ওঁগো বঁধু পর্ব-০৭

0
2

#ওঁগো_বঁধু
পর্ব ৭
#জান্নাতুল_মাওয়া_লিজা

এত বড় পাঁচ তারকা হোটেল নিজের চোখে দেখা তো দূর, এত সৌন্দর্য কোনো স্থানের যে থাকতে পারে রানু তা কল্পনাই করতে পারেনি।
আউটডোর প্রিমিসে সমান করে কাটা ঘাসরাজি, শত শত প্রজাতির রং বেরং এর ফুল, পাতা ও ক্যাকটাসের চোখ ধাঁধানো বিন্যাস। এ সবকিছু অসামান্য লাগলো রানুর ক্ষুদ্র চোখে ।

হেমন্তে ক্ষেত খামার জুড়ে চোখ ধাঁধানো হলুদ রংয়ের সরিষা ক্ষেতের সৌন্দর্য আর বসন্তে রাস্তার দু ধারে ফোটা ভাট ফুলের সৌন্দর্য ছাড়া এত বড় ফুলরাজির সৌন্দর্য সে জীবনেও অবগাহন করেনি।
পরবর্তীতে রানুর চোখ ধাঁধিয়ে গেলো এর ভেতরের আলোকসজ্জা ও বেশ বিন্যাসে। হোটেলটির নাম পড়ার চেষ্ঠা করলো রানু দু দুবার।
রানুর নাম পড়ার চেষ্ঠা দেখে রায়হান সাহেব হেসে বললেন,
” র‍্যাডিসন ব্লু, মা, এই রেস্টুরেন্টের নাম র‍্যাডিসন ব্লু!”
রানুও ভীতু ভীতু চোখে শ্বসুরের সাথে হাসি বিনিময় করলো। তারপর নিজের মনে মনে “র‍্যাডিসন ব্লু” নামটা কয়েকবার বিড়বিড় করে আত্মস্থ করে নিলো। এতসব জাঁকজমক ও আড়ম্বরতা তার চোখে বড় কিছু হলেও সবচেয়ে বড় সৌন্দর্য তো রাফসান। কালো টি শার্ট আর এশ কালার প্যান্টে তার স্বপ্নের পুরুষকে নৈশর্গিক লাগছিলো রানুর চোখে। চুলের কাট থেকে শুরু করে পায়ের জুতা সবকিছুতেই পারফেক্ট চয়েজ রাফসানের। এত সুন্দর পুরুষটি তার স্বামী, ভাবতেই কয়েকবার নিজেকেই নিজের ঈর্ষা হচ্ছিলো রানুর। আড়চোখে সে বারবার সে রাফসানের দিকে তাকাচ্ছিলো। রাফসানের ধ্যান হেডফোনে নিমগ্ন হলেও, তার চোখ মুখে বিরক্তি ঠিঁকরে পড়ছে।
রানু আহত হলো রাফসানের এহেন মুখাবয়ব দেখে। যার উপস্থিতিতে সে শান্তি পাচ্ছে, তার উপস্থিতিতে আরেকজন ঠিক সেরকমই অশান্তি পাচ্ছে! এটা ভেবেই কঠোর দ্বীধাবোধ, সংকোচ ও ব্যথা কাজ করতে লাগলো রানুর মনে।
চারপাশ তাকাতে তাকাতে দু দু’বার পিছলেও পড়ে যাচ্ছিলো সে, যদিও নিচু স্লিপার পড়েই এসেছে সে, তারপরো এতো পিচ্ছিল টাইলসে সে জীবনেও হাঁটেনি।
এখানে আসার পূর্বে সাজানো শেষ করে ননদিনী মেহরোজ তার সামনে একজোড়া হাইহিল এনে রেখেছিলো। গোটা সাজানোর সময় মেহরোজ তার সাথে একটি বাক্য কথাও বলেনি। বাবার জোর জবরদস্তিতে সাজালেই কি? রানুকে সে ভাবী হিসেবে কুক্ষণেও মেনে নেয়নি। সে রানুকে যে ভীষণই ঘৃণা করে তা রানু তার চোখে দেখেই বুঝতে পারছিলো। সাজানো শেষ করে মেহরোজ রানুকে চোখে তাচ্ছিল্যের ঈশারা করে ঐ হাইহিল গুলো পড়ার জন্য। কিন্তু রানু বুঝতে পারে যে, ঐগুলা পড়ে সে এক কদমও ফেলতে পারবে না, তাই অনুনয় করে বলে,
” আপা! আমি তো হিল জীবনেও পরিনাই, আমাকে একজোড়া নিচু জুতা দেন!”

মেহরোজের বিরক্তি আরো চতুর্গুনে বেড়ে গেলেও সে তা নিয়ন্ত্রণ করে কল্পনাকে দিয়ে একজোড়া স্লিপার এনে তার সামনে রাখে। অত:পর রানু সেগুলো পড়ে বের হয়ে যায়।

এমনিতেই রানুকে সাজাতে মেহরোজের গা ঘিনঘিন করছিলো। মেহরোজের গায়ের বর্ণ ঘোর সফেদ। কালো মানুষ তার দুচোখের বিষ। তার উপর মেহরোজের রয়েছে অত্যাধিক পরিচ্ছন্নতা বাতিক। রানুর চুল আঠালো, দাঁত সাদা নয়, নখ হলদে, গায়ের রং কালো। এসব মেহরোজ একদম সহ্য করতে পারে না, আর সব জেনেও বাবা তাকেই রানুকে সাজানোর দায়িত্ব দিলো? রানু চলে যাওয়ার পর মেহরোজ রাগে ফুঁসছিলো। বাবার প্রতি তার বিরুপ ভাব তীব্র হতে তীব্রতর হয়েছে। হঠাৎ ই ফুসতে ফুসতেই সে দৌড়ে বেসিনে গিয়ে ব’মিই করে দিলো ঘৃ’ণায়। মেয়ের এমন হাল দেখে দৌড়ে এসেছিলো মা শায়লা আর দুই ফুপি মলি ও জলি।

কারন যে সময় মেহরোজ রানুকে সাজাচ্ছিলো ঠিক তখনি তিন ননদ ভাবী মিলে একরুমে বসে গল্প করছিলো।
.
.

খাওয়া নিয়ে রানু যেনো বিব্রতকর পরিস্থিতিতে না পড়ে সেজন্য রায়হান মাহমুদ ইচ্ছে করেই দেশিয় খাবার অর্ডার করলেন। দেশি মুরগীর মাংসের রেজালা, গরুর নেহারি, দেশি ডিমের কোরমা, মিক্সড ভেজিটেবল বিরিয়ানি, গলদা চিংড়ি ভুনা, বাহারি রকমের সামুদ্রিক শুঁটকি ভর্তা ও বাহারি রকমের সুগন্ধি পান।

খাবারগুলো রানু যদিও সব চিনে তার পরো কোনো আয়টেম যদি না চেনে থাকে, তাই ভেবে রায়হান মাহমুদ নিজেই আঙ্গুলে নির্দেশ করে খাবারগুলোর সাথে রানুকে পরিচিত করে দিলো।

তার মুখে কৌতুহল, তিনি কৌতুহল অটুট রেখেই বলতে লাগলেন,

” রানু জানো? এটা হলো সামুদ্রিক ছুরি শুঁটকির ভর্তা, এটা লইট্যা ভর্তা…, এই রেস্টুরেন্টে এই সব খাবার তৈরি হয় না বললেই চলে। তবে প্রতি মাসের একটা দিন এখানে দেশিয় খাবারের আয়োজন করা হয়। এসে সবাই বুফে খায়, সব বিদেশি খাবারের রমরমা আয়োজন এখানে, বিদেশিরা বিদেশ থেকে এসে এই সব রেস্টুরেন্টেই উঠে। দেশিয় সব গন্যমান্য ও অর্থবিত্তশালীরাও এখানে ঘুরতে আর খেতে আসে। আর বড় বড় মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলো এখানে তাদের পার্টি ইত্যাদি সারে”

রানু পুরোপুরি নিরহংকারী এ মানুষটার কথাবার্তা শুনতে লাগলো প্রাণপুরে।

” রানু, তুমি হাত ধুয়ে এসে, নিজে হাতেই খেতে পারবে, এই দেখো, আজ আমিও এ রেস্টুরেন্টে বসে, নিজের হাতেই খাবো! রাফসান তুমি কি হাতে খাবে নাকি কাঁটাচামচে? ”

বাবার প্রশ্নে রাফসান উত্তর করলো না।
কারন রাফসান তখনো তার হেডফোনেই নিমগ্ন। দৃষ্টি না তার বাবার প্রতি না খাবারের প্রতি আর না কোনো নির্দিষ্ট জিনিসের প্রতি। তবে ঘনঘন সে তার হাতঘড়িতে দৃষ্টি নিক্ষেপ করছে। আর কয়েক মিনিট পরপর সে দ্বীর্ঘ নি:শ্বাস ফেলছে।
তার দৃষ্টি ঠিক কোনদিকে তা রানু বোঝার চেষ্ঠা করেও ব্যর্থ হলো কয়েকবার। তবে রাফসানে যে ভীষণই অস্বস্তি হচ্ছে, তা রানুর বোধগম্য হলো স্পষ্টভাবেই। রাফসান যেনো কোনো উথাল পাথাল অগ্নি সাগরে সাঁতার না জানা ডুবন্ত ব্যক্তি।

উত্তর না পেয়ে রায়হান সাহেব টেবিল চাপড়ে সজোরে পুনরায় প্রশ্ন করলেন,

” রাফসান আই এম আস্কিং ইউ সামথিং!”

রাফসান এবারে বুঝতে পারলো যে, তার বাবা তাকে কিছু জিজ্ঞেস করছে।

সে বাবার দিকে না তাকিয়েই শীতল কন্ঠে বললো,

” হ্যা, বাবা বলো, আই এম লিসনিং”

” আমি জিজ্ঞেস করছিলাম যে, তুমি কি নিজের হাতে খাবে নাকি, কাঁটাচামচে খাবে?”

রাফসান উত্তর না করেই কাঁটাচামচ পাশে সরিয়ে রেখে নিজের হাত ধুয়ে খাওয়া শুরু করলো। তবে সে খেতেও পারলো না কিছু ঠিকভাবে। এটা এক চিমটি তো ওটা আরেক চিমটি, এভাবে নিয়ে নিয়ে সে পরখ করলো কয়েকটা আইটেম মাত্র আর পরক্ষণেই ঘোষণা করে দিলো,

” আই ফিনিশড!”

রায়হান মাহমুদ অবাক হয়ে সুধালেন,

” কিছুই তো খেলে না!”

রাফসান মুখে কিছু না বললেও চোখ দিয়ে উত্তর ফুটিয়ে তুললো যে, ” রুচি নেই!”

রেস্টুরেন্টে খাওয়া শেষ হতেই রাফসান হঠাৎ নিজের ব্যস্ততা দেখাতে লাগলো। কানে গুঁজা হেডফোন এক টানে খুলে ফেলে বাবাকে বলে দিলো,

” বাবা, এক ফ্রেন্ড আসছে দেশের বাইরে থেকে, ওর সাথে জরুরি মিট করতে হবে”

রায়হান মাহমুদের ছেলেকে হাড়ে হাড়ে চেনা। সে তাই ক্ষণবিলম্ব না করে জানতে চাইলেন,

” কোন ফ্রেন্ড?”

রাফসান রানুর সন্মুখে নিজের প্রতি এভাবে জেরা চালানোয় সামান্য ভ্রুকুটি করলো, বাবার প্রশ্নের উত্তর দিতে সে কোনোদিন বিলম্ব করেনি, তবে এবার মিথ্যে বলছে দেখে তার ভাবার জন্য সময় লাগলো। ভেবে টেবে কন্ঠ আরো বেশি গুরুগম্ভীর করে বললো,

” আসলে আমার এক বন্ধু সাইকিয়াট্রিস্ট, আমার মেন্টাল কন্ডিশন কেমন যাচ্ছে তা তো তুমি ভালো করেই জানো? হি ওয়ান্ট টু লিসেন মাই মেন্টাল প্রবলেম, তার সময় কম, আমাকে উঠতে হবে..মে আই?”

ছেলে নিজেই যেহেতু কথা পেড়েছে, সেহেতু রায়হান মাহমুদ সেই প্রসঙ্গই বাড়ালেন,

“মেন্টাল কন্ডিশন তো নিজেই ভালো করা যায়, শুধুমাত্র তোমার এক বাক্যই, ” আমি সব মেনে নিলাম ” নিজেকে এটা বলো। আর এটার মাধ্যমেই নিজের সব বেঠিক ঠিক হয়ে যেতে পারে”

রায়হান মাহমুদের একথা শুনে রাফসান একরাশ বিরক্তি নিয়ে বললো,

” বাবা, ইম্যাচিউরের মতো কথা বলো না তো, মুখে বললাম, আর সব ঠিক হয়ে গেলো! এত সহজ না। যে অথৈ সাগরে তুমি আমাকে ডুবিয়েছো, সেখান থেকে কূল হাঁতড়ে বের করা এত সহজ নয়। এনিওয়ে, তুমি তো আর সাইকিয়াট্রিস্ট না, যে সব বুঝবে? আমার সবটা শুনে সে আমাকে সি অফ করতে চেয়েছে, বুঝে শুনেই তো?”

রায়হান মাহমুদ একটা দ্বীর্ঘশ্বাস ফেলে ব্যাকুল স্বরে বললেন,

” আমি অথৈ সাগরে ডুবিয়েছি তোমাকে? ইউ নো? মানুষ মাত্রই অকৃতজ্ঞ, তা সে যেই হোক না, নিজের সন্তানই হোক না কেনো! ওকে, যাও, এজ ইউর উইশ”

রাফসান তার পিতার প্রশ্নগুলো একটারও কোনো উত্তর করলো না।

রাফসানকে গাড়ি করে চলে যেতে বলে দিয়ে রায়হান মাহমুদ আরেকজন ড্রাইভারকে রেস্টুরেন্টে আসার জন্য ফোন করে দিলেন তাকে এবং রানুকে নিয়ে যেতে।

রানু বি’মর্ষ চোখে রাফসানের চলে যাওয়ার পানে চেয়ে রইলো।

গাড়িতে চড়ে রাফসান চলে গেলো অজানার উদ্দ্যেশ্যে।
.
.
.

মাহমুদ’স প্যালেসে ছোটোখাটো হইচই পড়ে গেছে। রানুকে সাজানোর পরপরই মেহরোজ ব’মি করে অসুস্থ হয়ে গেছে। শায়লা ছুটে এসে সাহায্যকারীদের সহায়তায় তটিনিকে বিছানায় শুইয়ে দেয়।

মেহরোজের কক্ষে শায়লা, তটিনি, মলি মাহমুদ ও জলি মাহমুদ।

ডক্টর বাসায় এসে মেহরোজকে দেখে গেছে। প্রেসার হাই হয়ে রয়েছে।

মেহরোজ দু চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে,

শায়লা একগ্লাস লেমন জুস নিয়ে মেহরোজকে নরম স্বরে সুধাচ্ছে,

” রোজ, মাম্মি আমার, লেমন জুস টুকু খেয়ে নাও, ভালো লাগবে”

সামান্য উঠে মায়ের হাত থেকেই কয়েক চুমুক জুস খেয়েই সে পুনরায় শুয়ে পড়লো।

ফুপি মলি মাহমুদ বলে উঠলো সক্রোধে,

” ওই ফকিন্নির হাত- পা আর মুখ দেখে আমারই গা ঘিনঘিন করছিলো আর আমার মাম্মি রোজকে দিয়েছে ওরে সাজানোর, ছি: ওয়াক থু:, বড় ভাইয়ার আক্কেল দেখে বেক্কল হয়ে যাই!”

জলি মাহমুদ তার কথা কেড়ে নিয়ে বললো,

” দিন দিন বড় ভাইয়ের মাথা নষ্ট হচ্ছে, ঐ বজ্জাত মেয়েকে সাজানোর দায়িত্ব সে রোজকে দেয়? রোজ কি কোনো মেইক আপ আর্টিষ্ট নাকি ঐ ফকিন্নির চামচা? রোজকে দিয়েছে ঐ ফকিন্নিকে সাজাতে! ভাইয়ের অ’ত্যাচার তো বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে! ”

শায়লা এবার দু ননদকে থামিয়ে গর্জে উঠলো,

” আপা! আর আমার অসুস্থ ছেলেটাকেও জোর করে ঐ ফকিন্নির সাথে ঘুরতে নিয়ে গেছে, এতদিন তোমার ভাইয়ের আচরন নিয়ে কিছু বলিনি, তবে আজ আসুক আগে বাসায়, এর একটা বিহিত না করতে পারলে আমি…”

শায়লা রা’গে কাঁপতে লাগলো।

তটিনি তাকে মাথা ঠান্ডা করার পরামর্শ ছিলো।

” মাম্মি প্লিজ..থামো! আপুর রুমে এভাবে চেঁচিয়ে ওকে আরো বেশি অসুস্থ করো না!”

তটিনির বুদ্ধিমানের মতো কথা শুনে সকলে সে রুম থেকে বাইরে বেরিয়ে চলে গেলো।
.
.

নাজিম মাহমুদ তালুকদার, রায়হান মাহমুদের পিতা। আশির উপরে বয়স, হয়তো প্রায় নব্বইয়ের কাছাকাছি। আর মিতারা মাহমুদ তালুকদার। রায়হান মাহমুদের মা, তিনিও আশিতিস। দুজনেই নিজেদের ঘরের ব্যালকনিতে বসে বাইরের বিকেল বেলার প্রকৃতি দেখছেন। দুজনের হাতেই তসবি। প্রতিদিন এসময়টায় দুজনের সঙ্গি হন দুজনায়। দুজনে বসে নিজের অখন্ড অবসর এ সময়গুলোতে গল্প করেন এটা সেটা। ছোটো টেবিলে দুটো চায়ের কাপ। মিতারা মাহমুদ এ বয়সেও নিজের চা নিজেই করে খান, সাথে স্বামির টাও।

বয়সের কারনে তাদের বুদ্ধি ক্ষীন হলেও, তার শান্তিপ্রিয় পরিবারে যে কিছুদিন যাবত অশান্তি চলছে সে সম্পর্কে তারা দুজনেই অবগত।

নাতির হবু বধুকে নিয়ে তাদের দুজনেরই প্রথমে আপত্তি ছিলো। পরে যখন জানতে পারলো শুধু কিডনি নয়, মাঝে মাঝেই রাফসানকে র’ক্তও দেবে এই রানু। কারন রাফসানের কিডনি র’ক্ত পরিশোধনের ক্ষমতা আংশিক হারিয়ে ফেলেছে, আর রানুর কিডনি দেওয়ার পরো সেটা রাফসানের দেহের সাথে এডযাস্ট হতে কিছু সময় লাগবে। তাই বেশ কিছুদিন রাফসানকে বিরল ও নেগেটিভ র’ক্ত প্রদান করতে হবে।

দু প্রবীন যখন জানতে পারলেন, রানুর বাবা চায় যে রানু যেনো এই পরিবারে বউ হয়ে আসে। আর এ শর্ত সম্বলিত কাগজপত্রে সাইন করার পরেই তার মেয়ের কিডনি রাফসানের শরীরে প্রতিস্থাপিত হবে।

এসব বিস্তারিত শুনে নাজিম মাহমুদ তালুকদার বলেছিলেন,

” কদিন পরপর তো আর বাইরের মানুষের র’ক্ত দেওয়া ঠিক হবে না, তাই মেয়ের বাবা এক হিসেবে ঠিকই বলেছে, মেয়েকে আমাদের ছেলের হাতে তুলে দেওয়াই ঠিক হবে।”

মিতারা মাহমুদ তালুকদারও স্বামির সাথে তাল মিলিয়ে বলেছিলেন,

” আমাদের নাতি রাফসানের তো বাঁচার কোনো আশাই নেই, সে হিসেবে এই মেয়ের উছিলায় যদি রাফসান বেঁচে উঠে, তবে রাফসানের সাথে মেয়ের বিয়ে দেওয়াই ওর সবচেয়ে বড় পুরস্কার হবে, আর মেয়ের বাবা যেহেতু অতিশয় গরীব, তাই ওকে পঞ্চাশ লক্ষ টাকা আর একটা ফ্ল্যাট দিলেও আমাদের কোনো কমবে না বরং আত্মীয়র সাথে টাকাপয়সা অর্থবিত্তের কিছুটা সামঞ্জস্য আসবে। দরকার লাগলে ওর অন্য তিনটা মেয়ের বিয়ে আর একটা গাড়ীও ওকে দিয়ে দিও”

বাবা মায়ের এ ধরনের ইতিবাচক কথা শুনে রায়হান মাহমুদ রানুর বাবার শর্তে কালক্ষেপন না করেই রাজী হয়ে যান।

তবে আজ তারা নিজেদের ঘরে বসে থেকেই তার কণ্যাদ্বয় ও ছেলের বউয়ের চেঁচামেচি শুনেছেন।

তার পরিবার যে এক অজানা ঝড়ের কবলে পড়তে যাচ্ছে তার আগাম বার্তা পাচ্ছেন প্রবীণদ্বয়।

(চলবে)