এমন একদিন সেদিন পর্ব-১৪+১৫+১৬

0
2

#এমন_একদিন_সেদিন
#মুমুর্ষিরা_শাহরীন
পর্ব-১৪
আশ্চর্য সুন্দরী দুহিতা’টি নীড় কে ওমনভাবে চেয়ে থাকতে দেখে লজ্জা পেলো। লজ্জায় চিবুক’টা মিশে গেলো প্রায় গলার সাথে। মৃদুস্বরে প্রশ্ন করলো,

‘কি দেখছেন? উঠে আসুন না!’

নীড়ের ঘোর ভাঙলো। দৈবক্রমে এখানে নুসরাতের উপস্থিতি তার মস্তিষ্কে ধাক্কা খেলেই সে গরম চোখে তাকালো। বলল, ‘তুমি এখানে কেনো?’

এহেন ব্যবহারে নুসরাতের মুখের আদুরে লজ্জার রশ্মি’টা চট করে নিভে গেলো। টলমল করে উঠলো চোখ। লোকটা কেনো সবসময় কর্কশ ভাষায় কথা বলে? নুসরাত কি খুব খারাপ মেয়ে? একটু কি ভালো করে কথা বলা যায় না? মাথা নিচু করে বলে সে,
‘এই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম। আপনাকে দেখে থামলাম।’

নীড় নরম হলো। বস্তুত সে রুক্ষ, কঠিন, কর্কশ ব্যবহার করতে পারে না কিন্তু এই অবাস্তব চিন্তা-চেতনার, সর্বক্ষণ কল্পনায় বিদ্যমান, অপরিপক্ব রমণী’টির সাথে দেখা হলেই সে একটু আকটু কর্কশ ব্যবহার করে ফেলে। তা নাহলে যে ঘোর বিপদ! সে হালকা আওয়াজে বলল,

‘আচ্ছা, যাও।’

অনুরাগে বেহায়া, নির্লজ্জ নারী’টি তবুও বলে উঠে,

‘আপনি যাবেন না? উঠে আসুন না রিক্সায়।’

নীড়ের রাগ’টা আবার ফিরে এলো। কি করে বুঝাবে এই জগৎ সংসারকে? এতো অবুঝ পৃথিবী কেনো? সামনে তিন পায়ার যানবাহনে বসা নারীটি বা এতো বুঝহীন কেনো! স্বর্ণ বর্ণের রোদ্র ভেদ করে নীড় রক্তিম চোখে নুসরাতের দিকে স্বল্প ক্ষণ তাকিয়ে থেকে বড় বড় পা ফেলে নির্বাকে উল্টো পাশে হাটা শুরু করলো।

৩০.
ঘরে ফিরে প্রকাণ্ড শব্দের হৃদপিণ্ড নিয়ে দুষ্টু দৃষ্টিকে ফোন করলো। কান্না মিশ্রিত কণ্ঠে বরাবরের মতো ডেকে উঠলো, ‘আপু।’

দৃষ্টি মাত্রাতিরিক্ত বিরক্তি নিয়ে তারস্বরে বলে,

‘আচ্ছা বোন, তুই কি কোনো সময় হাসিখুশি, সুন্দর ভাবে আমাকে ফোন করতে পারস না? যখনি ফোন দেস এমন ভাবে আপু ডেকে উঠস যেনো তোরে কেউ মাইরে, কাইট্টে নদী দিয়ে ভাসায় দিছে। তোর এই কণ্ঠ শুনলেই আমার আত্মা ধক করে উঠে।’

দুষ্টু নাক টেনে বলল, ‘কেমন আছো?’
দৃষ্টি মিষ্টি হেসে বলে, ‘ভালো আছি। তুই?’
‘ভালো আছি। বাসায় এসেছি।’
‘কবে?’
‘আজ সকালে।’

দৃষ্টির মন খারাপ হলো। পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেছিলো বলে বাবা মা এখন অবধি তার মুখ দেখে না। বিয়ের পর সে নাইওরি হিসেবে বাপের বাড়ি বেড়াতে আসতে পারেনি। বরকে শ্বশুড় বাড়ির জামাই আদর করাতে পারেনি। বরের সাথে ঝগড়া বিবাদ হলে অভিমান করে চাইলেই সে হুটহাট বাপের বাড়ি চলে আসতে পারে না। পারে না সুখ দুঃখের আলাপ গুলো মায়ের সাথে ভাগাভাগি করে নিয়ে মা’র কোলে নিশ্চিন্তে মাথা রাখতে। ওর আর কোনো ঠিকানা নেই।কতগুলো বছর মা বাবাকে চোখের দেখা দেখে না। মায়ের আচঁলে লুকিয়ে একটু কেঁদে কষ্ট গুলো বের করতে পারে না। বুকে পাথর জমেছে। মাতৃ আদরের পিপাসায় চরম পিপাসিত সে। ভাগ্যিস আদরের বোন’টা তার বুদ্ধিতে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে ভেঙে দেয়নি। সে এখন বুঝতে পারছে। অনুতপ্ত হচ্ছে। নিজেকে ধাতস্থ করে হালকা গলায় দৃষ্টি বলল, ‘ওহ।’

দুষ্টু জানালার ধার ছেড়ে বিছানায় এসে পা উঠিয়ে ভাঁজ করে বসলো,

‘আমি আসার পর পর-ই আজ নীড় বাড়ির সামনে এসেছে।’

দৃষ্টি আৎঁকে উঠলো, ‘কি বলস? আম্মা দেখছে নাকি?’

‘না। ভাগ্যিস আজ আমি বাসায় এসেছি বলে হুটহাট এসে আমাকে পেয়ে গেছে। কিন্তু অন্য কোনোদিন যদি এমন আচমকা এসে বলে, একটু নিচে নামো। তখন কি করবো? কি বলবো? কতদিন অজুহাত দেবো?’

দৃষ্টি খানিকটা নিভলো। হালকা গলায় বলল,

‘দুষ্টু, আমার মনে হয় জীবন’টাকে নিয়ে তুই হেলাফেলা করছিস। তোর উচিৎ যেকোনো একটাতে ফোকাস করা।’

দুষ্টু অপ্রতিভ কণ্ঠে শুধালো, ‘মানে? একটাতেই তো ফোকাস করছি।’

দীর্ঘশ্বাস টেনে নিয়ে দৃষ্টি আবারো বাতাসে ছেড়ে দেয় ,

‘মানে হলো এই যে, তোর কি মনে হয় না তুই দুই নৌকায় পা দিয়ে চলছিস? নীড় অত্যাধিক নম্র, ভদ্র, সুশীল একটা ছেলে। আর প্রচ্ছদও বিনয়ী, শান্ত, ভদ্র একটা ছেলে। শুধু একটু রাগ বেশি ওর। তোর কি মনে হয় না দিনশেষে দুজন ভালো ছেলেকে একসাথে ঠকাবি?’

দুষ্টু কম্পমান স্বরে বলল, ‘আমি ঠকাচ্ছি? সবাই এক কথা কেনো বলছো?’

‘তোর কি এখন সংসার নিয়েই ভাবা উচিত নয়? যা হবার তা তো হয়ে গেছে। তুই যা করছিস, এতে কি হচ্ছে জানিস? বেলাশেষে তুই যখন নীড়ের কাছে যাবি, যতো ভালো মানুষ-ই হোক! নীড় বলবে, তুমি আমাকে এতোদিন ঠকিয়েছো, দুষ্টু। তোমার শরীরে আমার আগেও কারোর স্পর্শ পরেছিলো। আবার যদি নীড়ের কাছে না যাস তখনও সে বলবে, এতোগুলো বছর এতো স্বপ্ন দেখিয়ে এভাবে আমার মন’টা ভেঙে দিলে? এদিকে প্রচ্ছদও কিন্তু বলবে, বিয়ে করে শুধু ঠকেই গেলাম। নীড়ের কাছে গেলেও দু’জনেই ঠকে যাবে। দু’জন সমান কষ্ট পাবে। আফসোস থাকবে। তোকে কথা শোনাবে। আর প্রচ্ছদের কাছে থাকলে শুধু নীড় কষ্ট পাবে।’

‘কিন্তু উনি কেনো কষ্ট পাবেন? উনি কেনো ঠকবেন? উনি নিজেই তো এই বিয়েটা করতে চাননি। তার চেয়েও বড় কথা, জোর করে ধুমধাম বিয়ে দিয়ে দিলো আর তাকেই আমার ভালোবেসে ফেলতে হবে?ভালোবাসা কি এতো সস্তা আপু? তবে তুমি কেনো বিয়ে ভেঙে পালিয়ে গিয়েছিলে?’

অপ্রতুল প্রশ্নে দৃষ্টি উত্তর খুঁজে পেলো না। বোনের কথা’টা যেমন যৌক্তিক তেমন অযৌক্তিক ও বটে। বিয়ে’টা তো ছেলে খেলা নয়। তেমনি ভালোবাসাও মূল্যহীন নয়।

‘প্রচ্ছদ যদি তোকে ভালোবাসে?’

চারিপাশে যেনো বাতাস থমকে গেলো। দৃষ্টির অপ্রত্যাশিত প্রশ্নে দুষ্টু আকস্মিক চমকে উঠলো। মৃদুমন্দ কেঁপে উঠলো দেহ। অনবরত মাথা নেড়ে বলল,

‘অসম্ভব। উনি কেনো আমাকে ভালোবাসবেন? জেনে শুনে কি কেউ আগুনে পুড়তে চায়? উনি তো প্রথম থেকেই জানেন আমি অন্যকাউকে ভালোবাসি। তারপরেও যদি উনি অগ্নিকুণ্ডে ঝাঁপ দিতে চায় তার দায় নিশ্চয়ই আমার নয়। আমি কেনো..’

দুষ্টুর কথার মাঝে দৃষ্টি বাধ সাধলো,

‘আস্তে দাড়াঁ, আমি বলেছি যদি বাসে! ধর, যদি ভালোবেসে ফেলে… তখন কি ওকে ঠকানো হবে না?’

থমকানো হাওয়াটা চারিপাশে আবারো আলোড়ন তুললো। লাফানো বুক’টাতে শত কষ্ট প্রশ্নের বাহার। দুষ্টু ম্লান গলায় বলল,

‘আমার কিছু করার নেই আপু। আমি উনাকে সব জেনেশুনে ভালোবেসে কষ্ট পেতে বলিনি। উনাকে ছেড়ে দিলে হয়তো উনি একজন কষ্ট পাবেন। কিন্তু উনাকে না ছেড়ে দিলে দুজন কষ্ট পাবো। কথাটা স্বার্থপরের মতো শোনা গেলেও এটাই সত্যি। দোষগুলো কি তোমাদের না?’

‘পরে যদি নীড়-ই তোকে না মানে?’

‘কেনো মানবে না? ও আমাকে ভালোবাসে না? ও তো আমাকে বুঝে! তাছাড়া তিনমাস পর তো আমি ডিভোর্স নেবো। আমার সাথে তো আর উনার কোনো সম্পর্ক নেই। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক নাহয় দূরে থাকলো সামান্য দুটো ভালো করে কথা বলার মতোও সম্পর্ক নেই।’

দুষ্টু আবার বলল নিজ বিশ্বাসের আত্মগড়িমায়,

‘উনি আমাকে কখনো ভালোইবাসবে না আপু। তাই, এতোসব কথা অনর্থক। ভিত্তিহীন। উনি ঠকবেন না। দেখা যাবে সবশেষে, সবার মাঝে ঠকে যাবো আমি। তোমরা আমার জীবনটা নষ্ট করে দিলে। জোর করে আর কক্ষনো কাউকে বিয়ে দিয়ো না।’

৩১.
অন্ধিকার তিমিরে ডুবছে ধরণী। ঘন কালো জলদের আড়ালে ডুবেছে চন্দ্র। শীতল হাওয়ায় কোথা থেকে যেনো ভেসে আসছে বকুলের সুঘ্রাণ। দুষ্টুদের বাড়ি থেকে একটু দূরে সামনে একটা ছোট্ট পুকুর। ক্ষুদ্র জলাশয়ের মধ্যিখানে দ্বিজরাজের রুপালী প্রতিবিম্ব। জানালার ধারে একচিত্তে দুষ্টু জলাশয়ে নিবিড় দৃষ্টি প্রক্ষেপ করে দাঁড়িয়ে ছিলো। আচম্বিতে দুষ্টুকে সম্পূর্ণ চমকে দিয়ে ভীষণ অতর্কিতভাবে তার কাধে হাত রেখে এক ঝটকায় সামনের দিকে ঘুরিয়ে নিলো কেউ। দুষ্টু আতঙ্কে মুখের বুলি হারিয়ে ফেললো। লাল বর্ণের বড় বড় নেত্রে তাকিয়ে থাকলো ক্ষণকাল। বিস্মিত কন্ঠ দিয়ে শুধু বের করতে পারলো, ‘আপনি?’

প্রচ্ছদ উগ্রন্থ হাতে ছুড়ে ফেলল দুষ্টুর ফোন’টা। নিমিষেই ভেঙে চৌচির হয়ে গেলো। উষ্মার আগুনে দাউদাউ করে জ্বলে সে বলল, ‘ফোন কি চেহারা দেখার জন্য ব্যবহার করেন?’

দুষ্টু অবুঝ মুখে দাঁড়িয়ে থাকলো। কি হয়ে গেলো, কি ঘটে গেলো ও কিছুই বুঝলো না। মাথার উপর দিয়ে গেলো সব। এমন অপ্রত্যাশিত আগমন তারউপর এমন অগ্নিকাণ্ডের ন্যায় রূপ, দুষ্টুর উল্টো নিজেকে পাগল বলে বোধ হলো সাথে ভীষণ রাগও হলো। বলা নেই কওয়া নেই ধুম করে এসে ছুড়ে ফেলে ফোন’টা ভেঙে ফেলল? নাক ফুলিয়ে সে তর্জনী আঙ্গুল দেখিয়ে বলে উঠলো,

‘আশ্চর্য তো! আপনি পাগল নাকি আমি পাগল?’

চলবে❤️

#এমন_একদিন_সেদিন
#মুমুর্ষিরা_শাহরীন
পর্ব-১৫
‘স্টুপিড।’ বলে পা বাড়িয়ে প্রচ্ছদ বিছানায় বসলো। দুষ্টু বড় চোখে তাকিয়ে তেজ নিয়ে বলল,

‘ইউ স্টুপিড। আমার ফোন’টা কেনো ভাঙলেন?’

প্রচ্ছদ পাত্তাহীন গলায় বলে, ‘যেই ফোন চেহারা দেখার জন্য, সেই ফোন চালাতে হবে না।’

দুষ্টু ভ্রু বাকিয়ে তাকালো। প্রচ্ছদ আড়চোখে তাকিয়ে নিজ পকেট থেকে ফোন বের করে দেখিয়ে বলল,

‘আমি তোমাকে ছয়টা কল দিয়েছি। একটাও রিসিভ করোনি।’

দুষ্টু চোখ উল্টে অবহেলার গলায় বলল,

‘কি কারণে?’

প্রচ্ছদ প্রশ্নটা এড়িয়ে যাওয়া গলায় বলে, ‘খিদা লেগেছে। দুপুরেও খাইনি।’

‘ওতসত বুঝি না। আমার ফোন কিনে দেন। নাহলে কিন্তু খুব খারাপ হবে।’
‘খাবার নিয়ে এসো ফাস্ট।’
‘দিবেন না তো?’
‘নাহ।’

ভাঙা ফোন’টা তুলে সিম খুলে হাতে নিলো দুষ্টু। প্রচ্ছদ হালকা হাতে ফোন চালাচ্ছিলো। ছু মেরে ফোন’টা নিয়ে প্রচ্ছদের সিম খুলে নিজের সিম ভরে বলল,

‘যান। এবার নিজে নতুন ফোন কিনুন।’

ভ্রু টান টান করে দৃশ্য’টুকু হজম করে প্রচ্ছদ এবার তড়িৎ বেগে উঠে দাড়ালো। দুষ্টুর হাত থেকে ফোন নিতে গেলেই সে পিছিয়ে ঘরের দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।

‘দুষ্টু আমার ফোন ফেরত দাও। একটু পর আমার ইম্পোর্টেন্ড কল আসবে মূর্খ।’
‘কোনো ইম্পোর্টেন্ড কল টল নেই। আপনি নিজে মূর্খ। আমার ফোন ভাঙলেন কেনো?’
‘বেশ করেছি।’
‘আমিও বেশ করেছি।’

প্রচ্ছদ চোখ পাকিয়ে তাকালো। দুষ্টু খাবার আনতে চলে গিয়েও পেছন ফিরে এলো। সচেতন দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,

‘কি ব্যাপার বলুন তো? সকালে আপনাকে জোর করে দশ’টা মিনিটের জন্যেও রাখতে পারলাম না। আর এখন বলা নেই কয়া নেই হুট করে এসে পরলেন?’

প্রচ্ছদ হেটে ঘরের চারপাশ দেখতে দেখতে বলল,

‘হুট করে তো আসিনি। ফোন দিয়েছি তোমাকে। কিন্তু তুমি তো ইজি কাজে বিজি। ফোন ধরার সময় পাও না।’

দুষ্টু নাক ফুলিয়ে ভ্রু কুচকে তাকালো। প্রচ্ছদ আমতা আমতা করে আবার বলল,

‘আর সকালে দেখলাম আন্টি মন খারাপ করেছে। বিয়ের পর প্রথম প্রথম জামাইদের শ্বশুড় বাড়ি এসে নাকি ভদ্রতার খাতিরে এক রাত হলেও থাকতে হয়। তাই মা পাঠিয়ে দিলো।’

দুষ্টু চোখ ছোট ছোট করে কয়েকবার প্রচ্ছদকে আগাগোড়া অবলোকন করে ধীর পায়ে চলে গেলো ওর জন্য খাবার বাড়তে।

প্রচ্ছদ আড়চোখে দেখলো। জানালার ধারে দাঁড়িয়ে ক্ষুদ্র ক্ষীণ ঢেউয়ের নিবিড় জলের পানে তাকিয়ে সে বড় করে শ্বাস ফেলল। সে কি অপরাধ করছে নাকি জেনেশুনে সারাজীবনের জন্য নিজেকে কষ্ট খাঁচায় বন্দী করার ফন্দি আঁটছে? এ বাড়িতে আসার ইচ্ছে তো তার মোটেও ছিলো না… মোটেও না মানে মোটেও না। যেচে এই মেয়ের চ্যাটাংচ্যাটাং কথা কে শুনতে চায়? কিন্তু ও যেচেই এসে পড়লো। ভেবেছিলো এই রমণীর সাথে সে কক্ষনো কথাই বলবে না আর। যতদিন থাকার ইচ্ছে বাপের বাড়ি থাকুক। দুদিন কেনো দু’মাস থাকুক কিন্তু আদতে…ও পারলো না। কীভাবে পারবে? অষ্টপ্রহর চোখের সামনে ভেসে উঠছে দুষ্ট মেয়েটার প্রতিচ্ছবি। না চাইতেও এই মেয়ের ভাবনার দখল প্রচ্ছদের প্রাণ জুড়ে। মনের আনাচে-কানাচেতে উড়ছে দ্বিতীয়বার অজানা… অচেনা অনুরূপ কিন্তু নতুন ধারার পাখি।

৩২.
ভর দুপুরে রোদ মাথায় নিয়ে প্রযুক্ত পায়ে হেটে ভার্সিটি থেকে ফিরছে। ঘেমে ভিজে নিয়ে একাকার অবস্থা। মুখে তিক্ত, নোনতা অনুভূতি। চোখে বিরক্তি, ক্লান্তি। হঠাৎ উদ্যম শূন্য বাতাসে ভেসে এলো নারীর কণ্ঠস্বর। প্রযুক্ত ভ্রু কুচকে পেছনে তাকালো। কণ্ঠস্বরী নারী’টিকে দেখে বক্র ভ্রু সোজা হলো। ঠোঁটের কোণায় অপ্রকাশিত হাসি দেখা পেলো। শ্রেয়সী শ্রেয়ার হাত ধরে দৌড়ে এগিয়ে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে বলল,

‘হাই।’
‘হ্যালো।’
শ্রেয়াকে দেখিয়ে বলল, ‘মিট মাই সিস্টার, শ্রেয়া।’

প্রযুক্ত চোখ তুলে শ্রেয়ার দিকে তাকালো। দু’বোনের চেহারা হুবহু মিল না হলেও প্রায় একইরকম। বেশি মিল গায়ের রংটা। উজ্জ্বল শ্যামলা।

‘কেমন আছেন?’
শ্রেয়সী হেসে মৃদুস্বরে বলল, ‘অনেক ভালো। আপনি?’
‘ভালো। তুমি কেমন আছো?’
‘ভালো দুলাভাই। আপনি?’

শ্রেয়সী চোখ পাঁকিয়ে শ্রেয়ার দিকে তাকালো। শ্রেয়া ঠোঁট টিপে হেসে মাথা ঘুরালো। প্রযুক্ত মাথা ঝাঁকিয়ে হেসে বলে,

‘ভালো, শালী।’

শ্রেয়সী ভ্রু উঁচু করে সতর্ক দৃষ্টিতে আবার প্রযুক্তর দিকে চাইলো। শ্রেয়ার মতোই ঠোঁট টিপে হেসে প্রযুক্ত মাথা ঘুরালো অন্যদিকে। হঠাৎই খেয়াল করলো তার বিরক্ত ভাব’টা কেটে গেছে। তিক্ত, ক্লান্তিময় রোদ্র দুপুর’টাকেও ভীষণ আপন বলে মনে হচ্ছে। শ্রেয়া বলল,

‘আপু তুই থাক। দুলাভাইয়ের সাথে গল্প কর। আমার খিদে পেয়েছে। বাসার দিকে গেলাম।’

‘দুলাভাইয়ের সাথে গল্প কর’ কথাটা ঠেস দিয়ে আড়চোখে তাকিয়ে বলে শ্রেয়া পলকেই রিক্সা ডেকে উধাও হলো। শ্রেয়সী আমতা আমতা করে প্রযুক্তের দিকে তাকিয়ে অপ্রস্তুত হেসে দিলো। কি আশ্চর্য! কেমন নার্ভাস ফিল হচ্ছে। এই প্রথমবার! এমন অভূতপূর্ণ অনূভুতি আর কক্ষনো হয়নি। অস্বস্থিতে সে ক্রমাগত হাত মোচড়াচ্ছে। গলার ভেতর যেনো কাঁটা বিধে আছে। প্রযুক্ত বলল,

‘এনি প্রবলেম?’
শ্রেয়সী চমকে উঠলো, ‘হ্যা? না, না।’
প্রযুক্ত চোখ কুচকে আবার বলে, ‘খিদে পেয়েছে?’
শ্রেয়সী এক পলক চেয়ে মাথা ঝাঁকালো। প্রযুক্ত বলল, ‘চলুন তাহলে একটা রেস্টুরেন্টে বসি।’

শ্রেয়সী পা বাড়ালো। এই ভরদুপুরে… রোদ মাথায় নিয়ে.. ঘেমে নেয়ে ভিজে একাকার হয়ে.. কোনো একদিন দেখা হওয়া অপরিচিত বৃষ্টিভেজা পুরুষের সাথে হেটে যাওয়ার পথেই মনে হলো, প্রকৃতিতে লাল, নীল, সবুজ হরেক রঙের আলোড়ন। চারিপাশ স্তব্ধ, নিস্তব্ধ। থমকে গেছে। বাতাস আটকে গেছে, গাড়ি-ঘোড়া থেমে গেছে, সকল পথচারীর স্থান শূন্যে নেমেছে। সেই সাথে থমকে গেছে চঞ্চল, বেপোয়ারা, উদ্যম এক নারীর দুরুদুরু হৃদয়। চাঞ্চল্য চোখ দুটো’তে কেমন.. কেমন যেনো নামহীন এক অনুভূতি। মনেতে হঠাৎ উঁকি দিচ্ছে, ‘লোকটা কি একটু বেশি সুন্দর?’

৩৩.
বাসার সামনে নেমে রিক্সা ভাড়া দিতেই শ্রেয়া খেয়াল করলো, কালকের গাড়ি’টা আজও তার বাড়ির সামনে। শ্রেয়া বড় বড় পা ফেলে এগিয়ে গেলো গাড়ির দিকে। কালো কাচে ঠকঠক ধ্বনি তুলতেই কাচ নামিয়ে দেওয়া হলো।

সাজিদ তখন মুগ্ধ-বিমুগ্ধ। এহেন অতর্কিত ভাবে এতো কাছ থেকে মেয়েটার দেখা পাবে সে কল্পনাও করতে পারেনি। বুক’টাতে শব্দ করে হৃদপিন্ড সংকোচিত-প্রসারিত হচ্ছে। বিস্মিত, বিহ্বল চোখে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে থাকলে মেয়েটা কর্কশ কণ্ঠে বলে উঠলো,

‘কি? বয়সের দিকে হুশ নাই? জলদি নামুন গাড়ি থেকে।’

সাজিদ হতবাক। মুগ্ধ দৃষ্টি জোড়ায় আতংক, ভীতি, বিস্ময়। কিন্তু আশ্চর্য! এতো সুন্দর মেয়েটার কণ্ঠ এবং ভাষা কেনো এতো কুৎসিত, কর্কশ এবং রুক্ষ?

চলবে❤️

#এমন_একদিন_সেদিন
#মুমুর্ষিরা_শাহরীন
পর্ব-১৬
সাজিদ ভীতি জড়িত কণ্ঠে আমতা আমতা করে কিছু বলতে ধরতেই শ্রেয়া আবার ধমক দিয়ে উঠলো,

‘আপনাকে গাড়ি থেকে নামতে বলেছি না?’

সাজিদ গাড়ি থেকে নামলো। শ্রেয়া চোখ গরম করে বলল, ‘বয়স কত আপনার?’

সাজিদ থতমত চোখে শ্রেয়ার দিকে তাকিয়ে অস্পষ্ট স্বরে বলে, ‘ত্রিশ।’

শ্রেয়া বুকে হাত ভাঁজ করে দাড়ালো। বিদ্রুপ সুরে বলল, ‘ত্রিশ? আর আমার বয়স জানেন? মাত্র 18+।’

সাজিদ চোখ তুলে তাকালো। বুকের ভেতরটা অসজ্ঞায়িত মনোভাবে ছেয়ে উঠলো। অস্বস্তি নিয়ে তাকাতেই শ্রেয়া পুনরায় বলল রুক্ষ স্বরে,

‘লজ্জা লাগে না হাটুর বয়সী একটা মেয়ের পেছনে ঘুরতে? যে বয়সের ছেলে সে বয়সের মেয়ের পেছন গিয়ে লাইন মারুন না! আমার পেছনে কি? খবরদার, আমার পেছনে আরেকদিন ঘুরঘুর করতে দেখলে মেশিন একদম অফ করে দিবো।’

শ্রেয়া হনহন করে চলে গেলো। সাজিদ কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। ত্রিশ বছরের জীবনে কোনো মেয়ে তার সাথে এহেন আচরণ করেনি। বলা ভালো, করার সুযোগ’ই পায়নি। সাহস হয়নি। অথচ এই মেয়ের কথাবার্তার ঢং-এ তার দু ঠোঁটের মাঝে বিস্ময়তার কিঞ্চিৎ ফাঁক।

৩৪.
দুপুর তখন প্রায় গড়িয়েছে। সূর্যের প্রকট আলোয় যেনো জ্বলসে যাচ্ছিলো পিচ ঢালা পথ। শেষ বিকেলের নরম, মিষ্টি শীত আগমনী হাওয়ার সাথে মিশে তেজস্বী সূর্য ঠান্ডা হলো। তাপের উত্তাপ কমে এলো। শ্রেয়সী রাস্তার ধার ধরে হাটছিলো। পাশে তার কদমে কদম মিলিয়ে হাঁটতে থাকা যুবকটির মুখের বামপাশ মৃদু কাঞ্চন বর্ণের রঙের পেলব রোদ্দুরের জৌলুসে উজ্জ্বল। চোখের চশমার এক কোণায় কিরণ প্রতিসরিত হয়ে ঝলমলিয়ে উঠছে। ওমন ঔজ্জ্বল্য পুরুষের ঠোঁটের মাঝে বহমান মিটিমিটি হাসি। শ্রেয়সী ঘাড় বাঁকা করে বলল,

‘আপনি কি হাসছেন?’

প্রযুক্ত হেসেই উত্তর দেয়, ‘কই না তো। হাসবো কেনো?’

শ্রেয়সী মুখ বাকাঁয়। প্রযুক্ত বলে, ‘আই উইশ আপনার মুখ’টা পার্মানেন্ট বেঁকে যাক। মুখ বাঁকালে আপনাকে ভীষণ সুন্দর লাগে।’

শ্রেয়সী ডান ভ্রু উঁচু করে প্রযুক্তর কথা শুনলো। তাকে কি অপমান করা হলো নাকি সুনাম?

‘আপনার বাসা কতদূর?’

শ্রেয়সী ঘাড় ফিরিয়ে আবার তাকালো। প্রযুক্ত পকেটে হাত রেখে বলে,

‘কি ব্যাপার বলুন তো! এতোটুকু পথ শুধু শুধু হেটে যাচ্ছেন। একটা রিক্সা ডাকি? আপনার বাসা কোথায়?’

শ্রেয়সী কিছু খোঁজার ন্যায় আশেপাশে তাকায়। এরপর শূন্যে আঙ্গুল তুলে বলে,

‘ওই যে, দূরে দেখছেন? নদীর পাড়? আমরা সেই পাড়ে বসবো। বাসায় এখন যাবো না। অনেক দিন পাড়ে বসি না।’

‘আমার সাথে নদীর পাড়ে বসে ভালো লাগবে না। আমি খুবই বোরিং মানুষ। চুপ করে শুধু হাওয়া খেতে হবে।’

প্রযুক্তের মজার ছলে বলা কথা’টার পর পর-ই শ্রেয়সী সম্পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালো। অনুরাগী চোখদুটো সৌহার্দ্যপূর্ণ। প্রণয়ী আকাঙ্ক্ষা। তাকে বলতে শোনা গেলো আবিষ্ট মনে কম্পমান সুরে,

‘কিছু বিশেষ মূহুর্তে চুপ থাকলেও অনেক অব্যক্ত বাণী পেষণ হয় আর সেই নিরুপম অভূত সুন্দর মূহুর্ত গুলোর মধ্যে একটির জন্য বোধহয় প্রয়োজন নদীর পাড়, ভেজা বালি আর গা শিরশিরে ঠান্ডা পবন। যা ছুলেই গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠে। সে হাওয়া হোক কিংবা পাশের সঙ্গী।’

প্রযুক্ত জড়ীভূত হয়ে তাকালো সামনের বিস্ময়কর নারী’টির দিকে। সেই নারীর ঠোঁটে কোমলপ্রাণ হাসি। হেলেদুলে ছন্নছাড়া হয়ে যাচ্ছে সে সাথে দিশেহারা করে দিচ্ছে প্রযুক্তকে। ক্রমেই যেনো নিশ্চল হয়ে আসছে তার পা জোড়া। নিঃসাড় হয়ে গেলো হৃদয়। কেবল শরীর জুড়ে বয়ে গেলো সুরেলা করুণ কুহুতান।

৩৫.
শৈত্যপূর্ণ প্রভাতের অরুণের নরম রোশনাই। মিহি কুজ্ঝটিকার বেড়াজালে পিষ্ট সূক্ষ্ম সবুজ দূর্বাঘাস। উত্তুরে হিম পবন। দুলছে সাদা জবা ফুলের তরু’টা। প্রচ্ছদ জানালা থেকে আনমনে বাড়িয়ে দিয়েছিলো হাত। হাতে তার ছোট্ট একটা গুরুত্বপূর্ণ কাগজ ছিলো। বেখেয়ালে হাত থেকে কাগজটা ফসকে নিচে পরে গেলো। বোকামির লেভেল দেখে প্রচ্ছদ তখন চরম বিস্ময়ের ঘোরে। ঠোঁট দুটো হা হয়ে গেছে। হন্তদন্ত হয়ে পড়িমরি করে ছুটে গেলো সে। যেতে যেতে বিরবির করলো,

‘আবেগের ভাবনায় যত মশগুল, তত তাড়াতাড়ি ফুটবে মরণ-ফুল।’

জবা গাছের সাথে লাগোয়া কিছু গন্ধরাজ এবং গোলাপ ফুলের সমারোহ। প্রচ্ছদ এতো গাছের ঝঞ্জাটে প্রয়োজনীয় কাগজ’টা খুঁজে পাচ্ছে না। ছোট ছোট আগাছা, খড়কুটো, ঘাসের আদলে কোথায় যে পড়লো কালো কাগজটা!

অনেকক্ষণ বাদে খোঁজাখোঁজির পর প্রচ্ছদ কাগজের সন্ধান পেলো। প্রস্ফুটিত ঠোঁটে কাগজটা হাতে নিতেই পেছন থেকে কে যেনো বলে উঠলো,

‘কি টুকছেন, টোকাইওয়ালা’দের মতো?’

প্রচ্ছদ ভ্রু কুচকে পেছন ফিরে চাইলো। দুষ্টু কালো কাগজ’টা খেয়াল করে বিস্ময়কর ভঙ্গিতে পুনরায় বলে উঠলো,

‘ইয়া মাবুদ! আপনি কি সত্যি টোকাইওয়ালার দলে নাম লেখালেন নাকি? যেখানে সেখানে থেকে কাগজ টুকে বেড়াচ্ছেন? মান-সম্মান আর কিছু রাখবেন না?’

প্রচ্ছদ দাঁত কটমট করে বলল, ‘হোয়াট রাবিশ!’

দুষ্টু চোখ উল্টালো। প্রচ্ছদ বলে,

‘তুমি এখানে কেনো এসেছো? আমার লেজ ধরে ঘুরো কেনো? যেখানেই যাই, আমি যাওয়ার আগেই তুমি হাজির।’

দুষ্টু নাক ফুলিয়ে তুড়ি বাজিয়ে ভাব নিয়ে বলল,

‘ও হ্যালো! বাড়ি’টা আমার ঠিকাছে? মা চা খাওয়ার জন্য ডাকছে। বাবা আপনার জন্য বসে আছে। আমি আপনাকে দেখলাম এদিকে আসতে তাই ডাকতে এসেছি।’

প্রচ্ছদ পাত্তাহীন গলায় বলে, ‘আমি চা খাই না, যাও।’

দুষ্টু চোখ পাঁকায়, ‘খান না তো কি হয়েছে? আজ খাবেন। আপনাকে তো আর বাজে জিনিস খেতে দেওয়া হচ্ছে না।’

প্রচ্ছদ বিরক্ত হয়ে বলল, ‘তুমি একটু বেশি বকবক করো। যাও এখান থেকে। আর গিয়ে কফি করো।’

‘অসম্ভব! আপনার জন্য এই মূহুর্তে কফি বানানোর বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই আমার। আর এতো কফি খাওয়া ভালো না। শরীর কড়া হয়ে যাবে।’

‘জ্ঞান দিতে বলেছি? যাও!’

প্রচ্ছদ ধমকে উঠে। লোকটার ভালো বলতে গিয়েও দুষ্টুর ধমক খেতে হয়! এই দুনিয়ায় কারোর উপকার করতে নেই। দুষ্টু রেগে গুটিগুটি পায়ে চলে যেতে ধরতেই প্রচ্ছদ ডেকে উঠলো,

‘শোনো!’

দুষ্টু তাকায়। প্রচ্ছদ জবা ফুল গাছ থেকে একটা ছোট্ট সাদা জবা পাড়লো। ঘর ঘেঁষে বেড়ে উঠা এই সাদা জবা ফুলের গাছ’টা নিতান্তই একটি অপছন্দের ফুল দুষ্টুর কাছে। কিন্তু এই ফুলের প্রতি মায়ের অদৃশ্য অদ্ভুত এক টান থাকায় বাড়িয়ে আনাচে-কানাচে তিন’টে গাছ লাগানো হয়েছে। প্রচ্ছদ জবা ফুলের গায়ে কয়েকবার হাত বোলালো। আলতো করে ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখলো। এই ফুলটি তার ভীষণ প্রিয়! মিষ্টি হেসে দুষ্টুর দিকে ফুল’টা বাড়িয়ে দিয়ে বেসুরে গলায় গাইলো,

‘গোলাপ ফুলের জায়গায় আমি, দিলাম তোমায় জবা।’

দুষ্টু অবাক। খানিক’টা খুশিও হলো। কিন্তু তাকে পুরোপুরি স্তম্ভিত করে দিয়ে প্রচ্ছদ ওর হাতে ফুল গুঁজে দিয়ে এসে পড়লো। আসার আগে তাকে বলতে শোনা গেলো,

‘প্রিয় জিনিস প্রিয়’র কাছেই সুদৃশ্য দেখায়!’

প্রচ্ছদের যাওয়ার পানে অপলক তাকিয়ে থেকে দুষ্টু বিসদৃশ উদ্বেগ নিয়ে তাকালো হাতে থাকা ফুলটার দিকে। তাকিয়ে থাকতে থাকতেই কেনো যেনো…. ভীষণ মায়া হলো। এই মায়া’টা ফুলের জন্য নাকি ফুলদাতার জন্য বোঝা গেলো না! তবে হঠাৎই ভীষণ মন খারাপ হলো। ইতিহাসের পাতা অবলোকন করে ধারণা করা যায়, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অনুভূতির ঢল থেকে বৃহৎ কিছুর উৎপত্তি। দুষ্টু চাইছে না এ অনুভূতি বাড়ুক! কেউ কোনো প্রকার দেনা-পাওনা তার প্রতি জমিয়ে রাখুক। কিছু মায়া এমন ভাবে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে রাখে যে চাইলেও আঁকড়ে ধরে রাখা যাবে না কিংবা ধরতে ইচ্ছে করবে না বা ধরার সময়’টাই হয়তো থাকে না। সেই ‘হয়তো’ বলা আফসোসের কিছু সম্পর্কে এই অদ্ভুত মায়ার বেদনা না থাকা’️টাই শ্রেষ্ঠ!

চলবে❤️