এলো প্রেমের মৌসুম পর্ব-০৫ এবং বোনাস পর্ব

0
2

#এলো_প্রেমের_মৌসুম
#লেখনীতে – #Kazi_Meherin_Nesa
#পর্ব – ০৫

ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাতেই দেখলো ওদের ফাইনাল ইয়ারে এক সিনিয়র দাঁড়িয়ে আছে, ছেলেটার নাম তুরাগ। গত কয়েকদিন ধরে ছেলেটা মেঘের পেছন পেছন ঘুরছে, মেঘের বান্ধবী তিশাকে ছেলেটা পছন্দ করে। সরাসরি বলার সাহস পাচ্ছে না তাই মেঘের কাছে দুটো চিঠি লিখে দিয়েছিলো তিশাকে দেওয়ার জন্যে কিন্তু মেঘ তিশাকে দেয়নি। কারণ ছেলেটার সম্পর্কে মেঘ টুকটাক যা শুনেছে তাতে সে খুব একটা সুবিধার নয়, আর এমন একটা ছেলেকে বান্ধবীর গলায় ঝুলতে দেবে না বলে মেঘ তিশাকে চিঠিগুলো দেয়নি! অন্যান্য সময়ে তাও বাইরে কথা বলেছে কিন্তু আজ এভাবে ভেতরে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়বে তা ভাবেনি মেঘ!

‘আপনি মেয়েদের ওয়াশরুমে কি করছেন?’

‘তোমাকে ফলো করে এসেছি, বাইরে তো তোমাকে এখন একা পাওয়াই যায়না’

‘আপনার সঙ্গে কথা বলতে চাইনা আমি’

মেঘ সরে আসতে গেলেই ছেলেটা মেঘের হাত চেপে ধরে…

‘কথা তো বলতেই হবে, তোমাকে দিয়ে আমি আমার কার্য হাসিলের চেষ্টা করছি। আচ্ছা, তোমাকে যে দুটো চিঠি দিয়েছিলাম তোমার বান্ধবীকে দেওয়ার জন্যে। দিয়েছিলে?’

‘ কি অসভ্যতামো হচ্ছে! হাত ছাড়ুন আমার’

‘ আগে উত্তর দাও, দিয়েছিলে?’

ওই মুহূর্তে মাথা কাজ করছিলো না মেঘের, ভয়ে বুকের ভেতর অস্থির লাগছে। সাত পাঁচ না ভেবেই ওখান থেকে দ্রুত বেরোনোর জন্যে মেঘ মিথ্যে বললো…

‘দিয়েছিলাম। কিন্তু আপনাকে তিশা রিজেক্ট করে দিয়েছে! আপনার মতো ছেলে ওর চাইনা বুঝেছেন? পারলে নিজেকে শুধরে ওর সামনে নিজের মনের কথা বলবেন নইলে নিজের মতো কাউকে খুঁজে নেবেন’

‘ কি! না করে দিলো এতো সহজেই? তোমার বান্ধবী না করেছে নাকি তুমি ওকে উস্কেছ আমাকে অপছন্দ করার জন্যে?’

‘ আপনার মধ্যে এমন কোনো গুন নেই যার জন্যে আমি ওকে উৎসাহ দেবো আপনার সঙ্গে সম্পর্কে জড়ানোর জন্যে, হাতটা ছাড়ুন আমার!!’

‘ কি গুন নেই আমার?’

‘ এই মুহূর্তে আপনি আমার সঙ্গে যেটা করছেন, সেটা একজন ভদ্র পুরুষের হয়ে আচরণ হতে পারে না। আপনি তো মেয়েদের সম্মানই করতে পারেন না’

মেঘের কথা শুনে তুরাগের মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো, ও মেঘের দিকে আরো এগোতে গেলেই মেঘ সজোড়ে ওর গালে থা’প্প’ড় বসিয়ে দেয়। তবুও মেঘের হাত ছাড়েনি, তুরাগ! এক হাত গালে বুলিয়ে বাঁকা হাসি দিয়ে বললো…

‘ আরেহ! তোমার তো দেখছি বেশ তেজ! আমার গায়ে হাত তুলতে এক মিনিটও ভাবলে না’

থা’প্প’ড় খাওয়ার পরও তুরাগের কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখে মেঘ আরো ভয় পেলো, ছেলেটা যদি এখানে ওর সঙ্গে খারাপ কিছু করে বসে? মেঘ চাইছে না ভার্সিটির মধ্যে কোনো কান্ড হোক, ও চাইছে বিষয়টা এখানেই শেষ হয়ে যাক!

‘ আমি কিন্তু চিৎকার করবো এখন, এখানে এসে লোক জড়ো হয়ে গেলে আপনিই সমস্যায় পড়বেন!’

‘আর যদি উল্টোটা হয়? দেখা গেলো তুমি এনে লোক জড়ো করলে এরপর, সবাই তোমাকেই ভুল বুঝলো তখন কি করবে? ছেলেদের কখনো জাজড করা হয় না, ইউ নো দ্যাট রাইট!’

আমাদের সামাজিক নিয়ম অনুযায়ী এটাই সত্যি, যদি কখনো ছেলে ও মেয়ে সম্পর্কিত কোনো ঘটনা ঘটে সেখানে ছেলেদের দোষ দেওয়া হয় না। উল্টে মেয়েটাকেই খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে কথা শোনানো হয়। তুরাগ যদি সত্যিই কোনো ঝামেলা করে তবে এখানে কারো সাপোর্টও পাবে না, মেঘ জানে আরিশ কখনোই ওর কথা বিশ্বাস করবে না। কথাটা ভেবেই মেঘের চোখে পানি চলে এলো, তৎক্ষণাৎ তুরাগ ওর হাত ছেড়ে দিয়ে বললো…

‘ তোমার বান্ধবী আমাকে রিজেক্ট করেছে শুনে দুঃখ পেলাম, ব্যাপার না! তুমি তো আছো! আমি কখনো প্রেম করিনি, তোমার সঙ্গেই না হয় প্রথম ট্রাই করবো’

কথাগুলো বলে স্বেচ্ছায়ই বেরিয়ে গেলো তুরাগ, মেঘের পা টলছে এখনও। বুক কাঁপছে! বেসিনে ভর দিয়ে আয়নার দিকে মুখ করে দাড়ালো মেঘ! নিজেকে ভীষণ অসহায় লাগছে, ছেলেটা যেভাবে বলে গেলো তাতে হয়তো আবারো কিছু করার চেষ্টা করবে। নিজের সুরক্ষার জন্য বিষয়টা কাউকে জানানো দরকার, কিন্তু কাকে জানাবে? আরিশ? ও তো মেঘের কথাই শুনতে পারে না, এ ঘটনা শুনে হয়তো উল্টে ওকেই কথা শোনাবে! ফোন বেজে উঠলো মেঘের, কল রিসিভ করতেই ওপর পাশ থেকে তিশা হতাশ কণ্ঠে বলে উঠলো…

‘ কীরে, আমাকে এখানে রেখে কোথায় গায়েব হয়ে গেলি তুই? কতক্ষন আমি ফুচকা না খেয়ে দাঁড়িয়ে থাকবো’

‘ তুই খাওয়া শুরু কর, আমি আসছি’

খানিকটা কাঁপা কাঁপা গলায় উত্তর দিলো মেঘ, ওপাশ থেকে তা আন্দাজ করে তিশা প্রশ্ন করলো…

‘মেঘনা, তোর গলার আওয়াজ এমন শোনাচ্ছে কেনো? কিছু হয়েছে?’

‘না, আমি ঠিক আছি। আসছি আমি ‘

মেঘের হাত কাঁপছে এখনও, তবুও নিজেকে শক্ত রাখার চেষ্টা করলো। নিজে শক্ত থাকলে তুরাগ কিছুই করতে পারবে না ভেবে নিজেকে বুঝ দিলো মেঘ। বেসিন থেকে মুখ ধুয়ে করিডোর দিয়ে হেঁটে নিচে যেতে যাচ্ছিলো, সিড়ি দিয়ে অয়ন ও আরিশ উঠছিলো। আশেপাশে কেউ নেই দেখে অয়ন মেঘকে বলে উঠলো…

‘ হ্যালো, ভাবী’

মেঘ কোনো উত্তর না দিয়ে সোজা হেঁটে চলে গেলো, আরিশ ভ্রু কুঁচকে তাকালো!

‘ অয়ন! তুই কবে যেনো সত্যিই আমার কাছে কিল ঘুষি খাবি’

‘ দেখ, এটা তো সত্যি মেঘ তোর বউ আর হিসেবে আমার ভাবী! তাই আমি প্রাকটিস করছি, মাঝে মাঝে তো দেবর হিসেবে ভাবী ডাকতেই হবে তাইনা?’

‘ বুঝেছি, তোকে বলে কাজ নেই। যা ইচ্ছা কর, কিন্তু তোর জন্যে কোনোদিন যদি বাকিরা জেনে যায় তাহলে তোর খবর আছে’

‘ এখানে কেউ নেই তো!’

‘ হুট করে এসে পড়লে কি হতো?’

আরিশ অয়নকে এতো বোঝাচ্ছে কিন্তু অয়ন শুনছে কই? মেঘ নিচে গিয়ে তিশার সঙ্গে ফুচকা খেলো, তিশা কয়েকবার জিজ্ঞাসা করেছে বটে কিন্তু মেঘ এ ঘটনার কথা ওকে বললো না…
____________________________________

ভার্সিটিতে ঘটে যাওয়া ওই ঘটনার পর থেকে কিছুতেই স্বস্তি পাচ্ছেনা মেঘ, দুটো দিন কেটে গেছে তবুও মেঘের অশান্তি যায়নি! রাতে ঠিকমতো ঘুমাতেও পারছে না। হাতে আর দুই দিন সময় আছে, এরপরই পরীক্ষা। পড়ায়ও মন দিতে পারছে না, সবমিলিয়ে ভীষণ বাজে একটা অবস্থা মেয়েটার। টেবিলে বসে অন্যমনস্ক হয়ে খাতার উপর কলম ঘোরাচ্ছিল মেঘ, তখনই আরিশ উচ্চস্বরে প্রশ্ন করলো…

‘পড়ছো না ঘুমাচ্ছো? কিছুই তো বোঝা যাচ্ছে না’

ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো মেঘ, আরিশ বিছানায় বসে চিপস খাচ্ছে…

‘আমি যা ইচ্ছে করবো, তাতে তোমার কি?’

‘আমার কিছুই না! ভাবলাম বেচারি এতো করে চেষ্টা করছে, চেষ্টা করতে করতে আবার ঘুমিয়ে গেলো নাকি। তাই জাগিয়ে দিলাম’

‘ অনেক উপকার করেছো। তা তোমার কি পড়াশুনা নেই নাকি না পড়েই পরীক্ষা দেবে?’

‘ আমার সব পড়াই আছে, একটু রিভাইস করে নিলেই হয়ে যাবে। অতো প্যারার কিছু নেই’

‘ বাহ! তুমি তো দেখছি বিদ্যাসাগর! অবশ্য ভালো ছাত্রদের এই তো একটা সুবিধা, আমাদের মতো দিনরাত বই ধরে পড়ে থেকে মাথা ক্ষয় করতে হয় না। একটু পড়লেই পেরে যাও’

‘ আফসোস হয় নাকি?’

‘ মোটেই না! সবাই যদি ভালো স্টুডেন্ট হয়ে যায়, তাহলে আর তাদের কদর থাকবে না। আমাদের মতো খারাপ স্টুডেন্ট আছে বলেই তো তোমাদের মতো গুড স্টুডেন্টের এতো কদর!’

‘বেশ গুছিয়ে কথা বলতে পারো দেখছি, গুড!’

আরিশ বিছানা থেকে নেমে চিপসের প্যাকেট মেঘের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো..

‘ আমি আর খেতে পারছি না, নাও তুমিই বাকিগুলো খাও’

মেঘ তো খুশিমনে প্যাকেটটা হাতে নিলো, কিন্তু ফাঁকা প্যাকেট দেখে মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেলো। আরিশ হাসতে হাসতে গিয়ে কম্পিউটারের সামনে বসেছে, মেঘ চিপসের প্যাকেটটা হাতের মধ্যে দুমড়ে মুচড়ে নিয়ে বিড়বিড়য়ে বললো…

‘ আমার আগেই বোঝা উচিত ছিলো, এই ছেলে কিনা আমায় সেধে চিপস দেবে? শ’য়’তা’ন ছেলে একটা!’

‘ যা বলার জোরে জোরে বলো, আমার নামে কি প্রশংসা করছো আমিও শুনতে চাই’

‘ কিচ্ছুনা!’

মেঘ ঘুরে বসে আবারো পড়ায় মনোযোগ দিলো, কিন্তু পাঁচ মিনিটও শান্তিমতো পড়তে পারলো না। ইতিমধ্যে আরিশ হাই সাউন্ড দিয়ে কম্পিউটারে গেম খেলতে শুরু করে দিয়েছে। মেঘের বিরক্ত লাগছে, ও জানে আরিশ ইচ্ছে করে এটা করছে। এই শব্দের মধ্যেও কিছুক্ষণ মেঘ পড়ায় মন দেওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করলো, আর কুলাতে না পেরে বাধ্য হয়ে আরিশকে বলে…

‘আরিশ, সাউন্ড বন্ধ করো প্লিজ! আমি পড়তে পারছি না’

‘ সাউন্ড ছাড়া গেম খেলে মজা নেই’

‘ তাহলে হেডফোন দিয়ে নাও!’

‘ আমার এভাবেই খেলতে ভালো লাগে’

‘ আরিশ আজকের জন্যে অন্তত হেডফোন দিয়ে নাও, আমাকে একটু পড়তে দাও। তুমি না পরেও এক্সাম দিতে পারবে, কিন্তু আমাকে তো পড়তে হবে’

‘ তোমার সমস্যা হলে বারান্দায় চলে যাও, দরজা বন্ধ করে পড়লে আর আওয়াজ কানে যাবে না’

‘মানেটা কি? তুমি আমাকে বারান্দায় পাঠাবে কিন্তু গেম খেলা বন্ধ করবে না?’

‘ ইয়েস! আজকে প্রায় এক সপ্তাহ পর গেম খেলতে বসলাম, ডিস্টার্ব করো না তো’

মেঘ চেয়ারে বসে আরিশের দিকে তাকিয়ে আছে, ছেলেটা বেশ মজা করে গেম খেলে যাচ্ছে। এ মুহূর্তে আরিশকে ভীষণ বিরক্ত লাগছে মেঘের, ও উঠে গিয়ে মেইন সুইচ বন্ধ করে দেয়। সঙ্গে সঙ্গে উঠে দাড়ালো আরিশ, হতাশা ভরা দৃষ্টিতে মেঘের দিকে তাকিয়ে বললো…

‘ কি করলে তুমি এটা! আরেকটু হলে আমার পুরোনো হায়েস্ট স্কোর বিট করে ফেলতাম’

‘ তার জন্যে তুমি অনেক সময় পাবে, দয়া করে আজকে আমাকে একটু পড়তে দাও’

‘ এইটা তুমি ঠিক করলে না মেঘনা!’

‘ তোমাকে ভালোভাবে যখন বলছিলাম শুনলে না কেনো? এবার বোঝো ঠ্যালা। ভবিষ্যতে আমি কিছু বললে ভালোভাবে শুনবে, নাহলে…’

‘ নাহলে কি করবে?’

‘ যখন করবো তখনই দেখে নিও’

‘ তুমি কি আমাকে হুমকি দিচ্ছো?’

‘ হ্যা দিচ্ছি! তো?’

‘ ইউ নো হোয়াট? গেম খেলার সময় ডিস্টার্ব পছন্দ নয় আমার আর তুমি কি করলে? আমার পুরো খেলাটাই বিগড়ে দিলে। তোমার তো কঠিন শাস্তি পাওয়া উচিত’

‘ কিসের শাস্তি!’

আরিশ ওর দিতে এগোতে শুরু করলো, ভ্রু কুঁচকে তাকালো মেঘ। সত্যিই কোনো শাস্তি দেবে নাকি? উপায় না দেখে মেঘ দ্রুত পায়ে সরতে যাচ্ছিলো কিন্তু শেষরক্ষা হলো না। মুরগির মতো খপ করে মেঘকে ধরে ফেললো আরিশ, ঠেসে ধরলো দেয়ালে। আরিশের এহেন কাণ্ডে অবাক হলো মেঘ, কি করতে চাইছে ছেলেটা? প্রথমে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে মেঘ চোখ বন্ধ করে নিয়েছিলো, পরে পিটপিট করে চোখ খুলে দেখলো আরিশ তীক্ষ্ণ নজরে ওর দিকে তাকিয়ে আছে…

‘ কি করছো!’

‘ ভাবছি কি করা যায় তোমার সঙ্গে’

‘ ক..কি করবে শুনি?’

‘ করলে অনেককিছুই করা যায়, কিন্তু..’

আরিশের কথা শুনে মেঘের মাথায় উল্টোপাল্টা খেয়াল আসতেই চোখ বড় বড় তাকালো মেঘ…

‘আমার সঙ্গে উল্টোপাল্টা কিছু করার কথা ভাবছো নাকি!’

বাঁকা হাসলো আরিশ, আলতো করে মেঘের গালে আঙ্গুল ছুঁয়ে ফিসফিস করে বললো…

‘ আইডিয়া মন্দ না কিন্তু, করাই যায়’

আরিশের ফিসফিসানি কথা শুনে গা শিউরে উঠলো মেঘের, এই ছেলের ওপর এক রত্তি ভরসা নেই ওর। সত্যিই যদি কিছু করে বসে? মেঘ ওকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করছিল কিন্তু পারলো না, আরিশ আগেই ওর হাত দুটো জব্দ করে রেখেছে। মেঘ লক্ষ্য করলো আরিশ ওর মুখে তাকিয়ে কিছু একটা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।

‘ তোমার চোখের পাপড়িগুলো সুন্দর!’

চমকে গেলো মেঘ, যে ছেলেটা সারাক্ষণ কটু কথা বলে সে কিনা সৌন্দর্যের প্রশংসা করছে? কি যে হলো, মেঘ যেনো কিছুটা লজ্জা পেয়ে বসলো তবে তা আরিশকে বুঝতে দিলো না…

‘অদ্ভুত ব্যাপার! সুন্দরী মেয়েদের পাঁপড়ি সুন্দর হয়, কিন্তু তুমি তো সুন্দরী নও!’

‘ তোমার চোখে আমার সুন্দরী হতে হবে না ‘

মেঘ অনুভব করলো আরিশ ওকে ছেড়ে দিয়েছে, তো মেঘ সরে আসতে যাচ্ছিলো তখনই আরিশ বলে উঠলো…

‘ডু ইউ ওয়ান্ট টু স্লিপ উইথ মি?’

চলবে…

[ভুলত্রুটি ক্ষমা সুলভ দৃষ্টিতে দেখবেন…!!]

#এলো_প্রেমের_মৌসুম
#লেখনীতে – #Kazi_Meherin_Nesa
#বোনাস_পর্ব

আরিশের বলা বাক্যটা কর্নকূহরে পৌঁছাতেই পা থেমে গেলো মেঘের, নিজের কানকে যেনো বিশ্বাসই করতে পারছে না। এ আরিশ কি বলছে? ঘাড় ঘুরিয়ে বড় বড় চোখ করে তাকালো মেঘ, আইনত বৈধ পুরুষটির মুখে এহেন কথা শুনে বুকের ভেতর যেনো হাতুড়ি পেটা শুরু হলো মেঘের! কয়েক মুহূর্তের জন্যে কোনো এক ঘোরে চলে গেছিলো হয়তো, ঠিক তখনই আরিশের উচ্চস্বরের হাসি শুনে ঘোর ভেঙে গেলো মেয়েটার! থতমত খেয়ে উঠলো মেঘ, আরিশ হাসতে হাসতে গিয়ে ইজি চেয়ারটায় বসলো। মেঘের দিকে একবার দেখে আরো কয়েক হাসলো…

‘ এতোদিন শুনে এসেছি যে ছেলেরা একটু নরম হয়ে কথা বললে মেয়েরা সহজেই গলে যায়, আজকে তার প্রমাণ পেলাম’

এবার মেঘ বুঝলো আরিশ মজা করে কথাটা বলেছে, রাগ হলো ওর! একটা ছেলে মজার ছলে হলেও একটা মেয়ে এরকম কথা কিভাবে বলতে পারে? মেঘকে নীরব দেখে আরিশ বললো..

‘ তুমি সত্যিই ভেবেছিলে আমি তোমার সঙ্গে…’

‘ নো! আমি তেমন কিছুই ভাবিনি। আমি জানি তুমি মজা করছিলে’

‘ ওহ কাম অন! আর লুকাতে হবেনা। তোমার মুখ দেখেই মনের খবর বোঝা যাচ্ছিলো। এমনভাবে তাকিয়ে ছিলে আমার দিকে যেনো…’

‘ স্টপ ইট আরিশ! আমি এসব কিছুই ভাবিনি, সবাইকে নিজের মতো ভাবো নাকি?’

‘ মানে?’

মেঘ দ্রুত গিয়ে চেয়ারে বসলো…

‘ তুমি একটা নির্লজ্জ্ব! অবশ্য পুরুষ মানুষ নির্লজ্জ্ব হবে এটাই তো স্বাভাবিক’

‘ তার মানে আমি তোমাকে লজ্জায় ফেলতে সক্ষম হয়েছি?’

উত্তর দিলো না মেঘ, আরিশের সঙ্গে এখন কথা বলার জন্যে ও মোটেও প্রস্তুত নয়! ওর কথা শুনে কয়েক মুহূর্তের জন্য যেনো মেঘের কিশোরী মন অনেককিছু ভেবে বসেছিলো কিন্তু আরিশ মুডটাই নষ্ট করে দিলো। রাত দশটার বেশি বেজে গেছে দেখে মেঘ আর আরিশের বলা কোনো কথায় পাত্তা দিলো না, পড়ায় মন দিলো। আরিশেরও মেঘের সঙ্গে মজা করার শক্তি ফুরিয়ে এসেছে, ঘুম পাচ্ছে। তাই ও শুয়ে ঘুমিয়ে পড়লো। পড়ার ফাঁকে মাঝে মাঝে মেঘ আরিশকে দেখছিলো, ছেলেটার প্রতি কিছু ফিল করতে শুরু করেছে কিনা সেটা চেক করার চেষ্টা করছে। কিন্তু নাহ, আপাতত নিজের মনে তেমন কোনো অনুভূতির উপস্থিতি টের পেলো না মেঘ!
________________________________________

সকালবেলা আজ একটু আগে উঠেছে মেঘ, রোজ কাটায় কাটায় উঠে খেয়েই ভার্সিটি চলে যায়। শাশুড়িকে এখনো সেভাবে রান্নাঘরের কাজে সাহায্য করা হয়ে ওঠেনি, সেদিন মেঘকে ওর মা পইপই করে বলে দিয়েছে সময় পেলেই শাশুড়ির কাজে সাহায্য করতে। আজ তাই করবে ভেবে সকাল সকাল ফ্রেশ হয়েই রান্নাঘরে এসে দেখে রেহানা বেগম রান্নার প্রস্তুতি নিচ্ছেন…

‘ আজ এতো সকালেই উঠে গেছো?’

‘ জ্বি, ঘুম ভেংগে গেলো! আমি আপনাকে কিছু সাহায্য করি?’

‘ সাহায্য করতে চাও? উম্ম, রুটি বানাতে পারবে? আমি আটা মেখে দিচ্ছি’

‘ আটা আমিই মেখে নিতে পারবো কিন্তু আমার রুটি তেমন গোল হয় না’

স্মিত হাসলেন রেহানা বেগম, হুট করেই ওনার অতীতের কিছু স্মৃতি মনে পড়লো…

‘ সমস্যা নেই, আমার রুটিও ভালোমতো গোল হয় না। সাতাশ বছরের সংসার জীবনে এখনো রুটি গোল করতে পারিনি। জানো, আরিশের দাদুর কাছে এইজন্যে কত বকা খেয়েছি আমি?’

‘সত্যিই! তাহলে তো গোল করার জন্যে বাটি ব্যবহার করলেই হয়ে যেতো’

‘ওসবের সুযোগ ছিলো না, বিয়ের পর প্রথম প্রথম তো দেশের বাড়িতে থাকতাম। আমি আর আমার জা মিলে রান্না করতাম আর আমার শাশুড়ি সামনে বসে নজর রাখতো। কোনো প্রকার চিটিং করার সুযোগ ছিলো না’

‘ দাদু বোধহয় অনেক স্ট্রিক্ট ছিলো’

‘ ভীষন! আমার শাশুড়ির মেজাজও বেশ চড়া ছিলো তবে মানুষ হিসেবে অনেক ভালো ছিলেন। আমাদের দুই বউমাকেই ভীষন স্নেহ করতেন’

সবজি কাটতে কাটতে মেঘের সঙ্গে সংসার জীবনের শুরুতে ঘটা কিছু ঘটনা শেয়ার করলেন রেহানা বেগম, মেঘও আগ্রহ নিয়ে শুনলো। রেহানা বেগম সবজি চুলায় বসিয়ে মেঘকে বললেন…

‘তোমার যদি বেলতে সমস্যা হয় তাহলে শোকজে রুটি মেকার আছে, তুমি তাহলে ওটা নিয়ে এসো’

‘রুটি একটু ত্যাড়াব্যাকা হওয়ায় যদি সমস্যা না হয় তাহলে বেলেই বানাই?’

‘ কোনো সমস্যা নেই, বানাও তবে!’

পরে মেঘ নিজেই আটা মেখে রুটি বানালো, বেলতে গিয়ে মাঝে মাঝে একটু সমস্যা হচ্ছিলো তখন রেহানা বেগম সাহায্য করেন। দুজনে মিলেই আজ হাতে হাতে সকালের নাস্তা তৈরি করেন। জগিং শেষে কিছুক্ষণ আগে বাড়ি ফিরেছে আরিশ, ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরোতেই দেখলো ওর বোন এসে রুমে বসে আছে…

‘ সকাল সকাল আমার ঘরে কি চাই?’

ভাইকে দেখেই হন্তদন্ত হয়ে এগিয়ে এলো আনিশা..

‘ ভাইয়া, আমার একটা হেল্প করবি?’

‘ কি?’

‘ আমাকে একটা টিউশন টিচার খুঁজে দিবি? আমার আর্জেন্টলি টিচার লাগবে, আমার মেজর সাবজেক্টের অবস্থা খুব খারাপ। পাশ করতে পারবো না টিউশন না পড়লে’

‘ তো আমাকে বলছিস কেনো? বাবাকে গিয়ে বল, সে টিচার অ্যারেঞ্জ করে দেবে তোর জন্য’

‘ আমি নিজের টিচার চুজ করে নিয়েছি তাই বাবাকে বলতে হবে না’

‘ ঠিক আছে, তাহলে আমাকে কেনো বলছিস?’

‘কারণ আমি যার কাছে পড়তে চাইছি সে তোর বন্ধু, অয়ন ভাইয়া!’

‘ অয়ন?’

‘ হ্যা! তোর মনে নেই এসএসসি পরীক্ষার আগে আমি গণিতে কতো দুর্বল ছিলাম? এরপর অয়ন ভাইয়া কয়েকমাস আমাকে পড়ানোর পর আমার বেসিক মোটামুটি ভালো হয়ে গেছিলো। আবারো ভাইয়াকে একটু বল না আমাকে হেল্প করতে’

‘ ওর থেকেও ভালো টিচার পাবি তুই, ওকেই কেনো লাগবে? তাছাড়া ও এখন পড়াশুনা নিয়ে অনেক ব্যস্ত, আবার সময় পেলে ওর বাবার বিজনেসের কাজেও একটু হেল্প করে। এতকিছুর পর তোকে কিভাবে সময় দেবে?’

‘ তুই ভাই নাকি শত্রু হ্যা? এইটুকুই তো সাহায্য চাইছি। বেশিক্ষণ না, আধা ঘন্টা পড়ালেই হবে আর তার যদি এসে পড়াতে অসুবিধা হয় তবে আমি গিয়ে পড়বো’

আনিশার এতো ডেস্পারেশন দেখে কিছুটা অবাক হলো আরিশ…

‘ কি ব্যাপার বলতো, তুই হঠাৎ ওর কাছে পড়ার জন্যে এতো ডেসপারেট কেনো হচ্ছিস?’

ভাইয়ের প্রশ্ন শুনে কিছুটা থতমত খেয়ে গেলো আনিশা, মিনমিনিয়ে বললো…

‘তুই এতো ভালো স্টুডেন্ট, তোর বোন হয়ে আমি যদি পঁচা রেজাল্ট করি লোকে কি বলবে? ভাবলাম আমাকেও তো ভালো রেজাল্ট করতে হবে, তাই এই সিদ্ধান্ত’

আরিশ আনিশার কথায় ঠিক পটলো না, তবে বুঝতে দিলো না। ওর মনে হচ্ছে আনিশার অয়নের কাছে পড়তে চাওয়ার কারণ এটা নয় বরং অন্যকিছু…

‘ ভাইয়া, প্লিজ প্লিজ! এই হেল্পটা করে দে। আমি তোর কাছে চির কৃতজ্ঞ থাকবো’

‘ থাক! আর তেলবাজি করতে হবে না, আমি অয়নের সঙ্গে কথা বলে তোকে জানাবো ‘

ব্যস! আরিশের এক কথাতেই নাচতে নাচতে বেরিয়ে গেলো আনিশা। বোনের মতি গতি পর্যবেক্ষণ করে বিশেষ সুবিধার লাগলো না ওর! নাস্তা শেষে একটু আগে ভার্সিটি পৌঁছেছে আরিশ, মেঘ আজ বাসা থেকে আগেই বেরিয়েছিলো বিধায় আজ আর ওকে মাঝ রাস্তায় নামানোর ডিউটি করতে হয়নি আরিশকে। বাইক পার্ক করে রেখে ক্যাম্পাস এসে ওপরে দো তলার দিকে তাকাতেই নজরে পড়লো বারান্দায় এক পাশ হয়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মেঘ, ওর সামনেই নিহান। দুর থেকে দেখেও বোঝা যাচ্ছে কিছু একটা আলোচনা করছে। মাঝে মাঝে কোনো কথা নিয়ে দুজনেই হাসছে। আরিশ নিচে দাড়িয়েই ওপরে দুজনের দৃশ্য পর্যবেক্ষণ করলো। এজন্যেই কি মেঘ আজ আগেই ভার্সিটিতে এসেছে?

চলবে…

[ভুলত্রুটি ক্ষমা সুলভ দৃষ্টিতে দেখবেন…!!]