এমন একদিন সেদিন পর্ব-৩৫

0
2

#এমন_একদিন_সেদিন
#মুমুর্ষিরা_শাহরীন
পর্ব-৩৫
‘অসম্ভব? কেনো অসম্ভব?’

টিয়া দু’হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরলো। সবুজা হক এগিয়ে এসে পুনরায় বললেন,

‘নীড়কে তোর পছন্দ নয়? তুই না একটু আগে বললি নীড়ের সাথে তোর মিলে ভালো?’

টিয়া মাথা থেকে হাত নামালো। ক্রোধে উঁচুস্বরে বলল,

‘মা, দুজনের মাঝে মিলে ভালো বলে এই নয় যে বিয়ে করতে হবে। আমি তাকে ভাইয়া বলে ডাকি। স্বামীর নজরে কখনো দেখা তো দূর ভাবিওনি। আমি কীভাবে তাকে বিয়ে করতে পারি? তোমরা এই প্রস্তাব রাখছো কি করে?’

মারুফ হক হেসে বললেন,

‘ভাবিসনি তো এখন ভাববি। নীড় তো আর খারাপ ছেলে না। ওর মতো গুড, ব্রাইট, হ্যান্ডসাম ছেলে আর একটাও খুঁজে পাবি নাকি?’

‘ সম্ভব না। কক্ষনো সম্ভব না। আশ্চর্য! এই সম্পর্ক হতে পারে কীভাবে?’

নীরা বাঁকা হেসে বলল,

‘কেনো সম্ভব নয়? তোমার কি অন্য কাউকে পছন্দ?’

ওই ঠেস মারা কথাটা কানে ডুকা মাত্র টিয়া চমকে ঘাড় ঘুরিয়ে বাবা-জেঠুর মুখ দেখলো। মারুফ হক ভ্রু কিঞ্চিৎ কুচকে এবার গম্ভীর সুর টেনে বললেন,

‘আমি তো বুঝতে পারছি না সমস্যা কোথায়? তোর কাউকে পছন্দ?’

টিয়া উত্তর দেওয়ার আগেই মারুফ হক নিজেকে বুঝানো ন্যায় আত্মবিশ্বাসী কণ্ঠে বলেন,

‘নাহ। তোর তো কাউকে পছন্দ নয়। তুই তো সব কথা আমাকে বলিস। আমার মেয়ে তো আমাকে না জানিয়ে কিছু করতে পারে না। আমার কথার বিরুদ্ধে আমার কলিজা কখনো গিয়েছে নাকি? নীরা পরেরবার থেকে আমার মেয়ে সম্পর্কে ভেবেচিন্তে, মুখে লাগাম টেনে কথা বলবে।’

মারুফ হকের মেয়ের প্রতি বিশ্বাস এবং উত্তেজিত কন্ঠস্বর দেখে টিয়ার নিজেকে এতোটা সহায়-সম্বল হীন বলে মনে হলো যে, সে ঠোঁট কামড়ে মেঝের দিকে তাকিয়ে রইল চুপচাপ। নীরা মুখ বাঁকালো। টিয়া নিচুস্বরে বলল,

‘আমি নীড় ভাইয়াকে বিয়ে করতে পারবো না, বাবা। ইভেন, নীড় ভাইয়া কেনো কাউকেই বিয়ে করতে পারবো না।’

নীরা বেহায়ার ন্যায় খোঁচা মারা গলায় আবার বলল,

‘এবার আমি সিউর টিয়ার অন্যকাউকে পছন্দ। দেখলেন তো বাবা? আপনি তো শুধু শুধু আমাকে কথা শুনান।’

পাশ থেকে সাজিদ নীরার হাতে চিমটি কেটে চোখ পাঁকিয়ে তাকালো। টিয়া বিস্ফোরিত চোখে নীরার দিকে তাকিয়ে আছে। কে বলবে, এ তার নিজের ভাবী? নিজের ননদের সাথে এভাবে পলিটিক্স করছে? এভাবে ফাসিয়ে দিচ্ছে? এমন ভাবি আর কারোর না হোক। এ পর্যায়ে মারুফ হক সোফা ছেড়ে উঠে দাড়ালেন। তর্জন গর্জন করে বললেন,

‘আর একটা কথাও কেউ বলবে না। আগামী শুক্রবার টিয়া আর নীড়ের বিয়ে। আমি আর ভাই ডিসিশন নিয়ে নিয়েছি। এর বাইরে একটা টু শব্দ কানে এলে কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলবো।’

টিয়া অসহায় কণ্ঠে নীড়ের দিকে তাকিয়ে বলল,

‘নীড় ভাইয়া তুমি তো কিছু বলো, প্লিজ? এটা কি আদেও হতে পারে?’

নীড় উঠে দাড়ালো। দীর্ঘশ্বাস ফেলে শক্ত গলায় বলল,

‘আমার কিছু করার নেই টিয়া৷ আমার কোনো আপত্তি নেই। মামাদের মুখের উপর আমি না করতে পারবো না। তোমার আপত্তি থেকে থাকলে তুমি তাদের বোঝাও। যেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে তাতেই আমার সম্মতি রয়েছে।’

টিয়ার শুকনো চোখ দুটো অবাকতা নিয়ে তাকালো। তাকাতেই বাম চোখ থেকে একটা জলের ধারা বেয়ে নেমে গেলো চিবুক অবধি। এ কোন নীড়! হঠাৎ করেই বদলে গেলো? সবাই এমন করছে কেনো? কেউ কি তাকে বুঝতে পারছে না? কেনো তাকে প্রকাণ্ড যন্ত্রণার গর্তে ঠেলে দিচ্ছে? এও লেখা ছিলো টিয়ার কপালে?

সে ক্রমাগত বিরবির করতে করতে উল্টো পায়ে পেছালো,

‘এতোটা স্বার্থপর হয়ো না সবাই। হয়ো না। সবাই কি তোমরা অন্ধ হয়ে গেলে? মেয়ের কষ্ট চোখে পরছে না তোমাদের?’

বলতে বলতেই ছুটে চলে গেলো নিজের ঘরের দিকে।

৭৩.
উদাসীন শৈত্যের কুহেলিকার কুজ্ঝটিকায় শরীর হীম হয়ে উঠেছে। নিটল সুন্দর ফর্সা হাত দুটোর দখলদার সোনার চিকন চুড়ির সাথে লেগে কাচের প্লেটের মিষ্টি ঝনঝনানি শব্দ দিয়ে চারিপাশ আলোড়িত। সকাল তখন এগারোটা তবুও ঊষাপতির মুখ ভার। রূর্যকিরণের দেখা নেই। চারিদিকে হুহু করে বয়ে যাওয়া ঠান্ডা হাওয়া। নীড় চলে গেছে ঘণ্টা খানেক হবে। দুষ্টু কাজ করছিলো অন্যমনস্ক হয়ে। কালকে মিলাদে বের করা বাড়তি প্লেট, বাটি, গ্লাস গুলো ধুয়ে তুলে রাখছিলো কেবিনেটে।

‘দেখেশুনে কাজ করো। প্লেট টেট ভেঙে নিজেই ব্যথা পেতে পারো।’

বলতে না বলতেই দুষ্টুর হাত থেকে কাচের একটা গ্লাস পরে ভেঙে গেলো। এতোটা চমকে উঠলো যে ওর সারা শরীর ঝাঁকুনি দিয়ে উঠলো। মেঝেতে ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যাওয়া গ্লাসটার দিকে তাকিয়েই অবাক হয়ে সিড়িন হকের দিকে তাকালো একবার। এরপর তড়িঘড়ি করে যেই কাচ উঠাতে গেলো ওমনি তর্জনী আঙ্গুল’টা ফ্যাচ করে কেটে গেলো। কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে দুষ্টু চিৎকার করলো না, টু শব্দটি পর্যন্ত করলো না। মিনিট দুয়েক চোখ খিচে বন্ধ করে যেই আবার কাচ গুলোতে হাত দিতে যাবে ওমনি একটা দাম্ভিক, হালকা মোটা, মৃদু কুচকে যাওয়া চামড়ার নরম হাত এসে তার হাতটা আঁকড়ে ধরলো। কেনো কে জানে সিড়িন হকের দিকে তাকাতেই দুষ্টুর চোখ দুটো ছলছল করে উঠলো। কান্না পেলো। এই ভেবে নয় যে তার হাত কেটেছে, বরং এই ভেবে যে সে এখন কত্ত বড় হয়ে গিয়েছে! আগে হালকা টোকা লাগলেও বাড়িতে তুলকালাম চালাতো আর এখন…?

সিড়িন হক ব্যতিব্যস্ত হয়ে দুষ্টুকে উঠিয়ে চেয়ারে বসালেন। এরপর প্রায় ছুটে ঘর থেকে মলম আর ব্যান্ডেজ নিয়ে আসলেন। কাটা আঙ্গুল’টায় ব্যান্ডেজ করতে করতে ধমকে বলে চললেন,

‘মুখের কথা মুখে রইল আর হাত কেটে বসে থাকলো। এতো কি ভাবো সারাক্ষণ? তোমাকে কে বলেছে আগ বাড়িয়ে কাজ করতে? আগে শিখবে তারপর কার্য ফলানোর চেষ্টা করবে। কেয়ারলেস মেয়ে একটা!’

দুষ্টু প্রতিত্ত্যুর করলো না। একদৃষ্টিতে সিড়িন হকের ওই অন্যরকম এক ধরনের গাম্ভীর্যের গভীর আচ্ছাদন ভাঙিয়ে মমতাময় সুন্দর মুখটার দিকে তাকিয়ে রইলো। এক আঁচলা কুড়ানো শিউলি ফুলের মতোই ভারী অকপট সুন্দর, স্নিগ্ধ, মনোরমা সেই আনন। দুষ্টু দেখে গেলো যতক্ষণ প্রাণ চায়। ব্যান্ডেজ শেষ করে সিড়িন হক চোখ গরম করে বললেন,

‘কি? কানে কিছু ডুকলো? ওমা! কেমন করে মেয়ে চেয়ে আছে দেখো! হা করে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে কি পশম গুনছো?’

দুষ্টু উল্টো দিকে মুখ ফিরিয়ে হেসে দিলো। সিড়িন হক হাত’টা নাড়াচাড়া করে দেখতে দেখতে বললেন,

‘আমার ছেলে দেখলে তো নিজেই পাগল হয়ে যাবে।’

দুষ্টু ভ্রু কুচকালো। কোনো প্রশ্ন করার আগেই সিড়িন হক বললেন,

‘কি বলবো তোমাকে দুষ্টু? তোমার মা তোমার নামটা একদম যথার্থ রেখেছে।’

দুষ্টু মুচকি হাসলো। সিড়িন হক থালা-বাটি গুলো তুলে রাখতে লাগলেন। মিনিট খানিক পর দুষ্টু কপালে ভাঁজ ফেলে ডাকলো,

‘আন্টি।’

‘হুম, বলো।’

‘টিয়াকে জোর করে বিয়ে দেওয়া কি ঠিক হচ্ছে? ও তো বিয়েটা করতে চাইছে না। ওর মতামত টা জানার দরকার ছিল। ওর পছন্দ, অপছন্দ থাকতে পারে।’

‘আমি বড় বউমাকে পাঠিয়েছিলাম। টিয়া নাকি বড় বউমার কথা শুনে আঁতকে উঠে ক্রমাগত মাথা নেড়ে না বলেছে। আমার মনে হয়, নীড় কে সবসময় ভাইয়া বলে ডেকে এসেছে বলেই টিয়া বিষয়টা মানতে পারছে না। সময়ের সাথে সাথেই ঠিক হয়ে যাবে সব।’

দুষ্টু চিন্তিন স্বরে বলল,

‘কি জানি! তবে আমি চাই, কাউকে জোর করে বিয়ে দেওয়া না হোক। জোর করে বিয়ে দেওয়ার পরিণতি’টা যে কতটা খারাপ হয় তা আর কে জানবে?’

সিড়িন হক হালকা হাসলেন,

‘তুমি অন্যকাউকে ভালোবাসতে বলেই বিয়েটা তোমার পক্ষে মেনে নেওয়া কঠিন হয়েছে। কিন্তু টিয়ার ক্ষেত্রে তো তা নয়।’

‘কে বলতে পারে? হয়তো টিয়ার ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার ঘটলো।’

‘ঘটলেও আমাদের কিছু করার থাকবে না। তুমি বিয়ের আগে তোমার মাকে বলেছিলে কিন্তু টিয়া আমাদের কিছু বলেনি সুতরাং দায়ভার টা সম্পূর্ণ ওর।’

সিড়িন হকের চোখ-মুখ শক্ত হয়ে এলো। দুষ্টু প্রশ্ন করলো,

‘আমার মা নাহয় জেনেশুনেই আমাকে বিয়ে দিয়েছে। কিন্তু আপনারাও তো জানতেন। আপনি নিজে আমাকে স্টেশন থেকে নিয়ে এসেছেন। সবকিছু জানতেন বলেই তো! আপনারা কেনো বিয়েটা করালেন? ডিভোর্স’টাও এতো সহজে মেনে নিচ্ছেন। কেনো আন্টি?’

সিড়িন হক উত্তর দিলেন না। উল্টো ফিরে কাজ করায় ব্যস্ত হলেন। তার চোখ মুখ শুকনো হয়ে এলো। দুষ্টু অন্যমনস্ক কণ্ঠে অন্যপ্রশ্ন করলো,

‘আচ্ছা, আমার আপু বিয়ে ভেঙে আপনাদের মান সম্মান নষ্ট করে চলে গেছে বলেই কি প্রতিশোধ নিতে আমাকে বিয়ে করিয়ে নিয়ে এলেন? আপনারা হয়তো আন্দাজ করতে পেরেছিলেন যে, আমি ডিভোর্স নেবো কিংবা আপনারাই আমাকে পরে ছাড়িয়ে নিবেন। আর একটা ডিভোর্সি মেয়ের সমাজে বেঁচে থাকা কতটা অসম্মানজনক সেটা আমার থেকে আপনি ভালো…. ‘

দুষ্টুর কথার মাঝপথেই সিড়িন হক জোরে ধমক দিয়ে উঠলেন, ‘দুষ্টু!’

দুষ্টু চমকে উঠল। সিড়িন হক কঠোর চোখে তাকিয়ে বলেন,

‘একমাসের বেশি হলো এ বাড়িতে আছো তুমি। আমাদের দেখে তোমার তাই বলে মনে হলো?’

দুষ্টু মাথা নাড়িয়ে ক্রমাগত না করলো। কথাটা এড়িয়ে যেতে বলল,

‘নীড়ের সাথে টিয়ার বিয়ে দিচ্ছেন কীভাবে? নীড় তো কোনো চাকরি-বাকরি করে না।’

‘হুম, করে না। কিন্তু আমাদের ব্যবসায়, আমাদের সম্পত্তিতে নীড়ের মায়ের ভাগ আছে। আর তাছাড়া একমাত্র আদরের মেয়ে হওয়ায় ওর নানা ওর মায়ের নামে অনেক জমি জমাও রেখে গিয়েছে। আর ব্যবসা’টাও ওরা তিন ভাই-বোন মিলে শুরু করেছিল৷ নীড়কে অনেকবার বলা হয়েছে ওর মায়ের অংশটুকু দেখাশোনা করতে কিন্তু দেখেনি। এমনকি একটা টাকাও নেয় না। ব্যবসার ওর অংশের টাকাগুলো ওর নামে প্রতিমাসে ব্যাংকে জমা হয়। তোমার শ্বশুড় মশাইরা ভাবছেন বিয়ের পর নীড়ের দায়িত্ব নীড়কে যেকোনো মতে বুঝিয়ে দেবে।’

সিড়িন হকের কথা শুনে দুষ্টু তাজ্জব বনে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলো। হক বাড়ির রেস্টুরেন্ট আছে পাঁচটা। কিন্তু, না সে জানে নীড় এ বাড়ির ছেলে আর না জানে নীড় এতো ধনবান। নীড় তো সবসময় সহজ, সরল সাথে ছাপোষা ধরনের তার চলাফেরা!

‘শুনো দুষ্টু, ওদের বিয়ে’টা হয়ে যাওয়ার পর পর-ই তুমি আর প্রচ্ছদ গ্রামের বাড়িতে গিয়ে ঘুরে আসবে।’

‘যেতেই হবে?’ দুষ্টু করুণ চোখে তাকালো।

‘অবশ্যই। কেনো যাবে না? এ বাড়ির প্রত্যেক’টা বউ গিয়েছে সুতরাং তুমিও যাবে।’

‘আচ্ছা।’

দুষ্টু উঠে চলে যেতে নিলেই সিড়িন হক পুনরায় ডেকে উঠলেন। দুষ্টু ঘাড় ফিরালো।

‘যে ক’টা দিন আছো আমি চাইবো এই বাড়ির বউয়ের মতো থাকো। স্বামীর আদর্শ স্ত্রীর মতোই আচরণ করো।’

দুষ্টুর থেকে উত্তর না পেয়ে সিড়িন হক কড়া গলায় বললেন, ‘কি? পারবে না?’

দুষ্টু নিচুস্বরে বলল, ‘চেষ্টা করবো।’

সে সিড়ির কাছে যেতেই সিড়িন হক আরেকবার ডাকলেন অন্যমনস্ক কণ্ঠে। দুষ্টু তাকাতেই শীতল স্বরে বললেন,

‘আমার ছেলেগুলো খুব ভালো। যদিও রগচটা কিন্তু অনেক ভালো।’

এ বাড়িতে আসার পর এই প্রথম দুষ্টুর কাছে সিড়িন হককে একজন নরম, স্নেহময়ী, মমতাময়ী মা বলে মনে হলো। তার কণ্ঠে কি যেন একটা ছিলো! দুষ্টু উত্তর দিতে পারলো না। শুধু ফ্যালফ্যাল নয়নে সিড়িন হকের ওই ঈষৎ ঝাপসা সুন্দর চোখ দুটোর দিকে তাকিয়ে থাকলো। যেন এমন দৃশ্য সে আর কক্ষনো দেখেনি। এ দুষ্টুর সৌভাগ্য নাকি দূর্ভাগ্য? সে ভাবলো না। দৌড়ে উপরে চলে গেলো। দু’চোখ থেকে জলের মোটা দাগ বসে পরলো পান পাতার মতো শুভ্র গালে।

এক দৌড়ে ঘরের দুয়ার ঝাপটে ধরতেই কালো ব্লেজার আয়রন রত প্রচ্ছদ আতংকিত চোখে তাকিয়ে প্রশ্ন ছুড়লো,

‘তুমি কি সবসময় ছুটাছুটি করো? আবার কিসে তাড়া করলো তোমায়?’

বলে এক পলক দুষ্টুর দিকে তাকিয়ে হতাশ হয়ে সে আবার কাপড়ের উপর ইস্ত্রি চেপে ধরলো। দুষ্টু বেশ অনেকক্ষণ… প্রায় মিনিট ছয়েকের মতো তাকিয়ে থাকলো সেই শক্ত… পুরুষাভা যুক্ত কপালে ভাঁজ ফেলে রাখা রাশভারী মুখে ব্যস্ত হাতে ব্লেজার আয়রন করা মানুষ’টার দিকে। লোকটা অন্যরকম। খানিকটা তেজি, খানিকটা কোমলপ্রাণি আবার খানিকটা ভালোবাসায় পূর্ণ। দুষ্টু বুঝতে পারে না মানুষ’টাকে। একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে শুধু। তাকিয়ে থাকতে থাকতেই একসময় চোখে ধাঁধা লেগে যায়। জ্বলতে শুরু করে। বুকে কেমন যেন বিষাক্ত বিস্ফোরণ ঘটে। সে এগিয়ে গেলো ধীর পায়ে মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায়। প্রচ্ছদের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে তার ঘন পল্লব বিশিষ্ট সুরম্য চোখ জোড়া স্থির করলো প্রচ্ছদের কুচকে যাওয়া ছোট ছোট চোখ দুটোর উপর। এরপর শিহরণ বয়ে যাওয়া কণ্ঠে ফিসফিস আওয়াজে উত্তর দিলো,

‘আপনি নামক বিবেক! বারংবার তাড়া করে আমায়। তার একমাত্র কাজ ক্রমাগত আমায় দংশন করা। আচ্ছা, কখনো কি আবেগে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা আছে? তবে আমি আরো আগে সরে যেতে চাই। এ জীবনে দ্বিতীয় বার আবেগ এনে কষ্টের স্তূপের আগুনের দাউদাউ লাল-নীল শিখায় জ্বলতে চাই না। বিশ্বাস করুন, আমি খুব ভয় পাই আজ-কাল। খুব!’

চলবে❤️