এক মুঠো রোদ্দুর পর্ব-১৭

0
60

#এক_মুঠো_রোদ্দুর
[পর্ব – ১৭]
লেখক – শহীদ উল্লাহ সবুজ

আদিবা তাড়াতাড়ি করে গাড়ি থেকে নেমে হাসপাতালে দিকে চলে যেতে থাকে। আদিবার মাথায় অন্য একটা প্ল্যান কাজ করতে শুরু করে। আদিবার আত্মবিশ্বাস যে এটাই তার আদনান স্যার। আদিবা হাসপাতালের ভিতরে চলে যায়। আর আদনানের কেবিনের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। তখন সেই ডাক্তার আদিবাকে দেখে আদিবার দিকে এগিয়ে এসে বলল,

— আদিবা আপনি আবার ফিরে এলেন যে?

— আদনান স্যারকে এখানে এভাবে একা রেখে যাওয়া ঠিক হবে না।

— কিন্তু এখনও তো প্রমাণ হয়নি যে এটা আদনান।

— প্রমাণ এক্ষনি হবে। যে মহিলা স্যারকে ওনার ছেলে বলছে ওই মহিলাকে আমার খুব পরিচিত মনে হচ্ছে। ওনাকে আমি কোথাও যেনো দেখেছি।

— কি বলছেন?

— হ্যাঁ প্লিজ আপনি আমার সাথে চলুন। আর আমাকে একটু সাপোর্ট করবেন। আমি আমার স্যারকে পেয়েও আর হারাতে চাইনা।

তখনই হাসপাতালের একজন নার্স দৌড়ে এসে ডাক্তারকে বলল।

— ডাক্তার কোমায় থাকা রোগীকে তার পরিবার এখান থেকে নিয়ে যেতে চাইছে।

কথা টা শুনে ডাক্তার আর আদিবা দু’জন হতবাক হয়ে যায়। এবার আদিবা বলল,

— দেখেছেন? এনারা পালিয়ে যাওয়ার প্ল্যান করছে। তাড়াতাড়ি চলুন।

ডাক্তার এবার আদিবার কথা বুঝতে পারে। ডাক্তার আর আদিবা আদনানের কেবিনের দিকে চলে যায়।

— কি ব্যপার আপনি রোগী কে নিয়ে কোথায় যাচ্ছেন? (আদিবা কেবিনের বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে)

— এই হাসপাতালে আমার ছেলের চিকিৎসা হবে না। তাই আমরা অন্য হাসপাতালে নিয়ে যাবো।

— আমাদের এখানে যদি চিকিৎসা না হয় তাহলে আর কোথাও এই রোগীর চিকিৎসা হবে না। আমাদের এখানেই চিকিৎসা হবে। আর উনি সুস্থ হবেন। কারণ আমাদের এখানে বড় বড় ডাক্তার আছে।

— কিন্তু!

আদিবা এবার ভিতরে আসতে আসতে বলল,

— কিন্তু ওনারা তো ধরা খেয়ে যাবে এই হাসপাতালে থাকলে। তাইনা?

— কি বলছেন আপনি এসব? আমরা কীসের ধরা খাবো? আমরা কি চোর নাকি? আপনি যাবে বলছে মনে হচ্ছে আমার এখানে চুরি করতে এসেছি?

— তাহলে যখন শুনলেন আমি বাসায় চলে গেছি তখন কেন পালাতে চাইছেন? নিজেদের অনেক চালাক মনে করেন তাইনা? আমি পুলিশে ফোন দিচ্ছি সত্যি মিথ্যে তারা বের করবে। যদি প্রমাণ হয় এটাই ডাক্তার আদনান তাহলে তো বুঝতেই পারছেন আপনাদের কি হতে পারে?

আদিবার কথা শুনে এবার মহিলা আর লোকটা ভয়ে চুপসে যায়। আদিবা ব্যপার টা বুঝতে পেরে তাদের আরো ছেপে ধরে সত্যি কথা বের করার জন্য।

— আপনার তো অপহরণ মামলা খাবেন। আর এই মামলার শাস্তি সম্পর্কে ধারণা আছে? এখন কি সত্যি কথা বলবেন নাকি আমি পুলিশকে কল দেব?দেখুন পুলিশ আসলে অনেক ঝামেলা হতে পারে। তাই বলছি আসল ঘটনা খুলে বলুন। এখনও সময় আছে।

মহিলা টা কান্না করতে করতে আদিবার পা জড়িয়ে ধরে।

— পা ছাড়ুন।

— প্লিজ পুলিশকে কল দিবেন না। আমি সব সত্যি কথা বলছি।

সেদিন আমি কাজ শেষ করে হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরছি। হঠাৎ দেখলাম একটা গাড়ি এক্সিডেন্টে হয়ে পড়ে আছে। তখন রাত ১১ টা বাজে। আশেপাশে কোনো লোক ছিলনা। তাই আমি গাড়িটাকে এভাবে পড়ে থাকতে দেখে হতবাক হয়ে গেলাম। গাড়িটাও পরিচিত মনে হচ্ছে। আমি আর দেরি না করে গাড়ির কাছে চলে গেলাম। গাড়ির কাছে যেতেই আমার চোখ আকাশে উঠে যায়। গাড়ির ভিতরে পড়ে আছে ডাক্তার আদনান আর তার পুরো পরিবার। আমি খুব ভয়ে পেয়ে যায়। কি করব বুঝতে পারছিলাম না। আমি সবার নিশ্বাস পরিক্ষা করে দেখি সবাই মারা গিয়েছে। বেঁচে আছে শুধুই আদনান স্যার। তখনই তিনি জ্ঞানহীন। আমি তাড়াতাড়ি করে আমার হাসবেন্ড কে কল দেয়। উনি তাড়াতাড়ি করে চলে আসে। আমরা আর দেরি না করে ওনাকে নিয়ে হাসপাতালে চলে গেলাম। ডাক্তার বলল উনি কোমা চলে গেছে। তখন আমাদের মাথায় খারাপ একটা মতলব চলে আসে। যদি স্যারের সব টাকা পয়সা দখল করে নেওয়া যায়। তবে আমরা বেশি খুশি হয়ে ছিলাম যখন ডাক্তার বলল আদনান কোমা থেকে ফিরে আসলেও উনি আগের সব স্মৃতি ভুলে যাবে। এটা ছিল আমাদের প্লাস পয়েন্ট। তাই আমরা ওনাকে ভালো একটা হাসপাতালে নিয়ে যাই। আর ওনার চিকিৎসা করতে থাকি। কিন্তু উনি কোমা থেকে ঠিক হচ্ছেনা দেখে এই হাসপাতালে নিয়ে আসি। আর এখানেই আসার পরে সব তো আপনারা জানেন। আমি দুই বছর ওনার সেবাযত্ন করছি। আসিবা আপনি হয়তো আমাকে চিনতে পারেন নি। আমি আদনান স্যারের হাসপাতালে আগে ক্লিনারের কাজ করতাম।

— এই জন্যই আপনাকে আমার খুব পরিচিত মনে হইছে। যাইহোক আপনি তাহলে আমাদের সাথে মিথ্যা কথা কেন বলছেন প্রথমে?

— আমরা টাকায় লোভে অন্ধ হয়ে গেছিলাম। ভাবছিলাম উনি ঠিক হলে তো সব কিছুই ভুলে যেই পাকে ওনার সব আমাদের নামে হয়ে যাবে। ওনার কখনও অযত্ন করিনি। প্লিজ আমাদের ক্ষমা করে দিন এবারের মতো।

— আপনাদের আমি ক্ষমা করে দিলাম। আপনাদের কারনেই আমি আমার স্যারকে ফিরে পেয়েছি। সেদিন যদি আপনারা স্যারকে হাসপাতালে নিয়ে না যেতেন তাহলে খারাপ কিছু হতে পারতো। তবে আমার সাথে প্রথমে সত্যিটা বললে ভালো হতো।

— আমরা আমাদের ভুলের জন্য অনুতপ্ত।

— ঠিক আছে আপনারা এবার আসতে পারেন আজ থেকে ওনার দেখাশোনা আমি করব। এখানে পঞ্চাশ হাজার টাকা আছে এগুলো নিয়ে যান।

— এসব আমাদের লাগবেনা।

এই কথা বলে ওনারা চলে যায়। আদিবা এবার সব সময় আদনানের পাশে থাকতে শুরু করে। সে আদনানকে সুস্থ করার জন্য সব চেষ্টা করতে থাকে। কিন্তু আদিবার মনে একটা ভয় কাজ করতে শুরু করে। যদি আদনান কোমা থেকে ফিরে আদিবাকে চিনতে না পারে? যদি সত্যিই আদিনানের মেমোরি লস হয়ে যায় তাহলে! আদিবা সব চিন্তা বাদ দিয়ে আদনানের চিকিৎসা করতে থাকে।

দেখতে দেখতে দুই মাস পার হয়ে যায়। আদনানের কোনো পরিবর্তন নেই।

আদিবা আদনানের হাত ধরে বলতে থাকে,,

— স্যার আমি তো আর পারছিনা। আমার যে অনেক কষ্ট হচ্ছে আপনাকে এভাবে দেখে। কতো স্ব নিয়ে দেশে ফিরে এসেছি। সব আপন মানুষকে হারিয়ে ফেলছি। শেষমেশ আপনাকে খুঁজে পেলাম। আমার না বলা কথা গুলো যে আপনাকে বলতে খুব ইচ্ছে করে। জানেন স্যার সব সময় ইচ্ছে করে আপনার বুকে মাথা রেখে ঘুমাতে। আপনাকে কখনো বলা হয়নি আমি যে আপনাকে কতটা ভালোবাসি। স্যার আপনার সাথে কথা বলার খুব ইচ্ছে আমার। স্যার! একটু কথা বলেন প্লিজ৷

তখনই কেবিনে প্রবেশ করে নীল।

— ম্যাম! আপনি এসব কি করছেন?

আদিবা নীলের দিকে তাকিয়ে আবার চোখ সরিয়ে নেই।

— আপনি একজন ডাক্তার হয়ে এমন করলে রোগীর কি হবে? চিন্তা করবেন না সব ঠিক হয়ে যাবে। লান্স টাইম হয়েছে খেতে আসুন।

তারপর আদিবা চলে যায়। হঠাৎ করে আদনান নড়াচড়া করতে শুরু করে। এটা নার্স দেখতে পেয়ে তাড়াতাড়ি করে আদিবার কাছে চলে যায়।

— ম্যাম, স্যার নড়াচড়া করছে। তাড়াতাড়ি আসুন।

আদিবা খাবার শেষ না করে হাত ধুয়ে আদনানের কেবিনে চলে যায়। আদিবা কেবিনে গিয়ে দেখে আদিনান কোমা থেকে ফিরে এসেছে। আর সে বসে আছে। আদিবা ভিতরে যেতেই হতবাক হয়ে যায়। আদিবা এভার আদনানের কাছে চলে যায়।

— স্যার! এখন আপনি কেমন আছেন?

— আদনান আদিবার কথা শুনে আদিবার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে।

আদনানের তাকানো দেখে আদিবা খুশি হলেও মনে মনে ভয় পেয়ে যায়। আদনান কি আদিবাকে চিনতে পারবে নাকি চিনবেনা?

চলবে?