হতে চায়। কিন্তু অচেনা মহিলাটা আদিবাকে আটকে দেয়।

— দেখো মা। তুমি কিছু একটু মুখে দিয়ে তারপর বের হও।

মহিলার জোরাজোরিতে আদিবা রাজী হয়। সে অল্প একটু খেয়ে বেরিয়ে পড়ে আদনানের খোঁজে। আদিবা পুরো শহর ঘুরে কিন্তু কোথাও আদনানের খোঁজ পায়না। তাও সে হাল ছাড়ে না। এভাবে কয়েকদিন কেটে যায়। তারপর ও আদিবা আদনানের খোঁজ করতে থাকে। ইতিমধ্যে আদিবার একটা চাকরি হয়ে যায় একটা হাসপাতালে। আদিবা যাতায়াত করার সময় আশেপাশে দেখতে থাকে।

আজ আদিবার প্রথম দিন। তাই সে হাসপাতালে দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। আর সে রাস্তার আশেপাশে চোখ ভুলিয়ে নেয়। যেতে যেতে আদিবা ভাবতে থাকে। আজ যদি মানুষ গুলো বেঁচে থাকতো তাহলে তারা কত-না খুশি হতেন। নিজের অজান্তেই আদিবার চোখ দিয়ে পানি পড়তে শুরু করে। কিছুক্ষণের মধ্যেই আদিবা তার নতুন হাসপাতালে পৌছে যায়। আজ তার প্রথম দিন সেই সুবাদে হাসপাতালে ডাক্তার আর নার্স সবাই মিলে আদিবাকে ফুল দিয়ে স্বাগতম জানায়। তারপর একজন নার্স এসে আদিবাকে নিয়ে তার চেম্বারে নিয়ে যায়।

— ম্যাম আজ থেকে এটা আপনার চেম্বার। আপনি এখানেই বসবেন।

— ওহ আচ্ছা।

— জি আর কিছুক্ষণের মধ্যেই আপনার এসিস্ট্যান্ট চলে আসবে এখানে। আপনার কোনো কিছু প্রয়োজন হলে তাকে বলবেন। সে সব কিছু ব্যবস্থা করে দিবে।

এসিস্ট্যান্ট কথাটা শুনে আদিবার আদনানের কথা মনে পড়ে যায়। আদনানের সেই রাগি চেহারা মনে পড়ে আদিবার। আগের বোকামি গুলো মনে পড়তেই আদিবা মুচকি একটা হাসি দেয়।

— কি হলো ম্যাম?

— কিছুনা। আচ্ছা ওনাকে পাঠিয়ে দেন।

— ঠিক আছে ম্যাম।

এই কথা বলে নার্স বেরিয়ে আসে।

— ম্যাম আসতে পারি?

কথাটা শুনে আদিবা এবার সামনের দিকে তাকায়। তাকেই সে দেখতে পায় একটা ছেলে।

— আসুন।

এবার ছেলেটা আদিবার কাছে এসে বলল,

— ম্যাম আমি আপনার এসিস্ট্যান্ট। আমার নাম নীল।

— ওহ আচ্ছা গুড। আমার নাম আদিবা রহমান।

— জ্বি ম্যাম আমি আপনার নাম আগে থেকেই জানি।

— কীভাবে?

— ম্যাম আমাকে যখন বলা হয়েছে আমাকে আপনার এসিস্ট্যান্ট করা হবে তখনই আমি আপনার সব ডিটেইলস আর আপনার ফেসবুক একাউন্ট ও বের করে ফেলছি।

— এতো এডভান্স!

ছেলেটা মাথা চুলকাতে চুলকাতে জি ম্যাম বলল।

— যাইহোক, এখন আমাকে রোগী দেখতে যেতে হবে। চলুন আমার সাথে।

এই কথা বলে আদিবা চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে হাটা শুরু করে। নীল ও আদিবার পিছু করতে থাকে। আদিবা এবার কয়েকজন রোগীকে দেখে নিজের চেম্বারে ফিরে আসে।

— ম্যাম আমাদের হাসপাতাল আপনার পছন্দ হইছে?

— হ্যাঁ।

— ম্যাম কি খাবেন বলুন।

— কিছু লাগবেনা। আপনার অন্য কোনো কাজ থাকলে করতে পারেন। আপনি এখন আসুন।

— ওকে ম্যাম।

নীল চেম্বার থেকে বের হয়ে যায়। এবার একটা মেয়ে ডাক্তার আদিবার চেম্বারে প্রবেশ করে।

— আসতে পারি?

— জ্বি আসুন।

— আমার নাম কেয়া। আর আমিও এখানকার ডাক্তার।

— আমি আদিবা রহমান।

— আপনার নাম টা যেমন মিষ্টি আপনিও তেমন মিষ্টি দেখতে।

আদিবা একটা মুচকি হাসি দিয়ে ধন্যবাদ জানায়। মেয়েটার সাথে তার আরো কিছুক্ষণ কথা হয়। আর কিছু সময়ের মধ্যে তাদের মাঝে খুব ভালো একটা সম্পর্ক হয়ে যায়।

আজকের মতো হাসপাতালের কাজ শেষ করে আদিবা নিজের বাসার দিকে চলে যায়। আর আদিবা এখন আলাদা একটা বাসা নিয়ে থাকে। প্রতিদিনের মতো আজও খাওয়া দাওয়া শেষ করে আদিবা আদনানের ছবিটা বের করে। আর ছবির সাথে কথা বলতে শুরু করে।

— স্যার! আপনি কোথায় হারিয়ে গেলেন? আমি কি আর কখনও আপনাকে ফিরে পাবো না? আমার যে আপনাকে অনেক কথা বলার ছিল! তাহলে আমার না বলা কথা গুলো কি কখনও আপনাকে বলা হবেনা?

এই কথা গুলো বলে আদিবা আদনানের ছবি বুকে জড়িয়ে কান্না করতে শুরু করে। কান্না করতে করতেই আদিবা ঘুমিয়ে পড়ে। সকালে ঘুম থেকে উঠে আদিবা আদনানের ছবিটা হাতে নিয়ে একটা চুমু খায়। তারপর সে নাস্তা রেডি করে খাবার খেয়ে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। আজকে ও আদিবা হাসপাতালের দিকে যেতে যেতে বাহিরে তাকিয়ে থাকে। গাড়িটা কিছুদূর যেতেই আদিবার চোখ আটকে যায় ব্লেজার পড়া একটা লোকের দিকে। আদিবা লোকটার পিছনের দিক টাই দেখতে পাচ্ছে। কেন যানি আদিবার সন্দেহ হচ্ছে যে এটা তার আদনান। লোকটাকে দেখে আদিবার খুব অস্থির লাগতে শুরু করে। আদিবা তাড়াতাড়ি করে গাড়ি ব্রেক করতে বলে। আদিবার কথা শুনে ড্রাইভার সাথে সাথে গাড়ি ব্রেক করে। আদিবা তাড়াতাড়ি করে গাড়ি থেকে নেমে লোকটার দিকে এগিয়ে যেতে থাকে।

চলবে?