এতো চাই তোকে পর্ব-১০

0
142

#এতো_চাই_তোকে
#পার্ট_১০
#Mst_Liza

হৃদ ভাইয়ার চোখে রাগ স্পষ্ট। চোখের চাহনি দেখে আমি ভয়ে হাতটা ছেড়ে দিলাম।সঙ্গে সঙ্গে হৃদ ভাইয়া মুখটা ঘুরিয়ে চলে গেলো আমার রুম থেকে। কিছুক্ষণ পর মা আসলো আমার রুমে।আমাকে দেখে জানতে চাইলো আমি কোথায় ছিলাম। আমি লেপের মধ্যে থেকে শুধু মুখটা বের করে দিয়ে কাঁপতে কাঁপতে বললাম ওয়াশরুমে ছিলাম।মা কপালে হাত রেখে বুঝলো আমার গায়ে খুব জ্বর তাই আর কিছু বললো না।

সারাদিন রুমে থেকে সন্ধ্যার দিকে জ্বর খানিকটা কমেছে অনুভব করলাম।নূর আপু ফোন করে বলেছে আপুর বাড়িতে নিউ ইয়ার পার্টি।রাতে অনেক মজা হবে।সায়ানও আসবে।আমাকে তো আসতেই হবে।আমি না বলে দিয়েছি।একই তো হৃদ রেগে আছে আমার উপর।ওর রাগ না ভাঙিয়ে পার্টিতে গিয়েছি শুনতে পারলে আরও রেগে যাবে।আমি বসে বসে ভাবছি কিভাবে হৃদের রাগ ভাঙানো যায়।এতো ভালোবাসে আমায় অথচ রাগ করলে সেটা স্বীকার করতে চাই না।

রাত এগারোটা ছুঁই ছুঁই। মিনির ফোন আসলো।মিনি আমাকে বলল পার্টিতে নাকি হৃদ গিয়েছে। আর প্রিয়ার সাথে ড্যান্সও করছে।আমার প্রচন্ড রকমের রাগ হচ্ছে এখন।যার কস্ট হবে বলে আমি পার্টিতে গেলাম না।সে প্রিয়ার সাথে পার্টিতে গিয়ে ড্যান্স করছে? আমি রুম থেকে বেড়িয়ে রান্নাঘরে সোজা ঢুকলাম। মিজাজ এতোটা খারাপ ফ্রিজ থেকে সব সবজি বের করে আপন মনে কেটে চলেছি।কাকিমণি রান্নাঘরে এসে এটা দেখে আমার কাছে জানতে চাইলো,

—“ফুল এভাবে সবজি কেন কাটছিস?”

আমি অন্য মানুষ্ক হয়ে ফিরে তাকাতে আমার হাতটা একটুখানি কেটে গেলো।কাকিমণি আমার হাতে হলুদ লাগিয়ে দিয়ে বলল,

—“কি হয়েছে ফুল? তুই এমন পাগলামি কেন করছিস?”

আমি অসহায় দৃষ্টিতে কাকিমণির দিকে তাকিয়ে বললাম,

—“তোমার ছেলে আমাকে হুট করে নিয়ে বিয়ে করেছে।বিয়ের আগের মুহূর্ত অবদি আমাকে বলেও নি বিয়ে করবে।হঠাৎ এসেই ভালোবাসি বলেছে।কখনো বুঝতে দেয় নি আমার প্রতি আগে কোনো অনুভূতি ছিলো।কাল সারাটা রাত ভালোবাসার কথা বলেছে।আমাকে স্বপ্ন দেখিয়েছে।সকাল হতেই বলছে আমি কেন রাতে তার রুমে এসেছি।আর এখন আপুর বাসায় পার্টিতে প্রিয়ার সাথে ড্যান্স করছে।যার সাথে তার বিয়ে ঠিক হয়েছে।কোথায় ভেবেছিলাম বিয়েটা ভেঙে যাবে।কিন্তু না।তোমার ছেলে ঠিক করেই নিয়েছে আমার উপর জেদ দেখিয়ে প্রিয়াকে বিয়ে করবে।এখন তুমি তোমার ছেলের বিচার করও কাকিমণি।আমি ওর অবহেলা আর নিতে পারছি না।”

কাকিমণি আমাকে ঘুরিয়ে মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,

—“তুই কি হৃদকে খুব ভালোবাসিস ফুল?”

আমি মাথা কাত করে হ্যাঁ অর্থ বুঝালাম। কাকিমণি বলল,

—“তাহলে তুই পার্টিতে যা।হৃদকে বোঝা।বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে আই।যদি না বোঝে আমি তো আছি।কথা বলবো আমি হৃদের সাথে।”

আমি বললাম,

—“কিভাবে যাবো আমি? মা এতো রাতে বের হতে দেবে না।”

কাকিমণি বলল,

—“তুই চুপি চুপি বের হ।তোকে খুঁজলে আমি না হয় বলে দেবো তুই রুমে ঘুমাচ্ছিস।যেতে দিবো না তোর রুমে।আমি সঠিক সময় বুঝে তোর মাকে হৃদ আর তোর কথাটা বুঝিয়ে বলবো।এখন সবটা জানলে কস্ট পাবে তোর মা।”

আমি একটা স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়লাম।রেডি হয়ে কাকিমণির সাহায্যে বাড়ি থেকে বের হলাম।আপুর বাড়িতে এসে হৃদকে খুঁজছি।মিনি আর নিশির সাথে দেখা হলো।ওরা বলল,

—“তুই আসবি জানলে সায়ান ভাইয়া আসতো ফুল।”

আমি বললাম,

—“আমার জন্য সায়ান কেন আসবে?”

ওরা হেসে উঠে বলল,

—“সায়ান ভাইয়ার মতো এতো সহজ সরল একটা ছেলে।যে সারা জীবন বইয়ের মাঝে মুখ গুজে রেখেছে।সে তোকে পছন্দ করে বিয়ের জন্য প্রস্তাব পাঠিয়েছে।আর তোর জন্য পার্টিতে আসতে পারবে না?”

আমি বললাম,

—“সায়ান আসুক বা না আসুক হৃদ আমার স্বামী। ওর জন্য এসেছি এই পার্টিতে আমি।কোথায় হৃদ? তোরা দেখেছিস ওকে?”

নিশি বলল,

—“মেঘ ভাইয়া আর প্রিয়ার সাথে উপরে যেতে দেখেছি।”

আমি তাকিয়ে দেখতে পেলাম মেঘ স্যার সিঁড়ি থেকে নামছে।সাথে হৃদ আর প্রিয়া নেই।ওদের সামনে আর এক মুহূর্ত না দাড়িয়ে আমি ছুটে মাঝ সিঁড়িতে গিয়ে মেঘ স্যারের সামনে দাড়িয়ে বললাম,

—“হৃদ কোথায় স্যার?”

মেঘ স্যার যেন আমার কথা এড়ানোর চেস্টা করলো।আমাকে বললো,

—“একি ফুল তুমি? নূর তো ইমার্জেন্সি কারণে হসপিটালে আছে।তুমি ইনজয় করো পার্টিতে।”

মেঘ স্যারের কথায় কোনো প্রতি উত্তর না দিয়ে আমি উপরে উঠতে লাগলাম। মেঘ স্যার আমাকে আটকানোর চেস্টা করলো।আমার মনে সন্দেহ জাগলো।ছুটে উপরে আসলাম আর সবগুলো রুমে হৃদ আর প্রিয়াকে খুঁজতে লাগলাম। একটা রুমের দরজার সামনে এসে ভেতর থেকে হৃদের কন্ঠে শুনতে পেলাম।হৃদ বলছে,

—“ফুল অনেক খারাপ হয়ে গেছে।নস্ট হয়ে গেছে ফুল।আর যাই হোক তুমি ফুলের থেকে ভালো।”

এটুকু শুনতে আমার কাঁধে মেঘ স্যারের হাত পরলো।মেঘ স্যার হেসে উঠে বলল,

—“শুনে নিয়েছো এবার? হৃদ তোমাকে কতোটা অপছন্দ করে।তোমাকে অন্যের সামনে খারাপ বলে।এরপরও হৃদের কাছে যাবে।হৃদতো চাই এখন প্রিয়ার সাথে সময় কাটাতে।তাই বলছি ওদেরকে ওদের মতো থাকতে দাও।সামনেই ওদের বিয়ে।”

এমন সময় ভেতর থেকে প্রিয়ার কন্ঠ শুনতে পেলাম।প্রিয়া বলে উঠলো,

—“ঠিকই বলেছো হৃদ।ফুল নস্ট হয়ে গেছে।নূর ভাবি বলল তো ফুল পার্টির জন্য বাড়ি থেকে বের হয়েছে।অথচ দেখও পার্টিতে সবাই আছে শুধু ফুল নেই।তোমাকে বললে তো বিশ্বাস করো না।এসে দেখলে তো ফুল নেই পার্টির কোথাও।ফুল সায়ানের সাথে পার্টি করছে।হোটেলে।যদি জানতাম কোন হোটেলে তোমাকে বলতে পারতাম।নিজে গিয়ে দেখে আসতে।”

এটুকু শুনেই আমি রুমের দরজাটা খুব জোরে ধাক্কা দিয়ে খুলে ফেললাম।তাকিয়ে দেখলাম প্রিয়া হৃদের খুব কাছে।শার্টের কলারটা মুঠোয় টেনে নিয়ে ওর মুখের খুব কাছে মুখটা রেখে আছে।আমি এই দৃশ্য দেখে এগিয়ে এসে প্রিয়াকে টেনে এনে কষিয়ে একটা চড় মারলাম। প্রিয়া ছিটকে পরতে লাগলে মেঘ স্যার প্রিয়াকে ধরে বসলো।প্রিয়া গালে হাত দিয়ে কেঁদে উঠে মেঘ স্যারকে বলল,

—“ভাইয়া আমি বলেছিলাম হৃদের সাথে একটু একা সময় কাটাতে চাই।নতুন বছর একান্তে হৃদের মুখ দেখে শুরু করতে চাই।তাহলে তুমি থাকতে ফুল কিভাবে এখানে আসতে পারলো।

মেঘ স্যার ঘুরে এসে বলল,

—“তোমার সাহস হয় কিকরে আমার বোনের গায়ে হাত তুলার?”

আমাকে মারবার জন্য হাত উঁচু করলে আমি হাতটা ধরে বসলাম।মেঘ স্যারের চোখের দিকে তাকিয়ে বললাম,

—“আপনাকে যে সম্মান টুকু করতাম তা আপনার বোনের জন্য এসব নোংরা কাজ করে শেষ করে দিয়েছেন স্যার।আমি এটাও ভুলে যেতে বাধ্য হবো আপনি আমার বোনের স্বামী।যা পারেন আপনি করেন।আমি হৃদকে ছাড়বো না।হৃদ বললেও না।আপুর জন্য হৃদ অনেক কস্ট পেয়েছে।এটা শোনার পরও হৃদকে আমি আরও কস্ট পেতে দেবো? কিছুতেই না।হৃদ আমার স্বামী। আর আমারই থাকবে সারা জীবন। আপনার বোনের আবদার পূরণ না করে।আপনার বোনকে কিভাবে সঠিক পথে আনবেন সেটা ভাবুন।”

কথাটা বলে হৃদের দিকে ঘুরে তাকালাম। চোখ মুখ ছোট করে এদিকে ওদিকে তাকাচ্ছে হৃদ।আমি কাছে এসে ওর মুখটা ধরে বুঝতে পারলাম মদের গন্ধ বের হচ্ছে মুখ থেকে।আমি বললাম,

—“হৃদ তুমি মদ খেয়েছো?”

হৃদ মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে হেসে উঠলো।আমি হৃদের হাতটা আমার কাঁধে বাঁধিয়ে বললাম,

—“বাড়িতে চলো হৃদ।”

পাশ থেকে প্রিয়া কেঁদে উঠে বলল,

—“ভাইয়া কিছুক্ষণ পরই বারোটা বাজবে।আমার হৃদকে চাই।হৃদের মুখ দেখে আমি নতুন বছর শুরু করবো।আর হৃদও আমাকেই দেখবে।প্লিজ ভাইয়া কিছু একটা করও।”

প্রিয়ার বাইনা শুনে মেঘ স্যার হাত জোর করে আমাকে বলল,

—“প্লিজ ফুল আমি কোনো অশান্তি চাই না।তোমার কাছে অনুরোধ করছি আমি হৃদকে রেখে যাও।আমার বোনের জন্য আমি সব করতে পারি।তুমি যতো টাকা চাইবে ততো টাকা দেবো।”

আমি ওদের পাত্তা না দিয়ে হৃদকে নিয়ে আসতে লাগলাম। ওরা এবার মুখের কথায় না পেরে জোড় করে হৃদকে আমার থেকে ছাড়াতে চাইলো।হৃদকে নিয়ে রুম থেকে বের হতেই আমি ওদেরকে বাইরে থেকে লক করে দিলাম।দরজার ওপাশ থেকে ওরা চিৎকার করতে লাগলো খোলার জন্য। আমি শুনলাম না। চলে আসলাম ওদের দিকে ঘুরে না তাকিয়ে।

চলবে,,,,