এ শহরে তুমি নেমে এসো পর্ব-২৮+২৯

0
201

#এ_শহরে_তুমি_নেমে_এসো 💚
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব: ২৮

ক্লান্ত চোখজোড়া মেলে অবলোকন করতেই ঘুরে উঠল আমার পৃথিবী। মাথাটা ভনভন করছে, দৃষ্টি ঝাপসা। মনের ভেতরটা অপূর্ব ভাইয়ের তাড়নায় খাঁ খাঁ করছে। সবকিছুতে বিষাদের ছোঁয়া। চুলগুলো পেছনে গুঁজে ধীরে ধীরে উঠে বসলাম। ছোটো একটা কুঁড়ে ঘরে রয়েছি আমি। বাইরে থেকে হিমেল হাওয়া এক নিমিষেই ঘরে প্রবেশ করছে। একজন নারী আমার শিউরে বসে আছে। চোখে মুখে তার ধোঁয়াশা। আমাকে উঠতে দেখে তিথি বললেন, “এই মেয়ে উঠছেন কেন?”

“আমাকে উঠতেই হবে। অপূর্ব ভাই? তিনি কোথায়?” আশেপাশে খুঁজতে খুঁজতে বললাম আমি। তিনি না বোঝার মতো বলেন, “অপূর্ব, সে আবার কে? ওরা তো তোমাকে একাই নিয়ে এসেছে। তোমার সাথে কোনো ছেলে তো ছিল না।” বলেই তিনি কাশলেন।

মনে পড়ল, অপূর্ব ভাই নদীতে ঝাঁপ দিয়েছিলেন। দু’হাতে মুখ লুকিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলাম। কাঁদতে কাঁদতে বললাম, “আমি এখন কোথায়? ডা/কা/তের দল আমাকে তুলে নিয়ে যেতে চেয়েছিল।”

“তারাই তোমাকে তুলে নিয়ে এসেছে। আমিও তোমার মতো সেই ডা/কা/ত দলের খপ্পরে পড়েছি।” কাশতে কাশতে বললেন তিনি। তার কথা শুনা মাত্র লক্ষ্য করলাম তিনি অন্তঃসত্ত্বা। পেট তুলনামূলক ভারী হয়েছে। আনুমানিক সাত মাস। কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম, “এই সন্তান কার? তাদের ভেতরে কাউকে আপনি বিয়ে করেছেন আপা?”

“বিয়ে! (ব্যঙ্গ করে উচ্চ স্বরে হেসে ফেললেন তিনি। আমি যেন কোনো হাসির গল্প বলেছি। পুনরায় বললেন) এক বছর আগে আমাকেও এক লঞ্চ থেকে তুলে এনেছে। সবাই মিলে আমার শরীরটাকে খুবলে খুবলে খেয়েছে। জানি না কার পাপ গর্ভে নিয়ে ঘুরছি।”

মেয়েটির মাঝে নিজের ভবিষ্যৎ এক পলকে দেখতে পেলাম। পরিণতি নি/ষ্ঠু/র। দু’হাতে মাথা ধরে বললাম, “আপা আমি বাড়িতে যেতে চাই। আমি তোমার মতো এমন হতে চাই না। প্লীজ আমাকে যেতে সাহায্য করো।”

“খড়ের ফাঁক দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখো, তারা সবাই বাইরে। তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে কীভাবে তুমি বের হবে?”
ঘর পুরোটা স্বর্ণ গহনা দিয়ে ভর্তি। মাঝে মাঝে টাকার বস্তাও রয়েছে। খড়ের ফাঁক দিয়ে দেখা যাচ্ছে ডা/কা/তের দল। এভাবে পেরিয়ে গেল তিনদিন। নাওয়া খাওয়া ভুলে সারাদিন বিছানায় পড়ে আছি। শুকনো এক টুকরো রুটি পড়ে আছে থালাতে, পান্তা ভাত পচে গন্ধ আসছে। মৃত্যুর অপেক্ষায় মগ্ন আমি। আমার সাথে থাকা মেয়েটির নাম পায়েল। আমার প্রতি একটু দরদ হয়েছে তার। গতরাতের ঘটনা। চোখের পাতায় ঘুম নেই। ঘুমের ভান ধরে ছিলাম। এমন সময়ে একজন এসে বলে, “মেয়েটা কইরে? ডেকে তুলে ঘর থেকে যা। অনেকদিন হয়েছে মেয়েদের গায়ের গন্ধ নিজের গায়ে মাখাই না।”

পায়েল রাগী গলায় বলেছিল, “তোমরা অ-মানুষ আমি জানি। এতটা জা/নো/য়া/র কেন? একটা মেয়ে দুইদিন ধরে না খেয়ে দেয়ে বিছানায় পড়ে আছে। এখন ঐ শরীরটা তোমার লাগবে? নিজের বোন হলে পারতে?”

পায়েলের গাল চে/পে ধরে বলে, “আমরা অ-মানুষ, জা/নো/য়া/র। আমাদের সাথে কেন আছিস তবে? যা চলে যা। নদীর জলে ডুবে ম/র।”

“আমি কোথাও যাবো না। এই পা/প আমি এখানেই ফেলে যাবো।”

“থাক তবে। মেয়েটাকে দেখে রাখিস। মেয়েটা যদি পালিয়ে যায়, পোয়াতি অবস্থায় তোকে ওস্তাদের কাছে পাঠাবো, মনে রাখি।

আমার ধ্যান ভাঙল পায়েলের চিৎকারে।বাইরে থেকে হঠাৎ ছুটে এসে উত্তেজিত হয়ে বলে, “আরু, এই আরু। শোনো। বাইরে কেউ নেই। তারা গোসল করতে নদীতে গেছে। এই ফাঁকে তুমি পালিয়ে যাও।”

“পালিয়ে যাবো..। শরীরে শক্তি নেই পালিয়ে যাওয়ার মতো বল নেই। মৃদু স্বরে বললাম, “আমি চলে গেলে ওরা তোমার কী অবস্থা করবে, ভাবতে পারছো?”

“আপা বলেছো না আমায়। আমি কীভাবে আমার বোনের ক্ষতি হতে দিতে পারি। আমি বলছি তুমি পালিয়ে যাও।”

“আমি কীভাবে তোমাকে বিপদে ফেলে যাই। এতটা স্বার্থপর আমি নই আপা।” আমার দৃঢ় কণ্ঠে পায়েল জবাব খুঁজে পেল না। মাথায় হঠাৎ করে দুষ্টু এলো। রহস্যময় হাসি দিলাম। বিছানা ছেড়ে উঠে বললাম, “আপা আমাকে রুটিটা খাইয়ে দাও। ক্ষুধা লেগেছে।”

হঠাৎ আমার ব্যবহারে আপা হতবুদ্ধি। বাক্যটি করলেন না, বরং সন্তুষ্ট হলেন। খাবারের থালা নিয়ে রুটির টুকরো করে মুখে তুলে দিলেন। আমি আরামসে চিবিয়ে খেলাম। শরীরে বল খুঁজে পেলাম।

আমার সুস্থতার খবর তাদের কানে পৌঁছাতেই ছুটে এলো এক পুরুষ। পরনে পোশাক বলতে একটা লুঙ্গি ও ফতুয়া। এসে তাড়া দিয়ে বলে, “ওস্তাদ ওকে প্রস্তুত করে দিতে বলেছে পায়েল। দ্রুত তৈরি করে দে।”

বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালাম আমি। উদ্বিগ্ন হয়ে বললাম, “তৈরি হওয়ার কী আছে? আমি প্রস্তুত চলুন।”

বলেই বাইরে বেরিয়ে এলাম। মাথার উপরে মস্ত বড়ো চাঁদ।‌ পূর্ণিমার আলো ছড়াচ্ছে চারদিকে। বে/হা/য়ার মতো উচ্চ স্বরে বললাম, “আপনাদের ভেতরে কে আগে ম/র/তে চান, তাড়াতাড়ি বলুন। সবাই একসাথে ম/রা/র মজাই আলাদা। তাড়াতাড়ি বলুন।”

ডাকাতের দল হতবুদ্ধি হলো আমার আজব ব্যবহারে। একজন বলে ফেলল, “এই ছেড়ি তোর এতো শখ কীসের? কষ্ট হচ্ছে না, নিজের জন্য??”

ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললাম, “আমার আবার কীসের ভয়, কীসের কষ্ট, হ্যাঁ? আমি তো মহা খুশি, পুরো ডা/কা/ত গুষ্টি শেষ হয়ে যাবে। হি! হি! হি!”

“আমরা কেন শেষ হয়ে যাবো?” (সন্দিহান গলায় বলে)

“কেন আবার আমার এইচ আই ভি পজেটিভ। আমার সংস্পর্শে আসলে আপনারা সবাই আমার সাথে উপরে চলে যাবেন।” আমার কথা শুনে তাদের মনে ভয়ের সৃষ্টি হলো। মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। কয়েকজনে বলাবলি শুরু করে দিয়েছে, “আমি ছোডোকালে পড়েছি। এইডা অনেক খা/রা/প রোগ। মানুষ বাঁচে না। কথা বললেও আ/ক্রা/ন্ত হয়।”

বুঝতে পারলাম তারা এই রোগের সঠিক তথ্য জানে না। তাদের চমকে যাওয়া মুখ গুলোর দিকে তাকিয়ে আরেকটু মজা নিলাম মি/থ্যা বলে, “আমার চোখের দিকে তাকালেও আপনারা এই রোগে আ/ক্রা/ন্ত হবেন। পায়েল আপা আমার সাথে তিনদিন একসাথে ছিল। তিনিও এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। দেখছেন না, রাত দুপুরে খকখক করে কাশে।”

একে অপরের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ। আমার কথা বিশ্বাস করেছে নিঃসন্দেহে। একটু এগিয়ে গেলাম। চিৎকার করে উঠল প্রধান। উচ্চ স্বরে বলে, “এদিকে আসিস না, ভাগ। যা ভাগ। কে কোথায় আছিস ওকে একটা বাসে তুলে দে। আমাদের আশেপাশেও যাতে না থাকে। থাকলেই আমরা মা/রা যাবো। (কিছুটা থেমে আবার) পায়েলকেও ওর সাথে পাঠিয়ে দে। ঐ শা/লীও এইচ আই ভি রোগে আক্রান্ত হয়েছে।”

মনে মনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ত্যাগ করলাম। অপূর্ব ভাই আপনার আরু বোকা হতে পারে, কিন্তু সকল পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে জানে।
মনের ভেতর চাপা ভয় জমে আছে, অপূর্ব ভাই আদৌ ঠিক আছেন তো? না-কি..
আমার বাক্য অসমাপ্ত রয়েছে।

[চলবে.. ইন শা আল্লাহ]

#এ_শহরে_তুমি_নেমে_এসো 💚
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব: ২৯

দখিনা হাওয়া বইছে উত্তরে। আমি ও পায়েল নিরবচ্ছিন্নভাবে হেঁটে চলেছি শহরের উদ্দেশ্য। বন জঙ্গল পেরিয়ে এসেছি। পায়েল আপু অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার কারণে বিশ্রাম নিয়ে নিয়ে হাঁটছে। উদ্দেশ্য বন জঙ্গল পেরিয়ে যাওয়া। চিপা গলি পেরিয়ে এক সময়ে বড়ো রাস্তা ধরলাম। ব্যস্ত রাস্তা অতিক্রম করার সময় একটু দৌড় দিলাম। মুখ থুবড়ে পড়লাম রাস্তার মাঝে। পায়েল আপু টেনে তুলতে তুলতে বললেন, “এত ব্যস্ত হচ্ছো কেন আরু? আমাদের নাগাল আর ওরা খুঁজে পাবে না। নিশ্চিতে থাকো। আর আস্তে হাঁটো।”

আমি সায় দিয়ে উঠে দাঁড়ালাম। হাঁটুতে টান পড়ল। বোরখা হারিয়েছি। পরনে থ্রি পিস। যার সালোয়ার ছিঁ/ড়ে রক্ত বেরিয়েছে। পায়েল আপুর হাত ধরে উঠে দাঁড়ালাম। হাতে কোনো কানাকড়িও নেই যে, ফার্মেসীতে ঢুকবো। তাই ওড়নাটার এক কোণা খন্ডিত করে হাঁটুতে পেঁচিয়ে বললাম,‌ “পায়েল আপু, তুমি কি জানো এখান থেকে ঢাকার দূরত্ব বেশি না-কি সুন্দর নগরের? আমার কাছে কোনো টাকা নেই। বাড়িতে ফিরব কীভাবে?”

“তোমার কি মনে হয় আরু, ফাঁকা হাতে আমি বেরিয়েছি? ওস্তাদের থেকে পাঁচ হাজার টাকা সাটিয়েছি। তোমাকে তোমার বাড়ির লোকের হাতের তুলে দিয়ে আমি হাসপাতালে ভর্তি হবো। অ্যা/বশ/ন করব। তারপরে বাড়িতে ফিরে যাবো।”

চমকে উঠলাম আমি। আপু সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা। তিন থেকে চার মাসে অ্যাবশন করলেই গর্ভবতী নারীর জীবনে ডেকে আনে মৃ/ত্যু। সেখানে সাত মাসে নিশ্চিত মৃ/মৃ/ত্যু। কিছুটা রেগে বললাম, “তুমি কি তোমার সন্তানকে শেষ করে দিতে পারবে আপু? কোনো মা এমন পারে না।”

পায়েল আপু বিদ্রুপ করলেন। কিছুটা ব্যঙ্গ করে বললেন, “মা! হাসালে আমায়। ও বেঁচে থাকলে আমি এই পৃথিবীতে শ্বাস নিতে পারব না। ও নিজেও বেঁচে থাকতে পারবে না। সবাই বলবে, অবৈধ সন্তান। ওর তো বাবা নেই, বাবার পরিচয় চাইলে কাকে দেখাবো আরু।
বাড়িতে ফিরলে সবাই আমাকে রাস্তায় ফেলে দিবে। আমি নিরুপায়। আমি পা/ষা/ন। আমি স্বা/র্থপ/র।”

আমি নিষ্পলক দৃষ্টিতে পায়েল আপুর দিকে তাকিয়ে আছি। তিনি আমাকে নিয়ে একটা ফার্মেসীতে গেলেন। ডাক্তার পাশে একজনের চিকিৎসা করছেন। আমরা অপেক্ষা করছি। অপেক্ষার এক পর্যায়ে রোগীর দিকে তাকাতেই চমকে উঠলাম। অপূর্ব ভাই আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। আমি চোখ পরিষ্কার করে পুনরায় তাকালাম। আমার দৃষ্টিভ্রম নয়। অপূর্ব ভাইয়ের হাত ব্যান্ডেজ করে দিয়েছেন ডাক্তার। পরনে লুঙ্গি আর ফতুয়া। তাকে প্রথমবার এই বেশে দেখছি। হৃৎপিণ্ডে স্পন্দন ফিরে পেলাম। ডাক্তার সাহেব তুলোতে স্যাবলন মিশিয়ে হাঁটু স্পর্শ করতেই মৃদু আর্তনাদ করলাম। ডান চোখ সুখের সন্ধানে অশ্রু ভাসিয়েছে। বাম চোখে হাসি। অপূর্ব ভাই মৃদু স্বরে বললেন, “আমি ডায়ে বায়ে যেদিকে তাকাই, তোকে কেন দেখি আরু। দু’দিন ধরে পা/গ/লের মতো খুঁজে চলেছি। কোথায় আছিস তুই? কীভাবে তোকে ফিরে পাবো।”

আমি উঠে দাঁড়ালাম। দুকদম এগিয়ে গিয়ে অপূর্ব ভাইয়ের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়লাম। অকস্মাৎ ঘটা ঘটনায় অপূর্ব ভাই চমকে উঠলেন। বললেন, “কে আরু?”

“হ্যাঁ, অপূর্ব ভাই। আমি আরু। আপনি ঠিক আছেন?”

দু’হাতে আগলে ধরে অজস্র চুমুতে ভরিয়ে দিলেন। গালে হাত দিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে বলেন, “হ্যাঁ, আরুপাখি আমি ঠিক আছে‌। তুই ঠিক আছিস?”

“আপনি এতো স্বা/র্থপ/র কেন অপূর্ব ভাই? কেন আমাকে একা লঞ্চে রেখে কা/পুরুষের মতো পালিয়ে এসেছেন।” বলেই কেঁদে উঠলাম। আমার বুদ্ধির সঠিক ব্যবহার করতে না পারলে আমি আজ স/তী/ত্ব হীন নারীতে পরিনত হতাম। কারো কাছে মুখ দেখানোর সম্মান টুকু থাকতো না। অপূর্ব ভাই হাতটা দেখিয়ে বললেন, “তোর মনে হয়, আমি তোকে রেখে পালিয়ে যাবো? ভারসাম্য বজায় রাখতে না পেরে নদীতে পড়েছিলাম। ভাবতে পারছিস, লঞ্চের নিচে বড়ো বড়ো পাখাগুলো আমার কী অবস্থা করতে পারতো। আল্লাহ বাঁচিয়ে দিয়েছেন।
আমার হাতের আ/ঘা/ত টা এখনো তাজা। চারদিন ক্ষতটা নিয়ে তোকে রাস্তায় রাস্তায় খুঁজেছি, পাই নি। থা/না/য় মা/ম/লা দায়ের করেছি, তা-ও লাভ হয়নি। ব্য/থার য/ন্ত্র/না সহ্য করতে না পেরে এসেছি ফার্মেসীতে।”

“আলহামদুলিল্লাহ।” মনে মনে উচ্চারণ করলাম। আল্লাহর অশেষ রহমতে আমরা উভয়ে সুস্থ আছি। মুচকি হেসে অপূর্ব ভাইয়ের হাতটা জড়িয়ে ধরলাম। পায়ের ব্যথা বিলীন হয়েছে। আমাদের মিলন পর্বে ব্যাঘাত ঘটালো পায়েল আপু। দু’বার কাশি দিয়ে বলে, “আরু, এই বুঝি তোমার অপূর্ব ভাই? যার কথা তুমি আমাকে বলেছিলে?”

“জি আপু।” অতঃপর ডা/কা/তদের ডে/রায় ঘটে যাওয়া প্রতিটি ঘটনা অপূর্ব ভাইয়ের কাছে ব্যাখ্যা দিলাম। অপূর্ব ভাই আমার বুদ্ধি শুনে প্রশংসা করলেন।

অচেনা গ্রাম থেকে বাসে চড়ে আমরা এগোলাম ব্যস্ত নগরী ঢাকার উদ্দেশ্যে। রাত তখন দশটা বাজে। বাস থেকে নেমে আমরা তিনজনে এক পাশে দাঁড়ালাম। অপূর্ব ভাই এদিক ওদিক তাকিয়ে গেলেন সিএনজি আনতে। এমন সময়ে সেখানে দলবল নিয়ে হাজির হলো মিহির ভাই। আমার হাতটা খপ করে ধরে বলেন, “চল।”

“কোথায়?” চমকে বললাম।

“বাড়িতে কাউকে কিছু না বলে ঢাকায় আসার সাহস হয় কী করে তোর? একবার বাড়িতে চল। পা ভে/ঙ্গে হু/ই/লচেয়ারে বসিয়ে রাখব। ঠিক তোর মায়ের মতো।” বলে মিহির ভাই চললেন। হাতে টান লাগার দরুন আমিও বাধ্য হলাম অগ্ৰসর হতে। সিএনজি নিয়ে ততক্ষণে হাজির হয়েছেন অপূর্ব ভাই। শান্ত অথচ বাজখাঁই গলায় বলেন, “মিহির আরুর হাতটা ছাড়ো।”

“আগেও বলেছি, এখনো বলছি। আরু আমাদের বাড়ির মেয়ে। তার উপর তোমার কোনো অধিকার নেই।”

“আমি অধিকার তৈরি করে নিতে জানি মিহির। আমাকে বাধ্য করো না, তেমন কিছু করতে। চুপচাপ হাতটা ছাড়ো।” মিহির হাতটা ছাড়ে না। ছেলেদের ইশারা করে। সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে অপূর্ব ভাইকে আটকে রাখে তারা। অপূর্ব ভাই ফিচেল হাসে। মনোচিকিৎসক হিসেবে ঢাকাতে তার নাম ডাক রয়েছে। অনেকেই তাকে চিনে। অপূর্ব ভাই শান্ত গলায় ডাকে সবাইকে, “দেখুন না ভাইয়েরা, এই ছেলেটা আমাদের বিরক্ত করছে।”

সবাই একত্রিত হয়ে জড়ো হলো। সুযোগ বুঝে অপূর্ব ভাই আমাকে ও পায়েল আপুকে একসাথে নিয়ে সিএনজিতে উঠলেন। ড্রাইভারকে উদ্দেশ্য করে বললেন, “আমরা এখন চত্বরে যাবো না। এখান থেকে সবচেয়ে কাছে যেই ‘কাজী অফিস’ আছে, সেটায় চলুন।”

আমি হতবাক হয়ে অপূর্ব ভাইয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে আছি। গাড়ি চলতে শুরু হয়েছে। যতটা পথ পেরিয়ে চলেছি, ততটা কৌতুহল আমার মনে দানা বাঁধতে শুরু করেছে।

[চলবে.. ইন শা আল্লাহ]