এলো প্রেমের মৌসুম পর্ব-২০+২১

0
2

#এলো_প্রেমের_মৌসুম
#লেখনীতে – #Kazi_Meherin_Nesa
#পর্ব – ২০+২১

সকালবেলা সুহানাদের বাসা থেকে নিজেদের বাসায় ফিরেছে মেঘ আরিশ, যাওয়ার পথে অয়ন তিশাকে বাড়ি দিয়ে আসবে। এসেই ক্লান্ত হয়ে সোফার উপর ধপ করে বসে পড়লো আরিশ, মেঘ শ্বশুরের সঙ্গে কথা বলে ব্যাগ নিয়ে রুমে চলে গেছে। আফজাল সাহেব ছেলেকে প্রশ্ন করলেন…

‘ এতো জরুরি কিসের ট্রিপে গেছিলি তোরা?’

‘ এমনি একটু ঘুরে এলাম। মন মেজাজ ফ্রেশ করার জন্যে মাঝে মাঝে ট্রিপ দেওয়া উচিত আব্বু’

‘ তাই বলে হুট করে রাতের বেলা তোর মনে হলো ট্রিপে যাওয়া উচিত? আর ফোন বন্ধ করে রেখেছিলি কেনো? জানিস তোর মা কতো চিন্তা করছিলো তোদের জন্যে?’

‘ এতো চিন্তার কিছু হয়নি আব্বু, চার্জার নেইনি সাথে। ফোনের চার্জ শেষ হয়ে গেছিলো ‘

ছেলের এই ট্রিপের কথা কেনো যেনো বিশ্বাস হলো না আফজাল সাহেবের…

‘ সত্যি করে বলতো আরিশ, কোথায় গেছিলি তোরা? কোথাও কোনো ঝামেলা পাকিয়ে আসিসনি তো?’

‘ তোমার ছেলে ঝামেলা পাকায়না আব্বু, কোনো ঝামেলা হলে তা সমাধানের চেষ্টা করে’

‘ কোন ঝামেলার কথা বলছিস? কিসের সমাধান করেছিস?’

‘ আমার অনেক ক্লান্ত লাগছে আব্বু, তোমার সব প্রশ্নের উত্তর আমি পরে ঠান্ডা মাথায় দেবো ওকে? এখন আমি রুমে গেলাম ‘

বাবার কথা এড়িয়ে গেলো আরিশ কারণ ওর বাবা যদি জানে তার ছেলে কি কান্ড করে এসেছে তাহলে ভীষণ বকবে আর আরিশ বাবার বকা শুনতে রাজি নয়! রুমে এসে দেখে মেঘ ইতিমধ্যে ব্যাগের জিনিসপত্র বের করে গুছিয়ে রাখতে শুরু করেছে।

‘ আব্বু যেভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করছিলো তাতে তার ব্যবসায়ী না হয়ে ডিটেকটিভ হওয়া উচিত ছিলো ‘

‘ কি জিজ্ঞাসা করেছে?’

‘ তার সন্দেহ হয়েছে যে আমরা ট্রিপে নয় বরং অন্যকিছু করতে গেছিলাম, বাড়িতে বলার দরকার নেই আমরা আসলে কোথায় গেছিলাম!’

‘ কিন্তু…’

‘ কোনো কিন্তু নয়, আব্বু এসব এতো বুঝবে না আর না বুঝে পড়ে রাগারাগি করবে। আমি এখন আমার মুড নষ্ট করতে চাইনা ‘

‘ ঠিক আছে, এসব বাদ দিয়ে তুমি গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসো ‘

আরিশ ফ্রেশ হতে গেলো। এদিকে আনিশার কথাটা মাথা থেকে সরাতে পারছে না মেঘ, ছোটো মেয়েটা অয়নের জন্যে আশায় বুক বেঁধে বসে আছে ওদিকে অয়ন যে অন্য কাউকে পছন্দ করে। সবদিক ভেবে মেঘ ঠিক করলো আনিশাকে অয়ন তিশার বিষয়টা বলবে, যাতে ও অয়নের কথা ভুলে মুভ অন করতে পারে। ফ্রেশ হয়েই ও সোজা ননদের রুমে এলো, আনিশা তখন পড়ছিলো। ভাবিকে দেখেই আনিশা বই বন্ধ করে ওকে ভেতরে আসতে বললো…

‘ পড়ায় বিরক্ত করলাম না তো?’

‘ মোটেই না! ভাবী, তোমাদের ট্রিপ কেমন গেলো?’

‘ উম্ম, ভালোই ছিলো। আচ্ছা আনিশা, আজ বিকেলে চলো আমরা দুজন মিলে কোথাও ঘুরে আসি? ‘

‘ আজকে?’

‘ হ্যা, কেনো কোনো সমস্যা আছে তোমার?’

‘ না না, আমার তো ঘুরতে অনেক ভালো লাগে তাছাড়া তোমার সঙ্গে প্রথমবার যাবো বলে কথা। আপত্তির কি আছে? কিন্তু কোথায় যাবো বলোতো?’

‘ সেটা তুমিই না হয় ঠিক করো ‘

‘ ঠিক আছে, আজ তাহলে ননদ ভাবী মিলে চলো একটু কেনাকাটা খাওয়া দাওয়া করা যাক। আমার আসলে কিছু জিনিস কেনাকাটাও করতে হবে, কয়েকদিন ধরে যাবো যাবো করেও যাওয়া হচ্ছেনা ‘

‘ ঠিক আছে, বিকেলে তাহলে তৈরি থেকো ‘

বিকেলে ওরা দুজনে একসঙ্গে ঘুরতে যায়, প্রথমে আনিশা কিছু কেনাকাটা করে নেয়। আজ আনিশা নিজের পোশাক পছন্দের দায়িত্ব মেঘকে দেয়, যদিও মেঘের আনিশার পছন্দ সম্পর্কে তেমন ধারণা নেই তবুও ও নিজের পছন্দসই কিছু পোশাক সিলেক্ট করে দেয়। এরপর ওরা খাওয়া দাওয়া করতে বের হয়, আনিশা স্ট্রিট ফুড খাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করলে মেঘও তাতে আপত্তি করেনা। মেঘের চেনা কিছু ফুড কার্ট আছে, আনিশাকে সেখানেই নিয়ে যায়। খাওয়া দাওয়ার এক ফাঁকে মেঘ অয়নের প্রসঙ্গ তোলে এবং আনিশাকে জানায় যে অয়ন ওর বান্ধবীকে পছন্দ করে। কথাটা শোনার পর আনিশা একেবারে মন খারাপ করে ফেলে, সেদিন অয়ন কাউকে পছন্দ করে জানার পর থেকেই মুড অফ ছিলো ওর যদিও ওর জানার ইচ্ছে ছিলো যে অয়ন কাকে পছন্দ করে। আজ মেঘের কাছ থেকে সেটাও জেনে গেলো, প্রথমে ভীষণ মন খারাপ হয় ওর। মেঘ ওকে বোঝায়, ওর মন ভালো করার চেষ্টা করে। পরবর্তীতে আনিশা নিজেই সিদ্ধান্ত নেয় যে অয়নের বিষয়ে ভাবনা চিন্তা করা বাদ দিয়ে দেবে, যেহেতু অয়ন আরেকজনকে পছন্দ করে সেটা জেনেও নিজের মনের কথা প্রকাশ করাটা বোকামি ব্যতীত কিছুই হবেনা। আনিশা নিজের মনকে বোঝানোর চেষ্টা করে, যদিও একদিনেই তো পছন্দের মানুষকে ভুলে যাওয়া সম্ভব নয় তবে চেষ্টা করবে বলে মেঘকে আশ্বাস দেয়। মেঘ চিন্তায় ছিলো মেয়েটা আবার কান্না না করে বসে, কিন্তু আশ্চর্য্যজনক ভাবে আনিশা কান্না করেনি উল্টে বড়দের ন্যায় সবকিছু সুন্দর মেনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ঘোরাঘুরি শেষে দুজনে সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরে, রুমে আসতেই আরিশ মেঘকে দেখে বলে…

‘ এই দুদিন ঘুরে এলে, আবারো আজ চলে গেছিলে ঘুরতে আর আমাকে বললেও না?’

‘ আমরা ননদ ভাবী মিলে সময় কাটিয়েছি, তার মধ্যে তুমি গিয়ে কি করতে?’

‘ তাই বলে বলতেও পারতে না?’

মেঘ ভাবলো বিষয়টা আরিশের সঙ্গেও শেয়ার করা উচিত! বিছানায় আরিশের পাশে বসলো মেঘ…

‘ উম্ম! আমি আসলে ওকে নিয়ে একটা দরকারে বাইরে গেছিলাম। কিছু জরুরী আলোচনা করার ছিলো ওর সঙ্গে ‘

‘ কিসের আলোচনা?’

‘ আনিশা অয়নকে পছন্দ করে, তাই নিয়েই…’

‘ হোয়াট!’

অবাক হয় আরিশ, শোয়া থেকে উঠে বসে…

‘ হুমম, আনিশা নিজেই বলেছিলো। অয়নের প্রেমিকা নেই শুনে আমি ভেবেছিলাম আনিশার সঙ্গেই হয়তো ওর সম্পর্ক এগোতে পারে, যদিও আনিশা কখনো অয়নকে নিজের মুখে কিছু বলেনি ‘

আরিশের পুরোনো কিছু কথা মনে পড়লো…

‘ আনিশা তারমানে মজা করেনি, অয়নের ব্যাপারে সিরিয়াস ছিলো?’

‘ তুমি জানতে এই কথা?’

‘ হ্যাঁ, আগে মজার ছলে কয়েকবার ও আমাকে বলেছে অয়নের কথা। সরাসরি নয় তবে কথায় প্রকাশ করেছিলো যে অয়নকে ওর ভালো লাগে, আমি মজা ভেবে আর পাত্তা দেইনি তখন ‘

‘ তুমি কখনো অয়নকে বলেছিলে এ বিষয়ে?’

‘ না, আমি তো ফান ভেবেছিলাম। আর আনিশা আমায় বলেছে তাও খুব বেশিদিন আগে নয়। এনিওয়ে, আনিশা কি বললো? ‘

‘ বাচ্চা মেয়ে, মন খারাপ করেছে সব জানার পর তবে ও আমায় বলেছে অয়নকে নিয়ে ভাবা বাদ দিয়ে দেবে ‘

‘ এতো বছর পর দেবদাস ভাব ছেড়ে বন্ধু আমার একটা মেয়েকে পছন্দ করতে শুরু করেছে, আমি চাইনা ওর নতুন সম্পর্কে কোনো ঝামেলা হোক ‘

‘ এতো বছরের দেবদাস ভাব মানে? অয়ন কাউকে পছন্দ করতো নাকি?’

‘ হ্যাঁ, স্কুল জীবনে একটা মেয়েকে ভালোবেসেছিলো। সেই মেয়ের বিয়ের পর এতদিন ধরে কোনো মেয়েকেই মনে ধরেনি, এখন তোমার বান্ধবীর প্রতি দেখছি একটু একটু করে সিরিয়াস হচ্ছে। আমি চাই ও এই সম্পর্কে এগিয়ে যাক। আনিশার কথা আগে জানলে ব্যাপার আলাদা হতো, কিন্তু এখন এসব প্রসঙ্গ অয়নের সামনে তুললে আনকমফোর্ট ফিল করতে পারে, আনিশাকে ও নিজের বোনের মতো দেখে ‘

‘ তাহলে তুমি কি বলো, অয়নকে আনিশার কথা জানানোর দরকার নেই?’

‘ সেই সিদ্ধান্ত আমি আনিশার ওপর ছেড়ে দেবো, ও যদি অয়নকে একবারের জন্যে হলেও নিজের মনের কথা জানাতে চায় জানাবে। আমি তাতে বাঁধা দেবো না, আমার মনে হয় মনের কথা মনে চেপে কষ্ট পাওয়ার চেয়ে প্রকাশ করে কষ্ট পাওয়া উত্তম ‘

আরিশ পরে একসময় বোনের সঙ্গে কথা বলবে বলে ঠিক করলো, আরিশের কথায় যুক্তি আছে বুঝে মেঘও তাতে সমর্থন করলো। টিনএজ বয়সে আসা প্রেমের রেশ সহজে কাটে না, হয়তো আনিশারও সব ভুলতে সময় লাগবে তবে প্রথম ভালোবাসার মানুষটির সামনে সামনে কথা একবার প্রকাশ করতে পারলে ভবিষ্যতে মনে আর কোনো আফসোস আসবেনা।
_________________________________________

ক্যান্টিনে খাবার খেতে এসেছে মেঘ, একটু পরে নিহান এসে বসলো। দুদিন ভার্সিটি আসেনি কেনো তা জানতে চাইলো, মেঘ যদিও আসল কারণটা বলেনি। কথার এক পর্যায়ে নিহান মেঘকে ওর কোচিং সেন্টারে সাহায্য করার জন্যে ট্রিট দিতে চাইলো কারণ মেঘ যে কয়দিন পড়িয়েছে তার জন্যে কোনো স্যালারি নেয়নি। নিহান ট্রিটের জন্যে জোরাজুরি করলে মেঘ বলে…

‘ না, নিহান আমার কোনো ট্রিট চাইনা ‘

‘ এটা ঠিক হচ্ছেনা মেঘনা, তোমাকে আমি স্যালারি দিতে চাইলাম তাও নিলে না আবার একটা ট্রিট দিতে চাইছি সেটাও নিতে চাইছো না। তুমি ওয়া পাবে তো ‘

‘ আমার কিছুই লাগবে না নিহান, তোমাকে সাহায্য করতে দিয়ে আমি নতুন এইটা অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি সেটাই আমার জন্যে যথেষ্ট। আমি পারিশ্রমিকের জন্যে তোমাকে সাহায্য করিনি ‘

‘ তবুও মেঘনা, কিছু খেতেই হবে তোমাকে। আমার অনুরোধে তুমি এত শর্ট নোটিসেই আমাকে হেল্প করলে, কিছু না নিলে আমারই খারাপ লাগবে। প্লিজ?’

নিহান এতোবার অনুরোধ করায় মেঘ এই ক্যান্টিন থেকেই কিছু কিনে দিতে বললো ট্রিট হিসেবে, নিহান তাতেই রাজি হলো। অনেক ধরনের খাবার কিনে দিলো মেঘকে…

‘ এতো কেনো! অল্প কিছু বললাম তো ‘

‘ ইটস ওকে, আমি আমার স্যাটিস্ফিকশনের জন্যে কিনে আনলাম, তুমি যা পারো তাই খাও’

মেঘ খাওয়া শুরু করবে তখনই আরিশ এসে ওর পাশে বসলো, নিহানের আনা খাবারগুলো থেকে একটা আইটেম তুলে খেতে শুরু করলো। নিহান প্রশ্ন করলো…

‘ তোর এখানে কি দরকার?’

‘ খেতে এসেছিলাম, এখানে এতো খাবার দেখে ভাবলাম টাকা না নষ্ট করে এগুলোই খেয়ে নেই। তাছাড়া মেঘনার যা দেহ, এতো খেতেও পারবে না। শেষে তোর টাকাগুলো ওয়েস্ট হবে ‘

মেঘ কূনুই দিয়ে আরিশকে গুঁতো দিয়ে বললো…

‘ আমি আবারো শুরু করলে? তুমি কি চাও আমি খেয়ে খেয়ে মোটা হয়ে যাই?’

‘ হতে পারো, তাতে আমার সমস্যা নেই ‘

‘ হ্যাঁ, তখন আবার বলবে কতো মোটা হয়ে গেছি ‘

‘ কিছুই বলবো না, তুমি বেশি করে খেয়ে মোটা হয়ে যাও। তখন দেখতে আরো বেশি কিউট লাগবে

মেঘ আরিশের এতো ক্যাজুয়াল কথাবার্তা শুনে নিহান কিছুটা অবাক হলো, কারণ ক্লাসে ওদের দুজনকে কখনো ভালোভাবে কথা বলতে দেখেনি ও। সেখানে দুজনে এতো সহজভাবে একে অপরের সঙ্গে কথা বলছে দেখে অবাক হওয়াটাই স্বাভাবিক! নিহান কিছুটা বিরক্ত হয়ে বললো…

‘ আরিশ, আমি ওর সঙ্গে কথা বলছি। তুই এখানে এতো নাক কেনো গলাচ্ছিস?’

‘ নাক গলাতে দেখলি কোথায়? আমি খাবার ইনজয় করছি ‘

‘ খাবার তুই অন্য জায়গায় গিয়েও খেতে পারিস, আমার ওর সঙ্গে কিছু কথা আছে ‘

‘ যা বলার আমার সামনে বল ‘

‘ আমি ওকে যা ইচ্ছে বলবো, সেটা আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার। তোর সামনে কেনো বলবো?’

আরিশ কিছু বলার আগেই মেঘ নিহানকে বললো..

‘ বিকজ হি ইজ মাই হাসবেন্ড, আর আমাকে যা বলার ওর সামনেই বলতে পারো। ও মাইন্ড করবে না’

মেঘের কথা শুনে নিহান চমকে উঠলো! যেনো নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না…

‘ মেঘনা, আর ইউ কিডিং উইথ মি?’

‘ মোটেই না, এটাই সত্যি। আমাদের কয়েকমাস আগে বিয়ে হয়েছে, আসলে আমরা দুজনেই স্টুডেন্ট বলে কথাটা প্রকাশ করিনি’

‘ আই কান্ট বিলিভ দিস ‘

‘ তোর বিশ্বাস করা না করায় কারোর কিছু এসে যায়না নিহান, তোর ওকে যা বলার আগে সেটা বলে শেষ কর। আমাদের বিয়ের বিষয়টা নিয়ে অবাক হওয়ার জন্যে অনেক সময় পাবি’

নিহান ভেবেছিলো মেঘের সঙ্গে ব্যক্তিগত কিছু কথা শেয়ার করবে, কিন্তু মেঘ বিবাহিতা জানার পর আর কিছু বলার ইচ্ছে নেই আর বলে লাভও হবেনা। নিহান আর কথা না বাড়িয়ে হতাশ হয়ে ওখান থেকে উঠে চলে আসে। আরিশ খেতে খেতে বলে…

‘ ঐভাবে উঠে চলে গেলো কেনো?’

‘ আমি কিভাবে জানবো?’

‘ মুখটা দেখেছো? মনে হলো গুরুতর কোনো ব্যাপারে আলাপ করতে এসেছিলো কিন্তু আমি আসায় ওর মুড নষ্ট হয়ে গেছে ‘

‘ আমাকে আর গুরুতর কি বলতে আসবে? এমনি হয়তো কিছু নিয়ে আলাপ করতে এসেছিলো। কিন্তু তুমি হঠাৎ এখানে এলে কেনো?’

‘ আমি আসায় খুব সমস্যা হয়ে গেলো নাকি? আমি নিশ্চিত এই আজ নিহান তোমার সঙ্গে ফ্লার্ট করার ধান্ধায় এখানে এসে বসেছিলো। দেখলে না, তুমি বিবাহিতা জানার পর মুখটা কেমন ফ্যাকাশে হয়ে গেলো?’

‘ আমার সঙ্গে ফ্লার্ট করবে? কি যে বলো না। ও এতো ভালো স্টুডেন্ট, ওর লেভেলের মেয়ে পছন্দ করবে। আমার সঙ্গে ফ্লার্ট করতে আসবে কেনো?’

‘ ও হ্যালো! ক্লাসের টপ বয় তোমার হাসবেন্ড সেটা ভুলে যেও না। আর নিজেকে এতো অবহেলা করে কথা বলছো কেনো? তুমি অনেক স্পেশাল, যে কেউই তোমার সঙ্গে ফ্লার্ট করতে চাইবে ‘

‘ আচ্ছা? এমন স্পেশাল কি আছে আমার মধ্যে শুনি?’

‘ অনেককিছু, তুমি বুঝবে না ‘

‘ না বলেই কিভাবে ঠিক করে নিচ্ছো বুঝবো না?’

মেঘ জানার অনেক চেষ্টা করলো যে আরিশ ওর কোন স্পেশালিটির কথা বলছে, কিন্তু আরিশ বললে তো!আজ বরাবরের মতো অয়ন পড়াতে এসেছিলো। আজকে অয়নের নাস্তা মেঘই বানিয়েছে দিয়েছে কারণ আনিশা রান্নাঘরে আসেনি। মেঘ বুঝলো অয়নের থেকে পিছিয়ে যাবার জন্যে এটাই হয়তো আনিশার প্রথম পদক্ষেপ! আনিশা ঠিক করেছে অয়নকে কিছু বলবে না, যা যেভাবে চলছে সেভাবেই চলুক। কারণ ও ভেবে দেখেছে, এখন বলেও কোনো লাভ হবেনা! অয়ন পড়িয়ে যাওয়ার পর ড্রইংরুমে বসে আচার খাচ্ছিলো আনিশা, আরিশ এসে ওর কাছে বসে…

‘ কীরে, মন মেজাজ খারাপ মনে হচ্ছে!’

‘ নো, আই অ্যাম ফাইন ‘

‘ অয়ন চলে গেছে?’

‘ হুমম, কেনো তোর কোনো দরকার ছিলো?’

‘ নাহ, এমনি জিজ্ঞাসা করলাম ‘

‘ আচ্ছা ভাইয়া, তোরা তো এতদিনের বন্ধু। একটা কথা বলতো, অয়ন ভাইয়া আমাকে শুধু নিজের বোন হিসেবেই দেখে তাইনা?’

‘ উম্ম! হ্যাঁ, অয়ন তোকে একদম নিজের বোনের মতো দেখে। হঠাৎ এই প্রশ্ন কেনো?’

‘ কিছুনা, এমনি! আসলে আমি অয়ন ভাইয়াকে একটা কথা বলতে চাইছিলাম, না বলেই হয়তো ভালো করেছি। ভাইয়া আমার কথা শুনে আমায় ভুল বুঝতো যদি!’

আনিশা কোন বিষয়ে কথা বলছে আরিশ বুঝেছে আর এটাও বুঝলো যে আনিশা অয়নকে কিছু বলেনি। এ প্রসঙ্গ তুলে আরিশ আনিশার মুড নষ্ট করতে চায়না, তাই অন্য প্রসঙ্গে কথা শুরু করলো…

‘ আনিশা, তুই লাভ ম্যারেজ করতে চাস না অ্যারেঞ্জ?’

‘ তোর কি মনে হয় ভাইয়া? তোর তো অ্যারেঞ্জড ম্যারেজ হয়েছে। তোর কেমন লাগছে সংসার করে?’

‘ নট ব্যাড!’

‘ তাহলে আমার জন্যে কোনটা বেটার হবে?’

‘ অ্যারেঞ্জড ম্যারেজের মজা কি জানিস? একটা অচেনা মানুষকে তুই একটু একটু করে চিনতে পারবি, বুঝতে পারবি। ধীরে ধীরে যখন তার প্রেমে পড়বি সেটা আরো সুন্দর একটা মুহূর্ত। তোর ভাবীর সঙ্গে আমার বনিবনা হতে সময় লেগেছে বটে তবে এইযে পুরো সময়টা আমরা একসঙ্গে কাটিয়েছি সেটা অনেক স্পেশাল ছিলো ‘

‘ বাহ! তুই তাহলে ভাবীর প্রেমে পড়েছিস?’

বোনের প্রশ্নের উত্তরে হ্যাঁ সূচক মাথা নেড়ে হাসলো আরিশ, আপাতত বোনকে পারিবারিক বিবাহের ক্ষেত্রে উৎসাহিত করার চেষ্টা করছে আরিশ। ভাই ভাবীর সম্পর্কের শুরু ও এখন অব্দি ওদের পথচলা দেখে আনিশাও অনেকটা উৎসাহিত হচ্ছে। প্রেম করে ছ্যাঁকা খাওয়ার থেকে অচেনা একটা ছেলেকে বিয়ে করা উত্তম সিদ্ধান্ত মনে হলো আনিশার। ভাইয়ের সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলে আনিশার মন অনেকটা ভালো হয়ে গেলো। গতকাল মেঘকে একটা টপিক বুঝিয়েছে আরিশ, সেটা সম্পর্কেই কিছু বিষয় লিখতে দিয়েছিলো। লিখা শেষে মেঘের খাতা দেখে আরিশ বললো…

‘ এটা কি লিখেছো? তোমার হাতের লেখার জন্যে হয়তো প্রোফেসররা তোমাকে নাম্বার কম দেয় ‘

‘ খারাপ স্টুডেন্টদের হাতের লেখাও খারাপ হয়, জানো না?’

‘ তো ভালো করার চেষ্টা করো, সুন্দর করে লিখলে নাম্বার বেশি আসবে। মনে হচ্ছে তোমাকে হাতের লেখা শেখানো শুরু করতে হবে আমার ‘

‘ তুমি এভাবে আমাকে বলছো? পড়বো না আমি তোমার কাছে ‘

মেঘ চেয়ার থেকে উঠতে গেলে আরিশ আবার ওকে টেনে বসিয়ে বললো..

‘ হেই! আমার হাত থেকে এতো সহজে বাঁচবে না বুঝলে। অভিমান দেখিয়ে লাভ নেই, পড়া যখন শুরু করেছো শেষ না করে উঠবে না ‘

‘ কোন টিচার এভাবে জোর করে ছাত্রীকে পড়ায়?’

‘ যেসব বউদের হাসবেন্ড টিচার তারা পড়ায়, খোঁজ নিয়ে দেখতে পারো ‘

‘ তুমি টিচার নাকি হ্যাঁ? আমার সমবয়সী একটা ছেলে হয়ে আমার ওপর খবরদারি করতে এসেছো?’

মেঘ আবারো চেয়ার থেকে উঠতে গেলে আরিশ নিজে চেয়ারে বসে টেনে মেঘকে নিজের কোলে বসায়, মেয়েটার তো কোলে বসে ওঠার জন্যে ছটফট করছিলো। মেঘের সঙ্গে খুনসুটিতে মেতে উঠেছিলো আরিশ, সে সময়ই দরজায় নক পড়লো। মেঘ গিয়ে দরজা খুলতেই ওর শাশুড়ি চিন্তিত হয়ে আরিশের কাছে এগিয়ে এসে বললেন…

‘ আরিশ, বাড়িতে পুলিশ এসেছে!’

‘ কেনো?’

‘ তোর খোঁজ করছে!’

চলবে…

[ভুলত্রুটি ক্ষমা সুলভ দৃষ্টিতে দেখবেন…!!]