এমন একদিন সেদিন পর্ব-৫৭

0
1

#এমন_একদিন_সেদিন
#মুমুর্ষিরা_শাহরীন
পর্ব-৫৭
১১৪.
দুষ্টু-প্রচ্ছদের ডিভোর্সের আর মাত্র সাতদিন বাকি! বাড়ি ভর্তি মানুষ অথচ কারো মুখে রা নেই। এই ব্যাপার নিয়ে এখন কেউ একটা টু শব্দ পর্যন্ত করছে না। হক বাড়ির এহেন থমথমে নিস্তব্ধ পরিবেশের মাঝে উটকো ঝামেলা হিসেবে তখন উদয় হলেন ইফতার হকের ফুফু। প্রচ্ছদ কিংবা নীড় কারোর বিয়ের সময় আসা হয়নি বলে এই প্রথমবার দুষ্টুকে দেখবেন। তাই অগ্যতা সিড়িন হকের হামকি ধামকির কবলে পরে দুষ্টুকে শাড়ি পরতে হলো। সিড়িন হক নিজ হাতেই পরিয়ে দিচ্ছেন আর বলছেন,

‘একটু বেশি বেশি খেতে পারো না? পেট-পিঠ এক।’

দুষ্টু জবাব না দিয়ে রুষ্ট মুখে পুতুলের ন্যায় দাঁড়িয়ে রইলো। সিড়িন হক নিজ মনের মতোন শাড়ি পরিয়ে মাথায় ঘোমটা টেনে দিয়ে ব্যস্তসুরে বললেন,

‘গাল ফুলিয়ে থেকো না তো!’

দুষ্টুর চোখ মুখ কুচকে উঠলো,

‘এসব ফর্মালিটি আমার একদম ভালো লাগছে না।’

সিড়িন হক হাত বাড়িয়ে ওর ঠোঁট দুটো প্রসারিত করে দিয়ে ধমকে উঠলেন,

‘হাসো মেয়ে! ফুপু কিন্তু কঠিন মানুষ। উনিশ থেকে বিশ হলে তোমাকে ঘষে মেজে দিয়ে যাবে। সাবধান!’

দুষ্টু অসহায়ের ন্যায় শরীর’টা আরো ছেড়ে দিলো। এ কোন মুসিবত! একটার পর একটা চলেই রয়েছে। দুষ্টুর মুক্তি হবে কবে?

নিচে নেমে মুখে সালাম দিলো দুষ্টু। রয়েসয়ে মুখে পান দিয়ে একবার চিবিয়ে ফাতেমা খাতুন চশমার নিচ থেকে ছোট ছোট চোখ দুটো মেলে চাইলেন,

‘এসব কোন ধরণের সভ্যতা? পায়ে হাত দিয়ে সালাম করো। তোমার শাশুড়ি তোমাকে কিছু শিখায়নি?’

মহিলার টান টান কথা। সিড়িন হকের মুখটা বিকৃত হয়ে গেলো। দুষ্টু কোনো প্রতিত্তোর দিলো না আবার পায়ে হাত দিয়ে সালামও করলো না। ইফতার হক গম্ভীর স্বরে বললেন,

‘পায়ে হাত দিয়ে সালাম করা উচিত নয়, ফুপুআম্মা।’

ফাতেমা খাতুন সেকথা আর এগুলেন না। দুষ্টুর হাত ধরে টেনে নিজের পাশে বসিয়ে দিয়ে বললেন,

‘শরীর তো নয় পাটের খড়ি! নাক’টাও তো সারস পাখির মতো। গাল ভেঙে যেনো চোয়ালে ঢুকে গেছে। গতরে এক ফোঁটা মাংস নাই।’

এরপর সিড়িন হকের দিকে আঙ্গুল তুললেন,

‘এই চোখ তোমার? আমার দাদুভাইয়ের জন্য একটা কঙ্কাল এনেছো তুমি? বড়’টার জন্যও একটা এনেছো এক অপয়া, বন্ধ্যা। যিনি এতোদিনেও একটা বাচ্চার মুখ দেখাতে পারলো না। এবার আল্লাহ মেহেরবানি করলে হয়!’

রাগে শরীর পুড়ে যাচ্ছে। ভাগ্যিস এখানে ইরা অর্জন কেউ উপস্থিত নেই। ডাক্তারের কাছে গেছে। ইরা শুনলে কতটুকু কষ্ট পেতো! দুষ্টুর চোখ জ্বলে উঠলো। এই সময় প্রচ্ছদ’টাও বাড়ি নেই। ও সামনে থাকলে দুষ্টু এই মুহূর্তে কোনো ব্যক্তিকে তোয়াক্কা করতো না। কোনো প্রেসিডেন্ট হলেও না। সমস্ত নস্তিবাচক পরিস্থিতি’কে ও বুড়ো আঙ্গুল দেখাতে পারতো। সামনে বসা এই বিরক্তি’ময় বুড়িকে ও থোড়াই পরোয়া করতো তখন? প্রচ্ছদ নেই বলেই তো এই মুহূর্তে নিজেকে ভীষণ কমজোর বলে বোধ হচ্ছে। কোনদিকে কি বলে ফেলবে পরে তাকে সবার কটুকথা শুনতে হবে। কটুবাক্য থেকে তখন তাকে প্রচ্ছদ ছাড়া আর কে বাঁচাবে? এই শেষ-বিদায় বেলায় কারোর কটু কথা হজম করতে একদম রাজি নয় সে।

ফাতেমা খাতুন স্বর্ণের একটা মোটা বালা বের করলেন। যেটা দুষ্টুর এক হাতে পড়িয়ে দিলেন। দুষ্টুর ফর্সা হাতে তা চমৎকার দেখালো। সিড়িন হক একবার তাকালেন। মেয়েটা কক্ষনো কোনো গয়নাগাটি পরে না। পরলে সুন্দর মানায়। ফাতেমা বেগম তার কুচকানো মুখ’টা আরো খানিকটা কুচকে বললেন,

‘বালার ভার সইতে পারবে তো? যে শরীর!’

বৃদ্ধা মহিলা আরো নানান খুত ধরলেন দুষ্টুর। সাথে সিড়িন হককে অযথা বারবার দোষারোপ করে গেলেন। আকস্মিক দুষ্টু ক্রুব্ধ হয়ে উঠে দাড়ালো। উপস্থিত সবাই একটু চমকে উঠলেন। সিড়িন হক দুষ্টুকে চোখের ইশারায় বোঝাচ্ছেন চুপচাপ বসে পরতে। এই মুহূর্তে প্রচ্ছদের অনুপস্থিতি খুব করে অনুভব করতে পারলো দুষ্টু। ও থাকলে হেসে হেসে ঠিক বুড়ির মুখের উপর গরম গরম উত্তর ঢেলে দিতো। ওর বউকে অপমান? এতো বড় স্পর্ধা যে করবে সে সসম্মানে, বিনাবাক্যে বাড়ি ফিরে যেতে পারবে? অসম্ভব! দুষ্টু আগুন গোলা চোখ নিয়ে বলল,

‘আন্টি, আমার সাথে উপরে চলুন। এই মূহুর্তে।’

ফাতেমা খাতুন থমথমে মুখে কেবলই বলতে ধরলেন,

‘তোমার আদব..

তার কথা সম্পূর্ণ করতে না দিয়ে দুষ্টু মিষ্টি করে হেসে বলল,

‘বেয়াদবি মার্জনা করবেন। আমাকে এই মুহূর্তে নিজঘরে যেতে হবে এবং এই সুন্দর বালা’র জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ দাদী।’

কারোর দিকে না তাকিয়ে বেপরোয়ার ন্যায় দুষ্টু সিড়িন হকের হাত’টা আস্তে করে ধরে উপরে চলে গেলো। নিজঘরে এসে হাত থেকে বাল খুলে তেঁজিস্বরে চেঁচিয়ে উঠলো,

‘ধরুন, আপনাদের বালা। এটা নিয়ে কি করবো আমি? মুখের আদর মূল বিষয়। আপনার শাশুড়ির কথা যেন বন্দুকের গুলি।’

সিড়িন হক চোখ বড় বড় করে দুষ্টুর মুখ চেপে ধরলেন,

‘আস্তে কথা বলো। ফুপু শুনবেন তো!’

দুষ্টু তার হাত সরিয়ে আবারো তারস্বরে বলে উঠলো,

‘শুনুক। আপনাকে, বড় ভাবীকে এতো বাজে বাজে কথা কেনো বললো? শুধুমাত্র আপনার ছেলে নেই দেখে কথার উত্তর দিলাম না আমি।’

সিড়িন হক এবার উচ্চস্বরে ধমকে উঠলেন। দুষ্টু কেঁপে উঠলো। মাথা নিচু করে বালা’টা বিছানায় ছুড়ে ফেলে কেঁদে দিলো। সিড়িন হকের খারাপ লাগলো। তিনি দ্রুত দরজা বন্ধ করে এসে তৎক্ষণাৎ ওকে জড়িয়ে ধরলেন। দুষ্টু এতে শব্দ করে কেঁদে দিলো।

‘কাঁদে না, মা।’

হেচকি তুলে দুষ্টু বলে,

‘আর কয়দিন পর তো আমি চলে যাবো আপনার ছেলের জন্য সুন্দর বউ নিয়ে আইসেন!’

দুষ্টুর পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে সিড়িন হক বললেন,

‘ইতিমধ্যে আমার ছেলের জন্য আমি পৃথিবীর সবথেকে সুন্দর বউ নিয়ে এসে পরেছি।’

দুষ্টু মাথা উঠালো। ছলছল চোখে শুধালো,

‘আচ্ছা আন্টি, আমি কি দেখতে এতো খারাপ? আপনি তো আমাকে ছোটোবেলা থেকে দেখছেন। আমি কি এতো শুকনা? আমি দেখতে সুন্দর নই?’

বলতে বলতে দুষ্টু আবার ঠোঁট ভেঙে কেঁদে দিলো। এভাবে আর কেউ কোনোদিন কখনো ওকে বলেনি। দাদী না বললে সে বুঝতেই পারতো না যে, সে এতো’টা অসুন্দর। সিড়িন হক দুষ্টুর চুল ঠিক করে দিয়ে চোখ মুছিয়ে দিলেন। বললেন,

‘তুমি অনেক সুন্দর। উনারা আগের দিনের মানুষ এরজন্য ওভাবে বলে। তুমি পার্ফেক্ট! কেঁদো না। কাঁদলে ভালো দেখায় না তো বাবা!’

দুষ্টু চোখ মুছলো। কিছু সময়ের ব্যবধানেই তার বিধ্বস্ত অবস্থা! বালা’টা সিড়িন হকের হাতে দিয়ে দুষ্টু ভাঙা স্বরে বলল,

‘নিয়ে যান প্লিজ! এতে আমার কোনো অধিকার নেই এবং আমার নেওয়ার কোনো ইচ্ছেও নেই।’

১১৫.
প্রকোট হাওয়ায় দুষ্টুর শাড়ির আঁচল উড়ছে। বুক থেকে অনেকখানি নিচে নেমে গেছে। ছাদের এককোণে হাড়কাঁপানো শীতের শুষ্ক সমীরে গা ভাসিয়ে শুধুমাত্র ওই একটা পাতলা শাড়ি পরে দুষ্টু দাঁড়িয়েছিল।

‘ঠান্ডায় তো জমে যাচ্ছো।’

অতর্কিতে প্রচ্ছদের গলার আওয়াজ শুনে দুষ্টু একফোঁটা চমকালো না। ঘুরে তাকালো না। প্রচ্ছদ ধীর পায়ে এগিয়ে এলো। দুষ্টুর কান ছুই ছুই ঠোঁট এগিয়ে নিলো। কণ্ঠ অতি নিম্ন খাদে নামিয়ে শুধালো,

‘বেশি কষ্ট হচ্ছে?’

দুষ্টুর হেলদোল দেখা গেলো না। প্রচ্ছদের ঠান্ডা ঠোঁট বেখেয়ালে একবার কান ছুঁতেই অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তাদের ন্যায় কেঁপে উঠলো। সারা দেহে ঝংকার দিয়ে উঠলো! প্রচ্ছদের সান্নিধ্য পেতেই চোখে আবার অম্বুর ভিড় জমালো। ছোটোবেলা থেকে শুনে এসেছে সে এক দেখায় পছন্দ হওয়ার মতো সুন্দরী। পরিবারের বড়ো আদরের ছোট মেয়ে। তার মানতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। ক্রন্দন গলায় ভেঙে ভেঙে সে বলল,

‘আমাকে এভাবে আগে কোনোদিন কেউ বলেনি। আমি এতো কুৎসিত?’

দুষ্টু প্রচ্ছদের দিকে ঘুরে প্রশ্ন’টা করে। সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত তার ওই সুন্দর চোখ জোড়ায় লেপটানো কাজল! থেকে যাওয়া অল্প লিপস্টিকে শুষ্ক লাল ঠোঁট। কান্নার দরুন তীক্ষ্ণ নাকের চারিপাশে ক্ষীণ লাল আভার কর্তৃত্ব। খোলা এলো চুল সাথে এলোমেলো তার শাড়ির আচঁল! প্রচ্ছদের শ্বাস বন্ধ হয়ে এলো! শাড়ি পরিহিতা এই আশ্চর্য সুন্দর নারী’টির প্রশ্নের কোনো উত্তর খুঁজে পেলো না সে। তবুও অনেকক্ষণ বাদে থেমে থেমে বলল,

‘কাঁদলে আপনায় সুন্দর দেখায় তাই বলে সবসময় নয়। চোখ মুছুন, মহারানী। উপরে নিজেকে এতো স্ট্রেইট এন্ড স্ট্রং দেখিয়ে এখন সারাদিন ধরে একজন বৃদ্ধ মানুষের কথায় বাচ্চাদের মতো ভ্যা ভ্যা করে কাদঁছেন? ছি ছি!’

দুষ্টু চোখ মুছলো। মন খারাপ করে শুন্যে চেয়ে রইলো। প্রচ্ছদ আপনমনে কণ্ঠে মাদকতা ঢেলে বললো,

‘আপনি যদি একবার আমার চোখ দিয়ে নিজেকে দেখতেন, বুঝতে পারতেন আপনি ঠিক কত’টা সুন্দর! কতজন আপনার পায়ে নিজের হৃদয় সপে দেওয়ার জন্য প্রস্তুত। কত চাতক পাখি আপনার প্রতিক্ষায় অপেক্ষারত… শুধু একবার আপনাকে ছুঁয়ে দেখবে বলে!’

দুষ্টুর কান্না সেই মুহূর্তে পুরোপুরি থেমে গেলো। মহত্ত্বের খুব গহীনের অন্তঃসত্ত্বায় প্রচ্ছদের বাক্যগুলো তীব্র গতিতে নাড়া দিলো। দুষ্টুর নিজেকে অসাড় লাগলো। সে পূর্ণদৃষ্টি’তে প্রচ্ছদকে একবার আগাগোড়া দেখে নিয়ে নিজ চরিত্রে ফিরে গেলো।

‘ঘরে যান। আমার পিছু পিছু যেখানে সেখানে যেতে বারণ করেছি।’

প্রচ্ছদ কাধ ঝাকিয়ে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে,

‘আমার বাড়ি। আমার ছাদ। তোমার পিছু পিছু আসতে হবে কেনো? নেহাৎ আম্মু বললো, আমাদের বাড়ির একটা বাচ্চা ছাদে ঠান্ডায় দাঁড়িয়ে কান্নাকাটি করছে। আমি যেনো সেই অভুক্ত বাচ্চাটিকে ভুজুংভাজুং দিয়ে নিচে নিয়ে গিয়ে চকলেট খেতে দেই। তাই নিতে আসলাম।’

দুষ্টু নাক ফুলিয়ে বলে,

‘সময় হলে আমি একাই যাবো। ভুজুংভাজুং দিয়ে নিয়ে যেতে হবে না। আমাকে বিরক্ত না করে আপনি যান!’

প্রচ্ছদ চোখ গরম করে তাকানোর ভান করে এরপর দৈবাৎ গলার স্বর বাড়িয়ে একটুখানি সুর তুলে,

দেখতে বৌ বৌ, কিন্তু মস্ত ভৌ ভৌ
বেশ জুটে গেছে কপালে
দেখতে বৌ বৌ, কিন্তু মস্ত ঘৌ ঘৌ
ফেঁসে গেছি আমি অকালে

নিজেকে সে ভাবে Victoria
পারা যায় বলো কি করিয়া
ঘোরালো নাকে দড়ি দিয়া
বিয়ের পরে এ আজব headache….

শীতের আকাশ বাতাস মুখোরিত হলো প্রচ্ছদের বেসুরো, ধেড়ে গলার গানে। কুয়াশার শুভ্র জালগুলো আরো ঘন সন্নিবেশিত হতে হতে জানান দিলো প্রচ্ছদ ঠিক গান গেয়েছে। দুষ্টু প্রচ্ছদের আড়ালে ঠোঁট চেপে হাসলো। ভ্রু নাচিয়ে বলল,

‘এরপরের লাইনগুলো কি আমি বলবো?’

প্রচ্ছদ ঠোঁট ফাঁক করে হাসে। রাস্তায় দন্ডায়মান ল্যাম্পপোস্টের হলদে নিয়ন বাতির রশ্মি এসে ওদের স্বর্ণ রঙে রাঙিত করলো। প্রচ্ছদ সরল গলায় বলল,

‘শাড়িতে এই প্রথম দেখলাম তোমায়।’

‘কেনো? টিয়ার বিয়েতে আমি শাড়ি পড়েছিলাম। আপনি দেখেননি?’

প্রচ্ছদ ঠোঁট উল্টালো, ‘কই না তো!’

মিনিট দুয়েক ভাবতেই দুষ্টুর মনে পরলো ও আধ ঘন্টাও শাড়ি পরে থাকেনি। প্রচ্ছদ সেই সময় ব্যস্ত ছিলো বলে তেমন নজরও দেয়নি। দুষ্টুর ধ্যান ভাঙলো প্রচ্ছদের কথায়।

‘ভীষণ সুন্দর লাগছো! নয়নাভিরাম! একদম প্রচ্ছদের বউ বউ লাগছে।’

দুষ্টু ভ্রু টান টান করে চাইলো। প্রচ্ছদের শেষ কথায় লজ্জায় গাল দুটো লাল হয়ে উঠলো তবে বুঝতে দিলো না। প্রচ্ছদ নিজের জ্যাকেট খুলে দুষ্টুকে পরিয়ে দিয়ে একটানে চেইন লাগিয়ে দিলো। আচম্বিতে দুষ্টুর হাত-পা থরথর করে কেঁপে উঠলো। প্রচ্ছদ চিন্তিত গলায় বলল,

‘দেখেছো, ঠান্ডায় কাপঁছো। চলো চলো।’

ইতস্তত কন্ঠে দুষ্টু বলল, ‘আপনি আগে যান! আমি আসছি।’

প্রচ্ছদ কি যেনো ভেবে দাঁড়িয়ে গেলো। কপাল কুচকে বলল, ‘একসাথেই নামি।’

‘ডিনার করেছেন?’
‘তোমার সাথে করবো।’
‘কেনো?’
‘বেড়ে দিবে কে?’
‘আমি চলে যাওয়ার পর কে দিবে?’
‘নতুন কেউ।’

প্রচ্ছদের কাধ ঝাঁকানো উত্তর। দুষ্টু কিছুক্ষণ এক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকলো। যাতনায় বুক’টা ক্রমেই ভারী হয়ে উঠলো। এই লোক কত দূর পর্যন্ত ভেবে ফেলেছে! দুষ্টুর থাকা বা না থাকায় তার কি কোনো যায়-ই আসে না? দুষ্টুর চুপসানো আননের দিকে তাকিয়ে প্রচ্ছদ ক্ষীণ হেসে রেলিং ধরে দাড়ালো। শীত লাগছে! শরীর গরম করার জন্য সে স্ট্যান্ড আপ কিছু এক্সারসাইজ করলো। হাতে হাত ঘষে গরম করতে করতে বলল,

‘তুমি আমাকে কখনো এক সেকেন্ডের জন্যও ভালোবাসোনি, দুষ্টু? আচ্ছা সেকেন্ড বাদ দেও। ন্যানো-সেকেন্ড?’

প্রচ্ছদের প্রশ্নে দুষ্টুর মাথায় যেনো গোটা নভোমণ্ডল ভেঙে পরলো। হঠাৎ বোধ হলো তার এই মূহুর্তে ভীষণ….ভীষণ রকমের ঠান্ডা লাগছে। হাত-পায়ের রক্ত চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। যেনো এখনি ওর হৃদপিণ্ড পর্যাপ্ত রক্ত না পেয়ে হার্ট ফেইলিউর করে বসবে। প্রচ্ছদ উত্তরের আশায় চাতক পাখির ন্যায় চেয়ে আছে। দুষ্টু নিজের ঠাঁট বজায় রাখলো কিন্তু প্রচ্ছদের ওই আকাঙ্ক্ষাময় সুশোভন দুটি চোখের দিকে তাকিয়ে নিজের প্রকৃতি খুব বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারলো না। তার চোখের উপর নিজের ভেজা নয়নযুগল রেখে চিত্তের অন্ধতায় মোহাবিষ্ট হয়ে উত্তর দিলো,

‘আমি আপনার ভালোবাসাগুলোকে ভালোবাসি।’

বুকের ক্রমাগত উত্থান-পতনের কম্পনে প্রচ্ছদ মাতোয়ারা হলো। শুকনো ঠোঁট দুটো ভিজিয়ে উন্মাদ স্বরে নিজের সকল রকমের সীমানা, সম্পর্কের শিকলের ভেড়াজাল ভুলে গেলো। ভেঙে ভেঙে আকুতি করে উঠলো,

‘একবার তোমাকে জড়িয়ে ধরি, দুষ্টু? প্লিজ! একটা বার!’

দুষ্টু মাথা নাড়ায়। চোখ ভর্তি ঝাপসা নিয়ে এক পা দু’পা করে পেছাতে থাকে। প্রচ্ছদ আর্তনাদ করে উঠে,

‘প্লিজ! মাত্র একবার।’

নিষ্ঠুর দুষ্টু থামলো না। এলোমেলো পায়ে এক ছুটে চলে গেলো। প্রচ্ছদ অপ্রকৃতস্থের ন্যায় বারংবার ডেকে গেলো,

‘একবার দুষ্টু! একবার! একটা বার আমার তৃষ্ণার্ত বক্ষে মাথা রাখো। আমি আর কোনোদিন আমার বুক থেকে তোমায় মাথা উঠাতে দেবো না। তুমি আমার বাহুডোরে সারাজীবনের তরে আটকে যাবে! প্রয়োজনে বেধে রাখবো। আমার হৃদয়ের গোপন কুঠুরি’তে লুকিয়ে ফেলবো!’

চলবে❤️