এক মুঠো রোদ্দুর পর্ব-১৮ এবং শেষ পর্ব

0
96

#এক_মুঠো_রোদ্দুর
[ ১৮ ও শেষ পর্ব ]
লেখক – শহীদ উল্লাহ সবুজ

আদনানের তাকানো দেখে আদিবা অনেকটায় ভয় পেয়ে যায়। আদনান কি আদিবাকে চিনতে পারবে?

— স্যার আমাকে চিনতে পারছেন? আমি আদিবা।

আদনান নিশ্চুপ,,

— স্যার কথা বলছেন না কেন?

— আমার মা-বাবা কোথায়? ওনারা ঠিক আছে তো?

আদনানের কথাটা শুনে আদিবা একটু অস্থির নিশ্বাস ফেলে। কিন্তু আদনানের প্রশ্ন টা শুনে আদিবার মন খারাপ হয়ে যায়৷

— আদিবা, আমার আব্বু আম্মু কোথায়? ওনাদের দেখতে পারছিনা কেন? আর আমি এখানে কীভাবে আসলাম?

— স্যার আপনি একটু শান্ত হোন। আপনাকে আমি পরে সব বলব।

— তুমি দেশে চলে আসলে কেন? তোমার পড়াশোনা বাদ দিয়ে দেশে কেন আসলে? আমাদের এক্সিডেন্ট এর কথা শুনে চলে আসলে নাকি? আমাদের জন্য কেন তুমি তোমার স্বপ্ন পূরণ না করে চলে আসলে। তোমাকে যে নিজের লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে হবে।

আদনানের কথা শুনে আদিবার কান্না বেড়ে যেতে থাকে। একটা মানুষ অসুস্থ থেকেও অন্যের কথা ভাবে। আদিবা এবার চোখের পানি মুছে আদনানের কাছে গিয়ে বলল।

— স্যার আমি ডাক্তার হবে ফিরে এসেছি। আর আমি এই হাসপাতালে একজন ডাক্তার। আর আপনি দুই বছর তিন মাস পরে কোমা থেকে ফিরে আসছেন।

আদিবার কথা শুনে আদনান হতবাক হয়ে গেলো।

— কি বলছ এসব?

— জি স্যার।

— কংগ্রাচুলেশনস।

— ধন্যবাদ স্যার। আপনি এখন একটু রেস্ট করুন প্লিজ।

— কিন্তু আমার আব্বু আম্মু কোথায়? তাদের কেন দেখতে পাচ্ছিনা। সেদিন আমার একটা ভুলের জন্য সব এলোমেলো হয়ে গেলো।

— স্যার। আপনি আগে রেস্ট করুন।

নার্স এসে আদনানকে একটা ঘুমের ইনজেকশন দেয়। তারপর আদনান ঘুমিয়ে পড়ে। আদিবা অনেক খুশি হয়। আদিবার মনে যে ভয় ছিল সেটা দূর হয়ে যায়। কিন্তু সে আপনাকে কীভাবে বলবে তার মা-বাবা আর বেঁচে নেই? আদনান কি এই অবস্থায় এমন খবর নিতে পারবে? আদিবা কি করবে বুঝতে পারছেনা। আদিবা এবার সব চিন্তা বাদ দিয়ে আদনানের জন্য খাবার রেডি করে। অনেক্ক্ষণ পরে আদনানের ঘুম ভেঙে যায়।
আদিবা আদনানকে নিজের হাতে খাবার খাইয়ে দেয়। খাওয়া দাওয়া শেষ হলে আদনান আবার জিজ্ঞেস করে।

— আদিবা বলছ না কেন আমার মা-বাবা কোথায়? তারা ঠিক আছে তো?

— স্যার কীভাবে যে বলি। আসলে সেদিনের এক্সিডেন্টে আংকেল আর আন্টি দু’জনেই মারা যায়।

কথাটা শুনে আদনান স্তব্ধ হয়ে যায়। আদনানের চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়তে থাকে। আর তার চোখে ভেশে উঠে সেই দৃশ্যটা।

— স্যার।

— আদিবা, আমাকে একটু একা থাকতে দাও।

আদিবা আর কোনো কথা না বলে কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়। আর আদনান কান্না করতে থাকে। নিজের মা-বাবার মৃত্যুর জন্য আদনান নিজেকে দ্বায়ী করতে শুরু করে।

কিছুক্ষণ পরে আদিবা আবার ভিতরে চলে আসে।

— স্যার মন খারাপ করবেন না। ওনাদের জন্য দোয়া করুন।

— জানো আদিবা সেদিন যদি আমি বেখেয়ালি হয়ে গাড়ি না চালাতাম আজ আমার আব্বু আম্মু আমার কাছেই থাকতো। আমি তাদের মৃত্যুর কারণ।

— স্যার এসব বলবেন না। এখানে আপনার কোনো হাত নেই। ওনাদের হায়াত শেষ হয়ে গিয়েছে। আর এটা তো একটা এক্সিডেন্টে।

আদনানের চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে। আদিবা এবার আদনানের চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল — স্যার কান্না করবেন না। যখন আমি আমার পরিবারের মানুষ এক মাত্র বাবাকে হারালাম তখন তো আপনি আমার পাশে ছিলেন। আমাকে বোঝালেন। তাহলে আজ আপনি কেন ভেঙে পড়ছেন স্যার?

— আমি এমন হতভাগা সন্তান যে নিজের মা-বাবার কবরের মাটি অব্দি দিতে পারিনি। শেষ বারের মতো তাদের মুখ অব্দি দেখলাম না। কেমন সন্তান আমি?

এসব বলছে আর আদনান কান্না করছে। আদনানের কান্না দেখে আদিবা নিজের কান্না লুকাতে পারছেনা।

— স্যার প্লিজ এভাবে ভেঙে পড়বেন না।

— জানো আদিবা সেদিন যদি আব্বু আম্মুর সাথে আমার মৃত্যুটাও হয়ে যেতো তাহলে আজ আর এতো কষ্ট হতোনা।

— স্যার প্লিজ এসব বলবেন না।

— আম্মু শেষ বার তোমার কথা বলছিল। বলছিল আদিবাকে যদি একবার দেখতে পেতাম। মেয়েটাকে খুব মিস করছি।

আদিবা আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারছেনা। সে আপনাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে থাকে। আদনান ও আদিবাকে জড়িয়ে ধরে।

কিছুক্ষণ পরে আদনান নিজেকে সামলে আদিবাকে বলল — আদিবা, শান্ত হও।

তারপর দু’জন চুপচাপ হয়ে যায়। এর মধ্যে কেটে যায় আরো দু’দিন। আদনান অনেক টাই সুস্থ হয়ে উঠে। আদিবা ঠিক করে আদনানকে নিয়ে তার বাসায় চলে যাবে। তাই সেই কথা বলার জন্য আদিবা আদনানের কাছে আসে।

— স্যার এখন আপনাকে নিয়ে আমার বাসায় চলে যাবো। আপনি আগের থেকে অনেক টাই সুস্থ হয়েছেন।

— তোমার বাসায় কেন? তোমার হাসবেন্ড কিছু বলবেনা?

আদনানের কথা শুনে আদিবা রাগী একটা ভাব নিয়ে দুই হাত কোমরে দিয়ে বলল — হাসবেন্ড কই থেকে আসল?

— কেন তুমি এখনো বিয়ে করোনি?

— না তবে এবার করব। চলুন এখন আমার সাথে।

— কোথায়?

— আমার বাসায়।

তারপর আদিবা আদনানকে সাথে নিয়ে বাসার দিকে চলে যায়। আদনান আদিবার রুমের দিকে যেতেই দেখে দেওয়ালে আদনানের ছবি লাগানো।

— আমার ছবি এখানে কেন?

— এসব আপনার না জানলেও চলবে। এখন রেস্ট করুন আমি আপনার জন্য রান্না করে আসি।

আদিবা রান্না করতে চলে যায়। রান্না শেষ করে আদনানকে খাবার খাইয়ে দেয়। এভাবে কিছুদিন কেটে যায়। আদনান এখন অনেকটাই সুস্থ। আদনান আদিবাকে বলল।

— আদিবা আমি আবার হাসপাতালে টা চালু করব৷

— ঠিক আছে। আমিও আপনার সাথেই থাকব।

— তোমার হাসপাতাল?

— সমস্যা নাই আমি ওখানে না করে দেব। আমি আপনার সাথে থাকতে চাই স্যার।

— আদিবা আমি চলে যাবো। এখন তো আমি ঠিক আছি। তাই বলছিলাম আমি আরেকটা বাসা নেব।

— বাসা নিতে হবে কেন? এই বাসায় কি আপনার কোনো সমস্যা হচ্ছে থাকতে?

— আমার না হলেও তোমার সমস্যা হবে। মানুষ তো অনেক রকম কথা বলবে। একটা মেয়ের বাসায় একটা ছেলে থাকা মানে বুঝতে পারছো? এটা কখনও মানুষ ভালো চোখে দেখবেনা।

— কে কি ভাবে এসব আমি ভাবিনা স্যার। আপনি এখানেই থাকবেন। আমি আপনাকে দূরে থাকতে দেবনা। অনেক কষ্ট করে আমি আপনাকে ফিরে পেয়েছি।

আদনান আদিবার দিকে তাকিয়ে আছে।

— স্যার আপনাকে একটা কথা বলার ছিল। এই কথা আপনাকে বলা খুব দরকার। অনেক বার বলতে গিয়েও বলা হয়নি।

— হুম বলো।

— স্যার আপনাকে আমি অনেক আগে থেকেই একটা কথা বলতে গিয়েও বলতে পারিনি। যে কথা আপনাকে বলা খুব প্রয়োজন আমার। স্যার আমি আপনাকে অনেক বেশি ভালোবাসি। আপনার বুকে মাথা রেখে আমি আমার বাকি জীবন কাটাতে চাই।আপনার বুকে একটু কি ঠাঁই দিবেন আমায়?

— তুমি তো আমার অন্ধকার জীবনে রোদ্দুর হয়ে এসেছো। আদিবা, তোমাকেও যে আমি অনেক বেশি ভালোবাসি। যে কথা তোমাকে কখনও হয়নি। তুমি যখন চলে গিয়েছিলে। তোমার অভাব আমি খুব ভালো ভাবে বুঝতে পারছিলাম। তখনই বুঝতে পারছি তোমাকে আমি কতটা ভালোবাসি।

আদনানের কথা শুনে আদিবা আদনানকে জড়িয়ে ধরে। আদনানও আদিবাকে জড়িয়ে ধরে।

পরের দিন আদনান আর আদিবার বিয়ে হয়ে যায়। আদিবা বাসর ঘরে আদনানের জন্য অপেক্ষা করছে। অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে আদনান বাসর ঘরে প্রবেশ করে। আদিবা আদনানের পায়ে হাত দিয়ে সালাম করে। আদনান আদিবার কপালে একটা চুমু খেয়ে আদিবাকে কোলে তুলে খাটের উপরে নিয়ে যায়।

— স্যার!

আদিবা স্যার কথাটা বলতেই আদনান আদিবার ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে বলল — আজ থেকে আমি তোমার হাসবেন্ড। ডোন্ট কল মি স্যার। ওকে?

— ইশশ! আমি তো স্যার বলেই ডাকব। জীবনের শেষ নিশ্বাস অব্দি আপনাকে আমি স্যার বলেই ডাকব। এই ডাক যা আমার খুব প্রিয়।

— ঠিক আছে।

— স্যার। একটা কথা মনে পড়ে?

— কোন কথা?

— আমি আপনাকে কি নামে ডাকতাম?

— কি নাম?

— গুড নাইট স্যার। হিহিহি।

এই কথা বলে দুজনেই হাসতে শুরু করে। আদনান এবার আদিবার কপালে একটা চুমু খায়। কিছুক্ষণ পরে আদনান আদিবার ঠোঁট নিজের দিন দখলে নিয়ে নেই। তারপর রুমের লাইট অফ করে দেয় আদনান। অন্ধকারে কি হচ্ছে আমি জানি না। তাই আপনাদের ও বলতে পারলাম না। হিহিহি। আর বেশি জানার আগ্রহ থাকলে বিয়ে করে নিন। তারপর থেকে শুরু হয় আদনান আদিবার নতুন জীবন। দু’জন হ্যাপি লাইফ কাটাতে থাকে। এভাবেই দু’জন দু’জনের পাশে থাকুক। এই বলেই গল্পটা শেষ করালাম।

সমাপ্ত।