#এলো_প্রেমের_মৌসুম
#লেখনীতে – #Kazi_Meherin_Nesa
#পর্ব – ১২
প্রতিবছরের ন্যায় এবারও কয়েক ধরনের আচার বানিয়েছেন রেহানা বেগম, পুরো বছরের জন্যে আচার বানানো হয়েছে। এবার ঠান্ডা করে এগুলো বয়ামে রাখবেন। আরিশ ওর মাকে বড় কড়াই চুলা থেকে নামাতে সাহায্য করে, এরপর মেয়েকে ডাকেন…
‘ আনিশা, এদিকে আয় তো। আচারগুলো বয়ামে ভরতে আমাকে সাহায্য কর ‘
মায়ের ডাক শুনে হেলেদুলে এলো আনিশা, মুখ গোমড়া করে বললো..
‘ ভাইয়া তো এখানেই আছে আম্মু, ওকে বলো না ‘
‘ ওর যতটুকু সাহায্য করার করেছে, এবার তুইও অলসতা বাদ দিয়ে সাহায্য কর আমার ‘
মায়ের কথা শুনে আনিশা আর কথা বাড়ালো না, সাহায্য করতে শুরু করলো। এক পর্যায়ে আরিশকে প্রশ্ন করলো..
‘ এই, ভাবী কবে আসবে রে ভাইয়া?’
‘ ওকে দিয়ে কি করবি?’
‘ কি আবার করবো, মিস করছি। ভাবী থাকলে আমি অন্তত গল্প করার সঙ্গী পাই। কদিন ধরে তাও পারছি না। প্রায় এক সপ্তাহ হয়ে এলো ভাবী গেছে ‘
আরিশ জবাব দিলো না দেখে আনিশা পুনরায় বলে উঠলো…
‘ তুই কি রে ভাইয়া! কোথায় নিজেই গিয়ে ভাবীকে নিয়ে আসবি তা না করে অপেক্ষা করছিস নিজে থেকে কবে ফিরবে। মেয়েটা বাপের বাড়ি গেলে সহজে আসতে চায় নাকি?’
আনিশার কথা শুনে আরিশ কিছুটা চিন্তায় পড়ে গেলো, সত্যিই কি মেঘ আর ফিরবে না? ভার্সিটিতে গত চারদিন যাবত মেঘের ইগনোর করার ব্যাপারটা লক্ষ্য করছে আরিশ। মেয়েটাকে নরম স্বভাবের ভেবেছিলো কিন্তু ও যে এতো জেদী তা আরিশের ধারণার বাইরে ছিলো…ক্লাস চলছে, কিন্তু আরিশ ক্লাসে মনোযোগ দিতে পারছে না। কয়েকবার ঘাড় ঘুরিয়ে মেঘের দিকে তাকিয়েছে, মেঘেরও একই অবস্থা। ক্লাস শেষে সুহানা আরিশকে জিজ্ঞাসা করে…
‘ কীরে, এখনও ওর সঙ্গে কথা বলিসনি?’
‘ নাহ!’
‘ তুই পারিসও আরিশ, তোকে না বললাম ওর সঙ্গে কথা বলে সব মিটিয়ে নে? এভাবে কতদিন চলবে?’
উত্তর দিলো না আরিশ, মেঘের এইভাবে ইগনোর করাটা ও আর মানতেই পারছে না। মেঘ যে ইচ্ছে করে কিছু বলবে না সেটাও বোঝা হয়ে গেছে, তাই আরিশ ঠিক করেছে এই নীরবতার অবসান ও নিজেই ঘটাবে! ক্লাস শেষে বেরোতেই তিশা বললো..
‘ মেঘনা, আজকে আমাকে একটু আগেই বাসায় যেতে হবে রে। একটু কাজ আছে ‘
‘ সমস্যা নেই, তুই যা আমি তোকে নোটস দিয়ে দেবো ‘
‘ ওকে! সি ইউ টুমরো ‘
তিশা যাওয়ার পরই মেঘ চলে গেলো লাইব্রেরীতে, পরের ক্লাস শুরু হতে কিছু সময় বাকি আছে। একলা সময় কাটানোর জন্যে লাইব্রেরীই মেঘের সবচেয়ে প্রিয় জায়গা। যদিও আজ কোন বই পড়বে ঠিক করে আসেনি, তাই লাইব্রেরীতে এসে পড়ার মতো একটা বই খুঁজতে শুরু করলো। তখনই দেখলো আরিশ আসছে, ওকে দেখামাত্রই মেঘ উল্টোদিকে হেঁটে চলে আস্তে যাচ্ছিলো কিন্তু পারলো না। হাত ধরে ফেললো আরিশ..
‘ পালানোর চেষ্টা করছো?’
‘ পালাচ্ছি না ‘
‘ তবে? আবারো ইগনোর করার চেষ্টা?’
‘ আমি তোমাকে কেনো ইগনোর করবো?’
‘ ওকে, দ্যান…’
আরিশ একটা বই বের করে মেঘের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো…
‘ লেটস টক!’
মেঘকে টেনে নিয়ে বসালো আরিশ, নিজেও পাশে বসলো। মেঘ বইটা নেড়েচেড়ে দেখে বললো..
‘ আমাকে এই বই দিয়ে বসালে কেনো? আমি তো এটা পড়তে চাইনা ‘
‘ তুমি এটাই পড়বে, আর এখান থেকে এক পা সরবে না’
মেঘ অদ্ভুতভাবে তাকালো আরিশের দিকে, ওর চোখমুখ পর্যবেক্ষণ করে মেঘ আন্দাজ করতে পারলো না যে আরিশের মনে কি চলছে? হুট করেই বা এভাবে নিজে কেনো এলো কথা বলতে? সে কি অনুতপ্ত? মস্তিষ্কে ঘুরতে থাকা এই ভাবনাগুলোকে একপাশে রেখে মেঘ বইটা খুলে বসলো। মেঘ বইয়ের দিকে মন দিচ্ছে দেখে তাজ্জব বনে গেলো আরিশ, পাশে বসা অবস্থায় মেয়েটা ওকে ইগনোর করছে?
‘ আমার দিকে তাকাও ‘
‘ তোমার কিছু বলার থাকলে বলতে পারো ‘
মেঘের বইটা নিজ হাতে বন্ধ করলো আরিশ, এবার মেঘও বিরক্ত হয়ে উঠলো…
‘ আরিশ, হোয়াটস রং উইথ ইউ! বলছি তো কিছু বলার থাকলে বলো, শুনছি আমি ‘
‘ আমাকে ইগনোর কেনো করছো?’
‘ তোমার বুঝতে ভুল হয়েছে হয়তো, আমি তোমাকে কেনো ইগনোর করতে যাবো?’
মেঘ আরিশের দিকে তাকাচ্ছিলো না দেখে আরিশ এক হাতে মেঘের গাল চেপে ধরে ওর মুখটা নিজের দিকে ঘোরালো! মেঘ বড়বড় চোখ করে তাকালো…
‘ বাসা থেকে কতদিন হলো গেছো?’
‘ আরিশ! কি করছো তুমি? এটা লাইব্রেরী ‘
‘ তুমি আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দাও, কতদিন হলো তুমি বাবার বাসায় গেছো? ছয়দিন, রাইট? আবার ক্লাসে এসেও আমাকে ইগনোর করছো। কেনো?’
আরিশ এতো জোরে গালটা চেপে ধরেছে, মেঘের মনের হচ্ছে যেনো ওর গালটা ভেঙে যাবে! ও আরিশের হাত সরানোর চেষ্টা করে বললো..
‘ আরিশ, ছাড়ো আমার লাগছে ‘
ছেড়ে দিলো আরিশ, মেঘ দু হাতে গাল বুলাতে বুলাতে ওর দিকে তাকালো। ছেলেটা তিনবার ব্রিথ ইন – ব্রিথ আউট করলো। যেনো নিজের রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টায় আছে, মেঘ বুঝতে পারছে না হঠাৎ ওর এই আচরণের কারণ কি!
‘ তুমি আমাকে ইগনোর কেনো করছো?’
‘ কেনো ইগনোর করবো না? যে আমাকে ট্রাস্টই করেনা তার আমার ইগনোর করায় কি এসে যায়?’
‘ আমি একবারও বলিনি যে আমি তোমাকে ট্রাস্ট করিনা ‘
‘ হ্যা, তুমি বলোনি কিন্তু নিজের কথায় সেটা বুঝিয়ে দিয়েছো। নিহান আমাকে সাহায্য করছে, আর তুমি কিনা ভেবে নিলে আমরা দুজনে…’
‘ আই ডিডেন্ট মিন দ্যাট!’
এবার আরিশের দিকে তাকালো মেঘ..
‘ তাহলে কি মিন করেছিলে তুমি? সেদিন ওই কথাটা বলে কি বোঝাতে চাইছিলে? আমি জানিনা তুমি আমার সম্পর্কে কি ভাবো, বা এতোগুলো দিন একসঙ্গে থাকার পর আমার প্রতি তোমার ঠিক কতোটা বিশ্বাস জমেছে। কিন্তু আমি তোমাকে বিশ্বাস করি, আর তাই আমিও বোকার মতো ভেবে বসেছিলাম যে তুমিও হয়তো আমাকে বিশ্বাস করো। বাট আই ওয়াজ রং, তুমি আমাকে বিশ্বাস করো না ‘
আরিশ বিস্মিত নজরে চেয়ে দেখছিলো মেঘকে, ও ভাবতেও পারেনি যে ওর একটা কথাতেই মেয়েটার মনে এতো ক্ষোভ জমে যাবে…
‘ কিছু ছেলেরা আছে জানো? যারা ছোটো ছোটো কারণে তার ওয়াইফের সন্দেহ করে, তুমিও কি তাদের মত হতে চাইছো? আর বড় কথা হলো তুমি তো আমাকে স্ত্রী হিসেবেই মানো না, তাহলে আমি কি করলাম না করলাম সেটাও তোমার দেখার বিষয় নয় ‘
‘ অবশ্যই আমার দেখার বিষয়, নিহান তোমাকে হেল্প করছে তাতে আমার সমস্যা নেই কিন্তু তোমরা দুজনে যে এক্সট্রা টাইম স্পেন্ড করছো সেটা আমি মানতে রাজি নই ‘
‘ এক জায়গায় কাজ করতে গেলে কিছুটা এক্সটা কথা হবেই, সময় কাটবেই। এইটুকু বিষয়কে এতো বড় ইস্যু তুমি কেনো বানাচ্ছো আরিশ? তুমি বাচ্চা নাকি?’
‘ ইটস অ্যা বিগ ইস্যু ফর মি!’
‘ ইটস নট! এমন নয় যে আমি ওর সঙ্গে মিশছি বলে তোমার বদনাম হবে, আমাদের সম্পর্কটা কিন্তু গোপন আছে আরিশ। আমার কোনো বিষয় তোমার ওপর কোনো ইফেক্ট ফেলবে না ‘
ভেবেছিলো আজ মেঘের সঙ্গে ঠান্ডা মাথায় কথা বলবে, নিজেকে সেভাবেই প্রস্তুত করে এসেছিলো আরিশ কিন্তু মেঘের কথা শুনে এই মুহূর্তে যেনো আর শান্ত থাকতে পারছে না…
‘হোয়াট! তো তুমি বলতে চাইছো আমাদের সম্পর্কের কথা কেউ জানেনা এই সুযোগে তুমি ওর সঙ্গে এক্সট্রা টাইম স্পেন্ড করতেই পারো রাইট?’
‘ ইয়াহ রাইট! তাছাড়া সে আমাকে পড়ায় সাহায্য করছে, এটাকে যদি তোমার আলাদাভাবে সময় কাটানো মনে হয় তাহলে আমার কিছু বলার নেই ‘
মেঘ উঠে যেতে যাচ্ছিলো, আরিশ ওর হাত ধরে আবারো বসিয়ে দিলো…
‘ আমার কথা শেষ হয়নি এখনও!’
‘ আমার আর কিছু বলার নেই!’
‘ তোমার ওর কাছে পড়তে হবেনা, তোমার কিছু জানার প্রয়োজন হলে আমি হেল্প করবো ‘
‘ আই ডোন্ট নিড ইওর হেল্প!’
‘ ডু ইউ থিঙ্ক হি ইজ বেটার দ্যান মি?’
‘ হি ইজ! সে অন্তত আমার সঙ্গে রুড বিহেভ করেনা ‘
আরিশ বুঝলো মেঘ ওর ওপর বেজায় চটে আছে, এখন যদি ও নিজেও রাগারাগি শুরু করে বিষয়টা আরো খারাপ পর্যায়ে পৌঁছে যাবে।
‘ আরিশ, আমার হাত ছাড়ো! আমার আর তোমার সঙ্গে কথা বলার ইচ্ছে নেই ‘
এ মুহূর্তে মেঘের আরিশের সামনে থেকে সরে যেতে ইচ্ছে করছে কিন্তু পারছে না, উঠে যাওয়ার জন্যে রীতিমত ছটফট করছে। তখন ঐ বসা অবস্থাতেই হুট করে আরিশ মেঘের গাল দুটো ধরে ওর ঠোঁটে চু’মু দিয়ে নরম স্বরে বললো…
‘ তুমি আমার ওপর রেগে আছো, আই নো আমার কথায় অনেক খারাপ লেগেছে তোমার। ইউ নিড টু কাম ডাউন ফাস্ট ওকে? ‘
কয়েক মুহূর্তের যেনো সময় মেঘ কোমায় চলে গেছিলো, চোখদুটো কোটর থেকে বেরিয়ে আসার অবস্থা হয়েছে। বুকটা অস্বাভাবিক গতিতে ওঠানামা করছে, আরিশ এটা কি করলো? চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালো মেঘ, ঠোঁটে হাত বুলিয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখলো কেউ আছে কিনা।
‘ আ..আর ইউ ক্রেজি? লাইব্রেরীতে আছি আমরা’
‘ সো হোয়াট?’
‘ মা..মাথা খারাপ হয়ে গেছে তোমার!’
মেঘের ওই কনফিউজড চেহারা দেখে আরিশের মজাই লাগলো, ও নিজেও চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করলো…
‘ ফার্স্ট কিসে শক পেলে নাকি?’
আরিশের হাসি দেখে মেঘ আরো চমকে গেলো, কোথায় ভেবেছিলো এতদিন পর আরিশের সঙ্গে কথা উঠলে হয়তো ঝগড়া ঝাটি হবে কিন্তু সে যে এমন কিছু করে বসবে কে জানতো? এ মুহূর্তে দৌঁড়ে দূরে কোথাও পালিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে মেঘে, ব্যাগটা দ্রুত কাঁধে তুলে নিলো মেঘ। আরিশও ওর সঙ্গে যাওয়ার জন্যে উদ্যত হতেই মেঘ বললো…
‘ডোন্ট ফলো মি!’
দ্রুত পায়ে বেরিয়ে গেলো মেঘ, মেয়েটা যে এমন পরিস্থিতির জন্যে অপ্রস্তুত ছিলো তা আরিশ বেশ বুঝেছে। মেয়েটা লজ্জা পেয়ে পালিয়ে গেলো? অবশ্য আরিশ নিজেও ভাবেনি এমন কিছু করে বসবে, তবে ভুল কিছু তো আর করেনি। নিজের কার্যক্রমের কথা ভেবে নিজেই হাসলো আরিশ, হঠাৎ টেবিলের কোণায় তাকাতেই কিছুটা র’ক্ত চোখে পড়লো। পুরোনো টেবিলের কোনাটায় একটা তারকাটা উচুঁ হয়ে আছে, মেঘ টেবিলের ওই পাশেই বসেছিলো মেঘ কি তবে হাতে চোট পেলো?
_________________________________
মেঘ দ্রুত হেঁটে ক্যাম্পাসের বাইরে আসার চেষ্টা করছিলো, হঠাৎ পেছন থেকে আরিশের ডাক শুনে থেমে গেলো…
‘ তুমি আমাকে ফলো করছো কেনো!’
আরিশ লক্ষ্য করলো মেঘ কাঁপা কাঁপা গলায় কথা বলছে আর ডান হাতটা পিছনে নিয়ে রেখেছে, ওর একটু সন্দেহ হয়..
‘ হাতে কি হয়েছে তোমার?’
‘ কিছুনা ‘
মেঘ দেখাতেই চাইছিলো না কিন্তু আরিশ জোর করে ওর হাতটা সামনে আনে আর দেখে ওর হাতের তালু ত্যারছা হয়ে কে’টে গেছে।
চলবে…
#এলো_প্রেমের_মৌসুম
#লেখনীতে – #Kazi_Meherin_Nesa
#পর্ব – ১৩
আরিশ মেঘকে গাছের নিচের বেঞ্চটায় বসতে বললো, কিন্তু মেঘ বসবে না…
‘এখন বসার সময় নেই আরিশ, আমাদের ব্রেকের পরের ক্লাস শুরু হবে এখন! টাইম দেখেছো?’
‘দু মিনিট বসলে কিছুই হবেনা’
মেঘ বসতেই চাইছিলো না, বারবার ঘড়ি দেখছিলো কিন্তু আরিশ জোর করে ওকে বসিয়ে প্যান্টের পকেট থেকে নিজের রুমালটা বের করে। মেঘ বুঝলো না আরিশ কি করতে চাইছে..
‘কি হচ্ছে এটা?’
আরিশ মেঘের হাতের ক্ষতর পরিমাণটা আয়ত্ত করে নেয়, ত্যারছা হয়ে অনেকটা কেটেছে। আরিশ মিনিট দুয়েক মেঘের হাতের ওই ক্ষতর দিকে দেখে প্রশ্ন করলো…
‘তোমার ব্যাগে পানির বোতল আছে?’
‘হ্যাঁ, আছে!’
‘ যাক, কাজের সময় তোমার কাছে সবকিছুই অ্যাভেইলেবল থাকে। এখন দাও ওটা আমাকে’
আরিশের হাত থেকে নিজের হাতটা সরিয়ে নিলো মেঘ..
‘ আরিশ, আমাদের ক্লাসে দেরি হয়ে যাচ্ছে!’
আরিশ বুঝলো মুখে বলে কাজ হবেনা, তাই ও নিজেই মেঘের কাধ থেকে টান দিয়ে ব্যাগটা হাতে নিলো!
‘আরে, তুমি এভাবে একটা মেয়ের ব্যাগে হাত দিতে পারো না। ইটস রং!’
‘তোমার মতো জেদী মেয়েদের সাথে এরকম না করলে হয় না, কারণ ভালোভাবে কথা বললে তোমরা কথা শুনতে চাও না। নাকি আমার জায়গায় নিহান হলে ভালো হতো? ডাকবো ওকে?’
‘ হোয়াট রাবিশ! আমি ওকে কেনো ডাকতে যাবো?’
‘ ডাকতেই পারো, হু নৌজ?’
‘ হ্যা, যদি আমার নিহানের সাহায্যের প্রয়োজন হয় অবশ্যই ডাকবো। আফটার অল, উই আর ক্লাসমেটস’
‘ ওহ রিয়েলি? আমি যেচে সাহায্য করতে চাইছি সেটা তুমি নিতে চাইছো না আর নিহানকে নিজে সাহায্য করতে বলবে? ওয়াও! কতটুকু চেনো তুমি ওকে হুমম? কি জানো ওর ব্যাপারে?’
‘ তুমি কি আমার সঙ্গে ঝগড়া করতে চাইছো? সরি, আমার এখন ঝগড়া করার মুড নেই ‘
মেঘ উঠে যেতে যাচ্ছিলো, আরিশও রেগে ছিলো তো খেয়াল না করেই ও মেঘের হাতের যেখানে কেটেছে সেখানে শক্ত করে চেপে ধরে! মেঘ ভীষণ ব্যথা পায় আর কা’টা জায়গায় চাপ পড়ায় আরো রক্ত বেরোয়, ব্যথায় কুকড়ে ওঠে মেঘ…
‘ ওহ শি’ট! মেঘনা, তোমাকে তখন থেকে বলছিলাম পানির বোতল দাও কিন্তু তুমি তর্ক করে যাচ্ছিলে। দেখলে তো কি হলো!’
‘ আরিশ, প্লিজ। যেতে দাও আমাকে’
‘আগে তোমার হাতের একটা ব্যবস্থা করবো তারপর তুমি যেখানে ইচ্ছে যাবে’
আরিশ মেঘের ক্ষতে পানি ঢেলে র’ক্ত পরিষ্কার করে দিয়ে আস্তে আস্তে ওর হাতটা পরিষ্কার করতে থাকে। আজ যেনো মেঘের কষ্ট দেখে এরকম মনে হচ্ছিলো হাতটা মেঘের নয় আরিশের কে’টেছে। মেঘ অবাক চোখে চেয়ে দেখছে আরিশের মুখটা, ছেলেটা জেনো হুট করেই কেমন বদলে গেছে। ক্ষতস্থান পরিষ্কার করে আরিশ ওর রুমালটা বেঁধে দেয়…
‘ আপাতত এটা থাক, ক্লাস করে এটার একটা ব্যবস্থা করা যাবে ‘
মেঘ আর কথা না বাড়িয়ে ক্লাসের উদ্দেশ্যে পা বাড়ায়। আরিশও একটু পর হাঁটা শুরু করে। ওর মাথায় হঠাৎ করেই অনেককিছু ঘুরছে যে কি হচ্ছে আসলে ওর সাথে? এরকম তো আগে কখনো হয়নি তাহলে আজকে কেনো তাও আবার মেঘের জন্যে..? হুট করে লাইব্রেরীতে এমনকিছু করে বসবে তা ও নিজেও ভাবেনি। আরিশ বেশ অনুভব করছে যে ওর জীবনে এ কয়দিন মেঘের অনুপস্থিতি মারাত্মক প্রভাব ফেলেছিল, যার ফলশ্রুতিতে আজ লাইব্রেরীতে বসে অমন কান্ড করতেও দুবার ভাবেনি। এসব ভাবতে ভাবতে আরিশ যাচ্ছিলো তখন কোত্থেকে অয়ন দেখে ফেলে ওকে…
‘ এইযে আরিশ, তোর ব্যাপার কি বলতো? আজকাল মাঝে মাঝে এরকম উধাও হয়ে কোথায় চলে যাস তুই?’
‘ একটু কাজ ছিলো’
‘হ্যাঁ তো আমাকেও সাথে নিয়ে যেতে পারতিস তো তাইনা? দেখ না সুহানা ফোনে ওর বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে ফ্লার্ট করছে আর আমি ওখানে বোর হচ্ছিলাম’
‘ তুইও একটা প্রেম কর, তাহলে আর বোর হবিনা। তাছাড়া আমি যে কাজে গেছিলাম সেটা করার জন্য আমি একাই যথেষ্ট’
‘আচ্ছা? কি এমন গোপন কাজ করছিলি তুই যে আমাকে সাথে রাখা যেতো না শুনি? তুই করতি আমি না হয় পাশে দাড়িয়েই দেখতাম’
‘ তোর দেখার মতো কোনো অমায়িক দৃশ্য ছিলো না’
‘ ওহ! বউয়ের কাছে গেছিলি নাকি?’
অয়ন ভেবেছিলো অন্যদিনের মতো আজও বুঝি আরিশ রেগে যাবে, কিন্তু নাহ! উল্টে আজ আরিশ বললো…
‘ হ্যা গেছিলাম, তো?’
অনেক চোখে তাকালো অয়ন!
‘ ওহ মাই গড! তুই আজ রাগ করলি না? সূর্য আজ কোনদিক থেকে উঠেছে ‘
‘ ইয়ার্কি পড়ে করিস, এখন চল। ক্লাস স্টার্ট হবে ‘
আরিশের কথা শুনে অবাক হলেও খুশিও হয়েছে অয়ন, মেঘের সঙ্গে আরিশের সম্পর্ক স্বাভাবিক হোক বন্ধু হিসেবে এটাই তো চাইছিলো। অবশেষে যেনো অয়নের আশা পূরণ হওয়ার পথে! ক্লাস শেষে মেঘ বাড়ি যাওয়ার জন্য বেরিয়েছে, ভার্সিটির গেটের সামনে আসতেই দেখে নিহান ওর বন্ধুদের সাথে দাড়িয়ে আছে। মেঘকে দেখেই নিহান এগিয়ে আসে…
‘মেঘনা, তোমার হাতে এটা বাধা কেনো? কেটে গেছে নাকি?’
‘হ্যাঁ ওই একটু লেগেছে, তেমন কিছুনা’
‘এটা তো ব্যান্ডেজ কম রুমাল বেশী মনে হচ্ছে, রুমাল বেঁধেছ কেনো? চলো ডক্টর দেখিয়ে নেবে যদি সিরিয়াস কিছু হয়?’
‘এতো চিন্তার কিছু হয়নি, সামান্য একটু লেগেছে তাই পট্টি করেছি র’ক্ত পড়া থামানোর জন্যে। একাই ঠিক হয়ে যাবে’
‘একা একাই কোনোকিছু ঠিক হয় না মেঘনা, চলো আমি তোমাকে ডক্টরের কাছে নিয়ে যাচ্ছি’
কথাটা বলেই নিহান মেঘের হাত ধরতেই আরিশ চলে আসে…
‘যেতে চাইছেনা তারপরও জোর করছিস? ভেরি ব্যাড ম্যানার্স!’
নিহান স্মিত হেসে বলে…
‘ তোর কোথাও বুঝতে ভুল হচ্ছে আরিশ, আমরা বন্ধু। আর বন্ধুই তো বন্ধুর বিপদে সাহায্য করবে ‘
বাঁকা হাসলো আরিশ…
‘ ফ্রেন্ডস টু ফ্রেন্ডস হেল্পের কথাটা তখনই শোভা পায় যখন দুজনের মতের মিল হয় কিন্তু এখানে তো উল্টো হচ্ছে। মেঘনা না করছে আর তুই ওকে ফোর্স করছিস’
পরিস্থিতি বেগতিক দেখে মেঘ নিহানের থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে আরিশকে বলে…
‘আরিশ, আমাকে নিহান জোর করছেনা। সবকিছু নিজের মতো করে ভাবা বন্ধ করো ‘
আরিশ যেনো মেঘের কথার কোনো উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করলো না। ওর হাতটা শক্ত করে ধরে বেরিয়ে এলো। ভার্সিটির গেটে যারা ছিলো সবাই অবাক, এমনকি আজ আরিশের কর্মকাণ্ড দেখে অয়ন নিজেও হতভম্ব হতে গেছে! কিন্তু আরিশের এই ব্যবহারে সবথেকে বেশি অবাক হয়েছে মেঘ। ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে আরিশ মেঘকে ওর এক পরিচিত ক্লিনিকে নিয়ে যায়, মধ্যবয়স্ক এক ভদ্রলোকের রুমে আরিশ ঢুকতেই লোকটি হাসিমুখে বলে উঠলেন…
‘আরে আরিশ তুমি এখন এখানে? বাড়ির সবাই ভালো আছেন তো?’
‘ জ্বি আঙ্কেল, আপনি কেমন আছেন?’
‘ভালো, তো বলো কি দরকার আছে?’
মেঘকে দেখিয়ে বললো…
‘ ওর লোহায় চোট লেগেছে তাই টেটনাসের ইনজেকশন দিয়ে দিন ‘
ইনজেকশন শুনেই মেঘ লাফিয়ে উঠলো..
‘ইনজেকশন? আ..আমি কোনো ইনজেকশন নেবো না।আমি বাড়ি যাবো বলছি তো, এখুনি যাচ্ছি আমি’
‘মেঘনা, কি বাচ্চাদের মতো করছো তুমি? ইনজেকশন না নিলে সেপটিক হয়ে যাবে তখন কি করবে?’
‘হলে তো আমার হবে, দরকার হলে হাত কেটে ফেলবো কিন্তু ইন.. ইনজেকশন? না না আমি পারবো না
‘একদম চুপ! আঙ্কেল আপনি ইনজেকশন দিন, আমি ওকে ধরছি’
ধ..ধরবে মানে? আরে তুমি আমার কথা বুঝতে কেনো পারছো না? লাগবেনা আমার এটা’
আরিশ শক্ত করে মেঘকে ধরে রেখেছে, মেঘ যেনো তাতে আরো ভয় পেয়ে বসলো। ওকে ভয় পেতে দেখে ডাক্তার বললেন…
‘ তুমি একদম শান্ত হয়ে থাকো দেখবে একটুও ব্যথা লাগবেনা। এক কাজ করো চোখ বন্ধ করে নিও তাহলে বুঝতেই পারবেনা’
‘কিন্তু ডক্টর আমি..’
‘এরকম অনেকেই আছে যারা ভয় পায় ইনজেকশনে কিন্তু আরিশ তো তোমার ভালোর জন্যেই বলছে তাইনা? নিয়ে নাও’
মেঘ ডক্টরের কথা শুনে আরিশের দিকে তাকায়, ইনজেকশন না নেওয়া অব্দি আরিশ ছাড়বে না বুঝে মেঘ আল্লাহর নাম নিয়ে বসে পড়লো। ডক্টর হালকা হেসে ইনজেকশন রেডি করে আনে, ওটা দেখেই মেঘের অবস্থা কাহিল হয়ে গেছে। মুহূর্তের মধ্যেই মেয়েটার চোখমুখ যেনো ফ্যাকাশে হয়ে গেলো। মেঘ ভয় পেয়ে বারবার নিজের হাত কচলাচ্ছে দেখে আরিশ হাঁটু ভাঁজ করে ওর সামনে বসে ওর হাতে হাত রাখে। এরপর ডক্টর মেঘের হাতে ইনজেকশন পুশ করতেই মেঘ আরিশের হাত খামচে ধরে, ওর নখগুলো আরিশের হাতে বসে যায় কিন্তু আরিশ কিছুই বলেনি শুধু তাকিয়ে দেখছিলো ভয়ে চুপসে যাওয়া মেঘের মুখটা। মেয়েরা চোখ বুঝে ঠোঁট চেপে ধরে আছে, একদম বাচ্চাদের মতো! আরিশ হালকা হাসলো।
‘ ব্যস, হয়ে গেছে ‘
ডক্টরের কথা শুনে মেঘ নিজের চোখ খোলে। সত্যি বলতে ও তেমন ব্যথা পায়নি।
‘ ব্যথা লাগলো না তো!’
স্মিত হাসি দিয়ে পাশে চোখ ঘোরাতেই মেঘ দেখে আরিশ ওর হাত ধরে তাকিয়ে আছে। এ মুহূর্তে দুজনেরই চোখাচোখি হয়, আরিশের ওই স্থির নজরে মেঘের চোখজোড়া যেনো আটকে গেলো। হঠাৎই লাইব্রেরীর মুহূর্ত চোখের সামনে ভেসে উঠলো মেঘের। তখনই ডাক্তার প্রশ্ন করলো..
‘ আরিশ, ও কি তোমার বন্ধু?’
আরিশ কিছু বলার আগেই মেঘ উত্তর দিলো..
‘ আমরা ক্লাসমেট ‘
‘ ওহ আচ্ছা, ক্ষতস্থানটা ভালো করে ওষুধ লাগিয়ে রেখো, একটু যত্ন করলেই দ্রুত সেরে উঠবে কেমন?’
‘ থ্যাংক ইউ ডক্টর ‘
ক্লিনিক থেকে বেরিয়ে এলো মেঘ, আরিশও ওর পেছন পেছন এলো…
‘ তুমি ওই কথা বললে কেনো? আমরা শুধুই ক্লাসমেট? আর কিছুনা?’
‘ আমরা ক্লাসমেট! এটা তো মিথ্যে নয় ‘
‘ কিন্তু তুমি যে পরিচয় দিলে সেটা আংশিক, আমাদের আসল পরিচয় প্রকাশ করলেও সমস্যা ছিলো না ‘
‘ কিন্তু তুমিই সেটা করতে মানা করেছো আমায় ‘
নিজের বলা কথায় যেনো নিজেই ফেঁসে গেছে আরিশ, বিয়ের প্রথম রাতে বলা প্রতিটা কথা মেঘ এখনও অক্ষরে অক্ষরে পালন করে যাচ্ছে। এবার এই বিষয়টা কিভাবে হ্যান্ডেল করা উচিত ভেবে পাচ্ছেনা ছেলেটা…
‘ ওকে, ফরগেট অ্যাবাউট দিস!’
‘ হুমম! তা তোমার কাজ তো শেষ তাইনা? এখন আমি গেলাম বাড়িতে ‘
‘ তুমি আমার সঙ্গে আমার বাসায় যাবে ‘
‘ নাহ! আমি আজকে আমার বাসায় যাবো। এখান থেকে হুট করে তোমার সঙ্গে চলে ভালো দেখাবে না। আমি কাল আসবো ‘
আরিশ চাইছিলো এখান থেকেই মেঘকে বাসায় নিয়ে যেতে কিন্তু মেঘ রাজি হলো না, আরিশও আর জোর করেনি। এমনিতেই জোর করে ইঞ্জেনকশন দেওয়ায় ভয়ে মেয়েটার মুখ শুকিয়ে গেছে, এখন আর অন্য বিষয় নিয়ে মেঘের সঙ্গে জোরাজুরি করতে চায়না!
_____________________________________
ডিনার শেষে টিভি দেখতে বসেছিলো মেঘ, একটার পর একটা চ্যানেল চেঞ্জ করে যাচ্ছে কিন্তু টিভির দিকে ওর মনোযোগ নেই। ও শুধু ভাবছে সারাদিন আরিশ আজ কি কি করলো, মেঘ ভেবে পাচ্ছেনা আরিশ হঠাৎ এমন কেনো করলো। ওর এই আকস্মিক পরিবর্তনের পেছনের কারণ কি! এরই মধ্যে হুট করে দরজায় নক পড়লো, মেঘ কিছু বলার আগেই দরজা ঠেলে ভেতরে এলো কেউ।
‘আরিশ!’
প্রথমে মেঘ ভেবেছিলো হ্যালুসিনেট করছে, আরিশ এখন কোত্থেকে আসবে? কিন্তু না, সে সত্যিই এসেছে। টিভি বন্ধ করে উঠে দাঁড়ালো মেঘ…
‘ তুমি এখানে কি করছো?’
‘ টিভি বন্ধ করলে কেনো? বসো, দুজনে একসঙ্গে বসে দেখি ‘
মেঘের হাত থেকে রিমোট নিয়ে টিভি ছেড়ে বিছানায় বসলো আরিশ, মেঘ ভ্রু কুঁচকে তাকালো প্রশ্ন করলো..
‘ তুমি এই সময়ে এখানে?’
‘ তুমি বলেছিলে তোমার মা বাবাকে না বলে চলে যাওয়াটা ঠিক হবেনা, তাই ভাবলাম আমি এসে তোমাকে ওনাদের সামনে দিয়েই নিয়ে যাই!’
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সময় দেখলো মেঘ, রাত প্রায় দশটা বাজে!
‘ তুমি বলতে চাইছো যে, এই রাতের বেলা তুমি এখানে আমাকে নিতে এসেছো?’
‘ ইয়াহ!’
আজ সারাদিন আরিশের কান্ডকারখানা দেখে যেটুকু অবাক হয়েছিলো তার থেকেও বেশি অবাক হচ্ছে এখন! মেঘ ভেবে পাচ্ছেনা আরিশের এই হঠাৎ পরিবর্তনের পেছনের ঘটনা কি!
চলবে…
[ভুলত্রুটি ক্ষমা সুলভ দৃষ্টিতে দেখবেন…!!]