#ওগো_বিদেশিনী
#পর্ব_২৪
#সারিকা_হোসাইন
______
বিমান টেক অফ এর আর মাত্র কিছু সময় বাকি আছে।
যাত্রীরা অধীর আগ্রহে কখন বিমান উড্ডয়ন করবে তার প্রতীক্ষা গুনছে।
কেউ তার প্রিয়জন ছেড়ে দূরে যাবার বেদনায় চোখের জল লুকাচ্ছে কেউ বা আবার প্রিয়জনের কাছে যাবার উত্তেজনায় খুশিতে অপেক্ষার প্রহর গুনছে।
ক্যামেলিয়াও তাদের মধ্যে একজন।
সে তার বাবা মায়ের কাছে যাবার জন্য ব্যাকুল হয়ে আছে।
নিজের বাড়ি,নিজের একটা ছোট ঘর,নিজের অতি আপন বাবা―মা।
এখানে কেনো সে এসেছিলো এটা তার অজানা।
এখানকার কেউ তার পরিচিত নয়।
“.তবুও কেনো সে এই মানুষগুলোর সাথে মিশেছে থেকেছে?”.
নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করে কোনো উত্তর পায়না।
“আর ওই মানুষটা কে,?
“যার চোখে মুখে বেদনার ,অপ্রাপ্তির নীল কষ্টের ছাপ?
মানুষটার জন্য কোথাও না কোথাও ক্যামেলিয়ার মনে সূক্ষ্ণ ব্যাথার সৃষ্টি হয়েছে।
লোকটির অসহায় ঝাপসা মুখচ্ছবি বার বার মনের ক্যানভাসে ভেসে উঠছে।
কিন্তু লোকটি কে হয় তার,?
“আর তার জন্য এতো খারাপ কেনো লাগছে?
ক্যামেলিয়ার ভাবনায় ভাটা পড়লো হঠাৎ ফ্লাইট এনাউন্স মেন্টে।
সাবলীল সুন্দর মনে দোলা লাগানোর মতো গভীর ব্যারিটোন ভয়েসে ।
“লেডিস এন্ড জেন্টলম্যান, বয়েজ এন্ড গার্লস”
“দিস ইজ ইউর ক্যাপ্টেন ফ্রম দা ফ্লাইট ডেক”
“টুডে ইজ এ ভেরি স্পেশাল ডে ফর মি।
‘বিকজ টুডে আই হ্যাভ মাই লাভলী ওয়াইফ এজ মাই ট্রাভেল কমপ্যানিয়ন অন ডিস ফ্লাইট।
ক্যাপ্টেন এর এনাউন্স শুনে সকলেই নড়েচড়ে উঠলো।
কিছু মেয়েদের মনে এমন চিন্তা ভাবনা এসে ভর করলো―
“যার ভয়েস এতো সুন্দর সে দেখতে না জানি আরো কতো সুন্দর।
কিছু কিছু যাত্রী ক্যাপ্টেন এর স্ত্রী কে?
তা জানার জন্য উদ্বিগ্ন হয়ে উঠলো।
যাত্রীদের মধ্যে হঠাৎই হৈচৈ শুরু হয়ে গেলো।
চারজন কেবিন ক্রু প্রত্যেক কে শান্ত করার জন্য মিষ্টি কন্ঠে অনুরোধ জানালো।
কিন্তু যাত্রীরা স্থির হয়ে বসতে পারছে না।
নিজেদের যাত্রা শুভ আর আনন্দ পূর্ন করার জন্য হলেও এই ক্যাপ্টেন আর তার স্ত্রীকে এক পলকের জন্য দেখা চাই।
সাবলীল সুন্দর মনে দোলা লাগানোর মতো গভীর মাতাল নেশা জাগানো কন্ঠস্বর আবার ভেসে উঠলো
“তোমার চলে যাবার বিরহ আমি খুব করে কাটিয়ে নেবো।তোমার এই সাময়িক দূরত্ব আমাকে খুব পোড়াবে কিন্তু আমার মনের গভীরে তোমার যেই বসবাস তা সেই পোড়া ক্ষতকে সারিয়ে দেবে।
“দেহের দূরত্ব কোনো দূরত্ব নয়।
“তুমি যতো দূরেই যাওনা কেনো আমি ছায়ার মতো তোমার পাশে পাশে চলবো।
“লাভ ইউ ক্যামেলিয়া”
এনাউন্সমেন্ট শেষ হতেই সকল যাত্রীর করতালিতে ইকোনমি ক্লাস মুখরিত হলো।
সকল যাত্রী ক্যাপ্টেন এর দর্শন পাবার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠলো।
এদিকে ক্যামেলিয়া তার নিজের নাম শুনে নির্বাক হয়ে নানান ভাবনা ভাবতে থাকলো।কিন্তু ভাবনার কোনো কুল কিনারা পেলো না।
কন্ঠস্বর টি তার খুব চেনা মনে হচ্ছে।কিন্তু কণ্ঠটি কার কিছুতেই মনে করতে পারছে না সে।
এদিকে অশান্ত যাত্রীদের থামাতে না পেরে ক্যাপ্টেন এর কাছে খবর পৌঁছানো হলো ।
কোনো উপায় না পেয়ে যাত্রীদের শান্ত করতে ককপিট ছেড়ে ক্যাপ্টেন যাত্রীদের সামনে আসলেন।
স্বশরীরে এমন স্মার্ট আর সুদর্শন ক্যাপ্টেন কে দেখে সকলের মুখ হা হয়ে গেলো।
সকলের সামনে এসে ক্যাপ্টেন মুখে মিষ্টি হাসি ঝুলিয়ে বলে উঠলো;―
ডিয়ার প্যাসেঞ্জার্স ইটজ ক্যাপ্টেন মাহাদ চৌধুরী।
নাইস টু মিট ইউ অল।
কেউ কেউ ফোন বের করে মাহাদের ছবি তুলতে ব্যাস্ত হয়ে গেলো।আবার কেউ কেউ ভাবতে লাগলো―
“কে সেই ক্যাপ্টেন এর লাকি ওয়াইফ?”
সকলেই মাহাদ কে অনুরোধ করলো তার স্ত্রী কে দেখাতে।
সকল যাত্রীর মধ্যে দৃষ্টি ভেদ করে ক্যামেলিয়ার দিকে আহত দৃষ্টি ফেললো মাহাদ।
কানে হেডফোন গুঁজে চোখ বন্ধ করে কোলের উপর দু হাত গুটিয়ে সিটে হেলান দিয়ে আছে ক্যামেলিয়া।
এক নিমিষের ব্যাবধানে যোজন যোজনের দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে মাহাদ আর ক্যামেলিয়ার মধ্যে।
যেই ক্যামেলিয়া মাহাদের সাময়িক দূরত্বে পাগলের মতো কেঁদেছে আজ সে নিজেই দূরত্বের কঠিন দেয়াল তুলে দিয়েছে।
মাহাদ নামক অস্তিত্বই বিলীন হয়ে গিয়েছে তার মধ্য থেকে।
মুহূর্তেই মাহাদের চোখ থেকে খসে পড়লো অশ্রু দানা।
পকেট থেকে কালো রোদ চশমা চোখে লাগিয়ে ভেজা কন্ঠে সকলের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো―
“শী ফোরগট মি।
কথাটি বলেই আর একমুহূর্ত দেরি না করেই গটগট পায়ে চলে গেলো মাহাদ।
মাহাদের অসহায় অবস্থা সকল যাত্রীদের মনে নাড়া দিলো।
“মানুষ সব দিকেই সুখী হয়না বলে যাত্রীরা আফসোস করতে লাগলো।
মিনিট পাঁচেক পরেই দ্বিতীয় এনাউন্সমেন্ট ভেসে উঠলো
“লেডিস এন্ড জেন্টলম্যান ইটজ ইউর ফ্লাইট ক্যাপ্টেন মাহতিম মর্তুজা।
“উই আর ক্লিয়ার্ড ফর টেইক অফ।
এর পর মাহতিম মর্তুজা ওয়েদার ফোরকাস্ট, ফ্লাইট টাইম,কতো ফিট উপরে কতো কিলোমিটার বেগে প্লেন চালাবে সব ক্লিয়ার করে লাইন কেটে দিলো।
যাত্রীরা তাদের গন্তব্যে পৌঁছনোর জন্য নিজেদের প্রস্তুত করে নিলো।
হঠাৎই ক্যামেলিয়ার অজানা কারণে মন ভার হলো।না চাইতেও টুপ করে চোখ থেকে ভারি বর্ষণ হতে লাগলো।
এমন বিষণ্নতার কোনো কারণ আন্দাজ করতে পারলো না ক্যামেলিয়া।
এয়ার হোস্টেজ সকলকে মিষ্টি করে অনুরোধ জানালেন সকল প্রকার নেটওয়ার্ক যুক্ত ডিভাইস বন্ধ করতে।
সকল যাত্রী একত্রে তাদের ডিভাইস গুলো নেটওয়ার্ক এর বাইরে নিয়ে এলো।
_______
টেইক অফ এর পূর্ব মুহুর্তে প্লেন ঝাকুনি দিয়ে উঠলো।
ভয়ে ক্যামেলিয়া পাশে থাকা সুদর্শন এক যুবকের হাত খামচে ধরলো।
ছেলেটি তড়িৎ গতিতে ক্যামেলিয়া কে ভয় না পেতে আশস্ত করলো।
ছেলেটির মুগ্ধ দৃষ্টির দিকে তাকিয়ে ক্যামেলিয়া কিছু ভাবতে চেষ্টা করলো।কিন্তু কিছুঁই মনে পড়লো না।
রান ওয়েতে প্লেন রানিং হতেই নিজেকে ধাতস্থ করে যুবকের থেকে হাত সরিয়ে নিলো ক্যামেলিয়া।
মৃদু অস্ফুট স্বরে “সরি” বলে হাত গুটিয়ে নিলো।
যুবকটি ক্যামেলিয়া কে কিছু প্রশ্ন করতে চাইলো
কিন্তু তার আগেই ক্যামেলিয়া চোখ বুজে পুনরায় সিটে হেলান দিলো।
প্লে লিস্ট থেকে হঠাৎই ক্যামেলিয়ার কানে এক অদ্ভুত স্বরধ্বনি ভেসে এলো।
“আমি ক্যামেলিয়া মেহরিন।
আমার বাবা নাফিজ হাসান,মা এমিলি।
তারা আমাকে টাটা বাই বাই দিয়ে এই পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছে।
সুইজারল্যান্ডে আমার জন্ম হলেও ওখানে এখন কিছুই নেই আমার।আমাকে যেকোনো মূল্যে বাংলাদেশের নাগরিক হতেই হবে।
কারন এখানে কেউ একজন রয়েছে যাকে আকড়ে ধরে আমি পরম শান্তিতে শ্বাস নিতে পারবো।
আমার সেই শান্তির জায়গাটা হচ্ছে ক্যাপ্টেন মাহাদ চৌধুরী।
ক্যাপ্টেন মাহাদ চৌধুরী কে আমি আমার নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসি।
মাহাদ আমার স্বামী।
আমার পারসোনালিটি ডিসওর্ডার এর মনোরোগ রয়েছে।
সাইকিয়াট্রিস্ট বলেছে আমি যদি আরো অসুস্থ হয়ে পরি তাহলে যখন তখন আমার অতীত বর্তমান সব ভুলে যাবো,এমনকি নিজের নাম পর্যন্ত।
আমি কবে সুস্থ হবো এটার কোনো গ্যরানটি নেই।
ভালোবাসা,যত্ন,ভীতিহীন পরিবেশ আমার একমাত্র মেডিসিন।
মাহাদ হচ্ছে আমার সেই মেডিসিন।”
“মাহাদের বুকে আমি শান্তিতে নির্ভয়ে শ্বাস নিতে পারি।”
“আমি তাকে কখনো ভুলতে চাইনা।”
উপর ওয়ালার কাছে আমি কখনো কিছুই চাইনি।”
“কিন্তু আমি এখন খুব খুব খুউব করে চাই যে,
“আমি আমার অস্তিত্ব ভুলে গেলেও মাহাদ, আমার ভালোবাসার মানুষ,আমার প্রাণ প্রিয় স্বামী,আমার ভালো থাকার মেডিসিন সে যেনো আমার মন থেকে,মস্তিষ্ক থেকে কখনো হারিয়ে না যায়।,””
অডিওটি শেষ হতেই চোখ মেলে তাকালো ক্যামেলিয়া।
নিজের ফোনে নিজের কণ্ঠস্বরে এমন নিগূঢ় সত্য জানতে পেরে চোখ থেকে মোটা মোটা অশ্রু ফোটা ঝরতে লাগলো।
পাশে থাকা যুবক ভ্রু কুঁচকে বিচলিত হয়ে ভরাট খাদে ফেলা কন্ঠে বলে উঠলো
“আর ইউ ওকে?
যুবকের দিকে অশ্রুভেজা দৃষ্টি মেলে ভাঙা ভাঙা স্বরে ক্যামেলিয়া বলে উঠলো
“ক্যাপ্টেন মাহাদ ইজ মাই হাজব্যান্ড বাট আই ফরগট হিম।
বলেই অডিও রেকর্ড টা পাশের যুবক কে পুরোটাই শোনালো।
রেকর্ড শুনে যুবক দুই ঠোঁট গোল করে ফুঁস করে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।
এরপর একটা পানির বোতল এগিয়ে দিয়ে বলে উঠলো
“প্লিজ ডোন্ট ক্রাই, জাস্ট রিল্যাক্স ওকে?
দুই হাতের করপুটে ক্যামেলিয়া তার মুখ ঢেকে নিরবে ফুঁপিয়ে কেঁদে যাচ্ছে।
ছেলেটি ক্যামেলিয়া কে একটু শান্ত করার চেষ্টা করলো।
এরপর মুখে স্মিত হাসি ঝুলিয়ে বলে উঠলো
“মিসেস ক্যামেলিয়া ডো ইউ রিমেম্বার হিম?
কথাটি বলেই যুবক গভীর দৃষ্টিতে ক্যামেলিয়ার মুখ পানে তাকিয়ে রইলো।
ক্যামেলিয়া দ্রুত মাথা নাড়িয়ে বলে উঠলো
“নো”
“তাহলে আপনি কাঁদছেন কেনো?
“আমার রোগের কারণে আমি তাকে ভুলে গিয়েছি হয়তো সত্যি ই সে আমার জীবনে কোনো সময় ছিলো।
আর আমি যেই দেশে আমার বাবা মা বাড়ি ঘর সব আছে ভেবে যাত্রা শুরু করেছি আসলে সেখানে আমার কিছুই নেই।
আমি অজানায় সফর শুরু করেছি।
গন্তব্যহীন যাত্রা”
ছেলেটি ক্যামেলিয়া কে কিছু শান্তনা মূলক বাণী ছুড়ে উঠে দাঁড়ালো।
এরপর সামনের দিকে অগ্রসর হলো।
________
মাহাদ আর ইউ ওকে?
“নো আম নট ওকে।
মর্তুজা মাহাদকে শান্তনা দেবার আর কোনো ভাষা খুঁজে পেলো না।
মাহাদ আর মর্তুজা প্রায় চার বছর ধরে একত্রে অনেক গুলো ফ্লাইট করেছে।
ক্যামেলিয়াই ছিল মাহাদের সব ধরনের কথার কেন্দ্রবিন্দু।
মেয়েটি আজ তাকে চিনতে পারছে না।
মাহাদের পুরো অস্তিত্ব জুড়ে মেয়েটির বসবাস।
মাহাদ বিধ্বস্ত হবে এটাই স্বাভাবিক।
হঠাৎই ককপিট কন্ট্রোল রুমের দরজা টেনে ভেতরে প্রবেশ করলো কো পাইলট রায়াফ এহতিম।
মাহাদ কে উদ্দেশ্য করে গমগমে কন্ঠে বলে উঠলো
“ডুড তোর বউয়ের কাছে তুই যা,বেচারি খুব কাঁদছে।তার কান্না দেখে আমার কন্ট্রোল হারিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছে।
মাহাদ রক্তচক্ষু নিয়ে রায়াফের দিকে তাকাতেই রায়াফ ফাঁকা ঢোক গিলে বলে উঠলো
“যা ভাবছিস তা নয়।মেয়েটি খুব কাঁদছে।প্লিজ ড্রেস চেঞ্জ করে চলে যা।
ক্লিপ বোর্ডে আটকানো সকল ফ্লাইয়ং নির্দেশ মর্তুজার কাছে দিয়ে ককপিট অটো মুডে দিয়ে উঠে দাঁড়ালো মাহাদ।
মাহাদ উঠতেই রায়াফ বসে গেলো ।
মাহাদ হনহন করে পাশের ক্যাপ্টেন কেবিনে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে নিলো।
কা/টা ক্ষ/ত গুলো এখনো শুকায়নি তার ।
নিজের ড্রেস পাল্টে নরমাল পোশাক পরে মুখে মাস্ক লাগিয়ে মাথায় কালো ক্যাপ পরে বেরিয়ে এলো মাহাদ ।
এরপর ধীরে সুস্থে দুরু দুরু বক্ষে ক্যামেলিয়ার সিটের দিকে এগুতে লাগলো।
ক্যামেলিয়া দুই হাত দিয়ে মুখ ঢেকে কেঁপে কেপে কেঁদে উঠছে।
মাহাদ নীরবে পাশের সিটে বসে বুকে হাত গুঁজে ক্যামেলিয়ার পানে অনিমেষ তাকিয়ে রইলো।
মেয়েটিকে পরম আদরে বুকে টেনে নেবার জন্য বুকটা খাঁ খাঁ করে উঠলো।
নিজেকে নিজেই ভৎসর্না করে শুকনো হাসলো মাহাদ।
“তোর মতো অভাগা আর কজন আছে?
“নিজের বউকে অনুমতি বিহীন ছোবার অধিকার হারিয়েছিস।
হঠাৎই কুহু আর শাহানার কৃত দুর্যোগ মনে পড়তেই রাগে চোয়াল শক্ত হয়ে এলো মাহাদের।
পারলে এখুনি প্লেন থেকে নেমে দুটোকে খু/ন করে কুমির দিয়ে খাওয়াতো মাহাদ।
মাহাদের সাজানো ফুলের বাগানে দুষ্ট দৈত্যের ন্যায় এসে আগুন জ্বালিয়ে ছারখার করে দিয়ে চলে গিয়েছে জানোয়ার দুটো।
রাগ যখন তুঙ্গে তখন নিজেকে ঠান্ডা করতে মাহাদ নিজের ফোন থেকে ক্যামেলিয়া কে জড়িয়ে ধরে চুমু খাবার একটি ছবি বের করে দেখতে লাগলো।
ক্যামেলিয়ার লজ্জা জড়িত স্নিগ্ধ মুখশ্রী মাহাদকে দুনিয়ার সকল কষ্ট ভোলাতে ম্যাজিকের মতো কাজ করে ।
মুহূর্তেই মাথা তুলে ক্যামেলিয়া পাশে নজর দিতেই সেই ছবিটি দেখে অসহায় হয়ে তাকিয়ে রইলো।
“তার ছবি এই যুবকের কাছে কিভাবে এলো?
মনে আরো নানা প্রশ্ন এলো কিন্তু যুবকের শরীরের মিষ্টি সুবাস সব এলোমেলো করে দিলো।
পাশের যুবকটিকে খুব কাছের কেউ মনে হচ্ছে।
যুবকের কাঁধে মাথা রেখে চোখ বুঝার খুব ইচ্ছে হলো ক্যামেলিয়ার।
কিন্তু কোনো এক সত্তা তাকে ভেতর থেকে বাধা প্রদান করে তার সেই ইচ্ছে টাকে দমিয়ে দিলো।
_______
পেরিয়ে গিয়েছে দীর্ঘ আটটি ঘন্টা।
ক্যামেলিয়া মাহাদের কাঁধে মাথা রেখে আরামের নিদ্রা গিয়েছে।
মাহাদ ঘড়িতে সময় দেখে নিলো।
রাত দুটো বেজে পঁয়তাল্লিশ মিনিট।
এখনই প্লেন ল্যান্ডিং করবে।
ক্যামেলিয়া কে জাগানো প্রয়োজন
এতদিন পর ক্যামেলিয়ার নরম দেহের ছোয়া পেয়ে মাহাদের মরুভূমির ন্যায় হৃদয়ে এক পশলা বৃষ্টি বয়ে গেলো।
তৃপ্তির হাসি ঠোঁটে খেলে গেলো তার।
মুহূর্তেই এনাউন্সমেন্ট ভেসে এলো।
“লেডিস এন্ড জেন্টলম্যান উই উইল ল্যান্ড দা প্লেন।
“থ্যাঙ্কস ফর ফ্লাইং উইথ আস।
——–
বিমান ল্যান্ডিং এর সময় ক্রস উইন্ড থাকার কারনে প্রচন্ড ঝাকুনি অনুভূত হলো।
ঘুমন্ত ক্যামেলিয়া মাহাদকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ভয়ে সিটিয়ে গেলো।
আবেশে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সবকিছু ভুলে মাহাদ ক্যামেলিয়া কে দুই হাতে শক্ত করে জাপ্টে ধরে ক্যামেলিয়ার গলায় মুখ ডুবালো।
পরিচিত উষ্ণ স্পর্শ পেয়ে তৎক্ষণাৎ ঘুম ছুটে যায় ক্যামেলিয়ার।
পরিস্থিতি আন্দাজ করে পাশের যুবক ভেবে ঘৃণা যুক্ত চোখে তাকিয়ে জোরে ধাক্কা মেরে দেয় মাহাদকে।
এরপর নিজে সিটকে সরে এসে তেজী কন্ঠে বলে উঠে।।
“ডোন্ট টাচ মি।আম ম্যারিড।
#চলবে
#ওগো_বিদেশিনী
#পর্ব_২৫
#সারিকা_হোসাইন
গভীর রাত,কিন্তু এয়ারপোর্ট এর ভেতরে দিনের আলোর মতো ফকফকে আলোর রশ্নি।চারিদিক মানুষের কোলাহল,ফ্লাইট এনাউন্সমেন্ট ,মানুষের পরবর্তী ফ্লাইট ধরার উৎকণ্ঠা সব মিলিয়ে অস্থির এক পরিবেশ।
কারো দিকে কারোর নজর দেবার ফুসরত নেই।
প্লেন থেকে নেমে ক্যামেলিয়া একা কোনার এক ওয়েটিং চেয়ারে বসে পরবর্তী ফ্লাইটের জন্য অপেক্ষা করছে।
আশেপাশে চোখ বুলিয়ে পাশে বসা সেই যুবক কে খুজলো।
“নাহ আপাতত কোথাও তাকে দেখা যাচ্ছে না।
অপরিচিত যুবক কে দ্বিতীয় দফায় দেখার জন্য মন আকুলিবিকুলি করলো।
যুবকের স্পর্শ তার বহু চেনা।
কিন্তু কিভাবে?
“আর ক্যামেলিয়া সত্যি ই কি বিবাহিতা?
“তাহলে কোথায় স্বামী নামক সেই মানুষটা?”
“মানুষটাই তার হাত ছেড়ে দিয়েছে নাকি সে নিজেই মানুশটাকে ভুলে গিয়েছে”?
“কোনো ভাবেই কি সে ক্যামেলিয়া কে আটকে রাখার চেষ্টা করেনি”?
মুহূর্তের ব্যাবধানেই মন ভার হয়ে চোখে বর্ষনের সৃষ্টি করলো।
এই অচেনা পরিবেশে নিজেকে খুব একাকী মনে হচ্ছে।
জীবনের তরী এই বুঝি মাঝ সমুদ্রে তলিয়ে যাচ্ছে।
দুই হাতের উল্টো পিঠে চোখের জল মুছে কুলাতে পারছে না ক্যামেলিয়া।
মুছার আগেই প্রবল বেগে আরো অশ্রু ধারা কপোল বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে।
মস্তিষ্ক ফাঁকা লাগছে।
আবছা কিছু স্মৃতি ধরা দিয়েও দিচ্ছেনা।
পরবর্তী গন্তব্য তার কোথায় এটাও সে ভুলে গিয়েছে।
এই অজানা দেশে কোথায় যাবে ক্যামেলিয়া?
সহসাই কেউ একজন একটি ধোয়া উঠা কফি কাপ এগিয়ে দিলো ক্যামেলিয়ার পানে।
কান্নার হিড়িক থামিয়ে দ্রুত হাতের আঙুলের সাহায্যে চোখের জল মুছে মাথা উপরে তুলে তাকালো ক্যামেলিয়া।
সুদর্শন সুঠাম দেহী যুবককে অনেক আপন মনে হলো তার কাছে।
মনের ভেতর জমানো কথা গুলো বলার জন্য মন উচাটন হলো।
কফি কাপ না নিয়েই ফুঁপিয়ে ঠোঁট ভেঙে কেঁদে ফেললো ক্যামেলিয়া।
যুবক বিচলিত হয়ে কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই ক্যামেলিয়া কাঁদতে কাঁদতে ভাঙা কন্ঠে বলে উঠলো
“আমি হারিয়ে গেছি,”
“আমি সব ভুলে গিয়েছি,আমি কোথায় যাচ্ছি কি আমার ঠিকানা আমার কিচ্ছু মনে নেই”
“প্লিজ হেল্প মি,”
এরপর ক্যামেলিয়া অনেক কাকুতির স্বরে বললো
আমাকে আমার বাড়িতে পৌঁছে দেবার ব্যাবস্থা করতে পারবেন?
“আমার অনেক ভয় লাগছে।
সামনে দাঁড়ানো মানব নিজের ভালোবাসার মানুষের এমন করুন অবস্থা সহ্য করতে পারলো না।
সে তো যেকোনো পরিস্থিতি মেনেই ক্যামেলিয়া কে গ্রহণ করেছিল।
তাই বলে এতো কঠিন পরিণতি তার জন্য বিধাতা লিখে রেখেছিলো?
ক্যামেলিয়া কে শান্তনা দেবার কোনো ভাষা হৃদয় গহীনে খুঁজে পেলো না মাহাদ।
হাটু গেড়ে ক্যামেলিয়ার সামনে বসে টিস্যু দিয়ে ক্যামেলিয়ার চোখের জল মুছিয়ে বলে উঠলো
“তুমি কি বোকা মেয়ে ক্যামেলিয়া?
“পথ হারিয়ে ফেলেছো তো কি হয়েছে?
“তুমি যতবার রাস্তা ভুল করবে আমি তত বার হাত ধরে তোমাকে রাস্তা চেনাবো।
“প্লিজ কেঁদোনা”
ক্যামেলিয়া কান্না থামিয়ে মাহাদের দিকে অসহায় দৃষ্টি মেললো।
“এতো সুন্দর ভরসা কে দিতে পারে?
মাহাদ মুখে স্মিত হাসি ঝুলিয়ে কফি কাপ এগিয়ে বলে উঠলো
“এটা খেয়ে নাও,ভালো লাগবে।ক্লান্তি দূর হবে।
কাঁপা কাঁপা হাতে ক্যামেলিয়া কফি কাপ নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে নিলো।
প্রথম অল্প চুমুক দিয়ে কিছুক্ষণ মেঝের দিকে দৃষ্টি দিয়ে ক্যামেলিয়া চিকন কন্ঠে বলে উঠলো
“আমি বিবাহিতা, কিন্তু কে আমার বর, কোথায় সে থাকে আমি সব ভুলে গিয়েছি।
এমনকি তার সাথে কোনো স্মৃতিও আমার মনে নেই।
“মানুষটি আমাকে ভুলে গিয়েছে নাকি আমি নিজেই তাকে ভুলে গিয়েছি সেটাও মনে নেই।
একটা অনিশ্চিত আলোহীন রাস্তায় আমি হেঁটে চলেছি।
“মানুষটি তোমাকে কখনো ভুলতে পারবে না ক্যামেলিয়া, তোমাকে ভুলে গেলে যে তার অস্তিত্বই বিলীন হবে”!
ধীর কন্ঠে বলে উঠলো মাহাদ।
“যেই অনিশ্চিত অন্ধকার পথে তুমি হাটছো সেই পথের আলো আমি হবো”
“তুমি একদিন ঠিক আমাকে চিনতে পারবে।
কথাগুলো বলে কান্না ভেজা লাল চক্ষু নিয়ে ক্যামেলিয়ার দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করলো মাহাদ।
ক্যামেলিয়া কিছু বলার আগেই দ্বিতীয় ফ্লাইটের এনাউন্সমেন্ট ভেসে এলো।
দুবাই টু সুইজারল্যান্ড এর যাত্রীদের সকল বোর্ডিং পাস নিয়ে এমিরেটস ফ্লাইট এর জন্য প্রস্তুত হবার অনুরোধ জানালো ।
মাহাদ একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে হাঁটুতে ভর দিয়ে উঠে দাঁড়ালো।
এরপর ক্যামেলিয়ার দিকে হাত বাড়িয়ে বলে উঠলো
“চলো তোমাকে পৌঁছে দেই”!
ক্যামেলিয়া মাহাদের হাতের দিকে তাকিয়ে নিজের হাত দুটো গুটিয়ে নিলো।
এরপর মিন মিন স্বরে বলে উঠলো
“আমি অন্য কারো আমানত,আপনার হাত ধরা আমার জন্য ঠিক হবে না।”
“আম সরি”
বলেই উঠে দাঁড়ালো ক্যামেলিয়া।
মনের অজান্তেই খুশির জোয়ারে মাহাদের চিত্ত তোলপাড় করে উঠলো।
না চাইতেও ঠোঁট কামড়ে হেসে উঠলো।
মাহাদ মনে মনে বলে উঠলো
“আমাকে না চিনলে তুমি”
” তবুও কোনো দুঃখ নেই আমার।”
“আমার জন্য যে তুমি নিজেকে সেইফ রাখবে এই সুখ আমি কোথায় রাখবো বউ?
দ্বিতীয় এনাউন্সমেন্ট আসতেই মাহাদ ক্যামেলিয়ার ট্রলি নিয়ে হনহন করে রওনা দিলো।
ক্যামেলিয়ার সামনে দাঁড়ালে নিজেকে আর কোনো ভাবেই কন্ট্রোল করতে পারবে না মাহাদ।
ইচ্ছে করবে এখুনি মেয়েটাকে কামড়ে খেয়ে ফেলতে।
,”নিজের স্ত্রীর হাত ধরার অনুমতি সে হারিয়েছে এটা ভেবেই মুহূর্তেই হৃদয় নীল কষ্টে মুষড়ে উঠলো।
চোখের কোনে জল চিকচিক করে উঠলো।
সেসবে পাত্তা না দিয়ে সামনে এগিয়ে চললো মাহাদ।
মাহাদের লম্বা পায়ের হাঁটার সাথে ক্যামেলিয়ার ছোট ছোট পায়ে হাটতে প্রচুর বেগ পেতে হলো।
তবুও লোকটিকে তার অনুসরণ করতে হবে কারন সে ক্যামেলিয়ার গন্তব্য জানে।
_______
মিসেস মিতালি ছেলের শোকে বিছানা নিয়েছেন।
যেই ছেলে ক্যামেলিয়া কে পেয়ে আকাশের চাঁদ পাওয়ার মতো খুশি হয়েছিলো সেই ছেলে ক্যামেলিয়া বিয়োগে আধমরা হয়ে শ্বাস নিচ্ছে।
সুজানা আর হৃদি তাদের মায়ের এমন অবস্থা কিছুতেই সহ্য করতে পারছে না।
মাহতাব চৌধুরী ড্রয়িং রুমে বসে উকিলের সাথে কথা বলছেন।
“যতো টাকা লাগে দেব,যা যা করতে হয় সব করতে রাজি।
আপনি শুধু ওই কুচক্রী দুটোকে কঠিন শাস্তি দেবার ব্যাবস্থা করুন।
“দেখতেই পাচ্ছেন আমার পুরো পরিবার তছনছ হয়ে গিয়েছে।
“আপনি কোন চিন্তা করবেন না মাহতাব চৌধুরী।আমি সব কিছু সামলে নেবো।
“আজ তাহলে উঠছি।
উকিল চলে যেতেই রিজভী প্রবেশ করলো ড্রয়িং রুমে।
রিজভীকে দেখে মাহতাব চৌধুরী দুঃখ ভারাক্রান্ত কন্ঠে বলে উঠে
“আমার ছেলেটা বাঁচবে তো রে বাবা?
অপরাধীর ন্যায় রিজভী মাথা নিচু করে কিছুক্ষন মৌন রইলো।
এরপর কন্ঠ খাদে ফেলে বলে উঠলো―
“খালু সব কিছুর জন্য আমি দায়ী।
“আপনি আমাকে মাফ করে দিন খালু।না হলে আমি কেনো ভাবেই
আমাকে ক্ষমা করতে পারবো না।
রিজভীর মুখে এমন ভয়ংকর কথা শুনে অবাক হয়ে যান মাহতাব চৌধুরী।
“তুই দায়ী মানে?
“হ্যা খালু আমিই দায়ী।
“খালু আমিই সেদিন সুজানাকে কিছু সময়ের জন্য বাইরে নিয়ে গেছিলাম।
সুজানা যদি বাড়িতে থাকতো তাহলে হয়তো এতো বড় দুর্ঘটনা টা ঘটতো না।
মাহতাব চৌধুরী ফুঁস করে দম ছাড়লেন।
এরপর রিজভীর কাঁধে হাত রেখে শান্ত স্বরে বলে উঠলেন
“এসব কোনো দায়ভার তোর নিতে হবে না।আমার বোন শুরু থেকেই বৌমার উপর প্রতিশোধ পরায়ন ছিলো।
কুহু কে মাহাদের সাথে বিয়ে দেবার জন্য বড় আপা অনেক অনুরোধ করেছিলেন আমাকে।
কিন্তু বাবা হয়ে ছেলের ভালোবাসা কিভাবে খু/ন করতাম বল?
তুই সুজানা কে বাইরে নিয়ে গেলেও ওরা ক্যামেলিয়ার ক্ষতি করতো না নিয়ে গেলেও করতো।
“কারণ ওরা মাহাদ চলে যাবার অপেক্ষায় ছিলো।
“অপরাধ বোধ তো আমাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে।
কেনো প্রথম দিনের ঘটনার পরেই ওদের বিদায় করলাম না।
বড় আপা এতো বড় কুৎসিত ফন্দি এটেছিলো স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি।
মাহতাব চৌধুরী কথা গুলো বলে অবাক হয়ে জানতে চাইলেন
“তা তুই সুজানাকে কেনো ডেকেছিলি?
“খালু আমি সুজানা কে ভালোবাসি, আমি ওকে বিয়ে করতে চাই।
সহজ স্বীকারোক্তি রিজভীর।
বিয়ের কথা শুনে ধীর পায়ে সোফায় গিয়ে বসলেন মাহতাব চৌধুরী।
এরপর অসহায় কন্ঠে বলে উঠলেন
“আমার ছেলেটা একটু পরিস্থিতি আয়ত্তে আনুক এরপর তোর বাবার সাথে কথা বলবো আমি।
কারন ছেলে হিসেবে অপছন্দ করার মতো কোনো কারণ নেই তোর মধ্যে।
তোর মতো ছেলের কাছে মেয়ে দিতে পারা চরম ভাগ্যের বিষয়।
তুই না বললেও আমি সময় সুযোগ করে তোর বাবার কাছে সুজানার জন্য প্রস্তাব রাখতাম।
কিন্তু এখন বুঝতেই তো পারছিস,,,,,
“জি খালু,আমার কোনো তাড়াহুড়ো নেই।
“ভাই আগে ভালো থাকুক।
“ভাই সুখী না হলে আমি কখনোই সুজানা কে বিয়ে করে সুখের সংসার গড়তে পারবো না।
“কারন ভাইয়ের সংসার ভাঙার পেছনে সামান্য হলেও আমি দায়ী।
দূতলার করিডোরে দাঁড়িয়ে সুজানা মাহতাব চৌধুরীর আর রিজভীর সব কথাই শুনলো।
হঠাৎ দুজনের চোখাচোখি হতেই দ্রুত চোখ নামিয়ে দৌড়ে নিজের রুমে চলে গেলো সুজানা।
ক্যামেলিয়ার ওই ঘটনার পর সুজানা আর রিজভীর সাথে কথা বলেনি।
রিজভীও সুজানাকে বিরক্ত করেনি।
ভালোবাসা শুরুর আগেই দুজনকে বিচ্ছেদের অনল পুড়িয়ে মারছে।
সুজানার সাথে একটু কথা বলার জন্য রিজভী হাজার বার এসেছে এবাড়িতে।
কিন্তু ফলাফল শূন্যের খাতায়।
অসহায় রিজভীকে আরো কিছু শান্তনার বাণী আউড়িয়ে মাহতাব চৌধুরী মিতালীর রুমের দিকে অগ্রসর হলেন।
মাহতাব চৌধুরী উঠে চলে যেতেই সুযোগ বুঝে রিজভী সুজানার কক্ষে প্রবেশ করলো।
সুজানা খাটের কোনার মেঝেতে বসে বিছানায় মাথা রেখে উপুড় হয়ে বসে আছে।
রিজভী সন্তপর্নে সুজানার পেছনে এসে দাঁড়ালো।
রিজভী গলা খাকরি দিয়ে সুজানার দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করলেও কোনো এক অপরাধ বোধ থেকে সুজানা মাথা তুলে তাকায়নি পর্যন্ত।
অবজ্ঞা জনক হাসি হাসলো রিজভী।
এরপর অনুযোগের স্বরে বলে উঠলো
“ভালোবাসা সবার জন্যই সুখকর অনুভূতি নয়রে সুজানা।
“তোকে আমি কবে থেকে ভালোবাসি এটা আমি নিজেও জানিনা।
“কিন্তু যেদিন আমার এই ভালোবাসা আমি প্রথম তোর কাছে নিবেদন করতে চেয়েছিলাম সেদিন তুই আমার কাছে দৌড়ে আসতে গিয়ে সামনে থাকা খামে বাড়ি খেয়ে মাথা ফটিয়েছিলি।
তোর তো মাথা ফেটেছিলো কিন্তু আমার হৃদয়ে সেই ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছিলো।
তোকে জানতেও দেইনি আমি।
নীরবে আমার অলুক্ষনে ভালোবাসা হৃদয় গহীনে বন্দি করে তোকে নিয়ে ছুটে চললাম হসপিটালে।
দ্বিতীয় বার যখন নিজের মনকে শান্ত করে তোকে আমার প্রেম নিবেদন করার সিদ্ধান্ত নিলাম
সেদিনও তুই সাঁতার শিখতে গিয়ে সুইমিং পুলে ডুবলি আমারই সামনে।
সেদিন থেকে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম আর কোনোদিন তোর সামনে ভালোবাদার আবদার নিয়ে আমি যাবোনা।
কিন্তু দেখ কতো নির্লজ্জ্ব আমি।
আবার আমি তোকে আমার কুৎসিত ভালোবাসা জানালাম আর তোদের সকলের জীবন নরক হয়ে গেলো।
আমি আমার এই অভিশপ্ত ভালোবাসা আর তোকে জানাবো নারে সুজানা।
আমার ভালোবাসা আমার মধ্যেই বন্দি করে রাখলাম।
আমি চলে যাচ্ছি সুজানা।তোকে আর কোনোদিন বিরক্ত করবো না।
মাহাদ ভাইয়ের জীবন নষ্ট করার অপরাধে আমি অপরাধী।
পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিস।
কথা গুলো বলতে বলতেই রিজভীর গলা ধরে এলো।
ব্যাথার্ত কন্ঠ নিয়ে কথা গুলো কোনোমতে শেষ করতেই টুপ করে জল গড়িয়ে পড়লো রিজভীর চোখ থেকে।
রিজভী আর একমুহূর্ত এখানে না দাঁড়িয়ে ফিরে যেতে উদ্দত হয়।
সাথে সাথেই সুজানা দাঁড়িয়ে দৌড়ে গিয়ে পেছন থেকে রিজভীকে জড়িয়ে ধরে।
হঠাৎ প্রেয়সীর আক্রমণে রিজভী থমকে দাঁড়ায়।
কান্না জড়িত কন্ঠে সুজানা রিজভীর পিঠে মুখ গুজে বলে উঠে
“তোমার অলুক্ষনে ভালোবাসায় আমি অলক্ষী হতে চাই রিজভী ভাই।
#চলবে।