#এ_শহরে_তুমি_নেমে_এসো 💚
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব: ৪৩ (অন্তিম)
“নয়না চাচি আমাকে সাহায্য করলেন। তিনি বললেন, ‘একমাত্র পা/গ/লকে কেউ জোর করতে পারে না। তুই পা/গ/ল হয়ে যা আরু।’ আমি পা/গ/ল হয়ে গেলাম। পা/গলা/মি শুরু করে দিলাম। আমাকে পাগ/লা গা/রদে নেওয়া হলো। আমার ডেলিভারি ডেট পড়ল। আমার গর্ব থেকে একটা ফুটফুটে মেয়ে বের হলো। আমি একনজর তাকে দেখলাম। স্পর্শ করতে পারিনি। সবাই আমার কাছে আমার মেয়েকে দিতে ভয় পেল। আমি মেনে নিলাম সবটা। অপূর্ব ঠিক হলেন। সুস্থ হয়ে গেলেন। আমাকে দেখতে আসতো, কিন্তু নিতো না। অভিমানে তার সাথে আর দেখা করতাম না। এই হলো আমার অতীত। আমি ভরা আদালতে সবার কাছে বিচার চাই, বিচার চাই। আমার সাথে করা কাজগুলো যদি অন্যায় হয়ে থাকে। তাহলে অন্যায়ের বিচার চাই। আমি আমার মেয়েকে এখন পর্যন্ত স্পর্শ করতে পারিনি। আমার মেয়ের শৈশব ফিরে পেতে চাই বিচারক।”
বলতে বলতে মাটিতে হাঁটু মুড়ে বসে পড়লাম। অপূর্ব ভাই সামলে যাচ্ছেন। বিচারক চশমা খুলে নিজের চোখটা মুছে বললেন, “আমি আমার জীবনে খুব কম কেঁদেছি। বিচার করতে গিয়ে হতাশ হয়েছি। কিন্তু আজ আমি আবেগী, হতাশ, কাঁদছি। এই বিচার আমি করতে পারব না।”
আদালতে উপস্থিত সবাই উঠে দাঁড়ালেন। মামা দূর থেকে বললেন, “স্যরি আরু, আমি সবচেয়ে বড়ো অপরাধী তোর কাছে। সেদিন যদি তোকে দুলাভাইয়ের হাতে তুলে না দিতাম। তাহলে তোর জীবনটা এমন হতো না। আমাকে ক্ষমা করে দে।”
পাখি ছুটে এলো আমার কাছে। জড়িয়ে ধরে কোলে বসে আছে। বড়ো মামি বললেন, “আরু, সোনা মেয়ে আমার। কথা দিচ্ছি, আজকের পর থেকে তোর ঐ দুচোখে আমি অশ্রু ঝরছে দিবো না। বিশ্বাস কর মা।”
সবাই একসাথে তাল মিলিয়ে বলে, “তোকে আমরা রানি করে রাখব।”
বিচারক বললেন, “আপনি যদি চান, তাহলে সবার উপযুক্ত শাস্তি হবে।”
“না, আমি চাই না কারো শাস্তি হোক। বাকি জীবনটা আমি একটু শান্তিতে থাকতে চাই। আমাকে আমার জীবনের নিরাপত্তা দেওয়া হোক।”
সবাই আবেগপ্রবণ হয়ে আছে। দাদি জান সহ সবাই ছুটে এলো। তার চোখেও পানি। আমার হাত ধরে বলেন, “আমাকে ক্ষমা করে দে আরু। নিজেদের শ/ত্রুতার কারণে তোর জীবনটাকে এভাবে এলোমেলো হয়ে যাবে। আমি একবারও ভেবে দেখিনি। আমরা হুট করেই নিজেদের দ/ম্ভ অ/হংকা/র বজায় রাখতে গিয়ে তোর ক্ষতি করে ফেলেছি।”
সবাইকে অগ্রাহ্য করে পাখিকে কোলে টেনে নিলাম। অজস্র চুমুতে ভরিয়ে দিলাম ছোট্ট মেয়েটাকে। অস্ফুট স্বরে বললাম, “আমার পাখি, আরুর ছোট্ট পাখি।”
বিনিময়ে পাখি আমার দিকে তাকিয়ে বলে, “তুমি ঠিক হয়ে গেছো মা? তুমি আর আগের মতো পা//গ/ল নেই। তাই না মা?
“তোমার দোয়ায় আমি সুস্থ হয়ে উঠেছি মা।”
মেয়েটাকে জড়িয়ে নিলাম। মা দেখো, আমিও একটা মা হয়েছি। আমি কিন্তু তোমার মতো স্বার্থপর হবো না, আমার মেয়েকে কষ্টে রেখে আমি পৃথিবী থেকে হারিয়ে যাবো না, মা ডাক থেকে বঞ্চিত করব না তাকে।
পরিশিষ্ট__
রঙে রঙে সেজে উঠেছে আহসান বাড়ি অরপে আপনাদেরকে সবার প্রিয় সাত ভাই চম্পা নিবাস। একের পর এক লোক আসছে বাড়িতে। মিষ্টি বিতরণ করতে ব্যস্ত। কত কেজি মিষ্টি বিতরণ করা হয়েছে, তার ঠিক নেই। আমি রান্নাঘরে মামিদের রান্নায় সাহায্য করছি। তুর এসে বলে, “মা, একজন ভিক্ষুক এসেছে। কিছু দাও।”
মামি বিরক্ত হয় বলেন, “তোর হাতে কী হয়েছে? দেখছিস আরু আমাদের সাহায্য করছেন। নিজেও তো দিতে পারিস।”
“মা..!
“চুপ, আরু মা যা। চাল দিয়ে আসিস।” মামির কথায় সাড়া দিয়ে চাল নিয়ে রওনা হলাম সেদিকে। ভিক্ষুকের হাতে দিতেই তার ঝুলিতে নিয়ে নিল চালগুলো। আমার মাথায় হাত রেখে বলে, “এই বাড়িতে আসার পর আমি কখনো খালি হাতে যাইনি। আজও আশা করে এসেছি এবং পেয়েছি।”
আমি হেসে মিষ্টির প্যাকেটটা এগিয়ে দিয়ে বললাম, “এটা তোমার জন্য। সবাইকে নিয়ে খেও। আজ নির্বাচন ছিল। আমার স্বামী নির্বাচনে জয়লাভ করেছে। এখন সে এই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান। দোয়া করো, যাতে সে ঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারে।”
অপূর্ব ভাই নির্বাচনে দাঁড়িয়েছে। তাকে আমার বাবা বাড়ির সবাই অনেক সাহায্য করেছে। দুই বাড়ির যাতাযাত লেগেই থাকে। দুই পরিবারের শ/ত্রু/তা আমার হাত ধরেই সমাপ্ত হয়েছে।
তিনি বললেন, “আমাকে একটা কাজ দিতে পারবে তোমার স্বামী?”
বৃদ্ধার স্বামী নেই। সন্তান পঙ্গু। সন্তানের স্ত্রী সন্তান বাবার বাড়িতে চলে গেছে। তাই প্রতিবার আমিই তাকে সাহায্য করি। বৃদ্ধার হাত ধরে বললাম, “তোমাকে বয়স্ক ভাতার পাশাপাশি তোমার ছেলেকেও পঙ্গু/প্রতিবন্ধী ভাতার দেওয়ার ব্যবস্থা করতে বলব তাকে। তোমাদের আর চিন্তা করতে হবে না।”
বৃদ্ধা আমার কথাতে মুচকি হেসে চলে গেল। বাড়ির ভেতরে যেতে গিয়ে বাগানের দিকে তাকালাম। চমকে উঠলাম আমি। বাগানে তীর, তিহান ও পাখি রঙ খেলছে। ভিজে আছে পানিতে। আমি ছুটে গেলাম। কোলে নিলাম মেয়েকে। ধমকে বললাম, “এই তোরা রঙ পেয়েছিস কোথায়? আবার চু/রি করেছিস তোরা? চু/রি করা ভালো কাজ নয়, কতদিন বলেছি তোদের। তবুও।”
পাখি বলে, “আমরা কেন্দ্রে গিয়েছিলাম। সবাই রঙ দিয়ে খেলছে। অপূর্ব আহসানের মেয়ে বলে কথা। রঙ চাওয়ার সাথে সাথেই দিয়ে দিল।”
“তোরা কেন্দ্রে গিয়েছিলি? তবে রে..
বলেই ছুটলাম আমি। তিনজনে আগে আগেই দিল দৌড়। ছুটে বেশিদূর যেতে পারলাম না। পেছন থেকে হাত টেনে ধরলেন অপূর্ব। চমকে উঠলাম আমি। চোখ পাকিয়ে বললাম, “আপনি?”
গালে রঙ লাগিয়ে দিলেন তিনি। দুহাত কাঁধে রেখে বলে, “করো সাহস আছে চেয়ারম্যান বাড়ির চেয়ারম্যানের বউয়ের দিকে নজর দিবে?”
“হয়েছে হয়েছে ছাড়ুন। মেয়ে ভিজে আছে। ঠান্ডা লেগে যাবে, জ্বর আসবে। ছাড়ুন।” আমার কথাতেও ছাড়লেন না অপূর্ব। নিজের গাল মিশিয়ে রঙ লাগালেন তার গালে। আমি লজ্জায় মাথা নিচু করলাম। ফিসফিস করে বললেন, “আমার মেয়ের এতো সহজে ঠান্ডা লাগার ধাত নেই।”
“আমি কিছু দেখিনি!” বলেই হাত দিয়ে চোখ আড়াল করল তুর। তুরের উপস্থিতিতে বিরক্ত হলেন অপূর্ব। গম্ভীর গলায় বলেন, “আমরা যেখানে সেখানে দেখাই না। তাই তুইও নিশ্চিত থাক। আর ওদের পোশাক পাল্টে দে। ঠান্ডা লেগে যাবে। আমি একটু আরুকে নিয়ে যাচ্ছি।”
“এই মাত্রই তো বললেন, যেখানে সেখানে..
“সাট আপ তুর, আমরা এখন ঘুরতে যাবো। তুই ঘরে যা।” ভাই বোনের এমন কথোপকথনে লজ্জায় মাটিতে মিশে যাচ্ছি আমি। তুর চলে যেতেই চোখ রাঙিয়ে বললাম, “কী বললেন এটা।”
“নাথিং। কাঁধে উঠ আমার। তোকে নিয়ে এক চক্কর দিয়ে আসি। না উঠলে কীভাবে উঠাতে হয় আমার থেকে ভালো কেউ জানে না।” মৃদু ধমকানিতে ভয় পেলাম না। লজ্জায় কাঁধে উঠলাম। পেরিয়ে গেলাম অনেক পথ। রাস্তার মানুষগুলো তাকিয়ে আছে। কয়েকজন সিটি দিচ্ছে। একজন বলছে, “আমাদের চেয়ারম্যান সাহেব রোমান্টিক আছেন, রসিক মানুষ।”
আরেকজন বলছেন, “ভাবীকে নিয়ে কোথায় যাচ্ছেন?”
“এইতো, এই সামনে। নির্বাচনে জয়লাভ করার পর সবাই আমাকে কাঁধে তুলে নিয়েছে। আমি আমার বউকে সেই আনন্দিত মুহূর্ত উপভোগ করার স্বাদ দিচ্ছি।”
চারপাশে সবাই করতালি দিচ্ছে। আমি লজ্জায় রাঙা হয়ে বললাম, “এভাবে বয়ে আর কতদূর যাবেন?”
“শেফালীর শ্বশুর বাড়ি পর্যন্ত। শুনেছি তার টুইন বেবী হয়েছে। সবার আগে তোকে কাঁধে নিয়ে আমরা দেখতে যাচ্ছি তাকে।”
“সত্যি!”
“উত্তেজিত হয়ে লাভ নেই। আগামী বছরে মেয়েকে কাঁধে নিয়ে যাতে আমার দ্বিতীয় সন্তান দেখতে যেতে পারি, সেই ব্যবস্থা কর।”
আমি নতজানু হলাম। অপূর্ব আড়চোখে আমাকে দেখছেন।
“আমি তো চাইবোই, এ শহরে তুমি নেমে এসো। শুধু তুমি নয়, সাথে আমার সুখ শান্তি সব। ভালোবাসি, তোমায় আরু।
“আমিও বাসি। ভালোবাসি। আপনি বাসলেও বাসি, না বাসলেও বাসি। ভালোবাসি।”
(সমাপ্ত)