ওয়েলকাম টু মাই ডার্কসাইড পর্ব-১২+১৩

0
5

#ওয়েলকাম_টু_মাই_ডার্কসাইড
#পর্ব_১২
#সারিকা_হোসাইন

———-
সারা রাতের ইলসে গুড়ি বৃষ্টিটা ভোর রাত্রের দিকে এসে তুমুল বর্ষনের রূপ নিয়েছে।ঘুটঘুটে কালো মেঘে পুরো আকাশ আচ্ছন্ন থাকায় সঠিক সময় অনুমান করা যাচ্ছে না।জানালার সাদা পর্দা ভেদ করে কিঞ্চিৎ আলো কক্ষে প্রবেশ করে জানান দিচ্ছে মোটামুটি ভালোই বেলা হয়েছে।বিশালাকার থাই জানালা বন্ধ থাকার কারনে বৃষ্টির ঝরঝর শব্দের বদলে শো শো শব্দটাই কর্ন কুহরে এসে লাগছে।

হঠাৎই ঘুম ভেঙে গেলো রাজ্যের।পিটপিট করে পেলব দৃষ্টি মেললো।ঘুম ভালো করে কাটেনি বলে না চাইতেও অক্ষি পল্লব আপনা আপনি ই বন্ধ হয়ে গেলো।জোর করে চক্ষু খোলে চারপাশে নজর বুলিয়ে নিজের অবস্থান বুঝার চেষ্টা করলো।বেডরুম ময় ভুনা খিচুড়ির গন্ধে মম করছে।নিজের বাড়িতেই আছে বুঝতে পেরে শান্তিতে আবার চোখ বুঝে ফেললো।
বিছানায় আড়মোড়া ভাঙতে হাত পা ছড়াতেই স্যালাইন এর পাইপে টান লেগে ব্যাথায় ককিয়ে উঠলো সে

“আউচ্,”

হাতের দিকে তাকিয়ে গত রাতের কথা মনে পড়তেই ভয়ে শিউরে উঠলো রাজ্য।হাতে লাগানো সুই ধীরে ধীরে খুলে অন্য হাতে নজর দিলো।হাতটি দেখেই বোঝা যাচ্ছে খুব যত্ন সহকারে ব্যান্ডেজ লাগানো হয়েছে।ধীরে ধীরে শোয়া থেকে উঠে বসে পুরো রুমে ভালো করে চোখ বুলালো।আবছা আলোয় বিশালাকার এক কক্ষ নজরে এলো।কক্ষটি খুবই ছিমছাম সাজানো গুছানো।

নিজের ঘাড় সমান এলোমেলো চুলগুলো গুছিয়ে বেঁধে সারা বিছানা জুড়ে নিজের মোবাইল খানা খুঁজে চললো।কিন্তু আফসোস এই ঘরের কোথাও মোবাইল নামক যন্ত্রটির অস্তিত্ব নেই।

“তার মানে মোবাইল রেখেই আমি চলে এসেছি?আচ্ছা এনি আবার চিফের বাসায় যায়নি তো?অফিসে গিয়ে কি জবাব দেবো এনিকে?কি এক কেলেঙ্কারি তে ফেঁসে গেলাম ছি!

ধীরপায়ে বিছানা থেকে নেমে কক্ষের বিশালাকার জানালা খুলে পর্দা দুটো সরিয়ে ঘর কিছুটা আলোকিত করলো রাজ্য।জানালা খুলতেই বৃষ্টির ঠান্ডা ঝাপটা এসে তার মুখ গলা ভিজিয়ে দিলো।

“সকাল সকাল বৃষ্টির পানি খেলে ঠান্ডা জ্বর দুটোই কাবু করবে ম্যাডাম।এমনিতেই সারা রাত অনেক জ্বালিয়েছেন।এবার একটু এই অসহায়ের উপর দয়া করুন।

হঠাৎই রসিকতা মিশ্রিত ভরাট কণ্ঠস্বরে চমকে উঠলো রাজ্য।পিছন ফিরে যুবরাজকে দেখে তনু মন দুটোই শিহরিত হলো তার।
মনে হচ্ছে সে কেবলই গোসল সেরে এসেছে।ওলফ কাটিং চুল গুলো এলোমেলো হয়ে তাতে শিশির বিন্দুর মতো পানি লেগে আছে।ভালো করে শরীর না মোছার কারনে ফুলা ফুলা পেশী গুলোতে বিন্দু বিন্দু পানি জমে রয়েছে।কালো রঙের হাতা বিহীন স্যান্ডো গেঞ্জি এই যুবকের সৌন্দর্য কতখানি বৃদ্ধি করেছে তা কি এই আনাড়ি পুরুষ জানে?আর ওই রক্তজবা ঠোঁট দুটো?

হঠাৎই যুবরাজের ব্যান্ডেজ করা হাতের দিকে নজর গেলো রাজ্যের।গত রাতের বিভীষিকাময় দৃশ্য মনে পড়তেই হাত পা অসাড় হয়ে এলো তার।মাথার ঘিলু পিন পিন করে ঘুরতে লাগলো।

“আমি কি রাতে জ্ঞান হারিয়েছিলাম?ডক্টর এসে কখন স্যালাইন দিয়ে গেলো?কিচ্ছুটি টের পেলাম না?এখন যদি আবার জ্ঞান হারাই তখন?

“এখন আবার জ্ঞান হারালে যেদিক দিয়ে এই বাসায় এসেছো সেই দিক দিয়েই টুপ করে নিচে ফেলে দেবো।এরপর সারাদিন রাস্তার ভেতর বেহুশ হয়ে পড়ে থেকো ফাজিল মেয়ে।।

কথাটি বলে যুবরাজ নিজের হাতের সাদা টাওয়েল খানা গলায় ঝুলিয়ে হনহন করে চলে গেলো।

যুবরাজের এমন আকস্মিক হুমকিতে বোকা বনে গেলো রাজ্য।

“কি সাংঘাতিক লোক রে বাবা।মনে মনে একটা কথা বললাম সেটাও শুনে নিলো?আবার আমাকে ফাজিল ও বলে গেলো?আমি ফাজিল হলে তুই ব্যাটা হনুমান।বলেই মুখ বাকালো রাজ্য।

আমাকে গালি দেয়া শেষ হলে দ্রুত ফ্রেশ হয়ে ডাইনিং টেবিলে এসো।তোমার জন্য আমিও খেতে পারছি না খিদেয় মরে যাচ্ছি।

যুবরাজের এমন অদ্ভুত স্বভাবে চূড়ান্ত ভাবে ঘাবড়ে গেলো রাজ্য।যুবরাজ সম্পর্কে আর কোনো প্রকার চিন্তা ভাবনা না করে দ্রুত ফ্রেস হয়ে বাইরে বেরিয়ে এলো।
যুবরাজ টেবিলের উপর বাহারি আইটেমের সাথে ভুনা খিচুড়ি বেড়ে নিয়ে বসে আছে।খাবার গুলো লোভনীয় ঠেকলেও রাজ্য সেসবে পাত্তা দিলোনা।
রাজ্যকে দেখতে পেয়ে যুবরাজ মেপে হাসলো।এরপর উঠে দাঁড়িয়ে একটা চেয়ার টেনে দিলো

“বসো এখানে।সকাল থেকে তোমার জন্য রান্নাবান্না করতে করতে কাহিল হয়ে গেছি।এবার খেয়ে আমাকে উদ্ধার করো।
যুবরাজের এমন আতিথেয়তা চরম ভাবে মুগ্ধ করলো রাজ্যকে।মনে মনে খুশি হলেও মুখে কিছুই প্রকাশ করল না।

“আপনি আমার জন্য রান্না করেছেন?
অবাক হয়ে শুধালো রাজ্য।

“বাহ রে বাসায় মেহমান এলে তার জন্য রান্না করবো না?আমি কি কঞ্জুস নাকি?তুমি চাইলে আমি আমার নিজের কলিজা ভুনা করে তোমাকে খাওয়াবো”

“আপনার কলিজা আমি কোন দুঃখে খেতে যাবো?

“মেয়েদের অনেক কিছু খাওয়ার ইচ্ছে হয় তাই বললাম আর কি।
কথা খানা বলেই চোখ টিপলো যুবরাজ।

রাজ্য মনে মনে বলে উঠলো
“ফাজিল।

যুবরাজ রাজ্যের মুখের সামনে তুড়ি বাজিয়ে বিগলিত করে হেসে বলে উঠলো
“মনে মনে আমাকে ফাজিল বলছো এম আই রাইট?

রাজ্য চোখ বড় বড় করে যুবরাজের মুখের দিকে তাকিয়ে দুই হাত জোড় করে বলে উঠলো
“খেমা কৈরে দেন।আমার ভুল হচে”

“ক্ষমা করবো এক শর্তে”

“কি শর্ত?

“সব গুলো খাবার খেয়ে খেয়ে আমার প্রশংসা করতে হবে”

“আপনি নিজেই রেঁধেছেন সব?.

“আপাতত আমিই রেঁধেছি বিয়ে করলে বউ রাধবে”

যুবরাজ যে চরম আকারের ঠোঁট কাটা নির্লজ্জ্ব এটা রাজ্য আরো অনেক আগেই বুঝতে পেরেছে।তাই বাড়তি কথা না পেঁচিয়ে যুবরাজের টেনে দেয়া চেয়ারে ধপ করে বসে পড়লো
“তাড়াতাড়ি খাবার দিন।আমাকে অফিসে যেতে হবে”

“আজ শুক্রবার, আজ কিসের অফিস?

রাজ্য মাথা চুলকে মনে মনে ভাবলো
“নিজের অফিস বন্ধ নিজেই জানিনা।ব্যাটা ঠিক মনে রেখেছে।”

“অফিস না থাকলেও আমাকে বাড়ি ফিরতে হবে”

প্লেটে খিচুড়ি বাড়তে বাড়তে যুবরাজ কঠিন কন্ঠে বলে উঠলো
“তুমি দিনের বেলায় এক সেকেন্ড এর জন্যও এই বাসা থেকে বেরোতে পারবে না!

যুবরাজের এমন কথায় অবাকের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গেলো রাজ্য।
“কেনো পারবো না?

“কারন এখানে আমার খুব ভালো রেপুটেশন আছে প্লাস আমি সিঙ্গেল এটা সবাই জানে।আমার বাসা থেকে মেয়ে বেরুতে দেখলে সবাই খুব খারাপ ভাবে নিবে ব্যাপারটা।আর আমি আমার জন্য মোটেও ভাবছি না।আমি নিজেই খুব খারাপ মানুষ।আমি চাইনা তোমাকে কেউ আড় চোখে তাকিয়ে দেখুক।

কথাটা বলে প্লেটে সুন্দর করে খাবার গুছিয়ে রাজ্যের সামনে পরিবেশন করলো যুবরাজ।

যুবরাজকে যতোই দেখছে ততোই মুগ্ধ হচ্ছে রাজ্য।
“এতো কোনো সাধারণ ছেলে নয় পুরো প্যাকেজ”!

খাবার সামনে পেয়ে স্পুন রেডি করতে করতে যুবরাজের উদ্দেশ্যে রাজ্য বললো
“আপনিও বসুন।

যুবরাজ নিজের প্লেটে খাবার বাড়তে বাড়তে বলে উঠলো
” বৃষ্টির দিনে চামচ রেখে হাত দিয়ে আচার আর খিচুড়ি মাখিয়ে মাখিয়ে মাখিয়ে খেয়ে দেখো অনেক মজা লাগবে”

নিজের উত্তেজনা এবার আর ধরে রাখতে পারলো না রাজ্য।মুখে খাবার এর লোকমা তুলতে তুলতে মুচকি হেসে বলে উঠলো
“আপনাকে যে বিয়ে করবে সে অনেক লাকি”

খাবার চিবুতে চিবুতে যুবরাজ বলে উঠলো
“তাহলে সেই লাকি পারসন আপনি নিজেই হয়ে যান ম্যাডাম।

মুখে তোলা খাবার গুলো গট করে রাজ্যের গলায় আটকে গেলো।মুহূর্তেই চোখ লাল হয়ে কাশি এসে অবস্থা বিগড়ে গেলো।
রাজ্যের এহেন দশা দেখে ঝটপট পানি এগিয়ে দিয়ে মাথায় চাপড় দিলো যুবরাজ।
“তুমি সবকিছুতেই বড্ড আনাড়ি রাজ্য।তোমাকে মনে হয় তাড়াহুড়ো করার জন্য সবসময় দুই পাশ থেকে দুই শয়তান গুঁতোতে থাকে তাইনা?

পানি খেয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে ফ্যাসফ্যাসে কন্ঠে রাজ্য বলে উঠলো
“আমার দুই পাশের দুই শয়তানের চেয়েও আপনি বেশি মারাত্মক।আপনি আপাতত আমাকে গুতানো বন্ধ করুন।

“আমার তো শিং নেই তাহলে কিভাবে গুঁতো দিলাম তোমাকে?

“আমি কি না খেয়েই উঠে যাবো?

“এহ না প্লিজ রাগ করোনা।মুখে স্কচ টেপ মেরেছি আর কিচ্ছুটি বলবো না।
কথাখানা বলেই মুখে হাওয়ায় টেপ মারার মতো ভং করলো যুবরাজ।এটা দেখে রাজ্য ফিক করে হেসে দিলো।

একমনে খেতে খেতে যুবরাজ খুক খুক করে কেশে উঠলো

“আপনার আবার কি হলো এভাবে কাশছেন কেনো?

“একটা কথা বারবার গলায় এসে খুব বিরক্তিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে।বারবার পেটে ঢুকানোর চেষ্টা করছি।কিন্তু পেটে থাকতেই চাইছে না।
খুবই করুন স্বরে কথাটা বলে আবার কাশতে লাগলো যুবরাজ।

খাবার খেতে খেতে রাজ্য শুধালো
“কোন কথা পেটে থাকছে না?

“তোমার হাসি সুন্দর।হাসলে তোমাকে বউ বউ লাগে”

যুবরাজের এহেন কথায় লজ্জায় রাজ্য মাথা নিচু করে খাবার খাওয়ায় মনোনিবেশ করলো।কিন্তু খাবার যেনো গলা দিয়ে নামছেই না।দুই কান দিয়ে গরম ধোয়া বের হচ্ছে যেনো।
বহু কষ্টে সব গুলো খাবার শেষ করে উঠে দাঁড়ালো রাজ্য

“খাবার অনেক মজা হয়েছে,আপনার অনেক গুন আছে যুবরাজ শাহীর”

“আমার আরো অনেক কিছু আছে সময় এলে দেখাবো।
কথাটা বলে দুজনের প্লেট দুটো নিয়ে হনহন করে কিচেনে চলে গেলো যুবরাজ।
“মেয়েটার সামনে থাকলেই বিপদ।কোনটার ই কন্ট্রোল থাকেনা।না আমার না ছোটা ভীমের।

________
রেজোয়ান চৌধুরীর ড্রয়িং রুমে বসে আছে শেরহাম।গতকাল রাত থেকে এখন পর্যন্ত রাজ্যের ফোনে সে শ খানেক ফোন দিয়েছে।না মেয়েটি ফোন তুলেছে না ফোন ব্যাক করেছে।বিষয়টা শেরহাম কে খুবই হার্ট করেছে।

“কি ব্যাপার কে আপনি?
ভারিক্কি গলায় কথাটা বলে চশমার উপর দিয়ে শেরহামের দিকে তাকিয়ে রইলেন রোজোয়ান চৌধুরী।
রেজোয়ান চৌধুরী কে দেখতে পেয়েই চটপট উঠে দাঁড়ালো শেরহাম।বিনয়ের সাথে সালাম দিয়ে বলে উঠলো
“আংকেল আমি শেরহাম ফাইয়াজ।আপনার বন্ধু সুবহান শেখের ছেলে আমি”

শেরহাম কে দেখে খুশিতে হো হো করে হেসে উঠলেন রেজোয়ান চৌধুরী।শেরহামের কাঁধে চাপড় মেরে বলে উঠলো
“আরে ব্যাটা আগে বলবে না তুমি সুবহানের ছেলে?তা বাবা কি মনে করে এই সময়ে এলে?

রেজোয়ান চৌধুরীর এমন প্রশ্নে কিছুটা থতমত খেলো শেরহাম।
“আব, আসলে আংকেল রাজ্য কাল থেকে ফোন তুলছে না।তাই ভাবলাম কিছু হলো কি না?

রেজোয়ান চৌধুরী শেরহামের দিকে এক দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলেন।এরপর তনুজার নাম ধরে হাঁক ছাড়লেন
“তোমার মেয়েকে ডেকে আনো, ফোন কেনো তুলছে না আমিও এর জবাব চাইবো।

তনুজা এবার একটু ইতস্তত করে উঠলেন।দুই হাত সমানে কচলে অপরাধীর ন্যায় বলে উঠলেন;―
“আসলে ও ঘরে নেই।ফোন টা রুমে ফেলে গেছে।

“ঘরে নেই মানে?ছুটির দিনে এই বৃষ্টির মধ্যে কোথায় গিয়েছে সে?
তেজী কন্ঠে প্রশ্ন করে তনুজার দিকে উত্তরের আশায় নাক ফুলিয়ে তাকিয়ে রইলেন ভদ্রলোক।

“হয়তো কোন কেইস ইনভেস্টিগেশন এর জন্য গিয়েছে।”
কথাটি বলে দ্রুত রান্না ঘরে চলে গেলেন তনুজা চৌধুরী।
তিনি গত রাতেই রাজ্যকে বাড়ি থেকে ওয়াল টপকে যেতে দেখেছেন।মেয়ের প্রতি তার অগাধ বিশ্বাস আছে।মেয়ে কোনো কেলেঙ্কারিতে নেই এটা তিনি শতভাগ নিশ্চিত।রেজোয়ান চৌধুরী এই বিষয়টা জানলে অযথা হাল্লা মাচাবে।তাই পুরো ঘটনাই তিনি রাত থেকেই চেপে গিয়েছেন।

রেজোয়ান চৌধুরী দ্বিতীয় দফায় হাক ছেড়ে উঠলেন
“কি গো ছেলেটা এলো ওকে কিছু খাবার টাবার দাও।

শেরহাম হঠাৎই উঠে দাঁড়ালো

“আংকেল আজ আমি আসি।পরে আবার অন্য একদিন আসবো।আমার জরুরি কিছু কাজ পরে গেছে।

“সে কি মাত্রই তো এলে।

“না আংকেল আজ যাই।

রেজোয়ান চৌধুরীর বাড়িতে আর এক মুহূর্ত ও দাঁড়ালো না শেরহাম।তার অনেক কাজ জমে আছে এই শহরে।সব গুলো একটা একটা করে খালাস করতে হবে।
প্রথমে নিজের ঝুঁড়িতে রাজ্যকে তোলা চাই এর পর যুবরাজের মাংসের কিমা দিয়ে বার্গার !

#চলবে

#ওয়েলকাম_টু_মাই_ডার্কসাইড
#পর্ব_১৩
#সারিকা_হোসাইন

সারাদিনের মেঘ মেদুর আর বৃস্টির অবসানের পর ধরনীতে কুচকুচে কালো আধার ঘনিয়ে এসেছে সবে।আজ আকাশে রুপালি চাঁদটা উঠেনি।যুবরাজের জন মানব শূন্য ঘরটি রাজ্যের কাছে ডুম ঘরের মতো ঠেকছে।কোনো মানুষ নেই শুধু একটি ছোট কুকুর আর ধবধবে সাদা রঙের মোটা একটা পার্শিয়ান বিড়াল।কুকুরটি যতবার রাজ্যকে দেখেছে ততবার দাঁত খেচিয়ে ঘেউ ঘেউ করে উঠেছে।সারাদিন বহু কষ্টে একা একা এই বিশাল ফ্ল্যাটে দিন পার করেছে রাজ্য।এবার আর একমুহূর্ত দেরি করবে না সে।

কিন্তু একটা জিনিস রাজ্যকে খুব ভাবাচ্ছে।সকালে ডাইনিং টেবিলে যুবরাজকে তার কাছে প্রাণোচ্ছল আর মিশুক প্রকৃতির একটা ছেলে মনে হয়েছে।কিন্তু হঠাৎই ছেলেটা রুমে গিয়ে দরজা আটকেছে সারাদিনের জন্য একবারো বের হয়নি।এটা রাজ্যকে খুব কষ্ট দিয়েছে।সারাটা দিন সে যুবরাজের বেড রুমে শুয়ে বসে দিন কাটিয়েছে।শুয়ে বসে বললে ভুল হবে।সারা রুমে কূট কূট করে এটা সেটা পর্যবেক্ষণ করেছে।

মনে মনে নিজেই নিজেকে শান্তনা দিলো রাজ্য―
“হয়তো মন টন খারাপ হয়েছে।মা বাবাকে মিস করছি হয়তো।”
হঠাৎই নিজের বাড়ির কথা মনে পড়তে ঝট করে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালো রাজ্য।সে গত রাতে থেকে উধাও।

“এতক্ষনে নিশ্চয়ই বাবা মা আমার রুমে হাজার বার আমাকে খুঁজেছে।আর এনি?এনি যদি বাড়িতে গিয়ে আমায় খুঁজে তখন?তখন তো বাবা আগুনে কেরোসিন ঢালার মতো করে জ্বলে উঠবে।

নিজের বাবার রাগী রাগী মুখটা মনে পড়তেই নিজের পোশাক টেনে টেনে ঠিক করে চুল গুলো ভালো করে বেঁধে যুবরাজের কক্ষের দিকে ধীরপায়ে হেটে চললো রাজ্য।

দরজা ভেতর থেকে বন্ধ করা।রাজ্য দরজার সামনে কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে দরজায় মৃদু নক করলো

কীয়তখন বাদে ভেতর থেকে উত্তর এলো
“এসো”

দরজার নব ঘুরিয়ে রাজ্য যুবরাজের কক্ষে প্রবেশ করতেই সিগারেট এর উটকো গন্ধে নিঃশাস বন্ধ হয়ে এলো।কোনো মতে নিজের নাক চেপে ধরে গন্ধ রোধ করলো রাজ্য।

“এভাবে আলো নিভিয়ে বসে বসে সিগারেট ফুকছেন কেনো?

“আমার ঘর আমার ইচ্ছে”
গমগমে কন্ঠে কথাটি বলে যুবরাজ আবার নিকোটিন এর ধোয়া উড়াতে ব্যাস্ত হলো।
কক্ষটি এতটাই অন্ধকার যে যুবরাজের সিগারেটের আগুনের লাল রঙা স্ফুলিঙ্গ ছাড়া আর কিচ্ছুটি দেখা যাচ্ছে না।

দ্রুত বিড়ি ফুকে এস ট্রে তে অর্ধ খাওয়া সিগারেট ঠেসে ধরে উঠে দাঁড়ালো যুবরাজ।এরপর পুরো রুম আলোকিত করে রাজ্যের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন বান ছুঁড়লো
“এখানে এসেছো কেনো?

যুবরাজের এমন প্রশ্নে রাজ্য কিছুটা লজ্জিত হলো।কিছুক্ষণ ইতস্তত করে বলে উঠলো
“আ আসলে আমি চলে যাবো এখন।তাই মনে হলো অপনাকে বলে যাওয়া উচিত।কিন্তু মনে হচ্ছে আপনি বিরক্ত হয়েছেন।অসময়ে বিরক্ত করার জন্য আমি দুঃখিত।

কথাটি বলে রাজ্য পিছন ফিরে প্রস্থান করার জন্য পা বাড়ালো।পেছন থেকে যুবরাজ বজ্র কন্ঠে ডেকে উঠলো
“রাজ্য তুমি কি জন্য গত রাতে আমার বাসায় এসেছিলে?

যুবরাজের এমন ভয়ানক কন্ঠে থরথর করে কেঁপে উঠলো রাজ্য।চোখের কোনে সামান্য অভিমানের জল ও জমলো বটে।এই যুবরাজ আর সকালের যুবরাজ দুজন যেনো আলাদা ব্যাক্তি।এই যুবরাজকে খুব খুব অপরিচিত ভয়ংকর ঠেকছে রাজ্যের কাছে।

“কি হলো প্রশ্ন শুনতে পাওনি?
দ্বিতীয় বার হুংকার ছাড়লো যুবরাজ।

রাজ্য নিজের চোখের কোনে জমে থাকা জল আঙ্গুল দিয়ে মুছে শুকিয়ে যাওয়া রুক্ষ কন্ঠ ফাঁকা ঢোক গিলে ভেজানোর চেষ্টা করলো।

“আমি ইচ্ছে করে এখানে আসিনি।বেনজির আশফির বাড়ি ভেবে ঢুকে পড়েছি।আম সরি।
বহু কষ্টে কথাটি বলে রাজ্য আর এক মুহূর্ত সেখানে দাঁড়ালো না। যুবরাজের সামনে থেকে দৌড়ে এসে মেইন গেটের দরজা খুলতে উদ্দত হলো।

হঠাৎই পেছন থেকে যুবরাজ বলে উঠলো
“এখান দিয়ে যেতে পারবে না তুমি।
কথাটা বলেই রাজ্যের ব্যান্ডেজ করা হাতে চেপে ধরে টেনে হিচড়ে একটি কক্ষে নিয়ে দাঁড় করালো রাজ্যকে।যুবরাজের হিংস্রতা দেখে মুখের ভাষা যেনো হারিয়ে ফেলছে রাজ্য।

কক্ষটির বিশালাকার দরজা খুলে যুবরাজ আঙ্গুলি নির্দেশ করলো

“এখান থেকে ঝুলে ঝুলে নামবে।আর যদি নামতে গিয়ে পড়ে যাও তাহলে একদম ড্রেনে চলে যাবে,আর ড্রেন থেকে একদম আকাশে।কোনো ঝামেলা হবে না লাশের ও খুজ পাবেনা কেউ।

কথাটি বলেই যুবরাজ হনহন করে ধড়াস করে রুমের দরজা লাগিয়ে চলে গেলো।
দরজার দিকে অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকিয়ে আহত কন্ঠে রাজ্য বললো
“আপনি খুব খারাপ”!

************
জন মানব শূন্য একটি বারে মদ খেয়ে নেশায় চূড় হয়ে টেবিলে উপুড় হয়ে আবোল তাবোল বকছে মোকাদ্দেস নামের এক লোক।বয়স তার পঞ্চাশের উর্ধে।তিন কুলে কেউ না থাকায় মোকাদ্দেস এর বাড়ী ফেরার কোনো তাড়া নেই।
হঠাৎই অদ্ভুত এক শব্দ মোকাদ্দেস এর কর্ণকুহরে প্রবেশ করলো।নেশায় মশগুল মোকাদ্দেস সেটা আমলে না নিয়ে চোখ বুঝে ওভাবেই পড়ে রইলো।
শব্দটির মাত্রা ধীরে ধীরে বাড়তে লাগলো।এবার বেশ বিরক্ত হলো মোকাদ্দেস।কোনো মতে মাথা তুলে শব্দের উৎসের দিকে নজর দিলো সে।মোকাদ্দেস এতোটাই নেশা করেছে যে এক হাত দূরত্বের জিনিস সে পরিস্কার দেখতে পাচ্ছে না।তবুও দুই হাতে চোখ কচলে বোঝার চেষ্টা করলো
“কে শব্দ করছে”

সামনে দাঁড়ানো মৃত্যদূত তুল্য মানুষটিকে দেখে মোকাদ্দেসের সকল নেশা সেকেন্ডের ব্যাবধানে কেটে গেলো।
সামনে দাঁড়ানো লম্বা চওড়া শক্ত পোক্ত মানুষটির হাতে বিশালাকার এক হ্যামার।মেঝের সাথে ঘষে ঘষে টেনে নিয়ে আসার কারনে সেই হ্যামার থেকে এমন বিকট শব্দ আসছে।টেবিলে ভর দিয়ে বিস্ফারিত চোখে দাঁড়িয়ে গেলো মোকাদ্দেস।

সামনে দাঁড়ানো আগন্তুক কে দেখে মোকাদ্দেস এর হৃদপিণ্ড বুকের খাঁচা ভেদ করে বেরিয়ে আসার উপক্রম হলো।পানি পিপাসায় বুকের ছাতি পর্যন্ত খা খা করে উঠলো।হাতের কাছে উল্টে পড়ে থাকা মদের খালি বোতল টেবিলে বাড়ি দিতেই ঝনঝন শব্দে চারপাশ আলোড়িত হলো।সেই শব্দে মোকাদ্দেস নিজেই ভয়ে কেঁপে উঠলো।

রাতের সকল নিস্তবতা ভেদ করে আগন্তুক বিদঘুটে শব্দে হেসে উঠলো।এই হাসির মানে মোকাদ্দেস জানে।কিন্তু কিছুতেই দুদিনের ছোকরার সামনে দুর্বল হবে না মোকাদ্দেস।দরকার পড়লে নিজে মরার আগে এই মদের ভাঙা বোতলের টুকরো এই জানোয়ারের বুকে গেঁথে দিয়ে তবেই সে মরবে।

“মনে মনে আমাকে কিভাবে মারবি সেটা ভেবে ফেলেছিস তবে নাকি,?

গমগমে ভয়ঙ্কর কন্ঠে প্রশ্ন খানা করে সিংহের মতো মোকাদ্দেস এর দিকে তাকিয়ে রইলো আগন্তুক।সেই দৃষ্টি দেখে ভয়ে অন্তরাত্মা লাফিয়ে উঠলো মোকাদ্দেস এর।তবুও উপরে মোকাদ্দেস শক্ত রইলো।

আগন্তুক হাতুড়ি মেঝেতে সামান্য ঠুক ঠুক করতে করতে মোকাদ্দেস এর দিকে দৃষ্টি দিলো

“এই হাতুড়ি দিয়ে তোর মাথায় একটা বাড়ি দিলে কি হবে জানিস?তোর মগজ গলে ছিটকে ঢাকা শহর পার হয়ে অন্য বিভাগে চলে যাবে।কিন্তু তোর মগজ আমি এভাবে নষ্ট হতে দেবো না।তোর মগজ আমি নিজে ভেজে খাবো।

আগন্তুক এর মুখে এমন বীভৎস কথা শুনে পেট গুলিয়ে উঠলো মোকাদ্দেস এর।মুহূর্তেই বমির উদ্রেক হলো।আটকাতে না পেরে সেখানেই বমি করে দিলো মোকাদ্দেস।

এটা দেখে আগন্তুক হো হো শব্দ তুলে হেসে উঠলো
“তোর কলিজা,চোখ সব আমি তুলে নেবো মোকাদ্দেস।জীবনে অনেক ভুগিয়েছিস আমাকে।এবার আমাকে একটু শান্তি দে তুইও শান্তিতে থাক”

আগন্তুক তার লম্বা থাবা যুক্ত হাত দিয়ে মোকাদ্দেস এর গলা চিপে ধরতেই মোকাদ্দেস তার হাতে থাকা কাঁচের ভাঙা বোতলের টুকরো দিয়ে আগন্তুক এর শরীরে আঘাত করলো।
সহসাই ঝরঝর করে রক্ত ঝড়লো তার শরীর থেকে।সেই রক্তের দিকে তাকিয়ে শ্লেষ হাসলো আগন্তুক।

“তোর প্রতি আমি অনেক খুশি হলাম মোকাদ্দেস।তুই মরার আগেও বাঁচার চেষ্টা করেছিস ।এমন কাউকে খুন করার মজাই আলাদা।যারা মুহূর্তেই ধরাশায়ী হয়ে যায় তাদের আমার পছন্দ না।এই যে তুই আমাকে আঘাত করে চরম পর্যায়ের কন্ট্রোল লেস রাগটা তুলে দিলি!এখন তোকে বীভৎস ভাবে মারতে আমার কোনো অনোসূচনা হবে না।

এবার মোকাদ্দেস তার শরীরের সকল শক্তি খুইয়ে ফেললো।হাটু মুড়ে দুই হাত জোড় করে কেঁদে উঠলো মোকাদ্দেস

“আমাকে মারবেন না সাহেব।আমাকে ছেড়ে দিন।আমি ভুল করে ফেলেছি।আমি সারা জীবন আপনার গোলাম হয়ে থাকবো।শেষ বারের মতন আমায় ক্ষমা করুন।
মোকাদ্দেস এর কান্নায় আকাশ বাতাস ভারী হলো।কিন্তু সেই কান্না হাওয়ায় মিলিয়ে আবার পরিবেশ নিস্তব্ধ হলো।

“তোকে না মারলে আমি ঘুমাতে পারবো না রে মোকাদ্দেস।খুনের নেশা বড্ড খারাপ।একেক জনের একেক রকম নেশা থাকে জানিস তো নাকি?আমার নেশা হচ্ছে খুনের নেশা।তুই মরে যা মোকাদ্দেস।না হলে আমি নিজেই মরে যাবো।

আগন্তুক তার হাতের ভারী হ্যামার দিয়ে মোকাদ্দেস এর চিবুক বরাবর আঘাত করতেই গগনবিদারী এক চিৎকার দিয়ে উঠলো মোকাদ্দেস।
কিন্তু কিটকিটিয়ে হেসে উঠলো আগন্তুক।তার সারা শরীর মোকাদ্দেস এর রক্তে রঞ্জিত।এটাই তো সে চেয়েছিলো।রক্তের স্বাদের চাইতে বড় স্বাদ আর কি আছে এই নশ্বর ধরনীতে?

মোকাদ্দেস এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেছে আঘাত করার সাথে সাথেই।ওতো ভারী বস্তুর আঘাত মধ্যবয়স্ক একজন মানুষ কিভাবে সহ্য করবে?

মোকাদ্দেস এর চেহারা পুরোটাই থেতলে গিয়েছে।চেহারা দেখে কিছুতেই বোঝা যাচ্ছে না এই লোকের সঠিক পরিচয় কি?
এমন বীভৎস চেহারা যে কেউ দেখলে ভয়ে জ্ঞান হারাবে।
কিন্তু আগন্তুক খুব মনোযোগ দিয়ে দেখছে এই চেহারা আর তৃপ্তির হাসি হেসে যাচ্ছে সমানে।

এক হাতে হ্যামার অন্য হাতে মোকাদ্দেস এর পা টেনে টেনে আগন্তুক তার গাড়ির দিকে অগ্রসর হলো

“এবার লাশটির সকল অর্গান গুলো খুলে নিলেই কাজ শেষ।”

________
চারিদিকে মিষ্টি মধুর ফজরের আজান হচ্ছে।একটু পরেই রাতের কালিমা দূর হয়ে ভোরের আলো ফুটবে।সারা রাত দুই চোখের পাতা এক করেনি রাজ্য।যুবরাজের এমন রুক্ষ বিহেভ কোনো ভাবেই মন থেকে ঝেড়ে ফেলতে পারছে না সে।

“কিছু তো একটা আছে তবে এই কিছুটা কি?সেটা আমাকে জানতেই হবে!
ঝটপট বিছানা ছেড়ে উঠে ফ্রেস হয়ে ওযু করে নামাজে দাঁড়িয়ে গেলো রাজ্য।

নামাজ শেষ করে ল্যাপটপে গুরুত্বপূর্ণ কিছু কাজ সারতে সারতে সাত টার উপরে বেজে গেলো।ঘড়িতে সময় দেখে দ্রুত ওয়াশরুমে চলে গেলো রাজ্য।
গোসল সেরে নিজের ইউনিফর্ম পরে ড্রয়িং রুমে আসতেই রেজোয়ান চৌধুরী কর্কশ কন্ঠে বলে উঠলো
“আজকাল কাজের খুব চাপ মনে হচ্ছে?রাতে দিনে মিলিয়েও বাসায় থাকার ফুসরত পাচ্ছ না?

রাজ্য জানে তার বাবার এমন আচরণের মানে কি?রাতে ফিরে শেরহামের মেসেজ দেখেই সে সব কিছু বুঝে গিয়েছে।ছেলেটা একটু বেশি বাড়াবাড়ি করছে বলে মনে হচ্ছে রাজ্যের কাছে।

রেজোয়ান চৌধুরীর কথাকে পাত্তা না দিয়ে একটা চেয়ার টেনে খাবার টেবিলে বসে পড়লো রাজ্য।

“মা দ্রুত খাবার দাও অফিসের লেট হয়ে যাচ্ছে!

“এদিকে আমি যে একটা প্রশ্ন করেছি সেটার উত্তর দেবার প্রয়োজন মনে করছো না নাকি?
চড়া মেজাজ দেখিয়ে কথাটি বলে রক্ত চক্ষু নিয়ে রাজ্যের পানে তাকিয়ে রইলেন রেজোয়ান চৌধুরী।

খাওয়া বন্ধ করে প্লেটে পরোটা টা ছুড়ে ফেলে রাজ্য কিছুটা উত্তেজিত হয়ে বলে উঠলো
“চাকরি টা ছেড়ে দেই বাবা কি বলো?আজ নতুন আমাকে বাড়ি থেকে হুটহাট বেরিয়ে যেতে দেখেছো?সারা দিন রাত এতো কাজের প্রেসারে থাকি তার মধ্যে বাসায় এলে একের পর এক তোমার হাজার খানেক প্রশ্ন।এগুলো আর জাস্ট নিতে পারছি না আমি।

প্লেটে পরোটা রেখেই হাত ঝাড়া দিয়ে শব্দ করে চেয়ার টেনে উঠে গেলো রাজ্য।

তনুজা বুকের দীর্ঘশ্বাস লুকিয়ে ঝুটা প্লেট টেবিল থেকে সরাতে সরাতে বলে উঠলেন
“তুমি দিনে দিনে এমন রুক্ষ হয়ে যাচ্ছ কিভাবে রেহানের বাবা?

রেহান নাম শুনে বুকের ভেতর ধক করে উঠলো রেজোয়ান চৌধুরীর ।রক্ত জমা চোখ দুটো জলে ছলছল করে উঠলো।কুঁচকে যাওয়া বৃদ্ধ চোখের সামনে ভেসে উঠলো আটাশ বছর বয়সী ধবধবে ফর্সা,লম্বা চওড়া সুদর্শন হাসি মাখানো ছেলের চেহারা খানা।
ছেলেকে সমস্ত স্বাধীনতা দিয়ে উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশ পাঠিয়েছিলেন তিনি।রেজোয়ান চৌধুরী চেয়েছিলেন ছেলে পুলিশের বড় অফিসার হবে।কিন্তু রেহানের এক জেদ সে ডক্টর হবে।ছেলের জেদ মেনে নিয়ে ছেলেকে বাইরে পাঠিয়ে দিলেন।
বিদেশে ভালো মেডিকেল কলেজে চান্স পেয়ে রেহান বড় ডক্টর ঠিকই হলো কিন্তু দেশে আর ফিরে এলো না।লাশ টার হদিস পর্যন্ত পাওয়া গেলো না আজ পর্যন্ত।কোথা থেকে কখন কি হয়ে গেলো বৃদ্ধ বাবা মা কিছুই আন্দাজ করতে পারলেন না।
রেজোয়ান চৌধুরী আজো ভেবে পান না তার সহজ সরল হাসি খুশি ছেলেটাকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেবার কি কারন?

#চলবে