এমনই এক দিনে পর্ব-০১

0
1

“এমনই এক দিনে” (পর্ব-১)
ইনশিয়াহ্ ইসলাম।

১.
বিয়ের দাওয়াত খেতে গিয়ে ভুল ঠিকানায় চলে যাওয়া খুবই সহজ ব্যাপার। এমনটা হতেই পারে। কিন্তু উপহার জমা দিয়ে ভালো মতো খাওয়া দাওয়া সেরে আবার উপহার নিয়ে ফিরে যাওয়ার ব্যাপারটা নিশ্চয়ই সহজ কিছু নয়। ব্যাপারটা একই সাথে জটিল ও লজ্জাকর। অনু, রিমা দুজনেই বারবার এই ভেবে ঘেমে একাকার হয়ে গেছে। আজ ফুফুর হাতে মারের থেকেও তাদের যে জিনিসটা নিয়ে বেশি ভয় কাজ করছে তা হলো মান সম্মান হারানোর। আজ শুরু থেকেই সব গণ্ডগোল হয়ে যাচ্ছে। প্রথমেই যেটা হলো, তামিমের বউয়ের জন্য কেনা জুতাটা এক সাইজ ছোট পড়ল। তাদের তিনজনকে ছুটতে হলো সেই জুতা নিয়ে। গিয়ে দেখে শপটা বন্ধ। প্রায় তিন ঘন্টা অপেক্ষা করে তারা জুতা নিয়ে আবার ছুটল পার্লারে কেন না বউ ততক্ষণে সাজতে চলে গেছে। এরপর সেখান থেকে বাড়ি ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে এলো প্রায়। এসে দেখল সবাই তৈরি হয়ে বসে চায়ের আড্ডায় মশগুল, একটু পরেই বের হবে। তারা সারাদিনের ক্লান্তিতে একটু বিশ্রাম নেওয়ার ও সুযোগ পেল না। কারোরই গোসল করা হয়নি দেখে সবাই প্রথমে গোসলে গেল। তাদের গোসল সারতে সারতেই সবাই দেরি হয়ে যাচ্ছে দেখে বেরিয়ে গেল। গোটা বাড়িতে তখন তারা তিনজন, মাজেদের মা ছাড়া আর কেউই নেই। বাইরে অবশ্য দারোয়ান ছিল। গোসল সেরে অনু, রিমা সাজতে বসলেও শর্বরী গেল কফি বানাতে। তার মাথা ধরেছে। মাথা ধরলে কড়া এক মগ কফি না হলে তার চলে না। তবে তার কফি বানাতে আর খেতে না যত সময় লেগেছে তার থেকেও বেশি অন্য দু’জনের সাজার জন্য লেগেছে। বের হওয়ার সময় অনু আমতা আমতা করে বলল,

-‘আপা আমার ক্ষুধা লেগেছে খুব। কিছু খেয়ে বের হই?’

শর্বরী মাথা নেড়ে না করল। রিমা বলল,

-‘আরে এখন কিছু খেলে বিয়ের খাবার আর খাওয়া হবে না বুঝলি। চল চল! আমরা নাহয় যাওয়ার সাথে সাথেই খেতে বসে পড়ব।’

তারা গাড়িতে যখন উঠল তখন কল এলো ফুফুর। শর্বরী রিসিভ করতেই কর্কশ গলায় বলতে লাগলেন,

-‘এই বাড়ির গেটের সামনে গিয়ে দ্যাখ আমার একটা পার্সেল এসেছে যা গিয়ে রিসিভ কর। হাদা গুলোকে বারবার বলেছি সময় মতো আসতে তারা সেই লেইট করেই এলো। আমি রামিশা চৌধুরী কিনা খালি হাতে বিয়ের অনুষ্ঠানে এলাম! লজ্জায় এখনও ভেতরে যেতে পারছি না।’

শর্বরী একটু নরম গলায় বলল,
-‘তাতে কী হয়েছে ফুফু! তুমি ভেতরে যাও না, তোমাদের বাড়ির ছেলেরই তো বিয়ে। তুমি তো আর অতিথি নও। ঘরের মানুষ।’

ফুফু খ্যাক করে উঠলেন,
-‘তোদের এসব মুখের ভালোবাসা তোরা তোদের পকেটে রাখ। আগে আমার পার্সেল রিসিভ কর। আর হ্যাঁ, সাবধান করে দিলাম আগেই। পার্সেল এর মধ্যে আট চল্লিশ হাজার টাকার ডিনার সেট। একটু যদি ঊনিশ বিশ কিছু হয়েছে তো তোদের তিনটার খবর আছে বলে দিলাম।’

-‘আচ্ছা ফুফু তুমি চিন্তা করো না। আমরা সাবধান থাকব।’

তারা পার্সেল রিসিভ করে কনভেনশন হলের ঠিকানায় এলো যখন তখন পড়ল আরেক ঝামেলায়। পাশাপাশি দুটো বড় কনভেনশন হল। দুটোই একদম একরকম দেখতে। দুটোতেই বিয়ের জমজমাট আয়োজন, বেশ অতিথির সমাগম দেখা যাচ্ছে। একটার নাম সায়র আরেকটার নাম নায়র। রিমা বারবার বলতে লাগল সায়র, সায়রেই তাদের বাড়ির অনুষ্ঠান হচ্ছে। তারা ছোট চাচীকে কল করল। চাচীকে রিমা বলল,

-‘ছোট চাচী সায়র না? তোমরা সায়রে না?’

ভেতরে গান বাজনার শব্দের জন্য তিনি বোধহয় ঠিক ভাবে নায়র নাকি সায়র কি বলছে তা শুনতে পাননি। তাই অস্পষ্ট যা শুনেছে তাতেই হ্যাঁ হ্যাঁ করতে লাগলেন। রিমা বিশ্ব জয়ের হাসি হেসে বলল,

-‘কী, শুনলে তো? আসলে আমি বাড়ির সবরকম আলোচনায় যুক্ত থাকি তো। সব খবরাখবর আমার জানা থাকে। আমার ইনফরমেশন ভুল হতেই পারে না।’

ভেতরে ঢুকতেই শর্বরীর কেমন যেন লাগল‌। সব অচেনা মানুষ জন। বিয়েতে সচরাচর অচেনা মানুষ জন আসেই তাই বলে এতটাও অচেনা লাগার তো কথা না। তাছাড়া বাড়ির কাউকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না। এমনকি গেটেও অপরিচিত কিছু মানুষকে দেখল সকলকে অভ্যর্থনা জানাচ্ছে যদিও এটা মেয়ে বাড়ির মানুষরাই করে থাকে। কিন্তু তাদের বাড়ির কেউও নেই। উপহার জমা দিয়ে সে ফুফুকে বলল,

-‘আমি গিফট রেখেছি। তুমি এবার আসো। আর কতক্ষণ বাইরে থাকবে।’

ফুফু অবাক হয়ে বললেন,

-‘বাইরে? আমি তো ভেতরে। এই তো খাওয়া শেষে পান হাতে নিলাম।’

শর্বরী একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে কল কেটে দিল। ফুফু এমন অদ্ভুত স্বভাবের কীভাবে হলো তা সে কোনো ভাবেই বের করতে পারে না। অনু রিমা দুজনেই ভেতরে খেতে বসেছে। শর্বরী গেল না। তার অস্থির অস্থির লাগছে। মাকে দুই বার কল করলেও তিনি রিসিভ করলেন না। আর বাবার তো ফোন বন্ধ বলছে।

রিমা আর অনু খেতে বসে সব খেল। একদম কোনো আইটেম বাদ দিল না। খেতে খেতেই অনুর চোখ গেল তার স্কুল জীবনের সহপাঠী রাতুলের উপর। সে অনুর দিকে তাকিয়ে হাসছে। অনু অবাক হয়ে গেল। রাতুল কোথা থেকে এলো! হঠাৎ কেউ রাতুলকে ডেকে নিয়ে যায়। ততক্ষণে ওদের খাওয়া প্রায় শেষ। দুজনেই হাত ধুয়ে ফিরনি খেতে খেতে শর্বরীর কাছে এলো। রিমা বলল,

-‘খাবার গুলো যা হয়েছে না আপা! ভাবছি বাবাকে বলব কিছু বাড়ির জন্যও রেখে দেয় যেন।’

অনু বলল,

-‘তুমি খাবে না? তুমিও তো সেই কখন থেকে না খাওয়া।’

-‘আমার কাছে কিছু ভালো ঠেকছে না রে।’

-‘কেন? কি হয়েছে?’

-‘কি হবে মানে! বাড়ির সবাই কোথায়? আমাদের বাড়ির কেউ তো নেই ভাবিদের বাড়ির কাউকেও দেখছি না।’

এবার অনুর মধ্যেও ভয় ঢুকে গেল। তারা দুজনেই রিমার দিকে তাকতেই রিমা আমতা আমতা করতে লাগল।

-‘এত বড় জায়গায় সবাইকে কি আর ধরেই চোখে পড়বে! খুঁজতে হবে, তাছাড়া আমরা তো এখনও দোতলায় যাইনি। আর ভাইয়া ভাবি তো শ্যুট করছে বাইরে কোথাও। চলে আসবে, চলে আসবে।’

তার কথা শেষ হতে না হতেই বেশ শোরগোল করে এলো বরপক্ষ। বরকে দেখেই তাদের আর বুঝতে বাকি রইল না যে কি হয়ে গেছে। অনুর ততক্ষণে লজ্জায় যায় যায় অবস্থা। এত টুকু ভুল ঠিক ছিল কিন্তু খাওয়াটা বোধহয় ঠিক হয়নি। ইশ, রাতুল কি তবে এজন্য হাসছিল! কে জানে! এবার কি হবে?

২.
শর্বরী এক জায়গায় চুপচাপ বসে আছে। একটু আগেই ফুফুর সাথে কথা হলো। তিনি চেঁচামেচি করছেন। তাঁর এত দামী উপহার তারা কীভাবে অন্য কাউকে দিয়ে আসতে পারে তা নিয়েই কথা শোনাচ্ছে। ফুফুর এই আটচল্লিশ হাজার টাকার ডিনার সেটের ঝামেলা না থাকলে তারা এতক্ষণে ঠিকই বেরিয়ে পড়ত। অনু রীতিমত কেঁদে ফেলবে মনে হচ্ছে। একদিকে ফুফুর ভয় আরেক দিকে এই লজ্জাজনক পরিস্থিতি। দু’টো তাকে কেমন ঘাবড়ে দিয়েছে। শর্বরী রিমাকে বলল,

-‘এই অবস্থায় আজকে তোর জন্য পড়তে হয়েছে। এখন তুই করবি যা করার। আমি এসবে নেই।’

রিমা নিজেই ছিল শর্বরীর ভরসায়। অনু রিমাকে আর শর্বরীকে ঝগড়া করতে দেখে এবার সত্যিই কেঁদে ফেলল। পাশ দিয়ে তখন লম্বা, চওড়া সুদর্শন এক লোক যাচ্ছিল। অনুকে কাঁদতে দেখেই দাঁড়িয়ে পড়ল। সে এগিয়ে এসে জানতে চাইল কোনো সমস্যা হয়েছে কিনা! অনু মুখ ফিরিয়ে কাঁদতে লাগল। শর্বরীও রাগে কিছু বলল না। রিমা বলল,

-‘আসলে আমরা একটা সমস্যায় পড়েছি।’

লোকটা আন্তরিক হওয়ার চেষ্টা করলেন আরো। বললেন,

-‘জ্বি বলুন! কোথাও কেউ ডিস্টার্ব করেছে?’

রিমা বলতে গিয়েও বলতে পারছে না। তার নিজেরই লজ্জা লাগছে খুব। সে জিজ্ঞেস করল,

-‘আপনি গেস্ট?’

লোকটা এবার একটু হেসে বলল,

-‘না, আমি হোস্ট।’

-‘আপনাদের বাড়ির বিয়ে?’

লোকটা মাথা নেড়ে বলল,

-‘হ্যাঁ, আমাদের বাড়ির মেয়ের বিয়ে অর্থাৎ আমার ছোট বোনের।’

-‘আপনি শিউর তো?’

লোকটা এবার বেশ জোরেই হেসে ফেলল। বলল,

-‘শিউর না হওয়ার কি আছে!’

রিমা জোরে বলে উঠল, ‘আলহামদুলিল্লাহ।’

লোকটা এবার ভ্রু কুঁচকে ফেলল। রিমা বলল,

-‘আসলে আমার একটা ভুল করে ফেলেছি। বাজে রকমের ভুল করে ফেলেছি। এত বা’জে যে আমাদের বলতে ল’জ্জা লাগছে তবুও বলছি!’

রিমা সবটা বলল। সব শুনে লোকটা মাথা নাড়ল বেশ কয়েকবার। তাকে দেখে মনে হচ্ছিল খুব ক’ষ্টে সে হাসি চেপে রাখার চেষ্টা করছে‌। হাসলেই যেন নি’র্ঘা’ত বি’প’দ।

রিমা তাকে বলল,

-‘আপনি বুঝতে পারছেন তো কি বলছি? আপনি প্লিজ একটু হেল্প করুন। ফুফু নইলে আমাদের মে’রে’ই ফেলবে। আর আমরা যে খেয়েছি তা নিয়ে চিন্তা করবেন না। বরং আপনারা চারজন গিয়ে আমাদের ওখানে খেয়ে আসুন। আপনাদের যথেষ্ট আপ্যায়ন করব আমরা। আমরা খুব ভালো মানুষ। ভালো বাড়ির ভালো মেয়ে। সম্পূর্ণ ভুল বশত এখানে এভাবে ফেঁসে গেছি। বুঝতে পারছেন তো?’

লোকটা আড়চোখে অনুর দিকে তাকালো। সে কান্না থামিয়ে তার দিকেই তাকিয়ে। লোকটা রিমাকে বলল,

-‘আপনারা আমার সাথে আসুন।’

উপহার ফিরিয়ে নেওয়ার সময় তিনজনের চোখে মুখেই লজ্জা আর অস্বস্তি দেখা গেল। লোকটা বুঝতে পেরে বলল,

-‘আমার ড্রাইভারকে বলছি সে গিয়ে নাহয় দিয়ে আসবে। ততক্ষণে আপনারা এখানে নাহয় বসুন। একটু আইসক্রিম খান। আমি এনে দিচ্ছি।’

ওরা ভেবে দেখল এটাই ঠিক হবে। এতগুলো মানুষের সামনে তারা ওই উপহার নিয়ে যেতে পারবে না। তাছাড়া তখন তো তাদের ড্রাইভার চাচা এনে দিয়েছিল। এমনিতেও তারা ওটা নিয়ে যেতে পারত না। নির্ঘাত ভেঙে ফেলত। আর তখন আম আর বস্তা দুটোই যেত। লোকটা ওদের আইসক্রিম এনে দিল। শর্বরী হাতে নিয়ে বসে রইল। অনু এক চামচ খেতেই দেখল রাতুল এদিকে আসছে। তাকে দেখেই সে তটস্থ হয়ে গেল। রাতুল একেবারে তার সামনে এসে দাঁড়ালো। অবাক হয়ে বলল,

-‘তুমি অনু না?’

অনু মাথা নেড়ে না বলল। রিমা ফট করে বলে উঠল,

-‘হ্যাঁ, এটা অনু আপা। আপনি চেনেন?’

রাতুল হেসে বলল,

-‘চিনব না কেন? ল্যাং টা কালের দোস্ত আমার। আমি আর ও কত ভালো বন্ধু ছিলাম।’

মি’থ্যা কথা! সম্পূর্ণ মি’থ্যা কথা! অনুর শ’ত্রু ছিল ও। অনু দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

-‘একদম মিথ্যা কথা বলবি না। তুই আমার নামে বিচার দিয়ে নাবিল স্যারের হাতে মা’ই’র খাইয়েছিস। তুই কখনো আমার বন্ধু ছিলি না। মি’থ্যুক একটা!’

রাতুল কথা ঘোরানোর জন্য বলল,

-‘তা তোরা কোন পক্ষ? বর পক্ষ?’

রিমা অনুকে কিছু বলতে না দিয়ে নিজে বলল,

-‘জ্বি জ্বি। বরপক্ষ।’

রাতুল আবারো কিছু বলতে নিবে তখনই এতক্ষণ সব চুপচাপ পর্যবেক্ষণ করতে থাকা লোকটা বলল,

-‘রাতুল, তোকে বলেছিলাম ওইদিকে সব দেখতে। তুই এখানে কি করছিস?’

-‘বাবারা আছে তো।’

-‘আমি তোকে ওখানে থাকতে বলেছি। নীরদ ভাইয়া আসেনি এখনও?’

-‘বলল তো এসেছে। বাইরে কোথাও হয়তো।’

-‘আচ্ছা তুই ভেতরে যা আমি দেখছি ও কোথায়।’

রাতুল অনুদের দিকে তাকিয়ে দাঁত কেলিয়ে হেসে ভেতরে চলে গেল। শর্বরী ফুফুকে কল দিয়ে উপহারের ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে তারপর উঠল। এতক্ষণে সে লোকটার সাথে কথা বলল।

-‘আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনি না থাকলে আসলে এমন লজ্জাজনক পরিস্থিতি থেকে বের হওয়া কষ্টসাধ্য ছিল।’

-‘কোনো ব্যাপার না। আমি বুঝতে পারছি। আর আপনারা আমাদের অতিথিই আমার জন্য। অযথা সংকোচ করবেন না।’

আসার আগে অনু লোকটাকে অনুরোধ করে বলল,

-‘প্লিজ, রাতুলকে এ ব্যাপারে কিছু বলবেন না। ও আমাকে নিয়ে হাসি ঠাট্টা করবে।’

লোকটা অনুর চোখের দিকে তাকিয়ে আশ্বস্ত করল। বলবে না।

অনু আর রিমা এক প্রকার দৌড়ে নায়রের দিকে যেতে লাগল। শর্বরী ওদের পেছন পেছন যাচ্ছিল। ওদের তাড়া দেখে ও নিজেও দ্রুত হাঁটছিল কিন্তু তাতেই যেন আরেকটা গড়বড় হয়ে গেল। ও অসাবধানতাবশত হোঁচট খেয়ে বেশ জোরেই একটা বাইকের সাথে ধাক্কা খেল। সাথে সাথেই বাইকটা এক কাত হয়ে পড়ে গিয়ে একটা গাড়ির হেডলাইট ভেঙে দিল। আর সেখানেই ঘটে গেল আরেক গণ্ডগোল। শব্দ শুনতে পেয়ে চকিতে রিমা অনু পেছনে তাকালো। এই অবস্থা দেখে রিমা ফিসফিস করে বলতে লাগল,

-‘আজ শুধু গণ্ডগোলের উপর গণ্ডগোল!’

শর্বরী হাতে আঘাত পেয়েছে বেশ। উঠে হাত ঝারতে লাগল সে। অনু এগিয়ে আসবে তার আগেই গাড়ি থেকে একজন বেরিয়ে এলো। শর্বরী তার দিকে তাকাতেই ব্যথা ভুলে গেল। শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল। অনু রিমা আর কোনো ঝামেলায় পড়তে চাইছে না। রিমা জলদি এসে শর্বরীর হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে যেতে বলল,

-‘বাঁচতে চাইলে সোজা বাড়িতে চলো। ড্রাইভার চাচা ওইতো গাড়ি নিয়ে বসে আছে। এখানে আর একটু সময় থাকলে আজ আমাদের আর রক্ষা নেই।’

লোকটা কিছু বলছে না, জায়গা থেকেও নড়ছে না। অথচ শর্বরীরা সবাই প্রাণপণে দৌঁড়াচ্ছে। শর্বরী পেছন ফিরে আরো একবার তার দিকে তাকালো। এখনও সেই শ্যেন দৃষ্টিতেই তাকিয়ে আছে তার দিকে। শর্বরীর মনে হলো চোখ দিয়েই লোকটা আস্ত জ্বা’লি’য়ে ফেলতে পারবে তাকে। এমন তীক্ষ্ণ দৃষ্টি, এমন কঠোর মুখাবয়ব সে এ জন্মে আর কারো দেখেনি। সে ছুটে পালিয়ে এলো ঠিকই কিন্তু তার মন বলতে লাগল এই লোক নিশ্চয়ই তাকে খুঁজে বের করে ক’ঠি’ন শা’স্তি দিবে। হয়তো মে’রেই ফেলবে‌। গাড়িতে উঠেই সে কেঁদে ফেলল। তার কাঁদার পেছনে আরেকটা কারণ আছে। সে একজনের একটা জিনিস ন’ষ্ট করে ফেলল অথচ ক্ষমা চাইল না। তার নিজেকে এখন খুব ছোট মনে হচ্ছে। এমন তো সে নয়। অনু রিমা বললেও সে চলে আসার মতো মেয়ে না। কিন্তু আজ চলে এলো। কারণ সে সত্যিই ভ’য় পেয়েছে। তাও আবার একটা মানুষের চোখের দৃষ্টিকে ভয় পেয়েছে! এত ভয় সে অঙ্ক স্যার কেও পায়নি।

চলবে।