ওগো বিদেশিনী পর্ব-০৮

0
126

#ওগো_বিদেশিনী
#পর্ব_৮
#সারিকা_হোসাইন

শান্ত স্নিগ্ধ হলুদ বিকেল।সূর্যের তেজ কমে ধরণী শীতল হয়েছে কিছুক্ষণ আগেই।থেকে থেকে বাতাসের দমকে দক্ষিণের জানালার ঘিয়ে রঙের আকাশি সুতার কাজের পাতলা পর্দা গুলো দুলে দুলে উড়ছে।মনে হচ্ছে রাতে বৃষ্টি হবে।

একটি নির্জন কক্ষে দুজন মানব মানবী দুজনের দিকে নিশ্চুপ হয়ে তাকিয়ে রয়েছে।
তাদের নিঃশ্বাসের শব্দ ছাড়া আর কিছুই শোনা যাচ্ছে না।
চোখের দৃষ্টি সরিয়ে রুমের আশেপাশে নজর বুলাতেই মানবীটি আশ্চর্যের চরমে পৌঁছে গেলো।
পুরোটা কক্ষ জুড়ে শুধু তারই বিভিন্ন ধরনের স্কেচ,পেইন্টিং,আধা পেইন্টিং ছড়িয়ে ছিটিয়ে কক্ষের পুরোটা দখল করে আছে।

মনের সাথে দ্বিধাদ্বন্দ্ব করে গলায় শক্তি সঞ্চয় করে রিনরিনে কন্ঠে বলে উঠলো

“আমার এতো গুলো ছবি কেনো এঁকেছেন আপনি”?

এগুলো তোমার ছবি?

“এগুলো কিভাবে তোমার ছবি হয়?”

‘এগুলো তো আমার বউয়ের ছবি”

সহজ স্বীকারোক্তি যুবকের।

ছেলেটির এমন ঠোঁট কাটা কথা শুনে লজ্জায় দুই কান গরম হয়ে উঠলো ক্যামেলিয়ার।

ময়না পাখির খাঁচার দরজা আটকাতে আটকাতে মাহাদ পাখিকে উদ্দেশ্য করে বললো

“বোকা পাখি তুই বেশি কথা বলিস ইদানিং।আমি আর একটু পরে এলেই এই দুনিয়ায় তোর খেল খতম হয়ে যেতো”

“আর কখনো এভাবে চিল্লাবি না, ঠিক আছে?
বিদেশিনী ম্যাডাম একদম পছন্দ করেনা এসব চিল্লাচিলি”!

কিছুক্ষণ আগের নিজের ডেসপারেট আচরণের কথা মনে পড়তেই ইতস্তত করে ক্যামেলিয়া মাথা নিচু করে কক্ষ ত্যাগ করার জন্য পা বাড়ালো।

হঠাৎই একটি গেছো ইঁদুর স্তুপ আকারে জমানো পেইন্টিং এর ভেতর থেকে চুক চুক শব্দ করতে করতে ক্যামেলিয়ার পায়ের কাছে চলে আসলো।

আকস্মিক এমন প্রাণীর আগমনে ক্যামেলিয়া ভয়ে লাফিয়ে বসে পড়লো।
এরপর মনস্টার মনস্টার করতে করতে দ্রুত হামাগুড়ি দিয়ে দিয়ে মাহাদের লম্বা লম্বা পায়ে অক্টোপাসের মতো প্যান্ট খামচে ধরে ঝুলে রইলো।

ঘটনাটি এতো দ্রুত ঘটলো যে,মাহাদ কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়লো।

ভয়ে ক্যামেলিয়ার জান বের হবার উপক্রম।

হঠাৎই তার ছোট বেলার একটি কথা মনে পড়লো।

তার মা বেঁচে থাকতে একটি ছোট ইঁদুর কে বাগে পেয়ে আদর করতে গিয়ে ক্যামেলিয়া তার হাতের কচি আঙুলে ইঁদুরের কামড় খেয়েছিলো।

এরপর সেখান থেকে প্রচুর ব্লিডিং হয়েছিল সাথে তাকে রেবিস এর ইনজেকশন নিতে হয়েছে।
যেদিন ইঁদুর তাকে কামড়ে ছিলো সেদিন রাতে ভয়ে আর ব্যাথায় ক্যামেলিয়ার জ্বর চলে এসেছিলো।

এরপর থেকে ইঁদুর এর প্রতি তার চরম ফোবিয়া তৈরি হয়ে গিয়েছে।
ইঁদুর দেখতে কিউট হলেও ক্যামেলিয়া আর কখনো ইঁদুরের সংস্পর্শে আসেনি।
ইঁদুর দেখলেই তার শরীর শিউরে ওঠে,পায়ে চিনচিনে ব্যাথা করে বল হারিয়ে ফেলে।

এহেন পরিস্তিতে মাহাদ হাসতেও পারছে না।আবার না হেসেও পারছে না।
ক্যামেলিয়ার এমন অবস্থা দেখে খুব কষ্টে হাসি চেপে মাহাদ কোনো মতে হেটে হেটে বিছানার কাছে এসে বসে পড়লো।

এরপর ক্যামেলিয়া কে পা থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতেই ক্যামেলিয়া চোখ বন্ধ করে মাহাদের পা কে আরো শক্ত করে জাপ্টে ধরলো।

অগত্যা মাহাদ বলে উঠলো

“এরকম ভাবে যদি বুকে এসে জড়িয়ে ধরতে তাহলেই না শান্তি পাওয়া যেতো বউ।”

এমন সিচুয়েশনে লোকটির এমন অসভ্য কথা শুনে ক্যামেলিয়ার ভয়ে ফ্যাকাশে হওয়া মুখ রক্তিম বর্ন ধারণ করলো।

তবুও সে পা ধরেই বসে আছে।

কীভাবে ক্যামেলিয়া দরজা পর্যন্ত যাবে?

ওই জঘন্য প্রাণীটি যদি আবার এসে পায়ে কামড়ে ধরে?

বহু কষ্টে ক্যামেলিয়া ভেঙে ভেঙে চোখ বন্ধ করে মাহাদের পা জড়িয়ে বলে উঠল

“যে কোনো ভাবে আমাকে উঁচু করে ধরে দরজা পার করে দিন প্লিজ,এরপর আমি হেটে হোক,হামাগুড়ি দিয়ে হোক,আর দৌড়ে হোক,টুসীদের কাছে চলে যাবো।”

ক্যামেলিয়ার এমন আবদারে মাহাদ তার দীর্ঘক্ষণ ধরে আটকে রাখা হাসি প্রাণ খুলে হেসে উঠলো।

যেই মাহাদ একা দুইটি করে যুদ্ধ বিমান এক টার্গেটেই আকাশ পথে মিসাইল ছুড়ে ভস্ম করে দিতে পারতো কোনো ভয়ভীতি হীন ভাবে তার হবু স্ত্রী,প্রাণেশ্বরী একটা পাঁচ ইঞ্চি গেছো ইঁদুর দেখে ভয়ে কুপোকাত!

আবার হো হো করে হেসে উঠলো মাহাদ।
এরপর ক্যামেলিয়ার দিকে দৃষ্টি দিয়ে তার ভীতি মিশ্রিত চেহারা দেখে মনে মায়া হলো।

নিজেকে নিজেই বুঝালো সবার মনোবল এক নয়।যেখানে কিছু মানুষ তেলাপোকা দেখলেই ভয়ে আধমরা হয় সেখানে ইঁদুর বিশাল বড় বিষয়।

এরপর মাহাদ তার পিঠ ইশারা করে বলে উঠলো

“গলা জড়িয়ে পিঠে উঠতে পারবে?

ক্যামেলিয়া অপরাধী ছোট বাচ্চার ন্যায় মাথা উপর নিচ করে বললো

“হ্যা পারবো,তার আগে আমাকে আপনার পা সমেত বিছানায় তুলুন।
আমি মেঝেতে পা রাখতে পারবো না”

আমার পায়ে কোনো শক্তি নেই।মনে হচ্ছে জ্ঞান হারাবো।প্লিজ মাহাদ ভাই আমাকে বাঁচান।
না হলে আমি সারাদিন এভাবেই আপনার পা জড়িয়ে ঝুলে থাকবো।

মাহাদ ফিক করে হেসে দিয়ে দাঁড়িয়ে ক্যামেলিয়া কে সহ পা বিছানায় তুলতে তুলতে ক্যামেলিয়া কে জিজ্ঞেস করলো

“ওজন কতো তোমার?

“মাথা নিচু করে ক্যামেলিয়া জবাব দিলো “উনচল্লিশ”

মাহাদ বিজ্ঞের ন্যায় মাথা নেড়ে বলে উঠলো

“হুম আন্ডার ওয়েট,এজন্যই পায়ে কোনো কিছুর উপস্থিতি বুঝা যাচ্ছে না।

বিছানায় পা তুলতেই ক্যামেলিয়া মাহাদের পা ছেড়ে দাঁড়িয়ে গেলো।

এরপর মাহাদ অসহায়ের মতো প্রশ্ন করলো

“এখনই চলে যাবে?

ক্যামেলিয়া একবাক্যে উত্তর দিলো

হু”

“আরেকটু থেকে গেলে হয়না?”

“আরেকটু থাকা তো দূর ভবিষ্যতে আর কখনো এই রুমেই আসবো না”

“যদি হ্যামিলনের বাঁশি ওয়ালা হয়ে সব ইঁদুর মে*রে ফেলি??”

“তখন ভেবে দেখবো,এবার আমায় বাইরে পৌঁছে দিন প্লিজ”
বলেই চোখ বন্ধ করে ঠোঁট কামড়ে ধরলো ক্যামেলিয়া।

মাহাদ ফুঁস করে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ক্যামেলিয়ার দিকে পিঠ ঘুরিয়ে বললো

“গলা জড়িয়ে ধরো”

ক্যামেলিয়া দুরুদুরু বুকে মাহাদের গলা জড়িয়ে পা দিয়ে কোমড় আকড়ে ধরলো।

মাহাদ ফিচেল হেসে ক্যামেলিয়া কে নিয়ে বাইরে আসতেই

টুসি আর সুজানা চোখ বড় বড় করে ওদের দুজন কে দেখতে লাগলো।

দুজনেই পলক ফেলে চোখ কচলে একজন আরেক জনকে চিমটি কাটলো।

সুজানা কিছু বলতে নেবে তার আগেই মাহাদ গমগমে কন্ঠে বলে উঠলো

“যা ভাবছিস তা মোটেও নয়।এই বিষয়ে কোনো টু শব্দ করলে গালের খাল রাখবো না বলে দিলাম।”

বলেই হনহন করে ক্যামেলিয়া কে সুজানার রুমে নামিয়ে দিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলো মাহাদ।

টুসি আর সুজানা কে একই জায়গায় স্ট্যাচুর মতো দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আবার ধমকে উঠলো

“কি বেয়াদবি হচ্ছে এখানে?

“যা নিজেদের রুমে যা,ফাজিল কোথাকার”

দোষ হীন অপমানিত হয়ে টুসি আর সুজানা ঠোঁট ফুলিয়ে নিজেদের কক্ষে প্রবেশ করলো।

ক্যামেলিয়া কে কিছু জিগ্গেস করে বিব্রত করতে চায়না তারা।

তারচে বরং মেয়েটা যদি নিজে থেকেই তার ভাইয়ের লাইফে সেট হয়ে যায় এর চেয়ে বড় পাওয়া আর কি হতে পারে?

সুজানা নিজ চোখে দেখেছে তার ভাইয়ের চোখে মেয়েটার জন্য নিখাদ ভালোবাসার আকুতি।

মাহাদের কাছে ক্যামেলিয়া অনেক শখের একটা মানুষ।আঠারোটি বছর ধরেই মাহাদ নিজেকে উজাড় করে ক্যামেলিয়া কে নিজের বউ ভেবে ভালোবেসে এসেছে।

কতো সুন্দরী মেয়ে মাহাদের ভালোবাসা পাবার জন্য পাগলামি করেছে মাহাদ তাদের দিকে দৃষ্টি মেলেও দেখেনি।

অথচ মাহাদ ক্যামেলিয়ার ছবি দেখেই দিনের পর দিন ভালোবেসে এসেছে।

মানুষ বলে
“কায়া দেখলে নাকি মায়া বাড়ে”
সুজানার কাছে কথাটি সম্পুর্ন ভুল মনে হয়।কারন তার ভাই ক্যামেলিয়াকে স্বশরীরে সেভাবে দেখার সুযোগ ই পায়নি।

তবুও মাহাদ হৃদয় উজাড় করে ক্যামেলিয়া কে ভালোবেসে গিয়েছে বছরের পর বছর ধরে।

কিন্তু ক্যামেলিয়া যখন তার দেশে ফিরে যাবে তখন আর ভাইয়ের কি হাল হবে?
আর ক্যামেলিয়ার চিকিৎসাই বা কিভাবে পরিপূর্ণ হবে?

নাহ আর ভাবতে পারেনা সুজানা,এতো ছোট মাথায় এতো বড় বড় টেনশন কুলোয় না।

এতো চিন্তাভাবনার মাঝে হঠাৎ ই টুসি বলে উঠলো
“আপু চলোনা আজ আমরা বাইরে খেতে যাই।

“রিজভীর জন্য অনেক দিন বাহিরে খাওয়া হয়না।
সে শুধু সারাদিন নোংরা,জীবাণু,আন হাইজেনিক,সময়জ্ঞান এসব নিয়ে জ্ঞান দিতে ব্যাস্ত থাকে।

টুসীর কথাকে গুড আইডিয়া জানিয়ে সুজানা ক্যামেলিয়া কে ডেকে উঠলো

“বাইরে ঘুরতে যাবে আমাদের সাথে ক্যামেলিয়া?”

সুজানার এমন আদরীয় ডাক উপেক্ষা করতে পারলো না ক্যামেলিয়া।

মিনমিন স্বরে বলে উঠলো
“আচ্ছা যাবো”

গুগল ঘেঁটে ঘেঁটে সুজানা আর টুসি অনেক গুলো চাইনিজ কুইজিন রেস্টুরেন্ট বের করলো।
এরপর কোনটার চাইতে কোনটার সৌন্দর্য বেশি আর খাবারের মান ভালো তার রিভিউ দেখলো।

খুঁজে খুঁজে একটা সুন্দর ডেকোরেটেড ও সাজানো রুফটপ যুক্ত রেস্টুরেন্ট পেলো কিন্তু তার খাবারের দাম খুব হাই।

নিজেদের যা সেভিংস আছে তাতে তিনজনের খাওয়া হবে না।

ক্যামেলিয়া তাদের অতিথি তাকে স্পেশাল ট্রিট দেয়া জরুরি।
কিন্তু মানি ক্রাইসিস।

আঙুলের নখ কামড়ে লাল চামড়া বের করে ফেললো সুজানা।

অবশেষে তার মিলিওনার ভাই এর কথা মনে পড়তেই টাকা আদায়ের বুদ্ধির বাত্তি জ্বলে উঠলো।

******
মাহাদ তার রুমে এসে কোনোভাবেই হাসি থামাতে পারছে না।থেকে থেকে লজ্জায় তার নাকের ডগা লাল হয়ে উঠছে।

যেই মেয়েকে একটু ছুঁয়ে দেখার আকাঙ্খা দীর্ঘ বছরের সেই মেয়েই তাকে আজ ছুঁয়ে দিয়েছে।
মাহাদের কাছে মনে হয়েছে মেয়েটি আস্ত এক তুলার বস্তা।
যেমন হালকা তেমন তুলতুলে।

মেয়েটির শরীরে মাতাল করা কস্তুরীর ঘ্রাণ রয়েছে যা মহাদকে বার বার বেসামাল করে তুলেছিল।

“আচ্ছা এই তুলার বস্তা যদি মাহাদের না হয়!তবে কি মাহাদ বাঁচবে?

এমন অশনি কথা মনে জাগতেই ভয়ে মাহাদের বুক কেঁপে উঠে।

এই মেয়েকে নিজের করে পেতে প্রয়োজন পড়লে মাহাদ তামাম দুনিয়া এক করে ফেলবে।

তবুও তার ক্যামেলিয়া কেই চাই।

হঠাৎই দরজায় নকের শব্দ হলো।

ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করলো মাহাদ।

“ভাইয়া আসবো?
ভদ্র মেয়ের মতো অনুমতি চাইলো সুজানা।

“আয়” গাম্ভীর্য কন্ঠে জবাব দিলো মাহাদ।

সুজানা ভেতরে প্রবেশ করে ইতস্তত করে হাত কচলে বলে উঠলো

“আমরা বাইরে খেতে যেতে চেয়েছিলাম,যদি কিছু টাকা,,,,,,

সুজানা কথা শেষ করার আগেই মাহাদ বলে উঠলো

“তোর ভাবি রাজি হয়েছে?”

সুজানা মাথা ঝাকিয়ে হ্যা বোধক উত্তর দিলো।

“আচ্ছা যা রেডি হ,আজকের ট্রিট আমার পক্ষ থেকে ।যা খেতে চাইবি তাই খাওয়াবো।

সুজানা খুশিতে গদগদ হয়ে বলে উঠলো

“তুমি যাবে আমাদের সাথে?

মাহাদ ফ্রেশ হবার জন্য গলায় একটা ছোট টাওয়েল ঝোলাতে ঝোলাতে বলে উঠলো

“বউকে একা ছাড়া যাবেনা তোদের সাথে।তোরা ওর খেয়াল রাখতে পারবি না।

বলেই দ্রুত ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো।

সুজানা আনন্দে চিল্লিয়ে উঠলো―

“ইউ আর দ্যা বেস্ট ভাইয়া”

******

টুসি আর সুজানার মধ্যে মেকআপের কম্পিটিশন চলছে।কে কার থেকে বেশি সুন্দরী হবে আজ।
ছবি তুলতে তুলতে গ্যালারি ভরে ফেলবে তারা আজকে।
পড়াশোনার চাপে,পরিবারের মানুষের ব্যাস্ততার কারনে লাস্ট কবে বাইরে খাওয়া হয়েছিলো মনেই নেই তাদের।

এদিকে ক্যামেলিয়া সাজসজ্জা হীন ভাবে গায়ে একটা সাদা টিশার্ট এর সাথে জিন্স রোমপার্স পড়ে সাদা স্নিকার্স পরে নিলো।চুল গুলো পনিটেইল স্টাইলে বেঁধে সামনের ছোট চুল গুলো সেট করে ঠোঁটে হালকা গোলাপি লিপ গ্লস দিয়ে টুসি আর সুজানার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো।

কথায় আছে ,

সুন্দরী মেয়েদের সৌন্দর্য অতিরিক্ত মেকআপে ঢাকা পড়ে
টুসি আর সুজানার ক্ষেত্রেও তাই হলো।

নিজেদের চকচকে স্নিগ্ধ সৌন্দর্য তারা মেকআপের কৃত্তিম রঙে ঢেকে ফেলেছে।
তাদের এখন মেকআপ সুন্দরী বই আর কিছুই লাগছে না।

এদিকে মাহাদ একুয়া ব্লু রঙের একটি শার্ট গায়ে জড়িয়ে ব্যাগী হোয়াইট প্যান্ট পরে স্নিকার্স এর ফিতা গুলো বেঁধে নিলো।
চুল গুলো জেল দিয়ে অভিনব কায়দায় সেট করে হাতে একটা কালো ফিতার ঘড়ি পরে বাইরে বেরিয়ে এলো।

ড্রয়িং রুমে এসে একে একে উপস্থিত হয়েছে টুসি, সুজানা,আর ক্যামেলিয়া।

একটু পর বাসার হেল্পিং হ্যান্ড কোহিনুর কে দেখা গেলো
সুন্দর একটি জামা পড়ে হালকা সাজে তৈরি হয়ে তাদের সাথে সামিল হতে।
মোটেও মেয়েটিকে সাধারণ কোনো কাজের মেয়ে মনে হচ্ছেনা।

এই বাসার মানুষ তাকে কিভাবে ট্রিট করে এটা তার সাজসজ্জা আর বেশভূষা দেখেই অনুমান করা যাচ্ছে।

কোহিনুর কে দেখেই চোখ টিপলো টুসি আর সুজানা।

এর পর সুজানা তাড়া দেখিয়ে বলে উঠলো চল সবাই ।

মিসেস মিতালীর থেকে বিদায় নিয়ে বাইরে বের হতেই দেখতে পেলো মাহাদ গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছে।

সুজানা টুসি আর কোহিনুর হুড়মুড় করে গাড়ির পেছনের সিটে বসে গেলো।

ক্যামেলিয়া গাড়ির কাছে এসে দেখলো তার বসার কোনো স্থান নেই।

টুসি সিরিয়াস ভঙ্গিতে বলে উঠলো

“সমস্যা না থাকলে একটু সামনে বসে যা প্লিজ,মাত্র দশ মিনিটের রাস্তা।

আর মাহাদ ভাই তো তোকে খেয়ে ফেলবে না তাইনা?

মাহাদের পাশের সিটে ক্যামেলিয়ার বসে যেতে কোনো আপত্তি নেই।তবে লোকটি সাংঘাতিক ঠোঁটকাটা।

অবশেষে কোনো উপায় না পেয়ে মাহাদের পাশের সিটে বসে পড়লো ক্যামেলিয়া।

মাহাদ ক্যামেলিয়ার দিকে দৃষ্টি তুলে মুগ্ধ নয়নে ক্যামেলিয়ার দিকে কতক্ষন তাকিয়ে থাকলো সে নিজেও জানেনা।

ক্যামেলিয়ার সৌন্দর্য উপভোগ করে শুকনো ফাঁকা ঢোক গিললো মাহাদ।

এরপর পেছনে ফিরে সকলের উদ্দেশ্যে অসহায় বদনে বলে উঠলো
―সবাই যার যার মতো কালেমা পড়ে তওবা করে নে।
“গাড়ি এ*ক্সি*ডে*ন্ট হবার সম্ভাবনা নিরাব্বই দশমিক নয় নয় পার্সেন্ট।

#চলবে