#এ_শহরে_তুমি_নেমে_এসো 💚
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব: ৩৬
দুহাতে আগলে রয়েছি অপূর্ব ভাইয়ের বুকে। হাঁটার ক্ষমতা নেই। পায়ের ব্যথায় হাঁটতে ব্যর্থ আমি। মাথা ভার হয়ে আছে। কোলে নিয়ে হাঁটছেন তিনি। অস্ফুট স্বরে স্বরে বললাম, “আর কতদূর? হাত ব্যথা করছে।”
“এইতো চলে এসেছি।” দৃঢ় কণ্ঠে বলতে বলতে অপূর্ব ভাই এগিয়ে চলেছেন। মনের ভেতরটা খচখচ করছে। কোথায় যাচ্ছি আমরা? একটু আগে আমাকে গাড়িতে একা রেখে হোটেলের সন্ধানে গেছেন তিনি। এই অজপাড়া গাঁয়ে হোটেল পাওয়া দুষ্কর, তবে রাত্রি যাপন করার উপযোগী আশ্রয়স্থলের যোগার নিশ্চিত তিনি করেছেন। মনের কোণে দোটানা নিয়ে অপূর্ব ভাইয়ের কোলে করে পৌঁছে গেলাম গন্তব্যে। একটা ছোটো কুঁড়ে ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে গলা ছেড়ে ডাকলেন, “চাচা আছেন? আমরা এসেছি।”
তখনও ঝিরিঝিরি ধারায় বৃষ্টি পতিত হচ্ছে। শুকনো জামাতে পুনরায় বৃষ্টির ফোঁটা রাজত্ব করছে। টিনের ঘর হলে ঝমঝম করে রাজত্ব করতো বৃষ্টিরা, খড়কুটো হওয়ার কারণে শব্দ নেই। দরজা খুলে উঁকি দিয়ে এক বৃদ্ধ বলেন, “দাঁড়াইয়া রইছো কেন বাবা? জলদি ভিতরে আহো। ভিজলে ঠান্ডা লেগে যাবে।”
অপূর্ব ভাই দ্রুত পা চালালেন। ঘরের সামনে পানি জমে আছে। অপূর্ব ভাই দ্রুত করতে গিয়ে পা ফেললেন কাঁদার ভেতরে। পা পিছলে উভয়ে পড়লাম পানির ভেতরে।আমি নিচে, তিনি উপরে। অবিলম্বে অধরে অধরের স্পর্শ পেল। চোখে চোখে বিনিময় হলো দৃষ্টি। দু সেকেন্ড স্থির থেকে মাথা তুলে নিলেন তিনি। দৃষ্টি সরিয়ে ফেললাম। লজ্জায় প্রাণ মিলিয়ে যায়। অদৃশ্য হয়ে যেতে ইচ্ছে করছে। সরে আসার প্রচেষ্টা করতেই কোমরে আঘাত অনুভব করলাম ।দু’হাতে অপূর্ব ভাইয়ের চুল খামচে ধরে মৃদু আর্তনাদ করলাম, ‘আহ’।
“লেগেছে?” অপূর্ব ভাই উঠে যেতে যেতে বললেন। আমি অনড় রইলাম। মাথা ভার যেন রাগে পরিণত হয়েছে। রাগান্বিত কণ্ঠে বললাম, “মহিষ মতো একটা গণ্ডার যদি আমার শরীরের উপর পড়ে। লাগবে না-তো কি আদর করবে?”
“মহিষের মতো গণ্ডার- নতুন শুনলাম। তুই সকালে আমার উপরে পড়েছিলিস। তার বেলায়?”
“আমি আর আপনি কি এক? ওজন দেখেছেন?”
জবাবে অপূর্ব ভাই কিছু বলতেও চেয়ে পারলেন না, তার পূর্বে বৃদ্ধ ছুটে এলেন তাল পাতা নিয়ে। মাথায় তাল পাতা ধরে আছেন। অধৈর্য হয়ে বলেন, “ওমা! তোমরা একটু দেখে আসবে না। এভাবে পড়ে না থেকে দ্রুত ঘরে এসো। আকাশ অন্ধকার করে এসেছে। যখন তখন বৃষ্টি আসবে।”
অপূর্ব ভাই উঠে বসলেন। আমাকে কোলে নিয়ে ঘরে যাওয়ার চেষ্টা করলেন। অনুভব করলাম, এক দমকা হাওয়া আমার পিঠ ছুঁয়ে চলেছে। জামার অনেকটা ছিঁড়ে গেছে। ডান হাত অপূর্ব ভাইয়ের কাঁধে রেখে বাম হাত পিঠে রাখতেই অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু সংস্পর্শে এলো। জামা ভেদ করে অপ্রত্যাশিত কিছু প্রকট হয়েছে। অপূর্ব ভাই দেখতে না পেলেও বৃদ্ধর দৃষ্টি থেকে এড়িয়ে যায়নি। মৃদু স্বরে বললাম, “নামিয়ে দিন, আমি একাই যেতে পারব।”
“পারলে তো নামিয়ে দিতাম।”
“প্লীজ, জামা ছিঁড়ে গেছে। ওটা দেখা যাচ্ছে।”
অপূর্ব ভাই বুঝলেন কি-না জানা নেই। বাঁকা করে তাড়াতাড়ি হেঁটে ঘরের ভেতরে ঢুকলেন। ছোটো একটা বেঞ্চিতে বসিয়ে ওড়না জড়িয়ে দিলেন গায়ে। বৃদ্ধা ভেতরেই ছিলেন। তাকে দেখে লজ্জায় কাবু হলাম। ব্লাউজ বিহীন কাপড় পড়েছেন। আমি মাথাটা আলতো নিচু করে রাখলাম।
অপূর্ব ভাইকে নিয়ে পাশের ঘরে গেলেন বৃদ্ধ। আমাকে উদ্দেশ্য করে বৃদ্ধা বললেন, “ডাক্তার সাহেব বলছে, তার বউ নিয়ে কিছু দিন এখানে থাকবে। তুমিই কি ডাক্তার সাহেবের বউ?”
সংশয়ে পড়লাম আমি। অপূর্ব ভাই আমাকে তার স্ত্রী হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। মৃদু স্বরে বললাম, “হম। কেন?”
“ছোডো ছোডো লাগে। আমাদের গ্রামে মেয়েদের তাড়াতাড়ি বিয়ে দেয় বয়স্ক ছেলে দেখে। শহরেও বয়স্ক ছেলের কাছে বিয়ে দেয়।” আমি মুচকি হাসলাম। মাথা ভার হয়ে আছে। বৃদ্ধা সন্দিহান গলায় বলেন, “তা জামা কাপড় আছে কিছু? থাকলে গোসল সেরে নেও। কলসে পানি ভর্তি করে রাখছি।”
“এখান থেকে কল তো অনেক দূরে? কলসের পানি খরচ করলে খাবেন কী?”
“এগুলো বৃষ্টির পানি। বৃষ্টির সময় সংরক্ষণ করে রাখি। এই বয়সে কলস নিয়ে কল তলাতে যেতে পারি না।”
পাশেই ছোটো একটা বারান্দা। দুই মগ পানি ঢেলে পড়লাম বিপত্তিতে। জামা কাপড় নিয়ে আসা হয়নি। পড়ার মতো কোনো পোশাক নেই। বৃদ্ধা মহিলা আমাকে তার একটি কাপড় দিলেন। কাপড়টি এপিঠ ওপিঠ দেখে বললাম, “আমি কাপড় পড়তে পারি না।”
“আমি পড়িয়ে দিচ্ছি।”
“ব্লাউজ ছাড়া শাড়ি কীভাবে পরে? আপনার লজ্জা করেনা?
“সোয়ামীর সামনে আবার কীসের লজ্জা? আমাদের গ্রামে সবাই এমনেই শাড়ি পরে।”
“পরব না।”
বৃদ্ধা আমার কথায় কর্ণপাত করলেন না। আমিও তেমন বাঁধা দিলাম না। তিনি গুছিয়ে কাপড় পরানো শেষ করে বলেন, “কিছু খেয়েছো?”
“হম। চা খেয়েছি।”
“শুধু চা? ভাত খাও নাই?”
“না।”
“তুমি বরং তোমার স্বামীর কাছে যাও। ঘরে পান্তা ভাত আছে। চুলাতে পানি ঢুকে ভিজে আছে। রান্না করা যাবে না। পান্তা ভাত দিয়ে রাতটা পার করে দাও। কাল সকালে গরম ভাত করে দিবো।” পরের বাক্য আমি শুনতে পেলাম না। ‘তুমি বরং তোমার স্বামীর কাছে যাও’ – প্রথম বাক্যটা শুনেই কান থেকে ধোঁয়া উঠছে। জ্বরের মাঝেও শরীর ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।
___
ল্যাম্প জ্বলছে কাঠের তক্তার উপর। হলদে আলো ছড়াচ্ছে। রেডিও বা টেলিভিশন নেই যে, আবহাওয়া শুনবো। বৃষ্টি থামার নাম নেই। মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে আকাশে। কুঁড়ে ঘরের ভেতরে হাওয়া ঢুকে যাচ্ছে। বৃদ্ধ ঘরে ঢুকলেন এমন সময়ে। তার পেছনে পেছনে অপূর্ব ভাই। একপাশে জড়োসড়ো শুয়ে আছি। অপূর্ব ভাই আমার পাশে বসে ধীর গলায় ডাক দিলেন, “আরু, জ্বর কমেছে?”
“হেচ্চু! মাথা ভার হয়ে আছে। হেচ্চু!”
হাতের এপিঠ ওপিঠ দিয়ে জ্বর দেখে নিলেন। অবিলম্বে কোলে তুলে নিলেন আমায়। এগিয়ে যেতে যেতে বললেন, “চাচা কাঁথা থাকলে একটা কাঁথা দিয়েন। জ্বরে শরীর পুড়ে যাচ্ছে।”
“হেচ্চু! আমি ঘরে যাবো না, হেচ্চু!” আমার কথায় কর্ণপাত না করে পাশের ঘরে নিয়ে গেলেন। বিছানায় রেখে কাঁধ মুছতে লাগলেন। সর্দিতে তার কাঁধ ভিজে গেছে। এতক্ষণে খেয়াল করলাম, তাকে আজ বুড়ো বুড়ো লাগছে। তারমানে বৃদ্ধা ঠিকই বলেছেন, তিনি বয়স্ক। কিন্তু আমার মতে তিনি বুড়ো বাম। কপাল আমার ভিজিয়া গেল চোখেরই জলে।
[চলবে.. ইন শা আল্লাহ]
#এ_শহরে_তুমি_নেমে_এসো 💚
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব: ৩৭
দমকা হাওয়া থেমে গেছে। কিন্তু ঝিরিঝিরি বৃষ্টি তখনও বিরাজমান। ঘরের মাঝ বরাবর একটি ল্যাম্প ধরানো, যা হলদেটে আলো ছড়াচ্ছে। নীরবতা পেরিয়ে গেল কিছুক্ষণ। অপূর্ব ভাই পাশে বসে ছিলেন। আমি শুয়ে আছি। হঠাৎ বেশ করে আমার ইচ্ছে জাগলো তার কোলে মাথা রাখার। মৃদু মাথা উঁচু করে তার কোলে মাথা রাখলাম। মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন, “এত রাতে বৃষ্টিতে কোনো দোকান খোলা নেই। কালকে সকালে বৃষ্টির পর ওষুধ না এ আসবো।”
“ঠিক আছে। আপনিও ঘুমান।”
দরজায় করাঘাত পড়ল। বৃদ্ধ খাবার নিয়ে এসেছে। অপূর্ব ভাই একটু সরে গেছেন আমার থেকে। নম্র গলায় বৃদ্ধকে আসতে বললেন। একহাতে খাবার অন্য হাতে জরিবুটি। অপূর্ব ভাইকে উদ্দেশ্য করে বললেন, “এটা খাইয়ে দেবে আর এটা পায়ে ম্যাসাজ করে দিবে। কাল সকালের ভিতরে অসুস্থ হয়ে যাবে।”
“ধন্যবাদ” শুকনো কণ্ঠে বললেন তিনি। বৃদ্ধ চলে গেলেন। পুনরায় ঘরে নীরবতা বিরাজ করে উঠলো।
ভাতের সাথে দুটো শুকনো মরিচ। তরকারি বলতে কিছু নেই। শুকনো মরিচ দিয়ে পান্তা ভাত খাওয়ার অভ্যাস আমার থাকলে অপূর্ব ভাইয়ের নেই। অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও এক লোকমা পান্তা ভাত আমার মুখে তুলে দিলেন। চিবুতে চিবুতে বললাম, “আপনি কি তাদের আগে থেকেই চিনতেন? তাদের ব্যবহার দেখে মনে হয় পরিচিত।”
“হ্যাঁ, চিনতাম। তিনি এখানকার ডাক্তার। বন্যলতা সংরক্ষণ করে গ্ৰামের মানুষের চিকিৎসা করেন। আমার সাথে অনেক আগে থেকেই পরিচয়।”
আচ্ছা!” সংক্ষিপ্ত জবাব আমার। অপূর্ব ভাই খাওয়ানো শেষ করে বন্যলতা দিয়ে তৈরি ওষুধ আমাকে খাইয়ে দিলেন। পায়ে আলতো করে ম্যাসাজ করে দিতে লাগলেন। খাওয়া সম্পূর্ণ হতেই আমার চোখে ঘুমেরা রাজত্ব শুরু করে দিল। চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করলাম।
___
আকাশটা বড্ড মেঘলা। বৃষ্টি থেমে গেছে। সূর্য্যি মামা নেই। লুকিয়ে আছেন মেঘের আড়ালে। পাখিরা ভরসা পায়নি, বাইরে বের হওয়ার। তবে আমি শরীরে শক্তি ফিরে পেলাম। বিছানা থেকে উঠে গেলাম। শরীরটা বেশ হালকা লাগছে। চোখ জোড়া উন্মোচন করতেই হতবাক হলাম। নিত্যদিনের মতো আমার পা অপূর্ব ভাইয়ের পেটের উপরে রয়েছে। এটা নতুন নয়। তবে ব্যতিক্রম, অপূর্ব আমার অতি নিকটে। তার মুখশ্রী আমার কাঁধে। নিঃশ্বাস আঁচড়ে পড়ছে আমার কাঁধে। ক্ষণে ক্ষণে কেঁপে উঠছি। তার একহাত কাপড় ভেদ করে আমার কোমর আঁকড়ে ধরে রয়েছে। আমার নিরাপত্তার দিক বিবেচনা করে তিনি এমন করেছেন। কারণ দুজনার উপযোগী চৌকি। একটু নড়াচড়া করলে পড়ে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। অসুস্থ অবস্থায় পড়ে গেলে আরও ব্যথা পাবো। পোশাক ঠিক করে নিজের পা সরিয়ে নিলাম। ঘুমন্ত ললাটে অধর স্পর্শ করে লজ্জায় রাঙা হলাম। তড়িগড়ি করে চৌকি ছেড়ে নেমে গেলাম। বাইরে গিয়ে বসলাম। বৃষ্টির পর আকাশটা আজ বেশ লাগছে। বাড়ির সামনে একটা আম গাছ। নিচে কতগুলো আম পড়ে আছে। দু’হাতে আম কুড়িয়ে একপাশে রাখলাম। লাফ দিয়ে আম গাছের পাতা ছিঁড়ে নিলাম। গ্ৰামে থাকতে প্রায়ই আম গাছের পাতা দিয়ে দাঁত মাজতাম। আজও তাই করলাম। বৃদ্ধা সকাল সকাল নামলেন। আমাকে দেখে এগিয়ে এলেন। তিনি সাঁই দিয়ে দাঁত পরিষ্কার করছেন। আমার কাছে এগিয়ে এসে বললেন, “ক্ষেতে যাবা? সামনেই আমাদের সবজির ক্ষেত। কচু শাক নিয়ে আসবো। সকালে গরম ভাত দিয়ে কচু শাক খেতে অনেক ভালো লাগে।”
আমি মাথা নেড়ে সায় দিলাম। তিনি বাঁশের তৈরি ঝুড়ি নিয়ে নিলেন সাথে। একটু উঁচু গলায় বললেন, “আমি ক্ষেতে গেলাম। চা করে রেখেছি। ঠান্ডা হলে আবার গরম করে নিও।”
কাপড় উঁচু করে পরিয়ে দিয়েছিলেন যার দরুন কাঁদা লাগছে না। মাটির রাস্তা দিয়ে ক্ষেতে চলে গেলাম। বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। মুলা দেখে মুচকি একটা হাসি দিয়ে বললাম, “জানেন দাদি, আমি আগে ভাবতাম মুলা পেকে গাজর হয়।”
তিনি আমার মাথায় আস্তে একটা চপল দিয়ে বললেন, “তুমি ডাকো দাদি, তোমার স্বামী ডাকে চাচি। কেমন লাগে বলো। যেকোনো একটা ডাকো, নাহলে সম্পর্কের অন্য মানে দাঁড়ায়।”
জবাব দিলাম না। প্রয়োজনীয় কাচা বাজার নিয়ে বাড়িতে চলে এলাম। উঠানে বসে বৃদ্ধ আর অপূর্ব ভাই চা খাচ্ছেন। আমি টুলে বসলাম। বৃদ্ধা রান্নাঘরে গিয়ে চা গরম করে নিয়ে এলেন। চারজনে বসে খেতে লাগলাম। খেতে খেতে বৃদ্ধা বললেন, “ধান ক্ষেতে পানি জমেছে। আরেকটু বৃষ্টি হলেই ক্ষেত তলিয়ে যাবে। তার আগেই আমাদের আ/ই/ল কা/ট/তে হবে।”
“তাহলে চা খেয়ে বেরিয়ে পড়ব।”
“এখনো তো আকাশ পরিষ্কার দেখছি। বৃষ্টি আসতে দেরি হবে। ভাত বসিয়ে দিয়েছি, হলে খেয়ে যেও।” বলেই বৃদ্ধা রান্নাঘরে গেলেন। বৃদ্ধ আর অপূর্ব ভাই কথা বলছেন। আমি আম ফাটিয়ে খাচ্ছি। আম ছিলে খাওয়ার চেয়ে ফাটিয়ে খেতে অনেক মজা। তুর আর আমি কত খেয়েছি। চোখের কোণে পানি চলে এলো। কতদিন হয়েছে পরিবার থেকে দূরে। কেমন দম বন্ধ হয়ে আসে। নিজের মাঝে আগের মতো সেই প্রাণোচ্ছল আরুকে খুঁজে পাই না। পরিস্থিতি তাকে অসহায় করে দিয়েছে। অপূর্ব ভাইয়ের কথাতে ধ্যান ভাঙল।
“সকাল সকাল খালি পেটে আম নিয়ে বসেছিস। এখন নিশ্চয় পেটে লাড়া দিয়েছে।”
“না।”
“তাহলে কাঁদছিস কেন?”
“এমনিই।”
“ঢং করিস না। এই মুড়িগুলো খেয়ে এক গ্লাস পানি খা। ভাত হলে ভাত খেয়ে শুয়ে থাকবি। ছোটাছুটির দরকার নেই।” এক মুঠো মুড়ি এড়িয়ে দিয়ে বললেন। আমি মুড়ি খেতে লাগলাম। এমন সময়ে দু’জন ছেলে এলো। হাঁপাতে হাঁপাতে বলে, “রহিম দাদু, সুমি আপার ঘরের খুঁটি বাতাসে পড়ে গেছে। দুলাভাই বাড়িতে নেই। গঞ্জে গেছে। বাড়িতে আপা ছাড়া কেউ নেই। তোমাদের যাইবে কইছে। তাড়াতাড়ি চলো।”
“আমি আসছি, তোরা যা।” বলেই বৃদ্ধ উঠে গেলেন। কোমরে গামছা বেঁধে ঘরে গেলেন। বৃদ্ধা ছুটে এলেন। রান্নাঘর থেকে তিনি সব শুনেছেন। বৃদ্ধকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “আমি যাবো। নাতি নাতনিদের নিয়ে না জানি কেমন আছে ওরা?”
“তুমি গেলে ঘর দেখবে কে? ওদের খাওয়াবে কে? তাছাড়া আইল কা/ট/বে কে?” বৃদ্ধর কথাতে বৃদ্ধার মন খা/রা/প হল। দ্বিমত পোষণ করলেন না। অপূর্ব ভাই এগিয়ে গিয়ে বলেন, “আমাদের চিন্তা আপনাদের করতে হবে না। বৃষ্টি নামার আগেই আমি ক্ষেতে যাবো। আপনারা দুজনেই যান। সুমি আপা বাচ্চাদের নিয়ে ভয় পাবে।”
“কিন্তু তোমাদের রান্না?” বৃদ্ধার প্রশ্নে অপূর্ব ভাই বলেন, “আমি সামলে নিবো। আমি রান্না করতে পারি। নিশ্চিতে যেতে পারেন।”
তারা দুজনে ব্যাগপত্র গুছিয়ে মেয়ের শ্বশুর বাড়ির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেলেন। বাড়িতে পড়ে রইলাম আমি আর অপূর্ব ভাই। অপূর্ব ভাই মাটির চুলোতে বাকি রান্না করতে বসলেন। রান্না শেষ হওয়ার পূর্বেই আকাশ কালো করে এলো। ঝিরিঝিরি বৃষ্টি শুরু হলো। অপূর্ব ভাই কো/দা/ল হাতে নিয়ে মাঠের উদ্দেশ্য বেরিয়ে গেলেন। আইল কে/টে বাড়িতে ফিরবেন।
[চলবে.. ইন শা আল্লাহ]