এমনই এক দিনে পর্ব-০৬

0
1

“এমনই এক দিনে” (পর্ব-৬)
ইনশিয়াহ্ ইসলাম।

১১.
জীবনের পথ যেন এক অদ্ভুত গোলকধাঁধা। কখন, কোথায়, কার সঙ্গে দেখা হবে তা পূর্বানুমান করা কঠিন। অন্যদিকে কিছু কিছু সাক্ষাৎও যেন অনিচ্ছা সত্ত্বেও বারবার হয়ে যায়। এই অনাকাঙ্ক্ষিত সাক্ষাৎগুলো কখনো হৃদয়ে আলোড়ন তোলে, কখনো বা পুরনো স্মৃতিকে না চাইলেও জাগিয়ে তোলে। শর্বরীর ও তাই হলো। সেদিনের কথা মনে পড়ে গেল। কেমন উদ্ভ্রান্ত আচরণ করছিল! কী না কী বলে ফেলল লোকটাকে! তুই করে বলল, এক টাকাও দেবে না বলল। কিন্তু দোষটা তো ওঁর একার ও না। লোকটা কেমন আবোল তাবোল বকছিল। ওসব শুনতে শর্বরীর ভালো লাগছিল না একদমই। এমনিতে লোকটা ওঁর কথা শুনেছে কি না ও তা জানে না, তবে বিয়ে নিয়ে বাড়িতে এরপর থেকে সত্যিই আর কোনো কথা ওঠেনি। ছোট চাচার আর বাবার কথা সে আড়ি পেতে শুনেছিল, ছেলের বাড়ি থেকে না কি আর যোগাযোগ করেনি। অর্থাৎ, এখানে আর কিছু হওয়ার নেই। শর্বরীর তখন যে কী আনন্দ হচ্ছিল! তবে ও ঠিক করে রেখেছে ও ক্ষতিপূরণ দেবে মুখে যতই না বলুক। ওঁর তো একটা আত্মসম্মানবোধ আছে না কি! ওঁর কাছে টিউশনের, সালামির, জন্মদিনে পাওয়া সব টাকা মিলিয়ে আটত্রিশ হাজার টাকা আছে। ও ভেবেছে ধাপে ধাপে শোধ করবে। প্রথমে ত্রিশ হাজার এরপর বাকিটা ছয় মাস পরে, কারণ ওঁর তো জোগাড় করতে হবে। এমনিতে তো আর এত টাকা উড়ে আসবে না। হ্যাঁ, বাবার থেকে নিতেই পারে। কিন্তু বাবা যখন জিজ্ঞেস করবেন কি জন্যে তখন ও কি বলবে? কোনো ভাবেই বাবাকে জানতে দেওয়া যাবে না। যা হয় হোক। ও কষ্ট করবে। দরকার পড়লে চাকরি করবে। একটু খুঁজলেই একটা না একটা তো মিলেই যাবে। এখন ভাবনার বিষয় হলো আগে এই অসহ্য লোকটাকে তো বোঝাতে হবে। কিন্তু সেদিনের পর তো সে নেগোসিয়েশনে যাওয়ার রাস্তাটাও বন্ধ করে দিয়েছে।

“শর্বরী?”

ফিহা ডাকছে। শর্বরী তাকাতেই চোখের ইশারায় বোঝালো এবার উঠতে হবে। তড়িঘড়ি করে উঠতে গিয়ে ওঁ হাঁটুতে একটু ব্যথা পেল। দরজা পার হওয়ার সময় খেয়াল করল লোকটা তখনও ওঁর দিকে কেমন করে তাকিয়ে আছে।

ক্লিনিক থেকে বের হতেই কেউ একজন অরিনের নাম ধরে ডাকল। ওঁরা সবাই দাঁড়িয়ে পড়ল। পাঞ্জাবি পরা একটা লম্বা চওড়া লোক ওদের দিকে এগিয়ে এলো। অরিন তাকে দেখেই বলল,

“আরে আরেফিন ভাই! কি খবর?”

“এই তো ভালো। তোমার কি খবর? এসেছ কবে?”

“এই তো দুদিন হলো। আপনি কবে এসেছেন!”

“আমি আজকে এসেছি।”

“ওহ। কি অদ্ভুত ঢাকায় থাকি দুজনেই অথচ দেখা হয় গ্রামে এসেই।”

“তা ঠিক। এনারা কে? আর উনার হাতে কি হয়েছে?”

“ওহ, এরা আমার ফ্রেন্ড। ও শর্বরী আর ও ফিহা। ফিহার হাত গাছের ডালের খোঁচায় অনেকটা ছিলে গেছে। তাই এখানে নিয়ে এসেছি।”

“এখন ঠিক আছে তো?”

“হ্যাঁ, কিছুটা।”

শর্বরী খেয়াল করল লোকটা বারবার ওঁর দিকে তাকাচ্ছে। কথা বলছে অরিনের সাথে কিন্তু তাকিয়ে আছে ওঁর দিকে। ও অরিনের পিঠে চিমটি কাটল। বোঝালো এবার যাওয়ার দরকার। অরিন বলল,

“আচ্ছা ভাইয়া, আমরা আসি তবে।”

“দাঁড়াও তোমরা, আমার জিপে করে দিয়ে আসব।”

“আরে না ভাইয়া। একটু খানি পথ, হেঁটেই চলে যাব। আর আমাদের হাঁটতেই ইচ্ছে করছিল।”

“শিউর?”

“একদম!”

যেতে যেতে ফিহা বলল, “কে ছিল রে?”

“চেয়ারম্যানের ছেলে। সেইরকম ব্রিলিয়ান্ট! এক্স বুয়েটিয়ান। ছোটবেলায় মা উনার কথা বলতেন খুব, আমাদের তিন ভাই বোনকে বলতেন উনার পা ধোয়া পানি খেতে।”

বলতে বলতে অরিন নিজেই হেসে ফেলল। ফিহাও হেসে বলল, “তো খেয়েছিস?”

“আরে নাহ, কি যে বলিস! ওটা তো কথার কথা।”

“খেলে আজ ঢাবিয়ান না হয়ে বুয়েটিয়ানই হতি।”

“আমার ঢাবিই আমার জন্য ঠিক আছে। তাড়াতাড়ি চল, তোর এই অবস্থা দল দেখে আমার ভয় লাগছে। আঙ্কেল আন্টিকে কি জবাব দিব?”

“তোর এত ভাবতে হবে না। আমার দোষে আমার এই অবস্থা হয়েছে। তাছাড়া যেতে যেতে ঠিক হয়ে যাবে। বুঝবেও না!”

ওঁরা দুজন নানান কথা বলতে লাগল। শর্বরী তাদের সাথে যোগ দিতে পারল না। কারণ ওর মাথায় দুনিয়ার চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে।
———————————————————

বোর্ডের চেয়ারম্যান এর সাথে কথা বলে নীরদ জানতে পারল তার এখানে আর দুই দিন থাকতে হবে। বিকেলের দিকে তার হঠাৎ ইচ্ছে করল একটু জায়গাটা ঘুরে দেখার। ডক্টর ফারহান ঘুমাচ্ছেন, ডক্টর রোকসানাও তার রুমে। নীরদ যেহেতু একাকী থাকতে পছন্দ করে তাই তার জন্য ভালোই হলো। একাই বেরিয়ে পড়ল। চেয়ারম্যানের এই বাগান বাড়িটা খুব সুন্দর। জায়গাটাও ভীষণ নিরিবিলি। দুই তিনজন চৌকিদার ছাড়া উঠোনে আর কাউকে দেখা যাচ্ছে না। এরা ওদের পাহারা দেয়ার কাজে নিযুক্ত। নীরদকে বের হতে দেখে একজন তার পিছু নিতেই সে বারণ করে দেয়। লোকটা মানছিল না নীরদ কড়া চোখে তাকাতেই আর সাহসও পায়নি জোর করার।

বেশ কিছুক্ষণ হাঁটতে হাঁটতে সে এখানকার ধান ক্ষেত দেখতে পেল। জঙ্গলের রাস্তা পার করে উন্মুক্ত প্রান্তরে এগিয়ে যেতেই শেষ বিকেলের রোদ এসে পড়ল তার সারা গায়ে। এই মুহূর্তে তেমন কোনো মানুষ নেই। বেশ কিছু সময় অতিবাহিত হওয়ার পর ও খেয়াল করল ওপাশ থেকে কেউ একজন এগিয়ে আসছে। একটা মেয়ে, কলাপাতা রঙের শাড়ি পরা। মাথা নিচু করে কি যেন খুঁজছে বারবার। একটু সচেতন হতেই নীরদ লক্ষ্য করল এটা সেই মেয়েটা! নামটা কি যেন? সুরসুরি? ধ্যাত! এটা কি অদ্ভুত নাম এলো ওর মাথায়। মেয়েটা একবার এবার হাঁটু গেড়ে বসে পড়েছে। মাটিতে হাত নেড়ে নেড়ে পাগলের মতো কিছু একটা খুঁজছে। কী ভেবে একটু এগিয়ে যেতেই নীরদের জুতার নিচে কিছু একটা বিঁধে গেল। তাকাতেই দেখল একটা নূপুরের মতো। সে ঝুঁকে ওটা হাতে নিয়ে দেখতে লাগল, টুং টাং শব্দ না হওয়ায় বুঝতে পারল না ওটা আসলে কি! তবে স্বর্ণের কিছু এটা ঠিকই বুঝে ফেলল। চট করেই তার মাথায় এলো মেয়েটা এটাই খুঁজছে না কি!

শর্বরীর মাথা কাজ করছে না। এমন সব অঘটন ওর সাথেই কেন ঘটে? একটু আগেই বন্ধুদের সাথে শাড়ি পরে এখানে এসে ছবি তুলে গেছে। ফেরার পর লক্ষ্য করে ওর পায়েলটা নেই! শখ করে এবার নিয়ে এসেছিল পায়েলটা। সবাই আগেই প্ল্যান করেছিল এখানে এসে শাড়ি পরে ছবি তুলবে। ও সে আশাতেই ওর পায়েলটা নিয়ে এসেছিল। সবসময় তো আর পরা হয়না। আজ একটু পরল আর আজই হারিয়ে ফেলল! শর্বরীর কান্না পাচ্ছে, দাদু মা’রা যাওয়ার আগে ওদের তিন বোনকে তিনটা সোনার পায়েল গড়িয়ে দিয়েছিলেন। দাদুর শেষ স্মৃতি ওঁর কাছে ওটাই তো ছিল! তাছাড়া মা জানতে পারলে কি হবে? এদিক সেদিক যত খুঁজছে পাচ্ছেই না। হঠাৎ ওঁর চোখ পড়ে নীরদের উপর। বিপদের উপর আরেক বিপদ! অন্য সময় হলে ও পাশ কাটিয়ে চলে যেত। এখন ও কোথাও যেতে পারছে না। পায়েলটা কেউ নিয়ে গেলে তো আর পাওয়া হবে না। এই অল্প সময়ের মধ্যে কেউ নিশ্চয়ই নেয়নি, আরেকটু ভালো করে খুঁজতে হবে। নীরদ ওঁর দিকে এগিয়ে আসছে বুঝতে পেরে ও সরাসরি নীরদের দিকে তাকালো। তারপরই ওঁর চোখ পড়ল নীরদের হাতে। সাথে সাথেই ওর মুখে হাসি ফুটে উঠল। ওই তো পায়েল টা! ও নিজেই এগিয়ে গিয়ে বলল,

“এটা আমার পায়েল!”

নীরদ ভ্রু কুঁচকে ফেলল। তাহলে এটার নাম পায়েল। শর্বরী ছো মেরে ওটা নিয়ে নিতে চাইলে নীরদ হাতটা সরিয়ে নেয়। শর্বরী অবাক চোখে তাকাতেই সে বলল,

“প্রমাণ কী?”

“আমি বলছি আপনার বিশ্বাস হচ্ছে না?”

“আপনাকে তো বিশ্বস্ত কেউ বলে আমার মনে হচ্ছে না।”

“দেখুন, আমি এখন একদমই ঝগড়া করার ম্যুডে নেই।”

“আমি আছি?”

“আপনি প্লিজ আমার জিনিস আমাকে দিয়ে দিন।”

“আপনার জিনিস সেটার প্রমাণ দিন দিয়ে দিচ্ছি।”

“আমি তো বলছি!”

“তাই তো দিচ্ছি না। অন্য কেউ হলে দিয়ে দিতাম।”

শর্বরী এবার ভীষণ রেগে গিয়ে কিছুটা তেড়ে এসে বলল,
“আপনি বোঝাতে কি চাইছেন?”

নীরদও আরেকটু এগিয়ে এসে বলল,
“আপনি বুঝেছেন কী?”

শর্বরী নীরদকে এত কাছে দেখে একটু ভড়কে গেল। দুই পা পিছিয়ে গিয়ে বলল, “এটা সত্যিই আমার। আমি মিথ্যে বলছি না।”

মিথ্যে যে বলছে না তা নীরদও ভালো করে জানে। তবে মেয়েটাকে এমন নাজেহাল করতে তার ভালো লাগছে।

তাদের কথার মাঝখানেই সেখানে আরেফিন উপস্থিত হলো সাথে কিছু ছেলে নিয়ে। শর্বরীকে দেখতে পেয়ে এগিয়ে এলো,

“আরে আপনি? এখানে কি করছেন?”

শর্বরী বিরক্ত হলো। এখানে কি করছে সেটার কৈফিয়ত ওই লোককে দিতে হবে? নীরদকে দেখে আরেফিন একটু অবাক হয়েছে যদিও তবে তার সাথে কথা বলল না।

শর্বরী নীরদের দিকে তাকালো। সে আরেফিনের দিকে তাকিয়ে আছে। আরেফিন তাকিয়ে আছে শর্বরীর দিকে। শর্বরী কিছু বলছে না দেখে আবার প্রশ্ন করল,

“অরিন কোথায়? আপনি এখানে একা!”

“অরিনও আছে। আমি একটু এদিকে হাঁটতে এসেছি।”

“সন্ধ্যা হয়ে আসছে, চলেন আপনাকে দিয়ে আসি।”

“লাগবে না। আমি একা যেতে পারব।”

“এই রাস্তায় একা যাওয়াটা ঠিক হবে না।”

শর্বরী কিছু বলতে নিবে তার আগেই অরিনের গলার আওয়াজ শুনতে পেল, শর্বরীর নাম ধরে ডাকছে। তাকে দেখতে পেয়ে শর্বরী আর এক মুহূর্তও দাঁড়ায় না। দ্রুত পা চালিয়ে সেখান থেকে চলে আসে। শর্বরী চলে যাওয়ার পর আরেফিন কিছুক্ষণ নীরদের দিকে তাকিয়ে থেকে সেখান থেকে চলে যায়। নীরদ ও চলে আসবে তখন খেয়াল করল পায়েলটা তার হাতের মুঠোয়। ওহ, মেয়েটাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয় নি।

১২.
সকাল থেকেই শর্বরী বারবার ফিহাকে তাড়া দিচ্ছে, ব্যান্ডেজ বদলাতে হবে। তাড়াতাড়ি ক্লিনিকে যাওয়া দরকার। অরিন যদিও বলেছে দুপুরের দিকে ও‌ নিয়ে যাবে। শর্বরী জোর করে ফিহাকে নিয়ে এলো, অরিন যেহেতু তখন রান্না করছিল তাই ও যেতে পারল না। ঐশী আর সিমিন যেতে চাইলে ওদের বলল অরিনের সাথে থাকতে। ফিহাকে নিয়ে ও যখন ক্লিনিকে এলো তখন তেমন একটা ভীড় নেই। ডক্টর রোকসানা বাইরে বসা ছিলেন, উনার কাছে ফিহাকে বসিয়ে রেখে ও ওয়াশ রুমে যাওয়ার নাম করে ভেতরে ঢুকল। ভেতরে কাউকে দেখতে না পেয়ে যখন বেরিয়ে আসবে তখনই পেছন থেকে শুনতে পেল,

“কি খুঁজছিলেন?”

নীরদ এতক্ষণ ভেতরের একটা বেডে শুয়ে ছিল। সকাল থেকেই প্রচণ্ড মাথাব্যথা করছিল তার, রোকসানা আর ফারহান আজকে তাকে রেস্ট নিতে বলেছে। সে বলেছে এক ঘন্টা ঘুমিয়ে নিলেই ঠিক হয়ে যাবে। তাই ভেতরে রোগীর বেডে শুয়ে পড়ে। ঘুম থেকে উঠেই ও দেখতে পায় কেউ একজন এদিক ওদিক ঘোরাঘুরি করছে। ও তাড়াতাড়ি উঠে এসে দেখল ওটা আর কেউ নয় শর্বরী। ঘাড় মালিশ করতে করতে ও এগিয়ে এলো শর্বরীর দিকে। শর্বরী বলল,

“আমার পায়েল কোথায়?”

“আপনার যে সেটা এখনও প্রমাণ করেননি।”

“আশ্চর্য, আপনি আমাকে অবিশ্বাস কেন করছেন?”

“টাকা পয়সা আর দামী জিনিসের ব্যাপারে আপনাকে বিশ্বাস করা যায় না।”

“আমি আপনার টাকা দিয়ে দিব। আই প্রমিজ! ওদিন রাগ করেই বলেছি ওসব। আমি তো আপনার টাকার ব্যবস্থা করছি। আপনি কিছু দিন অপেক্ষা করুন আমি সত্যি দিয়ে দেব। আগের যুগের জমিদারের মতো এভাবে আমার জিনিস আপনি আটকে রাখতে পারেন না।”

“আপনার জিনিস সেটা আমি বিশ্বাস করব কীভাবে? এটা অন্য কারোও হতে পারে।”

“আপনি অন্য কারো জিনিস হলেও এভাবে রেখে দিতে পারেন না।”

“মসজিদে দিয়ে দিব।”

“ওটা আমার! আমি বলছি তো, আপনি এরপরও এমন কেন করছেন?”

নীরদ কিছু বলল না। এগিয়ে গিয়ে নিজের চেয়ারে বসে পড়ল। শর্বরী নিজের ফোন ঘেঁটে ঘেঁটে কালকের তোলা একটা ছবি বের করল। ওখানে ওর পায়েলটা একটু বোঝা যাচ্ছে। ও জুম করে নীরদের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,

“দেখুন! ওটা আমার পায়ে ছিল। আপনি দেখুন!”

নীরদ তাকালো। সাথে সাথেই ও কাশ দিয়ে উঠল। শর্বরী বুঝল না কাশার কি আছে!

“দেখলেন তো!”

নীরদ ওঁর দিকে তাকিয়ে বলল,
“দেখলাম। কিন্তু এভাবে কাজ হবে না।”

শর্বরী এবার রাগ সংবরণ করতে পারল না। চেঁচিয়ে উঠল,

“কেন হবে না? এখানে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে…

নিজের চোখের সামনে স্ক্রিনটা আনতেই শর্বরী স্তব্ধ হয়ে গেল। ওর আপাদমস্তক কেঁপে উঠল। নীরদের অযথা কাশার কারণটা স্পষ্ট হলো। ও একটু আগে নীরদকে নিজের উন্মুক্ত কোমরের ছবি দেখিয়েছে। গত সপ্তাহে এই ছবিটা তুলেছিল, ওর কোমরে র ্যাশ হয়েছিল, চুলকাতে চুলকাতে একদম লাল হয়ে গেছিল এক পাশ। ওর মামাতো বোন মেডিক্যাল কলেজে পড়ে তাকে বলতেই সে বলেছিল ছবি তুলে পাঠাতে, ও কথামতো পাঠায়। এরপর আর ডিলিট করতে মনে ছিল না। এই ছবিটা একদম কালকের ছবিটার পরেই ছিল। ওর হাত লেগেই তখন ওটা সরে এটা স্ক্রিনে চলে আসে। ওর এত লজ্জা লাগল যে আর দ্বিতীয়বার ফোনটা নীরদের সামনে তোলার সাহস হলো না। ও মাথা নিচু করে বলল,

“এটা ভুল করে হয়ে গেছে। আমার ওইরকম কোনো ইনটেনশন ছিল না। আই সুয়্যার!”

“হু।”

নীরদ মাথা নাড়ল। এরপর কাগজে কিছু লিখতে লাগল। শর্বরী বুঝল আর আশা নেই। যাহ! পায়েলের সাথে সাথে মান সম্মান ও গেল।

ও চলে আসতে নিলেই নীরদ ডাকল, “এই যে, আমি কিন্তু যেতে বলিনি!”

“দরকার নেই আর। আপনি পায়েলটা রেখেই দিন।”

নীরদ এগিয়ে এসে ওর সামনে দাঁড়ালো। একটা কাগজ ওর দিকে বাড়িয়ে দিল। শর্বরী অবাক হয়ে তাকাতেই বলল, “প্রেসক্রিপশন। র ্যাশ এর জন্য।”

শর্বরী চোখ বড় বড় করে নীরদের দিকে তাকাতেই সে বলল, “এত অবাক হওয়ার কিছু নেই। একজন ডাক্তার হিসেবে আমি শুধু রোগীর রোগটাই দেখি বডি না।”

ফিহা শর্বরীর খোঁজে ভেতরে এসে ওকে আর নীরদকে একসাথে দেখে বেশ অবাক হয়। ওকে দেখে শর্বরী অপ্রস্তুত অবস্থায় পড়ে যায়। ফিহা এগিয়ে এসে জানতে চাইল,

“এখানে কি করছিস!”

আর কোনো উপায় না পেয়ে শর্বরী চটজলদি নীরদের হাত থেকে প্রেসক্রিপশন নিয়ে বলে,

“প্রেসক্রিপশন নিতে এসেছি।”

“তোর আবার কি হলো?”

“তেমন কিছু না। চল যেতে যেতে বলব।”

এরপর ওঁ জোর করে ফিহাকে নিয়ে বেরিয়ে এলো। নীরদ তখনও সেখানে দাঁড়িয়ে ছিল। ও ভেবেছিল পায়েলটা দিয়ে দেবে কিন্তু মেয়েটা আজও পালিয়ে গেল। নীরদের মনে হলো পালানো ছাড়া আর কোনো কাজ ও ভালো পারে না।

#চলবে।
(রি-চেইক দেওয়া হয়নি। ভুল ত্রুটি নজরে এলে ধরিয়ে দেওয়ার অনুরোধ রইল।)