ওগো বিদেশিনী পর্ব-২৬+২৭

0
127

#ওগো_বিদেশিনী
#পর্ব―২৬
#সারিকা_হোসাইন
______
জুরিখ ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট এ ট্যাক্সির অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে মাহাদ আর ক্যামেলিয়া।
মাহাদের থেকে ক্যামেলিয়া মোটামুটি দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়িয়ে আছে।নিজেকে পুরো রিজার্ভ রেখে চলছে মেয়েটি যা মাহাদের মনে সূচ ফোটানো ব্যাথার সৃষ্টি করছে।
এক সময় যার পুরোটাই মাহাদের দখলে ছিলো আজ তাকে দৃষ্টি মেলে দেখাই যেনো অপরাধ।
নিজের এহেন দুর্দশা দেখে দীর্ঘশ্বাস ছাড়া আর কিছুঁই করার নেই মাহাদের।
কিন্তু ক্যামেলিয়া কে যেভাবেই হোক দেশে ফিরিয়ে নিবেই নিবে সে।

মিনিট দশেক পরেই একটা ট্যাক্সি নিয়ে লুসার্ন এর উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলো মাহাদ আর ক্যামেলিয়া।

কিছুক্ষন গাড়ি চলতেই ক্যামেলিয়ার মন ভালো হয়ে গেলো।
বাইরের মনোরম পরিবেশ ,মৃদুমন্দ বাতাস সাথে কমলা রঙা ম্যাপল লিফের বিছানো চাদর।
নিজের জন্মভূমি, পরিচিত সুবাস,সব মিলিয়ে মুহূর্তেই কিছু অতীত স্মৃতিপটে ভেসে উঠলো।
ভালো স্মৃতির সাথে অতীত নোংরা স্মৃতি গুলো নিউরনে মাথা চাড়া দিয়ে উঠলো মুহূর্তের ব্যাবধানে।
অল্প কিছুক্ষণ আগের উৎচ্ছাস আর আনন্দ নিমিষেই মিইয়ে গেলো ক্যামেলিয়ার মনো মধ্যে।
ভয়ে দ্রুত গাড়ির জানালার কাচ তুলে হাতের আজলায় মুখ লুকালো ক্যামেলিয়া।

তবে কি আবার সেই হেল্পিং হ্যান্ড এরিয়ানা আর প্লাম্বার বয় জাস্টিন এর সাথে তার দেখা হবে??

“কে বাঁচাবে তাকে এদের হাত থেকে?

ভয়ে ত্রাসে কেঁপে উঠলো ক্যামেলিয়া।

মাহাদ পাশে থেকে সবটাই অবলোকন করে বিষয়টা কিছুটা আঁচ করতে পারলো।

আস্তে করে ক্যামেলিয়ার হাত ধরতেই নিজেকে ধাতস্থ করে জানালার সাথে সেটে বসলো ক্যামেলিয়া।

মনক্ষুণ্ণ হয়ে হাত গুটিয়ে নিলো মাহাদ।
“সরি কিছু মনে করো না ক্যামেলিয়া,পুরোনো অভ্যাস বদলাতে পারিনা”

“হুটহাট তোমার দিকে হাত বাড়ানোর জন্য আন্তরিক ভাবে ক্ষমা চাইছি”

আহত স্বরে জবাব দিয়ে উঠলো মাহাদ।

মাহাদের এসব ইঙ্গিত পূর্ণ কথার কোনো আগা মাথাই বুঝতে পারছে না ক্যামেলিয়া।
লোকটিকে নিতান্তই একজন রহস্য মানব মনে হচ্ছে তার কাছে।

মিনিট চল্লিশ পার হতেই গুগল ম্যাপে দেখানো লোকেশন অনুযায়ী গাড়িটি স্মুদলী ব্রেক কষলো।

মাহাদ গাড়ি থেকে নেমে ব্যাগপত্র সব কিছু বের করে ক্যামেলিয়ার উদ্দেশ্যে দরজা খুলে দাঁড়ালো।

কিছু সময় অতিবাহিত করে ধীর পায়ে নেমে এলো ক্যামেলিয়া।
বাড়ির আঙিনায় পা রাখতেই ধরা দিলো সুখময় কিছু স্মৃতি।

“একটি ছোট বাচ্চা খিলখিলিয়ে বাগানময় হাসছে,তার বাবা মা প্রশস্ত হেসে বাচ্চা মেয়েটির সেই হাসি উপভোগ করছে।

নিজের অতীত হাতড়ে এই টুকু সুখপূর্ণ অনুভূতির সন্ধান ই পেলো ক্যামেলিয়া।
আর বাকি যা খুঁজে পেলো সব দুঃখ বেদনা ভারাক্রান্ত।
মুহূর্তেই মন ভার করে ব্যাগপত্র ফেলে দৌড়ে নিজের ঘরের ভেতর ঢোকার জন্য উদগ্রীব হলো।
কিন্তু দরজায় বৃহতাকার তালা ঝুলানো।
দ্রুত হেটে এসে মাহাদ তালা খুলে দিতেই দ্রুতপদে হেটে ক্যামেলিয়া নিজের রুমের উদ্দেশ্যে পা বাড়ালো।
মাহাদ তার সকল জিনিসপত্র নিয়ে কোনোমতে ঘরে ঢুকে ফ্রেশ হতে চলে গেলো।
সারিকা হোসাইন পেইজটিতে ফলো দিয়ে পাশে থাকবেন।
_______
পরিস্কার পরিচ্ছন্ন তকতকে ঘরবাড়ি।
দেখেই মনে হচ্ছে কেউ একজন এসে প্রায় প্রায়ই ঘরের যত্ন নেয়।
কোথাও কিছু অগোছালো নেই।
সবকিছু গুছানো পরিপাটি।
লম্বা জার্নি আর নতুন পরিবেশ সাথে পুরোনো স্মৃতির আনাগোনা।
সব মিলিয়ে ক্যামেলিয়ার মাথায় টনটনে ব্যাথার অনুভূতি সৃষ্টি করলো।
নিজেকে ফ্রেশ করার জন্য ক্যামেলিয়া ওয়াশরুমে ঢুকলো।
এখানেও সব কিছু পরিপাটি গুছানো।
হঠাৎই ক্যামেলিয়ার অস্বস্তি হতে লাগলো।
আজকাল চিন্তা ভাবনার করার জন্য মাথায় একটু চাপ প্রয়োগ করতে অসহনীয় যন্ত্রনা এসে ভর করে।

মাথার যন্ত্রনা কমাতে দ্রুত শাওয়ার ছেড়ে তার নিচে গিয়ে দাঁড়ালো ক্যামেলিয়া।
ঠান্ডা পানির শিহরনে চোখ বন্ধ করতেই চোখের সামনে ভেসে উঠলো কিছু অস্পষ্ট স্মৃতি।

“আমি আপনাকে ভালো বাসি মাহাদ ভাই”

“কবুল,কবুল,কবুল”

“আপনি চলে গেলে আমি থাকতে পারবো না মাহাদ ভাই,আমিও যেতে চাই আপনার সাথে।”

“তোমাকে কি একটা কিউট বেবি দিয়ে যাবো ক্যামেলিয়া?

“তুমি চলে যেওনা ভাবি,আমার ভাই মরে যাবে।

চট করে নীল মনি যুক্ত নেত্র মেলে তাকালো ক্যামেলিয়া।
মাথায় অসহনীয় ব্যাথা করছে তার সাথে হৃদযন্ত্রের উত্তাল ধুকপুকুনি।
শরীর থরথরিয়ে কাঁপছে ক্রমশ।
না চাইতেও চোখ গড়িয়ে ফোটা ফোটা জল ঝরে পড়ছে।

“কাকে কবুল বলে গ্রহণ করেছে ক্যামেলিয়া?”

“মেয়েটি কার মরে যাবার জন্য এতো কেঁদে কেঁদে ক্যামেলিয়া কে আটকে রাখছে?

“কে সেই মাহাদ?
নিজের চুল নিজেই খামচে ধরে অস্পষ্ট স্মৃতি গুলো পুনরায় মনে করার চেষ্টা করলো।
কিন্তু দ্বিতীয় দফায় আর দেখা মিললো না সেই যুবকের।

ঝটপট শাওয়ার অফ করে গায়ে টাওয়েল জড়িয়ে বাইরে বেরিয়ে এলো ক্যামেলিয়া।
কাবার্ড খুলে ছোট একটা ডেনিম হাফপ্যান্ট আর টিশার্ট পরে চুল মুছতে মুছতে বিষন্ন মনে রান্না ঘরের দিকে ছুট লাগলো।
পেটে অনেক সময় ধরে কোনো দানাপানি পড়ছে না।
ইনস্ট্যান্ট কিছু খাওয়া প্রয়োজন।

ঘরের বাইরে বের হতেই কিচেন থেকে মজাদার সুঘ্রাণ যুক্ত খাবারের গন্ধ নাকে লাগছে।
এই গন্ধ তার বহু চেনা।কিন্তু এখন কিছুই মনে পড়ছে না।

“কোথায় খেয়েছে সে এই সুগন্ধি যুক্ত খাবার?

বেলকনি তে টাওয়েল শুকাতে দিয়ে কিচেনে উকি দিতেই পরিচিত সেই ছেলেটিকে দেখে থমকে দাঁড়ালো ক্যামেলিয়া।
কিচেন এপ্রোন গায়ে জড়িয়ে অভিজ্ঞ শেইফের ন্যায় হাতা খুন্তি নাড়িয়ে কিছু একটা রেঁধে চলেছে লোকটি।

কিছুক্ষন কিচেনের ওয়ালে হেলান দিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো ক্যামেলিয়া।
এরপর শান্ত গলায় বলে উঠলো

“আপনি এখনো নিজের বাড়ি ফিরে যাননি?
ক্যামেলিয়ার রিনরিনে কন্ঠ শ্রবনিন্দ্রীয় হতেই রান্না বন্ধ করে চুলা নিভিয়ে পিছনে ফিরে তাকালো মাহাদ।

এলোমেলো কোঁকড়া বাদামি ভেজা চুল,আবেদন ময়ী রূপ মুহূর্তেই বেসামাল করলো মাহাদ কে।
ফাঁকা ঢোক গিলে দৃষ্টি নত করে নরম স্বরে মাহাদ বলে উঠলো

“আমি তো আমার ঘরেই আছি ক্যামেলিয়া,আমার তো আর যাবার কোনো জায়গা নেই !

ছেলেটির অসহায় কন্ঠে কি ছিলো ক্যামেলিয়া জানে না।কিন্তু হঠাৎই ছেলেটির জন্য তার খুব মায়া হলো।
মনে মনে নিজেকে নিজেই বুঝালো

“হয়তো ছেলেটির যাবার জায়গা নেই।থাকুক না তার মতো ক্ষতি কি?

“ছেলেটি ক্যামেলিয়া কে বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দিলো আর ক্যামেলিয়া তাকে দুদিন জায়গা দিতে পারবে না?

ভাবতে ভাবতে আনমনে ডাইনিং চেয়ারে গিয়ে ধীর পায়ে বসে গেলো।
মিনিট দুয়েক পরেই মাহাদ দুই প্লেট খাবার নিয়ে টেবিলে ফিরে এলো।
একটি প্লেট ক্যামেলিয়ার দিকে এগিয়ে দিতেই খুশিতে ক্যামেলিয়ার ঠোঁট প্রশস্ত হলো।
উচ্ছসিত হয়ে চোখ বড় বড় করে বলে উঠলো

“চিকেন বিরিয়ানি?
“এটা তো আমি………

হাসিমাখা মুখে মাহাদ ক্যামেলিয়ার দিকে দৃষ্টি পাতলো।
কিন্তু ক্যামেলিয়া কোথায় খেয়েছে এই বিরিয়ানি মনে করতে পারলো না।
মাহাদ ক্যামেলিয়া কে খাওয়া শুরু করার জন্য অনুরোধ করলো।
আর নিজে মাথা নিচু করে প্লেটের দিকে ঝুঁকে গেলো।

খাবার মুখে পুরে ক্যামেলিয়া চোখ বন্ধ করে ফেললো।কারন খাবারটি তার কাছে অমৃতের স্বাদ ঠেকছে।

এদিকে মাহাদ প্লেটে আঁকিবুকি করেই যাচ্ছে শুধু।খাবারটি মুখেই রুচছে না তার।
বিষন্নতার চাদর মুহূর্তেই জড়িয়ে নিলো মাহাদকে।
সুঘ্রাণ বিরিয়ানি মুহূর্তেই নোনতা জলে তার স্বাদ হারালো।

_____
বিভিন্ন ঝড় ঝাপটায় টুসি এই কদিন না পেরেছে বাড়ির বাইরে বেরুতে না পেরেছে ভার্সিটি যেতে।
হঠাৎই ভার্সিটি তে ক্লাস টেস্ট এর ডেট পড়েছে।
টুসি কোনো নোটস ই কালেক্ট করেনি।
তাই সে এই কাঠফাটা রোদে হেটে হেটে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছে।
ব্যাবসায়িক কাজে রিজভী ঢাকার বাহিরে আছে,নাবিল হাসান ক্যামেলিয়া আর মাহাদের চিন্তায় অসুস্থ হয়ে ঘরেই পরে রয়েছেন।এদিকে রাস্তায় কোনো রিক্সা পাওয়া যাচ্ছেনা।
যাও দুই একটা পাওয়া যাচ্ছে তাদের ভাব দেখলে মুখের ভাষাই হারিয়ে যাচ্ছে।

হঠাৎ আরেকটি রিক্সা দেখে টুসীর চোখ চকচক করে উঠলো।
মুখে মিষ্টি হাসি ঝুলিয়ে বলে উঠলো

“এই মামা যাবেন?

রিক্সা ওয়ালা শুনেও না শোনার ভান ধরে চলে যেতে নিলে টুসি আবার চিৎকার করে ডেকে উঠে!

টুসীর দিকে তাকিয়ে রিক্সা ওয়ালা কিছুক্ষন ভাবলো।এরপর রুক্ষ কন্ঠে বলে উঠলো

“রোদের তেজ দেখছেন মামা?

“লাখ ট্যাকা দিলেও যাইতাম না।
বলেই ঝড়ের বেগে হাওয়ায় উড়ে নিমিষেই গায়েব হয়ে গেলো রিক্সা ওয়ালা।
এদিকে রোদের তাপে টুসীর মাথা ফেটে যাবার উপক্রম।
হঠাৎই সাই সাই করে একটি সাদা রঙের প্রাইভেট কার এসে টুসীর রাস্তা আগলে দাঁড়ালো।
এমনিতেই টুসীর মেজাজ পারদে দুশো ডিগ্রি তার উপর এই গাড়ি ওয়ালার এমন আতেল মার্কা আচরণে তা বেড়ে তিন গুণ হয়ে গেলো।
গলায় গালি জুগিয়ে মুখ থেকে বের করার আগেই অনিম চোখে কালো রোদ চশমা লাগিয়ে মুচকি হেসে বাইরে বেরিয়ে এলো।

ডেনিম সফট একুয়া ব্লু শার্টের সাথে সাদা প্যান্ট পড়েছে অনিম।
চুলগুলো জেল দিয়ে খাড়া খাড়া করে সেট করা।
হাতে বাদামি ফিতার ঘড়ি সাথে স্নিকার্স।

“লোকটির দাঁত কেলানো দেখে টুসীর চোখ বন্ধ করে রাগ কন্ট্রোল করে নিলো।
লোকটি সাংঘাতিক হেলায়িপনার ওস্তাদ।

গাড়ির পাশ কাটিয়ে টুসি চলে যেতে নিলেই অনিম আহত স্বরে বলে উঠে
“আজ রাস্তায় কোনো গাড়ি রিক্সা কিচ্ছু পাবেনা।চারিদিকে অবরোধ চলছে।।

“কোথায় যাবে আমাকে বলো এক্ষুনি পৌঁছে দিচ্ছি।

লোকটির গায়ে পড়া ভাবে কিছুটা বিরক্ত হলো টুসি।
তবুও নিজেকে শান্ত রেখে অবাক কন্ঠে শুধালো

“পুলিশিগিরির পাশাপাশি উবারে ক্ষেপ মারেন আপনি?

অনিম টুসীর কথায় দিলখোলা হো হো হাসি দিয়ে বলে উঠে

“তোমার জন্য রিক্সাওয়ালা হতেও আমার আপত্তি নেই।
বেশি কথা না বলে দ্রুত গাড়িতে উঠো।প্রচন্ড গরম বাইরে।

বলেই অনিম গাড়ির দরজা খুলে একপ্রকার জোর করেই টুসীকে গাড়িতে তুললো।
এরপর একটা পানির বোতলের ক্যাপ খুলে এগিয়ে দিয়ে বলে উঠলো

“খেয়ে নাও মনে হচ্ছে তোমার গলা শুকিয়ে গিয়েছে”

অনিমের এমন কেয়ার দেখে টুসীর মনে অনন্য এক ভালোলাগার হিল্লোল বইলো।

মুচকি হেসে থ্যাঙ্কস জানিয়ে পুরো হাফ লিটার এর বোতল সাবাড় করে চোখ বন্ধ করে গাড়ির সিটে মাথা হেলিয়ে কিছুক্ষণ মৌন রইলো।
এরপর অনুরোধের কন্ঠে বলে উঠলো
আমাকে একটু ভার্সিটি তে নামিয়ে দেবেন প্লিজ?”

“তোমার জন্য ভার্সিটি কেনো সুদূর চীন যেতেও রাজি সুন্দরী।

বলেই ঠোঁট কামড়ে হেসে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে স্কেলেটর পাড়া দিয়ে স্পিড বাড়িয়ে সাই সাই করে ছুটে চললো অনিম।

_______
শুনশান নিস্তব্ধ রজনী।
থেমে গিয়েছে পৃথিবীর সমস্ত কোলাহল।
শো শো শব্দে বাইরে বাতাস বইছে,তাপমাত্রা নয় ডিগ্রি সেলসিয়াস।
কখন নিজের রুমে এসে ঘুমিয়ে গিয়েছে ক্যামেলিয়া নিজেই জানেনা।
গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ক্যামেলিয়া হঠাৎই এক দুঃস্বপ্নে তলিয়ে গেলো।

“আমাকে কখনো ভুলে যেও না ক্যামেলিয়া,তাহলে আমি আর বাঁচবো না।”

“আমি আপনাকে কখনো ভুলবো না মাহাদ ভাই।”

সহসাই ক্যামেলিয়া কে নিজের কোলে তুলে জাপ্টে ধরলো মাহাদ
ক্যামেলিয়ার অনেক শান্তি লাগছে মাহাদের প্রশস্ত বুকে।মাহাদের বুকের ধুকপুকুনিতে শরীর শিহরিত হচ্ছে।

শরীরের গতি হারিয়ে ক্যামেলিয়া তার ফিনফিনে পাতলা গোলাপি রঙা ঠোঁট চেপে ধরলো মাহাদের ঠোঁটে।

হঠাৎই কালো কুৎসিত এক ছায়া এসে মাহাদের বুক থেকে টেনে হিচড়ে অন্ধকারে নিয়ে গেলো ক্যামেলিয়া কে।
অন্ধকার গহ্বর থেকে ক্যামেলিয়া মাহাদের কান্না জড়িত আর্তনাদ শুনতে পেলো শুধু।
কিন্তু ক্যামেলিয়ার আর্তনাদ কেউ শুনলো না।

মুহূর্তেই ঘুম ছুটে পালালো ক্যামেলিয়ার।
মাহাদ বলে চিল্লিয়ে শোয়া থেকে উঠে বসলো।
সারা শরীর ঘামে ভিজে একাকার অবস্থা।
অন্ধকার কক্ষে বিছানা হাতড়ে ফোন নিয়ে টর্চ জালালো ক্যামেলিয়া।
এরপর রুমের সুইচ অন করে ঘড়িতে সময় দেখে নিলো।
রাত দুটো বেজে বারো মিনিট।

বেড সাইড টেবিলের উপর থেকে পানির গ্লাস নিয়ে ঢকঢক করে পানি খেয়ে বিছানায় পা ভাঁজ করে বাবু হয়ে কিছুক্ষন বসলো ক্যামেলিয়া।
এরপর কিছুক্ষন আগে দেখা স্বপ্নটি মনে করতে চোখ বন্ধ করলো।
কিছুক্ষন পরেই পুরো বিষয় ক্লিয়ার হয়ে উঠলো ক্যামেলিয়ার নিউরনে নিউরনে।
মুহূর্তেই শরীরের লোম দাঁড়িয়ে গেলো তার।
চোখের দুকোল ছাপিয়ে ভারী বর্ষণের আনাগোনা হলো।

উন্মাদের ন্যায় বসা থেকে দাঁড়িয়ে দৌড়ে দরজা খুলে কক্ষের বাইরে বেরিয়ে এলো ক্যামেলিয়া।
মৃদু আলো জ্বালিত কক্ষটির সামনে আসতেই বুক দুরুদুরু কেঁপে উঠলো।
খট করে রুমের আধ ভিড়ানো দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করতেই হতাশায় হৃদয় খাঁখাঁ করে উঠলো।

যে আশায় এখানে এসেছিলো ক্যামেলিয়া সে এখানে নেই।
বুক ফেটে কান্না এলো তবুও নিজেকে ধাতস্থ করে খোলা বেলকনির দিকে ভীরু পায়ে অগ্রসর হলো।

একমনে শূন্য আকাশের দিকে তাকিয়ে এই ভরা শীতের মধ্যে উদোম গায়ে সিগারেট ফুকে চলেছে মাহাদ।
জীবন তার কাছে নিমিষের ব্যাবধানেই দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।
এখান থেকে ক্যামেলিয়া কে সুস্থ করে নিয়ে যেতে না পারলে মেয়েটির সুস্থ হবার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
দেশ বিদেশ ঘেঁটে এখানেই একজন ভালো সাইকিয়াট্রিস্ট এর সন্ধান পেয়েছে মাহাদ।
যে করেই হোক ক্যামেলিয়া কে তার কাছে নিয়ে একবার দেখাতে হবে।

কিন্তু ক্যামেলিয়া কি তার সাথে সাইকিয়াট্রিস্ট এর কাছে যেতে রাজি হবে?

একে একে সাত মগ কফি আর পঁচিশটি সিগারেট মাহাদ এপর্যন্ত শেষ করেছে।
ক্যামেলিয়ার চিন্তায় কিছুতেই ঘুম ধরা দিচ্ছে না অক্ষি পল্লবে।

বিতৃষ্ণায় ছাব্বিশ নম্বর সিগারেট বের করতেই ক্যামেলিয়া পেছন থেকে কান্না ভেজা অভিযোগের কন্ঠে বলে উঠলো―

“আপনি আমাকে কথা দিয়ে ছিলেন আর কখনো সিগারেট ছুইয়েও দেখবেন না”

“তাহলে আজ কেনো আমার জন্য বরাদ্দকৃত ঠোঁট গুলো নিকোটিনের কালো ধোঁয়ায় বার বার পোড়াচ্ছেন?

#চলবে

#ওগো_বিদেশিনী
#পর্ব_২৭
#সারিকা_হোসাইন
******
সুইজারল্যান্ডের লুসার্ন শহরে রাতের তাপমাত্রা জিরো ডিগ্রি সেলসিয়াস এ নেমে এলো।গভীর রাতের নিস্তবতা ভেঙে ঝরঝর করে তুষার পড়তে শুরু করলো।

হাতা বিহিন পাতলা টিশার্ট ক্যামেলিয়ার শীত নিবারণে ব্যার্থ হলো।মেয়েটি থরথর করে কেঁপে উঠলো বারংবার।

চোখে ভারী জল নিয়ে ক্যামেলিয়া মাহাদের দিকে জিজ্ঞাসু অভিযোগের দৃষ্টি তাক করে রেখেছে।

ক্যামেলিয়ার গলার স্বর শ্রবনিন্দ্রীয় হতেই মাহাদের হাত থেকে লাইটার আর সিগারেট দুটোই পড়ে গেলো।
পিটুইটারী গ্রন্থিতে ছলকে উঠলো টগবগে রক্ত।
শরীরের ভার শূন্য হয়ে এলো নিমিষেই।
নিজের অবশ শরীরটাকে কোনোমতে টেনে হিচড়ে পিছন ফিরে তাকালো মাহাদ।
এই গভীর নিস্তব্ধ রজনীতে ক্যামেলিয়া তার উদ্দেশ্যে অভিযোগ জানাচ্ছে এর চাইতে শান্তিময় বাণী পৃথিবীতে দ্বিতীয় আর কি আছে?

বলহীন জীর্ণ মানুষের মতো মাহাদ হেলে দুলে ক্যামেলিয়ার সামনে এসে দাড়ালো।
এরপর ধপ করে মেঝেতে হাটু গেড়ে বসে ক্যামেলিয়ার কোমর জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে ছোট বাচ্চার ন্যায় কেঁদে দিলো।

ছোট ক্যামেলিয়ার শীর্ন মেদহীন কোমর মাহাদের পেশীবহুল হাতের বাঁধনে জড়ানো।
মাহাদের কান্নার কাঁপনে ক্যামেলিয়াও কেঁপে কেঁপে উঠছে।

“তুমি আমাকে কেনো ভুলে গিয়েছিলে বউ”?

“জানো আমার বুকের এই খানটায় কতো কষ্ট হয়েছে?

“তুমি কেনো একবারো আমার কথা ভাবলে না?

“কিভাবে নিষ্ঠুর মানবীর ন্যায় আমাকে ভুলে গেলে?

মাহাদের কান্নায় নিমিষেই চারপাশ ভারী হয়ে উঠলো।মাহাদের কান্নার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকলো তুষারপাত।

ক্যামেলিয়ার চোখের জল গড়িয়ে গড়িয়ে টুপ টুপ করে মাহাদের চুলের উপর পড়ে তা মাহাদের মাথায় বিলিন হচ্ছে।

গলার স্বর রোধ হয়ে মুখে তালা লেগে গেলো ক্যামেলিয়ার।
মানুষটির কান্না তার হৃদয়ে ভাঙনের সৃষ্টি করছে।
ক্যামেলিয়া তো তাকে কথা দিয়েছিলো প্রাণ থাকতে মাহাদকে কখনো কষ্ট দিবেনা?

“তাহলে এই কাজ কিভাবে করলো সে?

“যে মানুষটি ক্যামেলিয়া কে নিজের অস্তিত্ব বানিয়ে নিয়েছে ক্যামেলিয়া তাকেই ভুলে গেলো?

“এতোটা নিষ্ঠুর কবে হয়েছে সে?

হাটু ভাঁজ করে মেঝেতে বসে গেলো ক্যামেলিয়া।
হাতের আজলায় মাহাদের মুখ উপরে তুলে চোখের জল মুছিয়ে দিলো।
এরপর নিজের শুষ্ক ঠোঁট জোড়া চেপে ধরলো মাহাদের কান্না ভেজা অক্ষি পল্লবে।

কীয়তক্ষন বাদে মাহাদ তার কান্না গিলে খেয়ে আহত স্বরে বলে উঠলো

“আমাকে তুই মে/রে ফেল বউ।তবুও এরকম কষ্ট দিসনা।

“আমার সইতে খুব কষ্ট হয়।

“প্রতি মুহূর্তে আমার হৃদয়ের মৃত্যু হয়”

ক্যামেলিয়া তার ঠান্ডা হাত জোড়া দিয়ে মাহাদ কে নিজের বুকে টেনে নিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে মাথায় পিঠে হাত বুলালো।

শুষ্ক ঠোঁট জোড়া জিহবার লালা দিয়ে ভিজিয়ে ধীর অস্ফুট স্বরে বলে উঠলো

“দ্বিতীয় বার এমন কষ্ট দেবার আগেই যেনো আমি ম/রে যাই”

সহসাই মাহাদ ক্যামেলিয়ার বুক থেকে মুখ তুলে ক্যামেলিয়ার ঠোঁটে মৃদু চুম্বন একে বলে উঠলো

“হুশ,,আবার কখনো এরকম কথা যদি শুনেছি তাহলে ভালোবাসা দিয়ে একদম খু/ন করে ফেলবো”

“আমি খুন হতে চাই ক্যাপ্টেন মাহাদ”
অনুতপ্ত নজরে মাহাদের দিকে দৃষ্টি রেখে কথাটি নির্লিপ্ত ভাবে বলে ফেললো ক্যামেলিয়া।

ক্যামেলিয়ার কথায় মাহাদের ঠোঁটে তৃপ্তির হাসি খেলে গেলো।
আগামী কাল ই সে ক্যামেলিয়া কে সাইকিয়াট্রিস্ট এর কাছে নিয়ে যাবে।
ক্যামেলিয়া কে পুরোপুরি সুস্থ না করে আর এক মুহূর্তের জন্যও ক্যামেলিয়ার হাত ছাড়বে না মাহাদ।
দরকার পড়লে আঠার মতো চিপকে থাকবে।

হঠাৎই ক্যামেলিয়া হাঁচি দিয়ে উঠলো।
ক্যামেলিয়ার হাঁচিতে মাহাদের খেয়াল হলো প্রচুর ঠান্ডা আর তুষার পাত হচ্ছে।
দ্রুত ক্যামেলিয়া কে কোলে তুলে বিছানার দিকে রওনা দিলো মাহাদ।
গরম ব্ল্যাঙকেট দিয়ে না জড়ালে যখন তখন জ্বর বেঁধে যেতে পারে।
এমনিতেই প্রচুর ধকল যাচ্ছে আর পেরেশনির দরকার নেই।

ক্যামেলিয়া কে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে ভালোভাবে ব্ল্যাঙকেট জড়িয়ে বিছানা থেকে সরে আসতে চাইলো মাহাদ।
হঠাৎই হাতে টান অনুভব করে পিছন ফিরে তাকালো।
ক্যামেলিয়া মাহাদের হাতের কনিষ্ঠ আঙ্গুল টেনে ধরে আছে।

“কোথায় যাচ্ছেন আপনি?

“তুমি ঘুমিয়ে পড়ো ক্যামেলিয়া।আমি পাশেই আছি।কিছু কাজ বাকি রয়েছে সেগুলো কমপ্লিট করতে হবে।

মুখে অভিমানের কালিমা লেপন করে শোয়া থেকে উঠে বসলো ক্যামেলিয়া।

“আমি আগে নাকি কাজ?

“অফকোর্স তুমি আগে মাই ডিয়ার ওয়াইফ”

“তাহলে পালাচ্ছ কেনো?

মাহাদ কিছুক্ষণ চুপ রইলো,এরপর চোখ বড় বড় করে হামাগুড়ি দিয়ে বিছানায় উঠে উচ্ছসিত হয়ে বলে উঠলো

“এই বউ!
“তুমি কি মাত্রই আমাকে তুমি বলে সম্বোধন করেছো?

ক্যামেলিয়া মুখে লাজুক ভাব নিয়ে মাথা ঝাঁকালো।

ক্যামেলিয়ার চোখে মুখে অজস্র চুমুতে ভরিয়ে দিয়ে মাহাদ বলে উঠলো

“আজকে আমার এতো এতো সুখ কেনো হচ্ছে?

“এতো সুখ আমি কোথায় রাখবো বউ?

খুশিতে মাহাদ ক্যামেলিয়ার গলা জড়িয়ে ধরে বলে উঠলো

“আটকে দিয়ে নিজের সর্বনাশ নিজেই ডেকে আনলেন মিসেস ক্যামেলিয়া চৌধুরী।

“এখন যে আমার বউ বউ পাচ্ছে?

“কি করবো এখন আমি?

লজ্জায় ক্যামেলিয়া বালিশ টেনে মুখ লুকালো।
মাহাদ টেনে বালিশ সরিয়ে ছুড়ে মারলো মেঝেতে।

মাহাদের হাত থেকে ছাড়া পাবার জন্য ক্যামেলিয়া চোখ বন্ধ করে বলে উঠল
‘”ছাড়ো লজ্জা লাগছে।

সহসাই ব্ল্যাঙকেট টেনে ক্যামেলিয়া সহ নিজেকে ঢেকে ফেললো মাহাদ।

আবেশ মেশানো মাদকতা যুক্ত কন্ঠে বলে উঠলো

“এবারও কি লজ্জা লাগছে বউ?

ক্যামেলিয়া মাহাদের বুকে মুখ লুকালো।এরপর মাহাদের থুতনিতে মৃদু কামড় দিয়ে বলে উঠলো জানিনা।

ক্যামেলিয়া কে আরো লজ্জা দিতে মাহাদ হা হা করে হেসে বলে উঠলো

“সিগনাল তবে দিয়েই দিলে?

“এবার কিন্তু ঘোড়া লাগামহীন হয়েছে।আর আটকাতে পারবে না।

মাহাদ ক্যামেলিয়ার অনুমতি নিয়ে ওষ্ঠে গাঢ় চুম্বন একে দিলো এরপর ছোট ছোট লাভ বাইটে ক্যামেলিয়া কে অস্থির করে তুললো।
ক্যামেলিয়া দুই হাতের শক্ত বাঁধনে মাহাদকে জড়িয়ে আরো বেশি উষ্ণ ভালোবাসার আহ্বান জানালো।
বহু দিনের তৃষিত মাহাদ নিজের তৃষ্ণা মেটাতে মরিয়া হয়ে উঠলো।
মাহাদের চুল খামচে চোখ বুজে ফেললো ক্যামেলিয়া।
আনন্দঘন ভালোবাসাময় গোঙানি আর শীৎকারে মুহূর্তেই তুষার আবৃত ঠান্ডা পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠলো ।

________
গত রাতে মাহতাব চৌধুরী দেশে ফিরেছেন।সকালের খাবার দাবার শেষ করে বাড়ির প্রত্যেক সদস্য ড্রয়িং রুমে বসে গল্প জুড়েছেন ।
হৃদির ছোট বাচ্চাটা হামাগুড়ি দিয়ে ফ্লোর থেকে এটা সেটা তুলে মুখে দেবার চেষ্টা করছে।
সুজানা গরু রাখালের মতো হেই হেইট করে করে বেবীটাকে সামলাচ্ছে।
মিসেস মিতালি মাহাদ মাহাদ করে চোখ বুঝে ডিভাইনে কুশনের উপর শুয়ে পড়লেন।
যেখানে নিজের ছেলের সুখেই নিজেকে সুখী করেছিলেন।
আজ সেই ছেলে দুঃখের অতল সমুদ্রে ডুবে মরছে।
মা হয়ে এই দৃশ্য কি সহ্য করা যায়?

হঠাৎই মিতালি ডুকরে কেঁদে উঠলেন।
মাহতাব চৌধুরীর উদ্দেশ্যে অভিযোগের স্বরে বলে উঠলেন

“তোমার কালনাগিনী বোন আমার ছেলেকে দংশন করে তবেই ছেড়ে দিলো।
আমার বাচ্চাটা আজ মৃতের ন্যায় বেঁচে আছে।

“কেনো তাদের দাওয়াত করলে বিয়েতে?

“আগে থেকেই তো জানতে তোমার বড় বোন কঠিন হৃদয়ের নারী!

মিতালীর অভিযোগ ভিত্তিহীন নয়।তাই মাহতাব চৌধুরী কোনো শান্তনার জবাব দিতে পারলেন না মিতালিকে।

হৃদি দৌড়ে এসে মিতালিকে বসিয়ে চোখের জল মুছে শান্তনা দিতে লাগলো।

“আম্মু তোমার প্রেসার বেড়ে যাবে এভাবে হাই হতাশ করোনা।

“তোমার ছেলে তো কোনো অকর্মা নয়।সে কঠিন হৃদয়ের মানুষ।সব সামলে নেবে।

“নিজের ছেলের প্রতি তোমার বিশ্বাস নেই?

“ক্যামেলিয়া কে পেতে ও সব করতে পারবে।ধৈর্য ধরো আম্মু।

সুজানা হৃদির বেবি হ্যাভেন কে নিয়ে এক কোনায় দাঁড়িয়ে আছে।
তার মা যতবার এভাবে কাঁদে সুজানা ততবার নিজেকে দোষারোপ করে।
হঠাৎই মাহতাব চৌধুরীর ফোনটি কর্কশ স্বরে বেজে উঠলো।
মিতালি কান্না থামিয়ে হৃদির কাঁধে মাথা রেখে চোখ বুঝলেন।

মাহাদের নম্বর দেখে মাহতাব চৌধুরীর বুক ধক করে উঠলো।

বাংলাদেশ সময় এখন এগারোটা বেজে কুড়ি মিনিট সেই মোতাবেক সুইজারল্যান্ডে এখন সকাল সাতটা বাজে।

“এতো সকালে ছেলেটা কেনো ফোন করেছে ?

“কোনো বিপদ হলো না তো?

মনের ভয়ে ফোন তুলতে মাহতাব চৌধুরীর হাত কাঁপছে।

হৃদি কপাল কুঁচকে সূক্ষ দৃষ্টি তে তার বাবাকে দেখে যাচ্ছে।
দ্বিতীয় বার আবার ফোনের রিং বেজে উঠলো।

মাহতাব চৌধুরী সকলের উদ্দেশ্যে বলে উঠলেন
“মাহাদ ভিডিও কল করেছে।

মিতালি ছো মেরে ফোন কেড়ে নিয়ে রিসিভ করতেই স্ক্রিনে চকচকে হয়ে ভেসে উঠলো মাহাদ আর ক্যামেলিয়ার হাসি মাখা মুখ।

মিসেস মিতালি হাউমাউ করে কেঁদে বলে উঠলেন

“বাবারে তুমি কতদিন পর হাসলে।কতো শান্তি লাগছে এই বুকে বলে বুঝাতে পারবো না রে বাবা।

কান্নার হিড়িকে মিতালি কথাই বলতে পারছেন না।
এমন সময় ক্যামেলিয়া সুমিষ্ট কন্ঠে বলে উঠলো

“মা কেঁদো না প্লিজ!

মিসেস মিতালি ক্যামেলিয়ার কাছ থেকে মা সম্বোধন শুনে কান্না থামিয়ে কোনো মতে বলে উঠলেন

“আমাকে তুই চিনতে পেরেছিস মা?

ক্যামেলিয়া কান্না ভেজা মুখে মাথা ঝাঁকালো।
মিতালি কান্না মুছে মুচকি হেসে ভাঙা কন্ঠে বলে উঠলেন

“সবাইকে ভুলে যা তুই কিন্তু আমার বাবাটাকে ভুলিস না।আমার মানিক ম*রে যাবে তুই আবার ওকে ভুলে গেলে।

মাহতাব চৌধুরী মিতালীর থেকে ফোন নিয়ে মাহাদ কে বলে উঠলেন

“কি বেটা?বাবার কথা অক্ষরে অক্ষরে মিলেছে তো?

মাহাদ হাসতে হাসতে বলে উঠলো
“ইউ আর বেস্ট বাবা।
“আজ পর্যন্ত যা যা বলেছো সব সত্যি হয়েছে আমার জীবনে।
হ্যাভেন কে কোলে নিয়ে সুজানা দৌড়ে এলো।
ক্যামেলিয়া সুজানাকে দেখে খুশিতে চিল্লিয়ে উঠলো।

সুজানা কান্না ভেজা কন্ঠে বলে উঠলো

“খুব শীঘ্রই দেখা হচ্ছে তাহলে ভাবি?

ক্যামেলিয়া ফাইটিং এর সাইন দেখিয়ে বলে উঠলো

“ইয়াপ”

এরপর হ্যাভেন কে দেখে অনেক আদুরে কথা বার্তা বললো ক্যামেলিয়া আর মাহাদ মিলে।

পিছন থেকে হৃদি মাহাদ কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো

“আমাকে ভুলে গেলি?

ক্যামেলিয়া মাহাদের কাছ থেকে জানতে পারলো হৃদি মাহাদের বড় বোন।
ক্যামেলিয়া হৃদির প্রতি সম্মান দেখিয়ে অনেক আলাপ চারিতা করলো।
একে একে সকলের কথা শেষ হতেই কোহিনুর এসে উপস্থিত হলো।
ক্যামেলিয়া আর মাহাদকে একসাথে দেখে মেয়েটা কেঁদে ফেললো।
এরপর ক্যামেলিয়া কে ডেকে উঠলো

“ভাবি ভাইজান রে আর কষ্ট দিয়েন না।ভাইজান আপনার দেয়া কষ্ট মানতে পারে না।

সকলের সাথে হাসি খুশি মতো কথা বলে লাইন কেটে দিলো মাহাদ।

হঠাৎই মিতালীর সকল অসুখ দৌড়ে পালালো।
কোমরে আঁচল গুঁজে কাজে নেমে সকলের উদ্দেশ্যে বলে উঠলেন

“হাত চালিয়ে সকল জমে থাকা কাজ শেষ করা চাই।
আমার ছেলে আর ছেলের বউ যখন তখন এসে পড়বে।
মাহতাব চৌধুরী ঝটপট নাবিল হাসানের বাড়ি খবর পাঠালেন।
_______
এদিকে টুসি অনিমের যন্ত্রনায় বাইরেই বের হতে পারছে না।ছেলেটা বডি গার্ড এর মত লেগে থাকছে পাশে পাশে।
বেলকনিতেও দাঁড়ানো যাচ্ছে না তার যন্ত্রনায়।
ব্যাপারটা রিজভী জানাজানি হলে বিরাট ক্যালেঙ্কারি হয়ে যাবে।
হঠাৎই টুসীর মাথায় এক শয়তানি বুদ্ধি চাপলো।
অনিমকে শায়েস্তা করবে এটা ভেবেই শয়তানি হাসলো টুসি।ঠোঁট কামড়ে হাসতে হাসতে চলে গেলো ওয়াশরুমে।

ওয়াশরুম থেকে এক মগ পানি নিয়ে বেলকনিতে এসে দাড়ালো। এরপর সেই মগ ভর্তি পানি ছুড়ে মারলো অনিমের উপর।
আকস্মিক এমন আক্রমণে ভ্যাবাচ্যাকা খেলো মাহাদ।
অনিমের এমন ভেজা বিড়াল এর মতো অবস্থা দেখে খিলখিল করে হেসে উঠলো টুসি।
আচ্ছা জব্দ করা গেছে বদমাশ লোকটাকে।

টুসীর এমন হৃদয়ে কাঁপন ধরানো হাসি দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলো অনিম।
মনে হচ্ছে এখনই হার্ট এট্যাক এসে যাবে।
নাহ আর সহ্য করা যাচ্ছে না।

[সারিকা হোসাইন পেইজে লাইক দিয়ে আরো মজার মজার গল্প পড়ুন।পাশে থাকুন]

টুসীকে পাল্টা জব্দ করতে চোখের রোদ চশমা খুলে ফেললো অনিম।
এরপর টুসীকে চোখ টিপে মুখে ফিচেল হাসি ঝুলিয়ে টুসীর বাড়ির দিকে হাঁটা দিলো।
এটা দেখে মুহূর্তেই টুসি ঘাবড়ে গেলো।
বেলকনিতে মগ ফেলে দৌড়ে বেরিয়ে এলো নিজের রুমে থেকে।
টুসি এই কদিনে বুঝে গিয়েছে ছেলেটা বদের হাড্ডি।সাথে বেপরোয়া।
কখন কি করে ফেলে ঠিক নেই।

সকল কাজকর্ম শেষে রিজভী কেবলই এসি ছেড়ে ড্রয়িং রুমে সোফায় বসেছে।
নাজনীন সুলতানা দরকারি কাজে বাইরে গিয়েছেন।
এমন সময় কলিংবেল বেজে উঠলো।
এই অসময়ে কে এলো এটা ভাবতেই বিরক্তিতে কপাল কুঁচকে উঠে দাঁড়ালো রিজভী।
হনহন করে হেটে দরজা খুলে সামনে দাঁড়ানো মানুষটিকে দেখে অবাকের স্বরে বলে উঠলো

“অনিম ভাইয়া তুমি?

#চলবে