#এ_তুমি_কেমন_তুমি
লেখনীতেঃ তাহমিনা তমা
পর্ব-১৪
অনুকে তাকিয়ে থাকতে দেখে ফারহানের হাসি থেমে গেলো তবে হাসির রেশ রয়েই গেলো ঠোঁটের কোণে।
“এভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো?”
অনু দুষ্টু হেসে বললো, “ভাবছিলাম কোন কোম্পানির টুথপেষ্ট আপনাকে ফ্রি দিচ্ছে আজকাল।”
অনুর কথার মানে বুঝতে না পেরে ফারহান ভ্রু কুঁচকে তাকালো, “মানে?”
অনু সামনের দিকে তাকিয়ে বললো, “মানে এতদিন টুথপেষ্ট ছাড়া দাঁত ব্রাশ করতেন মনে হয়। তাই তো মুখ গোমড়া করে থাকতেন। আজকাল ফ্রী টুথপেষ্ট পেয়ে চকচকে দাঁত দেখাচ্ছেন?”
ফারহান সরু চোখে তাকিয়ে আছে অনুর দিকে আর অনু ঠোঁট চেপে হাসছে।
“নাম চলে এসেছি।”
অনু সামনে একটা অ্যাপার্টমেন্ট দেখে বললো, “এখানে কে থাকে?”
“গেলেই দেখতে পাবি, তাই কথা না বাড়িয়ে চল।”
অনু গাড়ি থেকে নেমে এদিক ওদিক দেখতে লাগলো। এখানে তাদের কোনো আত্নীয় স্বজন থাকে বলে সে জানে না। তবে ফারহান কার কাছে নিয়ে এলো। ফারহান গাড়ি পার্ক করে অনুর পাশে এসে দাঁড়ালো।
“এভাবে হা করে তাকিয়ে না থেকে চল আমার সাথে।”
ফারহান অনুর একটা হাত ধরে সামনে পা বাড়ালো। অনু চমকে তাকালো নিজের হাতের দিকে, যা আপাতত ফারহানের হাতের মুঠোয়। এমনই একটা দিনের স্বপ্ন দেখেছিল সে। আজ তা বাস্তব হয়ে তার সামনে ধরা দিয়েছে। ফারহান অনুকে নিয়ে লিফটে উঠে ছয়তলা চলে গেলো। একটা ফ্ল্যাটের কলিংবেল বাজালো। অনু কেবল নিরব দর্শক, এখানে তারা কেনো এসেছে, কার কাছে এসেছে কিছুই জানে না সে। একটু পর দরজা খোলে দিলো ফারহানের সমবয়সী এক যুবক। তাকে দেখে ফারহান মুচকি হাসলো আর সে স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে ফারহানের দিকে।
২১.
“আজ শুধুমাত্র তোমার জন্য আমার মেয়েটা নিজের বাড়ি রেখে, পরিবার রেখে ফ্রেন্ডের ফ্ল্যাটে গিয়ে উঠেছে। এবার তোমার শান্তি হয়েছে লাবণি?”
রাগে ফুসে উঠলো লাবণি, “কী বলতে চাইছো তুমি? আমার মেয়ে আমার জন্য বাড়ি ছেড়ে গেছে?”
“তুমি এখনো বুঝতে পারছো না, কেনো বাড়ি ছেড়ে গেছে?”
“লিজা আমার জন্য নয় তোমাদের জন্য বাড়ি ছেড়েছে। তোমরা ভাইবোন মিলে আমার মেয়েকে অপমানের পর অপমান করে যাচ্ছো। আমার মেয়ে কী ফেলনা? ফারহান কেনো আমার মেয়েকে রিজেক্ট করে অনুর মতো কয়লার ড্রামকে পছন্দ করেছে? আর তোমরা সবাই নাচতে নাচতে মেনে নিয়েছো, এসব আমার মেয়েকে অপমান করা নয়?”
“লাবণি তুমি ভুলে যাচ্ছো, ফারহানের সাথে লিজার বিয়ের কথা তুমি তুলেছিলে আমরা কেউ না। তাই এসবের জন্য তুমি দ্বায়ী।”
“ঠিক আছে আমি মেনে নিলাম, বিয়ের কথা আমি তুলেছি। কিন্তু ফারহানের যদি অনুকেই পছন্দ তবে আমার মেয়েকে বিয়ে পর্যন্ত টেনে নিয়ে গেলো কেনো?”
জুনায়েদ দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বললো, “কারণটা তোমারও অজানা নয় এখন।”
“তার দ্বায় তো আমার বা আমার মেয়ের নয় জুনায়েদ। তবে আমরা কেনো অপমানিত হবো?”
“তোমাদের কেউ অপমান করছে না লাবণি।”
“লিজার সামনে ফারহান আর অনু বিয়ে হওয়ার মানেই লিজাকে অপমান করা।”
“তাহলে এখন তুমি কী চাইছো?”
“হয় তুমি অনু আর ফারহানের বিয়ের আগে ফারহানের চাইতে যোগ্য ছেলের সাথে আমার লিজার বিয়ে দিবে নাহলে লিজার বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত অনু আর ফারহানের বিয়ে বন্ধ রাখবে।”
জুনায়েদ অসহায় গলায় বললো, “আপা আর ভাইয়া দুজনেই আমার বড়। তাদের সিদ্ধান্তের উপর আমি কী করতে পারি?”
“আমি এত কিছু জানি না। আমি যা বললাম তাই করবে নাহলে আমি যেদিকে দু-চোখ যায় সেদিকে চলে যাবো। তবু তোমার ভাবির সামনে ছোট হতে পারবো না আমি।”
লাবণি বের হয়ে গেলো রুম থেকে। তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো জুনায়েদ।
“তুমি আজও আমাকে কিংবা বাচ্চা দু’টোকে বুঝতে পারলে না। তুমি লিজার চিন্তা করছো না। চিন্তা করছো ভাবির সামনে ছোট হওয়ার। এতগুলো বছরে তুমি বুঝতে পারলে না, ভাবি তোমার সাথে কখনো কম্পিটিশন করেনি। বরং তুমি তার সাথে কম্পিটিশন করে গেলো এতবছর ধরে। আজও বুঝতে পারলে না সে বাড়ির বড় বউ আর তুমি ছোট। চাইলেই তুমি তার জায়গা পাবে না। এই সংসারটা সে নিজের হাতে গড়ে তুলেছে। তুমি তো এসেই একটা সাজানো গুছানো সংসার পেয়ে গেছো।
জুনায়েদ দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে ভাবতে বসলো কী করা যায়? আর যাই হোক সে নিজের মেয়ের জীবনটা নষ্ট হতে দিবে না।
এদিকে ফারহান ছেলেটার উদ্দেশ্যে বললো, ” কী রে ভেতরে যেতে বলবি না?”
ছেলেটা হুট করে ফারহানকে জড়িয়ে ধরলো, “তুই আমার বাসায় এসেছিস আমি বিশ্বাস করতে পারছি না ফারহান।”
ফারহান ছেলেটার পিঠে হাত রাখলো, “আ’ম সরি রে।”
অনেকটা সময় অনু কেবল দেখে গেলো এদের। ছেলেটা ওদের নিয়ে ভেতরে গেলো। ধীরে ধীরে অনু জানতে পারলো এটা ফারহানের এক বন্ধু, নাম ইরান। কোনো কারণে এক শহরে থেকেও প্রাণের বন্ধুর সাথে প্রায় তিনবছর পর দেখা করলো ফারহান। সবটা অনুর কাছে পরিষ্কার না হলেও এটুকু বুঝতে পেরেছে হয়তো মান-অভিমান চলছিলো। সেখানে খাওয়াদাওয়া করে বেশ অনেকটা সময় কাঁটালো ওরা। ইরানের ওয়াইফের সাথে অনুর বেশ ভাব হয়ে গেছে। অনেকটা সময় কাটানোর পর সন্ধ্যার একটু আগে বের হয়ে আসে ওরা। ইরান থাকার জন্য জোর করলেও ওরা আবার আসবে বলে বেরিয়ে আসে।
অনু মুচকি হেসে বললো, “ভাইয়া আর আপুটা অনেক ভালো?”
ফারহানও মুচকি হাসলো, “ইরান, আহির, পাভেল আর আমি ছিলাম একটা গ্রুপ। আমি নিজেই ওদের সাথে সম্পর্ক নষ্ট করেছি একসময়। নিজের ভুল বুঝতে পেরেছি তাই চেষ্টা করলাম একটু ঠিক করে নেওয়ার।”
অনু আর কিছু বললো না। ফারহান অনুকে ওর বাসার সামনে নামিয়ে দিলো। অনু ফারহানকে ভেতরে যাওয়ার জন্য বললেও অনু গেলো না।
ফারহান বললো, “তুই ভেতরে চলে যা আমি তারপর যাচ্ছি।”
অনু বললো, “আপনি যান আমি চলে যাবো ভেতরে।”
“আমি তোকে আগে ভেতরে যেতে বলেছি।”
“আপনি যান না, আমি তো শুধু গেইটের ভেতরেই যাবো।”
“আচ্ছা ধর আমি তোকে গেইটের বাইরে রেখে চলে গেলাম আর একটা কুকুর এসে তোকে মুরগীর বাচ্চা মনে করে নিয়ে গেলো তখন কী হবে? কিংবা কোনো কিডন্যাপার যদি চকলেট দেখিয়ে নিয়ে যায় তখন কোথায় পাবো তোকে? না বাবা আমি তোকে নিয়ে কোনো রিস্ক নিতে চাই না।”
অনু ছোট ছোট চোখে তাকালো ফারহানের দিকে। তা দেখে ফারহান বললো, “এভাবে তাকিয়ে থেকে লাভ নেই যা বললাম তাই কর।”
অনু কথা না বাড়িয়ে ধুপধাপ পা ফেলে গেইটের ভেতরে চলে গেলো। তা দেখে মুচকি হাসলো ফারহান। গাড়ি স্টার্ট করার আগে আর একবার গেইটের দিকে তাকালে দেখলো অনু উঁকি দিয়ে তাকিয়ে আছে। ফারহান ইশারা করলো ভেতরে চলে যেতে আর অনুও মুচকি হেসে ভেতরে চলে গেলো।
২২.
লিজা রাতের জন্য কিছু রান্না করছে। দু’জনে খাবে হালকা পাতলা কিছু হলেই হবে। তুলি ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে টিভি দেখছে।
“আচ্ছা লিজা তুই ফারহান ভাইয়াকে ভালোবাসতি না?”
কাজ করতে করতে হঠাৎ হাত থেমে গেলো লিজার।
কিছু সময় চুপ করে থেকে বললো, ” ভালোবাসি কিনা সেটা বলতে পারছি না। কিন্তু তাকে আমার ভালো লাগতো অবশ্যই। তবে তাকে না পেলে মরে যাবো, জীবন চলবে না। এমন কোনো অনুভূতি আসেনি কখনো। হ্যাঁ কষ্ট হয়েছে তবে তাকে ছাড়া বাঁচবো না এমনটা না।”
তুলি উঠে এসে লিজার পাশে দাঁড়ালো, “ভেরি গুড। আচ্ছা লিজা আমি অন্য একটা কথা ভাবছি?”
“তুই আবার কী ভাবছিস?”
তুলি গলা জড়িয়ে ধরলো লিজার, “ভাবছি তোকে আমার ভাবি বানিয়ে নেই। আমার ভাইয়া কিন্তু তোর ফারহান ভাইয়ের থেকে কোনো অংশে কম যায় না।”
লিজা হাতের কনুই দিয়ে তুলির পেটে গুতো মেরে বললো, “বাজে বকা বন্ধ করে খাবারগুলো টেবিলে রাখ আমার রান্না শেষ।”
তুলি নিজের পেটে হাত বুলিয়ে বললো, “ওকে রাখছি কিন্তু বাজে বকলাম কখন? ব্যাপারটা ভেবে দেখতে পারিস।”
চলবে,,