এক সায়াহ্নে প্রেমছন্দ পর্ব-১৩+১৪

0
264

#এক_সায়াহ্নে_প্রেমছন্দ
লেখিকাঃ #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১৩
মাশরিফ মির্জাপুরে পৌঁছাল। মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজ। তার শৈশব, কৈশর সব এখানেই। ছোটো থেকে মায়ের চাকুরিসূত্রে পরিবার সহ এখানেই থাকত। তারপর সময়ে ক্রমবর্ধমানে এখানকার স্টুডেন্ট হলো। তারপর আর্মি জয়েন। সব কেমন ধারাবাহিক ভাবে চলছে।
মূল ফটকে এসে গাড়ি থামাল মাশরিফ। এখন দারোয়ান আসবে, চেক করবে তারপর গাড়ি ঢুকতে দিবে। লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে সামনে তাকালো। দারোয়ান তার পরিচিত। দারোয়ানকে সালাম দিয়ে গাঁড়ি নিয়ে ভেতরে চলে গেল। সারিবদ্ধ ভাবে গাছ লাগানো ও পরিষ্কার রাস্তা। লেক, উুঁচুভূমি সবই আছে। মসজিদ, হসপিটাল পেরিয়ে মূল একাডেমিক ভবনের সামনে এসে আবার গাড়ি থামাল। পাশেই তার হোস্টেল ভবন ফজলুল হক ভবন। পাহারারত দারোয়ান তাগদা দিলে গাঁড়ি মাঠে নিয়ে যায়। আবার গাঁড়ি থামিয়ে ভাবল, পুরো মাঠটা একবার দৌঁড়ে আসবে। নিজের এই অদম্য ইচ্ছা সে প্রতিবার পূরণ করে।

আট মিনিটে পুরো মাঠটা দৌঁড়ে এসে গাঁড়ি থেকে পানির বোতল নিয়ে পানি খেয়ে মাঠেই বসে পরল। এবার মায়ের ফোন। রিসিভ করতেই মহিমা বেগম বলেন,

“বাসায় আয়। মাঠে দৌঁড়াতে হবে না। সকাল বেলা তো এমনিতেই দৌঁড়াবি।”

মাশরিফ হেসে বলে,
“দারোয়ান তোমাকে বলেছে তাই না? প্রতিবার এই সময়েই ফোন দাও। আমি গেইট দিয়ে ঢোকার ঠিক চৌদ্দ-পনেরো মিনিট পর।”

মহিমা বেগম অভিমান করলেন যেনো। বললেন,
“এর আগে ফোন করলে তো তুই ধরবি না। তাই এই সময়ে ফোন করি। ঘড়িতে সময় দেখেছিস? দশটার কাছাকাছি। জলদি আয়।”

“আসছি। দুই মিনিটেই আসছি।”

বসা থেকে চট করে উঠে গাঁড়িতে বসে গাঁড়ি স্টার্ট দেয়। তারপর গাঁড়ি জায়গামতো পার্ক করে বাসায় প্রবেশ করে। মহিমা বেগম দরজা খুলেই রেখেছিলেন। সেই সুযোগে মাশরিফ দৌঁড়ে মাকে জড়িয়ে ধরে বলল,

“তিন মাস তাই না? তিন মাস পর আসলাম।”

“হ্যাঁ। মাঝে ছুটি পেয়েও আসিসনি তাও জানি। আমার কথা তো মনে পরে না।”

মায়ের অপ্রতিরোধ্য অভিযোগে মাশরিফ হালকা হাসে। অতঃপর বলে,
“তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ রেডি করতেই তো আসিনি। সারপ্রাইজটা পেয়ে তুমি অনেক খুশি হবে।”

“কোনো মেয়ে পছন্দ করেছিস নাকি? বিয়ে করবি? বল মেয়ে কোথায় পড়াশোনা করে? ছবি আছে?”

মায়ের অত্যাধিক অধীরতায় মাশরিফ কপালে হাত দিয়ে মাকে চেয়ারে বসিয়ে বলে,
“নাম, ছবি, এসব কিছুই বলব না। তবে এক ডাক্তারনী পাবে। যে তোমাকে টাইট দিয়ে রাখবে। বাকিটা সারপ্রাইজ। আর বিয়ে এখনি করব না। ডাক্তারনী আগে জানুক।”

“ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বা কিছু নাই করুক, তাতেও কোন সমস্যা নেই। শুধু মেয়েটা ভালো হোক। যে আমার অবর্তমানে সবসময় তোর সাথে থাকবে।”

মায়ের এহেনো অশুভ কথায় মাশরিফ ভারি রুষ্ট হলো।
“তুমি সবসময় এসব বলো কেনো? দেখো পরের ছয় মাসেও আসব না।”

মহিমা বেগম ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে মুচকি হেসে বললেন,
“আচ্ছা ঠিক আছে। আর বলবো না। এইবার চল তো ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নিবি। ওর পছন্দ মতো পাঙাশ মাছের মাথা দিয়ে মুড়িঘন্ট করেছি। তারপর করলা দিয়ে শিং মাছের ঝোল, আর চিকেন সবজি। জানি রাতে বেশি খেতে পারবি না তাই এটুকু। সাথে তোর পছন্দের পাটিসাপটা পিঠাও আছে।”

“এসব কম মা? এগুলোর জন্য কম করে হলেও দেড় প্লেট ভাত খেতে হবে। আর পাটিসাপটা! এজন্যই অভী বলে, বাসায় গেলেই অভ্যাস খারাপ হয়ে যায়।”

মাশরিফের কথায় মহিমা বেগম বলেন,
“তোর সব বন্ধুদের নিয়ে আসিস। ওদের কথামতো একদিনেই মোটু করে দিব। যা এবার ফ্রেশ হ।”

মাশরিফ মাকে আরেকবার জড়িয়ে ধরে ফ্রেশ হতে চলে যায়।

__________

তিতির পড়ছে এমন সময় নাজমা বেগমের ফোন আসে। তিতির ফোন রিসিভ করে কুশলাদি জিজ্ঞেসা শেষে নাজমা বেগম বলেন,

“বাসা পেয়েছিস? ”
“না। মা। কাল আবার বের হবো।”
“নতুন মাস তো শুরু হলো আজকে। কি করবি?”

তিতির হতাশ স্বরে বলল,
“দেখি কি করা যায়। তোমরা আর কয়েকদিন থাকো। তারপর সব ঠিক হলে নিয়ে আসব। চাচা-চাচি কিছু বলেছে?”

“না। তোর চাচা-চাচি তো বলছে এই মাসটা থেকে যেতে। তোকে বাসা খোঁজা নিয়ে প্রেশার না দিতে।”

তিতির স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলে বলে,
“যে কয়দিন বাসা পাবো না, ততোদিন কিছু করার তো নেই। হিয়াকে বলো হায়াতের কয়েকটা ছবি পাঠাতে। বাচ্চাটাকে দেখতে ইচ্ছে করছে।”

“আচ্ছা বলবনে। তুই সাবধানে থাকিস। রাখছি।”

কথা বলা শেষে দেখে লিরা তিতিরের দিকে তাকিয়ে আছে। তিতির ইশারায় ‘কি হয়েছে?’ বুঝালে লিরা বলল,

“নাথিং। ইউ ক্যান টক উইথ রাফি, অর্ক ভাইয়া। দে ক্যান হেল্প ইউ।”

“রিয়ালি? বাট..!”

লিরা এবার তিতিরের পাশে এসে বলল,
“দে আর সো ফ্রেন্ডলি। টোমার সিট..”

হুট করে লিরা থেমে গেল। তিতির ভ্রুঁ কুঁচকে জিজ্ঞেসা করে,
“আমার সিট কী?”

লিরা কিয়ৎ ভাবলো। অতঃপর বলল,
“সিট পরে পেয়েছ দ্যাটস হোয়াই প্রবলেম হচ্ছে।”

লিরার কথার ভাবার্থ তিতিরের মা*থায় ঢুকলো না। তিতির আর জিজ্ঞেসাও করল না। হালকা হেসে আবার পড়তে শুরু করে। লিরা নিজের বেডে গিয়ে বুকে হাত দিয়ে স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলে।

_______

সুজন, পলাশদের জামিন নিয়ে এক উকিল এসেছে। হিয়ার উপর আ*ক্রম*ণের কেনো প্রমাণ দেই বলে কোর্টেও চালান করতে পারেনি। নতুন অফিসার নাদিম বিপাকে পরে যায়। দুইদিন যাবত তাই শুধু আটকেই রেখেছে। এবার উকিলকে নাদিম বলেন,

“তিয়াস আহমেদের হ*ত্যা মা*মলার আ*সামি ওরা। তিয়াস আহমেদের পরিবার হ*ত্যা মা*মলা দায়ের করেছিল। তারা মানে না ওটা অ্যা*ক্সিডেন্ট। সেটার ইনভেস্টিগেশন মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে কে*সটা অ্যা*ক্সিডেন্ট হিসাবে চালিয়ে দিয়েছে আগের পুলিশ অফিসার। সেটার আবার রিওপেন হবে।”

উকিল এবার বললেন,
“কোন প্রমাণ না পেলে সেটাকে হ*ত্যা মা*মলা কিভাবে বলা হয়? কেউ কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি। আর সেই পুলিশ অফিসার প্রমাণ না পেয়েই অ্যা*ক্সিডেন্ট হিসেবে কেসটা ডিসমিস করেছে। নতুন কোন প্রমাণ ছাড়া কেস রিওপেন করেই লাভ কি? আর ভি*কটিমের পরিবারকে তো দেখছি না। তারা কোথায়?”

পু*লিশ অফিসার নাদিম আর কিছু বলে না। সুজন ও পলাশকে ছেড়ে দিতে বলে। সুজন ও পলাশ জে*ল থেকে বেরিয়ে, পু*লিশ অফিসার নাদিমকে উদ্দেশ্য করে বলে,

“কি-রে? কইছিলাম না? দুইদিনও রাখতে পারবি না আমারে। আমার লগে পাঙ্গা নিস না অফিসার। এই থানায় টিকতে পারবি না।”

এই বলে সুজন ও পলাশ উকিলের সাথে থানা থেকে বেরিয়ে যায়। অফিসার নাদিম নিজের টেবিলে রাগে ঘু*ষি মা*রে।

থানা থেকে বেরিয়ে পলাশ উকিলকে জিজ্ঞেসা করে,
“উকিল সাব, আমাগো জামিন করাইলো কেডা?”

“তাকে আমিও চিনি না। মুখে মাস্ক পরা ছিল। আমার অফিসে এসে মোটা অংকের টাকা টেবিলে রাখল। আর আপনাদের কে*স হিস্টোরি আমাকে দেখালো তারপর আমি জামিনের ব্যাবস্থা করেছি। এরপর থেকে কেয়ারফুল থাকবেন। আসি।”

উকিল চলে গেলে সুজন ও পলাশ হাঁটতে থাকে তখন সুজনের ফোনে একটা কল আসে। সুজন নাম্বারটা চেনে। মুখে তার বিশ্রি হাসি ফুটে উঠল। রিসিভ করে বলল,

“সন্দেহ হইতাছিল আপনারাই জামিন করাইছেন। আপনাগো এত সাহায্য করছি, এটুকু তো করাইবেনই। ধন্যবাদ।”

অপরপাশ থেকে বলল,
“তোমাদের জামিন করার উদ্দেশ্য হচ্ছে যাতে তোমাদের মুখ থেকে কোন কথা বের না করতে পারে। রি*মান্ডে নিয়ে গেলে তখন তো তোমরা বলেও দিতে পারো। আমরা নিজেদের অ্যাইডেন্টিটি প্রকাশ করতে চাই না। আশাকরি, শিঘ্রই দেখা হবে। ততোদিন স্বাভাবিক ভাবে চলাফেরা করবে।”

কথা শেষ করে এক সেকেন্ডও অপেক্ষা না করে কল কেটে দিল। সুজন বিড়বিড় করে বলে,
“শা*লা! সবাই স্বার্থ বোঝে। নিজেগো স্বার্থ ছাড়া আমাগো বাইর করত না। চল পলাম বাড়িত গিয়া ঘুম দিমু তারপর সক্কাল সক্কাল পাখিগো দেখতে যামু।”

পলাশ ও সুজন একটা সিএনজি নিয়ে রওনা করে।

চলবে ইনশাআল্লাহ,

#এক_সায়াহ্নে_প্রেমছন্দ
লেখিকাঃ #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১৪
ভোরের র*ক্তিম ঊষা রাতের আঁধার কা*টিয়ে ধরণীতে নতুন সূচনা নিয়ে এসেছে। ফজরের নামাজ মসজিদে পরে মসজিদেই বসেছিল আলো ফোঁটার অপেক্ষায়। ক্যাডেটের স্টুডেন্টরা অনুশীলন করছে। ওদের রুটিন থাকে। মাশরিফও ওদের সাথে যোগ দিল। স্যারদের তো পরিচিত আগেই। ওয়ার্মআপ শেষে একজন এসে বলল,

“ভাইয়া চলেন আমাদের সাথে ডাইনিংয়ে নাস্তা করবেন।”

মাশরিফ হালকা হাসলো। যখন মাশরিফ সদ্য এইচএসসি শেষ করেছে সেই বছর পূর্ণমিলন অনুষ্ঠানে মাশরিফ ও তার বন্ধুরা এসেছিল সদ্য বের হওয়া এক্স ক্যাডেট হিসেবে। তখন এই যাবের নামের ছেলেটিও ক্যাডেটে নতুন। মাশরিফ বলল,

“মা ব*কা দিবে। বাসায় গিয়েই নাস্তা করতে হবে। তোমার প্রিপারেশন কেমন? টার্গেট তো মেডিকেল।”

“জি ভাইয়া। মেডিকেলে চান্স না হলে আপনার মতো আর্মি জয়েন করব।”

মাশরিফ মলিন হাসে। অতঃপর বলে,
“আমি তো মেডিকেলের টার্গেট নিয়ে পড়েও মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষা দেইনি। সরাসরি আর্মিতে গিয়েছি। মা অনেকবার বলেছিল, পরীক্ষা দিতে। আমার রেজাল্টও ভালো ছিল কিন্তু ওইযে জীবনে এমন কিছু ঘটে যার জন্য আমরা লক্ষ্য বদলাতে বাধ্য হই। আমার লক্ষ্যও বদলে গেলো। তুমি মেডিকেলের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করবে। মির্জাপুর ক্যাডেটের ছাত্র হয়ে কোনো সরকারি মেডিকেলে চান্স হবে না তা মানাই যায় না।”

“জি ভাইয়া। দোয়া করবেন। আসি তাহলে। ডাইনিংয়ে যাওয়ার জন্য ড্রেস বদলাতে হবে।”

মাশরিফ মুচকি হেসে ছেলেটির দ্রুততা দেখল। অতঃপর আকাশপানে মুখ করে দীর্ঘশ্বাস ফেলে আপনমনেই বলল,
“অ্যাই মিস ইউ আব্বু। আজ যদি তুমি থাকতে তবে আমার জীবনটা অন্যরকমই হতো। আমার ফার্স্ট ড্রিমকে আমি প্রায়োরিটি দিতাম। তবে যা হয় ভালোর জন্যই হয়। আমি এখন খুব ভালো আছি।”

কথাগুলো ভেবে লম্বা একটা শ্বাস বক্ষগহ্বরে পুরে নিয়ে পুরো মাঠটা আরেকবার চক্কর দিয়ে বাসায় ফিরে। বাসায় ফিরে গোসল করে মায়ের সাথে নাস্তার টেবিলে বসে। রুটি খেতে খেতে বলল,

“মা, আমি দুপুরের দিকে ময়মনসিংহ যাবো।”

মহিমা বেগম ভ্রুঁ কুঁচকে চাইলেন। পানি খেয়ে বললেন,
“কেনো? ময়মনসিংহতে কী? রাফি, শুভদের সাথে দেখা করতে?”

মাশরিফ হাসার চেষ্টা করে বলল,
“হ্যাঁ। ওরাই তো ময়মনসিংহতে আছে।”
“কাল যাস তবে। আজকে টাঙাইলে যাবো তো।”
“না!”

মাশরিফের আচমকা কিছুটা জোড়ালো চিৎকার শুনে মহিমা বেগম থতমত খেয়ে রুটি হাত থেকে রেখে বললেন,
“কী হলো তোর?”
মাশরিফ নিজের নির্বুদ্ধিতা বুঝে জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলল,
“টাঙাইলে না গেলে হয় না? না মানে আমি দুই সপ্তাহের মতো আছি এবার। পরে গেলেও তো পারব। তাছাড়া তোমাকে তো প্রতিদিন ক্লাসের জন্য এতোটা পথ আসতে হবে। তার থেকে ভালো এখানেই থাকি। বাড়িতে করিম চাচা তো দেখাশোনা করেনই। আমরা চলো বৃহস্পতিবার যাবো তারপর শুক্রবার, শনিবার থেকে আসব।”

মহিমা বেগম ছেলের একনাগাড়ে কথায় হেসে ফেললেন।
“জানি তো। কেনো যেতে চাস না। আমাদের বাড়ির পাশে যে দুই বছর আগে নতুন বাড়ি করেছে, সেই বাড়ির মেয়ে কাশফা তোর পিছুই লেগে থাকে। তাই যেতে চাস না।”

মাশরিফ মুখ ভাড় করে বলল,
“বুঝতে যখন পেরেছ তাই আমার কথাটা রাখো। আমি তো আজ যাবোই না। পরশুদিন বৃহস্পতিবার। সেদিন যাবো।”

“আচ্ছা যা তোর আবদার মনজুর। এবার নাস্তা শেষ কর। আমাকে আবার ক্লাসে যেতে হবে। বুয়া আসবে কিছুক্ষণ পর। সে এসে পেয়াজ আর যা কা*টাকু*টি করা লাগবে করে দিয়ে যাবে। আমি সাড়ে এগারোটার দিকে এসে চট করে রেঁধে ফেলব।”

মাশরিফ মৌন সম্মতি দিয়ে খেতে থাকে। মহিমা বেগম নাস্তা শেষে বেরিয়ে যান।

__________

সকালের ক্লাসটা করে তিতির যখন ক্লাসরুম থেকে বেরোবে তখন দুইজন ফ্রেন্ড জারিন ও নাদিয়া আসে। জারিন বলে,
“গতকাল না আমরা ফ্রেন্ড হলাম। তাহলে তুই আমাদের ছেড়ে একা একাই ক্লাস থেকে বের হয়ে যাচ্ছিস কেনো?”

তিতির চমকালো। আচানক সম্বোধনে হতবিহ্বল হয়ে পরলো। ফরিদপুরের বন্ধুদের কথা খুব করে মনে পরছে। ফরিদপুরের মেডিকেলে ক্লাস শুরু করার পর তৃতীয়দিন ইতি এসে তিতিরকে এভাবেই আচানক অধিকারবোধ নিয়ে কথাগুলো বলেছিল।

তিতিরকে ভাবতে দেখে নাদিয়া তিতিরের মুখের সামনে তুড়ি বাজায়।
“কোথায় হারালি?”

ধ্যান ভাঙে তিতিরের।
“কই না তো। কী বলবে?”
“বলছি কী, চল একসাথে ক্যাম্পাসে বসি। লিরা ও জুলিয়াও ক্যাম্পাসেই আছে।”

জারিনের কথায় তিতির রাজি হয়। কিছু না বলে ওদের সাথে যেতে থাকে। ক্যাম্পাসের এক জায়গায় গিয়ে বসে ওরা। সেখানে তিন জন ছেলেও আছে। আসফি, রণক ও ইমরান। সবার সাথে তিতিরকে পরিচয় করিয়ে দেয়। রণক বলে,

“তুমি হঠাৎ মাইগ্রেশন করলে কেনো?”

তিতির মলিন হেসে বলে,
“ওই শহরে তিক্ততা ভরে গিয়েছিল তাই অচেনা শহরে স্বস্থির খোঁজে এসেছি।”
“ফ্রেন্ডদের ছেড়ে আসতে কষ্ট হয়নি?”
ইমরানের প্রশ্নে তিতির জবাব দেয়,
“হয়েছে কিন্তু ওইযে নিজের ঠিকানা বদল করাটা ভিষণ জরুরী ছিল।”

লিরা বলল,
“ইটস অকে। আমরা নাউ ফ্রেন্ডস। রেস্ট অফ দ্যা টাইম উই উইল বি টুগেদার।”
“ইয়েস। নাউ উই আর টিম।”
নাদিয়ার কথায় বাকিরাও তাল মিলায়। তিতিরও সায় দিয়ে হালকা হাসে। তখনি সেখানে সিনিয়রদের টিম হাজির হয়। আসফি, রণক ও ইমরান উঠে রাফি, অর্ক, শুভর সাথে ভাতৃত্বপূর্ণ আলিঙ্গন করে। অর্ক বলল,

“তা নতুন জুনিয়র, কেমন লাগছে ক্যাম্পাস?”

তিতির প্রথমবারে বুঝতে পারেনি কথাটা যে তাকেই বলা হয়েছে। তারপর সবার ভাব-ভঙ্গি ও চাহনি দেখে বুঝতে পারে।
“ভালো ভাইয়া।”

রাফি বলল,
“গতকাল কোথায় গিয়েছিলে। তোমাকে আমি এক বাসার নিচে দেখেছিলাম।”

তিতির কিয়ৎক্ষণ মৌন থেকে জবাব দেয়,
“আসলে ভাইয়া একটা বাসা খুঁজছি। দুই রুমের বাসা। মা আর ভাবীকে নিয়ে আসব তাই।”

“ওহ আচ্ছা। আমাদের বললেই পারতে। প্রায় ছয় বছর ধরে এখানে আছি। এখানের অনেক কিছুই চিনি। তুমি কালকের মধ্যে আশাকরি খোঁজ পেয়ে যাবে। আর কিছু প্রয়োজন হলে অবশ্যই বলবে।”

রাফির কথায় তিতিরের ওষ্ঠকোণে হাসির রেখা ফোটে।
“ধন্যবাদ ভাইয়া। অনেক উপকার করলেন।”

রাফি হালকা হাসে। লিরা বলে ওঠে,
“অ্যাই টোল্ড ইউ না? সিনিয়রা হেল্প করবে। এন্ড দে আর উইলিং টু হেল্প ইউ।”

রাফি লিরাকে দিকে চোখের ইশারায় শা*সায়। তিতির প্রশ্ন করে,
“কেনো?”

এবারও লিরা কথা ঘুরিয়ে বলে,
“বিকজ দে আর সিনিয়র।”

অর্ক ফুঁস করে মনের ভিতরের আশঙ্কাগুলো ঝেড়ে ফেলে। শুভ নাদিয়াকে বলে,
“নাদিয়া, ডাঃ শাফকাত তোমাকে খুঁজছিল। তোমার ফোন কই?”

নাদিয়া অবাক হয়। ব্যাগ থেকে ফোন বের করে দেখে নয়টা মিসডকল। ফোনের রিংটোন বন্ধ। নাদিয়া আর সময় ব্যায় না করে “সরি গাইজ, অ্যাই হ্যাভ টু গো।” এই বলে ছুটল।

“আচ্ছা থাক। আমরাও গেলাম।”
এই বলে রাফি, অর্করা চলে গেল। ওরা চলে যাওয়ার পর তিতির জারিনকে জিজ্ঞেসা করে,

“ডাঃ শাফকাতের ডাকে নাদিয়ে এভাবে ছুটে গেলো কেনো?”

তখন পাশ থেকে আরেকটা মেয়ে নাম তার ফাইজা, এসে বলল,
“বিকজ দে আর কাপল।”

জারিন অবাক কণ্ঠে বলল,
“তোর ঘুম ভেঙেছে তবে? আজও সকালের ক্লাসটা মিস দিলি।”

“এই মাসে তিনবার হলো তাই না? প্রমিজ এরপর থেকে আর মিস করব না। সকালের ক্লাসে এতো ঘুম আসে উফপ!”

ফাইজার কথায় তিতির হেসে দেয়। ফাইজা এখন বলে,
“চল নাস্তা করে আসি। তারপর তো আবার ক্লাস।”

ওরা বাকিরাও সায় দিয়ে ক্যান্টিনে যায়।

_________

বেলা বারোটায় সাগর ও পলাশ এলাকার মোড়ের দোকানে এসেছে। চা, পানি খেয়ে তিতিরদের বাড়ির দিকে বেরিয়েছে। সুজন বলে,

“আমায় ময়নাপাখিডা তো এই সময়ে বাড়িতে থাকতো না। তার তো কলেজে আছে। তোরডা তো কোলে গে*দা বাচ্চা লইয়া এহন।”

“ঠিক কইছোস। এই বাচ্চাডাই এহন ঝামেলা।”

পলাশের প্রত্যুত্তরে সুজন বলে,
“শাশুড়িরে একখান সালাম দিয়া আহি।”

পলাশ ও সুজন হাঁটতে হাঁটতে তিতিরদের বাড়ির সামনে চলে আসে তারপর বাড়ির গেইটের কাছে এসে ভেতরে ঢুকে কেচিগেইটের সামনে দেখে তালা ঝুলানো। সুজন বলে,

“এহানে তালা কেন? কেউ নাই নাকি?”
“বুঝতেছি না তো। কই গেছে? চল তো, মোড়ের দোকানে গিয়া জিগাই।”
“চল।”

ওরা আবার মোড়ের দোকানে ফিরে যায়। গিয়ে দোকানীকে জিজ্ঞেসা করে,
“চাচা, তিয়াসের বাড়িতে তালা কেন?”

চা দোকানী চা বানাতে বানাতে বলল,
“পরশুদিন একটা আর্মি ট্রাক আইছিল তারপর ওই বাড়ির থিকা কী কী জানি নিয়া গেলো। তবে খাটের পায়া দেখছি। তয় কয়দিন ধইরা তিয়াসের বইনেরে তো দেহি না রাস্তা দিয়া যাইতে। ওর মা, ভাবী মনে হয় বেড়াইতে গেছে।”

সুজন ও পলাশ টুথপিক দিয়ে দাঁত খোঁ*চাতে খোঁ*চাতে ভাবতে থাকে ব্যাপারটা।

চলবে ইনশাআল্লাহ,